সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম
বিশ্বকোষ (১ম পর্ব)
সূচিপত্র
ক্রম বিষয়
1. ভূমিকা
2. প্রথম অধ্যয়: সাওমের পরিচয়, ইতিহাস ও তাৎপর্য
3. সাওমের পরিচয়, সাওমের অভিধানিক অর্থ
4. সাওমের ইতিহাস ও তাৎপর্য, যুগে যুগে বিভিন্ন
ধর্ম ও সম্প্রদায়ে সাওম
5. সাওমের তাৎপর্য
6. দ্বিতীয় অধ্যয়: সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম
7. রমযানের সাওম ফরয হওয়া প্রসঙ্গে
8. রমযান ও সাওমের ফযীলত
9. আল্লাহর রাস্তায় সাওমের ফযীলত
10. সাওম গুনাহের কাফফারা
11. সাওম ঢালস্বরূপ
12. সাওম পালনকারীর জন্য জান্নাতে রাইয়্যান
দরজা
13. রমযান নাকি রমযান মাস বলা হবে? কেউ কেউ
বলেছেন, উভয়টি বলা যাবে?
14. রমযানের চাঁদ দেখা
15. যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায়
নিয়তের সাথে সাওম পালন করবে
16. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান
মাসে অধিক দান করতেন
17. যে ব্যক্তি সাওম পালনের সময় মিথ্যা বলা ও সে
অনুযায়ী আমল বর্জন করে নি
18. কাউকে গালি দেওয়া হলে সে কী বলবে, আমি
সাওম পালনকারী?
19. অবিবাহিত ব্যক্তি যে নিজের ওপর ফিতনার
আশংকা করে তার জন্য সাওম পালন করা
20. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
বাণী, তোমরা চাঁদ দেখে সাওম পালন শুরু করবে,
আবার চাঁদ দেখে সাওম থেকে বিরত থাকবে
21. চাঁদ দেখার ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহণ
22. চাঁদ দেখতে কতজন সাক্ষ্য লাগবে?
23. প্রত্যেক দেশে আলাদা আলাদাভাবে চাঁদ
দেখা, এক দেশে চাঁদ দেখলে তার হুকুম অন্যের জন্য
যথেষ্ট নয়।
24. চাঁদ ছোট বা বড় দেখা ধর্তব্য নয়, আল্লাহ
তা‘আলা দেখার জন্য বর্ধিত করে দিয়েছেন। আর
যদি মেঘের কারণে দেখা না যায় তবে ত্রিশ দিন
পূর্ণ করবে।
25. ঈদের দু’মাস কম হয় না
26. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
বাণী: আমরা লিখি না এবং হিসাবও করি না
27. ইয়াওমুশ শক বা সন্দেহের দিনে সাওম পালন কর
28. অর্ধ শা‘বানের পরে নফল সাওম পালন করা
29. আল্লাহর বাণী: সিয়ামের রাতে তোমাদের
জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা
হয়েছে
30. আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা
রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত
পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর
31. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
বাণী: বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর আযান যেন
তোমাদেরকে সাহরী থেকে বিরত না রাখে
32. সাহরী খাওয়ায় তাড়াতাড়ি করা
33. সাহরী ও ফজরের সালাতের মাঝে ব্যবধানের
পরিমাণ
34. সাহরীতে রয়েছে অনেক বরকত কিন্তু তা
ওয়াজিব নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ একটানা সাওম
পালন করেছেন অথচ সেখানে সাহরীর উল্লেখ নেই।
35. সাহরীতে যা খাওয়া মুস্তাহাব
36. আযান দেওয়া অবস্থায় কারো হাতে খাবারের
পাত্র থাকলে কী করবে?
37. দিনের বেলায় (নফল) সাওমের নিয়াত করলে
38. সাওম পালনকারী জুনুবী অবস্থায় সকাল করলে।
39. সাওম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা
40. সাওম অবস্থায় চুম্বন করা
41. স্বামীর অনুমতিক্রমে স্ত্রীর নফল সাওম পালন
42. সাওম পালনকারীর গোসল করা
43. সাওম পালনকারী ভুলে কিছু খেলে বা পান
করলে
44. সাওম পালনকারীর শুকনো ও ভেজা মিসওয়াক
ব্যবহার করার হুকুম।
45. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
বাণী: যখন অযু করবে তখন নাকের ছিদ্র দিয়ে পানি
টেনে নিবে
46. রমযানে দিনের বেলায় সহবাস করলে
47. রমযানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করলে
সদকা দেওয়ার কিছু না থাকলে, সে যেন নিজে
নিজেকে সদকা দিয়ে কাফফারাস্বরূপ আদায় করে।
48. রমযানে সাওম পালনকারী অবস্থায় যে ব্যক্তি
স্ত্রী সহবাস করেছে সে ব্যক্তি কি কাফফারা
থেকে তার অভাবগ্রস্ত পরিবারকে খাওয়াতে
পারবে?
49. সাওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো ও বমি করা
50. সফর অবস্থায় সাওম পালন করা ও না করা
51. সফর অবস্থায় কোন কাজের দায়িত্ব পালন
করাকালীন সাওম ভঙ্গ করলে তার প্রতিদান
52. রমযানে কয়েক দিন সাওম পালন করে যদি কেউ
সফর আরম্ভ করে
53. প্রচণ্ড গরমের কারণে যে ব্যক্তির উপর ছায়ার
ব্যবস্থা করা হয়েছে তাঁর সম্পর্কে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
সফরে সাওম পালনে কোনো নেকী নেই
54. সফর অবস্থায় সাওম পালনের ব্যাপারে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ
একে অন্যকে দোষারোপ করতেন না
55. সফর অবস্থায় সাওম ভঙ্গ করা, যাতে লোকেরা
দেখতে পায়।
56. যাদের সাওম পালন অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের
সাওমের পরিবর্তে ফিদইয়া তথা একজন মিসকীনকে
খাদ্য দেওয়া
57. রমযানের কাযা সাওম কখন আদায় করা হবে?
58. ঋতুবতী মহিলা সালাত ও সাওম উভয়ই ত্যাগ
করবে
59. ঋতুবতী মহিলা সাওমের কাযা করবে কিন্তু
সালাতের কাযা করবে না
60. সাওমের কাযা যিম্মায় রেখে যে ব্যক্তি মারা
গেল।
61. সাওম পালনকারীর জন্য কখন ইফতার করা
হালাল
62. পানি বা সহজলভ্য অন্য কিছু দিয়ে ইফতার
করবে
63. ইফতার ত্বরান্বিত করা
64. মাগরিবের সালাতের পূর্বে ইফতার করা
মুস্তাহাব এবং যে সব জিনিস দ্বারা ইফতার করা
মুস্তাহাব
65. রমযানে ইফতার করার পরে যদি সূর্য দেখা দেয়
66. বাচ্চাদের সাওম পালন করা
67. সাওমে বেসাল বা বিরতিহীনভাবে সাওম
পালন করা
68. যে অধিক পরিমাণ সাওমে বেসাল পালন করে
তাঁকে শাস্তি প্রদান
69. সাহরীর সময় পর্যন্ত সাওমে বেসাল পালন করা
70. কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের নফল সাওম ভঙ্গের
জন্য কসম দিলে এবং তার জন্য এ সাওমের কাযা
ওয়াজিব মনে না করলে, যখন সাওম পালন না করা
তার জন্য উত্তম হয়
71. সাওমের নিয়ত করা এবং যে ব্যক্তি রাতের
বেলায় রমযানের সাওমের নিয়ত করবে না তার
সাওম আদায় হবে না
72. নফল সাওমের নিয়ত দিনের বেলায় সূর্য হেলে
যাওয়ার পূর্বে করা জায়েয এবং নফল সাওম
পালনকারীকে উযর ব্যতীতই সাওম ভঙ্গ করানো
জায়েয।
73. শা‘বান মাসের সাওম
74. মুহাররম মাসের সাওম পালনের ফযিলত
75. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সাওম পালন করা ও না পালনের বর্ণনা
76. নফল সাওম পালনের ব্যাপারে মেহমানের হক
77. নফল সাওমে শরীরের হক
78. সারা বছর সাওম পালন করা
79. সাওম পালনের ব্যাপারে পরিবার পরিজনের হক
80. একদিন সাওম পালন করা একদিন ছেড়ে দেওয়া
81. দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম
82. সাওমে বীয বা প্রতিমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫
তারিখে সাওম পালন করা
83. সাওম পালনকারী কারো দাওয়াতে সাড়া
দেওয়া
84. সাওম পালনকারীকে খাবারের জন্য ডাকলে সে
যেন বলে, আমি সাওম পালনকারী
85. কারো সাথে দেখা করতে গেলে নফল সাওম ভঙ্গ
না করা
86. সাওম পালনকারীকে ইফতার করানোর সাওয়াব
87. মাসের শেষভাগে সাওম পালন
88. জুমু‘আর দিনে সাওম পালন
89. সাওম পালনের ব্যাপারে কোন দিন কি
নির্দিষ্ট করা যায়?
90. শাওয়াল মাসে ছয়টি সাওম পালন
91. যিলহজ মাসের সাওম পালন
92. ‘আরাফাহ দিবসে সাওম পালন
93. ঈদের দিনে সাওম পালন
94. কুরবানীর দিনে সাওম পালন
95. আইয়ামুত তাশরিকে সাওম পালন
96. আশুরার দিনে সাওম পালন
97. সোমবার ও বৃহস্পতিবার সাওম পালন
98. কেউ স্বাভাবিক সাওমের সাথে অন্য কিছু যেমন
চুপ থাকা ইত্যাদি মিশ্রিত করে
99. রমযানে ‘উমরা পালনের ফযীলত
100. তৃতীয় অধ্যয়: সালাতুত তারাবীহ
101. রমযানে ঈমান ও সাওয়াবের আশায় যে রাত
জেগে ইবাদত করে তার ফযীলত
102. রমযানে রাতে কত রাকা‘আত সালাত?
103. লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
104. শেষ সাত রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করবে
105. শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর
তালাশ করা
106. মানুষের ঝগড়ার কারণে লাইলাতুল কদরের
নির্দিষ্ট তারিখ হারিয়ে যায়
107. লাইলাতুল কদরের ‘আলামত
108. লাইলাতুল কদরে যেসব দো‘আ পড়া মুস্তাহাব।
109. রমযানের শেষ দশকের আমল
110. চতুর্থ অধ্যয়: ই‘তিকাফ
111. রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা, সব
মসজিদে ইতিকাফ করা
112. হায়েযপ্রাপ্তা ব্যক্তি ইতিকাফকারীর চুল
আঁচড়ানো
113. ই‘তিকাফকারী প্রয়োজন ব্যতীত গৃহে প্রবেশ
না করা
114. ইতিকাফকারীর গোসল
115. রাতে ই‘তিকাফ করা
116. মহিলাদের ই‘তিকাফ
117. মসজিদে ইতিকাফ করার উদ্দেশ্যে তাঁবু
খাটানো
118. ই‘তিকাফকারী কি প্রয়োজনে মসজিদের
দরজায় বের হতে পারবে?
119. ই‘তিকাফ অধ্যয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বিশ তারিখ সকালে ই‘তিকাফের
উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন
120. মুস্তাহাযা বা রোগাক্রান্ত নারীর ইতিকাফ
করা
121. ই‘তিকাফকারী স্বামীকে স্ত্রী দেখতে
যাওয়া
122. ই‘তিকাফকারী কি নিজের থেকে সন্দেহ দূর
করবে?
123. যে ব্যক্তি প্রত্যুষে ই‘তিকাফ থেকে ফিরে
আসে
124. শাওয়াল মাসে ই‘তিকাফ করা
125. যারা সাওম ব্যতীত ই‘তিকাফ করা বৈধ মনে
করেন
126. যে ব্যক্তি জাহেলী যুগে ই‘তিকাফের মানত
করেছে সে তা ইসলামে প্রবেশ করলে তা আদায়
করবে
127. রমযানের মধ্য দশকে ই‘তিকাফ করা
128. ই‘তিকাফের নিয়ত করে ই‘তিকাফ না করা
129. রোগ বা সফরের কারণে রমযানে ই‘তিকাফ
করতে না পারলে
130. ই‘তিকাফকারী গোসলের জন্য মাথা ঘরে
ঢুকিয়ে দেওয়া
131. ই‘তিকাফকারী কখন ই‘তিকাফের স্থানে
প্রবেশ করবে
132. পঞ্চম অধ্যয়: সদাকাতুল ফিতর
133. সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে
134. মুসলিমদের গোলাম ও অন্যান্যের পক্ষ থেকে
সদকাতুল ফিতর আদায় করা
135. সদকাতুল ফিতর এক সা‘ পরিমাণ যব
136. সদকাতুল ফিতর এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য
137. সদকাতুল ফিতর এক সা‘ পরিমাণ খেজুর
138. সদকাতুল ফিতর এক সা‘ পরিমাণ কিসমিস
থেকে
139. ঈদের সালাতের পূর্বেই সদকাতুল ফিতর আদায়
করা
140. স্বাধীন ও গোলামের পক্ষ থেকে সদকাতুল
ফিতর আদায় করা ওয়াজিব
141. অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও প্রাপ্ত বয়স্কদের পক্ষ থেকে
সদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব
142. ষষ্ঠ অধ্যয়: ঈদের সালাত
143. দু’ঈদ ও সুন্দর পোশাক পরিধান করা
144. ঈদের দিন বর্শা ও ঢালের খেলা
145. মুসলিমদের জন্য উভয় ঈদের রীতিনীতি
146. ঈদুল ফিতরের দিন সালাতে বের হওয়ার আগে
আহার করা
147. কুরবানীর দিন আহার করা
148. মিম্বার না নিয়ে ঈদগাহে গমন
149. পায়ে হেঁটে বা সাওয়ারীতে আরোহণ করে
ঈদের জামা‘আতে যাওয়া এবং আযান ও অকামত
ছাড়া খুতবার পূর্বে সালাত আদায় করা
150. ঈদের সালাতের পরে খুতবা দেওয়া
151. ঈদের জামা‘আতে এবং হারাম শরীফে অস্ত্র
বহন নিষিদ্ধ
152. ঈদের সালাতের জন্য সকাল সকাল রওয়ানা
হওয়া
153. ঈদের দিন বর্শা সামনে পুতে সালাত আদায়
করা
154. ঈদের দিন ইমামের সামনে বল্লম বা বর্শা বহন
করা
155. মহিলাদের ও ঋতুবতীদের ঈদগাহে গমন
156. বালকদের ঈদগাহে গমন
157. ঈদের খুতবা দেওয়ার সময় মুসল্লীদের দিকে
ইমামের মুখ করে দাঁড়ানো
158. ঈদগাহে চিহ্ন রাখা
159. ঈদের দিন মহিলাগণের উদ্দেশ্যে ঈমামের
উপদেশ দেওয়া
160. ঈদের সালাতে যাওয়ার জন্য মহিলাদের ওড়না
না থাকলে
161. ঈদগাহে ঋতুবতী মহিলারা পৃথক অবস্থান করবে
162. ঈদের দিন ফিরার সময় যে ব্যক্তি ভিন্ন পথে
আসে।
163. কেউ ঈদের সালাত না পেলে সে দু’রাকা‘আত
সালাত আদায় করবে।
164. ঈদের সালাতের পূর্বে ও পরে সালাত আদায়
করা
165. সপ্তম অধ্যয়: সংক্ষেপে পবিত্র রমযান মাসে
আমাদের করণীয় ‘আমল
166. অষ্টম অধ্যায়: সাওম সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ
মাসআলা
ভূমিকা
সকল প্রশংসা আল্লাহর, আমরা তাঁর প্রশংসা করছি,
তাঁরই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, তাঁর নিকট
ক্ষমা চাচ্ছি, তাঁর কাছে তাওবা করছি। তাঁর কাছে
আমাদের অন্তরের সব কলুষিতা ও সব পাপ কাজ
থেকে পানাহ চাই। তিনি যাকে হিদায়াত দান
করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না আর
তিনি যাকে পথ-ভ্রষ্ট করেন কেউ তাকে হিদায়াত
দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ
ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো
শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর
বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাকে হিদায়াত ও সত্য
দীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তা সব দীনের ওপর
বিজয় লাভ করে। তিনি তাঁর রিসালাহ (দাওয়াত)
পৌঁছেছেন, আমানত আদায় করেছেন, উম্মতকে
উপদেশ দিয়েছেন, আল্লাহর পথে যথাযথ প্রচেষ্টা
করেছেন। তাঁর উম্মতকে সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণের
রেখে গেছেন, যার দিবারাত্রি সমানভাবেই স্পষ্ট,
একমাত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত ছাড়া কেউ সে পথ থেকে সরে
যায় না। তাই আল্লাহর সালাত ও সালাম তাঁর ওপর,
তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীগণ ও কিয়ামত পর্যন্ত
একনিষ্ঠার সাথে যারা তাঁর অনুসরণ করবে সকলের
ওপর বর্ষিত হোক। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি
তিনি যেন আমাকে ও আপনাদেরকে প্রকাশ্য ও
অপ্রকাশ্য সব কাজে তাঁর অনুসারী করেন। যিনি
যেন তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের দলের অন্তর্ভুক্ত করে আমাদেরকে
মৃত্যু দান করেন। তাঁর উম্মতের কাতারে যেন
হাশরের দিনে একত্রিত করেন। তাঁর শাফা‘আতের
অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তিনি যেন আমাদেরকে
চিরস্থায়ী জান্নাতে তাঁর সাথে ও সে সব নবী
রাসূল, সিদ্দিকীন, শুহাদা ও সালেহীন বান্দাদের
সাথে একত্রিত করেন যাদের ওপর আল্লাহ অনুগ্রহ
করেছেন।
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺣَﻖَّ ﺗُﻘَﺎﺗِﻪِۦ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻤُﻮﺗُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢ ﻣُّﺴۡﻠِﻤُﻮﻥَ ١٠٢﴾ [ﺍﻝ
ﻋﻤﺮﺍﻥ: ١٠٢]
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন
কর, যথাযথ তাকওয়া। আর তোমরা মুসলিম হওয়া
ছাড়া মারা যেও না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত:
১০২]
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟﻨَّﺎﺱُ ﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﺭَﺑَّﻜُﻢُ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻘَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﻧَّﻔۡﺲٖ ﻭَٰﺣِﺪَﺓٖ ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﻣِﻨۡﻬَﺎ ﺯَﻭۡﺟَﻬَﺎ ﻭَﺑَﺚَّ ﻣِﻨۡﻬُﻤَﺎ ٗﺍ
ﻛَﺜِﻴﺮٗﺍ ﻭَﻧِﺴَﺎٓﺀٗۚ ﻭَﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﺗَﺴَﺎٓﺀَﻟُﻮﻥَ ﺑِﻪِۦ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺭۡﺣَﺎﻡَۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡ ﺭَﻗِﻴﺒٗﺎ
١﴾ [ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ: ١ ]
“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি
তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর
তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের
থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর
তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার
মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর
তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের
ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর
পর্যবেক্ষক”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১]
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻗُﻮﻟُﻮﺍْ ﻗَﻮۡﻟٗﺎ ﺳَﺪِﻳﺪٗﺍ ٧٠ ﻳُﺼۡﻠِﺢۡ ﻟَﻜُﻢۡ ﺃَﻋۡﻤَٰﻠَﻜُﻢۡ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡ
ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢۡۗ ﻭَﻣَﻦ ﻳُﻄِﻊِ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُۥ ﻓَﻘَﺪۡ ﻓَﺎﺯَ ﻓَﻮۡﺯًﺍ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ ٧١ ﴾ [ ﺍﻻﺣﺰﺍﺏ: ٧٠، ٧١]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া
অবলম্বন কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের
জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং
তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে
ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে
অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল”। [সূরা: আল-
আহযাব, আয়াত: ৭০-৭১]
মহান আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে শয়তানের ধোঁকা
থেকে বাঁচার জন্য কিছু ইবাদত প্রবর্তন করে তাদের
ওপর অনুগ্রহ ও দয়া করেছেন। যেহেতু তিনি সাওমকে
বান্দাহর জন্য দূর্গ ও ঢাল স্বরূপ করেছেন। সাওমের
মাধ্যমে তিনি জান্নাতের পথ সুপ্রশস্ত করেছেন।
মানুষের অন্তরের কুপ্রবৃত্তি দমন করে তাকে
করেছেন পবিত্র। সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ
জাগরণ, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কষ্ট উপলব্ধি,
শারীরিক সুস্থতা, সর্বোপরি মহান আল্লাহর
নৈকট্যলাভ ইত্যাদি হলো সাওমের সওগাত।
সাওমের অপরিসীম ফযিলতের কারণেই আল্লাহ
বলেছেন, “সাওম আমার জন্য, আর এর প্রতিদান আমি
নিজেই দিব”।
ইসলামী কিতাবের ভাণ্ডারের দিকে কেউ
তাকালে দেখবে সাওম সম্পর্কে অসংখ্য কিতাব
বিভিন্ন ভাষায় রচিত হয়েছে। এ সব কিতাবে সহীহ
ও দ‘য়ীফ হাদীস সন্নিবেশিত হয়েছে, ফলে সাধারণ
মানুষের জন্য সহীহ হাদীসের ওপর ‘আমল করা কঠিন
হয়ে পড়ে। এসব কথা বিবেচনা করেই বাংলাদেশের
একজন স্বনামধন্য ‘আলেম, আমার সম্মানিত উস্তাদ
আমাকে “সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম
বিশ্বকোষ” সংকলনের নির্দেশ দেন। শাইখের
আদেশেই আমি এ কিতাবখানা ‘আলেম ওলামা ও
সাধারণ মানুষের জন্য লিপিবদ্ধ করেছি।
সংকলনের ক্ষেত্রে আমি নিম্নের পদ্ধতি
অনুসরণ করেছি
১- সহীহ বুখারীকে এ কিতাবের মূল হিসেবে
রেখেছি। বুখারীর সব হাদীস হুবহু উল্লেখ করেছি।
এমনকি বুখারীর ‘তালিকসমূহও অনেক ক্ষেত্রে
উল্লেখ করেছি।
২- বুখারীর বাবের সাথে অন্যান্য সহীহ হাদীসের
কিতাব থেকে হাদীস সংযোগ করেছি এবং
প্রয়োজনে আরো বাব সংযোজন করেছি।
৩- বুখারীর সাথে মুসলিমেরও হাদীসসমূহ উল্লেখ
করেছি।
৪- তাখরীজ ও হুকুমের ক্ষেত্রে বুখারী ও মুসলিম
থেকে হাদীস উল্লেখ করলে শুধু এ কিতাবের নাম
উল্লেখ করেছি। আলাদা কোনো হুকুম উল্লেখ করি
নি। কেননা সব ‘আলেমদের ঐক্যমতে এ দুই কিতাবের
হাদীসসমূহ সহীহ। কখনও কখনও শুধু বুখারী বা শুধু
মুসলিম উল্লেখ করেছি। অর্থাৎ এ দু’কিতাবের যে
কোনো একটির নাম উল্লেখ করা মানেই হাদীসটি
সহীহ প্রমাণিত হয়।
৫- বুখারী ও মুসলিম ছাড়া অন্যান্য হাদীসের
কিতাব থেকে হাদীস উল্লেখ করলে সে হাদীসের
হুকুম উক্ত কিতাবসমূহে পাওয়া গেলে তা উল্লেখ
করেছি। তাদের দেওয়া হুকুমকে আরো শক্তিশালী
করতে সাথে সাথে সুনানের ক্ষেত্রে আল্লামা
আলবানী রহ. ও মুসনাদে আহমদ ও ইবন হিব্বানের
ক্ষেত্রে শাইখ শু‘আইব আরনাঊত-এর দেওয়া হুকুমও
বর্ণনা করেছি।
৬- বুখারী, মুসলিম, সুনান, মুসতাদরাক হাকিম, ইবন
হিব্বান, মুসনাদে আহমদ ইত্যাদি হাদীসের
কিতাবের ক্ষেত্রে হাদীস নম্বর উল্লেখ করেছি।
কেননা বর্তমানে হাদীস নম্বর দিয়ে সহজেই
সাধারণ মানুষ উক্ত কিতাবের কাঙ্ক্ষিত হাদীসে
পৌঁছতে পারে। যেসব কিতাবের হাদীস নম্বর
পাওয়া যায় নি সে ক্ষেত্রে কিতাবের খণ্ড ও পৃষ্ঠা
নম্বর উল্লেখ করেছি।
৭- কোনো কোনো সময় টীকাতে হাদীসের সাথে
সম্পৃক্ত মাসআলা থাকলে তা উল্লেখ করেছি, তবে
এগুলো খুবই স্বল্প। আমার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষ
সরাসরি সহীহ হাদীসের ওপর আমল করুক। তাই
ফিকহি মাসআলা বেশি উল্লেখ করি নি।
৮- কিতাবের শুরুতে সাওমের সংজ্ঞা, তাৎপর্য,
নানা ধর্মে সাওম পালন নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা
করেছি, যাতে সাধারণ মানুষ সাওম সম্পর্কে কিছুটা
ধারণা পায়।
৯- কিতাবের শেষে সাওম সম্পর্কিত জরুরী কিছু
মাসআলা উল্লেখ করেছি।
১০- কিতাবটি আটটি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়েছে।
প্রথম অধ্যায়ে সাওমের পরিচয়, ইতিহাস ও তাৎপর্য,
দ্বিতীয় অধ্যায়ে সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম,
তৃতীয় অধ্যায়ে সালাতুত
তারাবীহ, চতুর্থ অধ্যায়ে ই‘তিকাফ, পঞ্চম অধ্যায়ে
সদকাতুল ফিতর, ষষ্ঠ অধ্যায়ে ঈদের সালাত, সপ্তম
অধ্যায়ে সংক্ষেপে পবিত্র রমযান মাসে আমাদের
করণীয় ‘আমল এবং অষ্টম অধ্যায়ে সাওম সম্পর্কিত
কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা উল্লেখ করেছি।
পরিশেষে সম্মানিত ‘আলেম, তালিবে ইলম ও
অন্যান্য সবার কাছে অনুরোধ থাকবে এ কিতাবে
কোনো দ‘য়ীফ হাদীস পাওয়া গেলে অনুগ্রহ করে
জানাবেন। পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করে
দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। কেননা আমি সহীহ
হাদীসের আলোকেই কিতাবটি সাজিয়েছি।
কিতাবটির নামকরণ করেছি, “ সহীহ হাদীসের
আলোকে সাওম বিশ্বকোষ ”। মহান আল্লাহ রাব্বুল
আলামীনের দরবারে এ দো‘আ করছি যে, তিনি যেন
আমাদেরকে সহীহ হাদীসের ওপর সর্বদা ‘আমল
করার তাওফীক দান করেন। বিদ‘আত, দুর্বল ও জাল
হাদীসের ওপর ‘আমল করা থেকে বিরত রাখেন।
কিয়ামতের দিন এ ক্ষুদ্র কাজটি নাজাতের অসীলা
করে দিন। সব মুসলিম যেন এ কিতাবটি থেকে উপকৃত
হন। আমীন।
প্রথম অধ্যায়
সাওমের পরিচয়, ইতিহাস ও তাৎপর্য
সাওমের পরিচয়
সাওমের অভিধানিক অর্থ:
সাওম (ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ) শব্দটি আরবী, একবচন, এর বহু বচন হলো
(ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡ ) সাওম। সাওম পালনকারীকে ‘সায়েম’ বলা হয়।
ফার্সিতে বলা হয় রোযা এবং রোযা পালনকারীকে
বলা হয় রোযাদার। এর শাব্দিক অর্থ হলো,
পানাহার ও নির্জনবাস থেকে বিরত থাকা।
অভিধানে শব্দটির অর্থ সম্পর্কে বলা হয়েছে,
ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠُّﻐَﺔ: ﺍﻹﻣﺴﺎﻙُ ﻋَﻦ ﺍﻟﺸﻲﺀِ ﻭﺍﻟﺘَّﺮْﻙُ ﻟَﻪُ. ﻭَﻗﻴﻞ ﻟﻠﺼﺎﺋﻢِ ﺻَﺎﺋِﻢ: ﻹﻣﺴﺎﻛﻪ ﻋَﻦ
ﺍﻟْﻤﻄﻌﻢ ﻭَﺍﻟْﻤﺸْﺮَﺏ ﻭﺍﻟﻤﻨﻜﺢ.
