নারীর প্রাকৃতিক রক্তস্রাব
ভূমিকা
নারী জাতি সাধারণত: তিন প্রকার রক্তস্রাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যথা:
১) হায়েয মাসিক রক্তস্রাব)।
২) ইস্তেহাযাহ হায়েয ও নেফাসের দিন উত্তীর্ণ হওয়ার পর যে রক্তস্রাব হয়)।
৩) নেফাস সন্তান প্রসবের পরের রক্তস্রাব)।
উপরোক্ত তিন প্রকার রক্তস্রাব এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত যার বিধি-বিধানের বর্ণনা অতীব জরুরী এবং এ প্রসঙ্গে ওলামায়ে কেরামের বিভিন্ন মতামতের মধ্যে ভুল-শুদ্ধ পার্থক্য নিরুপন করে কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে যা সঠিক ও নির্ভুল তা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।
কেননা, প্রথমতঃ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ইবাদতের যে সকল হুকুম-আহকাম দিয়েছেন কুরআন ও সুন্নাহই হচ্ছে সেগুলোর মূল ভিত্তি এবং উৎস।
দ্বিতীয়তঃ কুরআন ও হাদীসের উপর পরিপূর্ণ আস্থা স্থাপন করে তদনুযায়ী আমল করলে আত্মীক প্রশান্তি, মানসিক স্থিরতা, মনের আনন্দ এবং অল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব থেকে মুক্তি অর্জিত হয়। তৃতীয়তঃ কুরআন ও সুন্নাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুই শরীয়তের আইন-কানুন ও বিধি বিধানের দলীল হতে পারে না। শরীয়তের সমুদয় আইন-কানুন ও হুকুম- আহকামের একমাত্র মানদন্ড হলো কুরআন ও হাদীস। তবে অভিজ্ঞ সাহাবীগণের অভিমতও কোন কোন ক্ষেত্রে দলীল হতে পারে। এর জন্য শর্ত হচ্ছে সাহাবীর অভিমত ও কুরআন-সুন্নাহর মাঝে কোন অসঙ্গতি ও বৈপরীত্য না থাকা, এমনিভাবে অন্য কোন সাহাবীর সিদ্ধান্তের পরিপন্থীও না হওয়া। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখতে হবে যে, যদি কখনো কোন সাহাবীর অভিমত এবং কুরআন-হাদীসের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়, তাহলে কুরআন ও সুন্নাহর সিদ্ধান্তকে গ্রহণ ও বরণ করা ওয়াজিব হবে। আর দুই সাহাবীর মত ও সিদ্ধান্তে বৈপরীত্য দেখা দিলে দু'টোর শক্তিশালীটিকেই গ্রহণ করতে হবে। কেননা পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেছেন: ﻓَﺈِﻥ ﺗَﻨَﺎﺯَﻋْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓَﺮُﺩُّﻭﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺎﻟﻠّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻵﺧِﺮِ ﺫَﻟِﻚَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻭَﺃَﺣْﺴَﻦُ ﺗَﺄْﻭِﻳﻼً ৫৯) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ "যদি তোমরা পরস্পর কোন বিষয়ে ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে পড় তাহলে সেটিকে আেল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যার্পিত কর। যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম।" [সূরা আন-নিসা: ৫৯] এই পুস্তিকাখানা নারী জাতির উপরোক্ত তিন প্রকার রক্তস্রাব ও তার হুকুম-আহকাম সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর উপর সংক্ষিপ্তাকারে রচিত এবং সাত পরিচ্ছেদে বিভক্ত। পরিচ্ছেদগুলো হচ্ছে: ১ম পরিচ্ছেদ: হায়েযের অর্থ ও তা সৃষ্টির রহস্য। ২য় পরিচ্ছেদ: হায়েযের বয়স এবং সময়-সীমা। ৩য় পরিচ্ছেদ: হায়েয সংক্রান্ত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী। ৪র্থ পরিচ্ছেদ: হায়েযের বিধি-বিধান।
৫ম পরিচ্ছেদ: ইস্তেহাযাহ ও তার হুকুম। ৬ষ্ট পরিচ্ছেদ: নেফাস ও তার হুকুম। ৭ম পরিচ্ছেদ: হায়েয প্রতিরোধক কিংবা সঞ্চালক এবং জন্মনিয়ন্ত্রণকারী কিংবা গর্ভপাতকারী ঔষধ ব্যবহারের বিধান। প্রথম পরিচ্ছেদ হায়েযের অর্থ ও তা সৃষ্টির রহস্য হায়েযের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন বস্তু নির্গত ও প্রবাহিত হওয়া। আর শরীয়তের পরিভাষায় হায়েয বলা হয় ঐ প্রাকৃতিক রক্তকে, যা বাহ্যিক কোন কার্যকারণ ব্যতীতই নির্দিষ্ট সময়ে নারীর যৌনাঙ্গ দিয়ে নির্গত হয়। হায়েয প্রাকৃতিক রক্ত। অসুস্থতা, আঘাত পাওয়া, পড়ে যাওয়া এবং প্রসবের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এই প্রাকৃতিক রক্ত নারীর অবস্থা ও পরিবেশ- পরিস্থিতির বিভিন্নতার কারণে নানা রকম হয়ে থাকে এবং এ কারণেই ঋতুস্রাবের দিক থেকে নারীদের মধ্যে বেশ পার্থক্য দেখা যায়। বিস্ময়কর তাৎপর্য : পৃথিবীতে বিচরণশীল প্রতিটি মানুষ ও প্রাণী আহার্য্য সংগ্রহ করে থাকে, বিভিন্ন রকম খাদ্যদ্রব্য খেয়ে জীবন যাপন করে, কিন্তু নারীর গর্ভে অবস্থানরত বাচ্চার পক্ষে সে ধরনের খাদ্য বা আহার্য্য গ্রহণ করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয় এবং কোন দয়াপরবশ মানুষের পক্ষেও গর্ভস্থ বাচ্চার নিকট খাদ্য সরবরাহ করা অসম্ভব। ঠিক এমনি মুহূর্তে মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা'আলা নারী জাতির মাঝে রক্ত প্রবাহের এমন এক আশ্চর্য ধারা স্থাপন করেছেন, যার দ্বারা মায়ের গর্ভে অবস্থানরত বাচ্চা মুখ দিয়ে খাওয়া এবং হজম করা ছাড়াই আহার্য্য গ্রহণ করতে পারে। উক্ত রক্ত নাভির রাস্তা দিয়ে বাচ্চার শরীরে প্রবাহিত হয়ে শিরাসমূহে অনুপ্রবেশ করে এবং বাচ্চা এর মাধ্যমে আহার্য্য গ্রহণ করে। নিপুনতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময় ও মহান। এটাই হায়েয সৃষ্টির মূল রহস্য এবং এ কারণেই যখন কোন নারী গর্ভবতী হয় তখন তার হায়েয বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কদাচিৎ এর ব্যতিক্রমও হয়। যা বিবেচনার মধ্যে পড়ে না। তেমনিভাবে খুব কম সংখ্যক প্রসূতির হায়েয হয়ে থাকে, বিশেষ করে প্রসবের প্রাথমিক অবস্থায়। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ রক্তস্রাবের বয়স ও তার সময়-সীমা এই অধ্যায়ে আলোচ্য বিষয় দু'টি: ১) নারীদের রক্তস্রাব কত বছর বয়স থেকে শুরু হয় এবং কত বছর বয়স পর্যন্ত চালু থাকে। ২) রক্তস্রাবের সময়-সীমা। প্রথম বিষয়: সাধারণত ১২ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত নারীদের রক্তস্রাব হয়ে থাকে। তবে কখনো কখনো অবস্থা, আবহাওয়া এবং পরিবেশ- পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে উপরোল্লেখিত বয়সের পূর্বে এবং পরেও রক্তস্রাব হতে পারে। ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন যে, রক্তস্রাব হওয়ার জন্য নারীদের বয়সের এমন কোন নির্দিষ্ট সীমা-রেখা আছে কি না, যার আগে বা পরে রক্তস্রাব হয় না। আর যদিও বা হয় তাহলে সেটা অসুস্থতা হিসেবে পরিগণিত হবে, না রক্তস্রাব হিসেবে? এ প্রসঙ্গে ইমাম দারমী রাহিমাহুল্লাহ সকল মতামতগুলো উল্লেখ করে বলেছেন যে, 'আমার নিকট এর কোনটিই ঠিক নয়। কেননা রক্তস্রাবের জন্য বয়স নির্দিষ্ট করা বা বয়সের সীমা-রেখা নির্ণয় করা নির্ভর করে রক্তস্রাব দেখা দেয়ার উপর। সুতরাং যে কোন বয়স এবং যে কোন সময়ে নারীদের যৌনাঙ্গে কোন প্রকার রক্ত দেখা দিলে সেটাকে রক্তস্রাব বা হায়েয হিসেবে গণ্য করা ওয়াজেব।' আল্লাহ তা'আলাই সর্বজ্ঞ। [আল-মাজমূ' শারহুল মুহায্যাব: ১/৩৮৬] আমার দৃষ্টিতে ইমাম দারমীর এই অভিমতটি সঠিক বলে মনে হচ্ছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহও এই অভিমত গ্রহণ করেছেন। অতএব নারী যখনই তার যৌনাঙ্গে রক্ত দেখতে পাবে তখনই সে ঋতুবতী হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। যদিও সে রক্ত নয় বছর বয়সের পূর্বে কিংবা পঞ্চাশ বছর বয়সের পরে দেখা দেয়। কেননা হায়েযের সমুদয় হুকুম-আহকামকে মহান আল্লাহ ও রাসূলে করীম ৎ রক্ত দেখা দেয়ার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন এবং এর জন্য বয়সের কোন নির্দিষ্ট সময়-সীমা নির্ধারণ করেননি। সুতরাং যে রক্তস্রাবকে হুকুম-আহকামের সাথে সম্পৃক্ত করে রাখা হয়েছে সেটা দেখা দিলেই তার নির্ধারিত বিধান) পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, ঋতুস্রাবকে কোন নির্দিষ্ট বয়সের সাথে সম্পৃক্ত করতে হলে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক কোন একটি দলীলের নিশ্চয়ই প্রয়োজন রয়েছে, অথচ এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে কোনই প্রমাণ নেই। দ্বিতীয় বিষয়: ঋতুস্রাবের সময়-সীমা অর্থাৎ ঋতুস্রাব কতদিন থাকতে পারে। এ ব্যাপারেও ওলামায়ে কেরামের মধ্যে অনেক মতভেদ রয়েছে, এমনকি এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের ছয় অথবা সাতটি অভিমত পাওয়া যায়। ইবনুল মুনযির এবং ফিকহবিদগণের একটি দল বলেছেন যে, হায়েয কমপক্ষে এবং বেশীর পক্ষে কতদিন থাকতে পারে এর কোন নির্দিষ্ট সীমা-রেখা নেই। আমার অভিমত ইমাম দারমীর উপরোল্লিখিত অভিমতের মতই যা শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহও গ্রহণ করেছেন। এবং এটিই সঠিক, কেননা কুরআন, সুন্নাহ ও কিয়াস দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। ১ম দলীল: আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে ইরশাদ করেন: ﻭَﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻧَﻚَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴﺾِ ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺃَﺫًﻯ ﻓَﺎﻋْﺘَﺰِﻟُﻮﺍْ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴﺾِ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺮَﺑُﻮﻫُﻦَّ ﺣَﺘَّﻰَ ﻳَﻄْﻬُﺮْﻥَ ২২২) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ "তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বলে দাও, এটা কষ্টদায়ক বস্তু, কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাক এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিকট যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পবিত্র না হয়।" [সূরা আল-বাকারাহ: ২২২] উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জন করাকে স্ত্রী সঙ্গমের নিষেধাজ্ঞার শেষ সীমা নির্ধারণ করেছেন। এক দিন, এক রাত, তিন দিন, তিন রাত অথবা পনের দিন পনের রাতকে নিষেধাজ্ঞার শেষ সীমা হিসেবে নির্ধারণ করেননি। এ থেকে বুঝা যায় যে, ঋতুস্রাব দেখা দেয়া না দেয়ার উপরই তার হুকুম-আহকামের মূল ভিত্তি। অর্থাৎ যখনই ঋতুস্রাব দেখা দিবে তখনই তার বিধি-বিধান কার্যকরী হবে এবং যখনই বন্ধ হবে বা পবিত্রতা অর্জন করবে তখনই বিধি- বিধানের কার্যকরিতা শেষ হয়ে যাবে। বুঝা গেল, ঋতুস্রাব কতদিন থাকতে পারে এর সর্বোচ্চ এবং সর্ব নিম্ন কোন সীমা নির্দিষ্ট নেই। দ্বিতীয় দলীল: সহীহ মুসলিমে এসেছে: ﺃﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ৎ ﻗَﺎﻝََ ﻟِﻌَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻭَﻗَﺪْ ﺣَﺎﺿَﺖْ ﻭَﻫِﻲَ ﻣُﺤْﺮِﻣَﺔٌ ﺑِﺎﻟْﻌُﻤْﺮَﺓِ : ্থ্থﺍﻓْﻌَﻠِﻲْ ﻣَﺎ ﻳَﻔْﻌَﻞُ ﺍﻟْﺤَﺎﺝُّ ﻏَﻴْﺮَ ﺃﻥْ ﻻَ ﺗَﻄُﻮْﻓِﻲْ ﺑَﺎﻟْﺒَﻴْﺖِ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻬُﺮِﻱ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻮْﻡُ ﺍﻟﻨَّﺤْﺮِ ﻃَﻬُﺮْﺕُ. ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ . উমরার ইহরাম অবস্থায় আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার যখন রক্তস্রাব দেখা দিয়েছিল, তখন রাসূলে করীম সা. তাঁকে বলেছিলেন: তুমি ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত কা'বা শরীফের তওয়াফ ছাড়া উমরার অন্যান্য কাজগুলো করে যাও, যেভাবে হাজীরা করে যাচ্ছে।)) অর্থাৎ ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হলে তখন তওয়াফ করবে) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: যখন কুরবানীর দিন আসলো তখন আমি পবিত্র হলাম। [ম ৪/৩০] সহীহ বুখারীর তৃতীয় খন্ডের ৬১০ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীস এভাবে বর্ণিত হয়েছে: ﺃﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ৎ ﻗَﺎﻝَ : ্থ্থ ﺍﻧْﺘَﻈِﺮِﻱْ ﻓَﺈﺫَﺍ ﻃَﻬُﺮْﺕِ ﻓَﺎﺧْﺮُﺟِﻲْ ﺇﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻨْﻌِﻴْﻢِ অর্থাৎ নবী করীম সা. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছিলেন: তুমি পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, পবিত্রতা অর্জন করার পর উমরাহ আদায়ের উদ্দেশ্যে এহরাম বাঁধার জন্য) তান'য়ীমের দিকে বের হও।)) তান'য়ীম হারামের বাইরে মক্কা মুকাররামার উত্তর পাশে নিকটবর্তী একটি স্থান। নবী করীম সা. এখানেও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তওয়াফ করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট কোন সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেননি। এথেকে প্রতীয়মান হয় যে, রক্তস্রাব দেখা দেয়া না দেয়ার সাথেই তার হুকুম- আহকামের সম্পর্ক। নির্দিষ্ট কোন সময়ের সাথে নয়। তৃতীয় দলীল: ফিকহবিদগণের হায়েয সংক্রান্ত এসব বিস্তারিত আলোচনা ও অনুমান-ধারণা কুরআন ও সুন্নাহতে বিদ্যমান না থাকা সত্বেও প্রয়োজনের খাতিরে বর্ণনা করা জরুরী। যদি এ সমস্ত আলোচনাকে হৃদয়ঙ্গম করা এবং এগুলোর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার উপাসনা করা বান্দার জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং রাসূলে করীম সা. প্রত্যেকের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতেন। কেননা এগুলোর সাথে নারীর নামায, রোযা, বিবাহ, তালাক এবং মীরাসের মাসআলা মাসায়েল সম্পৃক্ত। যেমনিভাবে আল্লাহ তা'আলা ও রাসূল সা. নামাযের সংখ্যা, নামায পড়ার নির্দিষ্ট সময়, নামাযের রুকূ', সেজদাহ, যাকাতের মাল, মালের নিসাব ও পরিমাণ, যাকাত বিতরণ করার নির্দিষ্ট স্থান, রোযার সময়-সীমা এবং হজ্জসহ অন্যান্য বিষয়াবলী স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। এমনকি খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম-নীতি, ঘুমের আদব, স্ত্রী সহবাস, উঠা-বসা, গৃহে প্রবেশ, গৃহ থেকে বের হওয়া, পায়খানা ও প্রস্রাবের নিয়ম- নীতিও বর্ণনা করেছেন। শুধু তাই নয় বরং পায়খানা ও প্রস্রাব করার ব্যবহৃত ঢিলার সংখ্যা নির্ধারণ করাসহ জটিল ও সূক্ষ্ণ বিষয়াদির বিবরণও বিশ্ব মানবের সামনে তুলে ধরেছেন, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা তাঁর মনোনীত ধর্মকে পরিপূর্ণ করেছেন এবং মু'মিন বান্দাদের উপর নিজের নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা নাহ্লের ৮৯ নম্বর আয়াতে নবী করীম ৎ-কে সম্মোধন করে এরশাদ করেন: ﻭَﻧَﺰَّﻟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺗِﺒْﻴَﺎﻧًﺎ ﻟِّﻜُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ৮৯) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺤﻞ "আমি প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়ে তোমার উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছি।" [সূরা আন-নাহ্ল: ৮৯] এমনিভাবে কুরআন শরীফে সূরা ইউসুফের ১১১ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে তিনি আরো ইরশাদ করেন: ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﺪِﻳﺜًﺎ ﻳُﻔْﺘَﺮَﻯ ﻭَﻟَﻜِﻦ ﺗَﺼْﺪِﻳﻖَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻭَﺗَﻔْﺼِﻴﻞَ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻭَﻫُﺪًﻯ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔً ﻟِّﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ১১১) ﺳﻮﺭﺓ ﻳﻮﺳﻒ "এটা কোন মনগড়া কথা নয়, বরং বিশ্বাস স্থাপনকারীদের জন্য পূর্ববর্তী গ্রন্থের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বিবরণ, হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ।" [সূরা ইউসুফ: ১১১] এখন বুঝতে হবে যেহেতু এ সবের বিস্তারিত আলোচনা কুরআন ও হাদীসে নেই সেহেতু এ সবের উপর পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়ারও প্রয়োজন নেই। নির্ভরতার প্রয়োজন শুধু হায়েয দেখা দেয়া না দেয়ার উপর। কুরআন ও সুন্নাহতে এ সমস্ত বিষয়াদি না থাকাটাই প্রমাণ করে যে, এগুলোর কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। হায়েয ঋতুস্রাব) সম্পর্কীয় মাসআলা সহ অন্যান্য সকল মাসআলাসমূহে কুরআন ও সুন্নাহই আপনাকে সাহায্য করবে। কেননা শরীয়তের সকল বিধি-বিধান কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা' অথবা বিশুদ্ধ কিয়াস দ্বারাই প্রমাণিত হয়েছে, অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে নয়। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া একটি নীতিমালা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন: 'কুরআন ও সুন্নাহতে আল্লাহ তা'আলা রক্তস্রাবের সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু হুকুম- আহকাম বর্ণনা করেছেন, কিন্তু রক্তস্রাব কতদিন থাকতে পারে, এর সর্ব নিম্ন ও সর্বোচ্চ সময়-সীমা কি, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেন নি। এমনকি বান্দার জন্য অত্যাধিক প্রয়োজনীয় এবং জটিল বিষয় হওয়া সত্বেও আল্লাহ তা'য়ালা দুই পবিত্রতার মধ্যবর্তী সময়ের সীমা-রেখা নির্দিষ্ট করেননি। আরবী অভিধানও এর কোন সময়-সূচী নির্ধারণ করেনি। সুতরাং হায়েয বা রক্তস্রাবের জন্য যে ব্যক্তি কোন সময়-সীমা নির্দিষ্ট করবে সে সরাসরি কুরআন ও হাদীসের বিরুদ্ধাচরণ করবে।' চতুর্থ দলীল: যা বিশুদ্ধ কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তা'আলা রক্তস্রাবকে ময়লা বস্তু হিসেবে ঘোষণা করেছেন, কাজেই যখনই রক্তস্রাব দেখা দিবে তখনই সেটাকে ময়লা হিসেবেই গণ্য করতে হবে। এক্ষেত্রে রক্তস্রাবের প্রথম এবং দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ, ১৫তম এবং ১৬তম ও ১৭তম এবং ১৮তম দিনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ময়লা ময়লাই। সুতরাং ময়লা যেহেতু উভয় দিনেই বিদ্যমান সেহেতু উক্ত দুই দিনের মধ্যে হুকুমের দিক থেকে পার্থক্য করা কিভাবে সঠিক হতে পারে? এটা কি বিশুদ্ধ কিয়াসের পরিপন্থী নয়? বিশুদ্ধ কিয়াস কি উভয় দিনকে হুকুমের দিক থেকে সমান গণ্য করে না? পঞ্চম দলীল: রক্তস্রাবের জন্য সময়-সীমা নির্ধারণকারীদের পারস্পরিক মতভেদ ও সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে। এবং এ ধরনের পারস্পরিক মতভেদই প্রমাণ করে যে, এ বিষয়ে এমন কোন সমাধান নেই, যেটাকে গ্রহণ করা অত্যাবশ্যকীয়। তা ছাড়া এ সকল মতামত হচ্ছে ইজতেহাদী যা ভুল- শুদ্ধ দ'ুটোরই সম্ভাবনা রাখে। এমতাবস্থায় সমাধান ও সঠিক নির্দেশনা পাওয়ার জন্য কুরআন ও সুন্নাতের দিকেই দৃষ্টি দিতে হবে। উপরোল্লিখিত আলোচনা দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ঋতুস্রাবের সর্ব নিম্ন এবং সর্বোচ্চ কোন সময়-সীমা নির্দিষ্ট নেই, এবং এটিই গ্রহণযোগ্য। সুতরাং নারীর লজ্জাস্থানে রক্ত দেখা দিলে -যা আঘাত বা অন্য কোন কারণে প্রবাহিত হয়নি- ধরে নিতে হবে যে এটি হায়েযের রক্ত হিসেবেই প্রবাহিত হচ্ছে এবং এর জন্য কোন বয়স ও সময় নির্দিষ্ট নেই। তবে হ্যাঁ, এ রক্ত যদি বিরতিহীনভাবে প্রবাহিত হতে থাকে যে, আর বন্ধই হচ্ছে না অথবা অত্যন্ত স্বল্প সময় যেমন মাসে মাত্র এক-দুই দিন প্রবাহিত হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে ইস্তেহাযাহ্ হিসেবে গণ্য করতে হবে যার বিস্তারিত বিবরণ শীঘ্রই সম্মানিত পাঠকবৃন্দের সামনে আসছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ হায়েয সম্পর্কে বলেন: 'নারীদের রেহেম গর্ভাশয়) থেকে যা কিছু বের হবে তাই হায়েয বলেই গণ্য হবে যতক্ষণ না ইস্তেহাযার রক্ত হিসেবে অকাট্য কোন প্রমাণ পাওয়া যায়।' তিনি আরো বলেন: 'নারীর লজ্জাস্থান থেকে যখন কোন প্রকার রক্ত বের হবে তখন যদি জানা না থাকে যে, এটা কি রগ থেকে বের হয়ে আসা রক্ত না কোন আঘাত জনিত কারণে প্রবাহিত রক্ত, তাহলে সে রক্তকে হায়েয হিসেবেই গণ্য করতে হবে।' শায়খুল ইসলাম রাহিমাহুল্লাহর এই অভিমত সময়-সীমা নির্ধারণকারীদের অভিমতের চেয়ে দলীল- প্রমাণের দিক থেকে যেমন শক্তিশালী, ঠিক তেমনই অনুধাবন ও হৃদয়ঙ্গম করার পক্ষে এবং আমল ও বাস্তবায়নের দিক দিয়েও অতি সহজ। এমনকি উক্ত গুণাবলীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে কোন মতকে দ্বীন ও ইসলামের সার্বজনীন নীতির প্রতি লক্ষ্য রেখে গ্রহণ করাই উত্তম। কেননা এটা সহজসাধ্য ও সরল। যেন তা পালন করা কারো পক্ষে কষ্টকর না হয়।) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻣِﻦْ ﺣَﺮَﺝٍ ৭৮) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺤـﺞ "তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নি।" [সূরা আল-হাজ্জ: ৭৮] এবং নবী করীম সা. এরশাদ করেছেন: ্থ্থ ﺇﻥَّ ﺍﻟﺪِّﻳْﻦَ ﻳُﺴْﺮٌ , ﻭَﻟَﻦْ ﻳُﺸَﺎﺩَّ ﺍﻟﺪِّﻳْﻦَ ﺃﺣَﺪٌ ﺇﻻَّ ﻏَﻠَﺒَﻪُ , ﻓَﺴَﺪِّﺩُﻭْﺍ ﻭَﻗَﺎﺭِﺑُﻮْﺍ ﻭَﺃﺑْﺸِﺮُﻭْﺍ ,, নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ। কেউ দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করে জিততে পারে না। কাজেই তোমরা মধ্য পথ অবলম্বন কর, দ্বীনের) নিকটবর্তী থাক এবং অল্প কিন্তু স্থিতিশীল আমলের প্রতিদানের) সুসংবাদ দাও।)) [বুখারী] নবী করীম সা.-এর বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে একটা বৈশিষ্ট্য এই ছিল যে, যতক্ষণ পর্যন্ত গুনাহ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কোন বিষয়ের দুটি দিকের মধ্যে সহজ দিকটাই তিনি গ্রহণ করতেন। গর্ভবতী মহিলার রক্তস্রাব সাধারণত নারী যখন গর্ভবতী হয় তখন রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: 'রক্তস্রাব বন্ধ হওয়ার মাধ্যমে গর্ভবতী বলে প্রমাণিত হয়। সন্তান সম্ভবা মহিলা যদি প্রসবের অল্প সময় পূর্বে যেমন দুই দিন অথবা তিন দিন পর্যন্ত রক্তস্রাব দেখে এবং সাথে যদি প্রসব বেদনা থাকে তাহলে উহাকে নেফাস প্রসবোত্তর রক্তস্রাব) হিসেবে গণ্য করা হবে। আর যদি প্রসবের অনেক পূর্বে রক্ত প্রবাহিত হয়ে থাকে তাহলে উক্ত রক্ত নেফাস হিসেবে গণ্য হবে না। এমতাবস্থায় প্রবাহিত রক্তকে কি হায়েয হিসেবে গণ্য করে তার উপর হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী করা হবে? না অসুস্থতার রক্ত গণ্য করা হবে? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক সমাধান হচ্ছে, সন্তান সম্ভবা মহিলার যদি পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী রক্ত দেখা দেয় তাহলে সেটাকে হায়েয হিসেবে গণ্য করতে হবে। কেননা নারীর লজ্জাস্থান থেকে যে রক্ত বের হয় তা হায়েয হওয়াটাই হচ্ছে প্রকৃত নিয়ম। হ্যাঁ, উক্ত রক্ত হায়েয নয় এর পিছনে যদি কোন রকম শক্ত প্রমাণ থাকে তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু কুরআন ও সুন্নাতের কোথাও এমন কোন প্রমাণ নেই যে, গর্ভবতী মহিলার হায়েয হতে পারে না। ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুমাল্লাহর এটিই মত। ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহও এই মত গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর লিখিত ইখতিয়ারাত গ্রন্থের ৩০ পৃষ্ঠায় ইমাম বাইহাকীর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, ইমাম আহমদের এই জাতীয় একটি অভিমত রয়েছে। বরং তিনি উল্লেখ করেছেন ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুমাল্লাহর উক্ত মতামতের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। এখন প্রতীয়মান হলো যে, সাধারণ মহিলার হায়েযের যে হুকুম গর্ভবতী মহিলারও ঠিক সেই হুকুম। তবে নিম্নোক্ত দু'টি মাসআলায় এর ব্যতিক্রম রয়েছে: ১) তালাক: অন্তঃসত্তা নয় এমন মহিলার ঋতুস্রাবের অবস্থায় ইদ্দত পূরণ করা হলে তাকে তালাক দেয়া হারাম।পক্ষান্তরে সন্তান সম্ভবা মহিলার ঋতুস্রাবের অবস্থায় ইদ্দত পূরণ করা জরুরী হলেও তাকে তালাক দেয়া হারাম নয়। কেননা কুরআন মজীদে বলা হয়েছে যে, ﻓَﻄَﻠِّﻘُﻮﻫُﻦَّ ﻟِﻌِﺪَّﺗِﻬِﻦَّ ১) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻄﻼﻕ "তোমরা তাদেরকে তালাক দিও তাদের ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে।" [সূরা আত-তালাক: ১] সন্তান সম্ভবা নয় এমন মহিলাকে রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেয়া কুরআন শরীফের উক্ত আয়াতের বিরোধী। কিন্তু সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে হায়েযের অবস্থায় তালাক দেয়া কুরআন শরীফের ঘোষণা বিরোধী নয়। কেননা যে ব্যক্তি গর্ভবতী স্ত্রীকে তালাক দিবে সে তো তার ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখেই দিবে, স্ত্রী হায়েযের অবস্থায় থাকুক বা পবিত্র অবস্থায় থাকুক। কারণ গর্ভধারণ দিয়েই তার ইদ্দত পরিগণিত হবে। আর এ কারণেই সঙ্গমের পরে তাকে তালাক দেয়া হারাম নয় বরং জায়েয। পক্ষান্তরে গর্ভবতী নয় এমন মহিলাকে সঙ্গমের পর তালাক দেওয়া হারাম। ২) গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে নারীর ঋতুবতী হওয়া না হওয়া সমান। প্রমাণ হিসেবে পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা তালাকের ৪নং আয়াত পেশ করা হচ্ছে। আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেন: ﻭَﺃُﻭْﻟَﺎﺕُ ﺍﻟْﺄَﺣْﻤَﺎﻝِ ﺃَﺟَﻠُﻬُﻦَّ ﺃَﻥ ﻳَﻀَﻌْﻦَ ﺣَﻤْﻠَﻬُﻦَّ ৪) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻄﻼﻕ "গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।" [সূরা আত-তালাক: ৪] তৃতীয় পরিচ্ছেদ হায়েয অবস্থায় আপতিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হায়েয অবস্থায় আপতিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি কয়েক প্রকার: ১ম বিষয়: রক্তস্রাব নির্দিষ্ট নিয়ম ও পরিমাণের চেয়ে কম অথবা বেশী হওয়া। যেমন কোন নারীর প্রতি মাসে ছয় দিন করে ঋতুস্রাবের অভ্যাস। ছিল কিন্তু এক মাসে ৭ দিন পর্যন্ত ঋতুস্রাব অব্যাহত থাকে অথবা কোন মেয়েলোকের ৭ দিন করে ঋতুস্রাব হয়ে থাকে সেখানে ৬ দিন থাকার পর বন্ধ হয়ে গেল। ২য় বিষয়: নিয়মিত অভ্যাসের আগে-পরে হায়েয আরম্ভ হওয়া। যেমন যেখানে মাসের শেষের দিকে হায়েয আসে সেখানে প্রথম দিকে আসলো অথবা মাসের প্রথম দিকে আসার পরিবর্তে শেষের দিকে আসলো। উপরোক্ত বিষয় দু'টির হুকুম কি? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক সমাধান হচ্ছে এই যে, নারী যখনই ঋতুস্রাব দেখতে পাবে তখনই ঋতুবতী হিসেবে গণ্য হবে এবং যখনই তা বন্ধ হবে তখনই পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে পূর্ব অভ্যাসের চেয়ে কম-বেশী হওয়া কিংবা আগে-পরে হওয়া সমান কথা। এ মাসআলার প্রমাণাদি পূর্বের অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। সার-সংক্ষেপ হল, রক্তস্রাব দেখা দেয়া না দেয়ার উপরই তার হুকুম-আহকাম নির্ভর করে। এটিই ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর অভিমত। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহও এ সমাধানকে গ্রহণ করেছেন। মুগনী গ্রন্থের লেখক উক্ত অভিমতের সমর্থন করে বলেছেন, 'উপরোল্লিখিত অবস্থায় যদি নারীদের নিয়মিত বা পূর্ব অভ্যাস ধর্তব্য হতো তাহলে নিশ্চয় নবী করীম ৎ নিজ উম্মতের কাছে তা বর্ণনা করতেন, বিলম্ব করার কোন প্রশ্নই উঠে না। কারণ নবী করীম ৎ-এর পবিত্র স্ত্রীগণ সহ সকল নারীজাতির জন্য মাসআলাটির বিবরণ সার্বক্ষনিক প্রয়োজনীয় ছিল, তাই তাতে বিলম্ব করা জায়েয ছিলনা। সুতরাং মুহাম্মাদ ৎ এ ব্যাপারে অসতর্ক ছিলেন না, বরং সতর্কই ছিলেন। সুতরাং মুস্তাহাযাহ্ নারী ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে পূর্ব অভ্যাস ধর্তব্য বলে প্রিয় নবী ৎ থেকে কোন আলোচনার সূত্রপাত হয়নি।' [মুগনী: ১/৩৫৩] তৃতীয় বিষয়: হলুদ অথবা মাটি বর্ণের রক্ত প্রসঙ্গ: কোন মহিলা যদি তার লজ্জাস্থানে জখমের পানির মত হলুদ বর্ণের অথবা হলুদ এবং কাল রং এর মধ্যবর্তী বর্ণের রক্ত দেখে তাহলে সে রক্ত ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে অথবা ঋতুস্রাবের পর পরই পবিত্র হওয়ার পূর্বেই প্রবাহিত হলে ঋতুস্রাব বলে গণ্য হবে এবং এর উপর ঋতুস্রাবের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। পক্ষান্তরে যদি সে রক্ত পবিত্রতা অর্জনের পরে প্রবাহিত হয়ে থাকে তাহলে সেটা ঋতুস্রাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা উম্মে আতিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহা এ প্রসঙ্গে বলেছেন: ্থ্থ ﻛُﻨَّﺎ ﻻَ ﻧَﻌُﺪُّ ﺍﻟﺼُّﻔْﺮَﺓَ ﻭَﺍﻟْﻜُﺪْﺭَﺓَ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟﻄُّﻬْﺮِ ﺷَﻴْﺌًﺎ আমরা পবিত্রতা অর্জন করার পর হলুদ অথবা মাটিবর্ণের রক্তকে কিছুই মনে করতাম না।)) [হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ বিশুদ্ধ সনদ দ্বারা উল্লেখ করেছেন। এবং ইমাম বুখারীও বর্ণনা করেছেন তবে 'পবিত্রতা অর্জন করার পর' কথাটি তিনি উল্লেখ না করলেও শিরোনাম দাঁড় করিয়েছেন এভাবে {রক্তস্রাব বিহীন দিনগুলিতে হলুদ অথবা মাটিবর্ণের রক্ত প্রবাহিত হওয়া অধ্যায়}।] বুখারী শরীফের র্শাহ ব্যাখ্যা) ফত্হুল বারীতে বলা হয়েছে যে, এই শিরোনাম দ্বারা ইমাম বুখারী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস ্থ ﻻَ ﺗَﻌْﺠَﻠْﻦَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮَﻳْﻦَ ﺍﻟْﻘَﺼَّﺔَ ﺍﻟْﺒَﻴْﻀَﺎﺀ অর্থাৎ সাদা পানি না দেখা পর্যন্ত তাড়াহুড়া করো না।)) এবং উম্মে আতিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহার উপরোল্লিখিত হাদীসের মধ্যে এভাবে সামঞ্জস্য বিধান করতে চেয়েছেন যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার উদ্দেশ্য হচ্ছে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে যদি হলুদ অথবা মাটিবর্ণের রক্ত দেখে তাহলে সেটা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। এবং উম্মে আতিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীসের অর্থ হচ্ছে যে, ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে পবিত্রতা অর্জন করার পর হলুদ অথবা মাটিবর্ণের রক্ত দেখা দিলে তা ধর্তব্য নয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার যে হাদীসটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে তার প্রকৃত বিষয়বস্তু এই যে, তখনকার নারীরা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহার) খিদমতে দারাজাহ্ এমন জিনিষ যা দ্বারা নারী তার লজ্জাস্থান আবৃত করে রাখে) পাঠাতেন, যেন তারা বুঝতে পারে যে, সেখানে ঋতুস্রাবের কোন চিহ্ন বাকী আছে কি না? সে দারাজাহতে হায়েযের নেকড়া বা তুলা ছিল এবং উক্ত নেকড়ায় হলুদ রং দেখে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন: তোমরা সাদা পানি না দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা কর।)) প্রকাশ থাকে যে, হাদীসে বর্ণিত 'আল-কাস্সাতুল বাইযা' বলা হয় সেই সাদা পানিকে যা হায়েয বন্ধ হওয়ার সময় মহিলার গর্ভাশয় থেকে বের হয়। ৪র্থ বিষয়: ঋতুস্রাব থেমে থেমে প্রবাহিত হওয়া যেমন একদিন প্রবাহিত হয় আর একদিন বন্ধ থাকে। এমতাবস্থায় দেখতে হবে এ ধরনের ব্যতিক্রম সব সময়ই হয় না মাঝে মধ্যে। যদি সব সময়ই হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য করে তার বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। আর যদি সব সময় এমন না হয়, বরং মাঝে মধ্যে এ ধরনের ব্যতিক্রম হয়ে থাকে তাহলে যে সময়টুকুতে বা যে দিনটিতে ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে সেটাকে পবিত্রতার মধ্যে গণ্য করা হবে? না ঋতুস্রাবের অন্তর্ভুক্ত করা হবে? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফিয়ী রাহিমাহুল্লাহর দুই অভিমতের বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে স্রাব বিহীন মধ্যবর্তী ঐ সময়টুকুও হায়েযের মধ্যেই গণ্য করা হবে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ এবং 'আল-ফায়েক' নামক গ্রন্থের লেখক উক্ত অভিমত গ্রহণ করেছেন। ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহর অভিমতও তাই। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সাদা পানি বের না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অথচ মধ্যবর্তী সেই সময়ে সাদা পানি দেখা যায়নি। তাছাড়া যদি স্রাব বিহীন মধ্যবর্তী সেই সময়টাকে পবিত্রতার মধ্যে গণ্য করা হয় তাহলে নিশ্চয়ই তার আগের এবং পরের সময়টাকে হায়েযের মধ্যে গণ্য করতে হবে অথচ এমন কথা কেউই বলেনি। আর যদি মধ্যবর্তী ঐ সময়টুকুকে পবিত্রতার হিসেবে মেনে নেয়া হয় তাহলে তালাক প্রাপ্তা এবং বিধবা স্ত্রীদের ইদ্দতকাল ৫ দিনেই শেষ হয়ে যাবে। এমনিভাবে প্রতি দুই দিনে গোসল করা ইত্যাদি। ফলে নারী জাতির জন্য বিষয়টি অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে অথচ ইসলামী শরীয়তে - আলহামদু লিল্লাহ- কষ্টকর বলতে কোন কিছুই নেই। হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে, বর্ণিত অবস্থায় রক্ত দেখা দিলে তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে এবং পরিচ্ছন্নতা দেখা দিলে তা পবিত্রতা হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু রক্ত এবং পরিচ্ছন্নতার সমষ্টি যদি নিয়মিত হায়েযের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে তাহলে অতিক্রমকারী রক্ত ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য হবে। মুগনী গ্রন্থের ১ম খন্ডের ৩৫৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, 'লক্ষ্য রাখতে হবে রক্ত যদি এক দিনের চেয়ে কম সময় বন্ধ থাকে তাহলে ঐ সময়টাকে পবিত্রতার মধ্যে গণ্য করা হবে না, ঐ হাদীসের উপর ভিত্তি করে যা নেফাসের অধ্যায়ে উল্লিখিত হয়েছে। যার সার-সংক্ষেপ হচ্ছে এই যে, এক দিনের চেয়ে কম সময়ের দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করবে না। এবং এটাই সঠিক সমাধান। কেননা রক্ত একবার প্রবাহিত হবে, একবার বন্ধ হবে, তাহলে এক ঘন্টা পর পর পবিত্রতা অর্জনকারীনী মহিলার পক্ষে গোসল করা চরম কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। অথচ শরীয়তের বিধি-বিধানে কষ্টের কোন স্থান নেই। যেমন মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা আল-হাজ্জের ৭৮ নং আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻣِﻦْ ﺣَﺮَﺝٍ ৭৮) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺤـﺞ "তিনি ধর্মে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি।" [সূরা আল-হাজ্জ: ৭৮] আল-মুগনী গ্রন্থের লেখক বলেন: সুতরাং এক দিনের কম সময় যদি রক্ত বন্ধ থাকে তাহলে তা পবিত্রতার অন্তর্ভুক্ত হবে না। তবে পবিত্রতার উপর কোন প্রমাণ থাকলে সেটা পৃথক কথা। যেমন একজন নারীর নিয়মিত অভ্যাসের শেষ প্রান্তে এসে হায়েয বন্ধ হলো অথবা হায়েয বন্ধ হওয়ার পর মহিলা লজ্জাস্থানে 'কাস্সায়ে বায়যা' অর্থাৎ সাদা পানির রেখা দেখল তাহলে এমতাবস্থায় তা পবিত্রতার অন্তর্ভুক্ত হবে।' আল-মুগনী গ্রন্থের এই অভিমত উপরোক্ত দুই সমাধানের মধ্যবর্তী এক উত্তম অভিমত। আল্লাহই সর্বজ্ঞানী। ৪র্থ পরিচ্ছেদ হায়েযের হুকুম-আহকাম হায়েযের বিশটিরও অধিক হুকুম রয়েছে, তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক প্রয়োজনীয় গুলো এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে। ১) নামায: ঋতুবতী মহিলার জন্য ফরয হোক কিংবা নফল, সকল প্রকার নামায পড়া নিষিদ্ধ। যদি পড়া হয় তাহলে সে নামায শুদ্ধ হবে না। এমনিভাবে ঋতুবতী মহিলার জন্য নামায ওয়াজিবও নয়। তবে পবিত্র হওয়ার পর অথবা ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পূর্বে কোন ওয়াক্তের পূর্ণ এক রাক'আত পড়তে পারে এতটুকু সময় যদি পেয়ে যায় তাহলে উক্ত ওয়াক্তের নামায কাযা করা ওয়াজিব। এক্ষেত্রে সে সময়টুকু ওয়াক্তের প্রথম দিক হোক অথবা শেষ দিক, এতে কোন পার্থক্য নেই। ওয়াক্তের প্রথম দিকে এক রাক'আত পরিমাণ সময় পাওয়ার দৃষ্টান্ত: একজন নারী সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর এক রাক'আত পড়তে পারে এতটুকু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ঋতুবতী হল, তাহলে হায়েয বন্ধ হওয়ার পর মাগরিবের এ নামাযটি কাযা করা তার উপর ওয়াজিব। কেননা সে ঋতুবতী হওয়ার পূর্বে মাগরিবের ওয়াক্ত থেকে এক রাক'আত সম পরিমাণ সময় পেয়েছে। ওয়াক্তের শেষ দিকে এক রাক'আত সময় পাওয়ার দৃষ্টান্ত: একজন নারী সূর্যোদয়ের পূর্বে ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হয়েছে এবং তখনও ফজরের এক রাক'আত আদায় করতে পারে এতটুকু সময় বাকী রয়েছে তাহলে পবিত্র হওয়ার পর সেই ফজরের নামায কাযা করা তার উপর ওয়াজিব। কেননা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর সে ফজরের ওয়াক্ত থেকে এক রাক'আতের সম পরিমাণ সময় পেয়েছে। পক্ষান্তরে ঋতুবতী মহিলা যদি নামাযের ওয়াক্ত থেকে এতটুকু সময় না পায় যার মধ্যে এক রাক'আত নামায পড়া যেতে পারে, যেমন প্রথম দৃষ্টান্তে সূর্যাস্তের পর এক মিনিটের মধ্যেই মহিলা ঋতুবতী হয়ে গেল অথবা ২য় দৃষ্টান্তে সূর্যোদয়ের পূর্বে মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই ঋতু থেকে পবিত্র হল, তাহলে উক্ত মহিলার উপর সেই ওয়াক্তের নামায কাযা করা ওয়াজিব হবে না। কেননা নবী করীম ৎ বলেছেন: ্থ্থ ﻣَﻦْ ﺃﺩْﺭَﻙَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻓَﻘَﺪْ ﺃﺩْﺭَﻙَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ যে ব্যক্তি নামাযের এক রাক'আত পেয়েছে সে পুরো নামাযই পেয়েছে বলে মনে করতে হবে।)) [বুখারী ও মুসলিম] এর মর্মার্থ হলো, যদি কোন ব্যক্তি নামাযের এক রাক'আতের চেয়েও কম অংশ পায় তাহলে পুরো নামায পেয়েছে বলে মনে করা যাবে না। কোন ঋতুবতী মহিলা যদি আসরের সময় থেকে এক রাক'আতের সম পরিমাণ সময় পেয়ে যায় তাহলে তার উপর আসরের সাথে যোহরের নামাযেরও কি কাযা করা ওয়াজিব? এমনিভাবে এশার ওয়াক্ত থেকে এক রাক'আত পড়তে পারে এতটুকু সময় যদি পেয়ে যায় তাহলে তার জন্য কি এশার নামাযের সাথে মাগরিবের নামাযেরও কাযা করা জরুরী? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক অভিমত হচ্ছে শুধুমাত্র যে ওয়াক্তের এক রাক'আত পরিমাণ সময় পাওয়া যাবে সে ওয়াক্তেরই নামাযের কাযা ওয়াজিব। আর তা হচ্ছে শুধু আসর এবং এশা, কেননা নবী করীম সা. বলেছেন: যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাক'আত নামায পেয়েছে সে আসরকে পেয়েছে।)) [বুখারী ও মুসলিম] এখানে নবী করীম সা. বলেননি যে, সে যোহর এবং আসর পেয়েছে। একথাও উল্লেখ করেননি যে, তার উপর যোহরের নামাযের কাযা ওয়াজিব। মূলকথা দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়া। এটা ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালেক রাহিমাহুমাল্লাহর মাযহাব। [শারহুল মুহায্যাব: ৩/৭০] ঋতুবতী মহিলার যিকর করা, তাকবীর বলা, তাসবীহ পাঠ করা, আল্লাহর প্রশংসা করা, খাওয়া-দাওয়াসহ যে কোন কাজে বিসমিল্লাহ বলা, হাদীস পাঠ করা, দু'আ করা, দু'আয় আমীন বলা এবং কুরআন শরীফ শ্রবণ করা ইত্যাদি কোনটাই হারাম নয়। কেননা বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত আছে, ﺃﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ৎ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺘَّﻜِﺊُ ﻓِﻲْ ﺣِﺠْﺮِ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻭَﻫِﻲَ ﺣَﺎﺋِﺾٌ ﻓَﻴَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ . নবী করীম সা. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার রক্তস্রাব চলাকালীন তার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেন।)) বুখারী ও মুসলিম শরীফে উম্মে আতিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সা.-কে আমি বলতে শুনেছি, স্বাধীন নারী, পর্দানশীন ও ঋতুবতী মহিলারা দুই ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহে যেতে পারবে এবং তারা ধর্মীয় আলোচনা ও মু'মিনগণের দু'আয় উপস্থিত হতে পারবে। তবে ঋতুবতী নারীরা নামাযের স্থান থেকে দূরে থাকবে।)) ঋতুবতী মহিলার স্বয়ং কুরআন তেলাওয়াত করার হুকুম: বেশীরভাগ ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, ঋতুবতী মহিলার পক্ষে উচ্চারণ করে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা নাজায়েয এবং নিষিদ্ধ। তবে যদি শুধু চোখ দিয়ে দেখে অথবা মুখ দিয়ে উচ্চারণ ব্যতীত শুধু মনে মনে পড়ে তাহলে কোন অসুবিধা নেই। যেমন, কুরআন শরীফ চোখের সামনে আছে অথবা কুরআন মজীদের আয়াত সম্বলিত কোন বোর্ড সামনে আছে। এমতাবস্থায় ঋতুবতী নারী যদি আয়াতগুলির দিকে তাকায় এবং মনে মনে পড়ে তাহলে এটা জায়েয হওয়ার পিছনে কারো কোন দ্বিমত নেই বলে ইমাম নববী শারহুল মুহায্যাব ২য় খন্ডের ৩৭২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারী, ইবনে জারীর তাবারী এবং ইবনুল মুনযির বলেছেন, এটা জায়েয। ফাতহুল বারী ১ম খন্ডের ৩০৮ পৃষ্ঠায় ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ীর পুরাতন অভিমতের) উদ্ধৃতি দিয়ে এবং বুখারী শরীফে ইব্রাহীম নাখয়ীর উদ্ধৃতি পেশ করে বলা হয়েছে যে, ঋতুবতী নারীর কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করার মধ্যে কোন অসুবিধা নেই। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ ফাতাওয়া গ্রন্থে মাজমূআ ইবনে কাসেম ২৬তম খন্ডের ১৯১ পৃষ্ঠায়) বলেন: 'ঋতুবতী নারীর পক্ষে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা নিষিদ্ধ, এ ব্যাপারে কোনই প্রমাণ নেই। কেননা ঋতুবতী নারী এবং অপবিত্র ব্যক্তি কুরআন শরীফ থেকে কিছুই পড়তে পারবে না।)) বলে যে হাদীসটি রয়েছে তা হাদীস বিশেষজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুর্বল। নবী করীম সা.-এর যুগেও নারীদের রক্তস্রাব আসতো। এখন যদি এই রক্তস্রাবের কারণে নামাযের মত কুরআন শরীফের তেলাওয়াতও তাদের জন্য হারাম হয়ে থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই রাসূলে করীম সা. উম্মতের বৃহত্তর স্বার্থে তা বর্ণনা করতেন এবং তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণকে এ ব্যাপারে শিক্ষা দিতেন এবং কেউ না কেউ নবী সা. থেকে এ ব্যাপারে হাদীস বর্ণনা করতেন। কিন্তু রাসূল সা. থেকে ঋতুবতী নারীর কুরআন তেলাওয়াত হারাম প্রসঙ্গে কেউই কোন কিছু বর্ণনা করেননি। সুতরাং কোন নিষেধাজ্ঞা নাই যেখানে সে ক্ষেত্রে হায়েয অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াতকে হারাম হিসেবে গণ্য করা জায়েয হবে না। আর যেহেতু রাসূল সা.-এর যুগে নারীদের হায়েয হওয়া সত্বেও তাদেরকে কুরআন তেলাওয়াত করতে নিষেধ করেননি। তাই সাব্যস্ত হলো যে, আসলে তা হারাম নয়।' এ প্রসঙ্গে ওলামায়ে কেরামের বিভিন্ন মতামত সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর এখন এটিই বলা উচিত হবে যে, ঋতুবতী নারীর পক্ষে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া উচ্চারণ করে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত না করাই উত্তম। তবে বিশেষ প্রয়োজন হলে যেমন, শিক্ষিকা নারী ছাত্রীদেরকে শিখানোর উদ্দেশ্যে মুখে উচ্চারণ করে কুরআন শরীফ পড়তেই হবে। এমনিভাবে পরীক্ষার্থীনী পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তাগিদে হায়েয অবস্থায়ও কুরআন শরীফ পড়তে পারবে। ২) রোযা: ঋতুবতী নারীর পক্ষে ফরয-নফল সর্ব প্রকার রোযা রাখা হারাম এবং রোযা রাখাও তার জন্য জায়েয হবে না। কিন্তু ফরয রোযার কাযা তার উপর ওয়াজিব। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ্থ্থ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼِﻴْﺒُﻨَﺎ ﺫَﻟِﻚَ , ﺗَﻌْﻨِﻲْ ﺍﻟْﺤَﻴْﺾَ ﻓَﻨُﺆْﻣَﺮُ ﺑِﻘَﻀَﺎﺀِ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡِ ﻭَﻻَ ﻧُﺆْﻣَﺮُ ﺑِﻘَﻀَﺎﺀِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓ আমাদের যখন রক্তস্রাব হতো তখন আমাদেরকে শুধু রোযার কাযা করার আদেশ দেয়া হতো। কিন্তু নামাযের কাযা করার আদেশ দেয়া হতো না।)) [বুখারী ও মুসলিম] রোযা অবস্থায় রক্তস্রাব আসলে তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়। যদিও রক্তস্রাব সূর্যাস্তের সামান্য পূর্বে এসে থাকে। তবে ঐ রোযাটি ফরয হয়ে থাকলে তার কাযা ওয়াজিব। কিন্তু রোযাদার মহিলা যদি রোযা অবস্থায় সূর্যাস্তের পূর্বে লজ্জাস্থানের বেদনা অনুভব করে এবং প্রকৃত পক্ষে রক্তস্রাব সূর্যাস্তের পরেই আরম্ভ হয়ে থাকে তাহলে উক্ত নারীর রোযা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে এবং বিশুদ্ধ অভিমত অনুসারে রোযা নষ্ট হবে না। কারণ পেটের অভ্যন্তরের রক্তের কোন হুকুম নেই। এর প্রমাণ, পুরুষের ন্যায় স্বপ্নদোষ হয় এমন একজন মহিলা সম্পর্কে যখন রাসূলে করীম সা.-কে প্রশ্ন করা হলো যে, তার উপর কি গোসল করা ওয়াজিব? উত্তরে নবী করীম সা. বললেন: হ্যাঁ, যদি সে বীর্য দেখতে পায়।)) উক্ত হাদীসে গোসল ওয়াজিব হবে কি না এ হুকুমটা নবী করীম সা. বীর্য দেখা ও না দেখার সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন। এমনিভাবে বের না হওয়া পর্যন্ত বা দেখা না দেয়া পর্যন্ত হায়েযেরও বিধি- বিধান কার্যকরী হবে না। বরং কার্যকরী তখনই হবে যখন রক্ত দেখা দিবে। হায়েয অবস্থায় ফজরের সময় শুরু হলে ঐ দিনের রোযা রাখা জায়েয নয়। যদিও ফজরের সামান্য সময় পরে পবিত্র হয়ে থাকে। আর যদি ফজরের একটু আগে রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায় এবং বন্ধ হওয়ার পর রোযা রাখে তাহলে তা জায়েয আছে। এমতাবস্থায় গোসল ফজরের পরে করলেও কোন দোষ নেই। যেমন বীর্যস্খলন হেতু শরীর অপবিত্র হওয়ার পর কোন ব্যক্তি যদি অপবিত্রাবস্থায় রোযার নিয়ত করে এবং গোসল ফজরের পরে করে তাতে কোন দোষ নেই। তার রোযা শুদ্ধ হয়ে যাবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত স্পষ্ট হাদীস রয়েছে: ্থ্থ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ৎ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﻣِﻦْ ﺟِﻤَﺎﻉٍ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﺣْﺘِﻼَﻡٍ ﺛُﻢَّ ﻳَﺼُﻮْﻡُ ﻓِﻲْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ,, নবী করীম সা. স্বপ্নদোষ ব্যতীত স্ত্রী সহবাসের কারণে অপবিত্র অবস্থায় ভোরে উঠে রমাযানের রোযা রাখতেন।)) [বুখারী ও মুসলিম] ৩) বাইতুল্লাহ শরীফের তওয়াফ: ঋতুবতী নারীর জন্য বাইতুল্লাহ শরীফের ফরয ও নফল উভয় প্রকার তাওয়াফ করা হারাম। যদি করা হয় তাহলে তা শুদ্ধ হবে না। এর প্রমাণ হচ্ছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার রক্তস্রাব আরম্ভ হওয়ার পর রাসূলে করীম সা. তাঁকে বলেছিলেন: ্থ্থ ﺍﻓْﻌَﻠِﻲْ ﻣَﺎ ﻳَﻔْﻌَﻞُ ﺍﻟْﺤَﺎﺝُّ ﻏَﻴْﺮَ ﺃﻥْ ﻻَّ ﺗَﻄُﻮْﻓِﻲْ ﺑِﺎﻟْﺒَﻴْﺖِ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻬُﺮِﻱ পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তুমি কা'বা শরীফের তওয়াফ ছাড়া হজ্জের অন্যান্য কাজগুলো করে যাও।)) এ হাদীসে নবী সা. হায়েয অবস্থায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে তাওয়াফ করতে নিষেধ করেছেন। বুঝা গেল, রক্তস্রাব অবস্থায় কা'বা শরীফের তওয়াফ করা হারাম। তবে হজ্জ ও উমরার অন্যান্য কাজ যেমন সাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানো, আরাফার ময়দানে অবস্থান করা, মুযদালিফা ও মিনায় রাত্রি যাপন করা এবং জামরায় পাথর নিক্ষেপ করা ইত্যাদি হারাম নয়। এ থেকে আরো পরিষ্কার হয়ে গেল যে, যদি কোন মহিলা পবিত্রাবস্থায় তাওয়াফ করে এবং তাওয়াফ শেষ হওয়া মাত্রই হায়েয শুরু হল অথবা সাফা- মারওয়া পাহাড়ের মাঝে দৌড়ানোর সময় হায়েয দেখা দিল তাহলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। ৪) ঋতুবতী নারীর জন্য বিদায়ী তওয়াফ জরুরী নয়: হজ্জ ও উমরার করণীয় কাজগুলো শেষ করে নিজের দেশের দিকে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে যদি কোন মহিলার রক্তস্রাব আরম্ভ হয়ে যায় এবং রওয়ানা হওয়া পর্যন্তঅব্যাহত থাকে তাহলে বিদায়ী তওয়াফ করা থেকে উক্ত মহিলা মুক্তি পেয়ে যাবে অর্থাৎ বিদায়ী তওয়াফ আর করা লাগবে না) কেননা এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস :-এর হাদীস রয়েছে। তিনি বলেন: ্থ্থ ﺃُﻣِﺮَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺃﻥْ ﻳَﻜُﻮْﻥَ ﺁﺧِﺮَ ﻋَﻬْﺪِﻫِﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﻴْﺖ ﺇﻻَّ ﺃﻧَّﻪُ ﺧُﻔِّﻒَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃﺓِ ﺍﻟْﺤَﺎﺋِﺾ সকল হজ্জকারী) কে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তাদের শেষ কাজ যেন কা'বা শরীফের তাওয়াফ দিয়েই হয়। কিন্তু ঋতুবতী নারীর জন্য এই আদেশ শিথিল করা হয়েছে।)) অর্থাৎ তাদের সেই বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে না। {বুখারী মুসলিম} প্রকাশ থাকে যে, ঋতুবতী নারীর জন্য বিদায়ের প্রাক্কালে মসজিদে হারামের দরজায় গিয়ে মুনাজাত বা প্রার্থনা করা উচিত নয়। কেননা নবী করীম সা. থেকে এ ব্যাপারে কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। অথচ রাসূল ৎ থেকে বর্ণিত হওয়ার উপরই সমস্ত ইবাদতের মূল ভিত্তি। শুধু তাই নয় বরং নবী করীম ৎ থেকে বর্ণিত হাদীস এই হুকুমের বিরোধিতা করে। যেমনটি সাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত। সাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার তাওয়াফে যিয়ারার ফরয তাওয়াফ) পর যখন ঋতুস্রাব দেখা দিল তখন প্রিয় নবী ৎ তাঁকে বললেন: এখন তাহলে মদীনার দিকে বের হয়ে পড়।)) এখানে রাসূল সা. তাঁকে মসজিদের দরজার দিকে যাওয়ার জন্য আদেশ দেননি। যদি বিষয়টি শরীয়ত সম্মত হতো তাহলে নিশ্চয়ই নবী করীম সা. তা বর্ণনা করতেন। তবে হজ্জ ও উমরার তাওয়াফ থেকে ঋতুবতী নারী অব্যাহতি পাবে না। বরং পবিত্রতা অর্জন করার পর তাকে তাওয়াফ করতেই হবে। ৫) মসজিদে ঋতুবতী নারীর অবস্থান: ঋতুবতী নারীর মসজিদে এমনকি ঈদগাহে নামাযের স্থানে অবস্থান করা হারাম। এ প্রসঙ্গে উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসটিকে প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা যায়। তিনি রাসূল ৎ-কে বলতে শুনেছেন: ্থ্থ ﻟِﻴَﺨْﺮُﺝِ ﺍﻟْﻌَﻮَﺍﺗِﻖُ ﻭَﺫَﻭَﺍﺕُ ﺍﻟْﺨُﺪُﻭْﺭِ ﻭَﺍﻟْﺤُﻴَّﺾُ ﻭﻓِﻴﻪ : ্থ্থ ﻳَﻌْﺘَﺰِﻝُ ﺍﻟْﺤُﻴَّﺾُ ﺍﻟْﻤُﺼَﻠَّﻰ ,, স্বাধীন, পর্দানশীন ও ঋতুবতী নারীরা যেন বের হয়।)) হাদীসে এও উল্লেখ আছে: ঋতুবতী নারীরা নামাযের স্থান থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবে।)) ৬) স্ত্রী সহবাস: রক্তস্রাব চলাকালীন স্ত্রী সহবাস করা স্বামীর জন্য যেমন হারাম ঠিক তেমনি ঐ অবস্থায় স্বামীকে মিলনের সুযোগ দেয়াও স্ত্রীর জন্য হারাম। এ হুকুমটি সরাসরি পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন: ﻭَﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻧَﻚَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴﺾِ ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺃَﺫًﻯ ﻓَﺎﻋْﺘَﺰِﻟُﻮﺍْ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴﺾِ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺮَﺑُﻮﻫُﻦَّ ﺣَﺘَّﻰَ ﻳَﻄْﻬُﺮْﻥَ ২২২) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ "তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বলে দাও যে, এটা কষ্টদায়ক বস্তু, কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাক এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিকট যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পবিত্র না হয়।" [সূরা আল-বাকারাহ: ২২২] উক্ত আয়াতে মাহীয) শব্দ দ্বারা হায়েযের সময় এবং লজ্জাস্থানকে বুঝানো হয়েছে। এভাবে হাদীস দ্বারাও বিষয়টি প্রমাণিত। প্রিয় নবী সা. বলেছেন: স্ত্রী সহবাস ছাড়া বাকী সব কিছু করতে পার।)) [মুসলিম] সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা! আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, রক্তস্রাব অবস্থায় স্ত্রী সহবাস হারাম হওয়ার ব্যাপারে সমস্ত মুসলমান একমত। এখানে কারো কোন রকম দ্বিমত নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলা এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখে তার জন্য এমন একটি অসৎ কাজে লিপ্ত হওয়া কোনভাবেই বৈধ হবে না, যার উপর কুরআন, সুন্নাহ এবং মুসলমানদের সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর পরও যারা এ অবৈধ কাজে লিপ্ত হবে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ কারীদের অন্তর্ভুক্ত এবং মু'মিনদের মতাদর্শের পরিপন্থী পথের অনুসারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। আল-মাজমূ' শারহুল মুহায্যাব ২য় খন্ডের ৩৭ নং পৃষ্ঠায় ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, ঋতুস্রাব চলাকালে যে ব্যক্তি স্ত্রী সঙ্গমে লিপ্ত হবে তার কবীরা গুনাহ হবে। আমাদের ওলামায়ে কেরাম যেমন ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: যে ব্যক্তি হায়েয অবস্থায় স্ত্রী মিলনকে হালাল মনে করবে সে কাফের হয়ে যাবে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার যিনি পুরুষের জন্য ঋতুস্রাব চলাকালীন সঙ্গম ব্যতীত স্ত্রীর সাথে এমন সব কাজ করাকে জায়েয করে দিয়েছেন যার মাধ্যমে স্বামী আপন কামোত্তেজনা নির্বাপিত করতে পারে। যেমন চুমু দেয়া, আলিঙ্গন করা এবং লজ্জাস্থান ছাড়া অন্যান্য অঙ্গের মাধ্যমে যৈবিক চাহিদা পূর্ণ করা। তবে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ ব্যবহার না করাই উত্তম। কাপড় বা পর্দা জড়িয়ে আড়াল করে নিলে অসুবিধা নেই। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: নবী করীম সা. ঋতুস্রাব চলাকালীন আমাকে আদেশ করলে আমি ইযার পরতাম। তখন তিনি আমাকে আলিঙ্গন করতেন।)) ৭) তালাক: হায়েয অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেয়া স্বামীর জন্য হারাম। কেননা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা তালাকের ১ম আয়াতে ইরশাদ করেন: ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺇِﺫَﺍ ﻃَﻠَّﻘْﺘُﻢُ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﻓَﻄَﻠِّﻘُﻮﻫُﻦَّ ﻟِﻌِﺪَّﺗِﻬِﻦَّ ১) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻄﻼﻕ "হে নবী! তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদেরকে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দাও।" [সূরা আত-তালাক: ১] অর্থাৎ এমন সময়ে তালাক দিবে যার মাধ্যমে তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী যেন তালাকের পর থেকে নির্দিষ্ট ইদ্দত গণনা করতে পারে। আর এটা গর্ভবতী অবস্থায় অথবা সঙ্গমবিহীন পবিত্রতার সময়ে তালাক দেয়া ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেয়া হলে স্ত্রী ইদ্দত গণনা করতে পারবে না বরং অসুবিধার সম্মুখীন হবে। কেননা যে হায়েযের মধ্যে তাকে তালাক দেয়া হয়েছে সেটা তো ইদ্দতের মধ্যে গণ্য হবে না। এমনিভাবে যদি পবিত্রতার অবস্থায় সঙ্গমের পর তালাক দেয়া হয় তখনও ইদ্দতকাল নির্দিষ্ট করা সম্ভব হবে না। কেননা এই সঙ্গমের দ্বারা স্ত্রীর গর্ভবতী হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণ অজানা থাকবে। যদি গর্ভবতী না হয়ে থাকে তাহলে হায়েযের মাধ্যমে ইদ্দত গণনা করবে। এমতাবস্থায় যেহেতু ইদ্দতের প্রকার সম্পর্কে কোন কিছু নিশ্চিত জানা নেই সেহেতু বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তালাক দেয়া হারাম। উপরোক্ত আয়াত দ্বারা স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের অবস্থায় তালাক দেয়া হারাম প্রমাণিত হয়েছে এবং বুখারী ও মুসলিম সহ হাদীসের অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত হাদীস দ্বারাও এটিই প্রতীয়মান হয়। যেমন ইবনে উমর : থেকে বর্ণিত, তিনি স্বীয় স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের অবস্থায় তালাক দিলে উমর : নবী করীম ৎ-কে সে বিষয়ে অবহিত করেন। নবী করীম ৎ রাগান্বিত হয়ে বললেন: ্থ্থ ﻣُﺮْﻩُ ﻓَﻠْﻴُﺮَﺍﺟِﻌْﻬَﺎ ﺛُﻢَّ ﻟِﻴُﻤْﺴِﻜْﻬَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻬُﺮَ ﺛُﻢَّ ﺗَﺤِﻴْﺾَ ﺛُﻢَّ ﺗَﻄْﻬُﺮَ ﺛُﻢَّ ﺇﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺃﻣْﺴَﻚَ ﺑَﻌْﺪُ ﻭَﺇﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﻃَﻠَّﻖَ ﻗَﺒْﻞَ ﺃﻥْ ﻳَﻤُﺲَّ ﻓَﺘِﻠْﻚَ ﺍﻟْﻌِﺪَّﺓُ ﺍﻟَّﺘِﻲْ ﺃﻣَﺮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺃﻥْ ﺗُﻄَﻠَّﻖَ ﻟَﻬَﺎ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀُ তুমি তাকে আদেশ কর সে যেন তালাক প্রত্যাহার করে স্ত্রীকে নিয়ে আসে এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজের কাছে রাখে। অতঃপর পুনরায় যখন ঋতুস্রাব দেখা দিবে এবং সেই ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন নিজের নিকট রাখতে চাইলে রাখবে এবং তালাক দিতে চাইলে সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিয়ে দিবে। আর এটাই হচ্ছে সেই ইদ্দত যার প্রতি লক্ষ্য রেখে আল্লাহ তালাক দেয়ার জন্য নির্দেশ করেছেন।)) যদি কোন স্বামী ঋতুস্রাব অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং এর জন্য আল্লাহ তা'আলার নিকট তাওবা করতঃ স্ত্রীকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে যাতে পরবর্তীতে আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূলের হুকুম মোতাবেক তালাক দিতে পারে। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার পর যে হায়েযে তালাক দেয়া হয়েছে সে হায়েয থেকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত নিজের কাছেই রাখবে। অতঃপর পুনরায় যখন রক্তস্রাব দেখা দিবে এবং তা থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন চাইলে তাকে স্ত্রী হিসেবে নিজের কাছে রেখেও দিতে পারবে আবার তালাক দিতে চাইলে সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিতে হবে। প্রকাশ থাকে যে, রক্তস্রাব অবস্থায় তালাক দেয়া হারাম কিন্তু তিনটি ক্ষেত্রে তা জায়েয আছে। ১ম: বিবাহের পর স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে নির্জন স্থানে একাকীভাবে একত্রিত হওয়ার পূর্বেই অথবা বিবাহের পর সহবাসের পূর্বেই রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেয় তাহলে তা হারাম নয়। কেননা এমতাবস্থায় স্ত্রীর উপর কোন ইদ্দত পালন ওয়াজিব নয়। সুতরাং এই ক্ষেত্রে তালাক প্রদান করা আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী হবে না। ২য়: রক্তস্রাব যদি গর্ভবতী অবস্থায় দেখা দেয় তাহলে তালাক প্রদান করা হারাম নয়। ৩য়: তালাক যদি কোন কিছুর বিনিময়ে দেয়া হয় তাহলে হায়েয অবস্থায়ও তালাক দেয়া জায়েয। যেমন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া-বিবাদ এবং খারাপ সম্পর্ক বিরাজ করলে স্বামী বিনিময় নিয়ে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে, যদিও স্ত্রী রক্তস্রাবের অবস্থায় থাকে। প্রমাণ স্বরূপ ইবনে আব্বাস : থেকে বর্ণিত হাদীস উপস্থাপন করা যায়: ﺃَﻥَّ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓَ ﺛَﺎﺑِﺖِ ﺑْﻦِ ﻗَﻴْﺲٍ : ﺃَﺗَﺖِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ! ﺛَﺎﺑِﺖُ ﺑْﻦُ ﻗَﻴْﺲٍ ﻣَﺎ ﺃَﻋْﺘِﺐُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓِﻲ ﺧُﻠُﻖٍ ﻭَﻟَﺎ ﺩِﻳﻦٍ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺃَﻛْﺮَﻩُ ﺍﻟْﻜُﻔْﺮَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ্থ্থ ﺃَﺗَﺮُﺩِّﻳﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺣَﺪِﻳﻘَﺘَﻪُ؟ ,, ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻧَﻌَﻢْ , ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ্থ্থ ﺍﻗْﺒَﻞْ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﻘَﺔَ ﻭَﻃَﻠِّﻘْﻬَﺎ ﺗَﻄْﻠِﻴﻘَﺔً ,, সাবেত ইবনে কায়েস :-এর স্ত্রী রাসূলে করীম সা.- এর নিকট এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্বামীর চরিত্র এবং ধর্ম সম্পর্কে আমি কোন রকম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি না। তবে ইসলামের মধ্যে কুফুরীকে আমি অপছন্দ করি। তখন নবী সা. তাকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিতে পারবে?)) উত্তরে মহিলা বললেন: জি হ্যাঁ। এরপর নবী করীম সা. সাবেত ইবনে কায়েস :-কে বললেন: তুমি বাগানটি নিয়ে তাকে তালাক দিয়ে দাও।)) [বর্ণনায় বুখারী] স্ত্রী রক্তস্রাব অবস্থায় আছে না পবিত্র অবস্থায় ? নবী সা. এ বিষয়ে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করেননি। সুতরাং বুঝা গেল যে, বিনিময় নিয়ে তালাক দেয়া জায়েয আছে যদিও স্ত্রী হায়েয অবস্থায় থাকে। দ্বিতীয়তঃ এই তালাক তো অর্থের বিনিময়ে স্বামী থেকে স্ত্রীর বিচ্ছিন্ন হওয়ার একটা পথ মাত্র। সুতরাং যে কোন সময়ে এবং যে কোন অবস্থাতে প্রয়োজন দেখা দিলে এ ধরনের তালাক দেয়া জায়েয। মুগনী গ্রন্থের ৭ম খন্ডে ৫২ পৃষ্ঠায় 'খোলা' অর্থাৎ ঋতুস্রাবগ্রস্ত স্ত্রীর পক্ষে অর্থের বিনিময়ে স্বামী থেকে তালাক নেয়া জায়েয হওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এমন ক্ষতি থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করার জন্যই হায়েয চলাকালে তালাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তাকে ইদ্দতকাল দীর্ঘ হলে। আর অর্থ নিয়ে তালাক নেয়ার বিধানটিও ক্ষতির সম্মুখীন যাতে না হতে হয় সে উদ্দেশ্যেই শরীয়ত কর্তৃক বিধিত হয়েছে। ক্ষতি বলতে যেমন স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, মনোমালিন্য অথবা স্ত্রীর স্বামীকে অপছন্দ করা, তাকে ঘৃণা করা এবং তার সাথে সংসার করতে অনীহা প্রকাশ করা। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এ অবস্থার সৃষ্টি হলে মূলতঃ এটা স্ত্রীর জন্য ইদ্দতকাল দীর্ঘ হওয়ার চেয়েও বড় সমস্যা। সুতরাং সামান্য ক্ষতি হলেও বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রক্তস্রাবের অবস্থায়ও বিনিময় দিয়ে তালাক নেয়া জায়েয। এবং এ কারণেই রাসূল সা. অর্থের বিনিময়ে তালাক গ্রহণকারী উক্ত মহিলার অবস্থা সম্পর্কে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করেননি। হায়েয অবস্থায় নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয। এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা প্রতিটি জিনিষের হালাল হওয়াটাই হচ্ছে প্রকৃত নিয়ম এবং শরীয়তের দিক দিয়ে এটা নিষিদ্ধ হওয়ার কোন প্রমাণও নেই। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, হায়েয অবস্থায় স্বামীকে স্ত্রীর নিকট যেতে দেয়া যাবে কি না? উত্তরে বলতে হবে, যদি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে স্বামী সঙ্গম থেকে বিরত থাকবে তাহলে কোন অসুবিধা নেই। অন্যথায় সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে স্বামীকে স্ত্রীর নিকট পাঠানো যাবে না বা যেতে দেয়া হবে না। ৮) হায়েযের মাধ্যমে তালাকের ইদ্দত গণনা করা: কোন পুরুষ যদি স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করার পর অথবা নির্জন স্থানে একত্রিত হওয়ার পর তালাক দেয় তাহলে পূর্ণ তিন হায়েযের মাধ্যমে ইদ্দতকাল গণনা করা তালাক প্রাপ্তা নারীর উপর ওয়াজিব। তবে শর্ত হচ্ছে উক্ত স্ত্রীকে ঋতুবতী মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে এবং সন্তান সম্ভবা হবে না। প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার ঘোষণা: َﺍﻟْﻤُﻄَﻠَّﻘَﺎﺕُ ﻳَﺘَﺮَﺑَّﺼْﻦَ ﺑِﺄَﻧﻔُﺴِﻬِﻦَّ ﺛَﻼَﺛَﺔَ ﻗُﺮُﻭَﺀٍ ২২৮) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ "তালাক প্রাপ্তা নারী তিন হায়েয পর্যন্ত নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে।" [সূরা আল-বাকারাহ: ২২৮] আর যদি তালাক প্রাপ্তা নারী সন্তান সম্ভবা হয়ে থাকে তাহলে তার ইদ্দতকাল হবে সন্তান প্রসব পর্যন্তকেননা আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন: ﻭَﺃُﻭْﻟَﺎﺕُ ﺍﻟْﺄَﺣْﻤَﺎﻝِ ﺃَﺟَﻠُﻬُﻦَّ ﺃَﻥ ﻳَﻀَﻌْﻦَ ﺣَﻤْﻠَﻬُﻦَّ ৪) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻄﻼﻕ "গর্ভবতী নারীদের ইদ্দত সন্তান প্রসব পর্যন্ত।" [সূরা আত-তালাক: ৪] আর যদি তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী ঋতুবতী নারীদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে থাকে, যেমন কম বয়স্কা, যার রক্তস্রাব এখনো আরম্ভ হয়নি বা অতিবয়স্কা নারী যার বয়োঃবৃদ্ধির কারণে হায়েয আসার সম্ভাবনা নেই অথবা অস্ত্রোপচার জনিত কারণে গর্ভাশয় নষ্ট হওয়ায় হায়েয আসছে না ইত্যাদি কারণে যে সকল মহিলার রক্তস্রাবের সম্ভাবনা নেই তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ তিন মাস। প্রমাণ হচ্ছে পবিত্র কুরআনের বাণী: ﻭَﺍﻟﻠَّﺎﺋِﻲ ﻳَﺌِﺴْﻦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴﺾِ ﻣِﻦ ﻧِّﺴَﺎﺋِﻜُﻢْ ﺇِﻥِ ﺍﺭْﺗَﺒْﺘُﻢْ ﻓَﻌِﺪَّﺗُﻬُﻦَّ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔُ ﺃَﺷْﻬُﺮٍ ﻭَﺍﻟﻠَّﺎﺋِﻲ ﻟَﻢْ ﻳَﺤِﻀْﻦَ ৪) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻄﻼﻕ "তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবতী হওয়ার আশা নেই তাদেরকে নিয়ে সন্দেহ হলে হায়েয দ্বারা ইদ্দত গণনা সম্ভব না হলে) তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস। এমনিভাবে যারা এখনো ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদের ইদ্দতকালও অনুরূপ হবে।" [সূরা আত-তালাক: ৪] ঋতুবতী নারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্বেও যে সমস্ত মহিলার নির্দিষ্ট কোন কারণে যেমন অসুস্থতা বা দুগ্ধ পান করানোর ফলে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত হায়েয আসে না তারা ইদ্দতের মধ্যেই পড়ে থাকবে। যদিও ইদ্দতকাল দীর্ঘ হয়ে যায়। অতঃপর যখন রক্তস্রাব আরম্ভ হবে তখন ইদ্দত গণনা শুরু করবে। আর যদি নির্দিষ্ট কারণটি শেষ হওয়ার পরেও রক্তস্রাব না আসে যেমন রোগ থেকে মুক্তি লাভ করেছে অথবা দুধ পান করানো শেষ হয়ে গিয়েছে অথচ হায়েয বন্ধই রয়েছে তাহলে কারণটি শেষ হওয়ার পর থেকে পূর্ণ এক বছর ইদ্দত পালন করবে এবং এটাই বিশুদ্ধ অভিমত, যা শরীয়তের বিধান অনুসারে কার্যকরী হয়ে থাকে। কেননা নির্দিষ্ট কারণ শেষ হওয়ার পরেও হায়েয না আসা বিনা কারণে হায়েয বন্ধ থাকার মতই। আর কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া হায়েয বন্ধ থাকলে পূর্ণ এক বছর ইদ্দত পালন করতে হয়। তন্মধ্যে ৯ মাস গর্ভের কারণে সতর্কতাবশতঃ, আর তিন মাস ইদ্দতের কারণে। যদি বিবাহের পর স্পর্শ করার অথবা স্বামী-স্ত্রী কোন নির্জন স্থানে একাকীভাবে একত্রিত হওয়ার পূর্বেই তালাক দেয়া হয় তাহলে তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে আদৌ ইদ্দত পালন করতে হবে না, না হায়েযের মাধ্যমে না অন্য কোন পন্থায়। কারণ মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মু'মিন বান্দাদেরকে সম্মোধন করে ইরশাদ করেন: ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﺫَﺍ ﻧَﻜَﺤْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﺛُﻢَّ ﻃَﻠَّﻘْﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞِ ﺃَﻥ ﺗَﻤَﺴُّﻮﻫُﻦَّ ﻓَﻤَﺎ ﻟَﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦْ ﻋِﺪَّﺓٍ ﺗَﻌْﺘَﺪُّﻭﻧَﻬَﺎ ৪৯) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻷﺣﺰﺍﺏ "হে মু'মিনবৃন্দ! তোমরা মু'মিনা নারীদেরকে বিয়ে করার পর এবং স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিলে তোমাদের জন্যে তাদের পালনীয় কোন ইদ্দত নেই যা তোমরা গণনা করবে।" [সূরা আল-আহযাব: ৪৯] ৯) হায়েযের মাধ্যমে গর্ভাশয় সন্তানমুক্ত সম্পর্কিত হুকুম: গর্ভে ভ্রূণশূন্যতার সাথে শরীয়তের কয়েকটি হুকুম সম্পৃক্ত। তন্মধ্যে যদি গর্ভাবস্থায় স্বামী মারা যায় তখন ঐ গর্ভজাত সন্তান তার উত্তরসূরী হবে। উক্ত মহিলাকে যদি পুনঃ বিবাহ দেয়া হয় স্বামী মহিলাটির ঋতুস্রাব অথবা গর্ভে সন্তান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত তার সাথে সহবাস করবে না। এখন যদি সে অন্তঃসত্ত্বা হয় তাহলে মৃত ব্যক্তির সাথে সেই সন্তানটির উত্তরাধিকারের হুকুম দেয়া হবে। কেননা তার মৃত্যুর সময় সন্তানের অস্তিত্ব গর্ভাশয়ে ছিল। আর যদি মহিলাটির ঋতুস্রাব হয় তখন পূর্ব স্বামীর ওয়ারিশ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কেননা ঋতুস্রাব দ্বারা গর্ভাশয় ভ্রূণমুক্ত বলেই সর্ব সম্মতিক্রমে বিবেচনা করা হয়। ১০) গোসল ওয়াজিব প্রসঙ্গ: ঋতুবতী নারীর ঋতুস্রাব বন্ধ হলে গোসলের মাধ্যমে পুরো শরীরের পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে নবী করীম সা. ফাতেমা বিনতে হুবাইশকে বলেছিলেন: ্থ্থ ﻓَﺈﺫَﺍ ﺃﻗْﺒَﻠَﺖِ ﺍﻟْﺤَﻴْﻀَﺔُ ﻓَﺪَﻋِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻭَﺇﺫَﺍ ﺃﺩْﺑَﺮَﺕْ ﻓَﺎﻏْﺘَﺴِﻠِﻲْ ﻭَﺻَﻠِّﻲ যখন তোমার রক্তস্রাব আরম্ভ হবে তখন নামায ছেড়ে দিবে। আর যখন বন্ধ হবে তখন গোসল করে নামায পড়বে।)) [বুখারী] ওয়াজিব গোসল সমাপনের সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে পুরো দেহটাকে চুলের গোড়া সহ গোসলের মধ্যে শামিল করে নেয়া। আর উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে হাদীস শরীফে বর্ণিত পন্থায় গোসল করা। জনৈকা আসমা বিনতে শাকাল নবী করীম ৎ-কে ঋতুবতী মহিলার গোসল সম্পর্কে প্রশ্ন করলে রাসূলুল্লাহ ৎ ইরশাদ করেন: ্থ্থ ﺗَﺄْﺧُﺬُ ﺇﺣْﺪَﺍﻛُﻦَّ ﻣَﺎﺀَﻫَﺎ ﻭَﺳِﺪْﺭَﺗَﻬَﺎ ﻓَﺘَﻄَﻬَّﺮُ ﻓَﺘُﺤْﺴِﻦَ ﺍﻟﻄُّﻬُﻮْﺭَ ﺛُﻢَّ ﺗَﺼُﺐُّ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺃﺳِﻬَﺎ ﻓَﺘَﺪْﻟُﻜَﻪُ ﺩَﻟْﻜًﺎ ﺷَﺪِﻳْﺪًﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺒْﻠُﻎَ ﺷُﺌُﻮْﻥَ ﺭَﺃﺳِﻬَﺎ ﺛُﻢَّ ﺗَﺼُﺐُّ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺍﻟْﻤَﺎﺀَ , ﺛُﻢَّ ﺗَﺄﺧُﺬُ ﻓِﺮْﺻَﺔً ﻣُﻤَﺴَّﻜَﺔً ﺃﻱْ ﻗِﻄْﻌَﺔَ ﻗُﻤَﺎﺵٍ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﻣِﺴْﻚٌ ﻓَﺘَﻄَﻬَّﺮُ ﺑِﻬَﺎ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﺃﺳْﻤَﺎﺀُ: ﻛَﻴْﻒَ ﺗَﻄَﻬَّﺮُ ﺑِﻬَﺎ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ্থ্থﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪِ! ﺗَﻄَﻬَّﺮِﻳْﻦَ ﺑِﻬَﺎ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ: ﻛَﺄﻧَّﻬَﺎ ﺗُﺨْﻔِﻲْ ﺫَﻟِﻚَ ﺗَﺘَّﺒِﻌﻴْﻦَ ﺃﺛَﺮَ ﺍﻟﺪَّﻡِ . তোমরা বরইপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করবে। অতঃপর মাথায় পানি ঢালবে এবং উত্তমরূপে ঘষে ঘষে চুলের গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌঁছাবে এবং সম্পূর্ণ শরীরে পানি ঢেলে দিবে। পরে কস্তুরী মাখানো এক টুকরা কাপড় দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করবে।)) একথা শুনে আসমা বললেন: কস্তুরী মাখানো বস্ত্র দ্বারা কিভাবে পবিত্রতা হাসিল করবো? তখন নবী সা. বললেন: সুবহানাল্লাহ! তুমি তা দিয়েই পবিত্রতা হাসিল করবে।)) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা চুপিসারে তাকে বললেন: রক্তের চিহ্ন উক্ত কস্তুরী মিশ্রিত) কাপড় দ্বারা ঘষে মুছে ফেলবে। [বুখারী] গোসলের সময় নারীদের মাথায় চুল বাঁধা থাকলে তা খোলা আবশ্যক নয়। তবে যদি এমন শক্তভাবে বাঁধা থাকে যে, চুলের গোড়ায় পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থাকে তাহলে বন্ধন খোলা ওয়াজিব। সহীহ মুসলিমে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত এক হাদীস দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। তিনি রাসূল সা.-কে প্রশ্ন করেছিলেন যে, আমি আমার মাথার চুল বেঁধে রাখি। এখন পবিত্রতার জন্য গোসলের সময় অন্য রেওয়ায়েত অনুযায়ী) অপবিত্রতা ও হায়েযের গোসলের সময় আমি কি তা খুলে নিব? উত্তরে রাসূল সা. বললেন: ্থ্থ ﻻَ ﺇﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻜْﻔِﻴْﻚِ ﺃﻥْ ﺗَﺤْﺜِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺃﺳِﻚِ ﺛَﻼَﺙَ ﺣَﺜَﻴَﺎﺕٍ ﺛُﻢَّ ﺗُﻔِﻴْﻀِﻴْﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﺍﻟْﻤَﺎﺀَ ﻓَﺘَﻄْﻬُﺮِﻳﻦَ না, বরং তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, তুমি মাথার ওপর তিন আঁজলা পানি ঢেলে দিবে। অতঃপর সারা শরীরে পানি ঢেলে পবিত্রতা অর্জন করবে।)) নামাযের ওয়াক্ত চলাকালে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে ঋতুবতী মহিলার উপর তাড়াতাড়ি গোসল করা ওয়াজিব, যাতে উক্ত নামায নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে পারে। তবে ঋতুবতী মহিলা যদি সফরে থাকে এবং সঙ্গে পানি না থাকে অথবা সাথে পানি আছে কিন্তু ব্যবহার করলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে অথবা অসুস্থতার কারণে ব্যবহার করলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে তাহলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নিবে। কিছু কিছু মহিলা এমনও আছেন যারা নামাযের ওয়াক্তের মধ্যেই রক্তস্রাব বন্ধ হওয়া সত্বেও গোসল করতে বিলম্ব করেন এবং এই বলে কারণ দেখিয়ে থাকেন যে এই সময়ে পূর্ণাঙ্গরূপে পবিত্র হওয়া সম্ভব নয়। মূলতঃ এটা কোন দলীল বা ওজর হতে পারে না। কেননা ওয়াজিবের সর্ব নিম্ন স্তর অনুসারে কোন রকম গোসল সেরে ওয়াক্তের মধ্যে নামায আদায় করা সম্পূর্ণ সম্ভব, অসম্ভবের কিছুই নেই। অতঃপর দীর্ঘ সময় পাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গরূপে পবিত্রতা অর্জন করে নিতে পারে। পঞ্চম পরিচ্ছেদ ইস্তেহাযা ও তার বিধান ইস্তেহাযাহর সংজ্ঞা: কোন নারীর যদি অনবরত এমনভাবে রক্ত প্রবাহিত হয় যে কোন সময়েই বন্ধ হয় না, অথবা খুব অল্প সময় যেমন মাসে এক কি দুই দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকে তাহলে উক্ত প্রবাহমান রক্তকে ইস্তেহাযাহ বলা হয়। এক সাথে এমনভাবে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার দৃষ্টান্ত সহীহ বুখারীতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন: ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻓَﺎﻃِﻤَﺔُ ﺑِﻨْﺖِ ﺃﺑِﻲْ ﺣُﺒَﻴْﺶٍ ﻟِﺮَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ :ৎ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ! ﺇﻧِّﻲْ ﻻَ ﺃﻃْﻬُﺮُ. ﻭَﻓِﻲْ ﺭِﻭَﺍﻳَﺔٍ: ﺃﺳْﺘَﺤَﺎﺽُ ﻓَﻼَ ﺃﻃْﻬُﺮُ . ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সা.-কে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমি পবিত্র হতে পারছি না। অন্য রেওয়ায়েতে আছে: আমার অবিরাম রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে যার ফলে আমি পবিত্রতা অর্জন করতে পারছি না। খুব অল্প সময়ের জন্য বন্ধ হওয়ার দৃষ্টান্ত হামনাহ বিনতে জাহ্শ রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীসে রয়েছে। তিনি এক সময় নবী ৎ-এর নিকট এসে আরয করেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! অনেক দীর্ঘ সময় ধরে আমার রক্তস্রাব হয়। এই হাদীসখানা ইমাম আহমদ, ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী রাহিমাহুমুল্লাহ বর্ণনা করেছেন এবং বিশুদ্ধ বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন এবং ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ হাসান হিসেবে মত ব্যক্ত করেছেন বলে বর্ণিত আছে। মুস্তাহাযাহ তথা অস্বাভাবিক রক্তস্রাবে আক্রান্ত নারীর বিভিন্ন অবস্থা অনবরত রক্ত প্রবাহিত হয় এমন নারীর অবস্থা তিন প্রকার: ১) ইস্তেহাযাহ অর্থাৎ অনবরত রক্ত প্রবাহ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে তার প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঋতুস্রাবের অভ্যাস ছিল। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে পূর্ব নির্ধারিত সময় পর্যন্ত প্রবাহমান রক্তকে হায়েয হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এর উপর হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পরের রক্তস্রাবকে ইস্তেহাযাহ গণ্য করে তার নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে। যেমন, একজন নারীর প্রতি মাসের প্রথম দিকে ছয় দিন করে রক্তস্রাব হয়ে থাকে। এখন হঠাৎ করে দেখা গেল যে, ঐ নারীর অবিরাম রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, তাহলে তখন প্রতি মাসের প্রথম ছয় দিনে প্রবাহিত রক্তকে হায়েয হিসেবে গণ্য করে বাকীটাকে ইস্তেহাযাহ হিসেবে ধরে নিতে হবে। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। হাদীসটি হচ্ছে: ﺃﻥَّ ﻓَﺎﻃِﻤَﺔَ ﺑِﻨْﺖِ ﺃﺑِﻲْ ﺣُﺒَﻴْﺶٍ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ! ﺇﻧِّﻲْ ﺃﺳْﺘَﺤَﺎﺽُ ﻓَﻼَ ﺃﻃْﻬُﺮُ ﺃﻓَﺄﺩَﻉُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ؟ ﻗَﺎﻝَ : ্থ্থ ﻻَ ﺇﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﻋِﺮْﻕٌ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺩَﻋِﻲْ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻗَﺪْﺭَ ﺍﻟْﺄﻳَّﺎﻡِ ﺍﻟَّﺘِﻲْ ﻛُﻨْﺖِ ﺗَﺤِﻴْﻀِﻴْﻦَ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﺛُﻢَّ ﺍﻏْﺘَﺴِﻠِﻲْ ﻭَﺻَﻠِّﻲ ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সা.-কে প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার অবিরাম রক্তস্রাব হচ্ছে যার কারণে আমি পবিত্র হতে পারছি না। এমতাবস্থায় আমি কি নামায ছেড়ে দেব? উত্তরে নবী ৎ বললেন: না, এটি রগ থেকে বের হয়ে আসা রক্ত। তবে হ্যাঁ, সাধারণতঃ অন্যান্য মাসে যতদিন তুমি ঋতুবতী থাকতে ততদিন নামায থেকে বিরত থাক তারপর গোসল করে নামায আদায় কর।)) [বুখারী] আর সহীহ মুসলিমে আছে: ﺃﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ৎ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﺄﻡِّ ﺣَﺒِﻴْﺒَﺔَ ﺑِﻨْﺖِ ﺟَﺤْﺶٍ : ্থ্থ ﺍﻣْﻜُﺜِﻲْ ﻗَﺪﺭَ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺗَﺤْﺒِﺴُﻚِ ﺣَﻴْﻀَﺘُﻚِ ﺛُﻢَّ ﺍﻏْﺘَﺴِﻠِﻲْ ﻭَﺻَﻠِّﻲ নবী করীম সা. উম্মে হাবীবা বিনতে জাহ্শ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছিলেন: তুমি ঐ পরিমাণ সময় অপেক্ষা কর যে পরিমাণ সময় সাধারণতঃ ঋতুস্রাবে আক্রান্ত থাক। অতঃপর গোসল করে নামায আদায় কর।)) এ থেকে বুঝা গেল যে, মুস্তাহাযাহ অর্থাৎ অবিরাম রক্তস্রাব হয় এমন নারী ঐ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করবে এবং নামায থেকে বিরত থাকবে যে পরিমাণ সময় সে সাধারণতঃ ঋতুস্রাবে আক্রান্ত থাকত। তারপর গোসল করে নামায আদায় করতে থাকবে এবং রক্তের কারণে নামায আদায়ে মনে কোন রকম দ্বিধা রাখবে না। ২) ইস্তেহাযাহ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে আক্রান্ত নারীর ঋতুস্রাবের কোন নির্দিষ্ট সময়-সীমা নেই। অর্থাৎ জীবনে এটাই তার প্রথম রক্তস্রাব। এমতাবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত প্রবাহিত রক্তে কালো বর্ণ অথবা গাঢ়তা কিংবা কোন গন্ধ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। অন্যথায় ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য করে তার নিয়ম- নীতি মেনে চলতে হবে। যেমন, একজন নারী জীবনে প্রথম লজ্জাস্থানে রক্ত দেখলো এবং সে রক্তকে দশদিন পর্যন্ত কালো দেখেছে এবং মাসের অবশিষ্ট দিনগুলিতে লাল দেখেছে। অথবা দশদিন পর্যন্ত গাঢ় ও ঘন ছিল এবং মাসের অবশিষ্ট দিনগুলিতে পাতলা ছিল। অথবা দশদিন পর্যন্ত তার মধ্যে গন্ধ ছিল এবং তার পরে কোন গন্ধই থাকে নাই, তাহলে প্রথম দৃষ্টান্তে প্রমাহমান রক্ত কালো বর্ণ থাকা পর্যন্ত, দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে গাঢ়তা থাকা পর্যন্ত এবং তৃতীয় দৃষ্টান্তে গন্ধ থাকা পর্যন্ত হায়েয হিসেবে গণ্য হবে এবং এর পর হতে ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য হবে। কারণ হাদীসে বর্ণিত আছে নবী করীম ৎ ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন: ্থ্থ ﺇﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺩَﻡُ ﺍﻟْﺤَﻴْﻀَﺔِ ﻓَﺈﻧَّﻪُ ﺃﺳْﻮَﺩُ ﻳُﻌْﺮَﻑُ ﻓَﺈﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺫَﻟِﻚَ ﻓَﺄﻣْﺴِﻜِﻲْ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓ ﻓَﺈﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﺂﺧَﺮُ ﻓَﺘَﻮَﺿَّﺌِﻲْ ﻭَﺻَﻠِّﻲْ ﻓَﺈﻧَّﻤَﺎ ﻫُﻮَ ﻋِﺮْﻕٌ যখন হায়েযের রক্ত দেখা দিবে তখন তা কালো বর্ণের হবে যা চেনা যায়। সুতরাং কালো বর্ণের রক্ত দেখা দিলে নামায থেকে বিরত থাক। আর কালো ছাড়া অন্য কোন বর্ণ দেখা দিলে ওযু করে নামায আদায় কর। কেননা তা রগ থেকে বের হয়ে আসা রক্ত। [এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম নাসায়ী বর্ণনা করেছেন এবং ইবনে হিব্বান ও হাকেম বিশুদ্ধ বলে মতামত দিয়েছেন।] প্রকাশ থাকে যে, উক্ত হাদীসের সনদ ও মূল উদ্ধৃতিতে কিছু অসুবিধা থাকলেও ওলামায়ে কেরাম এর উপর আমল করেছেন। এবং অধিকাংশ নারী জাতির নিয়মিত অভ্যাসের দিকে লক্ষ্য করে হাদীসখানার উপর আমল করাই উত্তম। ৩) মুস্তাহাযাহ নারীর পূর্বে ঋতুস্রাবের না কোন নির্দিষ্ট সময়-সীমা আছে না ইস্তেহাযাহ ও হায়েযের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী কোন চিহ্ন আছে। অর্থাৎ জীবনে এটাই তার প্রথম রক্তস্রাব এবং রক্ত একাধারে অবিরাম বের হচ্ছে। প্রবাহমান রক্ত পুরোটাই এক ধরনের অথবা বিভিন্ন রকমের যেটাকে হায়েয হিসেবে গণ্য করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় অধিকাংশ নারীর ঋতুস্রাবের সময়- সীমা অনুযায়ী আমল করতে হবে। অর্থাৎ অবিরাম রক্তস্রাব আরম্ভ হওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে ছয় অথবা সাত দিন হায়েযের নিয়ম-নীতি কার্যকরী হবে। তারপর ইস্তেহাযার হুকুম পালন করতে হবে। যেমন, একজন মেয়ের মাসের ৫ তারিখে রক্ত প্রবাহ আরম্ভ হয়েছে এবং জীবনে এটাই তার প্রথম। রক্ত বিরতহীনভাবে বের হচ্ছে এতে হায়েযের কোন চিহ্ন নেই। রং ও গন্ধ ইত্যাদি দিয়ে পার্থক্য করারও কোন সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় প্রতি মাসের ৫ তারিখ থেকে ছয় অথবা সাত দিন হায়েযের হুকুম পালন করতে হবে। কারণ হামনাহ বিনতে জাহ্শ রাদিয়াল্লাহু আনহা এ ব্যাপারে প্রিয় নবী ৎ-এর শরণাপন্ন হয়ে বলেছিলেন: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ! ﺇﻧِّﻲْ ﺃﺳْﺘَﺤَﺎﺽُ ﺣَﻴْﻀَﺔً ﻛَﺒِﻴْﺮَﺓً ﺷَﺪِﻳْﺪَﺓً ﻓَﻤَﺎ ﺗَﺮَﻯ ﻓِﻴْﻬَﺎ؟ ﻗَﺪْ ﻣَﻨَﻌَﺘْﻨِﻲْ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻭَﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃﻧْﻌَﺖُ ﻟَﻚِ ﺃﺻِﻒُ ﻟَﻚِ ﺍﺳْﺘِﻌْﻤَﺎﻝَ ) ﺍﻟْﻜُﺮْﺳُﻒَ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟْﻘُﻄْﻦ) ﺗَﻀَﻌِﻴْﻨَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻔَﺮْﺝ ﻓَﺈﻧَّﻪُ ﻳُﺬْﻫِﺐُ ﺍﻟﺪَّﻡَ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻫُﻮَ ﺃﻛْﺜَﺮُ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ . ﻭَﻓِﻴْﻪِ ﻗَﺎﻝَ : ্থ্থ ﺇﻧَّﻤَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺭَﻛْﻀَﺔٌ ﻣِﻦْ ﺭَﻛَﻀَﺎﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ﻓَﺘَﺤِﻴْﻀِﻲْ ﺳِﺘَّﺔَ ﺃﻳَّﺎﻡٍ ﺃﻭْ ﺳَﺒْﻌَﺔً ﻓِﻲْ ﻋِﻠْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺛُﻢَّ ﺍﻏْﺘَﺴِﻠِﻲْ ﺣَﺘَّﻰ ﺇﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺖِ ﺃﻧَّﻚِ ﻗَﺪْ ﻃَﻬُﺮْﺕِ ﻭَﺍﺳْﺘَﻴْﻘَﻨْﺖِ ﻓَﺼَﻠِّﻲْ ﺃﺭْﺑَﻌًﺎ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳْﻦَ ﺃﻭْ ﺛَﻼَﺛًﺎ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳْﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً ﻭَﺃﻳَّﺎﻣَﻬَﺎ ﻭَﺻُﻮْﻣِﻲ হে আল্লাহর রাসূল! আমার তো অনেক দীর্ঘ সময় ধরে খুব বেশী পরিমাণে রক্তস্রাব হচ্ছে। এ অবস্থায় আপনার মতামত কি? এটা তো আমার নামায ও রোযা আদায়ের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাসূল সা. বললেন: আমি তোমাকে যোনীতে তুলা ব্যবহার করার পর পরামর্শ দিচ্ছি, তুলা রক্ত টেনে নিবে)) তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন যে, আমার প্রবাহিত রক্ত তার চেয়েও বেশী। তখন নবী সা. ইরশাদ করলেন: এটা শয়তানের একটা,খোঁচা মাত্র। আপাততঃ তুমি ছয় অথবা সাত দিন হায়েযের হুকুম পালন করে চল। তারপর ভাল করে গোসল কর। যখন তুমি মনে করবে যে, তুমি পবিত্রতা অর্জন করেছ তখন ২৪ দিন অথবা ২৩ দিন নামায ও রোযা আদায় করতে থাক।)) [হাদীসখানা ইমাম আহমদ, ইমাম আবু দাউদ সহীহ বলেছেন এবং ইমাম বুখারী থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি হাসান বলেছেন।] স্মরণ রাখতে হবে যে, উল্লিখিত হাদীসে ছয় অথবা সাত দিনের কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, এটাকে ইচ্ছামত গ্রহণ করবে। মূলতঃ একটা সমাধান দেয়ার উদ্দেশ্যেই ইজতেহাদ করে এরকম বলা হয়েছে। সুতরাং রক্তস্রাবে আক্রান্ত নারীর অবস্থা ও বয়স ইত্যাদির সঙ্গে পূর্ণ সামঞ্জস্য ও সংগতি রেখে হায়েযের সময় নির্দিষ্ট করবে তা যদি ছয় দিন হয় তাহলে ছয় দিন এবং সাত দিন হলে সাতই ধার্য্য করবে। মুস্তাহাযার সদৃশ নারীর অবস্থার বিবরণ: জরায়ূতে অথবা জরায়ূর আশে-পাশে অপারেশন করার কারণে যদি লজ্জাস্থান দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয় তাহলে তখন দুই অবস্থায় দুই প্রকার হুকুম পালন করতে হবে। ১) এ ব্যাপারে যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, অস্ত্রোপচারের পর আর কোন ঋতুস্রাবের সম্ভাবনা নেই, অথবা অপারেশনের মাধ্যমে এমনভাবে গর্ভাশয়ের পথকে বন্ধ করা হয়েছে যে, আর কোন প্রকার রক্ত সেখান থেকে বের হবে না, তাহলে এই নারীর ক্ষেত্রে মুস্তাহাযার হুকুম প্রযোজ্য হবে না। এবং তার হুকুম ঐ মহিলার হুকুমের মতো হবে যে ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার পর পুনরায় লজ্জাস্থানে হলুদ অথবা মাটি বর্ণের রক্ত অথবা স্যাঁতসেঁতে কিছু দেখতে পেল। সুতরাং এমতাবস্থায় নামায-রোযা ছেড়ে দেবে না, সহবাসও নিষিদ্ধ নয় এবং এ রক্তের কারণে গোসল করাও ওয়াজিব নয়। তবে নামাযের সময় রক্তটাকে পরিষ্কার করা এবং কাপড়ের কোন টুকরা দিয়ে লজ্জাস্থানে পট্টি বাঁধা আবশ্যক যেন রক্ত বের হতে না পারে। অতঃপর নামাযের ওযু করবে। স্মরণ রাখতে হবে যে, উল্লিখিত অবস্থায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পরেই ওযু করবে, আর নফল নামাযের ক্ষেত্রে নামাযের ইচ্ছা করার সময় ওযু করবে। ২) অস্ত্রোপচারের পর আর ঋতুস্রাব আসবে না এ ব্যাপারে যদি নিশ্চয়তা না থাকে বরং আসারই সম্ভাবনা থাকে তাহলে মুস্তাহাযাহ নারীর মতো হুকুম পালন করতে হবে। কারণ নবী করীম ৎ ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেছিলেন: ্থ্থ ﺇﻧَّﻤَﺎ ﺫَﻟِﻚَ ﻋِﺮْﻕٌ ﻭَﻟَﻴْﺲَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻴْﻀَﺔ ﻓَﺈﺫَﺍ ﺃﻗْﺒَﻠَﺖِ ﺍﻟْﺤَﻴْﻀَﺔُ ﻓَﺎﺗْﺮُﻛِﻲْ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ এটা হায়েয নয় বরং একটি শিরা নিসৃত রক্ত। সুতরাং যখন হায়েয আসবে তখন নামায থেকে বিরত থাক।)) এ থেকে সাব্যস্ত হলো যে, মুস্তাহাযাহ নারীর হুকুম কেবল মাত্র সেই মহিলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে যার ঋতুস্রাব হওয়ার বা বন্ধ হওয়ার উভয় সম্ভাবনা রয়েছে। পক্ষান্তরে যে সকল মহিলার ঋতুস্রাবের সম্ভাবনা নেই তাদের লজ্জাস্থান থেকে প্রবাহিত রক্ত রগের রক্ত হিসেবে পরিগণিত হবে। ইস্তেহাযার বিধি-বিধান সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা! উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা এ পর্যন্ত আমরা জানতে পারলাম যে, নারীর লজ্জাস্থান থেকে প্রবাহিত রক্ত কখনো কখনো হায়েয হিসেবে এবং কখনো ইস্তেহাযাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। যখন হায়েয হিসেবে গণ্য হবে তখন হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। আর যখন ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য হবে তখন ইস্তেহাযার নিয়ম-নীতি পালন করতে হবে। ইতিপূর্বে হায়েযের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এখন ইস্তেহাযার বিধি-বিধান তুলে ধরা হল। মূলতঃ ইস্তেহাযার হুকুম আর পবিত্রতার হুকুম একই। মুস্তাহাযাহ নারী এবং পবিত্র নারীর মধ্যে নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয় ছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। ১) মুস্তাহাযাহ নারীর উপর প্রতি নামাযে ওযু করা ওয়াজিব। প্রমাণ হচ্ছে নবী সা. ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেছেন: ্থ্থ ﺛُﻢَّ ﺗَﻮَﺿَّﺌِﻲْ ﻟِﻜُﻞِّ ﺻَﻼَﺓٍ অত:পর তুমি প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযু কর।)) [ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে 'গুস্লুদ্দাম' অর্থাৎ রক্ত ধৌত করার অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।] হাদীসের ব্যাখ্যা হচ্ছে: তুমি ইস্তেহাযাহ অবস্থায় ফরয অর্থাৎ ওয়াক্তি নামাযের জন্য নামাযের সময় আরম্ভ হওয়ার পরেই ওযু করবে। আর নফল নামাযের ক্ষেত্রে যখন নামায পড়ার ইচ্ছা করবে তখন ওযু করলেই চলবে। ২) মুস্তাহাযাহ নারী যখন ওযু করার ইচ্ছা করবে তখন রক্তের দাগ ধৌত করে যোনীতে তুলা দিয়ে পট্টি বেঁধে নিবে, যেন উক্ত তুলা রক্তটাকে আঁকড়ে ধরে। এ প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ ৎ হামনাহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন: ্থ্থ ﺃﻧْﻌَﺖُ ﻟَﻚِ ﺍﻟْﻜُﺮْﺳُﻒَ ﻓَﺈﻧَّﻪُ ﻳُﺬْﻫِﺐُ ﺍﻟﺪَّﻡَ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻓَﺈﻧَّﻪُ ﺃﻛْﺜَﺮُ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ ﻗَﺎﻝَ : ্থ্থ ﻓَﺎﺗَّﺨِﺬِﻱْ ﺛَﻮْﺑًﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻫُﻮَ ﺃﻛْﺜَﺮُ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ ﻗَﺎﻝَ : ্থ্থ ﻓَﺘَﻠَﺠَّﻤِﻲ আমি তোমাকে লজ্জাস্থানে কুরসুফ তথা নেকড়া বা তুলা ব্যবহার করার উপদেশ দিচ্ছি। কেননা নেকড়া বা তুলা রক্তটাকে টেনে নিবে।)) জবাবে হামনাহ বললেন: আমার প্রবাহমান রক্তের পরিমাণ তদপেক্ষাও বেশী। অতঃপর রাসূল ৎ বললেন: তাহলে তুমি লজ্জাস্থানে কাপড় ব্যবহার কর।)) হামনাহ বললেন: প্রবাহমান রক্তের পরিমাণ তার চেয়ে আরো বেশী। এরপর রাসূল ৎ হুকুম দিলেন যে, তুমি তাহলে যোনীর মুখে লাগাম বেঁধে নাও।)) রক্তের দাগ-চিহ্ন পরিষ্কার করে যোনীতে তুলা দিয়ে পট্টি বাঁধার পরেও যদি রক্ত প্রবাহিত হয় তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এ প্রসঙ্গে রাসূলে করীম সা.