“কোনো কিছু থেকে বিরত থাকা, সাওম
পালনকারীকে ‘সায়েম’ বলা হয় এজন্য যে, সে খাদ্য,
পানীয় ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত থেকেছে।”
ﻭَﻗﻴﻞ ﻟﻠﺼﺎﻣﺖ: ﺻَﺎﺋِﻢ، ﻹﻣﺴﺎﻛﻪ ﻋَﻦ ﺍﻟْﻜَﻠَﺎﻡ. ﻭَﻗﻴﻞ ﻟﻠﻔﺮﺱِ: ﺻَﺎﺋِﻢ، ﻹﻣﺴﺎﻛﻪ ﻋَﻦ ﺍﻟﻌَﻠَﻒ
ﻣَﻊَ ﻗِﻴَﺎﻣﻪ.
“চুপ থাকা ব্যক্তিকে ‘সায়েম’ বলা হয়, কেননা সে
কথা বলা থেকে বিরত থেকেছে। এমনিভাবে যে
ঘোড়া খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত রয়েছে তাকেও
‘সায়েম’ বলা হয়।”
ইবন ‘আরাবী রহ. বলেছেন,
ﻭﺻﺎﻡَ ﺍﻟﺮﺟﻞُ: ﺇِﺫﺍ ﺗَﻈَﻠَّﻞَ ﺑﺎﻟﺼَّﻮْﻡ، ﻭَﻫُﻮَ ﺷﺠﺮ؛ ﻗﺎﻟﻪُ ﺍﺑْﻦ ﺍﻟْﺄَﻋﺮَﺍﺑِﻲ.
“কোনো ব্যক্তি যখন গাছের নিচে ছায়া নিচ্ছে
তাকে বলা হয় ‘সমার রজুল।” (লোকটি ছায়ায় থেকে
চলাফেরা থেকে বিরত থেকেছে)।
লাইস রহ. বলেছেন,
ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ: ﺗَﺮْﻙُ ﺍﻟْﺄﻛﻞ ﻭﺗﺮْﻙُ ﺍﻟْﻜَﻠَﺎﻡ.
“সাওম হলো খাদ্য ও কথা বলা থেকে বিরত থাকা।”
যেমন কুরআনে এসেছে,
﴿ﻓَﻜُﻠِﻲ ﻭَﭐﺷۡﺮَﺑِﻲ ﻭَﻗَﺮِّﻱ ﻋَﻴۡﻨٗﺎۖ ﻓَﺈِﻣَّﺎ ﺗَﺮَﻳِﻦَّ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺒَﺸَﺮِ ﺃَﺣَﺪٗﺍ ﻓَﻘُﻮﻟِﻲٓ ﺇِﻧِّﻲ ﻧَﺬَﺭۡﺕُ ﻟِﻠﺮَّﺣۡﻤَٰﻦِ
ﺻَﻮۡﻣٗﺎ ﻓَﻠَﻦۡ ﺃُﻛَﻠِّﻢَ ﭐﻟۡﻴَﻮۡﻡَ ﺇِﻧﺴِﻴّٗﺎ ٢٦﴾ [ ﻣﺮﻳﻢ : ٢٦]
“অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। আর
যদি তুমি কোনো লোককে দেখতে পাও তাহলে বলে
দিও, ‘আমি পরম করুণাময়ের জন্য চুপ থাকার মানত
করেছি। অতএব, আজ আমি কোনো মানুষের সাথে
কিছুতেই কথা বলব না।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ২৬]
ﻭَﺻَﺎﻡَ ﺍﻟﻔَﺮَﺱ ﻋﻠﻰ ﺁﺭِﻳِّﻪ: ﺇِﺫﺍ ﻟﻢ ﻳَﻌْﺘَﻠِﻒ. ﻭﺍﻟﺼﻮﻡُ: ﻗِﻴَﺎﻡٌ ﺑِﻠَﺎ ﻋَﻤﻞ. ﻭﺻﺎﻣَﺖِ ﺍﻟﺮِّﻳﺢُ : ﺇِﺫﺍ
ﺭَﻛَﺪَﺕْ.
“ঘোড়া যখন খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকে তাকে
বলা হয় ‘সমাল ফারাস’, আবার সাওম অর্থ কোনো
কাজ না করা। বলা হয়, ‘সমাতির রিহ’ বাতাস যখন
থেমে থাকে।”
সুফিয়ান ইবন ‘উয়াইনাহ রহ. বলেছেন,
ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ ﻫُﻮ ﺍﻟﺼَّﺒْﺮُ، ﻳَﺼْﺒِﺮُ ﺍﻹِﻧﺴﺎﻥُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡِ ﻭَﺍﻟﺸَّﺮَﺍﺏِ ﻭَﺍﻟﻨِّﻜَﺎﺡِ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺮَﺃَ: ﺇِﻧَّﻤﺎ ﻳُﻮَﻓَّﻰ
ﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺮُﻭﻥَ ﺃَﺟْﺮَﻫُﻢْ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣِﺴﺎﺏٍ.
“সাওম অর্থ ধৈর্য। কেননা মানুষ খাদ্য, পানীয় ও
স্ত্রী সহবাস থেকে ধৈর্য ধারণ করে। অতঃপর তিনি
এ আয়াতটি পড়েন,
﴿ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﻮَﻓَّﻰ ﭐﻟﺼَّٰﺒِﺮُﻭﻥَ ﺃَﺝۡﺭَﻫُﻢ ﺑِﻐَﻲۡﺭِ ﺣِﺴَﺎﺏٖ ١٠﴾ [ ﺍﻟﺰﻣﺮ: ١٠]
“কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে
দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই”। [সূরা আয-
যুমার, আয়াত: ১০] [1]
সাওমের পারিভাষিক সংজ্ঞা:
আল-কামুসুল ফিকহি গ্রন্থে বলা হয়েছে,
ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻫﻮ ﺇﻣﺴﺎﻙ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻔﻄﺮﺍﺕ، ﺣﻘﻴﻘﺔ، ﺃﻭ ﺣﻜﻤﺎ، ﻓﻲ ﻭﻗﺖ ﻣﺨﺼﻮﺹ، ﻣﻦ ﺷﺨﺺ
ﻣﺨﺼﻮﺹ، ﻣﻊ ﺍﻟﻨﻴﺔ.
ﻭﻗﻴﻞ : ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻫﻮ ﺇﻣﺴﺎﻙ ﺍﻟﻤﻜﻠﻒ ﺑﺎﻟﻨﻴﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻣﻦ ﺗﻨﺎﻭﻝ ﺍﻟﻤﻄﻌﻢ.
“সাওম হলো, নির্দিষ্ট সময় সুনির্দিষ্ট কার্যাবলী
থেকে নিয়তসহ সাওম ভঙ্গকারী হাকীকী ও হুকমী
(খাওয়া, পান করা এবং যৌনসম্ভোগ) বিষয় থেকে
বিরত থাকা।” [2]
কারও কারও মতে, ‘সাওম হচ্ছে মুকাল্লাফ তথা
শরী‘আতের নির্দেশনা প্রযোজ্য এমন লোকের পক্ষ
থেকে নিয়তসহ রাত থেকে খাবার-পানীয় থেকে
বিরত থাকা।
যুরযানী রহ. বলনে,
ﻋﺒﺎﺭﺓ ﻋﻦ ﺇﻣﺴﺎﻙ ﻣﺨﺼﻮﺹ ﻭﻫﻮ ﺍﻹﻣﺴﺎﻙ ﻋﻦ ﺍﻷﻛﻞ ﻭﺍﻟﺸﺮﺏ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻉ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺒﺢ ﺇﻟﻰ
ﺍﻟﻤﻐﺮﺏ ﻣﻊ ﺍﻟﻨﻴﺔ.
“সুবহে সাদিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ
এবং যৌনাচার থেকে নিয়তের সাথে বিরত থকার
নাম হলো সাওম।” [3]
বদরুদ্দীন ‘আইনী রহ. বলেন,
ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻫﻮ ﺍﻹﻣﺴﺎﻙ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻔﻄﺮﺍﺕ ﺍﻟﺜﻼﺛﺔ ﻧﻬﺎﺭﺍً ﻣﻊ ﺍﻟﻨﻴﺔ.
“খাওয়া, পান করা এবং যৌনসম্ভোগ -এ তিনটি
কাজ থেকে নিয়তসহ বিরত থাকার নাম হলো
সাওম।” [4]
শরী‘আতের দৃষ্টিতে সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত
পর্যন্ত পানাহার, যৌন সম্ভোগ ও শরী‘আত
নির্ধারিত বিধি-নিষেধ থেকে নিয়তসহ বিরত
থাকাকে সাওম বলে। শরী‘আতে ঈমান, সালাত ও
যাকাতের পরেই সাওমের স্থান। যা ইসলামের চতুর্থ
রুকন।
সাওমের ইতিহাস ও তাৎপর্য
যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ে সাওম:
সাওম বা রোযা নাম ও ধরণভেদে বিভিন্ন জাতি-
ধর্ম নির্বিশেষে বহুল প্রচলিত একটি ধর্মীয়
বিধান, যা মুসলিমদের জন্য অবশ্য পালনীয় (ফরয)
একটি ইবাদত। শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আতে যেমন
আল্লাহর পক্ষ থেকে সাওমের বিধান দেওয়া
হয়েছে, তেমনি সাওমের বিধান দেওয়া হয়েছিল
পূর্ববর্তী নবীদের শরী‘আতেও; পূর্ববর্তী
জাতিগুলোর ধর্ম-কর্মেও। আসমানী ধর্ম ছাড়াও
মানব রচিত বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ে সাওমের
বিধান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ
١٨٣﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٣]
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা
হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া
অর্জন করতে পার।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী প্রত্যেক
নবী ও প্রত্যেক জাতির মধ্যেই প্রচলিত
ছিল ‘সাওম’ বা রোযা নামের এই ধর্মানুষ্ঠান।
তাফসীরে কুরতুবীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখায় বলা
হয়েছে,
ﺍﻟْﻤَﻌْﻨَﻰ: ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺼِّﻴﺎﻡُ ﺃَﻱْ ﻓِﻲ ﺃَﻭَّﻝِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺷَﻬْﺮٍ ﻭَﻳَﻮْﻡَ
ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻛَﻤﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻜُﻢْ ﻭَﻫُﻢُ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩُ - ﻓِﻲ ﻗَﻮْﻝِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ - ﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ
ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ. ﺛُﻢَّ ﻧُﺴِﺦَ ﻫَﺬَﺍ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺄُﻣَّﺔِ ﺑِﺸَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ. ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻣُﻌَﺎﺫُ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ: ﻧﺴﺦ
ﺫﻟﻚ ﺏ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ﻣَﻌْﺪُﻭﺩﺍﺕٍ ﺛُﻢَّ ﻧُﺴِﺨَﺖِ ﺍﻟْﺄَﻳَّﺎﻡُ ﺑِﺮَﻣَﻀَﺎﻥَ.
“আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার
মতে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রত্যেক মাসে তিন
দিন ও আশুরার দিনে সাওম ফরয ছিল, যেমনিভাবে
তোমাদের পূর্ববর্তী ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের ওপর
মাসে তিন দিন ও ‘আশুরার দিনে সাওম ফরয ছিল।
পরবর্তীতে রমযান মাসের দ্বারা এ সাওম রহিত
হয়। মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বলেন, উক্ত তিন দিনের সাওম নির্দিষ্ট কয়েক
দিনের সাওমের দ্বারা রহিত হয়। অতঃপর উক্ত
কয়েক দিনের সাওম আবার রমযানের সাওম দ্বারা
রহিত হয়। [5]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﺻَﺎﻡَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻓُﺮِﺽَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺗُﺮِﻙَ »،
ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻻَ ﻳَﺼُﻮﻣُﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳُﻮَﺍﻓِﻖَ ﺻَﻮْﻣَﻪُ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার
দিন সাওম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য
আদেশও পালন করেছে। পরে যখন রমযানের সাওম
ফরয হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়।
‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সাওম পালিন
করতেন না, তবে মাসের যে দিনগুলোতে সাধারন
সাওম পালন করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।
[6]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
« ﺃَﻥَّ ﻗُﺮَﻳْﺸًﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺗَﺼُﻮﻡُ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ، ﺛُﻢَّ ﺃَﻣَﺮَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻓُﺮِﺽَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﻣَﻦْ ﺷَﺎﺀَ
ﻓَﻠْﻴَﺼُﻤْﻪُ ﻭَﻣَﻦْ ﺷَﺎﺀَ ﺃَﻓْﻄَﺮَ »
“জাহেলী যুগে কুরাইশগন ‘আশুরার দিন সাওম পালন
করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামও পরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন।
অবশেষে রমযানের সাওম ফরয হলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার
ইচ্ছা ‘আশুরার সাওম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে
সাওম পালন করবে না।” [7]
আমরা এখানে আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম
থেকে শুরু করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত বিভিন্ন আসমানী ধর্মে ও
মানব রচিত অন্যান্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের যুগে
যুগে সাওমের বিধান ও ধরণ নিয়ে আলোচনা করব।
আদম আলাইহিস সালামের শরী‘আতে সাওম:
প্রথম নবী আদম আলাইহিস সালামের শরী‘আতে
সিয়ামের বিধান দেওয়া হয়েছিল বলে তাফসীর
গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়। অবশ্য সেই সিয়ামের
ধরণ ও প্রকৃতি কেমন ছিল তা আমাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে বাইবেল, কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের
কিতাব একেবারে নিশ্চুপ। বলা হয়ে
থাকে, পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবীর শরী‘আতেই
চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়ামের বিধান
ছিল। এ সাওম আইয়্যামে বীদ বা শুভ্ররাত্রিগুলোর
দিনের সাওম নামে খ্যাত।
নূহ আলাইহিস সালামের সাওম:
তাফসীরে ইবন কাসীরে এসেছে,
ﻗَﺪْ ﻛَﺎﻥَ ﻫَﺬَﺍ ﻓِﻲ ﺍﺑْﺘِﺪَﺍﺀِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﻳَﺼُﻮﻣُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺷَﻬْﺮٍ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ، ﺛُﻢَّ ﻧُﺴِﺦَ ﺫَﻟِﻚَ ﺑِﺼَﻮْﻡِ
ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻛَﻤَﺎ ﺳَﻴَﺄْﺗِﻲ ﺑَﻴَﺎﻧُﻪُ. ﻭَﻗَﺪْ ﺭُﻭﻱ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻭَّﻟًﺎ ﻛَﻤَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺄُﻣَﻢُ
ﻗَﺒْﻠَﻨَﺎ، ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺷَﻬْﺮٍ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ - ﻋَﻦْ ﻣُﻌَﺎﺫٍ، ﻭَﺍﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ، ﻭَﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻭَﻋَﻄَﺎﺀٍ، ﻭَﻗَﺘَﺎﺩَﺓَ،
ﻭَﺍﻟﻀَّﺤَّﺎﻙِ ﺑْﻦِ ﻣُﺰَﺍﺣِﻢٍ. ﻭَﺯَﺍﺩَ: ﻟَﻢْ ﻳَﺰَﻝْ ﻫَﺬَﺍ ﻣَﺸْﺮُﻭﻋًﺎ ﻣِﻦْ ﺯَﻣَﺎﻥِ ﻧُﻮﺡٍ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻥْ ﻧَﺴَﺦ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺫَﻟِﻚَ
ﺑِﺼِﻴَﺎﻡِ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ.
“প্রসিদ্ধ তাফসীরবিদ মু‘য়ায, আব্দুল্লাহ ইবন
মাসউদ, ‘আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু, ‘আতা, কাতাদা ও দাহহাক রহ. বর্ণনা করেন,
নূহ আলাইহিস সালাম হতে শেষ নবী মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত
প্রত্যেক নবীর যুগেই প্রতি মাসে তিনটি করে
সিয়ামের বিধান ছিল। পরবর্তীতে ইহা
রমযানের সাওম দ্বারা রহিত হয়।[8]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ : « ﺻَﺎﻡَ ﻧُﻮﺡٌ ﺍﻟﺪَّﻫْﺮَ، ﺇِﻟَّﺎ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ
ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺄَﺿْﺤَﻰ »
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, নূহ আলাইহিস
সালাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন বাদে সারা
বছর সাওম পালন করতেন।” [9]
ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাওম:
মুসলিম মিল্লাতের পিতা সহিফাপ্রাপ্ত নবী
ইবরাহীম আলাইহিস সালামের যুগে ৩০টি সাওম
ছিল বলে কেউ কেউ লিখেছেন।
দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম:
আসমানী কিতাব ‘যবুর’ প্রাপ্ত বিখ্যাত নবী দাউদ
আলাইহিস সালামের যুগেও সাওমের প্রচলন ছিল।
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« « ﺻُﻢْ ﺃَﻓْﻀَﻞَ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺻَﻮْﻡَ ﺩَﺍﻭُﺩَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻭَﻳُﻔْﻄِﺮُ ﻳَﻮْﻣًﺎ »
“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সাওম দাউদ
আলাইহিস সালামের সাওম -তিনি এক দিন সাওম
পালন করতেন এবং এক দিন বিনা সাওমে থাকতেন”।
[10]
মূসা আলাইহিস সালাম ও ইয়াহূদী ধর্মে সাওম:
ইয়াহূদীদের ওপর প্রতি শনিবার, বছরের মধ্যে
মহররমের ১০ তারিখে আশুরার দিন এবং অন্যান্য
সময় সাওম ফরয ছিল। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻗَﺪِﻡَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟﻤَﺪِﻳﻨَﺔَ ﻓَﺮَﺃَﻯ ﺍﻟﻴَﻬُﻮﺩَ ﺗَﺼُﻮﻡُ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻣَﺎ
ﻫَﺬَﺍ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﻫَﺬَﺍ ﻳَﻮْﻡٌ ﺻَﺎﻟِﺢٌ ﻫَﺬَﺍ ﻳَﻮْﻡٌ ﻧَﺠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﻣِﻦْ ﻋَﺪُﻭِّﻫِﻢْ، ﻓَﺼَﺎﻣَﻪُ
ﻣُﻮﺳَﻰ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺄَﻧَﺎ ﺃَﺣَﻖُّ ﺑِﻤُﻮﺳَﻰ ﻣِﻨْﻜُﻢْ، ﻓَﺼَﺎﻣَﻪُ، ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মদিনায় হিজরত করে ইয়াহূদীদের আশুরার দিনে
সাওম অবস্থায় পেলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস
করলেন, ‘আজকে তোমরা কিসের সাওম করছ?’ তারা
বলল, ‘এটা সেই মহান দিন যেদিন আল্লাহ তা‘আলা
মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর কওম বনী ইসরাইল
ফির‘আউনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন। ফলে
শুকরিয়াস্বরূপ মূসা আলাইহিস সালাম ঐ দিনে
সাওম রেখেছিলেন, তাই আমরা আজকে সাওম
করছি।’ এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি তোমাদের
অপেক্ষা মূসা আলাইহিস সালামের অধিক
নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিন সাওম পালন করেন
এবং সবাইকে সাওম রাখার নির্দেশ দেন”। [11]
মূসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে আল্লাহর কাছ
থেকে তাওরাতপ্রাপ্তির আগে ৪০ দিন পানাহার
ত্যাগ করেছিলেন। ইয়াহূদীদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে
বর্ণিত আছে, মূসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে
৪০ দিন পানাহার না করে কাটিয়েছিলেন। তাই
ইয়াহূদীরা সাধারণভাবে মূসা আলাইহিস
সালামের অনুসরণে ৪০টি সাওম রাখা ভালো মনে
করত। তন্মধ্যে ৪০তম দিনটিতে তাদের ওপর সাওম
রাখা ফরয ছিল। যা ইয়াহূদীদের সপ্তম মাস
তিশরিনের দশম তারিখে পড়ত। এ জন্য ঐ দিনটিকে
আশুরা বা দশম দিন বলা হয়। এ ছাড়া ইয়াহূদী
সহিফাতে অন্যান্য সাওমেরও সুস্পষ্ট হুকুম রয়েছে।
ইয়াহূদীরা বর্তমানে ৯ আগস্ট ইয়াহূদী হাইকাল
বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংস দিবসে সাওম রাখে, এ দিন
তারা খাদ্য, স্ত্রী সহবাস ও জুতা পরিধান থেকে
বিরত থাকে। এছাড়াও ১৩ নভেম্বর, ১৭ জুলাই, ১৩
মার্চ ও বিভিন্ন দিবসে সাওম পালন করে।
ঈসা আলাইহিস সালাম ও খ্রিস্টান ধর্মে সাওম:
আসমানী কিতাব ‘ইঞ্জিল’ প্রাপ্ত বিশিষ্ট
নবী ‘ঈসা আলাইহিস সালামের যুগে সাওমের
প্রমাণ পাওয়া যায়। ঈসা আলাইহিস সালামের
অনুসারী সম্প্রদায় সাওম রাখতেন।
বর্তমানে তাদের দু’ধরণের সাওম আছে।
প্রথম হলো, তাদের ফাদারের উপদেশে নির্দিষ্ট
কয়েক
দিন খাদ্য পানীয় থেকে বিরত থাকা আর ইফতার
হবে নিরামিষ দিয়ে।
মাছ, মাংস ও দুগ্ধজাত জিনিস খাওয়া যাবে না।
যেমন, বড় দিনের সাওম, তাওবার সাওম যা ৫৫ দিন
পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়। এমনিভাবে সপ্তাহে বুধ ও
শুক্রবারে সাওম।
দ্বিতীয় ধরণের সাওম হলো খাদ্য থেকে বিরত
থাকা, তবে মাছ ভক্ষণ করা যাবে। এ সাওমের মধ্যে
ছোট সাওম বা জন্মদিনের সাওম, ইহা ৪৩ দিন
দীর্ঘায়িত হয়, দূতগণের সাওম, মারিয়ামের সাওম
ইত্যাদি। তবে তাদের ধর্মে কোনো সাওমই ফরয নয়;
বরং কেউ ইচ্ছা করলে রাখতে পারে।
গ্রীক ও রোমানদের সাওম:
গ্রীস ও রোমানরা যুদ্ধের আগে সাওম রাখত যাতে
ক্ষুধা ও কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খ্রিস্টান
পাদরীদের ও পারসিক অগ্নিপূজকদের এবং হিন্দু
যোগী ইত্যাকার ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে
সাওমের বিধান ছিল। পারসিক ও হিন্দু যোগীদের
সাওমের ধরন ছিল এরূপ -তারা সাওম থাকা অবস্থায়
মাছ-মাংস, পাখি ইত্যাদি ভক্ষণ করা থেকে বিরত
থাকত বটে; কিন্তু ফল-মূল এবং সামান্য পানীয়
গ্রহণ করত। মূর্তিপূজক ঋষীরা সাওমের ব্যাপারে
এতই কঠোর ছিল যে, তারা সাওম থাকা অবস্থায়
মাছ-মাংস, পাখি ইত্যাদি ভক্ষণ করা থেকে বিরত
থাকত, স্ত্রী সহবাস করত না। সারা বছর সাওম
রেখে আত্মার কষ্ট দিত আর এভাবে তারা
পবিত্রতা অর্জনের সাধনা করত। প্রাচীন চীনা
সম্প্রদায়ের লোকরা একাধারে কয়েক সপ্তাহ সাওম
রাখত।
জাহেলী যুগে সাবে‘ঈ সম্প্রদায়ের সাওম:
ইবন নাদিম তার ‘ফিহরাসাত’ কিতাবের নবম খণ্ডে
উল্লেখ করেন, সাবে‘ঈ সম্প্রদায়ের লোকেরা (যারা
গ্রহ-নক্ষত্র পূজা করে) ত্রিশ দিন সাওম পালন করত।
আযার মাসের ৮দিন অতিবাহিত হলে এ সাওম শুরু
হতো, কানুনে আউয়াল মাসে ৯টি, শাবাত মাসে
৭টি সাওম। এ সাত সাওম পালনের পরে তারা ঈদুল
ফিতর উদযাপন করত। সাওম অবস্থায় তারা খাদ্য,
পানীয় ও স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি থেকে বিরত থাকত।
হিন্দু ধর্মে সাওম বা উপবাস:
বেদের অনুসারী ভারতের হিন্দুদের মধ্যেও ব্রত
অর্থাৎ উপবাস ছিল। প্রত্যেক হিন্দি মাসের ১১
তারিখে ব্রাহ্মণদের ওপর ‘একাদশীর’ উপবাস
রয়েছে। এ হিসাবে তাদের উপবাস ২৪টি হয়। কোনো
কোনো ব্রাহ্মণ কার্তিক মাসে প্রত্যেক সোমবার
উপবাস করেন। কখনো হিন্দু যোগীরা ৪০ দিন
পানাহার ত্যাগ করে চল্লিশে ব্রত পালন করেন।
হিন্দু মেয়েরা তাদের স্বামীদের মঙ্গল কামনায়
কার্তিক মাসের ১৮তম দিবসে ‘কারওয়া চাওত’
নামে উপবাস রাখে।
বৌদ্ধ ধর্মে সাওম বা উপবাস:
তারা তাদের চন্দ্রমাসের Upisata মাসে ১, ৯, ১৫ ও ২২
তারিখে ৪দিন উপবাস পালন করে। এছাড়া বৌদ্ধ
গুরুরা দুপুরের খাবারের পর থেকে সব ধরণের খাদ্য
গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। তারা এভাবে খাদ্য থেকে
বিরত থেকে সংযম ও শারীরিক নিয়ন্ত্রণ করে।
মংগোলীরা প্রতি ১০দিন অন্তর ও যারাদাশতিরা
প্রতি ৫দিন অন্তর সাওম পালন করত।
জাহেলী যুগে সাওম:
ইসলামের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত লাভের আগে
আরবের মুশরিকদের মধ্যেও সিয়ামের প্রচলন ছিল।
যেমন আশুরার দিনে কুরাইশরা জাহেলী যুগে সাওম
রাখত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জাহেলী যুগে ঐ সাওম রাখতেন।
ইসলামে সাওম
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ
١٨٣﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٣]
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা
হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া
অর্জন করতে পার।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]
ইসলামে সাওমের রয়েছে কতিপয় শর্ত ও বৈশিষ্ট্য।
সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত ইবাদাতের নিয়তে
যাবতীয় পানাহার, স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত
থাকার নাম সাওম। সাহরী খাওয়া ইসলামী
শরী‘আতের সাওমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলামে
রমযানের সাওম ফরয, অন্যান্য সাওম মুস্তাহাব,
যেমন, ‘আরাফার সাওম, মহররমের সাওম, শবে
বরাতের সাওম, প্রতি চন্দ্র মাসে ১৩, ১৪, ১৫
তারিখের সাওম ইত্যাদি।
সাওমের তাৎপর্য
সংযম অর্জন:
সাওমের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যে বিষয়টি
বেরিয়ে আসে তা হচ্ছে সংযম। মূলত সংযম ও
আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্ম ও
সমাজে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সাওমের
প্রচলন ছিল। ইসলামী শরী‘আতে ফরযকৃত সাওম সেই
লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক। তাই
প্রতিটি মুমিনের জন্য কর্তব্য হলো সাওমের
মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ব্রতী হওয়া।
আমাদের প্রিয় নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, রমযান মাস হলো ধৈর্যের
মাস আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত। এ
মাসেই আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে ধৈর্যের
প্রশিক্ষণ নিতে হবে। যাতে রমযান পরবর্তী সময়ে
প্রতিটি মুহূর্তে, কথায় কাজে ও জীবনের সকল
ক্ষেত্রে এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটানোর জন্যই সাওম।
তাকওয়া অর্জন:
সাওমের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ
তায়া‘লা বলেছেন,
﴿ﻱﺎَﻬُّﻳَﺃَٰٓ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻲۡﻛُﻢُ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺐۡﻟِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢ
ۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ ١٨٣﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٣]
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা
হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তী লোকদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া
অর্জন করতে পার” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]
( ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ ) যাতে তোমরা তাকওয়াবান হও। এখানেই
সমাজ গঠনে সাওমের ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
তাকওয়ার ভিত্তির ওপর যে সমাজ গঠিত হবে
সেখানে থাকবে না কোনো হিংসা বিদ্বেষ,
মারামারি, কাটাকাটি, দুর্নীতি ও রাহাজানি।
সাওমের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা।
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সকল প্রকার
নাফরমানী কাজ থেকে দূরে থাকার নামই তাকওয়া।
মানুষের মনের গোপন কোণে যে কামনা-বাসনা
আছে, আল্লাহ তা‘আলা সে সম্পর্কেও জ্ঞাত।
আল্লাহর কাছে বান্দার মান-মর্যাদা নির্ধারণের
একমাত্র উপায় তাকওয়া। এ তাকওয়াই মানুষের মনে
সৎ মানবিক গুণাবলি সৃষ্টি করে। সুতরাং যাবতীয়
অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে ভালো কাজ করতে
পারলেই সাওম পালন সফল ও সার্থক হবে। এভাবে
সাওম পালনের মাধ্যমে অর্জিত প্রশিক্ষণ দ্বারা
নিজেদের একজন সৎ, আল্লাহভীরু নাগরিক হিসেবে
গড়ে তুলতে সচেষ্ট থেকে হবে।
সাওম থেকে তাকওয়া শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
তাকওয়া অর্জন করার ক্ষেত্রে সাওমের কোনো
বিকল্প নেই। সাওমের শিক্ষা নিয়ে তাকওয়ার
গুণাবলি অর্জনের মধ্য দিয়ে মানুষ ইহকালীন
কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি লাভ করতে পারে।
ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে সাওম রাখলে
জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এ শিক্ষা যদি
বাকি ১১ মাস কাজে লাগানো যেত, তাহলে
পৃথিবীতে এত অশান্তি, অনাচার থাকত না। পবিত্র
কুরআনে এসেছে,
﴿ﻗَﺪۡ ﺃَﻑۡﻟَﺢَ ﻣَﻦ ﺗَﺰَﻛَّﻰٰ ١٤﴾ [ ﺍﻷﻋﻠﻰ : ١٤]
“যে সংশোধিত হলো, সেই সফলকাম হলো”। [সূরা
আল-আ‘লা, আয়াত: ১৪]
আত্মিক ও দৈহিক সুস্থতা অর্জন:
সাওম মানুষের ভেতর ও বাহির -দুই দিকের
সংশোধন করে। মানুষের ভেতরের অবস্থা পরিবর্তন
করা অর্থাৎ আলোকিত করা এবং তার
স্বভাব, চরিত্র, আচার-আচরণ সংশোধনপূর্বক
প্রকাশ্যভাবে সুন্দর করে গড়ে তোলা
সাওমের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে
সাওম মানুষকে পার্থিব লোভ-লালসা, হিংসা-
বিদ্বেষ, পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার, প্রতারণা,
অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি থেকে
দূরে সরিয়ে রেখে আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়।
মানুষের শারীরিক অবকাঠামো ঠিক রাখতে
বর্তমানে চিকিৎসকেরা সাওম রাখার নির্দেশ
দিয়ে থাকেন। শরীর ঠিক তো মন ঠিক। সমাজে
শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শারীরিক সুস্থতা
অত্যাবশ্যকীয়।
ইবন সিনা সাওমকে দুরারোগ্য সব রোগের চিকিৎসা
বলতেন। মিশরে নেপোলিয়ানের আগ্রাসন পরবর্তী