-এর হাদীস রয়েছে যে তিনি ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে নির্দেশ দিয়েছেন: ্থ্থ ﺍﺟْﺘَﻨِﺒِﻲْ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﺃﻳَّﺎﻡَ ﺣَﻴْﻀَﺘِﻚَ ﺛُﻢَّ ﺍﻏْﺘَﺴِﻠِﻲْ ﻭَﺗَﻮَﺿَّﺌِﻲْ ﻟِﻜُﻞِّ ﺻَﻼَﺓٍ ﺛُﻢَّ ﺻَﻠِّﻲْ ﻭَﺇﻥْ ﻗَﻄَﺮَ ﺍﻟﺪَّﻡُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺤَﺼِﻴْﺮ যে কয়দিন তুমি ঋতুস্রাবে আক্রান্ত থাকবে সে কয়দিন নামায থেকে বিরত থাক। তারপর গোসল করে প্রতি নামাযের জন্য ওযু কর এবং নামায আদায় কর, যদিও রক্ত প্রবাহিত হয়ে চাটাইর উপর পড়ে তাতেও কোন অসুবিধা নেই।)) [আহমদ ও ইবনে মাজাহ] ৩) সহবাস প্রসঙ্গ: সহবাস বর্জন করলে যদি কোন বৈরিতার আশঙ্কা থাকে তাহলে ওলামায়ে কেরামের মাঝে এর বৈধতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক অভিমত হচ্ছে, ইস্তেহাযার অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম জায়েয। কেননা নবী করীম ৎ-এর যুগে দশ অথবা ততোধিক সংখ্যক মহিলা ইস্তেহাযাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অথচ আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর প্রিয় রাসূল ৎ তাঁদের সঙ্গে সহবাস করতে নিষেধ করেননি অথচ কুরআন শরীফে বলা হয়েছে: ﻓَﺎﻋْﺘَﺰِﻟُﻮﺍْ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴﺾِ ২২২) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ "তোমরা হায়েযের অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম থেকে বিরত থাক।" [সূরা আল-বাকারাহ: ২২২] এ আয়াত প্রমাণ করে যে হায়েয ছাড়া অন্য কোন অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব নয়। দ্বিতীয়তঃ মুস্তাহাযাহ নারীর নামায যেহেতু জায়েয সেহেতু সঙ্গমও জায়েয। কেননা সঙ্গম তো নামাযের চেয়ে আরো সহজ। মুস্তাহাযাহ নারীর সাথে সহবাস করাটাকে ঋতুবতী মহিলার সঙ্গে সহবাস করার সাথে বিচার-বিবেচনা করলে চলবে না। কারণ এ দুটো কখনো এক হতে পারে না। এমনকি মুস্তাহাযাহ নারীর সাথে সঙ্গম করাকে যারা হারাম মনে করেন তাদের কাছেও দুটো এক নয়। সুতরাং উভয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকায় একটাকে অপরটার উপর কিয়াস করা শুদ্ধ হবে না। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ নেফাস ও তার হুকুম নেফাসের সংজ্ঞা: সন্তান প্রসবের কারণে জরায়ূ থেকে প্রবাহিত রক্তকে নেফাস বলা হয়। চাই সে রক্ত প্রসবের সাথেই প্রবাহিত হোক অথবা প্রসবের দুই বা তিন দিন পূর্ব থেকেই প্রসব বেদনার সাথে প্রবাহিত হোক। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: 'প্রসব ব্যথা আরম্ভ হলে মহিলা তার লজ্জাস্থানে যে রক্ত দেখতে পায় সেটাই হচ্ছে নেফাস।' এখানে তিনি দুই অথবা তিন দিনের সাথে নির্দিষ্ট করেননি। তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন ব্যথা যার পরিণতিতে প্রসব হবেই। অন্যথায় তা নেফাস হিসেবে পরিগণিত হবে না। নেফাসের সর্ব নিম্ন ও সর্বোচ্চ কোন সময়-সীমা আছে কি না? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মতভেদ রয়েছে। শায়খ তকীউদ্দীন তাঁর লিখিত 'শরীয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কিত নামসমূহ' পুস্তিকার ৩৭ নং পৃষ্ঠায় বলেছেন: নেফাসের সর্ব নিম্ন এবং সর্বোচ্চ কোন সীমা-রেখা নেই। সুতরাং যদি কোন নারীর ৪০ দিন অথবা ৬০ দিন অথবা ৭০ দিনেরও বেশী সময় ধরে রক্ত প্রবাহিত হয়ে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সেটাও নেফাস হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু বন্ধ না হয়ে যদি বিরতিহীনভাবে প্রবাহিত হতে থাকে তাহলে সেটাকে অসুস্থতার রক্ত বলে গণ্য করা হবে। এবং তখন নির্দিষ্ট সময়- সীমা ৪০ দিনই ধার্য্য করতে হবে। কেননা অধিকাংশ নারীর নেফাসের সর্বোচ্চ সময় ৪০ দিনই হয়ে থাকে বলে একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে।' উপরোক্ত অভিমতের ভিত্তিতে আমি গ্রন্থকার) মনে করি প্রসবোত্তর রক্তস্রাব ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও যদি অব্যাহত থাকে এবং ৪০ দিনের পর বন্ধ হওয়ার পূর্ব অভ্যাস যদি তার থেকে থাকে বা ৪০ দিনের পর বন্ধ হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায় তাহলে বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আর তা না হলে ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার পর গোসল করবে। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সময় ৪০ দিনই হয়ে থাকে। তবে ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার পর যদি আবার মাসিক রক্তস্রাব অর্থাৎ হায়েযের সময় এসে যায় তাহলে হায়েযের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তারপর বন্ধ হলে মনে করতে হবে যে, এটা মহিলার অভ্যাস অনুসারেই হয়েছে। সুতরাং ভবিষ্যতেও কোন সময় এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে সে হিসেবে আমল করবে। আর যদি হায়েযের সময় শেষ হওয়ার পরেও রক্তস্রাব অব্যাহত থাকে তাহলে তখন ইস্তেহাযাহ গণ্য করে তার হুকুম পালন করবে। প্রকাশ থাকে যে, প্রসবোত্তর রক্তস্রাব বন্ধ হলেই মহিলা পবিত্র হয়ে যাবে। এমনকি ৪০ দিনের পূর্বেই যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলেও পবিত্র হবে, সুতরাং গোসল করে নামায-রোযা আদায় করতে থাকবে এবং স্বামী-স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হতে পারবে। কিন্তু এক দিনের চেয়েও কম সময়ের মধ্যে যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তার কোন হুকুম নেই। [মুগনী গ্রন্থে তাই বলা হয়েছে।] স্মরণ রাখতে হবে যে, এমন কিছু প্রসব করলেই কেবল নেফাস প্রমাণিত হবে যাতে মানুষের আকৃতি স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। পক্ষান্তরে গর্ভপাতের মাধ্যমে যদি এমন ক্ষুদ্র ও অসম্পূর্ণ ভ্রূণ প্রসব করে যাতে মানুষের আকৃতি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় না তাহলে প্রবাহিত রক্তকে নেফাস হিসেবে গণ্য করা যাবে না। বরং রগের রক্ত হিসেবে গণ্য করে ইস্তেহাযার নিয়ম-নীতি পালন করতে হবে। মানুষের আকৃতি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাওয়ার সর্ব নিম্ন সময়-সীমা হচ্ছে গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে ৮০ দিন, আর সর্বোচ্চ সময় হচ্ছে ৯০ দিন। এ প্রসঙ্গে মাজ্দ ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: 'সর্ব নিম্ন সময় অথবা গর্ভধারণ করার পর থেকে ৮০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই যদি প্রসব বেদনার সাথে রক্ত দেখা যায় তাহলে সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করা হবে না। আর যদি ৮০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর রক্ত দেখে তাহলে প্রসব পর্যন্ত নামায- রোযা থেকে বিরত থাকবে। প্রসবের পর যদি দেখা যায় যে, প্রসূত সন্তান বা ভ্রূণের মধ্যে মানুষের কোন আকৃতিই নেই তাহলে গর্ভবতী মহিলা তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে এবং ক্ষতিপূরণ করবে অর্থাৎ নামায-রোযার কাযা করবে। আর যদি বিষয়টি স্পষ্ট না হয় তাহলে বাহ্যিক হুকুমই মেনে চলবে অর্থাৎ নামায-রোযা থেকে বিরত থাকবে এবং কাযা করা লাগবে না। [শারহুল ইক্না' নামক গ্রন্থে এভাবে বর্ণিত হয়েছে।] নেফাসের হুকুম নিম্ন বর্ণিত কয়েকটি বিষয় ছাড়া হায়েয ও নেফাসের হুকুম প্রায় একই। যথা: ১) ইদ্দত প্রসঙ্গ: ইদ্দতকাল নির্ণয় করতে হবে হায়েযের দিকে লক্ষ্য করে, নেফাসের দিকে লক্ষ্য রেখে নয়। কেননা তালাক যদি প্রসবের পূর্বে দেয়া হয় তাহলে প্রসবের সাথে সাথে ইদ্দতকাল শেষ হয়ে যাবে, নেফাসের মাধ্যমে নয়। পক্ষান্তরে যদি তালাক প্রসবের পরে হয় তাহলে হায়েযের অপেক্ষা করতে হবে। এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। ২) 'ঈলা'র মেয়াদ: হায়েযের সময় অন্তর্ভুক্ত হবে, তবে নেফাসের সময়ের অন্তর্ভুক্ত হবে না। 'ঈলা'র সংজ্ঞা: কোন পুরুষের এই মর্মে শপথ করাকে ঈলা বলা হয় যে, সে তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হবে না বা সেজন্য এমন সময়-সীমা নির্ধারণ করে শপথ করে যা চার মাসের উপরে। এ ধরনের শপথ করার পর স্ত্রী যখন সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার জন্য স্বামীর নিকট দাবী উত্থাপন করবে, তখন উক্ত পুরুষের জন্য শপথের পর চার মাস মেয়াদ ধার্য্য করা হবে। চার মাসের এই মেয়াদ শেষ হলে স্ত্রীর দাবী মেনে নেয়ার জন্য স্বামীকে বাধ্য করা হবে। স্ত্রী যদি তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতে চায় তাহলে স্বামীকে স্ত্রী মিলনে অথবা স্ত্রী যদি তার কাছ থেকে পৃথক হতে চায় তাহলে পৃথক করতে বাধ্য করা হবে। এখানে বুঝার বিষয় হচ্ছে ঈলার হুকুম হিসেবে উল্লিখিত চার মাসের মেয়াদ চলাকালীন যদি স্ত্রীর নেফাস অর্থাৎ প্রসব জনিত কারণে রক্তস্রাব দেখা দেয় তাহলে স্বামী স্ত্রীর নেফাসের দিনগুলিকে চার মাসের মধ্যে যোগ করে হিসাব করতে পারবে না। বরং নেফাসের এই দিনগুলিকে হিসাবের আওতায় না এনে চার মাসের মেয়াদ পূর্ণ করতে হবে। পক্ষান্তরে চার মাসের সুনির্দিষ্ট মেয়াদ চলাকালে স্ত্রীর যদি হায়েয দেখা দেয় তাহলে হায়েযের দিনগুলিকে চার মাসের মধ্যে যোগ করতে হবে। ৩) হায়েযের মাধ্যমে নারী প্রাপ্তবয়স্কা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। তবে নেফাসের মাধ্যমে নয়। কেননা বীর্যস্খলন ছাড়া নারী গর্ভবতী হতেই পারে না। সুতরাং গর্ভধারণের জন্য যে বীর্যস্খলন হয় তা দ্বারাই নারীর প্রাপ্তবয়স্কা হওয়াটা প্রমাণিত হয়। ৪) হায়েয ও নেফাসের মধ্যে চতুর্থ পার্থক্য এই যে, হায়েযের রক্ত বন্ধ হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই যদি পুনরায় আরম্ভ হয় তাহলে সেটাকে নিঃসন্দেহে হায়েয হিসেবে গণ্য করতে হবে। দৃষ্টান্ত: একজন নারীর সাধারণতঃ প্রতি মাসে ৮ দিন করে রক্তস্রাব হয়ে থাকে। এক মাসে দেখা গেল যে, রক্তস্রাব চার দিন পর বন্ধ হয়ে গেছে এবং দুই দিন বন্ধ থাকার পর সপ্তম ও অষ্টম দিনে প্রবাহিত রক্তকে অবশ্যই হায়েয বলে গণ্য করতে হবে এবং তাকে হায়েযেরই নিয়ম-নীতি পালন করতে হবে। পক্ষান্তরে নেফাসের ব্যাপারটা এমন নয় অর্থাৎ নেফাস যদি ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বন্ধ হয়ে আবারো চালু হয় তাহলে এ ক্ষেত্রে বিষয়টি সন্দেহযুক্ত থাকবে। এমতাবস্থায় মহিলাকে নির্দিষ্ট সময়ে ফরয নামায ও ফরয রোযা আদায় করতে হবে। মাসিক ঋতুবতী মহিলার জন্য ওয়াজিব ব্যতীত যা হারাম তার ক্ষেত্রেও তা হারাম হবে এবং এ অবস্থায় যে ফরয নামায ও ফরয রোযা আদায় করা হয়েছে পবিত্র হওয়ার পর সেগুলোর কাযা করবে। অর্থাৎ ঋতুবতী মহিলাদের জন্য যেমন কাযা করা ওয়াজিব তেমনি নেফাসাক্রান্তরর জন্যও ওয়াজিব। হাম্বলী ফিক্হবিদগণের নিকট এটাই প্রসিদ্ধ। তবে সঠিক অভিমত হচ্ছে যে, বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এমন সময়ের মধ্যেই যদি পুনরায় চালু হয় যখন প্রবাহিত রক্তকে নেফাস গণ্য করা সম্ভব, তাহলে নেফাস হিসেবেই গণ্য করা হবে, নতুবা হায়েয হিসেবে। আবার একাধারে বিরতহীনভাবে প্রবাহিত হতে থাকলে ইস্তেহাযাহ গণ্য করা হবে। মুগনী গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, 'উল্লিখিত সমাধানটি ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহর অভিমতের কাছাকাছি।' ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন যে, 'রক্ত বন্ধ হওয়ার পর দুই অথবা তিন দিনের মধ্যেই যদি পুনরায় রক্ত দেখা দেয় তাহলে নেফাস নতুবা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে।' শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহর অভিমতও এক্ষেত্রে একই রকম বলে বুঝা যায়। অথচ বাস্তবতার ভিত্তিতে রক্তের মধ্যে সন্দেহযুক্ত বলতে কিছুই নেই। কিন্তু সন্দেহ এমন একটা বিষয় যার মধ্যে মানুষ তাদের ইল্ম ও বোধশক্তি অনুপাতে মতভেদ করে থাকে। আর কুরআন ও সুন্নাত কোনটা সঠিক কোনটা সঠিক নয় এর পূর্ণ সমাধান প্রতিটি ক্ষেত্রেই দিয়েছে। প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ৎ কাউকেই দুইবার রোযা রাখার এবং দুইবার তাওয়াফ করার নির্দেশ দেননি, যেমনটি একটু পূর্বে বলা হয়েছে। তবে হ্যাঁ, প্রথমবার আদায় করতে গিয়ে যদি এমন কোন ত্রুটি হয়ে থাকে যা কাযা না করে সেই ত্রুটির ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। সুতরাং বান্দাকে যে কাজের আদেশ করা হয়েছে সাধ্যানুসারে সে কাজ করলে বান্দাহ তখন দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তা'য়ালা বলেন: ﻻَ ﻳُﻜَﻠِّﻒُ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻧَﻔْﺴًﺎ ﺇِﻻَّ ﻭُﺳْﻌَﻬَﺎ ২৮৬) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ "আল্লাহ কাউকেই তার সাধ্যের বাইরে কোন কাজের নির্দেশ দেন না।" [সূরা আল-বাকারাহ: ২৮৬] অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে: ﻓَﺎﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺘُﻢْ ১৬) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺘﻐﺎﺑﻦ "তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর।" [সূরা আত-তাগাবুন: ১৬] ৫) হায়েয যদি পূর্ব অভ্যাস অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বন্ধ হয়ে যায় তাহলে স্বামী উক্ত স্ত্রীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারবে। এতে কোন রকম অসুবিধা নেই। পক্ষান্তরে নেফাসের রক্ত যদি ৪০ দিনের পূর্বে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে প্রসিদ্ধ মাযহাব অনুসারে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া স্বামীর জন্য মাকরূহ। তবে সঠিক সমাধান এটাই যে মাকরূহ নয়। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের অভিমতও তাই। কেননা কোন কাজকে মাকরূহ বলতে হলে শরয়ী দলীল লাগবে। অথচ এক্ষেত্রে ইমাম আহমদ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস ছাড়া কোন দলীল নেই। ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ উসমান ইবনে আবিল আ'স থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর স্ত্রী নেফাসের ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তাঁর কাছে আসলে তিনি বলতেন: তুমি আমার নিকটবর্তী হয়ো না। এটা দ্বারা কোন মাকরূহর হুকুম প্রমাণিত হয় না। কেননা স্ত্রীর পবিত্র হওয়া নিশ্চিত নয় বলে সাবধানতা অবলম্বনের উদ্দেশ্যে অথবা সঙ্গমে লিপ্ত হলে পুনরায় রক্ত প্রবাহ শুরু হতে পারে এই আশঙ্কায় অথবা অন্য কোন কারণে তিনি নিষেধ করে থাকতে পারেন। আল্লাহই ভাল জানেন। সপ্তম পরিচ্ছেদ হায়েয প্রতিরোধকারী অথবা আনয়নকারী এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ কিংবা গর্ভপাতের ঔষধ ব্যবহার প্রসঙ্গ দু'টি শর্তে হায়েয প্রতিরোধ করে এমন ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয: ১ম শর্ত: ঔষধ ব্যবহারে কোন রকম ক্ষতির আশঙ্কা না থাকা। যদি ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তাহলে ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন: ﻭَﻻَ ﺗُﻠْﻘُﻮﺍْ ﺑِﺄَﻳْﺪِﻳﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِ ১৯৫) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ "তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে পতিত করো না।" [সূরা আল-বাকারাহ: ১৯৫] এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেছেন: ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ ২৯) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ "তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।" [সূরা আন-নিসা: ২৯] ২য় শর্ত: হায়েয বা রক্তস্রাবের সাথে স্বামীর যদি কোন হক সম্পৃক্ত থাকে তাহলে অবশ্যই তার অনুমতি নিয়েই ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। যেমন স্ত্রী তালাক প্রাপ্তা হওয়ার পর ইদ্দত পালন করে চলছে এবং ইদ্দত পালনকালে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ স্বামীর উপর ওয়াজিব। এমতাবস্থায় ইদ্দতকাল দীর্ঘ করে ভরণ- পোষণ বেশী পাওয়ার উদ্দেশ্যে যদি স্ত্রী হায়েয প্রতিরোধ করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে এক্ষেত্রে অবশ্যই স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামী অনুমতি দিলে করতে পারবে, অন্যথায় পারবে না। এমনিভাবে যখন প্রমাণিত হবে যে, হায়েয রোধ করলে স্ত্রীর গর্ভ ধারণ করা সম্ভব নয় তাহলে তখনও ঔষধ ব্যবহারের জন্যে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। উপরোক্ত দু'টি শর্ত মোতাবেক হায়েয প্রতিরোধক ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয। মনে রাখতে হবে, জায়েয হওয়ার পরেও বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে ব্যবহার না করাই উত্তম। কেননা প্রাকৃতিক বিষয়কে তার গতিতে ছেড়ে দেয়া শারীরিক সুস্থতার পক্ষে খুবই মঙ্গল জনক। হায়েয আনয়নের জন্য ঔষধের ব্যবহারও দুই শর্তে জায়েয: ১ম শর্ত: কোন ফরয বা ওয়াজিব কাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ঔষধ ব্যবহার না করা। যদি এমনটি হয়ে থাকে অর্থাৎ কোন ফরয বা ওয়াজিব পালন থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য যদি ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে নাজায়েয হবে। যেমন রমাযান মাস আরম্ভ হওয়ার পূর্বে হায়েয আনয়নের জন্য ঔষধ ব্যবহার করা, যেন নামায এবং রোযা আদায় করা থেকে বেঁচে যায়, তাহলে তা কখনোই জায়েয হবে না। ২য় শর্ত: স্বামীর অনুমতিক্রমে ব্যবহার করতে হবে। কেননা হায়েয এলে স্বামী পূর্ণাঙ্গরূপে স্ত্রী থেকে উপকৃত হতে পারে না বা নিজের কামভাব পূর্ণ করতে পারে না। সুতরাং স্বামীর অনুমতি ছাড়া এমন কিছু ব্যবহার করা স্ত্রীর জন্য জায়েয হবে না যার কারণে স্বামী নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। যদি স্ত্রী তালাক প্রাপ্তাও হয়ে থাকে তবুও স্বামীর অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করতে পারবে না। কেননা স্বামীর যদি তালাক প্রত্যাহার করার ইচ্ছা থাকে তাহলে স্ত্রী এ ধরনের ঔষধ ব্যবহার করে হায়েয নিয়ে আসলে স্বামীর অধিকার দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। গর্ভরোধকারী ঔষধের ব্যবহার দুই প্রকার: ১ম প্রকার: ঔষধের ব্যবহার দ্বারা যদি স্থায়ীভাবে গর্ভধারণকে প্রতিরোধ করা হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা গর্ভধারণের প্রক্রিয়াকে চিরতরে বন্ধ করলে বংশবৃদ্ধি ও সন্তানাদি কমে যাবে যা শরীয়তের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কারণ উম্মতে ইসলামিয়ার সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়াই শরীয়তের উদ্দেশ্য যা গর্ভধারণ প্রক্রিয়াকে বন্ধ করার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত হবে। এতদ্ব্যতীত উপস্থিত সন্তানাদি মারা না যাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই। মারা গেলে নারী সন্তানহীন হয়ে থাকার আশঙ্কা থেকে যায়। ২য় প্রকার: সাময়িকভাবে গর্ভরোধ করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করা। যেমন কোন নারী খুব বেশী পরিমাণে গর্ভবতী হচ্ছে এবং এর কারণে শারীরিকভাবে ক্ষীন হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় উক্ত মহিলা দুই বছর অন্তর অন্তর সন্তান নিতে আগ্রহী, তাহলে তার জন্যে সাময়িকভাবে ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয, তবে এ ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে এবং এ ধরনের ঔষধ ব্যবহারে কোন রকম ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। প্রমাণ স্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, নবী করীম ৎ-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম 'আয্ল' পদ্ধতি অবলম্বন করে স্ত্রী সঙ্গমে লিপ্ত হতেন, যাতে করে তাঁদের স্ত্রীগণ গর্ভবতী না হয়। কিন্তু এ পদ্ধতি অবলম্বন থেকে তাঁদেরকে তখন নিষেধ করা হয়নি। প্রকাশ থাকে যে, স্ত্রী সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার পর বীর্যস্খলনের সময় ঘনিয়ে আসলে পুরুষাঙ্গ স্ত্রী যোনী থেকে বের করে বাইরে বীর্যপাত করাকে শরীয়তের পরিভাষায় 'আয্ল' বলা হয়। গর্ভপাতকারী ঔষধের ব্যবহারও দুই প্রকার: ১ম প্রকার: গর্ভপাতকারী ঔষধ গ্রহণ গর্ভস্থ সন্তানকে নষ্ট করার উদ্দেশ্যে হওয়া। এমতাবস্থায় এই ঔষধের ব্যবহার যদি গর্ভস্থ বাচ্চার মাঝে প্রাণ সঞ্চারিত হওয়ার পর হয়ে থাকে তাহলে সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং এতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। কেননা এটা নিষিদ্ধকৃত আত্মাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার শামিল। কুরআন ও হাদীস এবং মুসলমানদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিষিদ্ধকৃত আত্মাকে হত্যা করা হারাম। আর যদি প্রাণ সঞ্চারিত হওয়ার পূর্বে গর্ভপাতের জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে ওলামায়ে কেরামের মাঝে এর বৈধতার প্রশ্নে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ জায়েয বলেছেন, কেউ কেউ নিষেধ করেছেন, আবার কেউ বলেছেন, গর্ভ ধারণের পর থেকে আরম্ভ করে যতক্ষণ পর্যন্ত গর্ভস্থ বস্তু জমাট রক্তের রূপ না নিবে অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত ৪০ দিন অতিবাহিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত গর্ভপাতের জন্য এ ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয। ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কেউ আবার এমনও বলেছেন যে, মানুষের আকৃতি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত গর্ভপাতের ঔষধ ব্যবহার করতে পারবে। তবে খুব বেশী সাবধানতা অবলম্বনের উদ্দেশ্যে গর্ভপাতের জন্য ঔষধের ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই উত্তম। তবে বিশেষ প্রয়োজন ও অপারগতার সম্মুখীন হলে এ ধরনের ঔষধ ব্যবহার করতে পারবে। প্রয়োজনীয়তা বলতে যেমন গর্ভধারণকারীনী এমন অসুস্থ যে গর্ভধারণে অক্ষম ইত্যাদি ইত্যাদি। এমতাবস্থায় গর্ভপাত করা জায়েয। কিন্তু গর্ভ ধারণের পর থেকে যদি এই পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, যে সময়ের মধ্যে গর্ভস্থ বাচ্চার মধ্যে মানুষের আকৃতি প্রকাশ পেয়ে থাকে তাহলে ব্যবহার করা হারাম। আল্লাহ তা'আলাই সর্বজ্ঞ। ২য় প্রকার: গর্ভপাতের ঔষধ গ্রহণের দ্বারা গর্ভস্থ আত্মাকে ধ্বংস করা উদ্দেশ্য নয় বরং গর্ভের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রসব আসন্ন এমন সময়ে যদি গর্ভপাতের ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে তা জায়েয আছে। তবে শর্ত হচ্ছে এ ধরনের ঔষধ ব্যবহারের ফলে মা ও বাচ্চার যেন ক্ষতি না হয় এবং ঔষধ ব্যবহার করার কারণে যেন অপারেশন বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তা দেখা না দেয়। যদি ঔষধ ব্যবহারের কারণে অপারেশন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে তাহলে এর চার অবস্থা, যা নিম্নে বর্ণিত হলো: ১) মা ও গর্ভস্থ বাচ্চা উভয়েই জীবিত। এমতাবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া অস্ত্রোপচার জায়েয নেই, যেমন প্রসব অত্যন্ত কষ্টকর এবং ঝুকিপূর্ণ, তাহলে অস্ত্রোপচার করতে হবে। মনে রাখতে হবে একজনের শরীর অপর জনের নিকট আমানত স্বরূপ। সুতরাং বৃহত্তর কোন কল্যাণ সাধনে এমন কোন হস্তক্ষেপ করবে না যা দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া বর্তমান যুগে অনেক ক্ষেত্রে অপারেশনের পূর্বে মনে করা হয়ে থাকে যে, কোন রকম ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, অথচ অপারেশনের পর ক্ষতি প্রকাশ পেয়ে যায়। ২) মা ও গর্ভস্থ বাচ্চা উভয়ই মৃত। এমতাবস্থায় বাচ্চাকে বের করার জন্য অস্ত্রোপচার করা জায়েয নয়। কেননা বের করার মধ্যে কোন লাভ নেই। ৩) মা জীবিত কিন্তু গর্ভস্থ বাচ্চা মৃত। তাহলে অস্ত্রোপচার করে বের করা জায়েয আছে। তবে মায়ের কোন প্রকার ক্ষতির যেন আশঙ্কা না থাকে। কেননা বাহ্যিক অবস্থার প্রেক্ষিতে গর্ভস্থ সন্তানকে তো অপারেশন ছাড়া বের করা সম্ভব নয় এবং বাচ্চাকে যদি ভিতরে রেখে দেয়া হয় তাহলে প্রথমতঃ ভবিষ্যতে পেটে সন্তান ধারণ করা সম্ভব হবে না। দ্বিতীয়তঃ এভাবে রেখে দিলে মায়ের জন্য অত্যন্ত কষ্ট ও যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া অনেক সময় স্ত্রীকে স্বামীহীনা-বিধবা হয়ে থাকতে হয় যখন মহিলা পূর্ব স্বামীর ইদ্দতের অবস্থায় থাকে। এসব কারণে অপারেশনের মাধ্যমে গর্ভস্থ মৃত বাচ্চাকে বের করা জায়েয আছে। ৪) মা মৃত এবং গর্ভস্থ বাচ্চা জীবিত। এমতাবস্থায় গর্ভস্থ সন্তানকে বাঁচানোর সম্ভাবনা যদি না থাকে তাহলে অপারেশন করা জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যদি গর্ভস্থ সন্তানটি বাঁচবে এমন আশা থাকে, সেই অবস্থায় কিছু অংশ যদি বের হয়ে থাকে তাহলে মৃত মার পেট কেটে বাচ্চার বাকী অংশ বের করতে পারবে। আর যদি বাচ্চার কিছুই বের না হয় তাহলে এক্ষেত্রে আমাদের ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, গর্ভস্থ শিশুকে বের করার জন্য মায়ের পেট কাটবে না। কেননা এটা নাক-কান কেটে বিকৃত করার অন্তর্ভুক্ত। তবে সার্বিক সমাধান হচ্ছে এই যে, অপারেশন ছাড়া যদি বের করা সম্ভব না হয় তাহলে অপারেশন করতে পারবে। এ সমাধানটি ইবনে হুবাইরা গ্রহণ করেছেন। তিনি 'ইনসাফ' গ্রন্থের ২য় খন্ডের ৫৫৬ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, এক্ষেত্রে পেট কেটে বাচ্চা বের করাই উত্তম। বর্তমান কালে এ অবস্থায় অস্ত্রোপচার করা 'মুসলা' অর্থাৎ নাক-কান কেটে শাস্তি দেয়া হিসেবে পরিগণিত হবে না। কারণ প্রথমতঃ পেট কেটে পরে আবার সেলাই করে দেয়া হবে। দ্বিতীয়তঃ একটা জীবিত সন্তানের ইজ্জত একজন মৃত ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশী। তৃতীয়তঃ একটা নিষ্পাপ শিশুকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা ওয়াজিব। সুতরাং যেহেতু গর্ভস্থ বাচ্চা জীবিত এবং নিষ্পাপ মানুষ সেহেতু অপারেশনের মাধ্যমে তাকে বের করা ওয়াজিব। আল্লাহ তা'য়ালাই সর্বজ্ঞ। সতর্কীকরণ: উপরোল্লিখিত যে সকল অবস্থায় গর্ভপাত করা জায়েয সে সকল অবস্থায় গর্ভপাত করতে চাইলে অবশ্যই গর্ভের মালিক তথা স্বামীর অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। উপসংহার সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা! এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আপনাদের কাছে যা উপস্থাপন করার ইচ্ছা পোষণ করে লিখার সূচনা করেছিলাম তা এখানেই শেষ। এই পুস্তিকাতে আমি শুধুমাত্র মৌলিক মাসআলা সমূহ এবং তার নিয়ম- কানুন বর্ণনা করেছি। অন্যথায় বর্ণিত মাসআলা সমূহের শাখা-প্রশাখা, আনুষঙ্গিক বিষয়াদি এবং হায়েয, নেফাস ও ইস্তেহাযার কারণে নারী জাতির বহুমুখী অবস্থার পূর্ণ বিবরণ কিনারাবিহীন সমুদ্রের মত। তবে কোন সমস্যার আবির্ভাব ঘটলে বিচক্ষণ ব্যক্তি মূল বিষয় ও তার নিয়ম-কানুনের উপর ভিত্তি করে সমাধান দিতে পারবে এবং এক বিষয়কে সমপর্যায়ের অন্য মাসআলার উপর অনুমান করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হবে। একজন মুফতীর একথা স্মরণ থাকা উচিত যে, তিনি রাসূলগণের আনীত দ্বীন, শরীয়ত ও মতাদর্শ প্রচার এবং প্রসারের জন্য আল্লাহ তা'আলা ও মানব জাতির মাঝে একজন মধ্যস্থতাকারীর সমতুল্য। কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত নিয়ম-নীতি ও বিধি- বিধানের আলোকে কোন প্রশ্নের সমাধান দেয়া তাঁরই দায়িত্ব। কেননা কুরআন ও সুন্নাহ এমন দু'টি মূল উৎস যে দুটিকে বুঝে তার উপর আমল করার জন্য সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং যে কথা, যে অভিমত এবং যে সমাধান কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী হবে তা ভুল বলে প্রমাণিত হবে, যা গ্রহণ করা জায়েয হবে না বরং প্রত্যাখ্যান করা ওয়াজিব। যদি ভুল সমাধানদাতা মুজতাহিদ অপারগ হয়ে থাকেন তাহলে তাকে তার ইজতেহাদের কারণে প্রতিদান দেয়া হবে কিন্তু যে ব্যক্তি তার এ ভুল সম্পর্কে অবগত হবে তার জন্য তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। একজন মুফতীর জন্য কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করা, নতুন কোন বিষয় সামনে আসলে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা এবং তার কাছে সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য সাহায্য ও তওফীক কামনা করা অত্যাবশ্যক। যে কোন বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে আলোচনা ও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত অথবা এমন কিছুর ভিত্তিতে আলোচনা ও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত যা কুরআন ও হাদীস বুঝার জন্য সহায়ক হয়। অনেক সময় দেখা যায় যে, একটা মাসআলা সামনে আসলে ওলামায়ে কেরামের অভিমত নিয়ে তর্ক- বিতর্ক করা হয়। ফলে মাসআলাটির সুনিশ্চিত কোন সমাধান পাওয়া যায় না। এবং সুনির্দিষ্ট কোন তথ্যও প্রকাশিত হয় না। কিন্তু পরক্ষণে যখন কুরআন ও হাদীসের দিকে প্রত্যাবর্তন করা হয় তখন মাসআলার সমাধান ও হুকুম স্পষ্ট হয়ে যায়। আর এমনটি ইখলাস, ইল্ম ও সঠিক অনুভুতির ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। কোন প্রকার মাসআলার সম্মুখীন হলে বিলম্বে উত্তর দেয়া একজন মুফতীর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাড়াহুড়া করা মোটেই উচিত নয়। অনেক ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়ার পর আবার গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়, যার ফলে উত্তরদাতাকে লজ্জিত হতে হয় এবং এ ভুলের ক্ষতিপূরণ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। কোন মুফতীর মধ্যে অত্যন্ত চিন্তা-ভাবনা করে ধীর গতিতে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মানসিকতা থাকলে এবং তার মধ্যে দৃঢ়তা লক্ষ্য করা গেলে তাঁর কথার প্রতি মানুষের বিশ্বাস আসবে। এবং জনসাধারণ তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়ার অভ্যাস লক্ষ্য করলে তার প্রতি মানুষের কোন বিশ্বাস থাকবে না। কেননা যে কোন কাজ তাড়াহুড়ো করে করলে ভুল হয়েই থাকে আর এ ধরনের দ্রুতগামীতা ও ভুলের কারণে তার জ্ঞান প্রদীপের আলো থেকে সে নিজে বঞ্চিত হবে এবং অপরকেও বঞ্চিত করবে। সর্বশেষে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদেরকে সরল ও সঠিক পথের সন্ধান দেন, অনুগ্রহ করে আমাদের তত্ত্বাবধান গ্রহণ করেন এবং পদস্খলন থেকে আমাদের হেফাযত করেন। তিনিই অসীম দাতা এবং পরম দয়ালু। সমাপ্ত লেখক : শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন ﺗﺄﻟﻴﻒ : ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺻﺎﻟﺢ ﺍﻟﻌﺜﻴﻤﻴﻴﻦ অনুবাদক : মীযানুর রহমান আবুল হুসাইন ﺗﺮﺟﻤﺔ ﻣﻴﺰﺍﻥ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ সম্পাদনা : ইকবাল হোসাইন মাসুম ﻣﺮﺍﺟﻌﺔ : ﺇﻗﺒﺎﻝ ﺣﺴﻴﻦ ﻣﻌﺼﻮﻡ সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব ﺍﻟﻤﻜﺘﺐ ﺍﻟﺘﻌﺎﻭﻧﻲ ﻟﻠﺪﻋﻮﺓ ﻭﺗﻮﻋﻴﺔ ﺍﻟﺠﺎﻟﻴﺎﺕ ﺑﺎﻟﺮﺑﻮﺓ ﺍﻟﺮﻳﺎﺽ পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
ভূমিকা
নারী জাতি সাধারণত: তিন প্রকার রক্তস্রাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যথা:
১) হায়েয মাসিক রক্তস্রাব)।
২) ইস্তেহাযাহ হায়েয ও নেফাসের দিন উত্তীর্ণ হওয়ার পর যে রক্তস্রাব হয়)।
৩) নেফাস সন্তান প্রসবের পরের রক্তস্রাব)।
উপরোক্ত তিন প্রকার রক্তস্রাব এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত যার বিধি-বিধানের বর্ণনা অতীব জরুরী এবং এ প্রসঙ্গে ওলামায়ে কেরামের বিভিন্ন মতামতের মধ্যে ভুল-শুদ্ধ পার্থক্য নিরুপন করে কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে যা সঠিক ও নির্ভুল তা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।
কেননা, প্রথমতঃ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ইবাদতের যে সকল হুকুম-আহকাম দিয়েছেন কুরআন ও সুন্নাহই হচ্ছে সেগুলোর মূল ভিত্তি এবং উৎস।
দ্বিতীয়তঃ কুরআন ও হাদীসের উপর পরিপূর্ণ আস্থা স্থাপন করে তদনুযায়ী আমল করলে আত্মীক প্রশান্তি, মানসিক স্থিরতা, মনের আনন্দ এবং অল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব থেকে মুক্তি অর্জিত হয়। তৃতীয়তঃ কুরআন ও সুন্নাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুই শরীয়তের আইন-কানুন ও বিধি বিধানের দলীল হতে পারে না। শরীয়তের সমুদয় আইন-কানুন ও হুকুম- আহকামের একমাত্র মানদন্ড হলো কুরআন ও হাদীস। তবে অভিজ্ঞ সাহাবীগণের অভিমতও কোন কোন ক্ষেত্রে দলীল হতে পারে। এর জন্য শর্ত হচ্ছে সাহাবীর অভিমত ও কুরআন-সুন্নাহর মাঝে কোন অসঙ্গতি ও বৈপরীত্য না থাকা, এমনিভাবে অন্য কোন সাহাবীর সিদ্ধান্তের পরিপন্থীও না হওয়া। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখতে হবে যে, যদি কখনো কোন সাহাবীর অভিমত এবং কুরআন-হাদীসের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়, তাহলে কুরআন ও সুন্নাহর সিদ্ধান্তকে গ্রহণ ও বরণ করা ওয়াজিব হবে। আর দুই সাহাবীর মত ও সিদ্ধান্তে বৈপরীত্য দেখা দিলে দু'টোর শক্তিশালীটিকেই গ্রহণ করতে হবে। কেননা পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেছেন: ﻓَﺈِﻥ ﺗَﻨَﺎﺯَﻋْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓَﺮُﺩُّﻭﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺎﻟﻠّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻵﺧِﺮِ ﺫَﻟِﻚَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻭَﺃَﺣْﺴَﻦُ ﺗَﺄْﻭِﻳﻼً ৫৯) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ "যদি তোমরা পরস্পর কোন বিষয়ে ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে পড় তাহলে সেটিকে আেল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যার্পিত কর। যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম।" [সূরা আন-নিসা: ৫৯] এই পুস্তিকাখানা নারী জাতির উপরোক্ত তিন প্রকার রক্তস্রাব ও তার হুকুম-আহকাম সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর উপর সংক্ষিপ্তাকারে রচিত এবং সাত পরিচ্ছেদে বিভক্ত। পরিচ্ছেদগুলো হচ্ছে: ১ম পরিচ্ছেদ: হায়েযের অর্থ ও তা সৃষ্টির রহস্য। ২য় পরিচ্ছেদ: হায়েযের বয়স এবং সময়-সীমা। ৩য় পরিচ্ছেদ: হায়েয সংক্রান্ত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী। ৪র্থ পরিচ্ছেদ: হায়েযের বিধি-বিধান।
৫ম পরিচ্ছেদ: ইস্তেহাযাহ ও তার হুকুম। ৬ষ্ট পরিচ্ছেদ: নেফাস ও তার হুকুম। ৭ম পরিচ্ছেদ: হায়েয প্রতিরোধক কিংবা সঞ্চালক এবং জন্মনিয়ন্ত্রণকারী কিংবা গর্ভপাতকারী ঔষধ ব্যবহারের বিধান। প্রথম পরিচ্ছেদ হায়েযের অর্থ ও তা সৃষ্টির রহস্য হায়েযের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন বস্তু নির্গত ও প্রবাহিত হওয়া। আর শরীয়তের পরিভাষায় হায়েয বলা হয় ঐ প্রাকৃতিক রক্তকে, যা বাহ্যিক কোন কার্যকারণ ব্যতীতই নির্দিষ্ট সময়ে নারীর যৌনাঙ্গ দিয়ে নির্গত হয়। হায়েয প্রাকৃতিক রক্ত। অসুস্থতা, আঘাত পাওয়া, পড়ে যাওয়া এবং প্রসবের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এই প্রাকৃতিক রক্ত নারীর অবস্থা ও পরিবেশ- পরিস্থিতির বিভিন্নতার কারণে নানা রকম হয়ে থাকে এবং এ কারণেই ঋতুস্রাবের দিক থেকে নারীদের মধ্যে বেশ পার্থক্য দেখা যায়। বিস্ময়কর তাৎপর্য : পৃথিবীতে বিচরণশীল প্রতিটি মানুষ ও প্রাণী আহার্য্য সংগ্রহ করে থাকে, বিভিন্ন রকম খাদ্যদ্রব্য খেয়ে জীবন যাপন করে, কিন্তু নারীর গর্ভে অবস্থানরত বাচ্চার পক্ষে সে ধরনের খাদ্য বা আহার্য্য গ্রহণ করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয় এবং কোন দয়াপরবশ মানুষের পক্ষেও গর্ভস্থ বাচ্চার নিকট খাদ্য সরবরাহ করা অসম্ভব। ঠিক এমনি মুহূর্তে মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা'আলা নারী জাতির মাঝে রক্ত প্রবাহের এমন এক আশ্চর্য ধারা স্থাপন করেছেন, যার দ্বারা মায়ের গর্ভে অবস্থানরত বাচ্চা মুখ দিয়ে খাওয়া এবং হজম করা ছাড়াই আহার্য্য গ্রহণ করতে পারে। উক্ত রক্ত নাভির রাস্তা দিয়ে বাচ্চার শরীরে প্রবাহিত হয়ে শিরাসমূহে অনুপ্রবেশ করে এবং বাচ্চা এর মাধ্যমে আহার্য্য গ্রহণ করে। নিপুনতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময় ও মহান। এটাই হায়েয সৃষ্টির মূল রহস্য এবং এ কারণেই যখন কোন নারী গর্ভবতী হয় তখন তার হায়েয বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কদাচিৎ এর ব্যতিক্রমও হয়। যা বিবেচনার মধ্যে পড়ে না। তেমনিভাবে খুব কম সংখ্যক প্রসূতির হায়েয হয়ে থাকে, বিশেষ করে প্রসবের প্রাথমিক অবস্থায়। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ রক্তস্রাবের বয়স ও তার সময়-সীমা এই অধ্যায়ে আলোচ্য বিষয় দু'টি: ১) নারীদের রক্তস্রাব কত বছর বয়স থেকে শুরু হয় এবং কত বছর বয়স পর্যন্ত চালু থাকে। ২) রক্তস্রাবের সময়-সীমা। প্রথম বিষয়: সাধারণত ১২ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত নারীদের রক্তস্রাব হয়ে থাকে। তবে কখনো কখনো অবস্থা, আবহাওয়া এবং পরিবেশ- পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে উপরোল্লেখিত বয়সের পূর্বে এবং পরেও রক্তস্রাব হতে পারে। ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন যে, রক্তস্রাব হওয়ার জন্য নারীদের বয়সের এমন কোন নির্দিষ্ট সীমা-রেখা আছে কি না, যার আগে বা পরে রক্তস্রাব হয় না। আর যদিও বা হয় তাহলে সেটা অসুস্থতা হিসেবে পরিগণিত হবে, না রক্তস্রাব হিসেবে? এ প্রসঙ্গে ইমাম দারমী রাহিমাহুল্লাহ সকল মতামতগুলো উল্লেখ করে বলেছেন যে, 'আমার নিকট এর কোনটিই ঠিক নয়। কেননা রক্তস্রাবের জন্য বয়স নির্দিষ্ট করা বা বয়সের সীমা-রেখা নির্ণয় করা নির্ভর করে রক্তস্রাব দেখা দেয়ার উপর। সুতরাং যে কোন বয়স এবং যে কোন সময়ে নারীদের যৌনাঙ্গে কোন প্রকার রক্ত দেখা দিলে সেটাকে রক্তস্রাব বা হায়েয হিসেবে গণ্য করা ওয়াজেব।' আল্লাহ তা'আলাই সর্বজ্ঞ। [আল-মাজমূ' শারহুল মুহায্যাব: ১/৩৮৬] আমার দৃষ্টিতে ইমাম দারমীর এই অভিমতটি সঠিক বলে মনে হচ্ছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহও এই অভিমত গ্রহণ করেছেন। অতএব নারী যখনই তার যৌনাঙ্গে রক্ত দেখতে পাবে তখনই সে ঋতুবতী হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। যদিও সে রক্ত নয় বছর বয়সের পূর্বে কিংবা পঞ্চাশ বছর বয়সের পরে দেখা দেয়। কেননা হায়েযের সমুদয় হুকুম-আহকামকে মহান আল্লাহ ও রাসূলে করীম ৎ রক্ত দেখা দেয়ার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন এবং এর জন্য বয়সের কোন নির্দিষ্ট সময়-সীমা নির্ধারণ করেননি। সুতরাং যে রক্তস্রাবকে হুকুম-আহকামের সাথে সম্পৃক্ত করে রাখা হয়েছে সেটা দেখা দিলেই তার নির্ধারিত বিধান) পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, ঋতুস্রাবকে কোন নির্দিষ্ট বয়সের সাথে সম্পৃক্ত করতে হলে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক কোন একটি দলীলের নিশ্চয়ই প্রয়োজন রয়েছে, অথচ এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে কোনই প্রমাণ নেই। দ্বিতীয় বিষয়: ঋতুস্রাবের সময়-সীমা অর্থাৎ ঋতুস্রাব কতদিন থাকতে পারে। এ ব্যাপারেও ওলামায়ে কেরামের মধ্যে অনেক মতভেদ রয়েছে, এমনকি এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের ছয় অথবা সাতটি অভিমত পাওয়া যায়। ইবনুল মুনযির এবং ফিকহবিদগণের একটি দল বলেছেন যে, হায়েয কমপক্ষে এবং বেশীর পক্ষে কতদিন থাকতে পারে এর কোন নির্দিষ্ট সীমা-রেখা নেই। আমার অভিমত ইমাম দারমীর উপরোল্লিখিত অভিমতের মতই যা শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহও গ্রহণ করেছেন। এবং এটিই সঠিক, কেননা কুরআন, সুন্নাহ ও কিয়াস দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। ১ম দলীল: আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে ইরশাদ করেন: ﻭَﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻧَﻚَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴﺾِ ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺃَﺫًﻯ ﻓَﺎﻋْﺘَﺰِﻟُﻮﺍْ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴﺾِ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺮَﺑُﻮﻫُﻦَّ ﺣَﺘَّﻰَ ﻳَﻄْﻬُﺮْﻥَ ২২২) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ "তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বলে দাও, এটা কষ্টদায়ক বস্তু, কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাক এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিকট যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পবিত্র না হয়।" [সূরা আল-বাকারাহ: ২২২] উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জন করাকে স্ত্রী সঙ্গমের নিষেধাজ্ঞার শেষ সীমা নির্ধারণ করেছেন। এক দিন, এক রাত, তিন দিন, তিন রাত অথবা পনের দিন পনের রাতকে নিষেধাজ্ঞার শেষ সীমা হিসেবে নির্ধারণ করেননি। এ থেকে বুঝা যায় যে, ঋতুস্রাব দেখা দেয়া না দেয়ার উপরই তার হুকুম-আহকামের মূল ভিত্তি। অর্থাৎ যখনই ঋতুস্রাব দেখা দিবে তখনই তার বিধি-বিধান কার্যকরী হবে এবং যখনই বন্ধ হবে বা পবিত্রতা অর্জন করবে তখনই বিধি- বিধানের কার্যকরিতা শেষ হয়ে যাবে। বুঝা গেল, ঋতুস্রাব কতদিন থাকতে পারে এর সর্বোচ্চ এবং সর্ব নিম্ন কোন সীমা নির্দিষ্ট নেই। দ্বিতীয় দলীল: সহীহ মুসলিমে এসেছে: ﺃﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ৎ ﻗَﺎﻝََ ﻟِﻌَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻭَﻗَﺪْ ﺣَﺎﺿَﺖْ ﻭَﻫِﻲَ ﻣُﺤْﺮِﻣَﺔٌ ﺑِﺎﻟْﻌُﻤْﺮَﺓِ : ্থ্থﺍﻓْﻌَﻠِﻲْ ﻣَﺎ ﻳَﻔْﻌَﻞُ ﺍﻟْﺤَﺎﺝُّ ﻏَﻴْﺮَ ﺃﻥْ ﻻَ ﺗَﻄُﻮْﻓِﻲْ ﺑَﺎﻟْﺒَﻴْﺖِ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻬُﺮِﻱ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻮْﻡُ ﺍﻟﻨَّﺤْﺮِ ﻃَﻬُﺮْﺕُ. ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ . উমরার ইহরাম অবস্থায় আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার যখন রক্তস্রাব দেখা দিয়েছিল, তখন রাসূলে করীম সা. তাঁকে বলেছিলেন: তুমি ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত কা'বা শরীফের তওয়াফ ছাড়া উমরার অন্যান্য কাজগুলো করে যাও, যেভাবে হাজীরা করে যাচ্ছে।)) অর্থাৎ ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হলে তখন তওয়াফ করবে) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: যখন কুরবানীর দিন আসলো তখন আমি পবিত্র হলাম। [ম ৪/৩০] সহীহ বুখারীর তৃতীয় খন্ডের ৬১০ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীস এভাবে বর্ণিত হয়েছে: ﺃﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ৎ ﻗَﺎﻝَ : ্থ্থ ﺍﻧْﺘَﻈِﺮِﻱْ ﻓَﺈﺫَﺍ ﻃَﻬُﺮْﺕِ ﻓَﺎﺧْﺮُﺟِﻲْ ﺇﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻨْﻌِﻴْﻢِ অর্থাৎ নবী করীম সা. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছিলেন: তুমি পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, পবিত্রতা অর্জন করার পর উমরাহ আদায়ের উদ্দেশ্যে এহরাম বাঁধার জন্য) তান'য়ীমের দিকে বের হও।)) তান'য়ীম হারামের বাইরে মক্কা মুকাররামার উত্তর পাশে নিকটবর্তী একটি স্থান। নবী করীম সা. এখানেও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তওয়াফ করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট কোন সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেননি। এথেকে প্রতীয়মান হয় যে, রক্তস্রাব দেখা দেয়া না দেয়ার সাথেই তার হুকুম- আহকামের সম্পর্ক। নির্দিষ্ট কোন সময়ের সাথে নয়। তৃতীয় দলীল: ফিকহবিদগণের হায়েয সংক্রান্ত এসব বিস্তারিত আলোচনা ও অনুমান-ধারণা কুরআন ও সুন্নাহতে বিদ্যমান না থাকা সত্বেও প্রয়োজনের খাতিরে বর্ণনা করা জরুরী। যদি এ সমস্ত আলোচনাকে হৃদয়ঙ্গম করা এবং এগুলোর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার উপাসনা করা বান্দার জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং রাসূলে করীম সা. প্রত্যেকের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতেন। কেননা এগুলোর সাথে নারীর নামায, রোযা, বিবাহ, তালাক এবং মীরাসের মাসআলা মাসায়েল সম্পৃক্ত। যেমনিভাবে আল্লাহ তা'আলা ও রাসূল সা. নামাযের সংখ্যা, নামায পড়ার নির্দিষ্ট সময়, নামাযের রুকূ', সেজদাহ, যাকাতের মাল, মালের নিসাব ও পরিমাণ, যাকাত বিতরণ করার নির্দিষ্ট স্থান, রোযার সময়-সীমা এবং হজ্জসহ অন্যান্য বিষয়াবলী স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। এমনকি খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম-নীতি, ঘুমের আদব, স্ত্রী সহবাস, উঠা-বসা, গৃহে প্রবেশ, গৃহ থেকে বের হওয়া, পায়খানা ও প্রস্রাবের নিয়ম- নীতিও বর্ণনা করেছেন। শুধু তাই নয় বরং পায়খানা ও প্রস্রাব করার ব্যবহৃত ঢিলার সংখ্যা নির্ধারণ করাসহ জটিল ও সূক্ষ্ণ বিষয়াদির বিবরণও বিশ্ব মানবের সামনে তুলে ধরেছেন, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা তাঁর মনোনীত ধর্মকে পরিপূর্ণ করেছেন এবং মু'মিন বান্দাদের উপর নিজের নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা নাহ্লের ৮৯ নম্বর আয়াতে নবী করীম ৎ-কে সম্মোধন করে এরশাদ করেন: ﻭَﻧَﺰَّﻟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺗِﺒْﻴَﺎﻧًﺎ ﻟِّﻜُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ৮৯) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺤﻞ "আমি প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়ে তোমার উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছি।" [সূরা আন-নাহ্ল: ৮৯] এমনিভাবে কুরআন শরীফে সূরা ইউসুফের ১১১ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে তিনি আরো ইরশাদ করেন: ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﺪِﻳﺜًﺎ ﻳُﻔْﺘَﺮَﻯ ﻭَﻟَﻜِﻦ ﺗَﺼْﺪِﻳﻖَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻭَﺗَﻔْﺼِﻴﻞَ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻭَﻫُﺪًﻯ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔً ﻟِّﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ১১১) ﺳﻮﺭﺓ ﻳﻮﺳﻒ "এটা কোন মনগড়া কথা নয়, বরং বিশ্বাস স্থাপনকারীদের জন্য পূর্ববর্তী গ্রন্থের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বিবরণ, হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ।" [সূরা ইউসুফ: ১১১] এখন বুঝতে হবে যেহেতু এ সবের বিস্তারিত আলোচনা কুরআন ও হাদীসে নেই সেহেতু এ সবের উপর পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়ারও প্রয়োজন নেই। নির্ভরতার প্রয়োজন শুধু হায়েয দেখা দেয়া না দেয়ার উপর। কুরআন ও সুন্নাহতে এ সমস্ত বিষয়াদি না থাকাটাই প্রমাণ করে যে, এগুলোর কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। হায়েয ঋতুস্রাব) সম্পর্কীয় মাসআলা সহ অন্যান্য সকল মাসআলাসমূহে কুরআন ও সুন্নাহই আপনাকে সাহায্য করবে। কেননা শরীয়তের সকল বিধি-বিধান কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা' অথবা বিশুদ্ধ কিয়াস দ্বারাই প্রমাণিত হয়েছে, অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে নয়। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া একটি নীতিমালা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন: 'কুরআন ও সুন্নাহতে আল্লাহ তা'আলা রক্তস্রাবের সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু হুকুম- আহকাম বর্ণনা করেছেন, কিন্তু রক্তস্রাব কতদিন থাকতে পারে, এর সর্ব নিম্ন ও সর্বোচ্চ সময়-সীমা কি, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেন নি। এমনকি বান্দার জন্য অত্যাধিক প্রয়োজনীয় এবং জটিল বিষয় হওয়া সত্বেও আল্লাহ তা'য়ালা দুই পবিত্রতার মধ্যবর্তী সময়ের সীমা-রেখা নির্দিষ্ট করেননি। আরবী অভিধানও এর কোন সময়-সূচী নির্ধারণ করেনি। সুতরাং হায়েয বা রক্তস্রাবের জন্য যে ব্যক্তি কোন সময়-সীমা নির্দিষ্ট করবে সে সরাসরি কুরআন ও হাদীসের বিরুদ্ধাচরণ করবে।' চতুর্থ দলীল: যা বিশুদ্ধ কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তা'আলা রক্তস্রাবকে ময়লা বস্তু হিসেবে ঘোষণা করেছেন, কাজেই যখনই রক্তস্রাব দেখা দিবে তখনই সেটাকে ময়লা হিসেবেই গণ্য করতে হবে। এক্ষেত্রে রক্তস্রাবের প্রথম এবং দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ, ১৫তম এবং ১৬তম ও ১৭তম এবং ১৮তম দিনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ময়লা ময়লাই। সুতরাং ময়লা যেহেতু উভয় দিনেই বিদ্যমান সেহেতু উক্ত দুই দিনের মধ্যে হুকুমের দিক থেকে পার্থক্য করা কিভাবে সঠিক হতে পারে? এটা কি বিশুদ্ধ কিয়াসের পরিপন্থী নয়? বিশুদ্ধ কিয়াস কি উভয় দিনকে হুকুমের দিক থেকে সমান গণ্য করে না? পঞ্চম দলীল: রক্তস্রাবের জন্য সময়-সীমা নির্ধারণকারীদের পারস্পরিক মতভেদ ও সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে। এবং এ ধরনের পারস্পরিক মতভেদই প্রমাণ করে যে, এ বিষয়ে এমন কোন সমাধান নেই, যেটাকে গ্রহণ করা অত্যাবশ্যকীয়। তা ছাড়া এ সকল মতামত হচ্ছে ইজতেহাদী যা ভুল- শুদ্ধ দ'ুটোরই সম্ভাবনা রাখে। এমতাবস্থায় সমাধান ও সঠিক নির্দেশনা পাওয়ার জন্য কুরআন ও সুন্নাতের দিকেই দৃষ্টি দিতে হবে। উপরোল্লিখিত আলোচনা দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ঋতুস্রাবের সর্ব নিম্ন এবং সর্বোচ্চ কোন সময়-সীমা নির্দিষ্ট নেই, এবং এটিই গ্রহণযোগ্য। সুতরাং নারীর লজ্জাস্থানে রক্ত দেখা দিলে -যা আঘাত বা অন্য কোন কারণে প্রবাহিত হয়নি- ধরে নিতে হবে যে এটি হায়েযের রক্ত হিসেবেই প্রবাহিত হচ্ছে এবং এর জন্য কোন বয়স ও সময় নির্দিষ্ট নেই। তবে হ্যাঁ, এ রক্ত যদি বিরতিহীনভাবে প্রবাহিত হতে থাকে যে, আর বন্ধই হচ্ছে না অথবা অত্যন্ত স্বল্প সময় যেমন মাসে মাত্র এক-দুই দিন প্রবাহিত হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে ইস্তেহাযাহ্ হিসেবে গণ্য করতে হবে যার বিস্তারিত বিবরণ শীঘ্রই সম্মানিত পাঠকবৃন্দের সামনে আসছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ হায়েয সম্পর্কে বলেন: 'নারীদের রেহেম গর্ভাশয়) থেকে যা কিছু বের হবে তাই হায়েয বলেই গণ্য হবে যতক্ষণ না ইস্তেহাযার রক্ত হিসেবে অকাট্য কোন প্রমাণ পাওয়া যায়।' তিনি আরো বলেন: 'নারীর লজ্জাস্থান থেকে যখন কোন প্রকার রক্ত বের হবে তখন যদি জানা না থাকে যে, এটা কি রগ থেকে বের হয়ে আসা রক্ত না কোন আঘাত জনিত কারণে প্রবাহিত রক্ত, তাহলে সে রক্তকে হায়েয হিসেবেই গণ্য করতে হবে।' শায়খুল ইসলাম রাহিমাহুল্লাহর এই অভিমত সময়-সীমা নির্ধারণকারীদের অভিমতের চেয়ে দলীল- প্রমাণের দিক থেকে যেমন শক্তিশালী, ঠিক তেমনই অনুধাবন ও হৃদয়ঙ্গম করার পক্ষে এবং আমল ও বাস্তবায়নের দিক দিয়েও অতি সহজ। এমনকি উক্ত গুণাবলীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে কোন মতকে দ্বীন ও ইসলামের সার্বজনীন নীতির প্রতি লক্ষ্য রেখে গ্রহণ করাই উত্তম। কেননা এটা সহজসাধ্য ও সরল। যেন তা পালন করা কারো পক্ষে কষ্টকর না হয়।) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻣِﻦْ ﺣَﺮَﺝٍ ৭৮) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺤـﺞ "তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নি।" [সূরা আল-হাজ্জ: ৭৮] এবং নবী করীম সা. এরশাদ করেছেন: ্থ্থ ﺇﻥَّ ﺍﻟﺪِّﻳْﻦَ ﻳُﺴْﺮٌ , ﻭَﻟَﻦْ ﻳُﺸَﺎﺩَّ ﺍﻟﺪِّﻳْﻦَ ﺃﺣَﺪٌ ﺇﻻَّ ﻏَﻠَﺒَﻪُ , ﻓَﺴَﺪِّﺩُﻭْﺍ ﻭَﻗَﺎﺭِﺑُﻮْﺍ ﻭَﺃﺑْﺸِﺮُﻭْﺍ ,, নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ। কেউ দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করে জিততে পারে না। কাজেই তোমরা মধ্য পথ অবলম্বন কর, দ্বীনের) নিকটবর্তী থাক এবং অল্প কিন্তু স্থিতিশীল আমলের প্রতিদানের) সুসংবাদ দাও।)) [বুখারী] নবী করীম সা.-এর বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে একটা বৈশিষ্ট্য এই ছিল যে, যতক্ষণ পর্যন্ত গুনাহ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কোন বিষয়ের দুটি দিকের মধ্যে সহজ দিকটাই তিনি গ্রহণ করতেন। গর্ভবতী মহিলার রক্তস্রাব সাধারণত নারী যখন গর্ভবতী হয় তখন রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: 'রক্তস্রাব বন্ধ হওয়ার মাধ্যমে গর্ভবতী বলে প্রমাণিত হয়। সন্তান সম্ভবা মহিলা যদি প্রসবের অল্প সময় পূর্বে যেমন দুই দিন অথবা তিন দিন পর্যন্ত রক্তস্রাব দেখে এবং সাথে যদি প্রসব বেদনা থাকে তাহলে উহাকে নেফাস প্রসবোত্তর রক্তস্রাব) হিসেবে গণ্য করা হবে। আর যদি প্রসবের অনেক পূর্বে রক্ত প্রবাহিত হয়ে থাকে তাহলে উক্ত রক্ত নেফাস হিসেবে গণ্য হবে না। এমতাবস্থায় প্রবাহিত রক্তকে কি হায়েয হিসেবে গণ্য করে তার উপর হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী করা হবে? না অসুস্থতার রক্ত গণ্য করা হবে? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক সমাধান হচ্ছে, সন্তান সম্ভবা মহিলার যদি পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী রক্ত দেখা দেয় তাহলে সেটাকে হায়েয হিসেবে গণ্য করতে হবে। কেননা নারীর লজ্জাস্থান থেকে যে রক্ত বের হয় তা হায়েয হওয়াটাই হচ্ছে প্রকৃত নিয়ম। হ্যাঁ, উক্ত রক্ত হায়েয নয় এর পিছনে যদি কোন রকম শক্ত প্রমাণ থাকে তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু কুরআন ও সুন্নাতের কোথাও এমন কোন প্রমাণ নেই যে, গর্ভবতী মহিলার হায়েয হতে পারে না। ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুমাল্লাহর এটিই মত। ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহও এই মত গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর লিখিত ইখতিয়ারাত গ্রন্থের ৩০ পৃষ্ঠায় ইমাম বাইহাকীর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, ইমাম আহমদের এই জাতীয় একটি অভিমত রয়েছে। বরং তিনি উল্লেখ করেছেন ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুমাল্লাহর উক্ত মতামতের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। এখন প্রতীয়মান হলো যে, সাধারণ মহিলার হায়েযের যে হুকুম গর্ভবতী মহিলারও ঠিক সেই হুকুম। তবে নিম্নোক্ত দু'টি মাসআলায় এর ব্যতিক্রম রয়েছে: ১) তালাক: অন্তঃসত্তা নয় এমন মহিলার ঋতুস্রাবের অবস্থায় ইদ্দত পূরণ করা হলে তাকে তালাক দেয়া হারাম।পক্ষান্তরে সন্তান সম্ভবা মহিলার ঋতুস্রাবের অবস্থায় ইদ্দত পূরণ করা জরুরী হলেও তাকে তালাক দেয়া হারাম নয়। কেননা কুরআন মজীদে বলা হয়েছে যে, ﻓَﻄَﻠِّﻘُﻮﻫُﻦَّ ﻟِﻌِﺪَّﺗِﻬِﻦَّ ১) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻄﻼﻕ "তোমরা তাদেরকে তালাক দিও তাদের ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে।" [সূরা আত-তালাক: ১] সন্তান সম্ভবা নয় এমন মহিলাকে রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেয়া কুরআন শরীফের উক্ত আয়াতের বিরোধী। কিন্তু সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে হায়েযের অবস্থায় তালাক দেয়া কুরআন শরীফের ঘোষণা বিরোধী নয়। কেননা যে ব্যক্তি গর্ভবতী স্ত্রীকে তালাক দিবে সে তো তার ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখেই দিবে, স্ত্রী হায়েযের অবস্থায় থাকুক বা পবিত্র অবস্থায় থাকুক। কারণ গর্ভধারণ দিয়েই তার ইদ্দত পরিগণিত হবে। আর এ কারণেই সঙ্গমের পরে তাকে তালাক দেয়া হারাম নয় বরং জায়েয। পক্ষান্তরে গর্ভবতী নয় এমন মহিলাকে সঙ্গমের পর তালাক দেওয়া হারাম। ২) গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে নারীর ঋতুবতী হওয়া না হওয়া সমান। প্রমাণ হিসেবে পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা তালাকের ৪নং আয়াত পেশ করা হচ্ছে। আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেন: ﻭَﺃُﻭْﻟَﺎﺕُ ﺍﻟْﺄَﺣْﻤَﺎﻝِ ﺃَﺟَﻠُﻬُﻦَّ ﺃَﻥ ﻳَﻀَﻌْﻦَ ﺣَﻤْﻠَﻬُﻦَّ ৪) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻄﻼﻕ "গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।" [সূরা আত-তালাক: ৪] তৃতীয় পরিচ্ছেদ হায়েয অবস্থায় আপতিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হায়েয অবস্থায় আপতিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি কয়েক প্রকার: ১ম বিষয়: রক্তস্রাব নির্দিষ্ট নিয়ম ও পরিমাণের চেয়ে কম অথবা বেশী হওয়া। যেমন কোন নারীর প্রতি মাসে ছয় দিন করে ঋতুস্রাবের অভ্যাস। ছিল কিন্তু এক মাসে ৭ দিন পর্যন্ত ঋতুস্রাব অব্যাহত থাকে অথবা কোন মেয়েলোকের ৭ দিন করে ঋতুস্রাব হয়ে থাকে সেখানে ৬ দিন থাকার পর বন্ধ হয়ে গেল। ২য় বিষয়: নিয়মিত অভ্যাসের আগে-পরে হায়েয আরম্ভ হওয়া। যেমন যেখানে মাসের শেষের দিকে হায়েয আসে সেখানে প্রথম দিকে আসলো অথবা মাসের প্রথম দিকে আসার পরিবর্তে শেষের দিকে আসলো। উপরোক্ত বিষয় দু'টির হুকুম কি? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক সমাধান হচ্ছে এই যে, নারী যখনই ঋতুস্রাব দেখতে পাবে তখনই ঋতুবতী হিসেবে গণ্য হবে এবং যখনই তা বন্ধ হবে তখনই পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে পূর্ব অভ্যাসের চেয়ে কম-বেশী হওয়া কিংবা আগে-পরে হওয়া সমান কথা। এ মাসআলার প্রমাণাদি পূর্বের অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। সার-সংক্ষেপ হল, রক্তস্রাব দেখা দেয়া না দেয়ার উপরই তার হুকুম-আহকাম নির্ভর করে। এটিই ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর অভিমত। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহও এ সমাধানকে গ্রহণ করেছেন। মুগনী গ্রন্থের লেখক উক্ত অভিমতের সমর্থন করে বলেছেন, 'উপরোল্লিখিত অবস্থায় যদি নারীদের নিয়মিত বা পূর্ব অভ্যাস ধর্তব্য হতো তাহলে নিশ্চয় নবী করীম ৎ নিজ উম্মতের কাছে তা বর্ণনা করতেন, বিলম্ব করার কোন প্রশ্নই উঠে না। কারণ নবী করীম ৎ-এর পবিত্র স্ত্রীগণ সহ সকল নারীজাতির জন্য মাসআলাটির বিবরণ সার্বক্ষনিক প্রয়োজনীয় ছিল, তাই তাতে বিলম্ব করা জায়েয ছিলনা। সুতরাং মুহাম্মাদ ৎ এ ব্যাপারে অসতর্ক ছিলেন না, বরং সতর্কই ছিলেন। সুতরাং মুস্তাহাযাহ্ নারী ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে পূর্ব অভ্যাস ধর্তব্য বলে প্রিয় নবী ৎ থেকে কোন আলোচনার সূত্রপাত হয়নি।' [মুগনী: ১/৩৫৩] তৃতীয় বিষয়: হলুদ অথবা মাটি বর্ণের রক্ত প্রসঙ্গ: কোন মহিলা যদি তার লজ্জাস্থানে জখমের পানির মত হলুদ বর্ণের অথবা হলুদ এবং কাল রং এর মধ্যবর্তী বর্ণের রক্ত দেখে তাহলে সে রক্ত ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে অথবা ঋতুস্রাবের পর পরই পবিত্র হওয়ার পূর্বেই প্রবাহিত হলে ঋতুস্রাব বলে গণ্য হবে এবং এর উপর ঋতুস্রাবের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। পক্ষান্তরে যদি সে রক্ত পবিত্রতা অর্জনের পরে প্রবাহিত হয়ে থাকে তাহলে সেটা ঋতুস্রাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা উম্মে আতিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহা এ প্রসঙ্গে বলেছেন: ্থ্থ ﻛُﻨَّﺎ ﻻَ ﻧَﻌُﺪُّ ﺍﻟﺼُّﻔْﺮَﺓَ ﻭَﺍﻟْﻜُﺪْﺭَﺓَ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟﻄُّﻬْﺮِ ﺷَﻴْﺌًﺎ আমরা পবিত্রতা অর্জন করার পর হলুদ অথবা মাটিবর্ণের রক্তকে কিছুই মনে করতাম না।)) [হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ বিশুদ্ধ সনদ দ্বারা উল্লেখ করেছেন। এবং ইমাম বুখারীও বর্ণনা করেছেন তবে 'পবিত্রতা অর্জন করার পর' কথাটি তিনি উল্লেখ না করলেও শিরোনাম দাঁড় করিয়েছেন এভাবে {রক্তস্রাব বিহীন দিনগুলিতে হলুদ অথবা মাটিবর্ণের রক্ত প্রবাহিত হওয়া অধ্যায়}।] বুখারী শরীফের র্শাহ ব্যাখ্যা) ফত্হুল বারীতে বলা হয়েছে যে, এই শিরোনাম দ্বারা ইমাম বুখারী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস ্থ ﻻَ ﺗَﻌْﺠَﻠْﻦَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮَﻳْﻦَ ﺍﻟْﻘَﺼَّﺔَ ﺍﻟْﺒَﻴْﻀَﺎﺀ অর্থাৎ সাদা পানি না দেখা পর্যন্ত তাড়াহুড়া করো না।)) এবং উম্মে আতিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহার উপরোল্লিখিত হাদীসের মধ্যে এভাবে সামঞ্জস্য বিধান করতে চেয়েছেন যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার উদ্দেশ্য হচ্ছে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে যদি হলুদ অথবা মাটিবর্ণের রক্ত দেখে তাহলে সেটা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। এবং উম্মে আতিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীসের অর্থ হচ্ছে যে, ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে পবিত্রতা অর্জন করার পর হলুদ অথবা মাটিবর্ণের রক্ত দেখা দিলে তা ধর্তব্য নয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার যে হাদীসটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে তার প্রকৃত বিষয়বস্তু এই যে, তখনকার নারীরা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহার) খিদমতে দারাজাহ্ এমন জিনিষ যা দ্বারা নারী তার লজ্জাস্থান আবৃত করে রাখে) পাঠাতেন, যেন তারা বুঝতে পারে যে, সেখানে ঋতুস্রাবের কোন চিহ্ন বাকী আছে কি না? সে দারাজাহতে হায়েযের নেকড়া বা তুলা ছিল এবং উক্ত নেকড়ায় হলুদ রং দেখে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন: তোমরা সাদা পানি না দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা কর।)) প্রকাশ থাকে যে, হাদীসে বর্ণিত 'আল-কাস্সাতুল বাইযা' বলা হয় সেই সাদা পানিকে যা হায়েয বন্ধ হওয়ার সময় মহিলার গর্ভাশয় থেকে বের হয়। ৪র্থ বিষয়: ঋতুস্রাব থেমে থেমে প্রবাহিত হওয়া যেমন একদিন প্রবাহিত হয় আর একদিন বন্ধ থাকে। এমতাবস্থায় দেখতে হবে এ ধরনের ব্যতিক্রম সব সময়ই হয় না মাঝে মধ্যে। যদি সব সময়ই হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য করে তার বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। আর যদি সব সময় এমন না হয়, বরং মাঝে মধ্যে এ ধরনের ব্যতিক্রম হয়ে থাকে তাহলে যে সময়টুকুতে বা যে দিনটিতে ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে সেটাকে পবিত্রতার মধ্যে গণ্য করা হবে? না ঋতুস্রাবের অন্তর্ভুক্ত করা হবে? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফিয়ী রাহিমাহুল্লাহর দুই অভিমতের বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে স্রাব বিহীন মধ্যবর্তী ঐ সময়টুকুও হায়েযের মধ্যেই গণ্য করা হবে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ এবং 'আল-ফায়েক' নামক গ্রন্থের লেখক উক্ত অভিমত গ্রহণ করেছেন। ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহর অভিমতও তাই। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সাদা পানি বের না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অথচ মধ্যবর্তী সেই সময়ে সাদা পানি দেখা যায়নি। তাছাড়া যদি স্রাব বিহীন মধ্যবর্তী সেই সময়টাকে পবিত্রতার মধ্যে গণ্য করা হয় তাহলে নিশ্চয়ই তার আগের এবং পরের সময়টাকে হায়েযের মধ্যে গণ্য করতে হবে অথচ এমন কথা কেউই বলেনি। আর যদি মধ্যবর্তী ঐ সময়টুকুকে পবিত্রতার হিসেবে মেনে নেয়া হয় তাহলে তালাক প্রাপ্তা এবং বিধবা স্ত্রীদের ইদ্দতকাল ৫ দিনেই শেষ হয়ে যাবে। এমনিভাবে প্রতি দুই দিনে গোসল করা ইত্যাদি। ফলে নারী জাতির জন্য বিষয়টি অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে অথচ ইসলামী শরীয়তে - আলহামদু লিল্লাহ- কষ্টকর বলতে কোন কিছুই নেই। হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে, বর্ণিত অবস্থায় রক্ত দেখা দিলে তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে এবং পরিচ্ছন্নতা দেখা দিলে তা পবিত্রতা হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু রক্ত এবং পরিচ্ছন্নতার সমষ্টি যদি নিয়মিত হায়েযের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে তাহলে অতিক্রমকারী রক্ত ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য হবে। মুগনী গ্রন্থের ১ম খন্ডের ৩৫৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, 'লক্ষ্য রাখতে হবে রক্ত যদি এক দিনের চেয়ে কম সময় বন্ধ থাকে তাহলে ঐ সময়টাকে পবিত্রতার মধ্যে গণ্য করা হবে না, ঐ হাদীসের উপর ভিত্তি করে যা নেফাসের অধ্যায়ে উল্লিখিত হয়েছে। যার সার-সংক্ষেপ হচ্ছে এই যে, এক দিনের চেয়ে কম সময়ের দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করবে না। এবং এটাই সঠিক সমাধান। কেননা রক্ত একবার প্রবাহিত হবে, একবার বন্ধ হবে, তাহলে এক ঘন্টা পর পর পবিত্রতা অর্জনকারীনী মহিলার পক্ষে গোসল করা চরম কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। অথচ শরীয়তের বিধি-বিধানে কষ্টের কোন স্থান নেই। যেমন মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা আল-হাজ্জের ৭৮ নং আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻣِﻦْ ﺣَﺮَﺝٍ ৭৮) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺤـﺞ "তিনি ধর্মে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি।" [সূরা আল-হাজ্জ: ৭৮] আল-মুগনী গ্রন্থের লেখক বলেন: সুতরাং এক দিনের কম সময় যদি রক্ত বন্ধ থাকে তাহলে তা পবিত্রতার অন্তর্ভুক্ত হবে না। তবে পবিত্রতার উপর কোন প্রমাণ থাকলে সেটা পৃথক কথা। যেমন একজন নারীর নিয়মিত অভ্যাসের শেষ প্রান্তে এসে হায়েয বন্ধ হলো অথবা হায়েয বন্ধ হওয়ার পর মহিলা লজ্জাস্থানে 'কাস্সায়ে বায়যা' অর্থাৎ সাদা পানির রেখা দেখল তাহলে এমতাবস্থায় তা পবিত্রতার অন্তর্ভুক্ত হবে।' আল-মুগনী গ্রন্থের এই অভিমত উপরোক্ত দুই সমাধানের মধ্যবর্তী এক উত্তম অভিমত। আল্লাহই সর্বজ্ঞানী। ৪র্থ পরিচ্ছেদ হায়েযের হুকুম-আহকাম হায়েযের বিশটিরও অধিক হুকুম রয়েছে, তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক প্রয়োজনীয় গুলো এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে। ১) নামায: ঋতুবতী মহিলার জন্য ফরয হোক কিংবা নফল, সকল প্রকার নামায পড়া নিষিদ্ধ। যদি পড়া হয় তাহলে সে নামায শুদ্ধ হবে না। এমনিভাবে ঋতুবতী মহিলার জন্য নামায ওয়াজিবও নয়। তবে পবিত্র হওয়ার পর অথবা ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পূর্বে কোন ওয়াক্তের পূর্ণ এক রাক'আত পড়তে পারে এতটুকু সময় যদি পেয়ে যায় তাহলে উক্ত ওয়াক্তের নামায কাযা করা ওয়াজিব। এক্ষেত্রে সে সময়টুকু ওয়াক্তের প্রথম দিক হোক অথবা শেষ দিক, এতে কোন পার্থক্য নেই। ওয়াক্তের প্রথম দিকে এক রাক'আত পরিমাণ সময় পাওয়ার দৃষ্টান্ত: একজন নারী সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর এক রাক'আত পড়তে পারে এতটুকু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ঋতুবতী হল, তাহলে হায়েয বন্ধ হওয়ার পর মাগরিবের এ নামাযটি কাযা করা তার উপর ওয়াজিব। কেননা সে ঋতুবতী হওয়ার পূর্বে মাগরিবের ওয়াক্ত থেকে এক রাক'আত সম পরিমাণ সময় পেয়েছে। ওয়াক্তের শেষ দিকে এক রাক'আত সময় পাওয়ার দৃষ্টান্ত: একজন নারী সূর্যোদয়ের পূর্বে ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হয়েছে এবং তখনও ফজরের এক রাক'আত আদায় করতে পারে এতটুকু সময় বাকী রয়েছে তাহলে পবিত্র হওয়ার পর সেই ফজরের নামায কাযা করা তার উপর ওয়াজিব। কেননা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর সে ফজরের ওয়াক্ত থেকে এক রাক'আতের সম পরিমাণ সময় পেয়েছে। পক্ষান্তরে ঋতুবতী মহিলা যদি নামাযের ওয়াক্ত থেকে এতটুকু সময় না পায় যার মধ্যে এক রাক'আত নামায পড়া যেতে পারে, যেমন প্রথম দৃষ্টান্তে সূর্যাস্তের পর এক মিনিটের মধ্যেই মহিলা ঋতুবতী হয়ে গেল অথবা ২য় দৃষ্টান্তে সূর্যোদয়ের পূর্বে মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই ঋতু থেকে পবিত্র হল, তাহলে উক্ত মহিলার উপর সেই ওয়াক্তের নামায কাযা করা ওয়াজিব হবে না। কেননা নবী করীম ৎ বলেছেন: ্থ্থ ﻣَﻦْ ﺃﺩْﺭَﻙَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻓَﻘَﺪْ ﺃﺩْﺭَﻙَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ যে ব্যক্তি নামাযের এক রাক'আত পেয়েছে সে পুরো নামাযই পেয়েছে বলে মনে করতে হবে।)) [বুখারী ও মুসলিম] এর মর্মার্থ হলো, যদি কোন ব্যক্তি নামাযের এক রাক'আতের চেয়েও কম অংশ পায় তাহলে পুরো নামায পেয়েছে বলে মনে করা যাবে না। কোন ঋতুবতী মহিলা যদি আসরের সময় থেকে এক রাক'আতের সম পরিমাণ সময় পেয়ে যায় তাহলে তার উপর আসরের সাথে যোহরের নামাযেরও কি কাযা করা ওয়াজিব? এমনিভাবে এশার ওয়াক্ত থেকে এক রাক'আত পড়তে পারে এতটুকু সময় যদি পেয়ে যায় তাহলে তার জন্য কি এশার নামাযের সাথে মাগরিবের নামাযেরও কাযা করা জরুরী? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক অভিমত হচ্ছে শুধুমাত্র যে ওয়াক্তের এক রাক'আত পরিমাণ সময় পাওয়া যাবে সে ওয়াক্তেরই নামাযের কাযা ওয়াজিব। আর তা হচ্ছে শুধু আসর এবং এশা, কেননা নবী করীম সা. বলেছেন: যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাক'আত নামায পেয়েছে সে আসরকে পেয়েছে।)) [বুখারী ও মুসলিম] এখানে নবী করীম সা. বলেননি যে, সে যোহর এবং আসর পেয়েছে। একথাও উল্লেখ করেননি যে, তার উপর যোহরের নামাযের কাযা ওয়াজিব। মূলকথা দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়া। এটা ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালেক রাহিমাহুমাল্লাহর মাযহাব। [শারহুল মুহায্যাব: ৩/৭০] ঋতুবতী মহিলার যিকর করা, তাকবীর বলা, তাসবীহ পাঠ করা, আল্লাহর প্রশংসা করা, খাওয়া-দাওয়াসহ যে কোন কাজে বিসমিল্লাহ বলা, হাদীস পাঠ করা, দু'আ করা, দু'আয় আমীন বলা এবং কুরআন শরীফ শ্রবণ করা ইত্যাদি কোনটাই হারাম নয়। কেননা বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত আছে, ﺃﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ৎ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺘَّﻜِﺊُ ﻓِﻲْ ﺣِﺠْﺮِ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻭَﻫِﻲَ ﺣَﺎﺋِﺾٌ ﻓَﻴَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ . নবী করীম সা. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার রক্তস্রাব চলাকালীন তার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেন।)) বুখারী ও মুসলিম শরীফে উম্মে আতিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সা.-কে আমি বলতে শুনেছি, স্বাধীন নারী, পর্দানশীন ও ঋতুবতী মহিলারা দুই ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহে যেতে পারবে এবং তারা ধর্মীয় আলোচনা ও মু'মিনগণের দু'আয় উপস্থিত হতে পারবে। তবে ঋতুবতী নারীরা নামাযের স্থান থেকে দূরে থাকবে।)) ঋতুবতী মহিলার স্বয়ং কুরআন তেলাওয়াত করার হুকুম: বেশীরভাগ ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, ঋতুবতী মহিলার পক্ষে উচ্চারণ করে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা নাজায়েয এবং নিষিদ্ধ। তবে যদি শুধু চোখ দিয়ে দেখে অথবা মুখ দিয়ে উচ্চারণ ব্যতীত শুধু মনে মনে পড়ে তাহলে কোন অসুবিধা নেই। যেমন, কুরআন শরীফ চোখের সামনে আছে অথবা কুরআন মজীদের আয়াত সম্বলিত কোন বোর্ড সামনে আছে। এমতাবস্থায় ঋতুবতী নারী যদি আয়াতগুলির দিকে তাকায় এবং মনে মনে পড়ে তাহলে এটা জায়েয হওয়ার পিছনে কারো কোন দ্বিমত নেই বলে ইমাম নববী শারহুল মুহায্যাব ২য় খন্ডের ৩৭২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারী, ইবনে জারীর তাবারী এবং ইবনুল মুনযির বলেছেন, এটা জায়েয। ফাতহুল বারী ১ম খন্ডের ৩০৮ পৃষ্ঠায় ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ীর পুরাতন অভিমতের) উদ্ধৃতি দিয়ে এবং বুখারী শরীফে ইব্রাহীম নাখয়ীর উদ্ধৃতি পেশ করে বলা হয়েছে যে, ঋতুবতী নারীর কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করার মধ্যে কোন অসুবিধা নেই। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ ফাতাওয়া গ্রন্থে মাজমূআ ইবনে কাসেম ২৬তম খন্ডের ১৯১ পৃষ্ঠায়) বলেন: 'ঋতুবতী নারীর পক্ষে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা নিষিদ্ধ, এ ব্যাপারে কোনই প্রমাণ নেই। কেননা ঋতুবতী নারী এবং অপবিত্র ব্যক্তি কুরআন শরীফ থেকে কিছুই পড়তে পারবে না।)) বলে যে হাদীসটি রয়েছে তা হাদীস বিশেষজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুর্বল। নবী করীম সা.-এর যুগেও নারীদের রক্তস্রাব আসতো। এখন যদি এই রক্তস্রাবের কারণে নামাযের মত কুরআন শরীফের তেলাওয়াতও তাদের জন্য হারাম হয়ে থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই রাসূলে করীম সা. উম্মতের বৃহত্তর স্বার্থে তা বর্ণনা করতেন এবং তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণকে এ ব্যাপারে শিক্ষা দিতেন এবং কেউ না কেউ নবী সা. থেকে এ ব্যাপারে হাদীস বর্ণনা করতেন। কিন্তু রাসূল সা. থেকে ঋতুবতী নারীর কুরআন তেলাওয়াত হারাম প্রসঙ্গে কেউই কোন কিছু বর্ণনা করেননি। সুতরাং কোন নিষেধাজ্ঞা নাই যেখানে সে ক্ষেত্রে হায়েয অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াতকে হারাম হিসেবে গণ্য করা জায়েয হবে না। আর যেহেতু রাসূল সা.-এর যুগে নারীদের হায়েয হওয়া সত্বেও তাদেরকে কুরআন তেলাওয়াত করতে নিষেধ করেননি। তাই সাব্যস্ত হলো যে, আসলে তা হারাম নয়।' এ প্রসঙ্গে ওলামায়ে কেরামের বিভিন্ন মতামত সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর এখন এটিই বলা উচিত হবে যে, ঋতুবতী নারীর পক্ষে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া উচ্চারণ করে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত না করাই উত্তম। তবে বিশেষ প্রয়োজন হলে যেমন, শিক্ষিকা নারী ছাত্রীদেরকে শিখানোর উদ্দেশ্যে মুখে উচ্চারণ করে কুরআন শরীফ পড়তেই হবে। এমনিভাবে পরীক্ষার্থীনী পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তাগিদে হায়েয অবস্থায়ও কুরআন শরীফ পড়তে পারবে। ২) রোযা: ঋতুবতী নারীর পক্ষে ফরয-নফল সর্ব প্রকার রোযা রাখা হারাম এবং রোযা রাখাও তার জন্য জায়েয হবে না। কিন্তু ফরয রোযার কাযা তার উপর ওয়াজিব। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ্থ্থ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼِﻴْﺒُﻨَﺎ ﺫَﻟِﻚَ , ﺗَﻌْﻨِﻲْ ﺍﻟْﺤَﻴْﺾَ ﻓَﻨُﺆْﻣَﺮُ ﺑِﻘَﻀَﺎﺀِ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡِ ﻭَﻻَ ﻧُﺆْﻣَﺮُ ﺑِﻘَﻀَﺎﺀِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓ আমাদের যখন রক্তস্রাব হতো তখন আমাদেরকে শুধু রোযার কাযা করার আদেশ দেয়া হতো। কিন্তু নামাযের কাযা করার আদেশ দেয়া হতো না।)) [বুখারী ও মুসলিম] রোযা অবস্থায় রক্তস্রাব আসলে তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়। যদিও রক্তস্রাব সূর্যাস্তের সামান্য পূর্বে এসে থাকে। তবে ঐ রোযাটি ফরয হয়ে থাকলে তার কাযা ওয়াজিব। কিন্তু রোযাদার মহিলা যদি রোযা অবস্থায় সূর্যাস্তের পূর্বে লজ্জাস্থানের বেদনা অনুভব করে এবং প্রকৃত পক্ষে রক্তস্রাব সূর্যাস্তের পরেই আরম্ভ হয়ে থাকে তাহলে উক্ত নারীর রোযা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে এবং বিশুদ্ধ অভিমত অনুসারে রোযা নষ্ট হবে না। কারণ পেটের অভ্যন্তরের রক্তের কোন হুকুম নেই। এর প্রমাণ, পুরুষের ন্যায় স্বপ্নদোষ হয় এমন একজন মহিলা সম্পর্কে যখন রাসূলে করীম সা.-কে প্রশ্ন করা হলো যে, তার উপর কি গোসল করা ওয়াজিব? উত্তরে নবী করীম সা. বললেন: হ্যাঁ, যদি সে বীর্য দেখতে পায়।)) উক্ত হাদীসে গোসল ওয়াজিব হবে কি না এ হুকুমটা নবী করীম সা. বীর্য দেখা ও না দেখার সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন। এমনিভাবে বের না হওয়া পর্যন্ত বা দেখা না দেয়া পর্যন্ত হায়েযেরও বিধি- বিধান কার্যকরী হবে না। বরং কার্যকরী তখনই হবে যখন রক্ত দেখা দিবে। হায়েয অবস্থায় ফজরের সময় শুরু হলে ঐ দিনের রোযা রাখা জায়েয নয়। যদিও ফজরের সামান্য সময় পরে পবিত্র হয়ে থাকে। আর যদি ফজরের একটু আগে রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায় এবং বন্ধ হওয়ার পর রোযা রাখে তাহলে তা জায়েয আছে। এমতাবস্থায় গোসল ফজরের পরে করলেও কোন দোষ নেই। যেমন বীর্যস্খলন হেতু শরীর অপবিত্র হওয়ার পর কোন ব্যক্তি যদি অপবিত্রাবস্থায় রোযার নিয়ত করে এবং গোসল ফজরের পরে করে তাতে কোন দোষ নেই। তার রোযা শুদ্ধ হয়ে যাবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত স্পষ্ট হাদীস রয়েছে: ্থ্থ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ৎ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﻣِﻦْ ﺟِﻤَﺎﻉٍ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﺣْﺘِﻼَﻡٍ ﺛُﻢَّ ﻳَﺼُﻮْﻡُ ﻓِﻲْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ,, নবী করীম সা. স্বপ্নদোষ ব্যতীত স্ত্রী সহবাসের কারণে অপবিত্র অবস্থায় ভোরে উঠে রমাযানের রোযা রাখতেন।)) [বুখারী ও মুসলিম] ৩) বাইতুল্লাহ শরীফের তওয়াফ: ঋতুবতী নারীর জন্য বাইতুল্লাহ শরীফের ফরয ও নফল উভয় প্রকার তাওয়াফ করা হারাম। যদি করা হয় তাহলে তা শুদ্ধ হবে না। এর প্রমাণ হচ্ছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার রক্তস্রাব আরম্ভ হওয়ার পর রাসূলে করীম সা. তাঁকে বলেছিলেন: ্থ্থ ﺍﻓْﻌَﻠِﻲْ ﻣَﺎ ﻳَﻔْﻌَﻞُ ﺍﻟْﺤَﺎﺝُّ ﻏَﻴْﺮَ ﺃﻥْ ﻻَّ ﺗَﻄُﻮْﻓِﻲْ ﺑِﺎﻟْﺒَﻴْﺖِ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻬُﺮِﻱ পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তুমি কা'বা শরীফের তওয়াফ ছাড়া হজ্জের অন্যান্য কাজগুলো করে যাও।)) এ হাদীসে নবী সা. হায়েয অবস্থায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে তাওয়াফ করতে নিষেধ করেছেন। বুঝা গেল, রক্তস্রাব অবস্থায় কা'বা শরীফের তওয়াফ করা হারাম। তবে হজ্জ ও উমরার অন্যান্য কাজ যেমন সাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানো, আরাফার ময়দানে অবস্থান করা, মুযদালিফা ও মিনায় রাত্রি যাপন করা এবং জামরায় পাথর নিক্ষেপ করা ইত্যাদি হারাম নয়। এ থেকে আরো পরিষ্কার হয়ে গেল যে, যদি কোন মহিলা পবিত্রাবস্থায় তাওয়াফ করে এবং তাওয়াফ শেষ হওয়া মাত্রই হায়েয শুরু হল অথবা সাফা- মারওয়া পাহাড়ের মাঝে দৌড়ানোর সময় হায়েয দেখা দিল তাহলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। ৪) ঋতুবতী নারীর জন্য বিদায়ী তওয়াফ জরুরী নয়: হজ্জ ও উমরার করণীয় কাজগুলো শেষ করে নিজের দেশের দিকে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে যদি কোন মহিলার রক্তস্রাব আরম্ভ হয়ে যায় এবং রওয়ানা হওয়া পর্যন্তঅব্যাহত থাকে তাহলে বিদায়ী তওয়াফ করা থেকে উক্ত মহিলা মুক্তি পেয়ে যাবে অর্থাৎ বিদায়ী তওয়াফ আর করা লাগবে না) কেননা এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস :-এর হাদীস রয়েছে। তিনি বলেন: ্থ্থ ﺃُﻣِﺮَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺃﻥْ ﻳَﻜُﻮْﻥَ ﺁﺧِﺮَ ﻋَﻬْﺪِﻫِﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﻴْﺖ ﺇﻻَّ ﺃﻧَّﻪُ ﺧُﻔِّﻒَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃﺓِ ﺍﻟْﺤَﺎﺋِﺾ সকল হজ্জকারী) কে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তাদের শেষ কাজ যেন কা'বা শরীফের তাওয়াফ দিয়েই হয়। কিন্তু ঋতুবতী নারীর জন্য এই আদেশ শিথিল করা হয়েছে।)) অর্থাৎ তাদের সেই বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে না। {বুখারী মুসলিম} প্রকাশ থাকে যে, ঋতুবতী নারীর জন্য বিদায়ের প্রাক্কালে মসজিদে হারামের দরজায় গিয়ে মুনাজাত বা প্রার্থনা করা উচিত নয়। কেননা নবী করীম সা. থেকে এ ব্যাপারে কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। অথচ রাসূল ৎ থেকে বর্ণিত হওয়ার উপরই সমস্ত ইবাদতের মূল ভিত্তি। শুধু তাই নয় বরং নবী করীম ৎ থেকে বর্ণিত হাদীস এই হুকুমের বিরোধিতা করে। যেমনটি সাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত। সাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার তাওয়াফে যিয়ারার ফরয তাওয়াফ) পর যখন ঋতুস্রাব দেখা দিল তখন প্রিয় নবী ৎ তাঁকে বললেন: এখন তাহলে মদীনার দিকে বের হয়ে পড়।)) এখানে রাসূল সা. তাঁকে মসজিদের দরজার দিকে যাওয়ার জন্য আদেশ দেননি। যদি বিষয়টি শরীয়ত সম্মত হতো তাহলে নিশ্চয়ই নবী করীম সা. তা বর্ণনা করতেন। তবে হজ্জ ও উমরার তাওয়াফ থেকে ঋতুবতী নারী অব্যাহতি পাবে না। বরং পবিত্রতা অর্জন করার পর তাকে তাওয়াফ করতেই হবে। ৫) মসজিদে ঋতুবতী নারীর অবস্থান: ঋতুবতী নারীর মসজিদে এমনকি ঈদগাহে নামাযের স্থানে অবস্থান করা হারাম। এ প্রসঙ্গে উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসটিকে প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা যায়। তিনি রাসূল ৎ-কে বলতে শুনেছেন: ্থ্থ ﻟِﻴَﺨْﺮُﺝِ ﺍﻟْﻌَﻮَﺍﺗِﻖُ ﻭَﺫَﻭَﺍﺕُ ﺍﻟْﺨُﺪُﻭْﺭِ ﻭَﺍﻟْﺤُﻴَّﺾُ ﻭﻓِﻴﻪ : ্থ্থ ﻳَﻌْﺘَﺰِﻝُ ﺍﻟْﺤُﻴَّﺾُ ﺍﻟْﻤُﺼَﻠَّﻰ ,, স্বাধীন, পর্দানশীন ও ঋতুবতী নারীরা যেন বের হয়।)) হাদীসে এও উল্লেখ আছে: ঋতুবতী নারীরা নামাযের স্থান থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবে।)) ৬) স্ত্রী সহবাস: রক্তস্রাব চলাকালীন স্ত্রী সহবাস করা স্বামীর জন্য যেমন হারাম ঠিক তেমনি ঐ অবস্থায় স্বামীকে মিলনের সুযোগ দেয়াও স্ত্রীর জন্য হারাম। এ হুকুমটি সরাসরি পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন: ﻭَﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻧَﻚَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴﺾِ ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺃَﺫًﻯ ﻓَﺎﻋْﺘَﺰِﻟُﻮﺍْ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴﺾِ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺮَﺑُﻮﻫُﻦَّ ﺣَﺘَّﻰَ ﻳَﻄْﻬُﺮْﻥَ ২২২) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ "তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বলে দাও যে, এটা কষ্টদায়ক বস্তু, কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাক এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিকট যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পবিত্র না হয়।" [সূরা আল-বাকারাহ: ২২২] উক্ত আয়াতে মাহীয) শব্দ দ্বারা হায়েযের সময় এবং লজ্জাস্থানকে বুঝানো হয়েছে। এভাবে হাদীস দ্বারাও বিষয়টি প্রমাণিত। প্রিয় নবী সা. বলেছেন: স্ত্রী সহবাস ছাড়া বাকী সব কিছু করতে পার।)) [মুসলিম] সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা! আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, রক্তস্রাব অবস্থায় স্ত্রী সহবাস হারাম হওয়ার ব্যাপারে সমস্ত মুসলমান একমত। এখানে কারো কোন রকম দ্বিমত নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলা এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখে তার জন্য এমন একটি অসৎ কাজে লিপ্ত হওয়া কোনভাবেই বৈধ হবে না, যার উপর কুরআন, সুন্নাহ এবং মুসলমানদের সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর পরও যারা এ অবৈধ কাজে লিপ্ত হবে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ কারীদের অন্তর্ভুক্ত এবং মু'মিনদের মতাদর্শের পরিপন্থী পথের অনুসারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। আল-মাজমূ' শারহুল মুহায্যাব ২য় খন্ডের ৩৭ নং পৃষ্ঠায় ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, ঋতুস্রাব চলাকালে যে ব্যক্তি স্ত্রী সঙ্গমে লিপ্ত হবে তার কবীরা গুনাহ হবে। আমাদের ওলামায়ে কেরাম যেমন ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: যে ব্যক্তি হায়েয অবস্থায় স্ত্রী মিলনকে হালাল মনে করবে সে কাফের হয়ে যাবে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার যিনি পুরুষের জন্য ঋতুস্রাব চলাকালীন সঙ্গম ব্যতীত স্ত্রীর সাথে এমন সব কাজ করাকে জায়েয করে দিয়েছেন যার মাধ্যমে স্বামী আপন কামোত্তেজনা নির্বাপিত করতে পারে। যেমন চুমু দেয়া, আলিঙ্গন করা এবং লজ্জাস্থান ছাড়া অন্যান্য অঙ্গের মাধ্যমে যৈবিক চাহিদা পূর্ণ করা। তবে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ ব্যবহার না করাই উত্তম। কাপড় বা পর্দা জড়িয়ে আড়াল করে নিলে অসুবিধা নেই। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: নবী করীম সা. ঋতুস্রাব চলাকালীন আমাকে আদেশ করলে আমি ইযার পরতাম। তখন তিনি আমাকে আলিঙ্গন করতেন।)) ৭) তালাক: হায়েয অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেয়া স্বামীর জন্য হারাম। কেননা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা তালাকের ১ম আয়াতে ইরশাদ করেন: ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺇِﺫَﺍ ﻃَﻠَّﻘْﺘُﻢُ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﻓَﻄَﻠِّﻘُﻮﻫُﻦَّ ﻟِﻌِﺪَّﺗِﻬِﻦَّ ১) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻄﻼﻕ "হে নবী! তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদেরকে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দাও।" [সূরা আত-তালাক: ১] অর্থাৎ এমন সময়ে তালাক দিবে যার মাধ্যমে তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী যেন তালাকের পর থেকে নির্দিষ্ট ইদ্দত গণনা করতে পারে। আর এটা গর্ভবতী অবস্থায় অথবা সঙ্গমবিহীন পবিত্রতার সময়ে তালাক দেয়া ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেয়া হলে স্ত্রী ইদ্দত গণনা করতে পারবে না বরং অসুবিধার সম্মুখীন হবে। কেননা যে হায়েযের মধ্যে তাকে তালাক দেয়া হয়েছে সেটা তো ইদ্দতের মধ্যে গণ্য হবে না। এমনিভাবে যদি পবিত্রতার অবস্থায় সঙ্গমের পর তালাক দেয়া হয় তখনও ইদ্দতকাল নির্দিষ্ট করা সম্ভব হবে না। কেননা এই সঙ্গমের দ্বারা স্ত্রীর গর্ভবতী হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণ অজানা থাকবে। যদি গর্ভবতী না হয়ে থাকে তাহলে হায়েযের মাধ্যমে ইদ্দত গণনা করবে। এমতাবস্থায় যেহেতু ইদ্দতের প্রকার সম্পর্কে কোন কিছু নিশ্চিত জানা নেই সেহেতু বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তালাক দেয়া হারাম। উপরোক্ত আয়াত দ্বারা স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের অবস্থায় তালাক দেয়া হারাম প্রমাণিত হয়েছে এবং বুখারী ও মুসলিম সহ হাদীসের অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত হাদীস দ্বারাও এটিই প্রতীয়মান হয়। যেমন ইবনে উমর : থেকে বর্ণিত, তিনি স্বীয় স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের অবস্থায় তালাক দিলে উমর : নবী করীম ৎ-কে সে বিষয়ে অবহিত করেন। নবী করীম ৎ রাগান্বিত হয়ে বললেন: ্থ্থ ﻣُﺮْﻩُ ﻓَﻠْﻴُﺮَﺍﺟِﻌْﻬَﺎ ﺛُﻢَّ ﻟِﻴُﻤْﺴِﻜْﻬَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻬُﺮَ ﺛُﻢَّ ﺗَﺤِﻴْﺾَ ﺛُﻢَّ ﺗَﻄْﻬُﺮَ ﺛُﻢَّ ﺇﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺃﻣْﺴَﻚَ ﺑَﻌْﺪُ ﻭَﺇﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﻃَﻠَّﻖَ ﻗَﺒْﻞَ ﺃﻥْ ﻳَﻤُﺲَّ ﻓَﺘِﻠْﻚَ ﺍﻟْﻌِﺪَّﺓُ ﺍﻟَّﺘِﻲْ ﺃﻣَﺮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺃﻥْ ﺗُﻄَﻠَّﻖَ ﻟَﻬَﺎ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀُ তুমি তাকে আদেশ কর সে যেন তালাক প্রত্যাহার করে স্ত্রীকে নিয়ে আসে এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজের কাছে রাখে। অতঃপর পুনরায় যখন ঋতুস্রাব দেখা দিবে এবং সেই ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন নিজের নিকট রাখতে চাইলে রাখবে এবং তালাক দিতে চাইলে সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিয়ে দিবে। আর এটাই হচ্ছে সেই ইদ্দত যার প্রতি লক্ষ্য রেখে আল্লাহ তালাক দেয়ার জন্য নির্দেশ করেছেন।)) যদি কোন স্বামী ঋতুস্রাব অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং এর জন্য আল্লাহ তা'আলার নিকট তাওবা করতঃ স্ত্রীকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে যাতে পরবর্তীতে আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূলের হুকুম মোতাবেক তালাক দিতে পারে। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার পর যে হায়েযে তালাক দেয়া হয়েছে সে হায়েয থেকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত নিজের কাছেই রাখবে। অতঃপর পুনরায় যখন রক্তস্রাব দেখা দিবে এবং তা থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন চাইলে তাকে স্ত্রী হিসেবে নিজের কাছে রেখেও দিতে পারবে আবার তালাক দিতে চাইলে সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিতে হবে। প্রকাশ থাকে যে, রক্তস্রাব অবস্থায় তালাক দেয়া হারাম কিন্তু তিনটি ক্ষেত্রে তা জায়েয আছে। ১ম: বিবাহের পর স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে নির্জন স্থানে একাকীভাবে একত্রিত হওয়ার পূর্বেই অথবা বিবাহের পর সহবাসের পূর্বেই রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেয় তাহলে তা হারাম নয়। কেননা এমতাবস্থায় স্ত্রীর উপর কোন ইদ্দত পালন ওয়াজিব নয়। সুতরাং এই ক্ষেত্রে তালাক প্রদান করা আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী হবে না। ২য়: রক্তস্রাব যদি গর্ভবতী অবস্থায় দেখা দেয় তাহলে তালাক প্রদান করা হারাম নয়। ৩য়: তালাক যদি কোন কিছুর বিনিময়ে দেয়া হয় তাহলে হায়েয অবস্থায়ও তালাক দেয়া জায়েয। যেমন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া-বিবাদ এবং খারাপ সম্পর্ক বিরাজ করলে স্বামী বিনিময় নিয়ে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে, যদিও স্ত্রী রক্তস্রাবের অবস্থায় থাকে। প্রমাণ স্বরূপ ইবনে আব্বাস : থেকে বর্ণিত হাদীস উপস্থাপন করা যায়: ﺃَﻥَّ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓَ ﺛَﺎﺑِﺖِ ﺑْﻦِ ﻗَﻴْﺲٍ : ﺃَﺗَﺖِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ! ﺛَﺎﺑِﺖُ ﺑْﻦُ ﻗَﻴْﺲٍ ﻣَﺎ ﺃَﻋْﺘِﺐُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓِﻲ ﺧُﻠُﻖٍ ﻭَﻟَﺎ ﺩِﻳﻦٍ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺃَﻛْﺮَﻩُ ﺍﻟْﻜُﻔْﺮَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ্থ্থ ﺃَﺗَﺮُﺩِّﻳﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺣَﺪِﻳﻘَﺘَﻪُ؟ ,, ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻧَﻌَﻢْ , ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ্থ্থ ﺍﻗْﺒَﻞْ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﻘَﺔَ ﻭَﻃَﻠِّﻘْﻬَﺎ ﺗَﻄْﻠِﻴﻘَﺔً ,, সাবেত ইবনে কায়েস :-এর স্ত্রী রাসূলে করীম সা.- এর নিকট এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্বামীর চরিত্র এবং ধর্ম সম্পর্কে আমি কোন রকম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি না। তবে ইসলামের মধ্যে কুফুরীকে আমি অপছন্দ করি। তখন নবী সা. তাকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিতে পারবে?)) উত্তরে মহিলা বললেন: জি হ্যাঁ। এরপর নবী করীম সা. সাবেত ইবনে কায়েস :-কে বললেন: তুমি বাগানটি নিয়ে তাকে তালাক দিয়ে দাও।)) [বর্ণনায় বুখারী] স্ত্রী রক্তস্রাব অবস্থায় আছে না পবিত্র অবস্থায় ? নবী সা. এ বিষয়ে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করেননি। সুতরাং বুঝা গেল যে, বিনিময় নিয়ে তালাক দেয়া জায়েয আছে যদিও স্ত্রী হায়েয অবস্থায় থাকে। দ্বিতীয়তঃ এই তালাক তো অর্থের বিনিময়ে স্বামী থেকে স্ত্রীর বিচ্ছিন্ন হওয়ার একটা পথ মাত্র। সুতরাং যে কোন সময়ে এবং যে কোন অবস্থাতে প্রয়োজন দেখা দিলে এ ধরনের তালাক দেয়া জায়েয। মুগনী গ্রন্থের ৭ম খন্ডে ৫২ পৃষ্ঠায় 'খোলা' অর্থাৎ ঋতুস্রাবগ্রস্ত স্ত্রীর পক্ষে অর্থের বিনিময়ে স্বামী থেকে তালাক নেয়া জায়েয হওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এমন ক্ষতি থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করার জন্যই হায়েয চলাকালে তালাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তাকে ইদ্দতকাল দীর্ঘ হলে। আর অর্থ নিয়ে তালাক নেয়ার বিধানটিও ক্ষতির সম্মুখীন যাতে না হতে হয় সে উদ্দেশ্যেই শরীয়ত কর্তৃক বিধিত হয়েছে। ক্ষতি বলতে যেমন স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, মনোমালিন্য অথবা স্ত্রীর স্বামীকে অপছন্দ করা, তাকে ঘৃণা করা এবং তার সাথে সংসার করতে অনীহা প্রকাশ করা। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এ অবস্থার সৃষ্টি হলে মূলতঃ এটা স্ত্রীর জন্য ইদ্দতকাল দীর্ঘ হওয়ার চেয়েও বড় সমস্যা। সুতরাং সামান্য ক্ষতি হলেও বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রক্তস্রাবের অবস্থায়ও বিনিময় দিয়ে তালাক নেয়া জায়েয। এবং এ কারণেই রাসূল সা. অর্থের বিনিময়ে তালাক গ্রহণকারী উক্ত মহিলার অবস্থা সম্পর্কে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করেননি। হায়েয অবস্থায় নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয। এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা প্রতিটি জিনিষের হালাল হওয়াটাই হচ্ছে প্রকৃত নিয়ম এবং শরীয়তের দিক দিয়ে এটা নিষিদ্ধ হওয়ার কোন প্রমাণও নেই। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, হায়েয অবস্থায় স্বামীকে স্ত্রীর নিকট যেতে দেয়া যাবে কি না? উত্তরে বলতে হবে, যদি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে স্বামী সঙ্গম থেকে বিরত থাকবে তাহলে কোন অসুবিধা নেই। অন্যথায় সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে স্বামীকে স্ত্রীর নিকট পাঠানো যাবে না বা যেতে দেয়া হবে না। ৮) হায়েযের মাধ্যমে তালাকের ইদ্দত গণনা করা: কোন পুরুষ যদি স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করার পর অথবা নির্জন স্থানে একত্রিত হওয়ার পর তালাক দেয় তাহলে পূর্ণ তিন হায়েযের মাধ্যমে ইদ্দতকাল গণনা করা তালাক প্রাপ্তা নারীর উপর ওয়াজিব। তবে শর্ত হচ্ছে উক্ত স্ত্রীকে ঋতুবতী মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে এবং সন্তান সম্ভবা হবে না। প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার ঘোষণা: َﺍﻟْﻤُﻄَﻠَّﻘَﺎﺕُ ﻳَﺘَﺮَﺑَّﺼْﻦَ ﺑِﺄَﻧﻔُﺴِﻬِﻦَّ ﺛَﻼَﺛَﺔَ ﻗُﺮُﻭَﺀٍ ২২৮) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ "তালাক প্রাপ্তা নারী তিন হায়েয পর্যন্ত নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে।" [সূরা আল-বাকারাহ: ২২৮] আর যদি তালাক প্রাপ্তা নারী সন্তান সম্ভবা হয়ে থাকে তাহলে তার ইদ্দতকাল হবে সন্তান প্রসব পর্যন্তকেননা আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন: ﻭَﺃُﻭْﻟَﺎﺕُ ﺍﻟْﺄَﺣْﻤَﺎﻝِ ﺃَﺟَﻠُﻬُﻦَّ ﺃَﻥ ﻳَﻀَﻌْﻦَ ﺣَﻤْﻠَﻬُﻦَّ ৪) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻄﻼﻕ "গর্ভবতী নারীদের ইদ্দত সন্তান প্রসব পর্যন্ত।" [সূরা আত-তালাক: ৪] আর যদি তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী ঋতুবতী নারীদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে থাকে, যেমন কম বয়স্কা, যার রক্তস্রাব এখনো আরম্ভ হয়নি বা অতিবয়স্কা নারী যার বয়োঃবৃদ্ধির কারণে হায়েয আসার সম্ভাবনা নেই অথবা অস্ত্রোপচার জনিত কারণে গর্ভাশয় নষ্ট হওয়ায় হায়েয আসছে না ইত্যাদি কারণে যে সকল মহিলার রক্তস্রাবের সম্ভাবনা নেই তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ তিন মাস। প্রমাণ হচ্ছে পবিত্র কুরআনের বাণী: ﻭَﺍﻟﻠَّﺎﺋِﻲ ﻳَﺌِﺴْﻦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴﺾِ ﻣِﻦ ﻧِّﺴَﺎﺋِﻜُﻢْ ﺇِﻥِ ﺍﺭْﺗَﺒْﺘُﻢْ ﻓَﻌِﺪَّﺗُﻬُﻦَّ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔُ ﺃَﺷْﻬُﺮٍ ﻭَﺍﻟﻠَّﺎﺋِﻲ ﻟَﻢْ ﻳَﺤِﻀْﻦَ ৪) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻄﻼﻕ "তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবতী হওয়ার আশা নেই তাদেরকে নিয়ে সন্দেহ হলে হায়েয দ্বারা ইদ্দত গণনা সম্ভব না হলে) তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস। এমনিভাবে যারা এখনো ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদের ইদ্দতকালও অনুরূপ হবে।" [সূরা আত-তালাক: ৪] ঋতুবতী নারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্বেও যে সমস্ত মহিলার নির্দিষ্ট কোন কারণে যেমন অসুস্থতা বা দুগ্ধ পান করানোর ফলে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত হায়েয আসে না তারা ইদ্দতের মধ্যেই পড়ে থাকবে। যদিও ইদ্দতকাল দীর্ঘ হয়ে যায়। অতঃপর যখন রক্তস্রাব আরম্ভ হবে তখন ইদ্দত গণনা শুরু করবে। আর যদি নির্দিষ্ট কারণটি শেষ হওয়ার পরেও রক্তস্রাব না আসে যেমন রোগ থেকে মুক্তি লাভ করেছে অথবা দুধ পান করানো শেষ হয়ে গিয়েছে অথচ হায়েয বন্ধই রয়েছে তাহলে কারণটি শেষ হওয়ার পর থেকে পূর্ণ এক বছর ইদ্দত পালন করবে এবং এটাই বিশুদ্ধ অভিমত, যা শরীয়তের বিধান অনুসারে কার্যকরী হয়ে থাকে। কেননা নির্দিষ্ট কারণ শেষ হওয়ার পরেও হায়েয না আসা বিনা কারণে হায়েয বন্ধ থাকার মতই। আর কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া হায়েয বন্ধ থাকলে পূর্ণ এক বছর ইদ্দত পালন করতে হয়। তন্মধ্যে ৯ মাস গর্ভের কারণে সতর্কতাবশতঃ, আর তিন মাস ইদ্দতের কারণে। যদি বিবাহের পর স্পর্শ করার অথবা স্বামী-স্ত্রী কোন নির্জন স্থানে একাকীভাবে একত্রিত হওয়ার পূর্বেই তালাক দেয়া হয় তাহলে তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে আদৌ ইদ্দত পালন করতে হবে না, না হায়েযের মাধ্যমে না অন্য কোন পন্থায়। কারণ মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মু'মিন বান্দাদেরকে সম্মোধন করে ইরশাদ করেন: ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﺫَﺍ ﻧَﻜَﺤْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﺛُﻢَّ ﻃَﻠَّﻘْﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞِ ﺃَﻥ ﺗَﻤَﺴُّﻮﻫُﻦَّ ﻓَﻤَﺎ ﻟَﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦْ ﻋِﺪَّﺓٍ ﺗَﻌْﺘَﺪُّﻭﻧَﻬَﺎ ৪৯) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻷﺣﺰﺍﺏ "হে মু'মিনবৃন্দ! তোমরা মু'মিনা নারীদেরকে বিয়ে করার পর এবং স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিলে তোমাদের জন্যে তাদের পালনীয় কোন ইদ্দত নেই যা তোমরা গণনা করবে।" [সূরা আল-আহযাব: ৪৯] ৯) হায়েযের মাধ্যমে গর্ভাশয় সন্তানমুক্ত সম্পর্কিত হুকুম: গর্ভে ভ্রূণশূন্যতার সাথে শরীয়তের কয়েকটি হুকুম সম্পৃক্ত। তন্মধ্যে যদি গর্ভাবস্থায় স্বামী মারা যায় তখন ঐ গর্ভজাত সন্তান তার উত্তরসূরী হবে। উক্ত মহিলাকে যদি পুনঃ বিবাহ দেয়া হয় স্বামী মহিলাটির ঋতুস্রাব অথবা গর্ভে সন্তান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত তার সাথে সহবাস করবে না। এখন যদি সে অন্তঃসত্ত্বা হয় তাহলে মৃত ব্যক্তির সাথে সেই সন্তানটির উত্তরাধিকারের হুকুম দেয়া হবে। কেননা তার মৃত্যুর সময় সন্তানের অস্তিত্ব গর্ভাশয়ে ছিল। আর যদি মহিলাটির ঋতুস্রাব হয় তখন পূর্ব স্বামীর ওয়ারিশ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কেননা ঋতুস্রাব দ্বারা গর্ভাশয় ভ্রূণমুক্ত বলেই সর্ব সম্মতিক্রমে বিবেচনা করা হয়। ১০) গোসল ওয়াজিব প্রসঙ্গ: ঋতুবতী নারীর ঋতুস্রাব বন্ধ হলে গোসলের মাধ্যমে পুরো শরীরের পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে নবী করীম সা. ফাতেমা বিনতে হুবাইশকে বলেছিলেন: ্থ্থ ﻓَﺈﺫَﺍ ﺃﻗْﺒَﻠَﺖِ ﺍﻟْﺤَﻴْﻀَﺔُ ﻓَﺪَﻋِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻭَﺇﺫَﺍ ﺃﺩْﺑَﺮَﺕْ ﻓَﺎﻏْﺘَﺴِﻠِﻲْ ﻭَﺻَﻠِّﻲ যখন তোমার রক্তস্রাব আরম্ভ হবে তখন নামায ছেড়ে দিবে। আর যখন বন্ধ হবে তখন গোসল করে নামায পড়বে।)) [বুখারী] ওয়াজিব গোসল সমাপনের সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে পুরো দেহটাকে চুলের গোড়া সহ গোসলের মধ্যে শামিল করে নেয়া। আর উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে হাদীস শরীফে বর্ণিত পন্থায় গোসল করা। জনৈকা আসমা বিনতে শাকাল নবী করীম ৎ-কে ঋতুবতী মহিলার গোসল সম্পর্কে প্রশ্ন করলে রাসূলুল্লাহ ৎ ইরশাদ করেন: ্থ্থ ﺗَﺄْﺧُﺬُ ﺇﺣْﺪَﺍﻛُﻦَّ ﻣَﺎﺀَﻫَﺎ ﻭَﺳِﺪْﺭَﺗَﻬَﺎ ﻓَﺘَﻄَﻬَّﺮُ ﻓَﺘُﺤْﺴِﻦَ ﺍﻟﻄُّﻬُﻮْﺭَ ﺛُﻢَّ ﺗَﺼُﺐُّ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺃﺳِﻬَﺎ ﻓَﺘَﺪْﻟُﻜَﻪُ ﺩَﻟْﻜًﺎ ﺷَﺪِﻳْﺪًﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺒْﻠُﻎَ ﺷُﺌُﻮْﻥَ ﺭَﺃﺳِﻬَﺎ ﺛُﻢَّ ﺗَﺼُﺐُّ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺍﻟْﻤَﺎﺀَ , ﺛُﻢَّ ﺗَﺄﺧُﺬُ ﻓِﺮْﺻَﺔً ﻣُﻤَﺴَّﻜَﺔً ﺃﻱْ ﻗِﻄْﻌَﺔَ ﻗُﻤَﺎﺵٍ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﻣِﺴْﻚٌ ﻓَﺘَﻄَﻬَّﺮُ ﺑِﻬَﺎ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﺃﺳْﻤَﺎﺀُ: ﻛَﻴْﻒَ ﺗَﻄَﻬَّﺮُ ﺑِﻬَﺎ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ্থ্থﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪِ! ﺗَﻄَﻬَّﺮِﻳْﻦَ ﺑِﻬَﺎ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ: ﻛَﺄﻧَّﻬَﺎ ﺗُﺨْﻔِﻲْ ﺫَﻟِﻚَ ﺗَﺘَّﺒِﻌﻴْﻦَ ﺃﺛَﺮَ ﺍﻟﺪَّﻡِ . তোমরা বরইপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করবে। অতঃপর মাথায় পানি ঢালবে এবং উত্তমরূপে ঘষে ঘষে চুলের গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌঁছাবে এবং সম্পূর্ণ শরীরে পানি ঢেলে দিবে। পরে কস্তুরী মাখানো এক টুকরা কাপড় দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করবে।)) একথা শুনে আসমা বললেন: কস্তুরী মাখানো বস্ত্র দ্বারা কিভাবে পবিত্রতা হাসিল করবো? তখন নবী সা. বললেন: সুবহানাল্লাহ! তুমি তা দিয়েই পবিত্রতা হাসিল করবে।)) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা চুপিসারে তাকে বললেন: রক্তের চিহ্ন উক্ত কস্তুরী মিশ্রিত) কাপড় দ্বারা ঘষে মুছে ফেলবে। [বুখারী] গোসলের সময় নারীদের মাথায় চুল বাঁধা থাকলে তা খোলা আবশ্যক নয়। তবে যদি এমন শক্তভাবে বাঁধা থাকে যে, চুলের গোড়ায় পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থাকে তাহলে বন্ধন খোলা ওয়াজিব। সহীহ মুসলিমে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত এক হাদীস দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। তিনি রাসূল সা.-কে প্রশ্ন করেছিলেন যে, আমি আমার মাথার চুল বেঁধে রাখি। এখন পবিত্রতার জন্য গোসলের সময় অন্য রেওয়ায়েত অনুযায়ী) অপবিত্রতা ও হায়েযের গোসলের সময় আমি কি তা খুলে নিব? উত্তরে রাসূল সা. বললেন: ্থ্থ ﻻَ ﺇﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻜْﻔِﻴْﻚِ ﺃﻥْ ﺗَﺤْﺜِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺃﺳِﻚِ ﺛَﻼَﺙَ ﺣَﺜَﻴَﺎﺕٍ ﺛُﻢَّ ﺗُﻔِﻴْﻀِﻴْﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﺍﻟْﻤَﺎﺀَ ﻓَﺘَﻄْﻬُﺮِﻳﻦَ না, বরং তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, তুমি মাথার ওপর তিন আঁজলা পানি ঢেলে দিবে। অতঃপর সারা শরীরে পানি ঢেলে পবিত্রতা অর্জন করবে।)) নামাযের ওয়াক্ত চলাকালে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে ঋতুবতী মহিলার উপর তাড়াতাড়ি গোসল করা ওয়াজিব, যাতে উক্ত নামায নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে পারে। তবে ঋতুবতী মহিলা যদি সফরে থাকে এবং সঙ্গে পানি না থাকে অথবা সাথে পানি আছে কিন্তু ব্যবহার করলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে অথবা অসুস্থতার কারণে ব্যবহার করলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে তাহলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নিবে। কিছু কিছু মহিলা এমনও আছেন যারা নামাযের ওয়াক্তের মধ্যেই রক্তস্রাব বন্ধ হওয়া সত্বেও গোসল করতে বিলম্ব করেন এবং এই বলে কারণ দেখিয়ে থাকেন যে এই সময়ে পূর্ণাঙ্গরূপে পবিত্র হওয়া সম্ভব নয়। মূলতঃ এটা কোন দলীল বা ওজর হতে পারে না। কেননা ওয়াজিবের সর্ব নিম্ন স্তর অনুসারে কোন রকম গোসল সেরে ওয়াক্তের মধ্যে নামায আদায় করা সম্পূর্ণ সম্ভব, অসম্ভবের কিছুই নেই। অতঃপর দীর্ঘ সময় পাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গরূপে পবিত্রতা অর্জন করে নিতে পারে। পঞ্চম পরিচ্ছেদ ইস্তেহাযা ও তার বিধান ইস্তেহাযাহর সংজ্ঞা: কোন নারীর যদি অনবরত এমনভাবে রক্ত প্রবাহিত হয় যে কোন সময়েই বন্ধ হয় না, অথবা খুব অল্প সময় যেমন মাসে এক কি দুই দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকে তাহলে উক্ত প্রবাহমান রক্তকে ইস্তেহাযাহ বলা হয়। এক সাথে এমনভাবে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার দৃষ্টান্ত সহীহ বুখারীতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন: ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻓَﺎﻃِﻤَﺔُ ﺑِﻨْﺖِ ﺃﺑِﻲْ ﺣُﺒَﻴْﺶٍ ﻟِﺮَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ :ৎ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ! ﺇﻧِّﻲْ ﻻَ ﺃﻃْﻬُﺮُ. ﻭَﻓِﻲْ ﺭِﻭَﺍﻳَﺔٍ: ﺃﺳْﺘَﺤَﺎﺽُ ﻓَﻼَ ﺃﻃْﻬُﺮُ . ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সা.-কে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমি পবিত্র হতে পারছি না। অন্য রেওয়ায়েতে আছে: আমার অবিরাম রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে যার ফলে আমি পবিত্রতা অর্জন করতে পারছি না। খুব অল্প সময়ের জন্য বন্ধ হওয়ার দৃষ্টান্ত হামনাহ বিনতে জাহ্শ রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীসে রয়েছে। তিনি এক সময় নবী ৎ-এর নিকট এসে আরয করেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! অনেক দীর্ঘ সময় ধরে আমার রক্তস্রাব হয়। এই হাদীসখানা ইমাম আহমদ, ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী রাহিমাহুমুল্লাহ বর্ণনা করেছেন এবং বিশুদ্ধ বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন এবং ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ হাসান হিসেবে মত ব্যক্ত করেছেন বলে বর্ণিত আছে। মুস্তাহাযাহ তথা অস্বাভাবিক রক্তস্রাবে আক্রান্ত নারীর বিভিন্ন অবস্থা অনবরত রক্ত প্রবাহিত হয় এমন নারীর অবস্থা তিন প্রকার: ১) ইস্তেহাযাহ অর্থাৎ অনবরত রক্ত প্রবাহ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে তার প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঋতুস্রাবের অভ্যাস ছিল। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে পূর্ব নির্ধারিত সময় পর্যন্ত প্রবাহমান রক্তকে হায়েয হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এর উপর হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পরের রক্তস্রাবকে ইস্তেহাযাহ গণ্য করে তার নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে। যেমন, একজন নারীর প্রতি মাসের প্রথম দিকে ছয় দিন করে রক্তস্রাব হয়ে থাকে। এখন হঠাৎ করে দেখা গেল যে, ঐ নারীর অবিরাম রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, তাহলে তখন প্রতি মাসের প্রথম ছয় দিনে প্রবাহিত রক্তকে হায়েয হিসেবে গণ্য করে বাকীটাকে ইস্তেহাযাহ হিসেবে ধরে নিতে হবে। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। হাদীসটি হচ্ছে: ﺃﻥَّ ﻓَﺎﻃِﻤَﺔَ ﺑِﻨْﺖِ ﺃﺑِﻲْ ﺣُﺒَﻴْﺶٍ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ! ﺇﻧِّﻲْ ﺃﺳْﺘَﺤَﺎﺽُ ﻓَﻼَ ﺃﻃْﻬُﺮُ ﺃﻓَﺄﺩَﻉُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ؟ ﻗَﺎﻝَ : ্থ্থ ﻻَ ﺇﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﻋِﺮْﻕٌ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺩَﻋِﻲْ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻗَﺪْﺭَ ﺍﻟْﺄﻳَّﺎﻡِ ﺍﻟَّﺘِﻲْ ﻛُﻨْﺖِ ﺗَﺤِﻴْﻀِﻴْﻦَ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﺛُﻢَّ ﺍﻏْﺘَﺴِﻠِﻲْ ﻭَﺻَﻠِّﻲ ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সা.-কে প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার অবিরাম রক্তস্রাব হচ্ছে যার কারণে আমি পবিত্র হতে পারছি না। এমতাবস্থায় আমি কি নামায ছেড়ে দেব? উত্তরে নবী ৎ বললেন: না, এটি রগ থেকে বের হয়ে আসা রক্ত। তবে হ্যাঁ, সাধারণতঃ অন্যান্য মাসে যতদিন তুমি ঋতুবতী থাকতে ততদিন নামায থেকে বিরত থাক তারপর গোসল করে নামায আদায় কর।)) [বুখারী] আর সহীহ মুসলিমে আছে: ﺃﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ৎ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﺄﻡِّ ﺣَﺒِﻴْﺒَﺔَ ﺑِﻨْﺖِ ﺟَﺤْﺶٍ : ্থ্থ ﺍﻣْﻜُﺜِﻲْ ﻗَﺪﺭَ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺗَﺤْﺒِﺴُﻚِ ﺣَﻴْﻀَﺘُﻚِ ﺛُﻢَّ ﺍﻏْﺘَﺴِﻠِﻲْ ﻭَﺻَﻠِّﻲ নবী করীম সা. উম্মে হাবীবা বিনতে জাহ্শ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছিলেন: তুমি ঐ পরিমাণ সময় অপেক্ষা কর যে পরিমাণ সময় সাধারণতঃ ঋতুস্রাবে আক্রান্ত থাক। অতঃপর গোসল করে নামায আদায় কর।)) এ থেকে বুঝা গেল যে, মুস্তাহাযাহ অর্থাৎ অবিরাম রক্তস্রাব হয় এমন নারী ঐ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করবে এবং নামায থেকে বিরত থাকবে যে পরিমাণ সময় সে সাধারণতঃ ঋতুস্রাবে আক্রান্ত থাকত। তারপর গোসল করে নামায আদায় করতে থাকবে এবং রক্তের কারণে নামায আদায়ে মনে কোন রকম দ্বিধা রাখবে না। ২) ইস্তেহাযাহ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে আক্রান্ত নারীর ঋতুস্রাবের কোন নির্দিষ্ট সময়-সীমা নেই। অর্থাৎ জীবনে এটাই তার প্রথম রক্তস্রাব। এমতাবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত প্রবাহিত রক্তে কালো বর্ণ অথবা গাঢ়তা কিংবা কোন গন্ধ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। অন্যথায় ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য করে তার নিয়ম- নীতি মেনে চলতে হবে। যেমন, একজন নারী জীবনে প্রথম লজ্জাস্থানে রক্ত দেখলো এবং সে রক্তকে দশদিন পর্যন্ত কালো দেখেছে এবং মাসের অবশিষ্ট দিনগুলিতে লাল দেখেছে। অথবা দশদিন পর্যন্ত গাঢ় ও ঘন ছিল এবং মাসের অবশিষ্ট দিনগুলিতে পাতলা ছিল। অথবা দশদিন পর্যন্ত তার মধ্যে গন্ধ ছিল এবং তার পরে কোন গন্ধই থাকে নাই, তাহলে প্রথম দৃষ্টান্তে প্রমাহমান রক্ত কালো বর্ণ থাকা পর্যন্ত, দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে গাঢ়তা থাকা পর্যন্ত এবং তৃতীয় দৃষ্টান্তে গন্ধ থাকা পর্যন্ত হায়েয হিসেবে গণ্য হবে এবং এর পর হতে ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য হবে। কারণ হাদীসে বর্ণিত আছে নবী করীম ৎ ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন: ্থ্থ ﺇﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺩَﻡُ ﺍﻟْﺤَﻴْﻀَﺔِ ﻓَﺈﻧَّﻪُ ﺃﺳْﻮَﺩُ ﻳُﻌْﺮَﻑُ ﻓَﺈﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺫَﻟِﻚَ ﻓَﺄﻣْﺴِﻜِﻲْ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓ ﻓَﺈﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﺂﺧَﺮُ ﻓَﺘَﻮَﺿَّﺌِﻲْ ﻭَﺻَﻠِّﻲْ ﻓَﺈﻧَّﻤَﺎ ﻫُﻮَ ﻋِﺮْﻕٌ যখন হায়েযের রক্ত দেখা দিবে তখন তা কালো বর্ণের হবে যা চেনা যায়। সুতরাং কালো বর্ণের রক্ত দেখা দিলে নামায থেকে বিরত থাক। আর কালো ছাড়া অন্য কোন বর্ণ দেখা দিলে ওযু করে নামায আদায় কর। কেননা তা রগ থেকে বের হয়ে আসা রক্ত। [এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম নাসায়ী বর্ণনা করেছেন এবং ইবনে হিব্বান ও হাকেম বিশুদ্ধ বলে মতামত দিয়েছেন।] প্রকাশ থাকে যে, উক্ত হাদীসের সনদ ও মূল উদ্ধৃতিতে কিছু অসুবিধা থাকলেও ওলামায়ে কেরাম এর উপর আমল করেছেন। এবং অধিকাংশ নারী জাতির নিয়মিত অভ্যাসের দিকে লক্ষ্য করে হাদীসখানার উপর আমল করাই উত্তম। ৩) মুস্তাহাযাহ নারীর পূর্বে ঋতুস্রাবের না কোন নির্দিষ্ট সময়-সীমা আছে না ইস্তেহাযাহ ও হায়েযের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী কোন চিহ্ন আছে। অর্থাৎ জীবনে এটাই তার প্রথম রক্তস্রাব এবং রক্ত একাধারে অবিরাম বের হচ্ছে। প্রবাহমান রক্ত পুরোটাই এক ধরনের অথবা বিভিন্ন রকমের যেটাকে হায়েয হিসেবে গণ্য করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় অধিকাংশ নারীর ঋতুস্রাবের সময়- সীমা অনুযায়ী আমল করতে হবে। অর্থাৎ অবিরাম রক্তস্রাব আরম্ভ হওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে ছয় অথবা সাত দিন হায়েযের নিয়ম-নীতি কার্যকরী হবে। তারপর ইস্তেহাযার হুকুম পালন করতে হবে। যেমন, একজন মেয়ের মাসের ৫ তারিখে রক্ত প্রবাহ আরম্ভ হয়েছে এবং জীবনে এটাই তার প্রথম। রক্ত বিরতহীনভাবে বের হচ্ছে এতে হায়েযের কোন চিহ্ন নেই। রং ও গন্ধ ইত্যাদি দিয়ে পার্থক্য করারও কোন সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় প্রতি মাসের ৫ তারিখ থেকে ছয় অথবা সাত দিন হায়েযের হুকুম পালন করতে হবে। কারণ হামনাহ বিনতে জাহ্শ রাদিয়াল্লাহু আনহা এ ব্যাপারে প্রিয় নবী ৎ-এর শরণাপন্ন হয়ে বলেছিলেন: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ! ﺇﻧِّﻲْ ﺃﺳْﺘَﺤَﺎﺽُ ﺣَﻴْﻀَﺔً ﻛَﺒِﻴْﺮَﺓً ﺷَﺪِﻳْﺪَﺓً ﻓَﻤَﺎ ﺗَﺮَﻯ ﻓِﻴْﻬَﺎ؟ ﻗَﺪْ ﻣَﻨَﻌَﺘْﻨِﻲْ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻭَﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃﻧْﻌَﺖُ ﻟَﻚِ ﺃﺻِﻒُ ﻟَﻚِ ﺍﺳْﺘِﻌْﻤَﺎﻝَ ) ﺍﻟْﻜُﺮْﺳُﻒَ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟْﻘُﻄْﻦ) ﺗَﻀَﻌِﻴْﻨَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻔَﺮْﺝ ﻓَﺈﻧَّﻪُ ﻳُﺬْﻫِﺐُ ﺍﻟﺪَّﻡَ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻫُﻮَ ﺃﻛْﺜَﺮُ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ . ﻭَﻓِﻴْﻪِ ﻗَﺎﻝَ : ্থ্থ ﺇﻧَّﻤَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺭَﻛْﻀَﺔٌ ﻣِﻦْ ﺭَﻛَﻀَﺎﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ﻓَﺘَﺤِﻴْﻀِﻲْ ﺳِﺘَّﺔَ ﺃﻳَّﺎﻡٍ ﺃﻭْ ﺳَﺒْﻌَﺔً ﻓِﻲْ ﻋِﻠْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺛُﻢَّ ﺍﻏْﺘَﺴِﻠِﻲْ ﺣَﺘَّﻰ ﺇﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺖِ ﺃﻧَّﻚِ ﻗَﺪْ ﻃَﻬُﺮْﺕِ ﻭَﺍﺳْﺘَﻴْﻘَﻨْﺖِ ﻓَﺼَﻠِّﻲْ ﺃﺭْﺑَﻌًﺎ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳْﻦَ ﺃﻭْ ﺛَﻼَﺛًﺎ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳْﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً ﻭَﺃﻳَّﺎﻣَﻬَﺎ ﻭَﺻُﻮْﻣِﻲ হে আল্লাহর রাসূল! আমার তো অনেক দীর্ঘ সময় ধরে খুব বেশী পরিমাণে রক্তস্রাব হচ্ছে। এ অবস্থায় আপনার মতামত কি? এটা তো আমার নামায ও রোযা আদায়ের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাসূল সা. বললেন: আমি তোমাকে যোনীতে তুলা ব্যবহার করার পর পরামর্শ দিচ্ছি, তুলা রক্ত টেনে নিবে)) তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন যে, আমার প্রবাহিত রক্ত তার চেয়েও বেশী। তখন নবী সা. ইরশাদ করলেন: এটা শয়তানের একটা,খোঁচা মাত্র। আপাততঃ তুমি ছয় অথবা সাত দিন হায়েযের হুকুম পালন করে চল। তারপর ভাল করে গোসল কর। যখন তুমি মনে করবে যে, তুমি পবিত্রতা অর্জন করেছ তখন ২৪ দিন অথবা ২৩ দিন নামায ও রোযা আদায় করতে থাক।)) [হাদীসখানা ইমাম আহমদ, ইমাম আবু দাউদ সহীহ বলেছেন এবং ইমাম বুখারী থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি হাসান বলেছেন।] স্মরণ রাখতে হবে যে, উল্লিখিত হাদীসে ছয় অথবা সাত দিনের কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, এটাকে ইচ্ছামত গ্রহণ করবে। মূলতঃ একটা সমাধান দেয়ার উদ্দেশ্যেই ইজতেহাদ করে এরকম বলা হয়েছে। সুতরাং রক্তস্রাবে আক্রান্ত নারীর অবস্থা ও বয়স ইত্যাদির সঙ্গে পূর্ণ সামঞ্জস্য ও সংগতি রেখে হায়েযের সময় নির্দিষ্ট করবে তা যদি ছয় দিন হয় তাহলে ছয় দিন এবং সাত দিন হলে সাতই ধার্য্য করবে। মুস্তাহাযার সদৃশ নারীর অবস্থার বিবরণ: জরায়ূতে অথবা জরায়ূর আশে-পাশে অপারেশন করার কারণে যদি লজ্জাস্থান দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয় তাহলে তখন দুই অবস্থায় দুই প্রকার হুকুম পালন করতে হবে। ১) এ ব্যাপারে যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, অস্ত্রোপচারের পর আর কোন ঋতুস্রাবের সম্ভাবনা নেই, অথবা অপারেশনের মাধ্যমে এমনভাবে গর্ভাশয়ের পথকে বন্ধ করা হয়েছে যে, আর কোন প্রকার রক্ত সেখান থেকে বের হবে না, তাহলে এই নারীর ক্ষেত্রে মুস্তাহাযার হুকুম প্রযোজ্য হবে না। এবং তার হুকুম ঐ মহিলার হুকুমের মতো হবে যে ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার পর পুনরায় লজ্জাস্থানে হলুদ অথবা মাটি বর্ণের রক্ত অথবা স্যাঁতসেঁতে কিছু দেখতে পেল। সুতরাং এমতাবস্থায় নামায-রোযা ছেড়ে দেবে না, সহবাসও নিষিদ্ধ নয় এবং এ রক্তের কারণে গোসল করাও ওয়াজিব নয়। তবে নামাযের সময় রক্তটাকে পরিষ্কার করা এবং কাপড়ের কোন টুকরা দিয়ে লজ্জাস্থানে পট্টি বাঁধা আবশ্যক যেন রক্ত বের হতে না পারে। অতঃপর নামাযের ওযু করবে। স্মরণ রাখতে হবে যে, উল্লিখিত অবস্থায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পরেই ওযু করবে, আর নফল নামাযের ক্ষেত্রে নামাযের ইচ্ছা করার সময় ওযু করবে। ২) অস্ত্রোপচারের পর আর ঋতুস্রাব আসবে না এ ব্যাপারে যদি নিশ্চয়তা না থাকে বরং আসারই সম্ভাবনা থাকে তাহলে মুস্তাহাযাহ নারীর মতো হুকুম পালন করতে হবে। কারণ নবী করীম ৎ ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেছিলেন: ্থ্থ ﺇﻧَّﻤَﺎ ﺫَﻟِﻚَ ﻋِﺮْﻕٌ ﻭَﻟَﻴْﺲَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻴْﻀَﺔ ﻓَﺈﺫَﺍ ﺃﻗْﺒَﻠَﺖِ ﺍﻟْﺤَﻴْﻀَﺔُ ﻓَﺎﺗْﺮُﻛِﻲْ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ এটা হায়েয নয় বরং একটি শিরা নিসৃত রক্ত। সুতরাং যখন হায়েয আসবে তখন নামায থেকে বিরত থাক।)) এ থেকে সাব্যস্ত হলো যে, মুস্তাহাযাহ নারীর হুকুম কেবল মাত্র সেই মহিলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে যার ঋতুস্রাব হওয়ার বা বন্ধ হওয়ার উভয় সম্ভাবনা রয়েছে। পক্ষান্তরে যে সকল মহিলার ঋতুস্রাবের সম্ভাবনা নেই তাদের লজ্জাস্থান থেকে প্রবাহিত রক্ত রগের রক্ত হিসেবে পরিগণিত হবে। ইস্তেহাযার বিধি-বিধান সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা! উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা এ পর্যন্ত আমরা জানতে পারলাম যে, নারীর লজ্জাস্থান থেকে প্রবাহিত রক্ত কখনো কখনো হায়েয হিসেবে এবং কখনো ইস্তেহাযাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। যখন হায়েয হিসেবে গণ্য হবে তখন হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। আর যখন ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য হবে তখন ইস্তেহাযার নিয়ম-নীতি পালন করতে হবে। ইতিপূর্বে হায়েযের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এখন ইস্তেহাযার বিধি-বিধান তুলে ধরা হল। মূলতঃ ইস্তেহাযার হুকুম আর পবিত্রতার হুকুম একই। মুস্তাহাযাহ নারী এবং পবিত্র নারীর মধ্যে নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয় ছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। ১) মুস্তাহাযাহ নারীর উপর প্রতি নামাযে ওযু করা ওয়াজিব। প্রমাণ হচ্ছে নবী সা. ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেছেন: ্থ্থ ﺛُﻢَّ ﺗَﻮَﺿَّﺌِﻲْ ﻟِﻜُﻞِّ ﺻَﻼَﺓٍ অত:পর তুমি প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযু কর।)) [ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে 'গুস্লুদ্দাম' অর্থাৎ রক্ত ধৌত করার অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।] হাদীসের ব্যাখ্যা হচ্ছে: তুমি ইস্তেহাযাহ অবস্থায় ফরয অর্থাৎ ওয়াক্তি নামাযের জন্য নামাযের সময় আরম্ভ হওয়ার পরেই ওযু করবে। আর নফল নামাযের ক্ষেত্রে যখন নামায পড়ার ইচ্ছা করবে তখন ওযু করলেই চলবে। ২) মুস্তাহাযাহ নারী যখন ওযু করার ইচ্ছা করবে তখন রক্তের দাগ ধৌত করে যোনীতে তুলা দিয়ে পট্টি বেঁধে নিবে, যেন উক্ত তুলা রক্তটাকে আঁকড়ে ধরে। এ প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ ৎ হামনাহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন: ্থ্থ ﺃﻧْﻌَﺖُ ﻟَﻚِ ﺍﻟْﻜُﺮْﺳُﻒَ ﻓَﺈﻧَّﻪُ ﻳُﺬْﻫِﺐُ ﺍﻟﺪَّﻡَ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻓَﺈﻧَّﻪُ ﺃﻛْﺜَﺮُ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ ﻗَﺎﻝَ : ্থ্থ ﻓَﺎﺗَّﺨِﺬِﻱْ ﺛَﻮْﺑًﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻫُﻮَ ﺃﻛْﺜَﺮُ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ ﻗَﺎﻝَ : ্থ্থ ﻓَﺘَﻠَﺠَّﻤِﻲ আমি তোমাকে লজ্জাস্থানে কুরসুফ তথা নেকড়া বা তুলা ব্যবহার করার উপদেশ দিচ্ছি। কেননা নেকড়া বা তুলা রক্তটাকে টেনে নিবে।)) জবাবে হামনাহ বললেন: আমার প্রবাহমান রক্তের পরিমাণ তদপেক্ষাও বেশী। অতঃপর রাসূল ৎ বললেন: তাহলে তুমি লজ্জাস্থানে কাপড় ব্যবহার কর।)) হামনাহ বললেন: প্রবাহমান রক্তের পরিমাণ তার চেয়ে আরো বেশী। এরপর রাসূল ৎ হুকুম দিলেন যে, তুমি তাহলে যোনীর মুখে লাগাম বেঁধে নাও।)) রক্তের দাগ-চিহ্ন পরিষ্কার করে যোনীতে তুলা দিয়ে পট্টি বাঁধার পরেও যদি রক্ত প্রবাহিত হয় তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এ প্রসঙ্গে রাসূলে করীম সা.