যুগে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসার জন্য সাওম
রাখতে বলা হতো।
সুন্দর সমাজ গঠন:
সাওমের মাধ্যমে দরিদ্র ও অভুক্ত মানুষের দুঃখ
দুর্দশা অনুধাবন করা যায়, ফলে সমাজে এর প্রভাব
সুদূর প্রসারী। সাওম সাধনা সহমর্মিতা শিক্ষা
জাগ্রত করার কার্যকর মাধ্যম। অনাহার কাকে
বলে, খাদ্যাভাব কাকে বলে যারা অনুভব করে
নি, তারা সমাজের বঞ্চিত ও পীড়িত মানুষের কষ্ট
কীভাবে বুঝবে ? সাওম রাখার কারণে এই মানুষগুলো
ক্ষুধার যন্ত্রণা সম্পর্কে সামান্য হলেও ধারণা
পাবে। ফলে প্রতিবেশি ও কাছে অবস্থানকারীদের
কষ্টের জীবন কিছুটা অনুধাবন করা সহজ হবে। সাওম
রাখার কারণে শরীরের শক্তি কমে আসবে। তখন
অধীনস্থদের কাজের ভার লাঘব করার
প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হবে। আর এতে মনিব-ভৃত্যের
দূরত্ব কমে একে অপরের পরিপূরক মনে করার পরিবেশ
সৃষ্টি হবে। মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে
বৈরিতা থাকবে না।
সাওম পালনের দ্বারা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক
স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া-
মমতা, আন্তরিকতা, দানশীলতা, বদান্যতা,
উদারতা, ক্ষমা, পরোপকারিতা, সহানুভূতি,
সমবেদনা প্রভৃতি সদাচরণ জন্মায়। সাওমের এ মহান
শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের সমাজ ও পারিবারিক
জীবনে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
রমযান মাস আসলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি দান সদকা
করতেন। যেমন হাদীসে এসেছে, ইবন ‘আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﺟْﻮَﺩَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﺎﻟﺨَﻴْﺮِ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺃَﺟْﻮَﺩُ ﻣَﺎ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ
ﺣِﻴﻦَ ﻳَﻠْﻘَﺎﻩُ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻳَﻠْﻘَﺎﻩُ ﻛُﻞَّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻨْﺴَﻠِﺦَ،
ﻳَﻌْﺮِﺽُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟﻘُﺮْﺁﻥَ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻟَﻘِﻴَﻪُ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ، ﻛَﺎﻥَ
ﺃَﺟْﻮَﺩَ ﺑِﺎﻟﺨَﻴْﺮِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﻳﺢِ ﺍﻟﻤُﺮْﺳَﻠَﺔِ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ
ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন।
রমযানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর
সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান
করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই
জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর সাথে একবার
সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল
আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন
তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-
সম্পদ দান করতেন।” [12]
তাই সাওম পালনের দ্বারা সমাজের দারিদ্র
মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। প্রকৃতপক্ষে সাওম
প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে
পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক
জীবনসহ সর্বস্তরে অনুশীলনের দীক্ষা দিয়ে যায়।
তাই আসুন, সাওমের প্রকৃত শিক্ষা ও উদ্দেশ্যের
প্রতি যত্নবান হয়ে সাওম পালনের মাধ্যমে
নিজেদের মনুষ্যত্ববোধকে জাগ্রত করি, মানবিক
গুণাবলিতে জীবনকে আলোকিত করি; তাহলে
আমাদের সাওম সাধনা অর্থবহ হবে। তখন মানুষের
মধ্যে গড়ে উঠবে সুমধুর সম্পর্ক, বিদায় নেবে
অরাজকতা, অন্যায়-অনাচার এবং দুর্নীতি ও
ভেজালমুক্ত হয়ে আদর্শ জাতি হিসেবে আমরা
মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব। সাওমের মাসের
পরিসমাপ্তি বয়ে আনুক সমাজ জীবনে আমূল
পরিবর্তন, আল্লাহভীতি, আত্মসংযম ও মানবপ্রেম।
সাওমের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের আলোকে যেন সারা
জীবন সৎভাবে অতিবাহিত করে আল্লাহর অশেষ
করুণা ও ক্ষমা লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি
পেতে পারি, আল্লাহ পাক আমাদের সে তাওফীক
দান করুন। আমীন।
দ্বিতীয় অধ্যায়
সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম
রমযানের সাওম ফরয হওয়া প্রসঙ্গে
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ
١٨٣﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٣]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা
হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন
কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]
তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﺃَﻋْﺮَﺍﺑِﻴًّﺎ ﺟَﺎﺀَ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺛَﺎﺋِﺮَ ﺍﻟﺮَّﺃْﺱِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻲ ﻣَﺎﺫَﺍ ﻓَﺮَﺽَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﺍﻟﺼَّﻠَﻮَﺍﺕِ ﺍﻟﺨَﻤْﺲَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﺗَﻄَّﻮَّﻉَ
ﺷَﻴْﺌًﺎ »، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻲ ﻣَﺎ ﻓَﺮَﺽَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺷَﻬْﺮَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ
ﺗَﻄَّﻮَّﻉَ ﺷَﻴْﺌًﺎ » ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻲ ﺑِﻤَﺎ ﻓَﺮَﺽَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮَﻩُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺷَﺮَﺍﺋِﻊَ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃَﻛْﺮَﻣَﻚَ، ﻻَ ﺃَﺗَﻄَﻮَّﻉُ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻭَﻻَ ﺃَﻧْﻘُﺺُ
ﻣِﻤَّﺎ ﻓَﺮَﺽَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ «ﺃَﻓْﻠَﺢَ ﺇِﻥْ ﺻَﺪَﻕَ، ﺃَﻭْ
ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ ﺇِﻥْ ﺻَﺪَﻕَ »
“এলোমেলো চুলবিশিষ্ট একজন গ্রাম্য আরব
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
নিকট এলেন। তারপর বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ!
আমাকে বলুন, আল্লাহ তা‘আলা আমার ওপর কত
(ওয়াক্ত) সালাত ফরয করেছেন? তিনি বলেন, পাঁচ
(ওয়াক্ত) সালাত; তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় কর
তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আমার
ওপর কত সাওম আল্লাহ তা‘আলা ফরয
করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, রমযান মাসের সাওম; তবে
তুমি যদি কিছু নফল কর তবে তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর
তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ আমার ওপর কী পরিমাণ
যাকাত ফরয করেছেন? বর্ণনাকারী
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে
দিলেন। এরপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম, যিনি
আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ
আমার ওপর যা ফরয করেছেন, আমি এর মাঝে কিছু
বাড়াব না এবং কমাবও না। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে
সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা
বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ
করল।” [13]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺻَﺎﻡَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻓُﺮِﺽَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺗُﺮِﻙَ »،
ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻻَ ﻳَﺼُﻮﻣُﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳُﻮَﺍﻓِﻖَ ﺻَﻮْﻣَﻪُ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার
দিন সাওম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য
আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সাওম ফরয
হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সাওম পালন করতেন না, তবে
মাসের যে দিনগুলোতে সাধারন সাওম পালন
করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।” [14]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺑَﻴْﻨَﻤَﺎ ﻧَﺤْﻦُ ﺟُﻠُﻮﺱٌ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻤَﺴْﺠِﺪِ، ﺩَﺧَﻞَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻋَﻠَﻰ ﺟَﻤَﻞٍ،
ﻓَﺄَﻧَﺎﺧَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺛُﻢَّ ﻋَﻘَﻠَﻪُ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻬُﻢْ : ﺃَﻳُّﻜُﻢْ ﻣُﺤَﻤَّﺪٌ؟ ﻭَﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
ﻣُﺘَّﻜِﺊٌ ﺑَﻴْﻦَ ﻇَﻬْﺮَﺍﻧَﻴْﻬِﻢْ، ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ: ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺍﻷَﺑْﻴَﺾُ ﺍﻟﻤُﺘَّﻜِﺊُ. ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ: ﻳَﺎ ﺍﺑْﻦَ ﻋَﺒْﺪِ
ﺍﻟﻤُﻄَّﻠِﺐِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: « ﻗَﺪْ ﺃَﺟَﺒْﺘُﻚَ » . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﺇِﻧِّﻲ ﺳَﺎﺋِﻠُﻚَ ﻓَﻤُﺸَﺪِّﺩٌ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻤَﺴْﺄَﻟَﺔِ، ﻓَﻼَ ﺗَﺠِﺪْ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓِﻲ ﻧَﻔْﺴِﻚَ؟
ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺳَﻞْ ﻋَﻤَّﺎ ﺑَﺪَﺍ ﻟَﻚَ » ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺑِﺮَﺑِّﻚَ ﻭَﺭَﺏِّ ﻣَﻦْ ﻗَﺒْﻠَﻚَ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻚَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ
ﻛُﻠِّﻬِﻢْ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻧَﻌَﻢْ » . ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﻧْﺸُﺪُﻙَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَﻙَ ﺃَﻥْ ﻧُﺼَﻠِّﻲَ ﺍﻟﺼَّﻠَﻮَﺍﺕِ ﺍﻟﺨَﻤْﺲَ
ﻓِﻲ ﺍﻟﻴَﻮْﻡِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻴْﻠَﺔِ؟ ﻗَﺎﻝَ: « ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻧَﻌَﻢْ ». ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻧْﺸُﺪُﻙَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَﻙَ ﺃَﻥْ ﻧَﺼُﻮﻡَ ﻫَﺬَﺍ
ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﻨَﺔِ؟ ﻗَﺎﻝَ: « ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻧَﻌَﻢْ ». ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﻧْﺸُﺪُﻙَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَﻙَ ﺃَﻥْ ﺗَﺄْﺧُﺬَ ﻫَﺬِﻩِ
ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔَ ﻣِﻦْ ﺃَﻏْﻨِﻴَﺎﺋِﻨَﺎ ﻓَﺘَﻘْﺴِﻤَﻬَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻓُﻘَﺮَﺍﺋِﻨَﺎ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: « ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ
ﻧَﻌَﻢْ ». ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ: ﺁﻣَﻨْﺖُ ﺑِﻤَﺎ ﺟِﺌْﺖَ ﺑِﻪِ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﻣَﻦْ ﻭَﺭَﺍﺋِﻲ ﻣِﻦْ ﻗَﻮْﻣِﻲ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺿِﻤَﺎﻡُ
ﺑْﻦُ ﺛَﻌْﻠَﺒَﺔَ ﺃَﺧُﻮ ﺑَﻨِﻲ ﺳَﻌْﺪِ ﺑْﻦِ ﺑَﻜْﺮٍ ﻭَﺭَﻭَﺍﻩُ ﻣُﻮﺳَﻰ ﺑْﻦُ ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞَ، ﻭَﻋَﻠِﻲُّ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺤَﻤِﻴﺪِ، ﻋَﻦْ
ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﺑْﻦِ ﺍﻟﻤُﻐِﻴﺮَﺓِ، ﻋَﻦْ ﺛَﺎﺑِﺖٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲٍ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻬَﺬَﺍ »
“একবার আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন
এক ব্যক্তি সওয়ার অবস্থায় ঢুকল। মসজিদে
(প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে বেঁধে রাখল। এরপর
সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলল, ‘তোমাদের
মধ্যে আল্লাহর রাসূল কে?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার সামনেই হেলান
দিয়ে বসা ছিলেন। আমরা বললাম, ‘এই হেলান দিয়ে
বসা ফর্সা রঙের ব্যক্তিই হলেন তিনি।’ তারপর
লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বলল, ‘হে আব্দুল
মুত্তালিবের পুত্র!’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আমি
তোমার জওয়াব দিচ্ছি।’ লোকটি বলল, ‘আমি
আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব এবং সে প্রশ্ন করার
ব্যাপারে কঠোর হব, এতে আপনি রাগ করবেন
না।’ তিনি বললেন, ‘তোমার যেমন ইচ্ছা প্রশ্ন
কর।’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে আপনার রব ও আপনার
পূর্ববর্তীদের রবের কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা
করছি, আল্লাহই কি আপনাকে সব মানুষের জন্য
রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ
সাক্ষী, হ্যাঁ।’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে আল্লাহর
কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে দিন ও
রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে নির্দেশ
দিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ।
সে বলল, ‘আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে
বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে বছরের এ মাসে
(রমযান) সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন?’ তিনি
বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ সে বলল, ‘আমি
আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি
আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদের ধনীদের
থেকে সদকা (যাকাত) উসূল করে গরীবদের মধ্যে ভাগ
করে দিতে?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ এরপর
লোকটি বলল, ‘আমি ঈমান আনলাম আপনি যা (যে
শরী‘আত) এনেছেন তার ওপর। আর আমি আমার
কওমের রেখে আসা লোকজনের পক্ষে
প্রতিনিধি, আমার নাম যিমাম ইবন সা‘লাবা, বনী
সা‘দ ইবন বকর গোত্রের একজন। মূসা ও আলী ইবন
আব্দুল হামীদ রহ. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর
সূত্রেও এরূপ বর্ণনা করেছেন।” [15]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻧُﻬِﻴﻨَﺎ ﺃَﻥْ ﻧَﺴْﺄَﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻳُﻌْﺠِﺒُﻨَﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﺠِﻲﺀَ
ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺒَﺎﺩِﻳَﺔِ ﺍﻟْﻌَﺎﻗِﻞُ، ﻓَﻴَﺴْﺄَﻟَﻪُ، ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻧَﺴْﻤَﻊُ، ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺒَﺎﺩِﻳَﺔِ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ، ﺃَﺗَﺎﻧَﺎ ﺭَﺳُﻮﻟُﻚَ ﻓَﺰَﻋَﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺃَﻧَّﻚَ ﺗَﺰْﻋُﻢُ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻚَ، ﻗَﺎﻝَ : « ﺻَﺪَﻕَ »،
ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻤَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀَ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﺍﻟﻠﻪُ »، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻤَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﺍﻟﻠﻪُ »، ﻗَﺎﻝَ:
ﻓَﻤَﻦْ ﻧَﺼَﺐَ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺠِﺒَﺎﻝَ، ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣَﺎ ﺟَﻌَﻞَ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﺍﻟﻠﻪُ »، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺒِﺎﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀَ،
ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ، ﻭَﻧَﺼَﺐَ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺠِﺒَﺎﻝَ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻚَ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﻧَﻌَﻢْ »، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﺯَﻋَﻢَ ﺭَﺳُﻮﻟُﻚَ ﺃَﻥَّ
ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺧَﻤْﺲَ ﺻَﻠَﻮَﺍﺕٍ ﻓِﻲ ﻳَﻮْﻣِﻨَﺎ، ﻭَﻟَﻴْﻠَﺘِﻨَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : « ﺻَﺪَﻕَ »، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺒِﺎﻟَّﺬِﻱ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻚَ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَﻙَ
ﺑِﻬَﺬَﺍ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﻧَﻌَﻢْ »، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﺯَﻋَﻢَ ﺭَﺳُﻮﻟُﻚَ ﺃَﻥَّ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺯَﻛَﺎﺓً ﻓِﻲ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟِﻨَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : « ﺻَﺪَﻕَ »،
ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺒِﺎﻟَّﺬِﻱ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻚَ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَﻙَ ﺑِﻬَﺬَﺍ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﻧَﻌَﻢْ »، ﻗَﺎﻝَ: ﻭَﺯَﻋَﻢَ ﺭَﺳُﻮﻟُﻚَ ﺃَﻥَّ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺻَﻮْﻡَ
ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺳَﻨَﺘِﻨَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: « ﺻَﺪَﻕَ »، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺒِﺎﻟَّﺬِﻱ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻚَ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَﻙَ ﺑِﻬَﺬَﺍ؟ ﻗَﺎﻝَ:
«ﻧَﻌَﻢْ »، ﻗَﺎﻝَ: ﻭَﺯَﻋَﻢَ ﺭَﺳُﻮﻟُﻚَ ﺃَﻥَّ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺣَﺞَّ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻉَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺳَﺒِﻴﻠًﺎ، ﻗَﺎﻝَ: « ﺻَﺪَﻕَ »،
ﻗَﺎﻝَ: ﺛُﻢَّ ﻭَﻟَّﻰ، ﻗَﺎﻝَ: ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑَﻌَﺜَﻚَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ، ﻟَﺎ ﺃَﺯِﻳﺪُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ، ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻧْﻘُﺺُ ﻣِﻨْﻬُﻦَّ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: « ﻟَﺌِﻦْ ﺻَﺪَﻕَ ﻟَﻴَﺪْﺧُﻠَﻦَّ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের
নিষেধ করা হয়েছিল। তাই আমরা চাইতাম
যে, গ্রাম থেকে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে
তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর
একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, হে
মুহাম্মদ! আমাদের কাছে আপনার দূত এসে
বলেছে, আপনি দাবি করেছেন যে, আল্লাহ
আপনাকে রাসুল হিসাবে পাঠিয়েছেন। রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই
বলেছে। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি
করেছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক
বলল, জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক
বলল, এসব পর্বতমালা কে স্থাপন করেছেন এবং এর
মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি
করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, কসম
সেই সত্তার! যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন
এবং এসব পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। আল্লাহই
আপনাকে রাসুলরূপে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।
আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের ওপর
দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই
বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরূপে
পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর
নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক
বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের ওপর আমাদের
মালের যাকাত দেওয়া ফরয। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিকই
বলেছো আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরূপে
পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর
নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক
বলল, আপনার দূত বলে যে, প্রতি বছর রমযান মাসের
সাওম পালন করা আমাদের ওপর ফরয। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই
বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল
হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহ-ই কি
আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।
আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের মধ্যে
যে বায়তুল্লায় যেতে সক্ষম তার ওপর হজ ফরয।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, সত্যি বলেছে। বর্ণনাকারী বলেন
যে, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে বলল, যিনি
আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি
এর অতিরিক্তও করব না এবং এর কমও করব না। এ কথা
শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে
জান্নাতে যাবে।” [16]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺻَﺎﻡَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻓُﺮِﺽَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺗُﺮِﻙَ »،
ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻻَ ﻳَﺼُﻮﻣُﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳُﻮَﺍﻓِﻖَ ﺻَﻮْﻣَﻪُ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার
দিন সাওম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য
আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সাওম ফরয
হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সাওম পালন করতেন না, তবে
মাসের যে দিনগুলোতে সাধারণ সাওম পালন
করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।” [17]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,
ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ، : ﺃَﻥَّ ﻗُﺮَﻳْﺸًﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺗَﺼُﻮﻡُ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ، ﺛُﻢَّ ﺃَﻣَﺮَ
ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻓُﺮِﺽَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: « ﻣَﻦْ ﺷَﺎﺀَ ﻓَﻠْﻴَﺼُﻤْﻪُ ﻭَﻣَﻦْ ﺷَﺎﺀَ ﺃَﻓْﻄَﺮَ »
“জাহেলী যুগে কুরাইশগণ ‘আশুরার দিন সাওম পালন
করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামও পরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন।
অবশেষে রমযানের সাওম ফরয হলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার
ইচ্ছা ‘আশুরার সাওম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে
সাওম পালন করবে না।” [18]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ " ﺑُﻨِﻲَ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻰ ﺧَﻤْﺲٍ: ﺷَﻬَﺎﺩَﺓِ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ
ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﺇِﻗَﺎﻡِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ، ﻭَﺇِﻳﺘَﺎﺀِ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ، ﻭَﺍﻟﺤَﺞِّ، ﻭَﺻَﻮْﻡِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ »
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। আল্লাহ ছাড়া
কোনো ইলাহ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল
-এ কথার সাক্ষ্য দান, সালাত কায়েম করা, যাকাত
দেওয়া, হজ করা এবং রমযানের সাওম পালন
করা।”[19]
আবু জামরা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﻗْﻌُﺪُ ﻣَﻊَ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻳُﺠْﻠِﺴُﻨِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺳَﺮِﻳﺮِﻩِ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﻗِﻢْ ﻋِﻨْﺪِﻱ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﺟْﻌَﻞَ ﻟَﻚَ ﺳَﻬْﻤًﺎ
ﻣِﻦْ ﻣَﺎﻟِﻲ ﻓَﺄَﻗَﻤْﺖُ ﻣَﻌَﻪُ ﺷَﻬْﺮَﻳْﻦِ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﻭَﻓْﺪَ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻘَﻴْﺲِ ﻟَﻤَّﺎ ﺃَﺗَﻮُﺍ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ: «ﻣَﻦِ ﺍﻟﻘَﻮْﻡُ؟ - ﺃَﻭْ ﻣَﻦِ ﺍﻟﻮَﻓْﺪُ؟ - » ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﺭَﺑِﻴﻌَﺔُ. ﻗَﺎﻝَ : «ﻣَﺮْﺣَﺒًﺎ
ﺑِﺎﻟﻘَﻮْﻡِ، ﺃَﻭْ ﺑِﺎﻟﻮَﻓْﺪِ، ﻏَﻴْﺮَ ﺧَﺰَﺍﻳَﺎ ﻭَﻻَ ﻧَﺪَﺍﻣَﻰ »، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻧَّﺎ ﻻَ ﻧَﺴْﺘَﻄِﻴﻊُ ﺃَﻥْ
ﻧَﺄْﺗِﻴﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮِ ﺍﻟﺤَﺮَﺍﻡِ، ﻭَﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻚَ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺤَﻲُّ ﻣِﻦْ ﻛُﻔَّﺎﺭِ ﻣُﻀَﺮَ، ﻓَﻤُﺮْﻧَﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮٍ ﻓَﺼْﻞٍ،
ﻧُﺨْﺒِﺮْ ﺑِﻪِ ﻣَﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀَﻧَﺎ، ﻭَﻧَﺪْﺧُﻞْ ﺑِﻪِ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ، ﻭَﺳَﺄَﻟُﻮﻩُ ﻋَﻦِ ﺍﻷَﺷْﺮِﺑَﺔِ: ﻓَﺄَﻣَﺮَﻫُﻢْ ﺑِﺄَﺭْﺑَﻊٍ، ﻭَﻧَﻬَﺎﻫُﻢْ ﻋَﻦْ
ﺃَﺭْﺑَﻊٍ، ﺃَﻣَﺮَﻫُﻢْ: ﺑِﺎﻹِﻳﻤَﺎﻥِ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺣْﺪَﻩُ، ﻗَﺎﻝَ: «ﺃَﺗَﺪْﺭُﻭﻥَ ﻣَﺎ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥُ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺣْﺪَﻩُ » ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﺍﻟﻠَّﻪُ
ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ، ﻗَﺎﻝَ: « ﺷَﻬَﺎﺩَﺓُ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﺇِﻗَﺎﻡُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ،
ﻭَﺇِﻳﺘَﺎﺀُ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ، ﻭَﺻِﻴَﺎﻡُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺃَﻥْ ﺗُﻌْﻄُﻮﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻤَﻐْﻨَﻢِ ﺍﻟﺨُﻤُﺲَ » ﻭَﻧَﻬَﺎﻫُﻢْ ﻋَﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ: ﻋَﻦِ
ﺍﻟﺤَﻨْﺘَﻢِ ﻭَﺍﻟﺪُّﺑَّﺎﺀِ ﻭَﺍﻟﻨَّﻘِﻴﺮِ ﻭَﺍﻟﻤُﺰَﻓَّﺖِ "، ﻭَﺭُﺑَّﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ: «ﺍﻟﻤُﻘَﻴَّﺮِ » ﻭَﻗَﺎﻝَ: «ﺍﺣْﻔَﻈُﻮﻫُﻦَّ ﻭَﺃَﺧْﺒِﺮُﻭﺍ
ﺑِﻬِﻦَّ ﻣَﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀَﻛُﻢْ »
“আমি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সঙ্গে
বসতাম। তিনি আমাকে তাঁর আসনে বসাতেন।
একবার তিনি বললেন, তুমি আমার কাছে থেকে
যাও, আমি তোমাকে আমার সম্পদ থেকে কিছু অংশ
দেব। আমি দু’মাস তাঁর সঙ্গে অবস্থান করলাম।
তারপর একদিন তিনি বললেন, আব্দুল কায়েসের
একটি প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলে তিনি
জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোন কওমের? অথবা
কোন প্রতিনিধি দলের? তারা বলল, রাবী‘আ
গোত্রের।’ তিনি বললেন, মারহাবা সে গোত্র বা
সে প্রতিনিধি দলের প্রতি, যারা অপদস্থ ও লজ্জিত
না হয়েই এসেছে। তারা বলল, ইয়া
রাসূলুল্লহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
নিষিদ্ধ মাসসমূহ ছাড়া অন্য কোনো সময় আমরা
আপনার কাছে আসতে পারি না। (কারণ) আমাদের
এবং আপনার মাঝখানে মুদার গোত্রীয় কাফিরদের
বসবাস। তাই আমাদের কিছু স্পষ্ট হুকুম দিন, যাতে
আমরা যাদের পিছনে রেখে এসেছি তাদের
জানিয়ে দিতে পারি এবং যাতে আমরা জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারি। তারা পানীয় সম্পর্কেও
জিজ্ঞাসা করল। তখন তিনি তাদের চারটি
জিনিসের নির্দেশ এবং চারটি জিনিস থেকে
নিষেধ করলেন। তাদের এক আল্লাহর প্রতি ঈমান
আনার আদেশ দিয়ে বললেন, ‘এক আল্লাহ্ প্রতি
ঈমান আনা কিভাবে হয় তা কি তোমরা
জান?’ তাঁরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল
জানেন।’ তিনি বললেন, ‘তা হলো এ সাক্ষ্য দেওয়া
যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল
এবং সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রমযানের
সাওম পালন করা আর তোমরা গণীমতের মাল থেকে
এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। তিনি তাদেরকে
চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তা হলো সবুজ
কলসী, শুকনো লাউয়ের খোল, খেজুর গাছের গুঁড়ি
থেকে তৈরিকৃত পাত্র এবং আলকাতরার পালিশকৃত
পাত্র। বর্ণনাকারী বলেন, বর্ণনাকারী ( ﺍﻟﻤُﺰَﻓَّﺖِ এর
স্থলে) কখনও ﺍﻟﻤُﻘَﻴَّﺮِ উল্লেখ করেছেন (উভয় শব্দের অর্থ
একই)। তিনি আরো বলেন, তোমরা এগুলো ভালো
করে আয়ত্ত করে নাও এবং অন্যদেরও এগুলি জানিয়ে
দিও।”[20]
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন
যে,
« ﺃَﻥَّ ﺃُﻧَﺎﺳًﺎ ﻣِﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻘَﻴْﺲِ ﻗَﺪِﻣُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﻳَﺎ
ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧَّﺎ ﺣَﻲٌّ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِﻴﻌَﺔَ، ﻭَﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻚَ ﻛُﻔَّﺎﺭُ ﻣُﻀَﺮَ، ﻭَﻟَﺎ ﻧَﻘْﺪِﺭُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺃَﺷْﻬُﺮِ
ﺍﻟْﺤُﺮُﻡِ، ﻓَﻤُﺮْﻧَﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮٍ ﻧَﺄْﻣُﺮُ ﺑِﻪِ ﻣَﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀَﻧَﺎ، ﻭَﻧَﺪْﺧُﻞُ ﺑِﻪِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﺇِﺫَﺍ ﻧَﺤْﻦُ ﺃَﺧَﺬْﻧَﺎ ﺑِﻪِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: " ﺁﻣُﺮُﻛُﻢْ ﺑِﺄَﺭْﺑَﻊٍ، ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﻛُﻢْ ﻋَﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ: ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻛُﻮﺍ
ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻭَﺃَﻗِﻴﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ، ﻭَﺁﺗُﻮﺍ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ، ﻭَﺻُﻮﻣُﻮﺍ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ »
“আব্দুল কায়স গোত্রের কয়েকজন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে
উপস্থিত হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর নবী! আমরা
রাবী’আ গোত্রের লোক। আপনার ও আমাদের
মধ্যবতী যাতায়াত পথে মুদার গোত্রের কাফিররা
অবস্থান করায় ‘হারাম মাস’ ছাড়া আমরা আপনার
কাছে আসতে পারি না। অতএব, আপনি আমাদের
এমন কাজের আদেশ দিন, আমাদের যারা আসে নি
তাদের জানাতে পারি এবং যা পালন করে আমরা
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমাদের চারটি বিষয় পালনের এবং
চারটি বিষয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিচ্ছি।
পালনীয় চারটি বিষয় হলো, তোমরা আল্লাহর
ইবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে
না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রমযানের
সাওম পালন করবে এবং গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ
প্রদান করবে।” [21]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﺎﺭِﺯًﺍ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ، ﻓَﺄَﺗَﺎﻩُ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻣَﺎ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥُ؟
ﻗَﺎﻝَ: «ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥُ ﺃَﻥْ ﺗُﺆْﻣِﻦَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﻼَﺋِﻜَﺘِﻪِ، ﻭَﻛُﺘُﺒِﻪِ، ﻭَﺑِﻠِﻘَﺎﺋِﻪِ، ﻭَﺭُﺳُﻠِﻪِ ﻭَﺗُﺆْﻣِﻦَ ﺑِﺎﻟْﺒَﻌْﺚِ » . ﻗَﺎﻝَ:
ﻣَﺎ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡُ؟ ﻗَﺎﻝَ: " ﺍﻹِﺳْﻼَﻡُ : ﺃَﻥْ ﺗَﻌْﺒُﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪَ، ﻭَﻻَ ﺗُﺸْﺮِﻙَ ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻭَﺗُﻘِﻴﻢَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ، ﻭَﺗُﺆَﺩِّﻱَ
ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ ﺍﻟﻤَﻔْﺮُﻭﺿَﺔَ، ﻭَﺗَﺼُﻮﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ." ﻗَﺎﻝَ: ﻣَﺎ ﺍﻹِﺣْﺴَﺎﻥُ؟ ﻗَﺎﻝَ: « ﺃَﻥْ ﺗَﻌْﺒُﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺄَﻧَّﻚَ
ﺗَﺮَﺍﻩُ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ ﺗَﺮَﺍﻩُ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳَﺮَﺍﻙَ »، ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺘَﻰ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ؟ ﻗَﺎﻝَ: " ﻣَﺎ ﺍﻟﻤَﺴْﺌُﻮﻝُ ﻋَﻨْﻬَﺎ
ﺑِﺄَﻋْﻠَﻢَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﺎﺋِﻞِ، ﻭَﺳَﺄُﺧْﺒِﺮُﻙَ ﻋَﻦْ ﺃَﺷْﺮَﺍﻃِﻬَﺎ: ﺇِﺫَﺍ ﻭَﻟَﺪَﺕِ ﺍﻷَﻣَﺔُ ﺭَﺑَّﻬَﺎ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺗَﻄَﺎﻭَﻝَ ﺭُﻋَﺎﺓُ
ﺍﻹِﺑِﻞِ ﺍﻟﺒُﻬْﻢُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺒُﻨْﻴَﺎﻥِ، ﻓِﻲ ﺧَﻤْﺲٍ ﻻَ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ " ﺛُﻢَّ ﺗَﻼَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻋِﻨﺪَﻩُۥ ﻋِﻠۡﻢُ ﭐﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ﴾ [ ﻟﻘﻤﺎﻥ : ٣٤]، ﺛُﻢَّ ﺃَﺩْﺑَﺮَ ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﺭُﺩُّﻭﻩُ » ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺮَﻭْﺍ
ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: «ﻫَﺬَﺍ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﺟَﺎﺀَ ﻳُﻌَﻠِّﻢُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺩِﻳﻨَﻬُﻢْ » ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ: ﺟَﻌَﻞَ ﺫَﻟِﻚَ ﻛُﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ
ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥِ »
“একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জনসমক্ষে বসা ছিলেন, এমন সময় তাঁর
কাছে এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন ‘ঈমান
কী?’ তিনি বললেন, ‘ঈমান হলো, আপনি বিশ্বাস
রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের
প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের
প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো
বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি।’ তিনি
জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলাম কী?’ তিনি
বললেন, ‘ইসলাম হলো, আপনি আল্লাহর ইবাদত
করবেন এবং তাঁর সঙ্গে শরীক করবেন না, সালাত
কায়েম করবেন, ফরয যাকাত আদায় করবেন এবং
রমযানের সাওম পালন করবেন।’ ঐ ব্যক্তি
জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইহসান কী?’ তিনি
বললেন, ‘আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন
যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে
দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে) তিনি
আপনাকে দেখছেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন,
‘কিয়ামত কবে?’ তিনি বললেন, ‘এ ব্যাপারে যাকে
জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসাকারী
অপেক্ষা বেশি জানেন না। তবে আমি আপনাকে
কিয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছি: বাঁদী যখন
তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা
যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা
করবে। (কিয়ামতের বিষয়) সেই পাঁচটি জিনিসের
অন্তর্ভূক্ত, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’ এরপর
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই
আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন,
﴿ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻋِﻨﺪَﻩُۥ ﻋِﻞۡﻡُ ﭐﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ﴾ [ ﻟﻘﻤﺎﻥ: ٣٤]
“কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহই নিকট..।” [সূরা
লুকমান, আয়াত: ৩৪], এরপর ঐ ব্যক্তি চলে গেলে
তিনি বললেন, ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন।’ তারা
কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি
জিবরীল আলাইহিস সালাম। লোকদের দীন
শেখাতে এসেছিলেন।” [22]
রমযান ও সাওমের ফযীলত
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ ﻓَﻼَ ﻳَﺮْﻓُﺚْ ﻭَﻻَ ﻳَﺠْﻬَﻞْ، ﻭَﺇِﻥِ ﺍﻣْﺮُﺅٌ ﻗَﺎﺗَﻠَﻪُ ﺃَﻭْ ﺷَﺎﺗَﻤَﻪُ ﻓَﻠْﻴَﻘُﻞْ: ﺇِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ
ﻣَﺮَّﺗَﻴْﻦِ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻟَﺨُﻠُﻮﻑُ ﻓَﻢِ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢِ ﺃَﻃْﻴَﺐُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻣِﻦْ ﺭِﻳﺢِ
ﺍﻟﻤِﺴْﻚِ » « ﻳَﺘْﺮُﻙُ ﻃَﻌَﺎﻣَﻪُ ﻭَﺷَﺮَﺍﺑَﻪُ ﻭَﺷَﻬْﻮَﺗَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﻠِﻲ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻟِﻲ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺟْﺰِﻱ ﺑِﻪِ ﻭَﺍﻟﺤَﺴَﻨَﺔُ
ﺑِﻌَﺸْﺮِ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ »
“সাওম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং
মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে
ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই
বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার
শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম
পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের
গন্ধের চেয়েও উৎকৃষ্ট। সে আমার জন্য আহার, পান ও
কামাচার পরিত্যাগ করে। সাওম আমারই জন্য। তাই
এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক
নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ”। [23]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻓُﺘِّﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ، ﻭَﻏُﻠِّﻘَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻭَﺻُﻔِّﺪَﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦُ »
“যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ
উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ
বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলে
বন্দী করা হয়”। [24]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻓُﺘِّﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ، ﻭَﻏُﻠِّﻘَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ، ﻭَﺳُﻠْﺴِﻠَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦُ »
“রমযান মাস আসলে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত
করে দেওয়া হয়, জাহান্নমের দরজাসমূহ বন্ধ করে
দেওয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলে বন্দী করা
হয়”। [25]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরও
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻭَّﻝُ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺻُﻔِّﺪَﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦُ، ﻭَﻣَﺮَﺩَﺓُ ﺍﻟﺠِﻦِّ، ﻭَﻏُﻠِّﻘَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ
ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﻔْﺘَﺢْ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺑَﺎﺏٌ، ﻭَﻓُﺘِّﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ، ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﻐْﻠَﻖْ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺑَﺎﺏٌ، ﻭَﻳُﻨَﺎﺩِﻱ ﻣُﻨَﺎﺩٍ: ﻳَﺎ
ﺑَﺎﻏِﻲَ ﺍﻟﺨَﻴْﺮِ ﺃَﻗْﺒِﻞْ، ﻭَﻳَﺎ ﺑَﺎﻏِﻲَ ﺍﻟﺸَّﺮِّ ﺃَﻗْﺼِﺮْ، ﻭَﻟِﻠَّﻪِ ﻋُﺘَﻘَﺎﺀُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻭَﺫَﻟﻚَ ﻛُﻞُّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ».
“শয়তান ও দুষ্ট জিন্নদেরকে রমযান মাসের প্রথম
রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের
দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং এর একটি দরজাও তখন
আর খোলা হয় না, খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের
দরজাগুলো এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা
হয় না। (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে
থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে
পাপাসক্ত! বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ
তা‘আলার পক্ষ থেকে এ মাসে জাহান্নাম থেকে
মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ
থেকে থাকে।” [26]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﺃَﺗَﺎﻛُﻢْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺷَﻬْﺮٌ ﻣُﺒَﺎﺭَﻙٌ ﻓَﺮَﺽَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺻِﻴَﺎﻣَﻪُ، ﺗُﻔْﺘَﺢُ ﻓِﻴﻪِ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ،
ﻭَﺗُﻐْﻠَﻖُ ﻓِﻴﻪِ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟْﺠَﺤِﻴﻢِ، ﻭَﺗُﻐَﻞُّ ﻓِﻴﻪِ ﻣَﺮَﺩَﺓُ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦِ، ﻟِﻠَّﻪِ ﻓِﻴﻪِ ﻟَﻴْﻠَﺔٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻟْﻒِ ﺷَﻬْﺮٍ،
ﻣَﻦْ ﺣُﺮِﻡَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ ﻓَﻘَﺪْ ﺣُﺮِﻡَ »
“তোমাদের নিকট রমযান উপস্থিত হয়েছে, যা
একটি বরকতময় মাস। তোমাদের ওপরে আল্লাহ
তা‘আলা অত্র মাসের সাওম ফরয করেছেন। এ মাস
আগমনের কারণে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া
হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া
হয়, আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার
বেড়ী পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক
হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সে
রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত
বঞ্চিত রয়ে গেল।” [27]
ওয়াসিলা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ﺃُﻧْﺰِﻟَﺖْ ﺻُﺤُﻒُ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﺃَﻭَّﻝَ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺃُﻧْﺰِﻟَﺖِ ﺍﻟﺘَّﻮْﺭَﺍﺓُ ﻟِﺴِﺖٍّ ﻣَﻀَﻴْﻦَ ﻣِﻦْ
ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺍﻟْﺈِﻧْﺠِﻴﻞُ ﻟِﺜَﻠَﺎﺙَ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﻣَﻀَﺖْ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺍﻟﺰَّﺑُﻮﺭُ ﻟِﺜَﻤَﺎﻥَ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﺧَﻠَﺖْ
ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻟِﺄَﺭْﺑَﻊٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺧَﻠَﺖْ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ »
“রমযানের প্রথম রাত্রিতে ইবরাহীম আলাইহিস
সালামের ওপর সহীফা নাযিল হয়, রমযানের ছয় দিন
অতিবাহিত হলে (মূসা আলাইহিস সালামের ওপর)
তাওরাত নাযিল হয়, তের রমযান শেষে (ঈসা
আলাইহিস সালামের ওপর) ইঞ্জিল নাযিল হয়,
আঠারো রমযান শেষ হলে (দাউদ আলাইহিস
সালামের ওপর) যাবুর নাযিল হয় এবং চব্বিশ রমযান
শেষে (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ওপর) কুরআন নাযিল হয়।” [28]
কা‘ব ইবন উজরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একবার বললেন,
«ﺍﺣْﻀَﺮُﻭﺍ ﺍﻟْﻤِﻨْﺒَﺮَ ﻓَﺤَﻀَﺮْﻧَﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺍﺭْﺗَﻘَﻰ ﺩَﺭَﺟَﺔً ﻗَﺎﻝَ : ﺁﻣِﻴﻦَ ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺍﺭْﺗَﻘَﻰ ﺍﻟﺪَّﺭَﺟَﺔَ ﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻴَﺔَ
ﻗَﺎﻝَ: «ﺁﻣِﻴﻦَ » ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺍﺭْﺗَﻘَﻰ ﺍﻟﺪَّﺭَﺟَﺔَ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔَ ﻗَﺎﻝَ: ﺁﻣِﻴﻦَ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻧَﺰَﻝَ ﻗُﻠْﻨَﺎ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻘَﺪْ
ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﻣِﻨْﻚَ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻣَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﺴْﻤَﻌُﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻋَﺮَﺽَ ﻟِﻲ
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺑُﻌْﺪًﺍ ﻟِﻤَﻦْ ﺃَﺩْﺭَﻙَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻐْﻔَﺮْ ﻟَﻪُ ﻗُﻠْﺖُ: ﺁﻣِﻴﻦَ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﻗِﻴﺖُ ﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻴَﺔَ ﻗَﺎﻝَ: ﺑُﻌْﺪًﺍ
ﻟِﻤَﻦْ ﺫُﻛِﺮْﺕُ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻗُﻠْﺖُ : ﺁﻣِﻴﻦَ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﻗِﻴﺖُ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔَ ﻗَﺎﻝَ : ﺑُﻌْﺪًﺍ ﻟِﻤَﻦْ ﺃَﺩْﺭَﻙَ
ﺃَﺑَﻮَﺍﻩُ ﺍﻟْﻜِﺒَﺮَ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﺃَﻭْ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻤَﺎ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺪْﺧِﻠَﺎﻩُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻗُﻠْﺖُ: ﺁﻣِﻴﻦَ »
“তোমরা মিম্বার নিয়ে আসো, ফলে আমরা
মিম্বার নিয়ে আসলাম। যখন তিনি মিম্বারের
প্রথম সিঁড়িতে উঠলেন, বললেন, আমীন। দ্বিতীয়
সিঁড়িতে উঠে আবার বললেন, আমীন। অনুরূ পভাবে
তৃতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। তিনি
মিম্বার থেকে নেমে আসলে আমরা জিজ্ঞেস
করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে আমরা
আজ যা শুনলাম ইতোপূর্বে কখনও এরূপ শুনি নি।
তিনি বললেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম আমার
কাছে আসলেন, তিনি বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস
হোক যে রমযান পেলো অথচ নিজের গুনাহ মাফ
করাতে পারল না, আমি বললাম, আমীন। আমি যখন
দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠলাম জিবরীল আলাইহিস
সালাম বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার কাছে
আপনার নাম উল্লেখ করা হলো অথচ সে আপনার ওপর
দুরুদ ও সালাম পেশ করল না। আমি বললাম, আমীন।
আবার আমি যখন তৃতীয় সিঁড়িতে উঠলাম তখন
জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, সে ব্যক্তি
ধ্বংস হোক যে বৃদ্ধ অবস্থায় তার পিতামাতা
দু’জনকে বা একজনকে পেল অথচ তাদের সেবা যত্ন
করে জান্নাতে যেতে পারল না। আমি বললাম,
আমীন।”[29]
মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨْﺖُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ، ﻓَﺄَﺻْﺒَﺤْﺖُ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻗَﺮِﻳﺒًﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻧَﺴِﻴﺮُ،
ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻲ ﺑِﻌَﻤَﻞٍ ﻳُﺪْﺧِﻠُﻨِﻲ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﻳُﺒَﺎﻋِﺪُﻧِﻲ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﻘَﺪْ
ﺳَﺄَﻟْﺘَﻨِﻲ ﻋَﻦْ ﻋَﻈِﻴﻢٍ، ﻭَﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻴَﺴِﻴﺮٌ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻦْ ﻳَﺴَّﺮَﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﺗَﻌْﺒُﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻻَ ﺗُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ،
ﻭَﺗُﻘِﻴﻢُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ، ﻭَﺗُﺆْﺗِﻲ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ، ﻭَﺗَﺼُﻮﻡُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺗَﺤُﺞُّ ﺍﻟﺒَﻴْﺖَ , ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻻَ ﺃَﺩُﻟُّﻚَ ﻋَﻠَﻰ
ﺃَﺑْﻮَﺍﺏِ ﺍﻟﺨَﻴْﺮِ : ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ، ﻭَﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔُ ﺗُﻄْﻔِﺊُ ﺍﻟﺨَﻄِﻴﺌَﺔَ ﻛَﻤَﺎ ﻳُﻄْﻔِﺊُ ﺍﻟْﻤَﺎﺀُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ، ﻭَﺻَﻼَﺓُ
ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻣِﻦْ ﺟَﻮْﻑِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻗَﺎﻝَ: ﺛُﻢَّ ﺗَﻼَ ﴿ ﺗَﺘَﺠَﺎﻓَﻰٰ ﺟُﻨُﻮﺑُﻬُﻢۡ ﻋَﻦِ ﭐﻟۡﻤَﻀَﺎﺟِﻊِ﴾ [ ﺍﻟﺴﺠﺪﺓ:
١٦] ﺣَﺘَّﻰ ﺑَﻠَﻎَ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ , ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻻَ ﺃُﺧْﺒِﺮُﻙَ ﺑِﺮَﺃْﺱِ ﺍﻷَﻣْﺮِ ﻛُﻠِّﻪِ ﻭَﻋَﻤُﻮﺩِﻩِ، ﻭَﺫِﺭْﻭَﺓِ ﺳَﻨَﺎﻣِﻪِ؟
ﻗُﻠْﺖُ: ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻗَﺎﻝَ: ﺭَﺃْﺱُ ﺍﻷَﻣْﺮِ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡُ، ﻭَﻋَﻤُﻮﺩُﻩُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ، ﻭَﺫِﺭْﻭَﺓُ ﺳَﻨَﺎﻣِﻪِ
ﺍﻟﺠِﻬَﺎﺩُ , ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻻَ ﺃُﺧْﺒِﺮُﻙَ ﺑِﻤَﻼَﻙِ ﺫَﻟِﻚَ ﻛُﻠِّﻪِ؟ ﻗُﻠْﺖُ: ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎ ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻓَﺄَﺧَﺬَ ﺑِﻠِﺴَﺎﻧِﻪِ ﻗَﺎﻝَ:
ﻛُﻒَّ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻫَﺬَﺍ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﻳَﺎ ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻭَﺇِﻧَّﺎ ﻟَﻤُﺆَﺍﺧَﺬُﻭﻥَ ﺑِﻤَﺎ ﻧَﺘَﻜَﻠَّﻢُ ﺑِﻪِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺛَﻜِﻠَﺘْﻚَ ﺃُﻣُّﻚَ ﻳَﺎ
ﻣُﻌَﺎﺫُ، ﻭَﻫَﻞْ ﻳَﻜُﺐُّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻋَﻠَﻰ ﻭُﺟُﻮﻫِﻬِﻢْ ﺃَﻭْ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻨَﺎﺧِﺮِﻫِﻢْ ﺇِﻻَّ ﺣَﺼَﺎﺋِﺪُ ﺃَﻟْﺴِﻨَﺘِﻬِﻢْ ».
“আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। একদিন
চলার সময় আমি তাঁর নিকটবর্তী হয়ে গেলাম। আমি
বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি
‘আমল সম্পর্কে অবহিত করুন যা আমাকে জান্নাতে
দাখিল করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে
দিবে। তিনি বললেন, তুমি তো বিরাট একটা বিষয়ে
আমাকে জিজ্ঞাসা করলে। তবে আল্লাহ তা‘আলা
যার জন্য তা সহজ করে দেন তার জন্য বিষয়টি অবশ্য
সহজ। আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কোনো
কিছু শরীক করবে না। সালাত কায়েম করবে, যাকাত
প্রদান করবে, রমযানের সাওম পালন
করবে, বায়তুল্লাহর হজ করবে। এরপর তিনি
বললেন, সব কল্যাণের দ্বার (দরজা) সম্পর্কে কি
আমি তোমাকে দিক-নির্দেশনা দিব? সাওম হলো
ঢালস্বরূপ, পানি যেমন আগুন নিভিয়ে দেয় তেমনি
সদকাও গুনাহসমূহকে নিশ্চিহ্ন করে দেয় আর হলো
মধ্য রাতের সালাত। এরপর তিনি তিলাওয়াত
করলেন,
﴿ ﺗَﺘَﺠَﺎﻓَﻰٰ ﺟُﻨُﻮﺑُﻬُﻢۡ ﻋَﻦِ ﭐﻟۡﻤَﻀَﺎﺟِﻊِ﴾ [ ﺍﻟﺴﺠﺪﺓ: ١٦]
“তারা (মুমিনরা গভীর রাতে) শয্যা ত্যাগ
করে।” [সূরা আস-সাজদা, আয়াত: ১৬] তারপর
বললেন, তোমাকে এই সব কিছুর মাথা ও বুনিয়াদ
এবং সর্বোচ্চ শীর্ষদেশ স্বরূপ আমল সম্পর্কে অবহিত
করব কি? এরপর বললেন, অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
তিনি বললেন, সব কিছুর মাথা হলো
ইসলাম, বুনিয়াদ হলো সালাত আর সর্বোচ্চ শীর্ষ
হলো জিহাদ। এরপর বললেন, এ সব কিছুর মূল পুঁজি
সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করব কি? আমি বললাম,
অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি তাঁর জিহ্বা ধরে
বললেন, এটিকে সংযত রাখ। আমি বললাম, হে
আল্লাহর নবী, আমরা যে কথাবার্তা বলি সে
কারণেও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? তিনি
বললেন, তোমাদের মা তোমাকে হারিয়ে
ফেলুক, হে মু‘আয! লোকদের অধঃমুখে জাহান্নামে
নিক্ষিপ্ত হওয়ার জন্য এ যবানের কামাই ছাড়া আর
কি কিছু আছে নাকি?” [30]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ﻣَﻦْ ﺁﻣَﻦَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺑِﺮَﺳُﻮﻟِﻪِ، ﻭَﺃَﻗَﺎﻡَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ، ﻭَﺻَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﻘًّﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻥْ ﻳُﺪْﺧِﻠَﻪُ
ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ، ﺟَﺎﻫَﺪَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻭْ ﺟَﻠَﺲَ ﻓِﻲ ﺃَﺭْﺿِﻪِ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻭُﻟِﺪَ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ،
ﺃَﻓَﻼَ ﻧُﺒَﺸِّﺮُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﻓِﻲ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ ﻣِﺎﺋَﺔَ ﺩَﺭَﺟَﺔٍ، ﺃَﻋَﺪَّﻫَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻠْﻤُﺠَﺎﻫِﺪِﻳﻦَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ
ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﺪَّﺭَﺟَﺘَﻴْﻦِ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻭَﺍﻷَﺭْﺽِ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺳَﺄَﻟْﺘُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪَ، ﻓَﺎﺳْﺄَﻟُﻮﻩُ ﺍﻟﻔِﺮْﺩَﻭْﺱَ،
ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺃَﻭْﺳَﻂُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ ﻭَﺃَﻋْﻠَﻰ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ - ﺃُﺭَﺍﻩُ - ﻓَﻮْﻗَﻪُ ﻋَﺮْﺵُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ، ﻭَﻣِﻨْﻪُ ﺗَﻔَﺠَّﺮُ ﺃَﻧْﻬَﺎﺭُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ »
ﻗَﺎﻝَ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻓُﻠَﻴْﺢٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ : ﻭَﻓَﻮْﻗَﻪُ ﻋَﺮْﺵُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ »
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যে ঈমান
আনল, সালাত আদায় করল ও রমযানের সাওম পালন
করল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয়
জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাতে প্রবেশ
করিয়ে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়।
সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি
লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি
বলেন, আল্লাহর পথে মুজাহিদদের জন্য আল্লাহ
তা‘আলা জান্নাতে একশটি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত
রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও জমিনের
দুরত্বের ন্যায়। তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে
ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হলো সবচেয়ে
উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আমার মনে
হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এ-ও বলেছেন, এর উপরে রয়েছে ‘আরশে রহমান। আর
সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইবন ফুলাইহ্ রহ. তাঁর পিতার সূত্রে
(নিঃসন্দেহে) বলেন, এর উপরে রয়েছে ‘আরশে
রহমান।” [31]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
«ﻗَﺪِﻡَ ﻭَﻓْﺪُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻘَﻴْﺲِ ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺇِﻧَّﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺤَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِﻴﻌَﺔَ، ﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻚَ ﻛُﻔَّﺎﺭُ
ﻣُﻀَﺮَ، ﻓَﻠَﺴْﻨَﺎ ﻧَﺼِﻞُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮِ ﺍﻟﺤَﺮَﺍﻡِ، ﻓَﻤُﺮْﻧَﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮٍ ﻧَﺄْﺧُﺬُ ﺑِﻪِ ﻭَﻧَﺪْﻋُﻮ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣَﻦْ
ﻭَﺭَﺍﺀَﻧَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: " ﺁﻣُﺮُﻛُﻢْ ﺑِﺄَﺭْﺑَﻊٍ، ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﻛُﻢْ ﻋَﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ، ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥِ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ: ﺷَﻬَﺎﺩَﺓِ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ
ﺍﻟﻠَّﻪُ، - ﻭَﻋَﻘَﺪَ ﺑِﻴَﺪِﻩِ - ﻭَﺇِﻗَﺎﻡِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ، ﻭَﺇِﻳﺘَﺎﺀِ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ، ﻭَﺻِﻴَﺎﻡِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺃَﻥْ ﺗُﺆَﺩُّﻭﺍ ﻟِﻠَّﻪِ ﺧُﻤُﺲَ
ﻣَﺎ ﻏَﻨِﻤْﺘُﻢْ، ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﻛُﻢْ: ﻋَﻦِ ﺍﻟﺪُّﺑَّﺎﺀِ، ﻭَﺍﻟﻨَّﻘِﻴﺮِ، ﻭَﺍﻟﺤَﻨْﺘَﻢِ، ﻭَﺍﻟﻤُﺰَﻓَّﺖِ »
“আব্দুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে
বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা রাবী‘আ গোত্রের
একটি উপদল। আপনার ও আমাদের মাঝে মুদার
(কাফির) গোত্রের বসবাস। তাই আমরা আপনার
নিকট নিষিদ্ধ মাসসমূহ ব্যতীত অন্য সময় আসতে
পারি না। কাজেই আপনি আমাদের এমন কাজের
আদেশ করুন, যার ওপর আমরা আমল করব এবং
আমাদের পশ্চাতে যারা রয়ে গেছে, তাদে কেও তা
আমল করতে আহবান জানাবো। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি
তোমদেরকে চারটি কাজের আদেশ করছি এবং
চারটি কাজ থেকে নিষেধ করছি। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের অঙ্গুলে
তা গণনা করে বলেন, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি
ঈমান আন। আর তা হচ্ছে এ সাক্ষ্য দান করা
যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই আর
সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দান করা, রমযান
মাসে সাওম পালন করা এবং আল্লাহর জন্য গনীমাত
লব্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ আদায় করা। আর আমি
তোমাদের শুল্ক লাউয়ের খোলে তৈরি পাত্র, খেজুর
গাছের মূল দ্বারা তৈরি পাত্র, সবুজ
মটকা, আলকাতরা প্রলিপ্ত মটকা ব্যবহার করতে
নিষেধ করছি।” [32]
আল্লাহর রাস্তায় সাওমের ফযীলত
আবু সঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺑَﻌَّﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﺳَﺒْﻌِﻴﻦَ ﺧَﺮِﻳﻔًﺎ »
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও সাওম পালন
করে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে (অর্থাৎ তাকে)
জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে
সরিয়ে নেন।” [33]
সাওম গুনাহের কাফফারা
হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻗَﺎﻝَ ﻋُﻤَﺮُ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻣَﻦْ ﻳَﺤْﻔَﻆُ ﺣَﺪِﻳﺜًﺎ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ
ﺍﻟﻔِﺘْﻨَﺔِ؟ ﻗَﺎﻝَ ﺣُﺬَﻳْﻔَﺔُ ﺃَﻧَﺎ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻪُ ﻳَﻘُﻮﻝُ: « ﻓِﺘْﻨَﺔُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻓِﻲ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﻭَﻣَﺎﻟِﻪِ ﻭَﺟَﺎﺭِﻩِ، ﺗُﻜَﻔِّﺮُﻫَﺎ
ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻭَﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻭَﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔُ »، ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﻴْﺲَ ﺃَﺳْﺄَﻝُ ﻋَﻦْ ﺫِﻩِ، ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﺳْﺄَﻝُ ﻋَﻦِ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗَﻤُﻮﺝُ ﻛَﻤَﺎ
ﻳَﻤُﻮﺝُ ﺍﻟﺒَﺤْﺮُ، ﻗَﺎﻝَ: ﻭَﺇِﻥَّ ﺩُﻭﻥَ ﺫَﻟِﻚَ ﺑَﺎﺑًﺎ ﻣُﻐْﻠَﻘًﺎ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻴُﻔْﺘَﺢُ ﺃَﻭْ ﻳُﻜْﺴَﺮُ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻳُﻜْﺴَﺮُ، ﻗَﺎﻝَ:
ﺫَﺍﻙَ ﺃَﺟْﺪَﺭُ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳُﻐْﻠَﻖَ ﺇِﻟَﻰ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ، ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ ﻟِﻤَﺴْﺮُﻭﻕٍ: ﺳَﻠْﻪُ ﺃَﻛَﺎﻥَ ﻋُﻤَﺮُ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﻦِ
ﺍﻟﺒَﺎﺏُ؟ ﻓَﺴَﺄَﻟَﻪُ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻧَﻌَﻢْ، ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻥَّ ﺩُﻭﻥَ ﻏَﺪٍ ﺍﻟﻠَّﻴْﻠَﺔَ »
“একদিন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ফিতনা
সম্পর্কিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের হাদীসটি কার মুখস্ত
আছে? হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি যে, পরিবার, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশিই
মানুষের জন্য ফিতনা। সালাত, সাওম এবং সদকা এর
কাফফারা হয়ে যায়। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বললেন, এ ফিতনা সম্পর্কে আমি জিজ্ঞাসা করছি
না, আমি তো জিজ্ঞাসা করেছি ঐ ফিতনা
সম্পর্কে, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত
থেকে থাকবে। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বললেন, এ ফিতনার সামনে বন্ধ দরজা আছে। উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এ দরজা কি খুলে
যাবে, না ভেঙ্গে যাবে? হুযায়ফা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ভেঙ্গে যাবে। উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাহলে তো তা
কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। আমরা মাসরূক রহ. কে
বললাম, হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস
করুন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কি জানতেন, কে
সেই দরজা? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি এরূপ
জানতেন যেরূপ আগামীকালের দিনের পূর্বে
আজকের রাত।” [34]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলতেন,
« ﺍﻟﺼَّﻠَﻮَﺍﺕُ ﺍﻟْﺨَﻤْﺲُ، ﻭَﺍﻟْﺠُﻤْﻌَﺔُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺠُﻤْﻌَﺔِ، ﻭَﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻣُﻜَﻔِّﺮَﺍﺕٌ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻦَّ ﺇِﺫَﺍ
ﺍﺟْﺘَﻨَﺐَ ﺍﻟْﻜَﺒَﺎﺋِﺮَ »
“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু‘আ থেকে আরেক জুমু‘আ
পর্যন্ত এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান পর্যন্ত এসব
তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা হয়ে
যাবে, যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত
থাকে।” [35]
সাওম ঢালস্বরূপ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ ﻓَﻼَ ﻳَﺮْﻓُﺚْ ﻭَﻻَ ﻳَﺠْﻬَﻞْ، ﻭَﺇِﻥِ ﺍﻣْﺮُﺅٌ ﻗَﺎﺗَﻠَﻪُ ﺃَﻭْ ﺷَﺎﺗَﻤَﻪُ ﻓَﻠْﻴَﻘُﻞْ: ﺇِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ ﻣَﺮَّﺗَﻴْﻦِ
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻟَﺨُﻠُﻮﻑُ ﻓَﻢِ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢِ ﺃَﻃْﻴَﺐُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻣِﻦْ ﺭِﻳﺢِ ﺍﻟﻤِﺴْﻚِ ﻳَﺘْﺮُﻙُ
ﻃَﻌَﺎﻣَﻪُ ﻭَﺷَﺮَﺍﺑَﻪُ ﻭَﺷَﻬْﻮَﺗَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﻠِﻲ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻟِﻲ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺟْﺰِﻱ ﺑِﻪِ ﻭَﺍﻟﺤَﺴَﻨَﺔُ ﺑِﻌَﺸْﺮِ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ »
“সাওম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং
মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে
ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই
বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার
শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম
পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের
ঘ্রাণের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান
ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সাওম আমারই জন্য।
তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর
প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন।” [36]
সা‘ঈদ ইবন আবু হিন্দ রহ. থেকে বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﻣُﻄَﺮِّﻓًﺎ، ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻣِﻦْ ﺑَﻨِﻲ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺑْﻦِ ﺻَﻌْﺼَﻌَﺔَ، ﺣَﺪَّﺛَﻪُ ﺃَﻥَّ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺑْﻦَ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ، ﺩَﻋَﺎ ﻟَﻪُ
ﺑِﻠَﺒَﻦٍ ﻟِﻴَﺴْﻘِﻴَﻪُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣُﻄَﺮِّﻑٌ: ﺇِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ: ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻳَﻘُﻮﻝُ: « ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ ﻛَﺠُﻨَّﺔِ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘِﺘَﺎﻝِ »
“বনী ‘আমের ইবন সা‘আসা‘আ গোত্রের মুতাররিফ
রহ. তাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,
ওসমান ইবন আবু ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দুধ পান
করার জন্য তাকে দুধ নিয়ে আসতে বললেন। তখন
মুতাররিফ রহ. বললেন, আমি সাওম পালনকারী।
ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি, তিনি বলেছেন, সাওম এমন ঢালস্বরূপ,
তোমাদের যুদ্ধে ব্যবহৃত ঢালের ন্যায়।” [37]
সাওম পালনকারীর জন্য জান্নাতে রাইয়্যান দরজা
সাহল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺇِﻥَّ ﻓِﻲ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ ﺑَﺎﺑًﺎ ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻪُ ﺍﻟﺮَّﻳَّﺎﻥُ، ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﻣِﻨْﻪُ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻤُﻮﻥَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ، ﻻَ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﻣِﻨْﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ
ﻏَﻴْﺮُﻫُﻢْ، ﻳُﻘَﺎﻝُ: ﺃَﻳْﻦَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻤُﻮﻥَ؟ ﻓَﻴَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﻻَ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﻣِﻨْﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ﻏَﻴْﺮُﻫُﻢْ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺩَﺧَﻠُﻮﺍ ﺃُﻏْﻠِﻖَ
ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺪْﺧُﻞْ ﻣِﻨْﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ »
“জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ
দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম পালনকারীরাই
প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে
প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া
হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা
দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে
প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ
করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ
প্রবেশ না করে।” [38]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﻣَﻦْ ﺃَﻧْﻔَﻖَ ﺯَﻭْﺟَﻴْﻦِ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻧُﻮﺩِﻱَ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏِ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ: ﻳَﺎ ﻋَﺒْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻫَﺬَﺍ ﺧَﻴْﺮٌ، ﻓَﻤَﻦْ
ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺩُﻋِﻲَ ﻣِﻦْ ﺑَﺎﺏِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﺠِﻬَﺎﺩِ ﺩُﻋِﻲَ ﻣِﻦْ ﺑَﺎﺏِ
ﺍﻟﺠِﻬَﺎﺩِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﺩُﻋِﻲَ ﻣِﻦْ ﺑَﺎﺏِ ﺍﻟﺮَّﻳَّﺎﻥِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ
ﺩُﻋِﻲَ ﻣِﻦْ ﺑَﺎﺏِ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ "، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ : ﺑِﺄَﺑِﻲ ﺃَﻧْﺖَ ﻭَﺃُﻣِّﻲ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻦْ ﺩُﻋِﻲَ ﻣِﻦْ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻷَﺑْﻮَﺍﺏِ ﻣِﻦْ ﺿَﺮُﻭﺭَﺓٍ، ﻓَﻬَﻞْ ﻳُﺪْﻋَﻰ ﺃَﺣَﺪٌ ﻣِﻦْ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻷَﺑْﻮَﺍﺏِ ﻛُﻠِّﻬَﺎ،
ﻗَﺎﻝَ: « ﻧَﻌَﻢْ ﻭَﺃَﺭْﺟُﻮ ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ »
“যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে
তাঁকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে
আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব, যে সালাত
আদায়কারী, তাঁকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা
হবে। সে মুজাহিদ তাঁকে জিহাদের দরজা থেকে
ডাকা হবে, যে সাওম পালনকারী, তাঁকে রাইয়্যাব
দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সদকা দানকারী তাঁকে
সদকা দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবু বকর
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ!
আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান, সব দরজা
থেকে কাউকে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই, তবে
কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।
আমি আশা করি তুমি তাঁদের মধ্যে হবে।” [39]
রমযান নাকি রমযান মাস বলা হবে? কেউ কেউ
বলেছেন, উভয়টি বলা যাবে?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻓُﺘِﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ »
“যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে
দেওয়া হয়।” [40]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﺩَﺧَﻞَ ﺷَﻬْﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓُﺘِّﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ، ﻭَﻏُﻠِّﻘَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ، ﻭَﺳُﻠْﺴِﻠَﺖِ
ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦُ »
“রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়
এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়
আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে দেওয়া হয়।” [41]
রমযানের চাঁদ দেখা
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻓَﺼُﻮﻣُﻮﺍ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻓَﺄَﻓْﻄِﺮُﻭﺍ، ﻓَﺈِﻥْ ﻏُﻢَّ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﺎﻗْﺪُﺭُﻭﺍ ﻟَﻪُ » ﻭَﻗَﺎﻝَ
ﻏَﻴْﺮُﻩُ: ﻋَﻦِ ﺍﻟﻠَّﻴْﺚِ، ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻋُﻘَﻴْﻞٌ، ﻭَﻳُﻮﻧُﺲُ: ﻟِﻬِﻼَﻝِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ »
“যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সাওম পালন
করবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফতার করবে। আর
যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তাঁর সময়
হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে। ইয়াহইয়া ইবন
বুকায়র রহ. ব্যতীত অন্যরা লায়স রহ. থেকে উকায়লা
এবং ইউনুস রহ. সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি
বলেছেন রমযানের চাঁদ সম্পর্কে।” [42]
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায়
নিয়তের সাথে সাওম পালন করবে
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
« ﻳُﺒْﻌَﺜُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﻧِﻴَّﺎﺗِﻬِﻢْ »
“তারা (সাওম পালনকারী) তাদের নিয়ত অনুসারে
কিয়ামতের দিন উত্থিত হবেন।” [43]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﻣَﻦْ ﻗَﺎﻡَ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﻘَﺪْﺭِ ﺇِﻳﻤَﺎﻧًﺎ ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ، ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ، ﻭَﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺇِﻳﻤَﺎﻧًﺎ
ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ »
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বাদরে ঈমানের সাথে
সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর
পিছনের সমস্ত গুনাহ মাপ করা হবে। আর যে ব্যক্তি
ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানের সাওম পালন
করবে, তাঁরও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা
হবে”[44]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান
মাসে অধিক দান করতেন
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﺟْﻮَﺩَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﺎﻟﺨَﻴْﺮِ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺃَﺟْﻮَﺩُ ﻣَﺎ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ
ﺣِﻴﻦَ ﻳَﻠْﻘَﺎﻩُ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻳَﻠْﻘَﺎﻩُ ﻛُﻞَّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻨْﺴَﻠِﺦَ،
ﻳَﻌْﺮِﺽُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟﻘُﺮْﺁﻥَ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻟَﻘِﻴَﻪُ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ، ﻛَﺎﻥَ
ﺃَﺟْﻮَﺩَ ﺑِﺎﻟﺨَﻴْﺮِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﻳﺢِ ﺍﻟﻤُﺮْﺳَﻠَﺔِ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ
ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন।
রমযানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর
সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান
করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই
জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর একবার সাক্ষাৎ
করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল
আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন
তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-
সম্পদ দান করতেন।” [45]
যে ব্যক্তি সাওম পালনের সময় মিথ্যা বলা ও সে
অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺪَﻉْ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ ﻭَﺍﻟﻌَﻤَﻞَ ﺑِﻪِ، ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻟِﻠَّﻪِ ﺣَﺎﺟَﺔٌ ﻓِﻲ ﺃَﻥْ ﻳَﺪَﻉَ ﻃَﻌَﺎﻣَﻪُ ﻭَﺷَﺮَﺍﺑَﻪُ »
“যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন
করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর
কোনো প্রয়োজন নেই।” [46]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺭُﺏَّ ﺻَﺎﺋِﻢٍ ﺣَﻈُّﻪُ ﻣِﻦْ ﺻِﻴَﺎﻣِﻪِ ﺍﻟْﺠُﻮﻉُ ﻭَﺍﻟْﻌَﻄَﺶُ، ﻭَﺭُﺏَّ ﻗَﺎﺋِﻢٍ ﺣَﻈُّﻪُ ﻣِﻦْ ﻗِﻴَﺎﻣِﻪِ ﺍﻟﺴَّﻬَﺮُ »
“কিছু সাওম পালনকারীর সাওমের বিনিময়ে ক্ষুধা
ও পিপাসা ছাড়া কিছুই পায় না, আবার রাতে
জাগরণকারী কিছু সালাত আদায়কারীর রাত্রি
জাগরণ ব্যতীত কিছুই পায় না।” [47]
কাউকে গালি দেওয়া হলে সে কি বলবে, আমি