-এর হাদীস রয়েছে যে তিনি ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে নির্দেশ দিয়েছেন: ্থ্থ ﺍﺟْﺘَﻨِﺒِﻲْ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﺃﻳَّﺎﻡَ ﺣَﻴْﻀَﺘِﻚَ ﺛُﻢَّ ﺍﻏْﺘَﺴِﻠِﻲْ ﻭَﺗَﻮَﺿَّﺌِﻲْ ﻟِﻜُﻞِّ ﺻَﻼَﺓٍ ﺛُﻢَّ ﺻَﻠِّﻲْ ﻭَﺇﻥْ ﻗَﻄَﺮَ ﺍﻟﺪَّﻡُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺤَﺼِﻴْﺮ যে কয়দিন তুমি ঋতুস্রাবে আক্রান্ত থাকবে সে কয়দিন নামায থেকে বিরত থাক। তারপর গোসল করে প্রতি নামাযের জন্য ওযু কর এবং নামায আদায় কর, যদিও রক্ত প্রবাহিত হয়ে চাটাইর উপর পড়ে তাতেও কোন অসুবিধা নেই।)) [আহমদ ও ইবনে মাজাহ] ৩) সহবাস প্রসঙ্গ: সহবাস বর্জন করলে যদি কোন বৈরিতার আশঙ্কা থাকে তাহলে ওলামায়ে কেরামের মাঝে এর বৈধতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক অভিমত হচ্ছে, ইস্তেহাযার অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম জায়েয। কেননা নবী করীম ৎ-এর যুগে দশ অথবা ততোধিক সংখ্যক মহিলা ইস্তেহাযাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অথচ আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর প্রিয় রাসূল ৎ তাঁদের সঙ্গে সহবাস করতে নিষেধ করেননি অথচ কুরআন শরীফে বলা হয়েছে: ﻓَﺎﻋْﺘَﺰِﻟُﻮﺍْ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴﺾِ ২২২) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ "তোমরা হায়েযের অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম থেকে বিরত থাক।" [সূরা আল-বাকারাহ: ২২২] এ আয়াত প্রমাণ করে যে হায়েয ছাড়া অন্য কোন অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব নয়। দ্বিতীয়তঃ মুস্তাহাযাহ নারীর নামায যেহেতু জায়েয সেহেতু সঙ্গমও জায়েয। কেননা সঙ্গম তো নামাযের চেয়ে আরো সহজ। মুস্তাহাযাহ নারীর সাথে সহবাস করাটাকে ঋতুবতী মহিলার সঙ্গে সহবাস করার সাথে বিচার-বিবেচনা করলে চলবে না। কারণ এ দুটো কখনো এক হতে পারে না। এমনকি মুস্তাহাযাহ নারীর সাথে সঙ্গম করাকে যারা হারাম মনে করেন তাদের কাছেও দুটো এক নয়। সুতরাং উভয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকায় একটাকে অপরটার উপর কিয়াস করা শুদ্ধ হবে না। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ নেফাস ও তার হুকুম নেফাসের সংজ্ঞা: সন্তান প্রসবের কারণে জরায়ূ থেকে প্রবাহিত রক্তকে নেফাস বলা হয়। চাই সে রক্ত প্রসবের সাথেই প্রবাহিত হোক অথবা প্রসবের দুই বা তিন দিন পূর্ব থেকেই প্রসব বেদনার সাথে প্রবাহিত হোক। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: 'প্রসব ব্যথা আরম্ভ হলে মহিলা তার লজ্জাস্থানে যে রক্ত দেখতে পায় সেটাই হচ্ছে নেফাস।' এখানে তিনি দুই অথবা তিন দিনের সাথে নির্দিষ্ট করেননি। তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন ব্যথা যার পরিণতিতে প্রসব হবেই। অন্যথায় তা নেফাস হিসেবে পরিগণিত হবে না। নেফাসের সর্ব নিম্ন ও সর্বোচ্চ কোন সময়-সীমা আছে কি না? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মতভেদ রয়েছে। শায়খ তকীউদ্দীন তাঁর লিখিত 'শরীয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কিত নামসমূহ' পুস্তিকার ৩৭ নং পৃষ্ঠায় বলেছেন: নেফাসের সর্ব নিম্ন এবং সর্বোচ্চ কোন সীমা-রেখা নেই। সুতরাং যদি কোন নারীর ৪০ দিন অথবা ৬০ দিন অথবা ৭০ দিনেরও বেশী সময় ধরে রক্ত প্রবাহিত হয়ে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সেটাও নেফাস হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু বন্ধ না হয়ে যদি বিরতিহীনভাবে প্রবাহিত হতে থাকে তাহলে সেটাকে অসুস্থতার রক্ত বলে গণ্য করা হবে। এবং তখন নির্দিষ্ট সময়- সীমা ৪০ দিনই ধার্য্য করতে হবে। কেননা অধিকাংশ নারীর নেফাসের সর্বোচ্চ সময় ৪০ দিনই হয়ে থাকে বলে একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে।' উপরোক্ত অভিমতের ভিত্তিতে আমি গ্রন্থকার) মনে করি প্রসবোত্তর রক্তস্রাব ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও যদি অব্যাহত থাকে এবং ৪০ দিনের পর বন্ধ হওয়ার পূর্ব অভ্যাস যদি তার থেকে থাকে বা ৪০ দিনের পর বন্ধ হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায় তাহলে বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আর তা না হলে ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার পর গোসল করবে। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সময় ৪০ দিনই হয়ে থাকে। তবে ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার পর যদি আবার মাসিক রক্তস্রাব অর্থাৎ হায়েযের সময় এসে যায় তাহলে হায়েযের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তারপর বন্ধ হলে মনে করতে হবে যে, এটা মহিলার অভ্যাস অনুসারেই হয়েছে। সুতরাং ভবিষ্যতেও কোন সময় এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে সে হিসেবে আমল করবে। আর যদি হায়েযের সময় শেষ হওয়ার পরেও রক্তস্রাব অব্যাহত থাকে তাহলে তখন ইস্তেহাযাহ গণ্য করে তার হুকুম পালন করবে। প্রকাশ থাকে যে, প্রসবোত্তর রক্তস্রাব বন্ধ হলেই মহিলা পবিত্র হয়ে যাবে। এমনকি ৪০ দিনের পূর্বেই যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলেও পবিত্র হবে, সুতরাং গোসল করে নামায-রোযা আদায় করতে থাকবে এবং স্বামী-স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হতে পারবে। কিন্তু এক দিনের চেয়েও কম সময়ের মধ্যে যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তার কোন হুকুম নেই। [মুগনী গ্রন্থে তাই বলা হয়েছে।] স্মরণ রাখতে হবে যে, এমন কিছু প্রসব করলেই কেবল নেফাস প্রমাণিত হবে যাতে মানুষের আকৃতি স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। পক্ষান্তরে গর্ভপাতের মাধ্যমে যদি এমন ক্ষুদ্র ও অসম্পূর্ণ ভ্রূণ প্রসব করে যাতে মানুষের আকৃতি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় না তাহলে প্রবাহিত রক্তকে নেফাস হিসেবে গণ্য করা যাবে না। বরং রগের রক্ত হিসেবে গণ্য করে ইস্তেহাযার নিয়ম-নীতি পালন করতে হবে। মানুষের আকৃতি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাওয়ার সর্ব নিম্ন সময়-সীমা হচ্ছে গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে ৮০ দিন, আর সর্বোচ্চ সময় হচ্ছে ৯০ দিন। এ প্রসঙ্গে মাজ্দ ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: 'সর্ব নিম্ন সময় অথবা গর্ভধারণ করার পর থেকে ৮০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই যদি প্রসব বেদনার সাথে রক্ত দেখা যায় তাহলে সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করা হবে না। আর যদি ৮০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর রক্ত দেখে তাহলে প্রসব পর্যন্ত নামায- রোযা থেকে বিরত থাকবে। প্রসবের পর যদি দেখা যায় যে, প্রসূত সন্তান বা ভ্রূণের মধ্যে মানুষের কোন আকৃতিই নেই তাহলে গর্ভবতী মহিলা তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে এবং ক্ষতিপূরণ করবে অর্থাৎ নামায-রোযার কাযা করবে। আর যদি বিষয়টি স্পষ্ট না হয় তাহলে বাহ্যিক হুকুমই মেনে চলবে অর্থাৎ নামায-রোযা থেকে বিরত থাকবে এবং কাযা করা লাগবে না। [শারহুল ইক্না' নামক গ্রন্থে এভাবে বর্ণিত হয়েছে।] নেফাসের হুকুম নিম্ন বর্ণিত কয়েকটি বিষয় ছাড়া হায়েয ও নেফাসের হুকুম প্রায় একই। যথা: ১) ইদ্দত প্রসঙ্গ: ইদ্দতকাল নির্ণয় করতে হবে হায়েযের দিকে লক্ষ্য করে, নেফাসের দিকে লক্ষ্য রেখে নয়। কেননা তালাক যদি প্রসবের পূর্বে দেয়া হয় তাহলে প্রসবের সাথে সাথে ইদ্দতকাল শেষ হয়ে যাবে, নেফাসের মাধ্যমে নয়। পক্ষান্তরে যদি তালাক প্রসবের পরে হয় তাহলে হায়েযের অপেক্ষা করতে হবে। এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। ২) 'ঈলা'র মেয়াদ: হায়েযের সময় অন্তর্ভুক্ত হবে, তবে নেফাসের সময়ের অন্তর্ভুক্ত হবে না। 'ঈলা'র সংজ্ঞা: কোন পুরুষের এই মর্মে শপথ করাকে ঈলা বলা হয় যে, সে তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হবে না বা সেজন্য এমন সময়-সীমা নির্ধারণ করে শপথ করে যা চার মাসের উপরে। এ ধরনের শপথ করার পর স্ত্রী যখন সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার জন্য স্বামীর নিকট দাবী উত্থাপন করবে, তখন উক্ত পুরুষের জন্য শপথের পর চার মাস মেয়াদ ধার্য্য করা হবে। চার মাসের এই মেয়াদ শেষ হলে স্ত্রীর দাবী মেনে নেয়ার জন্য স্বামীকে বাধ্য করা হবে। স্ত্রী যদি তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতে চায় তাহলে স্বামীকে স্ত্রী মিলনে অথবা স্ত্রী যদি তার কাছ থেকে পৃথক হতে চায় তাহলে পৃথক করতে বাধ্য করা হবে। এখানে বুঝার বিষয় হচ্ছে ঈলার হুকুম হিসেবে উল্লিখিত চার মাসের মেয়াদ চলাকালীন যদি স্ত্রীর নেফাস অর্থাৎ প্রসব জনিত কারণে রক্তস্রাব দেখা দেয় তাহলে স্বামী স্ত্রীর নেফাসের দিনগুলিকে চার মাসের মধ্যে যোগ করে হিসাব করতে পারবে না। বরং নেফাসের এই দিনগুলিকে হিসাবের আওতায় না এনে চার মাসের মেয়াদ পূর্ণ করতে হবে। পক্ষান্তরে চার মাসের সুনির্দিষ্ট মেয়াদ চলাকালে স্ত্রীর যদি হায়েয দেখা দেয় তাহলে হায়েযের দিনগুলিকে চার মাসের মধ্যে যোগ করতে হবে। ৩) হায়েযের মাধ্যমে নারী প্রাপ্তবয়স্কা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। তবে নেফাসের মাধ্যমে নয়। কেননা বীর্যস্খলন ছাড়া নারী গর্ভবতী হতেই পারে না। সুতরাং গর্ভধারণের জন্য যে বীর্যস্খলন হয় তা দ্বারাই নারীর প্রাপ্তবয়স্কা হওয়াটা প্রমাণিত হয়। ৪) হায়েয ও নেফাসের মধ্যে চতুর্থ পার্থক্য এই যে, হায়েযের রক্ত বন্ধ হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই যদি পুনরায় আরম্ভ হয় তাহলে সেটাকে নিঃসন্দেহে হায়েয হিসেবে গণ্য করতে হবে। দৃষ্টান্ত: একজন নারীর সাধারণতঃ প্রতি মাসে ৮ দিন করে রক্তস্রাব হয়ে থাকে। এক মাসে দেখা গেল যে, রক্তস্রাব চার দিন পর বন্ধ হয়ে গেছে এবং দুই দিন বন্ধ থাকার পর সপ্তম ও অষ্টম দিনে প্রবাহিত রক্তকে অবশ্যই হায়েয বলে গণ্য করতে হবে এবং তাকে হায়েযেরই নিয়ম-নীতি পালন করতে হবে। পক্ষান্তরে নেফাসের ব্যাপারটা এমন নয় অর্থাৎ নেফাস যদি ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বন্ধ হয়ে আবারো চালু হয় তাহলে এ ক্ষেত্রে বিষয়টি সন্দেহযুক্ত থাকবে। এমতাবস্থায় মহিলাকে নির্দিষ্ট সময়ে ফরয নামায ও ফরয রোযা আদায় করতে হবে। মাসিক ঋতুবতী মহিলার জন্য ওয়াজিব ব্যতীত যা হারাম তার ক্ষেত্রেও তা হারাম হবে এবং এ অবস্থায় যে ফরয নামায ও ফরয রোযা আদায় করা হয়েছে পবিত্র হওয়ার পর সেগুলোর কাযা করবে। অর্থাৎ ঋতুবতী মহিলাদের জন্য যেমন কাযা করা ওয়াজিব তেমনি নেফাসাক্রান্তরর জন্যও ওয়াজিব। হাম্বলী ফিক্হবিদগণের নিকট এটাই প্রসিদ্ধ। তবে সঠিক অভিমত হচ্ছে যে, বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এমন সময়ের মধ্যেই যদি পুনরায় চালু হয় যখন প্রবাহিত রক্তকে নেফাস গণ্য করা সম্ভব, তাহলে নেফাস হিসেবেই গণ্য করা হবে, নতুবা হায়েয হিসেবে। আবার একাধারে বিরতহীনভাবে প্রবাহিত হতে থাকলে ইস্তেহাযাহ গণ্য করা হবে। মুগনী গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, 'উল্লিখিত সমাধানটি ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহর অভিমতের কাছাকাছি।' ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন যে, 'রক্ত বন্ধ হওয়ার পর দুই অথবা তিন দিনের মধ্যেই যদি পুনরায় রক্ত দেখা দেয় তাহলে নেফাস নতুবা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে।' শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহর অভিমতও এক্ষেত্রে একই রকম বলে বুঝা যায়। অথচ বাস্তবতার ভিত্তিতে রক্তের মধ্যে সন্দেহযুক্ত বলতে কিছুই নেই। কিন্তু সন্দেহ এমন একটা বিষয় যার মধ্যে মানুষ তাদের ইল্ম ও বোধশক্তি অনুপাতে মতভেদ করে থাকে। আর কুরআন ও সুন্নাত কোনটা সঠিক কোনটা সঠিক নয় এর পূর্ণ সমাধান প্রতিটি ক্ষেত্রেই দিয়েছে। প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ৎ কাউকেই দুইবার রোযা রাখার এবং দুইবার তাওয়াফ করার নির্দেশ দেননি, যেমনটি একটু পূর্বে বলা হয়েছে। তবে হ্যাঁ, প্রথমবার আদায় করতে গিয়ে যদি এমন কোন ত্রুটি হয়ে থাকে যা কাযা না করে সেই ত্রুটির ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। সুতরাং বান্দাকে যে কাজের আদেশ করা হয়েছে সাধ্যানুসারে সে কাজ করলে বান্দাহ তখন দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তা'য়ালা বলেন: ﻻَ ﻳُﻜَﻠِّﻒُ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻧَﻔْﺴًﺎ ﺇِﻻَّ ﻭُﺳْﻌَﻬَﺎ ২৮৬) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ "আল্লাহ কাউকেই তার সাধ্যের বাইরে কোন কাজের নির্দেশ দেন না।" [সূরা আল-বাকারাহ: ২৮৬] অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে: ﻓَﺎﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺘُﻢْ ১৬) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺘﻐﺎﺑﻦ "তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর।" [সূরা আত-তাগাবুন: ১৬] ৫) হায়েয যদি পূর্ব অভ্যাস অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বন্ধ হয়ে যায় তাহলে স্বামী উক্ত স্ত্রীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারবে। এতে কোন রকম অসুবিধা নেই। পক্ষান্তরে নেফাসের রক্ত যদি ৪০ দিনের পূর্বে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে প্রসিদ্ধ মাযহাব অনুসারে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া স্বামীর জন্য মাকরূহ। তবে সঠিক সমাধান এটাই যে মাকরূহ নয়। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের অভিমতও তাই। কেননা কোন কাজকে মাকরূহ বলতে হলে শরয়ী দলীল লাগবে। অথচ এক্ষেত্রে ইমাম আহমদ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস ছাড়া কোন দলীল নেই। ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ উসমান ইবনে আবিল আ'স থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর স্ত্রী নেফাসের ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তাঁর কাছে আসলে তিনি বলতেন: তুমি আমার নিকটবর্তী হয়ো না। এটা দ্বারা কোন মাকরূহর হুকুম প্রমাণিত হয় না। কেননা স্ত্রীর পবিত্র হওয়া নিশ্চিত নয় বলে সাবধানতা অবলম্বনের উদ্দেশ্যে অথবা সঙ্গমে লিপ্ত হলে পুনরায় রক্ত প্রবাহ শুরু হতে পারে এই আশঙ্কায় অথবা অন্য কোন কারণে তিনি নিষেধ করে থাকতে পারেন। আল্লাহই ভাল জানেন। সপ্তম পরিচ্ছেদ হায়েয প্রতিরোধকারী অথবা আনয়নকারী এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ কিংবা গর্ভপাতের ঔষধ ব্যবহার প্রসঙ্গ দু'টি শর্তে হায়েয প্রতিরোধ করে এমন ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয: ১ম শর্ত: ঔষধ ব্যবহারে কোন রকম ক্ষতির আশঙ্কা না থাকা। যদি ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তাহলে ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন: ﻭَﻻَ ﺗُﻠْﻘُﻮﺍْ ﺑِﺄَﻳْﺪِﻳﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِ ১৯৫) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ "তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে পতিত করো না।" [সূরা আল-বাকারাহ: ১৯৫] এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেছেন: ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ ২৯) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ "তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।" [সূরা আন-নিসা: ২৯] ২য় শর্ত: হায়েয বা রক্তস্রাবের সাথে স্বামীর যদি কোন হক সম্পৃক্ত থাকে তাহলে অবশ্যই তার অনুমতি নিয়েই ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। যেমন স্ত্রী তালাক প্রাপ্তা হওয়ার পর ইদ্দত পালন করে চলছে এবং ইদ্দত পালনকালে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ স্বামীর উপর ওয়াজিব। এমতাবস্থায় ইদ্দতকাল দীর্ঘ করে ভরণ- পোষণ বেশী পাওয়ার উদ্দেশ্যে যদি স্ত্রী হায়েয প্রতিরোধ করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে এক্ষেত্রে অবশ্যই স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামী অনুমতি দিলে করতে পারবে, অন্যথায় পারবে না। এমনিভাবে যখন প্রমাণিত হবে যে, হায়েয রোধ করলে স্ত্রীর গর্ভ ধারণ করা সম্ভব নয় তাহলে তখনও ঔষধ ব্যবহারের জন্যে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। উপরোক্ত দু'টি শর্ত মোতাবেক হায়েয প্রতিরোধক ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয। মনে রাখতে হবে, জায়েয হওয়ার পরেও বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে ব্যবহার না করাই উত্তম। কেননা প্রাকৃতিক বিষয়কে তার গতিতে ছেড়ে দেয়া শারীরিক সুস্থতার পক্ষে খুবই মঙ্গল জনক। হায়েয আনয়নের জন্য ঔষধের ব্যবহারও দুই শর্তে জায়েয: ১ম শর্ত: কোন ফরয বা ওয়াজিব কাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ঔষধ ব্যবহার না করা। যদি এমনটি হয়ে থাকে অর্থাৎ কোন ফরয বা ওয়াজিব পালন থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য যদি ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে নাজায়েয হবে। যেমন রমাযান মাস আরম্ভ হওয়ার পূর্বে হায়েয আনয়নের জন্য ঔষধ ব্যবহার করা, যেন নামায এবং রোযা আদায় করা থেকে বেঁচে যায়, তাহলে তা কখনোই জায়েয হবে না। ২য় শর্ত: স্বামীর অনুমতিক্রমে ব্যবহার করতে হবে। কেননা হায়েয এলে স্বামী পূর্ণাঙ্গরূপে স্ত্রী থেকে উপকৃত হতে পারে না বা নিজের কামভাব পূর্ণ করতে পারে না। সুতরাং স্বামীর অনুমতি ছাড়া এমন কিছু ব্যবহার করা স্ত্রীর জন্য জায়েয হবে না যার কারণে স্বামী নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। যদি স্ত্রী তালাক প্রাপ্তাও হয়ে থাকে তবুও স্বামীর অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করতে পারবে না। কেননা স্বামীর যদি তালাক প্রত্যাহার করার ইচ্ছা থাকে তাহলে স্ত্রী এ ধরনের ঔষধ ব্যবহার করে হায়েয নিয়ে আসলে স্বামীর অধিকার দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। গর্ভরোধকারী ঔষধের ব্যবহার দুই প্রকার: ১ম প্রকার: ঔষধের ব্যবহার দ্বারা যদি স্থায়ীভাবে গর্ভধারণকে প্রতিরোধ করা হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা গর্ভধারণের প্রক্রিয়াকে চিরতরে বন্ধ করলে বংশবৃদ্ধি ও সন্তানাদি কমে যাবে যা শরীয়তের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কারণ উম্মতে ইসলামিয়ার সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়াই শরীয়তের উদ্দেশ্য যা গর্ভধারণ প্রক্রিয়াকে বন্ধ করার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত হবে। এতদ্ব্যতীত উপস্থিত সন্তানাদি মারা না যাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই। মারা গেলে নারী সন্তানহীন হয়ে থাকার আশঙ্কা থেকে যায়। ২য় প্রকার: সাময়িকভাবে গর্ভরোধ করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করা। যেমন কোন নারী খুব বেশী পরিমাণে গর্ভবতী হচ্ছে এবং এর কারণে শারীরিকভাবে ক্ষীন হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় উক্ত মহিলা দুই বছর অন্তর অন্তর সন্তান নিতে আগ্রহী, তাহলে তার জন্যে সাময়িকভাবে ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয, তবে এ ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে এবং এ ধরনের ঔষধ ব্যবহারে কোন রকম ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। প্রমাণ স্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, নবী করীম ৎ-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম 'আয্ল' পদ্ধতি অবলম্বন করে স্ত্রী সঙ্গমে লিপ্ত হতেন, যাতে করে তাঁদের স্ত্রীগণ গর্ভবতী না হয়। কিন্তু এ পদ্ধতি অবলম্বন থেকে তাঁদেরকে তখন নিষেধ করা হয়নি। প্রকাশ থাকে যে, স্ত্রী সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার পর বীর্যস্খলনের সময় ঘনিয়ে আসলে পুরুষাঙ্গ স্ত্রী যোনী থেকে বের করে বাইরে বীর্যপাত করাকে শরীয়তের পরিভাষায় 'আয্ল' বলা হয়। গর্ভপাতকারী ঔষধের ব্যবহারও দুই প্রকার: ১ম প্রকার: গর্ভপাতকারী ঔষধ গ্রহণ গর্ভস্থ সন্তানকে নষ্ট করার উদ্দেশ্যে হওয়া। এমতাবস্থায় এই ঔষধের ব্যবহার যদি গর্ভস্থ বাচ্চার মাঝে প্রাণ সঞ্চারিত হওয়ার পর হয়ে থাকে তাহলে সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং এতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। কেননা এটা নিষিদ্ধকৃত আত্মাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার শামিল। কুরআন ও হাদীস এবং মুসলমানদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিষিদ্ধকৃত আত্মাকে হত্যা করা হারাম। আর যদি প্রাণ সঞ্চারিত হওয়ার পূর্বে গর্ভপাতের জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে ওলামায়ে কেরামের মাঝে এর বৈধতার প্রশ্নে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ জায়েয বলেছেন, কেউ কেউ নিষেধ করেছেন, আবার কেউ বলেছেন, গর্ভ ধারণের পর থেকে আরম্ভ করে যতক্ষণ পর্যন্ত গর্ভস্থ বস্তু জমাট রক্তের রূপ না নিবে অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত ৪০ দিন অতিবাহিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত গর্ভপাতের জন্য এ ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয। ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কেউ আবার এমনও বলেছেন যে, মানুষের আকৃতি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত গর্ভপাতের ঔষধ ব্যবহার করতে পারবে। তবে খুব বেশী সাবধানতা অবলম্বনের উদ্দেশ্যে গর্ভপাতের জন্য ঔষধের ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই উত্তম। তবে বিশেষ প্রয়োজন ও অপারগতার সম্মুখীন হলে এ ধরনের ঔষধ ব্যবহার করতে পারবে। প্রয়োজনীয়তা বলতে যেমন গর্ভধারণকারীনী এমন অসুস্থ যে গর্ভধারণে অক্ষম ইত্যাদি ইত্যাদি। এমতাবস্থায় গর্ভপাত করা জায়েয। কিন্তু গর্ভ ধারণের পর থেকে যদি এই পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, যে সময়ের মধ্যে গর্ভস্থ বাচ্চার মধ্যে মানুষের আকৃতি প্রকাশ পেয়ে থাকে তাহলে ব্যবহার করা হারাম। আল্লাহ তা'আলাই সর্বজ্ঞ। ২য় প্রকার: গর্ভপাতের ঔষধ গ্রহণের দ্বারা গর্ভস্থ আত্মাকে ধ্বংস করা উদ্দেশ্য নয় বরং গর্ভের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রসব আসন্ন এমন সময়ে যদি গর্ভপাতের ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে তা জায়েয আছে। তবে শর্ত হচ্ছে এ ধরনের ঔষধ ব্যবহারের ফলে মা ও বাচ্চার যেন ক্ষতি না হয় এবং ঔষধ ব্যবহার করার কারণে যেন অপারেশন বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তা দেখা না দেয়। যদি ঔষধ ব্যবহারের কারণে অপারেশন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে তাহলে এর চার অবস্থা, যা নিম্নে বর্ণিত হলো: ১) মা ও গর্ভস্থ বাচ্চা উভয়েই জীবিত। এমতাবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া অস্ত্রোপচার জায়েয নেই, যেমন প্রসব অত্যন্ত কষ্টকর এবং ঝুকিপূর্ণ, তাহলে অস্ত্রোপচার করতে হবে। মনে রাখতে হবে একজনের শরীর অপর জনের নিকট আমানত স্বরূপ। সুতরাং বৃহত্তর কোন কল্যাণ সাধনে এমন কোন হস্তক্ষেপ করবে না যা দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া বর্তমান যুগে অনেক ক্ষেত্রে অপারেশনের পূর্বে মনে করা হয়ে থাকে যে, কোন রকম ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, অথচ অপারেশনের পর ক্ষতি প্রকাশ পেয়ে যায়। ২) মা ও গর্ভস্থ বাচ্চা উভয়ই মৃত। এমতাবস্থায় বাচ্চাকে বের করার জন্য অস্ত্রোপচার করা জায়েয নয়। কেননা বের করার মধ্যে কোন লাভ নেই। ৩) মা জীবিত কিন্তু গর্ভস্থ বাচ্চা মৃত। তাহলে অস্ত্রোপচার করে বের করা জায়েয আছে। তবে মায়ের কোন প্রকার ক্ষতির যেন আশঙ্কা না থাকে। কেননা বাহ্যিক অবস্থার প্রেক্ষিতে গর্ভস্থ সন্তানকে তো অপারেশন ছাড়া বের করা সম্ভব নয় এবং বাচ্চাকে যদি ভিতরে রেখে দেয়া হয় তাহলে প্রথমতঃ ভবিষ্যতে পেটে সন্তান ধারণ করা সম্ভব হবে না। দ্বিতীয়তঃ এভাবে রেখে দিলে মায়ের জন্য অত্যন্ত কষ্ট ও যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া অনেক সময় স্ত্রীকে স্বামীহীনা-বিধবা হয়ে থাকতে হয় যখন মহিলা পূর্ব স্বামীর ইদ্দতের অবস্থায় থাকে। এসব কারণে অপারেশনের মাধ্যমে গর্ভস্থ মৃত বাচ্চাকে বের করা জায়েয আছে। ৪) মা মৃত এবং গর্ভস্থ বাচ্চা জীবিত। এমতাবস্থায় গর্ভস্থ সন্তানকে বাঁচানোর সম্ভাবনা যদি না থাকে তাহলে অপারেশন করা জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যদি গর্ভস্থ সন্তানটি বাঁচবে এমন আশা থাকে, সেই অবস্থায় কিছু অংশ যদি বের হয়ে থাকে তাহলে মৃত মার পেট কেটে বাচ্চার বাকী অংশ বের করতে পারবে। আর যদি বাচ্চার কিছুই বের না হয় তাহলে এক্ষেত্রে আমাদের ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, গর্ভস্থ শিশুকে বের করার জন্য মায়ের পেট কাটবে না। কেননা এটা নাক-কান কেটে বিকৃত করার অন্তর্ভুক্ত। তবে সার্বিক সমাধান হচ্ছে এই যে, অপারেশন ছাড়া যদি বের করা সম্ভব না হয় তাহলে অপারেশন করতে পারবে। এ সমাধানটি ইবনে হুবাইরা গ্রহণ করেছেন। তিনি 'ইনসাফ' গ্রন্থের ২য় খন্ডের ৫৫৬ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, এক্ষেত্রে পেট কেটে বাচ্চা বের করাই উত্তম। বর্তমান কালে এ অবস্থায় অস্ত্রোপচার করা 'মুসলা' অর্থাৎ নাক-কান কেটে শাস্তি দেয়া হিসেবে পরিগণিত হবে না। কারণ প্রথমতঃ পেট কেটে পরে আবার সেলাই করে দেয়া হবে। দ্বিতীয়তঃ একটা জীবিত সন্তানের ইজ্জত একজন মৃত ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশী। তৃতীয়তঃ একটা নিষ্পাপ শিশুকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা ওয়াজিব। সুতরাং যেহেতু গর্ভস্থ বাচ্চা জীবিত এবং নিষ্পাপ মানুষ সেহেতু অপারেশনের মাধ্যমে তাকে বের করা ওয়াজিব। আল্লাহ তা'য়ালাই সর্বজ্ঞ। সতর্কীকরণ: উপরোল্লিখিত যে সকল অবস্থায় গর্ভপাত করা জায়েয সে সকল অবস্থায় গর্ভপাত করতে চাইলে অবশ্যই গর্ভের মালিক তথা স্বামীর অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। উপসংহার সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা! এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আপনাদের কাছে যা উপস্থাপন করার ইচ্ছা পোষণ করে লিখার সূচনা করেছিলাম তা এখানেই শেষ। এই পুস্তিকাতে আমি শুধুমাত্র মৌলিক মাসআলা সমূহ এবং তার নিয়ম- কানুন বর্ণনা করেছি। অন্যথায় বর্ণিত মাসআলা সমূহের শাখা-প্রশাখা, আনুষঙ্গিক বিষয়াদি এবং হায়েয, নেফাস ও ইস্তেহাযার কারণে নারী জাতির বহুমুখী অবস্থার পূর্ণ বিবরণ কিনারাবিহীন সমুদ্রের মত। তবে কোন সমস্যার আবির্ভাব ঘটলে বিচক্ষণ ব্যক্তি মূল বিষয় ও তার নিয়ম-কানুনের উপর ভিত্তি করে সমাধান দিতে পারবে এবং এক বিষয়কে সমপর্যায়ের অন্য মাসআলার উপর অনুমান করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হবে। একজন মুফতীর একথা স্মরণ থাকা উচিত যে, তিনি রাসূলগণের আনীত দ্বীন, শরীয়ত ও মতাদর্শ প্রচার এবং প্রসারের জন্য আল্লাহ তা'আলা ও মানব জাতির মাঝে একজন মধ্যস্থতাকারীর সমতুল্য। কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত নিয়ম-নীতি ও বিধি- বিধানের আলোকে কোন প্রশ্নের সমাধান দেয়া তাঁরই দায়িত্ব। কেননা কুরআন ও সুন্নাহ এমন দু'টি মূল উৎস যে দুটিকে বুঝে তার উপর আমল করার জন্য সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং যে কথা, যে অভিমত এবং যে সমাধান কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী হবে তা ভুল বলে প্রমাণিত হবে, যা গ্রহণ করা জায়েয হবে না বরং প্রত্যাখ্যান করা ওয়াজিব। যদি ভুল সমাধানদাতা মুজতাহিদ অপারগ হয়ে থাকেন তাহলে তাকে তার ইজতেহাদের কারণে প্রতিদান দেয়া হবে কিন্তু যে ব্যক্তি তার এ ভুল সম্পর্কে অবগত হবে তার জন্য তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। একজন মুফতীর জন্য কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করা, নতুন কোন বিষয় সামনে আসলে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা এবং তার কাছে সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য সাহায্য ও তওফীক কামনা করা অত্যাবশ্যক। যে কোন বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে আলোচনা ও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত অথবা এমন কিছুর ভিত্তিতে আলোচনা ও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত যা কুরআন ও হাদীস বুঝার জন্য সহায়ক হয়। অনেক সময় দেখা যায় যে, একটা মাসআলা সামনে আসলে ওলামায়ে কেরামের অভিমত নিয়ে তর্ক- বিতর্ক করা হয়। ফলে মাসআলাটির সুনিশ্চিত কোন সমাধান পাওয়া যায় না। এবং সুনির্দিষ্ট কোন তথ্যও প্রকাশিত হয় না। কিন্তু পরক্ষণে যখন কুরআন ও হাদীসের দিকে প্রত্যাবর্তন করা হয় তখন মাসআলার সমাধান ও হুকুম স্পষ্ট হয়ে যায়। আর এমনটি ইখলাস, ইল্ম ও সঠিক অনুভুতির ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। কোন প্রকার মাসআলার সম্মুখীন হলে বিলম্বে উত্তর দেয়া একজন মুফতীর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাড়াহুড়া করা মোটেই উচিত নয়। অনেক ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়ার পর আবার গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়, যার ফলে উত্তরদাতাকে লজ্জিত হতে হয় এবং এ ভুলের ক্ষতিপূরণ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। কোন মুফতীর মধ্যে অত্যন্ত চিন্তা-ভাবনা করে ধীর গতিতে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মানসিকতা থাকলে এবং তার মধ্যে দৃঢ়তা লক্ষ্য করা গেলে তাঁর কথার প্রতি মানুষের বিশ্বাস আসবে। এবং জনসাধারণ তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়ার অভ্যাস লক্ষ্য করলে তার প্রতি মানুষের কোন বিশ্বাস থাকবে না। কেননা যে কোন কাজ তাড়াহুড়ো করে করলে ভুল হয়েই থাকে আর এ ধরনের দ্রুতগামীতা ও ভুলের কারণে তার জ্ঞান প্রদীপের আলো থেকে সে নিজে বঞ্চিত হবে এবং অপরকেও বঞ্চিত করবে। সর্বশেষে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদেরকে সরল ও সঠিক পথের সন্ধান দেন, অনুগ্রহ করে আমাদের তত্ত্বাবধান গ্রহণ করেন এবং পদস্খলন থেকে আমাদের হেফাযত করেন। তিনিই অসীম দাতা এবং পরম দয়ালু। সমাপ্ত লেখক : শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন ﺗﺄﻟﻴﻒ : ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺻﺎﻟﺢ ﺍﻟﻌﺜﻴﻤﻴﻴﻦ অনুবাদক : মীযানুর রহমান আবুল হুসাইন ﺗﺮﺟﻤﺔ ﻣﻴﺰﺍﻥ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ সম্পাদনা : ইকবাল হোসাইন মাসুম ﻣﺮﺍﺟﻌﺔ : ﺇﻗﺒﺎﻝ ﺣﺴﻴﻦ ﻣﻌﺼﻮﻡ সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব ﺍﻟﻤﻜﺘﺐ ﺍﻟﺘﻌﺎﻭﻧﻲ ﻟﻠﺪﻋﻮﺓ ﻭﺗﻮﻋﻴﺔ ﺍﻟﺠﺎﻟﻴﺎﺕ ﺑﺎﻟﺮﺑﻮﺓ ﺍﻟﺮﻳﺎﺽ পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
..
উত্তরমুছুন