সাওম পালনকারী?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ: ﻛُﻞُّ ﻋَﻤَﻞِ ﺍﺑْﻦِ ﺁﺩَﻡَ ﻟَﻪُ، ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺟْﺰِﻱ ﺑِﻪِ، ﻭَﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ،
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻮْﻡُ ﺻَﻮْﻡِ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﻓَﻼَ ﻳَﺮْﻓُﺚْ ﻭَﻻَ ﻳَﺼْﺨَﺐْ، ﻓَﺈِﻥْ ﺳَﺎﺑَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ﺃَﻭْ ﻗَﺎﺗَﻠَﻪُ، ﻓَﻠْﻴَﻘُﻞْ ﺇِﻧِّﻲ
ﺍﻣْﺮُﺅٌ ﺻَﺎﺋِﻢٌ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺲُ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﺑِﻴَﺪِﻩِ، ﻟَﺨُﻠُﻮﻑُ ﻓَﻢِ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢِ ﺃَﻃْﻴَﺐُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣِﻦْ ﺭِﻳﺢِ ﺍﻟﻤِﺴْﻚِ
ﻟِﻠﺼَّﺎﺋِﻢِ ﻓَﺮْﺣَﺘَﺎﻥِ ﻳَﻔْﺮَﺣُﻬُﻤَﺎ: ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﻓَﺮِﺡَ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻟَﻘِﻲَ ﺭَﺑَّﻪُ ﻓَﺮِﺡَ ﺑِﺼَﻮْﻣِﻪِ »
“আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, সাওম ব্যতীত আদম
সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু
সাওম আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেব।
সাওম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সাওম
পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-
বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা
তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি
একজন সাওম পালনকারী। যার হাতে মুহাম্মদের
প্রাণ তাঁর শপথ! সাওম পালনকারীর মুখের (না
খাওয়াজনিত) ঘ্রাণ আল্লাহর নিকট মিশকের
ঘ্রাণের চেয়েও বেশি উত্তম। সাওম পালনকারীর
জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে
ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের
সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে
আনন্দিত হবে।” [48]
অবিবাহিত ব্যক্তি যে নিজের ওপর ফিতনার
আশংকা করে তার জন্য সাওম পালন করা
আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺑَﻴْﻨَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺃَﻣْﺸِﻲ، ﻣَﻊَ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻛُﻨَّﺎ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻉَ ﺍﻟﺒَﺎﺀَﺓَ ﻓَﻠْﻴَﺘَﺰَﻭَّﺝْ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺃَﻏَﺾُّ ﻟِﻠْﺒَﺼَﺮِ، ﻭَﺃَﺣْﺼَﻦُ ﻟِﻠْﻔَﺮْﺝِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ
ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻪِ ﺑِﺎﻟﺼَّﻮْﻡِ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﻪُ ﻭِﺟَﺎﺀٌ »
“আমি আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে চলতে
ছিলাম তখন তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে
ছিলাম, তিনি বললেন, যে ব্যক্তির সামর্থ্য
আছে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কেননা বিবাহ
চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান সংরক্ষণ
করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন
করে। কেননা সাওম তাঁর প্রবৃত্তিকে দমন করে”। [49]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী,
তোমরা চাঁদ দেখে সাওম পালন শুরু করবে, আবার
চাঁদ দেখে সাওম থেকে বিরত থাকবে
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺫَﻛَﺮَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻻَ ﺗَﺼُﻮﻣُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮَﻭُﺍ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ،
ﻭَﻻَ ﺗُﻔْﻄِﺮُﻭﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮَﻭْﻩُ، ﻓَﺈِﻥْ ﻏُﻢَّ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﺎﻗْﺪُﺭُﻭﺍ ﻟَﻪُ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
রমযানের কথা আলোচনা করে বললেন, চাঁদ না দেখে
তোমরা সাওম পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে
ইফতার করবে না। যদি মেঘাছন্ন থাকে তাহলে তাঁর
সময় (ত্রিশ দিন) পরিমাণ পূর্ণ করবে”। [50]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺍﻟﺸَّﻬْﺮُ ﺗِﺴْﻊٌ ﻭَﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﻟَﻴْﻠَﺔً، ﻓَﻼَ ﺗَﺼُﻮﻣُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮَﻭْﻩُ، ﻓَﺈِﻥْ ﻏُﻢَّ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﺄَﻛْﻤِﻠُﻮﺍ ﺍﻟﻌِﺪَّﺓَ
ﺛَﻼَﺛِﻴﻦَ »
“মাস ঊনত্রিশ রাত বিশিষ্ট হয়। তাই তোমরা চাঁদ
না দেখে সাওম শুরু করবে না। যদি আকাশ মেঘাবৃত
থাকে তাহলে তোমরা ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে”। [51]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’হাতের
অঙ্গুলী তুলে ইশারা করে) বলেন,
«ﺍﻟﺸَّﻬْﺮُ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻭَﻫَﻜَﺬَﺍ » ﻭَﺧَﻨَﺲَ ﺍﻹِﺑْﻬَﺎﻡَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔِ »
“মাস এত এত দিনে হয় এবং তৃতীয় বার বৃদ্ধাঙ্গুলীটি
বন্ধ করে নিলেন”। [52]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা আবুল
কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
«ﺻُﻮﻣُﻮﺍ ﻟِﺮُﺅْﻳَﺘِﻪِ ﻭَﺃَﻓْﻄِﺮُﻭﺍ ﻟِﺮُﺅْﻳَﺘِﻪِ، ﻓَﺈِﻥْ ﻏُﺒِّﻲَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﺄَﻛْﻤِﻠُﻮﺍ ﻋِﺪَّﺓَ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺛَﻼَﺛِﻴﻦَ »
“তোমরা চাঁদ দেখে সাওম আরম্ভ করবে এবং চাঁদ
দেখে ইফতার করবে। আকাশ যদি মেঘে ঢাকা থাকে
তাহলে শা‘বানের গণনা ত্রিশ দিন পুরা করবে”। [53]
উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺁﻟَﻰ ﻣِﻦْ ﻧِﺴَﺎﺋِﻪِ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻣَﻀَﻰ ﺗِﺴْﻌَﺔٌ ﻭَﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ
ﻳَﻮْﻣًﺎ، ﻏَﺪَﺍ ﺃَﻭْ ﺭَﺍﺡَ ﻓَﻘِﻴﻞَ ﻟَﻪُ: ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻠَﻔْﺖَ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺗَﺪْﺧُﻞَ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﻳَﻜُﻮﻥُ
ﺗِﺴْﻌَﺔً ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﻳَﻮْﻣًﺎ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক
মাসের জন্য তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে ঈলা (পণ করা)
করলেন। ঊনত্রিশ দিন পার হওয়ার পর সকালে বা
সন্ধায় তিনি তাঁদের নিকট গেলেন। তাঁকে প্রশ্ন
করা হলো, আপনি তো এক মাস পর্যন্ত না আসার
শপথ করেছিলেন? তিনি বলেলেন, মাস ঊনত্রিশ
হয়েও থাকে”। [54]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﺁﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻣِﻦْ ﻧِﺴَﺎﺋِﻪِ، ﻭَﻛَﺎﻧَﺖْ ﺍﻧْﻔَﻜَّﺖْ ﺭِﺟْﻠُﻪُ، ﻓَﺄَﻗَﺎﻡَ ﻓِﻲ
ﻣَﺸْﺮُﺑَﺔٍ ﺗِﺴْﻌًﺎ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً، ﺛُﻢَّ ﻧَﺰَﻝَ ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺁﻟَﻴْﺖَ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ
ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﺗِﺴْﻌًﺎ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
স্ত্রীদের সঙ্গে ঈলা (পণ করা) করলেন। এ সময় তাঁর
পা মচকে গিয়েছিল। তখন তিনি উপরের কামরায়
উনত্রিশ রাত অবস্থান করেন। এরপর অবতরণ করলে
ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি তো এক মাসের জন্য ঈলা
করেছিলেন। তিনি বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও
হয়ে থাকে”। [55]
যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত যে,
« ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻗْﺴَﻢَ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﻳَﺪْﺧُﻞَ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻪِ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺰُّﻫْﺮِﻱُّ:
ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮَﻧِﻲ ﻋُﺮْﻭَﺓُ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻟَﻤَّﺎ ﻣَﻀَﺖْ ﺗِﺴْﻊٌ ﻭَﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﻟَﻴْﻠَﺔً
ﺃَﻋُﺪُّﻫُﻦَّ، ﺩَﺧَﻞَ ﻋَﻠَﻲَّ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺑَﺪَﺃَ ﺑِﻲ - ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﻳَﺎ
ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻗْﺴَﻤْﺖَ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﺗَﺪْﺧُﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻭَﺇِﻧَّﻚَ ﺩَﺧَﻠْﺖَ ﻣِﻦْ ﺗِﺴْﻊٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ
ﺃَﻋُﺪُّﻫُﻦَّ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﺗِﺴْﻊٌ ﻭَﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পণ
করলেন যে, তিনি এক মাস পর্যন্ত তাঁর বিবিদের
কাছে যাবেন না। যুহরী রহ. উরওয়া রহ. এর সুত্রে
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত
যে, তিনি বলেন, যখন ঊনত্রিশ রাত্র অতিবাহিত
হয়ে গেল, আমি তা হিসাব রাখছিলাম, তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমার নিকট আসলেন এবং আমার থেকেই আরম্ভ
করলেন। এ সময় আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
আপনি তো একমাস পর্যন্ত আমাদের নিকট না আসার
শপথ করেছেন অথচ আপনি ঊনত্রিশ তারিখের পরই
চলে আসলেন আমি তো গুণে রেখেছি। তখন তিনি
বললেন, মাস তো উনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।” [56]
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻋْﺘَﺰَﻝَ ﻧِﺴَﺎﺀَﻩُ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻓَﺨَﺮَﺝَ ﺇِﻟَﻴْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺗِﺴْﻊٍ
ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ، ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ: ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡُ ﺗِﺴْﻊٌ ﻭَﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮُ ﻭَﺻَﻔَّﻖَ ﺑِﻴَﺪَﻳْﻪِ ﺛَﻠَﺎﺙَ
ﻣَﺮَّﺍﺕٍ، ﻭَﺣَﺒَﺲَ ﺇِﺻْﺒَﻌًﺎ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﻓِﻲ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এক মাসের জন্য তাঁর স্ত্রীদের থেকে পৃথক হয়ে
গেলেন। এরপর ঊনত্রিশ দিন পর তিনি আমাদের
নিকট বের হয়ে এলেন। আমরা বললাম আজ তো
ঊনত্রিশতম দিবস। তখন তিনি তাঁর উভয় হাত দিয়ে
তিনবার ইশারা করে শেষবার একটি আঙ্গূল গুটিয়ে
রেখে বললেন, মাস তো এভাবেও হয়ে থাকে।” [57]
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺍﻋْﺘَﺰَﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻧِﺴَﺎﺀَﻩُ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻓَﺨَﺮَﺝَ ﺇِﻟَﻴْﻨَﺎ ﺻَﺒَﺎﺡَ ﺗِﺴْﻊٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﺻْﺒَﺤْﻨَﺎ ﻟِﺘِﺴْﻊٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: " ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﺗِﺴْﻌًﺎ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺛُﻢَّ ﻃَﺒَّﻖَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
ﺑِﻴَﺪَﻳْﻪِ ﺛَﻠَﺎﺛًﺎ: ﻣَﺮَّﺗَﻴْﻦِ ﺑِﺄَﺻَﺎﺑِﻊِ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻛُﻠِّﻬَﺎ، ﻭَﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔَ ﺑِﺘِﺴْﻊٍ ﻣِﻨْﻬَﺎ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
স্ত্রীদের থেকে এক মাসের জন্য পৃথক হয়ে গেলেন।
তারপর ঊনত্রিশতম দিবসে ভোর বেলা তিনি
আমাদের নিকট আসলেন। কেউ কেউ বললেন, ইয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আজ তো ঊনত্রিশতম দিনের ভোরবেলা। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু
বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে। এরপর নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় হাতের
সমস্ত আঙ্গুল খুলে দু’বার ইঙ্গিত করলেন এবং
তৃতীয়বার ইঙ্গিত করলেন নয় আঙ্গুল দ্বারা।” [58]
সা‘দ ইবন আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺿَﺮَﺏَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄُﺧْﺮَﻯ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺍﻟﺸَّﻬْﺮُ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻭَﻫَﻜَﺬَﺍ
ﺛُﻢَّ ﻧَﻘَﺺَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔِ ﺇِﺻْﺒَﻌًﺎ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর এক হাত অপর হাতের ওপর মেরে বললেন, মাস
এভাবে এভাবে হয়ে থাকে। তৃতীয়বার তিনি একটি
আঙ্গুল গুটিয়ে রাখলেন”। [59]
চাঁদ দেখার ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহণ
আবু উমাইর ইবন আনাস ইবন মালিক রহ. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻋُﻤُﻮﻣَﺘِﻲ، ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﻧْﺼَﺎﺭِ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ:
ﺃُﻏْﻤِﻲَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻫِﻠَﺎﻝُ ﺷَﻮَّﺍﻝٍ، ﻓَﺄَﺻْﺒَﺤْﻨَﺎ ﺻِﻴَﺎﻣًﺎ، ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺭَﻛْﺐٌ ﻣِﻦْ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ، ﻓَﺸَﻬِﺪُﻭﺍ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺭَﺃَﻭُﺍ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ ﺑِﺎﻟْﺄَﻣْﺲِ، ﻓَﺄَﻣَﺮَﻫُﻢْ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻥْ ﻳُﻔْﻄِﺮُﻭﺍ، ﻭَﺃَﻥْ ﻳَﺨْﺮُﺟُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻋِﻴﺪِﻫِﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻐَﺪِ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সাহাবী এবং আনসার সম্প্রদায়ভুক্ত আমার এক
চাচা আমার নিকট বর্ণনা করেন, মেঘের কারণে
আমরা শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখতে পাই নি। আমরা
(পরের দিন) সাওম রাখলাম। দিনের শেষভাগে
একটি কাফেলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট এসে গতকাল চাঁদ দেখার
সাক্ষ্য দিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে ইফতার (সাওম ভঙ্গ) করার
এবং পরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দেন।” [60]
চাঁদ দেখতে কতজন সাক্ষ্য লাগবে?
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
« ﺗَﺮَﺍﺀَﻯ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ، ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮْﺕُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧِّﻲ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻪُ ﻓَﺼَﺎﻣَﻪ
ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺑﺼﻴﺎﻣﻪ ».
“একবার লোকজন চাঁদ দেখল। আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে
বললাম যে, আমি চাঁদ দেখেছি, ফলে তিনি নিজে
সাওম পালন করলেন এবং লোকদেরকেও সাওম পালন
করতে নির্দেশ দিলেন।” [61]
• প্রত্যেক দেশে আলাদা আলাদাভাবে চাঁদ দেখা,
এক দেশে চাঁদ দেখলে তার হুকুম অন্যের জন্য যথেষ্ট
নয়
কুরায়ব রহ. থেকে বর্ণিত যে,
« ﺃَﻥَّ ﺃُﻡَّ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞِ ﺑِﻨْﺖَ ﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ، ﺑَﻌَﺜَﺘْﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﺑِﺎﻟﺸَّﺎﻡِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻘَﺪِﻣْﺖُ ﺍﻟﺸَّﺎﻡَ، ﻓَﻘَﻀَﻴْﺖُ
ﺣَﺎﺟَﺘَﻬَﺎ، ﻭَﺍﺳْﺘُﻬِﻞَّ ﻋَﻠَﻲَّ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺑِﺎﻟﺸَّﺎﻡِ، ﻓَﺮَﺃَﻳْﺖُ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺪِﻣْﺖُ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔَ
ﻓِﻲ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮِ، ﻓَﺴَﺄَﻟَﻨِﻲ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ، ﺛُﻢَّ ﺫَﻛَﺮَ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ ﻓَﻘَﺎﻝَ:
ﻣَﺘَﻰ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ؟ ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﺭَﺃَﻳْﻨَﺎﻩُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺃَﻳْﺘَﻪُ؟ ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﻧَﻌَﻢْ، ﻭَﺭَﺁﻩُ
ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ﻭَﺻَﺎﻣُﻮﺍ ﻭَﺻَﺎﻡَ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: " ﻟَﻜِﻨَّﺎ ﺭَﺃَﻳْﻨَﺎﻩُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﺴَّﺒْﺖِ، ﻓَﻠَﺎ ﻧَﺰَﺍﻝُ ﻧَﺼُﻮﻡُ ﺣَﺘَّﻰ
ﻧُﻜْﻤِﻞَ ﺛَﻠَﺎﺛِﻴﻦَ، ﺃَﻭْ ﻧَﺮَﺍﻩُ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﺃَﻭَ ﻟَﺎ ﺗَﻜْﺘَﻔِﻲ ﺑِﺮُﺅْﻳَﺔِ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻭَﺻِﻴَﺎﻣِﻪِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻟَﺎ، ﻫَﻜَﺬَﺍ
ﺃَﻣَﺮَﻧَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ " ﻭَﺷَﻚَّ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﺑْﻦُ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﻓِﻲ ﻧَﻜْﺘَﻔِﻲ ﺃَﻭْ ﺗَﻜْﺘَﻔِﻲ »
“উম্মুল ফযল বিনত হারিস তাকে সিরিয়ায়
মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট পাঠালেন।
(কুরায়ব বলেন) আমি সিরিয়ায় পৌঁছলাম এবং তার
প্রয়োজনীয় কাজটি সমাধা করে নিলাম। আমি
সিরিয়া থাকা অবস্থায়ই রমযানের চাঁদ দেখা
গেল। জুমু‘আর দিন সন্ধ্যায় আমি চাঁদ দেখলাম।
এরপর রমযানের শেষ ভাগে আমি মদীনায় ফিরলাম।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার
নিকট জিজ্ঞাসা করলেন এবং চাঁদ সম্পর্কে
আলোচনা করলেন। এরপর জিজ্ঞাসা
করলেন, তোমরা কোনো দিন চাঁদ দেখেছ? আমি
বললাম, আমরা তো জুমু‘আর দিন সন্ধায় চাঁদ
দেখেছি। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি
নিজে দেখেছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি
দেখেছি এবং লোকেরাও দেখেছে। তারা সাওম
পালন করেছে এবং মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও
সাওম পালন করেছেন। তিনি বললেন, আমরা কিন্তু
শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেছি। আমরা সাওম পালন
করতে থাকব, শেষ পর্যন্ত ত্রিশ দিন পূর্ণ করব অথবা
চাঁদ দেখব। আমি বললাম, মু‘আবিয়া
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চাঁদ দেখা এবং তাঁর সাওম
পালন করা আপনার জন্য যথেষ্ট নয় কি? তিনি
বললেন, না, যথেষ্ট নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে
এরূপ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।” [62]
চাঁদ ছোট বা বড় দেখা ধর্তব্য নয়, আল্লাহ তা‘আলা
দেখার জন্য বর্ধিত করে দিয়েছেন। আর যদি মেঘের
কারণে দেখা না যায় তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে
আবুল বাখতারী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺧَﺮَﺟْﻨَﺎ ﻟِﻠْﻌُﻤْﺮَﺓِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻧَﺰَﻟْﻨَﺎ ﺑِﺒَﻄْﻦِ ﻧَﺨْﻠَﺔَ ﻗَﺎﻝَ: ﺗَﺮَﺍﺀَﻳْﻨَﺎ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ : ﻫُﻮَ ﺍﺑْﻦُ
ﺛَﻠَﺎﺙٍ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ: ﻫُﻮَ ﺍﺑْﻦُ ﻟَﻴْﻠَﺘَﻴْﻦِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻠَﻘِﻴﻨَﺎ ﺍﺑْﻦَ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ: ﺇِﻧَّﺎ ﺭَﺃَﻳْﻨَﺎ
ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ: ﻫُﻮَ ﺍﺑْﻦُ ﺛَﻠَﺎﺙٍ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ: ﻫُﻮَ ﺍﺑْﻦُ ﻟَﻴْﻠَﺘَﻴْﻦِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﻱَّ
ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻩُ؟ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ: ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﻛَﺬَﺍ ﻭَﻛَﺬَﺍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ،
ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻣَﺪَّﻩُ ﻟِﻠﺮُّﺅْﻳَﺔِ، ﻓَﻬُﻮَ ﻟِﻠَﻴْﻠَﺔٍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻩُ »
“আমরা ‘উমরা করার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম
এবং ‘বাতনে নাখলা’ নামক স্থানে উপস্থিত হলাম
তখন আমরা (রমযানের) চাঁদ! দেখতে পেলাম। এ সময়
কেউ কেউ বলতে লাগলেন এ তো তিন তারিখের
চাঁদ। আবার কেউ কেউ বললেন, এ তো দুই তারিখের
চাঁদ। তারপর আমরা ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং
বললাম, আমরা তো চাঁদ দেখেছি। কিন্তু আমাদের
কেউ কেউ বলছেন, এ দু’রাত্রির চাঁদ। আবার কেউ
কেউ বললেন, এ এক রাত্রির চাঁদ। তখন তিনি
জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোনো রাত্রে চাঁদ
দেখেছ? আমরা বললাম, অমুক অমুক রাত্রে। তিনি
বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দেখার সুবিধার্থে আল্লাহ
একে বঁর্ধিত করে করেছেন। মূলত এ ঐ রাত্রিরই চাঁদ
যে রাত্রে তোমরা দেখেছো।” [63]
ঈদের দু’মাস কম হয় না
আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত
যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
«ﺷَﻬْﺮَﺍﻥِ ﻻَ ﻳَﻨْﻘُﺼَﺎﻥِ، ﺷَﻬْﺮَﺍ ﻋِﻴﺪٍ: ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ، ﻭَﺫُﻭ ﺍﻟﺤَﺠَّﺔِ »
“দু’টি মাস কম হয় না। তা হলো ঈদের দু’মাস
রমযানের মাস ও যিলহজের মাস।” আবু ‘আব্দুল্লাহ
রহ. বলেছেন, আহমদ ইবন হাম্বল রহ. বলেন, রমযান
ঘাটতি হলে যিলহজ পূর্ণ হবে। আর যিলহজ ঘাটতি
হলে রমযান পূর্ণ হবে। আবুল হাসান রহ.
বলেন, ইসহাক ইবন রাহওয়াই রহ. বলেন, ফযীলতের
দিক থেকে এ দুই মাসে ঘাটতি নেই, মাস ঊনত্রিশ
দিনে হোক বা ত্রিশ দিনে হোক। [64]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
আমরা লিখি না এবং হিসাবও করি না
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
« ﺇِﻧَّﺎ ﺃُﻣَّﺔٌ ﺃُﻣِّﻴَّﺔٌ، ﻻَ ﻧَﻜْﺘُﺐُ ﻭَﻻَ ﻧَﺤْﺴُﺐُ، ﺍﻟﺸَّﻬْﺮُ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻭَﻫَﻜَﺬَﺍ » ﻳَﻌْﻨِﻲ ﻣَﺮَّﺓً ﺗِﺴْﻌَﺔً ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ،
ﻭَﻣَﺮَّﺓً ﺛَﻼَﺛِﻴﻦَ »
“আমরা উম্মী জাতি, আমরা লিখি না এবং
হিসাবও করি না। মাস এরূপ এরূপ হয়। অর্থাৎ কখনও
ঊনত্রিশ আবার কখনও ত্রিশ দিন হয়ে থাকে”। [65]
রমযানের একদিন বা দু’দিন আগে সাওম শুরু করবে না
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻻَ ﻳَﺘَﻘَﺪَّﻣَﻦَّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺑِﺼَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡٍ ﺃَﻭْ ﻳَﻮْﻣَﻴْﻦِ، ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﺻَﻮْﻣَﻪُ،
ﻓَﻠْﻴَﺼُﻢْ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﻴَﻮْﻡَ »
“তোমরা কেউ রমযানের একদিন কিংবা দুই দিন
আগে থেকে সাওম শুরু করবে না। তবে কেউ যদি এ
সময় সাওম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিন
সাওম করতে পারবে”। [66]
ইয়াওমুশ-শক বা সন্দেহের দিনে সাওম পালন করা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻻَ ﻳَﺘَﻘَﺪَّﻣَﻦَّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺑِﺼَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡٍ ﺃَﻭْ ﻳَﻮْﻣَﻴْﻦِ، ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﺻَﻮْﻣَﻪُ،
ﻓَﻠْﻴَﺼُﻢْ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﻴَﻮْﻡَ »
“তোমরা কেউ রমযানের একদিন কিংবা দুই দিন
আগে থেকে সাওম শুরু করবে না। তবে কেউ যদি এ
সময় সাওম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিন
সাওম করতে পারবে”। [67]
সিলা ইবন যুফার রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨَّﺎ ﻋِﻨْﺪَ ﻋَﻤَّﺎﺭِ ﺑْﻦِ ﻳَﺎﺳِﺮٍ ﻓَﺄُﺗِﻲَ ﺑِﺸَﺎﺓٍ ﻣَﺼْﻠِﻴَّﺔٍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻛُﻠُﻮﺍ، ﻓَﺘَﻨَﺤَّﻰ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟﻘَﻮْﻡِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ:
ﺇِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋَﻤَّﺎﺭٌ: ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ ﺍﻟﻴَﻮْﻡَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺸُﻚُّ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻓَﻘَﺪْ ﻋَﺼَﻰ ﺃَﺑَﺎ ﺍﻟﻘَﺎﺳِﻢِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ».
“আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকটে
আমরা উপস্থিত ছিলাম। একটি ভুনা বকরি
(খাবারের উদ্দেশ্যে) নিয়ে আসা হলে তিনি
বললেন, তোমরা সকলেই খাও। কিন্তু কোনো এক
লোক দূরে সরে গিয়ে বলল, আমি সাওম পালনকারী।
‘আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, সন্দেহযুক্ত
দিনে যে লোক সাওম পালন করে, সে লোক আবুল
কাসিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর
নাফরমানি করে”। [68]
অর্ধ শা‘বানের পরে নফল সাওম পালন করা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﺑَﻘِﻲَ ﻧِﺼْﻒٌ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻓَﻼَ ﺗَﺼُﻮﻣُﻮﺍ ».
“শা‘বানের অর্ধাংশ যখন বাকী থাকে তখন আর
তোমরা সাওম পালন করবে না”। [69]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒُ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻓَﻠَﺎ ﺻَﻮْﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺠِﻲﺀَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ »
“শা‘বানের অর্ধাংশ চলে গেলে তোমরা রমযান না
আসা পর্যন্ত আর সাওম পালন করবে না”। [70]
আল্লাহর বাণী:
﴿ﺃُﺣِﻞَّ ﻟَﻜُﻢۡ ﻟَﻴۡﻠَﺔَ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﭐﻟﺮَّﻓَﺚُ ﺇِﻟَﻰٰ ﻧِﺴَﺎٓﺋِﻜُﻢۡۚ ﻫُﻦَّ ﻟِﺒَﺎﺱٞ ﻟَّﻜُﻢۡ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢۡ ﻟِﺒَﺎﺱٞ ﻟَّﻬُﻦَّۗ ﻋَﻠِﻢَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻧَّﻜُﻢۡ
ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗَﺨۡﺘَﺎﻧُﻮﻥَ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡ ﻓَﺘَﺎﺏَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡ ﻭَﻋَﻔَﺎ ﻋَﻨﻜُﻢۡۖ ﻓَﭑﻟۡـَٰٔﻦَ ﺑَٰﺸِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﻭَﭐﺑۡﺘَﻐُﻮﺍْ ﻣَﺎ ﻛَﺘَﺐَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢۡۚ
﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧]
“সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের
স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা
তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য
পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের
সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের
তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা
করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত
হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে
দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। [সূরা আল-বাকারা,
আয়াত: ১৮৭]
বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ، ﻓَﺤَﻀَﺮَ ﺍﻹِﻓْﻄَﺎﺭُ، ﻓَﻨَﺎﻡَ
ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُﻔْﻄِﺮَ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﻛُﻞْ ﻟَﻴْﻠَﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﻳَﻮْﻣَﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻤْﺴِﻲَ، ﻭَﺇِﻥَّ ﻗَﻴْﺲَ ﺑْﻦَ ﺻِﺮْﻣَﺔَ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِﻱَّ ﻛَﺎﻥَ
ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺣَﻀَﺮَ ﺍﻹِﻓْﻄَﺎﺭُ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗَﻪُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻬَﺎ: ﺃَﻋِﻨْﺪَﻙِ ﻃَﻌَﺎﻡٌ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻻَ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺃَﻧْﻄَﻠِﻖُ
ﻓَﺄَﻃْﻠُﺐُ ﻟَﻚَ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳَﻮْﻣَﻪُ ﻳَﻌْﻤَﻞُ، ﻓَﻐَﻠَﺒَﺘْﻪُ ﻋَﻴْﻨَﺎﻩُ، ﻓَﺠَﺎﺀَﺗْﻪُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗُﻪُ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﺃَﺗْﻪُ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﺧَﻴْﺒَﺔً ﻟَﻚَ،
ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺍﻧْﺘَﺼَﻒَ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭُ ﻏُﺸِﻲَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻓَﺬُﻛِﺮَ ﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻨَﺰَﻟَﺖْ ﻫَﺬِﻩِ
ﺍﻵﻳَﺔُ : ﴿ﺃُﺣِﻞَّ ﻟَﻜُﻢۡ ﻟَﻴۡﻠَﺔَ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﭐﻟﺮَّﻓَﺚُ ﺇِﻟَﻰٰ ﻧِﺴَﺎٓﺋِﻜُﻢۡۚ ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧ ] ﻓَﻔَﺮِﺣُﻮﺍ ﺑِﻬَﺎ ﻓَﺮَﺣًﺎ
ﺷَﺪِﻳﺪًﺍ، ﻭَﻧَﺰَﻟَﺖْ : ﴿ﻭَﻛُﻠُﻮﺍْ ﻭَﭐﺷۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ ﻣِﻦَ
ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧]
“মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সাহাবীগণের অবস্থা এই ছিল যে, যদি তাঁদের কেউ
সাওম পালন করতেন ইফতারে সময় হলে ইফতার না
করে ঘুমিয়ে গেল সে রাতে এবং পরের সন্ধ্যা
পর্যন্ত কিছুই খেতেন না। কায়স ইবন সিরমা
আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সাওম পালন
করেছিলেন। ইফতারের সময় তিনি তাঁর স্ত্রীর
নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট কিছু
খাবার আছে কি? তিনি বললেন, না, তবে আমি
যাচ্ছি, দেখি আপনার জন্য কিছু তালাশ করে আনি।
তিনি কাজে রত থাকতেন। তাই ঘুমে তাঁর চোখ বুজে
গেল। এরপর স্ত্রী এসে যখন তাকে দেখলেন, তখন
তাঁকে বললেন, হায়, তোমার জন্য বঞ্ছনা! পরদিন
দুপুর হলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। এ
ঘটনাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট উল্লেখ করা হলে এ আয়াতটি
নাযিল হয়,
﴿ﺃُﺣِﻞَّ ﻟَﻜُﻢۡ ﻟَﻴۡﻠَﺔَ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﭐﻟﺮَّﻓَﺚُ ﺇِﻟَﻰٰ ﻧِﺴَﺎٓﺋِﻜُﻢۡۚ ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٧]
“সিয়ামের রাত্রে তোমাদের স্ত্রী সম্ভোগ
হালাল করা হয়েছে”। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭] এ
হুকুম সমন্ধে অবহিত হয়ে সাহাবীগণ খুবই আনন্দিত
হলেন। এরপর নাযিল হলো,
﴿ﻭَﻛُﻠُﻮﺍْ ﻭَﭐﺷۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ:
١٨٧]
“তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালো রেখা
থেকে (ভোরের) সাদা রেখা স্পষ্ট তোমাদের নিকট
প্রতিভাত না হয়”। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭] [71]
﴿ﻭَﻛُﻠُﻮﺍْ ﻭَﭐﺷۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ ﺛُﻢَّ ﺃَﺗِﻤُّﻮﺍْ
ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟَّﻴۡﻞِۚ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧]
“আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা
রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত
পর্যন্ত সাওম পূর্ণ কর। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত:
১৮৭]
‘আদী ইবন হাতিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻟَﻤَّﺎ ﻧَﺰَﻟَﺖْ : ﴿ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ:
١٨٧] ﻋَﻤَﺪْﺕُ ﺇِﻟَﻰ ﻋِﻘَﺎﻝٍ ﺃَﺳْﻮَﺩَ، ﻭَﺇِﻟَﻰ ﻋِﻘَﺎﻝٍ ﺃَﺑْﻴَﺾَ، ﻓَﺠَﻌَﻠْﺘُﻬُﻤَﺎ ﺗَﺤْﺖَ ﻭِﺳَﺎﺩَﺗِﻲ، ﻓَﺠَﻌَﻠْﺖُ
ﺃَﻧْﻈُﺮُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ، ﻓَﻼَ ﻳَﺴْﺘَﺒِﻴﻦُ ﻟِﻲ، ﻓَﻐَﺪَﻭْﺕُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ،
ﻓَﺬَﻛَﺮْﺕُ ﻟَﻪُ ﺫَﻟِﻚَ ﻓَﻘَﺎﻝَ: «ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺫَﻟِﻚَ ﺳَﻮَﺍﺩُ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺑَﻴَﺎﺽُ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ »
যখন এই আয়াত নাযিল হলো,
﴿ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧]
“তোমরা পানাহার কর রাত্রির কালো রেখা থেকে
সাদা রেখা যতক্ষণ স্পষ্ট রূপে তোমাদের নিকট
প্রতিভাত না হয়।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭]
ততক্ষণ আমি একটি কালো এবং একটি সাদা রশি
নিলাম এবং উভয়টিকে আমার বালিশের নিচে
রেখে দিলাম। রাতে আমি এগুলোর দিকে বারবার
তাকাতে থাকি; কিন্তু আমার নিকট পার্থক্য
প্রকাশিত হলো না। তাই সকালেই রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে
এ বিষয় বললাম। তিনি বললেন, এতো রাতের আধাঁর
এবং দিনের আলো”। [72]
সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺃُﻧْﺰِﻟَﺖْ : ﴿ﻭَﻛُﻠُﻮﺍْ ﻭَﭐﺷۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ:
١٨٧] ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻨْﺰِﻝْ ﴿ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧ ]، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﺭِﺟَﺎﻝٌ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩُﻭﺍ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡَ ﺭَﺑَﻂَ
ﺃَﺣَﺪُﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﺭِﺟْﻠِﻪِ ﺍﻟﺨَﻴْﻂَ ﺍﻷَﺑْﻴَﺾَ ﻭَﺍﻟﺨَﻴْﻂَ ﺍﻷَﺳْﻮَﺩَ، ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺰَﻝْ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻪُ ﺭُﺅْﻳَﺘُﻬُﻤَﺎ،
ﻓَﺄَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻌْﺪُ : ﴿ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧] ﻓَﻌَﻠِﻤُﻮﺍ ﺃَﻧَّﻪُ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﻭَﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭَ »
“যখন এ আয়াত নাযিল হলো, ‘’তোমরা পানাহার
কর, যতক্ষণ না কালো রেখা সাদা রেখা স্পষ্টরূপে
তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। কিন্তু তখনো
কথাটি নাযিল হয় নি। তখন সাওম পালন করতে ইচ্ছুক
লোকেরা নিজেদের দুই পায়ে একটি কাল এবং একটি
সাদা সুতলি বেধে নিতেন এবং সাদা কালো এ
দু’টির পার্থক্য না দেখা পর্যন্ত তাঁরা পানাহার
করতে থাকতেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা শব্দটি
নাযিল করলে সকলেই বুঝতে পারলেন যে, এ দ্বারা
উদ্দেশ্য হলো রাত (এর আধার) এবং দিন (এর
আলো)।” [73]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
বিলালের আযান যেন তোমাদেরকে সাহরী থেকে
বিরত না রাখে
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এবং কাসিম ইবব
মুহাম্মদ রহ. ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণনা করেন,
« ﺃَﻥَّ ﺑِﻼَﻟًﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺆَﺫِّﻥُ ﺑِﻠَﻴْﻞٍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﻛُﻠُﻮﺍ ﻭَﺍﺷْﺮَﺑُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ
ﻳُﺆَﺫِّﻥَ ﺍﺑْﻦُ ﺃُﻡِّ ﻣَﻜْﺘُﻮﻡٍ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻻَ ﻳُﺆَﺫِّﻥُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟﻔَﺠْﺮُ، ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻘَﺎﺳِﻢُ: ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﺫَﺍﻧِﻬِﻤَﺎ
ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﺮْﻗَﻰ ﺫَﺍ ﻭَﻳَﻨْﺰِﻝَ ﺫَﺍ »
“বিলাল (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাতে আযান
দিতেন। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবন উম্মে মাকতূম
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আযান দেওয়া পর্যন্ত তোমরা
পানাহার কর। কেননা সে ফজর না হওয়া পর্যন্ত
আযান দেয় না। কাসিম রহ. বলেন, এদের উভয়ের
মাঝে শুধু এতটুকু ব্যবধান ছিল যে, একজন নামতেন
এবং অন্যজন উঠতেন”। [74]
সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
« ﻟَﺎ ﻳَﻐُﺮَّﻧَّﻜُﻢْ ﻧِﺪَﺍﺀُ ﺑِﻠَﺎﻝٍ، ﻭَﻟَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺒَﻴَﺎﺽُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺒْﺪُﻭَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻨْﻔَﺠِﺮَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ »
“বিলালের আযান ও এ শুভ্ররেখা যেন তোমাদেরকে
ধোকায় না ফেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না সুবহে সাদিক
সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়”। [75]
সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻟَﺎ ﻳَﻐُﺮَّﻧَّﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺳَﺤُﻮﺭِﻛُﻢْ ﺃَﺫَﺍﻥُ ﺑِﻠَﺎﻝٍ، ﻭَﻟَﺎ ﺑَﻴَﺎﺽُ ﺍﻟْﺄُﻓُﻖِ ﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﻄِﻴﻞُ ﻫَﻜَﺬَﺍ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻴﺮَ
ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻭَﺣَﻜَﺎﻩُ ﺣَﻤَّﺎﺩٌ ﺑِﻴَﺪَﻳْﻪِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻳَﻌْﻨِﻲ ﻣُﻌْﺘَﺮِﺿًﺎ
“বিলালের আযান এবং আকাশ প্রান্তে এ লাল
রেখা যেন তোমাদেরকে সাহরী খাওয়ার ব্যাপারে
ধোকায় না ফেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না এ শুভ্র রেখা
পূর্বাকাশে এভাবে বিস্তৃত হয়। হাম্মাদ রহ.
বলেন, এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার উভয় হাত দ্বারা আড়াআড়ি
হওয়ার প্রতি ইংগিত করেছেন”। [76]
সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻟَﺎ ﻳَﻐُﺮَّﻧَّﻜُﻢْ ﺃَﺫَﺍﻥُ ﺑِﻠَﺎﻝٍ، ﻭَﻟَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺒَﻴَﺎﺽُ - ﻟِﻌَﻤُﻮﺩِ ﺍﻟﺼُّﺒْﺢِ - ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻴﺮَ ﻫَﻜَﺬَﺍ »
“বিলালের আযান এবং আকাশ প্রান্তে এ লাল
রেখা যেন তোমাদেরকে সাহরী খাওয়ার ব্যাপারে
ধোকায় না ফেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না এ শুভ্র রেখা
পূর্বাকাশে এভাবে বিস্তৃত হয়”। [77]
সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি যে,
« ﻟَﺎ ﻳَﻐُﺮَّﻥَّ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢْ ﻧِﺪَﺍﺀُ ﺑِﻠَﺎﻝٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﺤُﻮﺭِ، ﻭَﻟَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺒَﻴَﺎﺽُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻴﺮَ »
“বিলালের আযান যেন তোমাদেরকে ধোকায় না
ফেলে এবং শুভ্র রেখা যা স্তম্ভের মতো দেখা যায়
যতক্ষণ না তা বিস্তৃতভাবে উদ্ভাসিত হবে”। [78]
সাহরী খাওয়ায় তাড়াতাড়ি করা
সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﺗَﺴَﺤَّﺮُ ﻓِﻲ ﺃَﻫْﻠِﻲ، ﺛُﻢَّ ﺗَﻜُﻮﻥُ ﺳُﺮْﻋَﺘِﻲ ﺃَﻥْ ﺃُﺩْﺭِﻙَ ﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩَ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ »
“আমি আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে সাহরী
খেতাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সালাতে শরীক হওয়ার জন্য
তাড়াতাড়ি করতাম”। [79]
যির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻗُﻠْﻨَﺎ ﻟِﺤُﺬَﻳْﻔَﺔَ : ﺃَﻱَّ ﺳَﺎﻋَﺔٍ ﺗَﺴَﺤَّﺮْﺕَ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﻫُﻮَ
ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲَ ﻟَﻢْ ﺗَﻄْﻠُﻊْ »
“আমরা হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে
বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাথে আপনি কখন সাহরী
খেতেন? তিনি বললেন, খুব ভোরেই। তবে
হ্যাঁ, তখনো সূর্য উদয় হত না (ভোর রাত্রের শেষের
দিকে)।” [80]
‘আদী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যির
ইবন হুবাইস রহ.কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন যে,
«ﺗَﺴَﺤَّﺮْﺕُ ﻣَﻊَ ﺣُﺬَﻳْﻔَﺔَ، ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺟْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺃَﺗَﻴْﻨَﺎ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ ﺻَﻠَّﻴْﻨَﺎ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ، ﻭَﺃُﻗِﻴﻤَﺖِ
ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻭَﻟَﻴْﺲَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻤَﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻨَﻴْﻬَﺔٌ »
“আমি হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাহরী
খেলাম। অতঃপর সালাত আদায় করার জন্য বের
হলাম। যখন আমরা মসজিদে পৌছে দু’রাকা‘আত
সালাত আদায় করলাম (ফজরের সুন্নাত)। তখনই
(জামা‘আতের) ইকামাত বলা হলো। উভয়ের
মাঝখানে মাত্র অল্প কিছুক্ষণ সময়ের ব্যবধান
ছিল।” [81]
মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক রহ. বর্ণনায় এসেছে যে,
« ﻓَﺸَﺮِﺑْﺖُ، ﻭَﺍﻟْﻤُﺆَﺫِّﻥُ ﻳُﺆَﺫِّﻥُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻗَﺎﻝَ: « ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺩَﺧَﻠْﻨَﺎ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ ﺃُﻗِﻴﻤَﺖِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ، ﻭَﻫُﻢْ
ﻳَﻐْﻠِﺴُﻮﻥَ »
“আমি পানি পান করছিলাম, তখন মসজিদে
মুয়াজ্জিন আযান দিচ্ছিল। আমরা যখন মসজিদে
প্রবেশ করলাম তখন সালাতের ইকামত দেওয়া হলো,
লোকজন তখন অন্ধকারে সালাত আদায় করছিল”। [82]
সাহরী ও ফজরের সালাতের মাঝে ব্যবধানের
পরিমাণ
যায়েদ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺗَﺴَﺤَّﺮْﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻡَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ »، ﻗُﻠْﺖُ : ﻛَﻢْ ﻛَﺎﻥَ ﺑَﻴْﻦَ
ﺍﻷَﺫَﺍﻥِ ﻭَﺍﻟﺴَّﺤُﻮﺭِ؟ " ﻗَﺎﻝَ: «ﻗَﺪْﺭُ ﺧَﻤْﺴِﻴﻦَ ﺁﻳَﺔً »
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাহরী খাই, এরপর তিনি
সালাতের জন্য দাঁড়ান। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা
জিজ্ঞেসা করলাম আযান ও সাহরীর মাঝে কতটুকু
ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত (পাঠ
করা) পরিমান”। [ 83 ]
সাহরীতে রয়েছে অনেক বরকত কিন্তু তা ওয়াজিব
নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ একটানা সাওম
পালন করেছেন অথচ সেখানে সাহরীর উল্লেখ নেই
‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﺍﺻَﻞَ، ﻓَﻮَﺍﺻَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ﻓَﺸَﻖَّ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻓَﻨَﻬَﺎﻫُﻢْ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ:
ﺇِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ، ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﺴْﺖُ ﻛَﻬَﻴْﺌَﺘِﻜُﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻇَﻞُّ ﺃُﻃْﻌَﻢُ ﻭَﺃُﺳْﻘَﻰ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটানা
সাওম পালন করতে থাকলে লোকেরাও একটানা
সাওম পালন করতে শুরু করে। এ কাজ তাদের জন্য
কষ্টকর হয়ে দাঁড়াল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাদের নিষেধ করলেন। তারা
বলল, আপনি যে একনাগাড়ে সাওম পালন
করছেন? তিনি বললেন, আমি তো তোমাদের মতো
নই। আমাকে খাওয়ানো হয় ও পান করানো হয়”। [84]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺗَﺴَﺤَّﺮُﻭﺍ ﻓَﺈِﻥَّ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﺤُﻮﺭِ ﺑَﺮَﻛَﺔً »
“তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে বরকত
রয়েছে”। [85]
‘আমর ইবনু ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
« ﻓَﺼْﻞُ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﺻِﻴَﺎﻣِﻨَﺎ ﻭَﺻِﻴَﺎﻡِ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ، ﺃَﻛْﻠَﺔُ ﺍﻟﺴَّﺤَﺮِ »
“আমাদের ও আহলে কিতাবীদের সিয়ামের মধ্যে
পার্থক্য হলো সাহরী খাওয়া”। [86]
সাহরীতে যা খাওয়া মুস্তাহাব
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : «ﻧِﻌْﻢَ ﺳَﺤُﻮﺭُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﺍﻟﺘَّﻤْﺮُ »
“মুমিনের উত্তম সাহরী হলো খেজুর দ্বারা সাহরী
খাওয়া”। [87]
আযান দেওয়া অবস্থায় কারো হাতে খাবারের
পাত্র থাকলে কী করবে?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻊَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢُ ﺍﻟﻨِّﺪَﺍﺀَ ﻭَﺍﻟْﺈِﻧَﺎﺀُ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺪِﻩِ، ﻓَﻠَﺎ ﻳَﻀَﻌْﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘْﻀِﻲَ ﺣَﺎﺟَﺘَﻪُ ﻣِﻨْﻪُ »
“তোমাদের কেউ যখন ফজরের আযান শ্রবণ করে আর এ
সময় তার হাতে
খাদ্যের পাত্র থাকে, সে যেন আযানের কারণে
খাদ্য গ্রহণ বন্ধ না করে
যতক্ষণ না সে তদ্বারা স্বীয় প্রয়োজন পূর্ণ না
করে”। [88]
দিনের বেলায় (নফল) সাওমের নিয়ত করলে
উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আবু
দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন,
« ﻋِﻨْﺪَﻛُﻢْ ﻃَﻌَﺎﻡٌ؟ ﻓَﺈِﻥْ ﻗُﻠْﻨَﺎ: ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ: « ﻓَﺈِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ ﻳَﻮْﻣِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﻓَﻌَﻠَﻪُ ﺃَﺑُﻮ ﻃَﻠْﺤَﺔَ، ﻭَﺃَﺑُﻮ
ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻭَﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻭَﺣُﺬَﻳْﻔَﺔُ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻢْ »
“ঘরে কি খাদ্য আছে? যদি আমরা বলতাম না, তবে
তিনি বলতেন তাহলে আজকে আমি সাওম
পালনকারী। এমনিভাবে আবু তালহা, আবু হুরাইরা,
ইবন আব্বাস ও হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম এ কাজ
করতেন।” [89]
সালামাহ ইবন আকওয়া‘ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﻌَﺚَ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻳُﻨَﺎﺩِﻱ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ ﺇِﻥَّ ﻣَﻦْ ﺃَﻛَﻞَ
ﻓَﻠْﻴُﺘِﻢَّ ﺃَﻭْ ﻓَﻠْﻴَﺼُﻢْ، ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﻛُﻞْ ﻓَﻼَ ﻳَﺄْﻛُﻞْ »
“আশুরার দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে এ বলে লোকদের মধ্যে
ঘোষণা দেওয়ার জন্য পাঠালেন, যে ব্যক্তি খেয়ে
ফেলেছে সে যেন পূর্ণ করে নেয় অথবা বলেছেন, সে
যেন সাওম আদায় করে নেয় আর যে এখনো খায় নি
সে যেন আর না খায়”। [90]
সাওম পালনকারী জুনূবী (অপবিত্র) অবস্থায় সকাল
করলে
মারওয়ান রহ. থেকে বর্ণিত যে, ‘আয়শা এবং উম্মে
সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা তাকে সংবাদ
দিয়েছেন,
« ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺪْﺭِﻛُﻪُ ﺍﻟﻔَﺠْﺮُ ﻭَﻫُﻮَ ﺟُﻨُﺐٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻠِﻪِ، ﺛُﻢَّ
ﻳَﻐْﺘَﺴِﻞُ، ﻭَﻳَﺼُﻮﻡُ »
“নিজ নিজ স্ত্রীর সাথে মিলনজনিত জুনূবী
অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ফজরের সময় হয়ে যেত। তখন তিনি
গোসল করতেন এবং সাওম পালন করতেন।” [91]
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তাঁর
আলোচনায় বলতে শুনেছি যে,
«ﻣَﻦْ ﺃَﺩْﺭَﻛَﻪُ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺼُﻢْ »، ﻓَﺬَﻛَﺮْﺕُ ﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻌَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ ﻟِﺄَﺑِﻴﻪِ ﻓَﺄَﻧْﻜَﺮَ
ﺫَﻟِﻚَ، ﻓَﺎﻧْﻄَﻠَﻖَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﻭَﺍﻧْﻄَﻠَﻘْﺖُ ﻣَﻌَﻪُ، ﺣَﺘَّﻰ ﺩَﺧَﻠْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻭَﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ، ﻓَﺴَﺄَﻟَﻬُﻤَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﻋَﻦْ ﺫَﻟِﻚَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻜِﻠْﺘَﺎﻫُﻤَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺣُﻠُﻢٍ، ﺛُﻢَّ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺎﻧْﻄَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﺩَﺧَﻠْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺮْﻭَﺍﻥَ، ﻓَﺬَﻛَﺮَ
ﺫَﻟِﻚَ ﻟَﻪُ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣَﺮْﻭَﺍﻥُ: ﻋَﺰَﻣْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﺫَﻫَﺒْﺖَ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻓَﺮَﺩَﺩْﺕَ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣَﺎ ﻳَﻘُﻮﻝُ: ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺠِﺌْﻨَﺎ ﺃَﺑَﺎ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮٍ ﺣَﺎﺿِﺮُ ﺫَﻟِﻚَ ﻛُﻠِّﻪِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺬَﻛَﺮَ ﻟَﻪُ ﻋَﺒْﺪُ
ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ: ﺃَﻫُﻤَﺎ ﻗَﺎﻟَﺘَﺎﻩُ ﻟَﻚَ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻧَﻌَﻢْ، ﻗَﺎﻝَ: ﻫُﻤَﺎ ﺃَﻋْﻠَﻢُ، ﺛُﻢَّ ﺭَﺩَّ ﺃَﺑُﻮ
ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞِ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺒَّﺎﺱِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ: ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺫَﻟِﻚَ
ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞِ، ﻭَﻟَﻢْ ﺃَﺳْﻤَﻌْﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺮَﺟَﻊَ ﺃَﺑُﻮ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻋَﻤَّﺎ
ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ، ﻗُﻠْﺖُ ﻟِﻌَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻤَﻠِﻚِ : ﺃَﻗَﺎﻟَﺘَﺎ: ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ
ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺣُﻠُﻢٍ ﺛُﻢَّ ﻳَﺼُﻮﻡُ »
“জানাবাত (অপবিত্র) অবস্থায় কারো ভোর হলে
তার সাওম হবে না। এরপর এ কথাটি আমি আবদুর
রহমান ইবন হারিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট
বর্ণনা করলাম। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করলেন।
তারপর আব্দুর রহমান চললেন। আমিও তাঁর সাথে
সাথে চললাম। আমরা ‘আয়েশা এবং উম্মে সালামা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার নিকট গেলাম। এরপর আব্দুর
রহমান তাঁদের উভয়কে এ সমন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন।
তারা বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইহতিলাম ব্যাতিরেকে ও জানাবাতের অবস্থায়
ভোর করতেন এবং সাওম পালন করতেন। এরপর আমরা
মারওয়ানের নিকট আসলাম এবং আব্দুর রহমান তার
সাথে এ নিয়ে আলোচনা করলেন। এরপর মারওয়ান
বললেন আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, তুমি আবু
হুরায়রার নিকট যাও এবং তার কথাটি রদ করে দাও।
এরপর আমি আবু হুরায়রার নিকট গেলাম। এ সময় আবু
বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবদুর রহমানের সাথে
ছিলেন। আব্দুর রহমান এ নিয়ে আবু হুরায়রার সঙ্গে
আলোচনা করলেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বললেন, তোমার নিকট তাঁরা উভয়েই কি এ কথা
বলেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, তাঁরা উভয়েই এ কথা
বলেছেন। তখন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বললেন, বস্তুত তাঁরাই সর্বাধিক অবগত। তারপর আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর এ কথাটিকে ফযল
ইবন আব্বাসের প্রতি সম্পর্কিত করে বললেন আমি এ
কথাটি ফযলের (ইবন আব্বাস) থেকে শুনেছিলাম,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনি
নি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আবু হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ বিষয়ে তাঁর মত পরিবর্তন
করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আব্দুল মালিককে
জিজ্জাসা করলাম। তারা রমযানের কথা বলেছে
কি? তিনি বললেন হ্যাঁ অনুরূপই নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহতিলাম ব্যতিরেকেও
জানাবাত অবস্থায় ভোর করতেন। এরপর সাওম পালন
করতেন।” [92]
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
« ﺃَﻥَّ ﻣَﺮْﻭَﺍﻥَ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻳَﺴْﺄَﻝُ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ، ﺃَﻳَﺼُﻮﻡُ؟
ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ: « ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﻣِﻦْ ﺟِﻤَﺎﻉٍ، ﻟَﺎ ﻣِﻦْ ﺣُﻠُﻢٍ، ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ
ﻳُﻔْﻄِﺮُ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻘْﻀِﻲ »
“একদা মারওয়ান তাকে উম্মে সালামা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট পাঠালেন ঐ ব্যক্তি
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য যার জানাবাত
অবস্থায় ভোর হলো, সে সাওম পালন করতে পারবে
কি? তিনি বললেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইহতিলাম ব্যতিরেকে
স্ত্রী সহবাসের কারণে গোসল ফরয হওয়া অবস্থায়
ভোর হতো। এরপর সাওম ভেঙ্গে ইফতারও করতেন
করতেন না এবং সাওমের কাযাও করতেন না”। [93]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
« ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﺟَﺎﺀَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺴْﺘَﻔْﺘِﻴﻪِ، ﻭَﻫِﻲَ ﺗَﺴْﻤَﻊُ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀِ ﺍﻟْﺒَﺎﺏِ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺗُﺪْﺭِﻛُﻨِﻲ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺟُﻨُﺐٌ، ﺃَﻓَﺄَﺻُﻮﻡُ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: « ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺗُﺪْﺭِﻛُﻨِﻲ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺟُﻨُﺐٌ ﻓَﺄَﺻُﻮﻡُ » ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻟَﺴْﺖَ ﻣِﺜْﻠَﻨَﺎ، ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠﻪِ، ﻗَﺪْ ﻏَﻔَﺮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻚَ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻚَ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﺄَﺧَّﺮَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﻭَﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺄَﺭْﺟُﻮ ﺃَﻥْ ﺃَﻛُﻮﻥَ
ﺃَﺧْﺸَﺎﻛُﻢْ ﻟِﻠَّﻪِ، ﻭَﺃَﻋْﻠَﻤَﻜُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﺗَّﻘِﻲ »
“ফতোয়া জিজ্ঞাসা করার জন্য এক ব্যক্তি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট
আসলো। এ সময় তিনি দরজার পেছন থেকে কথাগুলো
শুনছিলেন। লোকটি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ!
জানাবাত অবস্থায় আমার ফজরের সালাতের সময়
হয়ে যায়, এমতাবস্থায় আমি সাওম পালন করতে
পারি কি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জানাবাত অবস্থায়
আমারও ফজরের সালাতের সময় হয়ে যায় আমি তো
সাওম পালন করি। এরপর লোকটি বলল, হে আল্লাহর
রাসূল! আপনি তো আমাদের মতো নন। আল্লাহ
তা‘আলা আপনার পূর্বাপর সমুদয় গুনাহ ক্ষমা করে
দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ!
আমার আশা, আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে
সর্বাধিক ভয় করি এবং আমি সর্বাধিক অবগত ঐ
বিষয় সম্পর্কে যা থেকে আমার বিরত থাকা
আবশ্যক”। [94]
সুলাইমান ইবন ইয়াসার থেকে বর্ণিত,
«ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﺄَﻝَ ﺃُﻡَّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﺃَﻳَﺼُﻮﻡُ، ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﺣْﺘِﻠَﺎﻡٍ، ﺛُﻢَّ ﻳَﺼُﻮﻡُ »
“তিনি উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে ঐ
ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে জানাবাত
অবস্থায় ভোর করলো। সে কি সাওম পালন করবে?
তিনি (উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)
বলেন, রমযান মাসে ইহতিলাম ছাড়াই স্ত্রী
সহবাসের কারণে জানাবাত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভোর
হতো, এরপর তিনি সাওম পালন করতেন”। [95]
সাওম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,
«ﻳَﺤْﺮُﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓَﺮْﺟُﻬَﺎ »
“যৌনাঙ্গ দিয়ে সহবাস করা হারাম।”
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﻘَﺒِّﻞُ ﻭَﻳُﺒَﺎﺷِﺮُ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺃَﻣْﻠَﻜَﻜُﻢْ ﻟِﺈِﺭْﺑِﻪِ، ﻭَﻗَﺎﻝَ:
ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﴿ﻣََٔﺎﺭِﺏُ﴾ [ﻃﻪ: ١٨ ] ﺣَﺎﺟَﺔٌ، ﻗَﺎﻝَ ﻃَﺎﻭُﺱٌ : ﴿ﻏَﻴۡﺮِ ﺃُﻭْﻟِﻲ ﭐﻟۡﺈِﺭۡﺑَﺔِ﴾ [ ﺍﻟﻨﻮﺭ:
٣١] ﺍﻷَﺣْﻤَﻖُ ﻻَ ﺣَﺎﺟَﺔَ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমের
অবস্থায় চুমু খেতেন এবং গায়ে গা লাগাতেন। তবে
তিনি তাঁর প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চাইতে
অধিক সক্ষম ছিলেন। ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ﻣََٔﺎﺭِﺏُ মানে হাজত বা
চাহিদা। তাউস রহ. বলেন, ﻏَﻴۡﺮِ ﺃُﻭْﻟِﻲ ﭐﻟۡﺈِﺭۡﺑَﺔِ মানে
বোধহীন, যার মেয়েদের প্রতি কোনো খাহিশ
নেই।”[96]
সাওম অবস্থায় চুম্বন করা
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﻴُﻘَﺒِّﻞُ ﺑَﻌْﺾَ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﺛُﻢَّ ﺿَﺤِﻜَﺖْ »
“সাওম পালন অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর কোনো কোনো স্ত্রীকে চুমু
খেতেন। (এ কথা বলে) ‘আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হেসে দিলেন।” [97]
উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺑَﻴْﻨَﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺨَﻤِﻴﻠَﺔِ، ﺇِﺫْ ﺣِﻀْﺖُ ﻓَﺎﻧْﺴَﻠَﻠْﺖُ،
ﻓَﺄَﺧَﺬْﺕُ ﺛِﻴَﺎﺏَ ﺣِﻴﻀَﺘِﻲ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻣَﺎ ﻟَﻚِ ﺃَﻧَﻔِﺴْﺖِ؟ ﻗُﻠْﺖُ: ﻧَﻌَﻢْ، ﻓَﺪَﺧَﻠْﺖُ ﻣَﻌَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺨَﻤِﻴﻠَﺔِ ﻭَﻛَﺎﻧَﺖْ
ﻫِﻲَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻐْﺘَﺴِﻼَﻥِ ﻣِﻦْ ﺇِﻧَﺎﺀٍ ﻭَﺍﺣِﺪٍ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳُﻘَﺒِّﻠُﻬَﺎ ﻭَﻫُﻮَ
ﺻَﺎﺋِﻢٌ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সঙ্গে একই চাঁদরে আমি ছিলাম। এমন সময় আমার
হায়েয শুরু হলো। তখন আমি আমার হায়েযের কাপড়
পরিধান করলাম। তিনি বললেন, তোমার কী
হলো? তোমার কি হায়েয দেখো দিয়েছে? আমি
বললাম, হ্যাঁ। তারপর আমি আবার তাঁর সঙ্গে
চাঁদরের ভিতর ঢুকে পড়লাম। তিনি এবং রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র
থেকে গোসল করতেন এবং সাওম পালন অবস্থায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁকে চুমু দিতেন।” [98]
হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﻘَﺒِّﻞُ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাওম অবস্বায় চুমু দিতেন।” [99]
উমার ইবন আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত,
«ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﺄَﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﺃَﻳُﻘَﺒِّﻞُ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: «ﺳَﻞْ ﻫَﺬِﻩِ » ﻟِﺄُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮَﺗْﻪُ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
ﻳَﺼْﻨَﻊُ ﺫَﻟِﻚَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻗَﺪْ ﻏَﻔَﺮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻚَ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻚَ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﺄَﺧَّﺮَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ
ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: «ﺃَﻣَﺎ ﻭَﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺄَﺗْﻘَﺎﻛُﻢْ ﻟِﻠَّﻪِ، ﻭَﺃَﺧْﺸَﺎﻛُﻢْ ﻟَﻪُ »
“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, সাওম
পালনকারী ব্যক্তি চুম্বন করতে পারে কি? তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে বললেন, কথাটি উম্মে সালমাকে জিজ্ঞাসা
কর। (তাকে জিজ্ঞাসা করার পর) তিনি বললেন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরূপ করেন। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল!
আল্লাহ তো আপনার আগে পরের সমূদয় গুনাহ ক্ষমা
করে দিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, শোন!
আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহ তা‘আলাকে
তোমাদের সকলের চেয়ে অধিক ভয় করি”। [100]
স্বামীর অনুমতিক্রমে স্ত্রীর নফল সাওম পালন
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলেন,
« ﻻَ ﺗَﺼُﻮﻡُ ﺍﻟﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻭَﺑَﻌْﻠُﻬَﺎ ﺷَﺎﻫِﺪٌ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺈِﺫْﻧِﻪِ »
“কোনো স্ত্রী স্বামীর উপস্থিতিতে তাঁর অনুমতি
ছাড়া নফল সাওম রাখবে না”। [101]
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻌِﻴﺪٍ ﻗَﺎﻝَ: ﺟَﺎﺀَﺕِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻋِﻨْﺪَﻩُ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ:
ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺇِﻥَّ ﺯَﻭْﺟِﻲ ﺻَﻔْﻮَﺍﻥَ ﺑْﻦَ ﺍﻟْﻤُﻌَﻄَّﻞِ، ﻳَﻀْﺮِﺑُﻨِﻲ ﺇِﺫَﺍ ﺻَﻠَّﻴْﺖُ، ﻭَﻳُﻔَﻄِّﺮُﻧِﻲ ﺇِﺫَﺍ ﺻُﻤْﺖُ،
ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺻَﻠَﺎﺓَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ، ﻗَﺎﻝَ ﻭَﺻَﻔْﻮَﺍﻥُ ﻋِﻨْﺪَﻩُ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺴَﺄَﻟَﻪُ ﻋَﻤَّﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺃَﻣَّﺎ ﻗَﻮْﻟُﻬَﺎ ﻳَﻀْﺮِﺑُﻨِﻲ ﺇِﺫَﺍ ﺻَﻠَّﻴْﺖُ، ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﺗَﻘْﺮَﺃُ ﺑِﺴُﻮﺭَﺗَﻴْﻦِ ﻭَﻗَﺪْ ﻧَﻬَﻴْﺘُﻬَﺎ،
ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﻟَﻮْ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺳُﻮﺭَﺓً ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﻟَﻜَﻔَﺖِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ »، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻗَﻮْﻟُﻬَﺎ: ﻳُﻔَﻄِّﺮُﻧِﻲ، ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﺗَﻨْﻄَﻠِﻖُ
ﻓَﺘَﺼُﻮﻡُ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺭَﺟُﻞٌ ﺷَﺎﺏٌّ، ﻓَﻠَﺎ ﺃَﺻْﺒِﺮُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ: « ﻟَﺎ
ﺗَﺼُﻮﻡُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺯَﻭْﺟِﻬَﺎ »، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻗَﻮْﻟُﻬَﺎ: ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺎ ﺃُﺻَﻠِّﻲ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ، ﻓَﺈِﻧَّﺎ ﺃَﻫْﻞُ
ﺑَﻴْﺖٍ ﻗَﺪْ ﻋُﺮِﻑَ ﻟَﻨَﺎ ﺫَﺍﻙَ، ﻟَﺎ ﻧَﻜَﺎﺩُ ﻧَﺴْﺘَﻴْﻘِﻆُ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ، ﻗَﺎﻝَ: « ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺍﺳْﺘَﻴْﻘَﻈْﺖَ
ﻓَﺼَﻞِّ »
“জনৈকা মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের খেদমতে আগমন করে এবং এ সময়
আমরাও তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলাম। সে মহিলা
বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার স্বামী সাফওয়ান
ইবন মু‘আত্তাল, যখন আমি সালাত পড়ি তখন
আমাকে মারধর করে আর আমি সাওম পালন করলে
সে আমাকে সাওম ভাঙ্গতে বলে। অথচ সে সে
সূর্যোদয়ের পূর্বে কখনো ফজরের সালাত পড়ে না ।
বর্ণনাকারী বলেন, সাফওয়ানও তাঁর নিকট উপস্থিত
ছিলেন। তিনি তাঁর নিকট উক্ত মহিলার অভিযোগ
সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইয়া
রাসূলুল্লাহ্! তার বক্তব্য ‘আমাকে মারধর করে, যখন
আমি সালাত আদায় করি।’ প্রকৃত ব্যাপার এই যে, সে
এমন (দীর্ঘ) দু’টি সূরা (সালাতের মধ্যে) পড়ে, যা
যা পড়তে তাকে আমি নিষেধ করি। বর্ণনাকারী
বলেন, তিনি বলেছেন, যদি কেউ (ছোট) একটি সূরা
পড়ে, তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। আর তার বক্তব্য
‘আমি সাওম পালন করলে সে তা ভাঙ্গতে বলে।’
ব্যাপার এই যে, সে সব সময়ই (নফল) সাওম রাখে। আর
আমি যুবক হওয়ার কারণে (স্ত্রী সহবাস ব্যতীত)
থাকতে পারি না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ থেকে কোনো
স্ত্রীলোক স্বামীর অনুমতি ব্যতীত (নফল) সাওম
রাখতে পারবে না। আর তার বক্তব্য যে, ‘আমি
সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজরের) সালাত আদায় করি না।’
এ সম্পর্কে আমার বক্তব্য এই যে, আমরা পানি
সরবরাহকারী পরিবারের লোক। রাতের প্রথম ভাগে
কাজ করি, শেষ রাতে নিদ্রা যাই এবং এটাই
আমাদের অভ্যাস। এ জন্য আমরা সূর্যোদয় হওয়া
ব্যতীত নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতে পারি না। তিনি
বলেন, তুমি যখই নিদ্রা থেকে জাগ্রত হবে তখনই
সালাত পড়ে নিবে।” [102]
সাওম পালনকারীর গোসল করা
সাওমরত অবস্থায় ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা
একটি কাপড় ভিজিয়ে গায়ে দিতেন। শা‘বী রহ.
গোসলখানায় প্রবেশ করেছেন। (অর্থাৎ পানি দিযে
গোসল করেছেন।) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বলেন, হাঁড়ি থেকে কিছু বা অন্য কোনো জিনিস
চেটে স্বাদ দেখায় কোনো দোষ নেই। হাসান রহ.
বলেন, সাওম পালনকারীর কুলি করা এবং ঠাণ্ডা
লাগান দোষনীয় নয়। ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন, তোমাদের কেউ সাওম পালন করলে সে
যেন সকালে তেল লাগায় এবং চুল আঁচড়িয়ে নেয়।
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমার একটি
হাউজ আছে, আমি সাওম পালন অবস্থায় তাতে
প্রবেশ করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি সাওম পালন
অবস্থায় মিসওয়াক করতেন। ইবন উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সাওম পালন অবস্থায় দিনের
প্রথম ভাগে এবং শেষ ভাগে মিসওয়াক করতেন।
‘আতা রহ. বলেন, থুতু গিলে ফেললে সাওম ভঙ্গ
হয়েছে বলা যায় না। ইবন সীরীন রহ. বলেন, কাঁচা
বা ভেজা মিসওয়াক ব্যবহারে কোনো দোষ নেই।
তাকে প্রশ্ন করা হলো, কাঁচা মিসওয়াকের তো
স্বাদ রয়েছে? তিনি বলেন, পানিরও তো স্বাদ
আছে অথচ এ পানি দিয়েই তুমি কুলি কর। আনাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, হাসান রহ. ও ইবরাহীম রহ.
সাওম পালনকারীর সুরমা ব্যবহারে কোনো দোষ
মনে করতেন না। [103]
‘উরওয়াহ এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ « ﻳُﺪْﺭِﻛُﻪُ ﺍﻟﻔَﺠْﺮُ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺣُﻠْﻢٍ، ﻓَﻴَﻐْﺘَﺴِﻞُ
ﻭَﻳَﺼُﻮﻡُ »
“রমযান মাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর ভোর হতো ইহতিলাম ব্যতীত
(জুনুবী অবস্থায়)। তখন তিনি গোসল করতেন এবং
সাওম পালন করতেন।” [104 ]
আবু বাকর ইবন ‘আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﻧَﺎ ﻭَﺃَﺑِﻲ ﻓَﺬَﻫَﺒْﺖُ ﻣَﻌَﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﺩَﺧَﻠْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﻋَﻠَﻰ
ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻴُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﻣِﻦْ ﺟِﻤَﺎﻉٍ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﺣْﺘِﻼَﻡٍ، ﺛُﻢَّ
ﻳَﺼُﻮﻣُﻪُ ﺛُﻢَّ ﺩَﺧَﻠْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ : ﻣِﺜْﻞَ ﺫَﻟِﻚَ »
“আমি আমার পিতার সঙ্গে রওয়ানা হয়ে ‘আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট পৌছলাম। তিনি
বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি
ইহতিলাম ছাড়া স্ত্রী সহবাসের কারণে জুনূবী
অবস্থায় সকাল পর্যন্ত থেকেছেন এবং এরপর সাওম
পালন করেছেন। তারপর আমরা উম্মে সালামা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট গেলাম। তিনিও অনুরূপ
কথাই বললেন।
আবু জা‘ফর বলেন, ‘আব্দুল্লাহ রহ.-কে আমি
জিজ্ঞাসা করলাম, কোনো ব্যক্তি সাওম ভঙ্গ করলে
সে কি স্ত্রী সহবাসকারীর মতো কাফফারা আদায়
করবে? তিনি বললেন, না; তুমি কি সে হাদীসগুলো
সম্পর্কে জান না যাতে বর্ণিত আছে যে, যুগ যুগ ধরে
সাওম পালন করলেও তার কাযা আদায় হবে না? [105]
সাওম পালনকারী যদি ভুলে কিছু খেলে বা পান
করলে
‘আতা রহ. বলেন, নাকে পানি দিতে গিয়ে যদি তা
কন্ঠনালীতে ঢুকে যায়, আর সে ফিরাতে সক্ষম না
হয় তা হলে কোনো দোষ নেই। হাসান রহ. বলেন,
সাওম পালনকারী ব্যক্তির কন্ঠনালীতে মাছি ঢুকে
পড়লে তাঁর কিছু করতে হবে না। হাসান ও মুজাহিদ
রহ. বলেছেন, সাওম পালনকারী ব্যক্তি যদি
ভুলবশতঃ স্ত্রী সহবাস করে ফেলে, তবে তাঁর কিছু
করতে হবে না।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﻧَﺴِﻲَ ﻓَﺄَﻛَﻞَ ﻭَﺷَﺮِﺏَ، ﻓَﻠْﻴُﺘِﻢَّ ﺻَﻮْﻣَﻪُ، ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻃْﻌَﻤَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺳَﻘَﺎﻩُ »
“সাওমদার ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে
ফেলে তাহলে সে যেন তার সাওম পুরা করে নেয়।
কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।” [106]
সাওম পালনকারীর শুকনো ও ভেজা মিসওয়াক
ব্যবহার করার হুকুম
‘আমির ইবন রবী‘আ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাওম পালন অবস্থায়
অসংখ্য বার মিসওয়াক করতে দেখেছি। আবু হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না
করতাম তবে প্রতিবার অযুর সময় আমি তাদেরকে
মিসওয়াকের নির্দেশ দিতাম। জাবির ও যায়েদ ইবন
খালিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সূত্রে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ
বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি সাওম পালনকারী ও
সাওম পালনকারী নয়, তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য
করেন নি। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা
করেন যে, মিসওয়াক করায় রয়েছে মুখের পবিত্রতা ও
আল্লাহর সন্তুষ্টি। ‘আতা ও কাতাদাহ রহ. বলেছেন,
সাওম পালনকারী তার মুখের থুতু গিলে ফেলতে
পারে।
হুমরান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﻓْﺮَﻍَ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﺛُﻢَّ ﺗَﻤَﻀْﻤَﺾَ ﻭَﺍﺳْﺘَﻨْﺜَﺮَ، ﺛُﻢَّ
ﻏَﺴَﻞَ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﺛُﻢَّ ﻏَﺴَﻞَ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟﻴُﻤْﻨَﻰ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻤَﺮْﻓِﻖِ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﺛُﻢَّ ﻏَﺴَﻞَ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟﻴُﺴْﺮَﻯ ﺇِﻟَﻰ
ﺍﻟﻤَﺮْﻓِﻖِ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﺛُﻢَّ ﻣَﺴَﺢَ ﺑِﺮَﺃْﺳِﻪِ، ﺛُﻢَّ ﻏَﺴَﻞَ ﺭِﺟْﻠَﻪُ ﺍﻟﻴُﻤْﻨَﻰ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﺛُﻢَّ ﺍﻟﻴُﺴْﺮَﻯ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ:
ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻧَﺤْﻮَ ﻭَﺿُﻮﺋِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ
ﻭُﺿُﻮﺋِﻲ ﻫَﺬَﺍ، ﺛُﻢَّ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﻻَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻓِﻴﻬِﻤَﺎ ﺑِﺸَﻲْﺀٍ، ﺇِﻟَّﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ
ﺫَﻧْﺒِﻪِ »
“আমি ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে অযু করতে
দেখেছি। তিনি তিনবার হাতের উপর পানি
ঢাললেন। এরপর তিনি কুলি করলেন, নাকে পানি
দিলেন। তারপর তিনবার চেহারা (মুখমণ্ডল) ধৌত
করলেন। এরপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত
করলেন এবং বামহাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত
করলেন। এরপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। তারপর
ডান পা তিনবার ধৌত করলেন তারপর বাম
পা তিনবার ধৌত করলেন। এরপর বললেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
অযু করতে দেখেছি আমার এ অযুর মতোই। এরপর
তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ অযুর মতো অযু
করে দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করবে এবং মনে
মনে কোনো কিছুর চিন্তা ভাবনায় লিপ্ত হবে
না, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া
হবে।” [107]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
যখন অযু করবে তখন নাকের ছিদ্র দিয়ে পানি টেনে
নিবে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে
সাওম পালনকারী ও সাওম পালনকারী
নয় এতদোভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেন নি।
হাসান রহ. বলেন, সাওম পালনকারীর জন্য নাকে
ঔষধ ব্যবহার করায় দোষ নেই যদি তা কণ্ঠনালীতে
না পৌঁছে এবং সে সুরমা ব্যবহার করতে পারবে।
‘আতা রহ. বলেন, কুলি করে মুখের পানি ফেলে
দেওয়ার পর থুতু এবং মুখের অবশিষ্ট পানি গিলে
ফেলায় কোনো ক্ষতি নেই এবং সাওম পালনকারী
গোন্দ (আঠা) চিবাবে না। গোন্দ চিবিয়ে যদি কেউ
থুতু গিলে ফেলে, তাহলে তার সাওম নষ্ট হয়ে যাবে,
আমি এ কথা বলছি না, তবে এরূপ করা থেকে নিষেধ
করা উচিত।
লাকীত ইবন সাবিরা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর
পিতা বর্ণনা করেন,
«ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻲ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻮُﺿُﻮﺀِ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺳْﺒِﻎِ ﺍﻟﻮُﺿُﻮﺀَ، ﻭَﺧَﻠِّﻞْ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻷَﺻَﺎﺑِﻊِ،
ﻭَﺑَﺎﻟِﻎْ ﻓِﻲ ﺍﻻِﺳْﺘِﻨْﺸَﺎﻕِ، ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ ».
“আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অযু সম্পর্কে জ্ঞাত
করুন। তিনি বললেন, অযু পরিপূর্ণভাবে করবে।
আঙ্গুলসমূহের মাঝে খিলাল করবে। খুব উত্তমরূপে
নাকে পানি ব্যবহার করবে, তবে সাওমরত থাকলে
ভিন্ন কথা।” [108]
রমযানে দিনের বেলায় সহবাস করলে
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে একটি মরফু‘
হাদীস বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ওযর এবং রোগ
ব্যতীত রমযানের একটি সাওম ভেঙ্গে ফেলল, তার
সারা জীবনের সাওমের দ্বারাও এর কাযা আদায়
হবে না, যদিও সে সারা জীবন সাওম পালন করে।
ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও অনুরূপ কথাই
বলেছেন। সা‘ঈদ ইবন মুসায়্যিব, শা‘বী, ইবন
যোবায়ের, ইবরাহীম, কাতাদা ও হাম্মাদ রহ.
বলেছেন, তার স্থলে একদিন কাযা করবে।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺇِﻥَّ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺇِﻧَّﻪُ ﺍﺣْﺘَﺮَﻕَ، ﻗَﺎﻝَ: « ﻣَﺎ ﻟَﻚَ؟ » ، ﻗَﺎﻝَ:
ﺃَﺻَﺒْﺖُ ﺃَﻫْﻠِﻲ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﺄُﺗِﻲَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻤِﻜْﺘَﻞٍ ﻳُﺪْﻋَﻰ ﺍﻟﻌَﺮَﻕَ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃَﻳْﻦَ ﺍﻟﻤُﺤْﺘَﺮِﻕُ » ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻧَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: ﺗَﺼَﺪَّﻕْ ﺑِﻬَﺬَﺍ »
“এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, সে তো জ্বলে
গেছে। তিনি বললেন, তোমার কি হয়েছে? লোকটি
বলল, রমযানে আমি স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। এ
সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কাছে (খেজুর ভর্তি) ঝুড়ি আসলো, যাকে ‘আরাক (১৫
সা‘ পরিমাণ) বলা হয়। তখন নবীসাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অগ্নিদগ্ধ লোকটি
কোথায়? লোকটি বলল, আমি। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো সদকা করে
দাও”। [109]
রমযানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করলে সদকা
দেওয়ার কিছু না থাকলে, সে যেন নিজে নিজেকে
সদকা দিয়ে কাফফারাস্বরূপ আদায় করে
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺑَﻴْﻨَﻤَﺎ ﻧَﺤْﻦُ ﺟُﻠُﻮﺱٌ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺇِﺫْ ﺟَﺎﺀَﻩُ ﺭَﺟُﻞٌ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻫَﻠَﻜْﺖُ. ﻗَﺎﻝَ: « ﻣَﺎ ﻟَﻚَ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻗَﻌْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﻫَﻞْ ﺗَﺠِﺪُ ﺭَﻗَﺒَﺔً ﺗُﻌْﺘِﻘُﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻬَﻞْ ﺗَﺴْﺘَﻄِﻴﻊُ ﺃَﻥْ ﺗَﺼُﻮﻡَ ﺷَﻬْﺮَﻳْﻦِ
ﻣُﺘَﺘَﺎﺑِﻌَﻴْﻦِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻻَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻓَﻬَﻞْ ﺗَﺠِﺪُ ﺇِﻃْﻌَﺎﻡَ ﺳِﺘِّﻴﻦَ ﻣِﺴْﻜِﻴﻨًﺎ . ﻗَﺎﻝَ: ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻤَﻜَﺚَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﺒَﻴْﻨَﺎ ﻧَﺤْﻦُ ﻋَﻠَﻰ ﺫَﻟِﻚَ ﺃُﺗِﻲَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻌَﺮَﻕٍ ﻓِﻴﻬَﺎ
ﺗَﻤْﺮٌ ﻭَﺍﻟﻌَﺮَﻕُ ﺍﻟﻤِﻜْﺘَﻞُ ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻳْﻦَ ﺍﻟﺴَّﺎﺋِﻞُ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﻧَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: « ﺧُﺬْﻫَﺎ، ﻓَﺘَﺼَﺪَّﻕْ ﺑِﻪِ ﻓَﻘَﺎﻝَ
ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ: ﺃَﻋَﻠَﻰ ﺃَﻓْﻘَﺮَ ﻣِﻨِّﻲ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ؟ ﻓَﻮَﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﻻَﺑَﺘَﻴْﻬَﺎ - ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﺤَﺮَّﺗَﻴْﻦِ ﺃَﻫْﻞُ
ﺑَﻴْﺖٍ ﺃَﻓْﻘَﺮُ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺑَﻴْﺘِﻲ، ﻓَﻀَﺤِﻚَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺣَﺘَّﻰ ﺑَﺪَﺕْ ﺃَﻧْﻴَﺎﺑُﻪُ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ:
«ﺃَﻃْﻌِﻤْﻪُ ﺃَﻫْﻠَﻚَ »
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক
ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ধ্বংস
হয়ে গিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কী হয়েছে? সে
বলল, আমি সাওম পালন অবস্থায় আমার স্ত্রীর
সাথে মিলিত হয়েছি। রাসূলুল্লাহ বললেন, আযাদ
করার মতো কোনো ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে
বলল, না। তিনি বললেন, তুমি কি একাধারে দু’মাস
সাওম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর
তিনি বললেন, ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে
কি? সে বলল, না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে
গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে
এক ‘আরাক পেশ করা হলো যাতে খেজুর ছিল।
‘আরাক হলো ঝুড়ি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে
বলল, আমি। তিনি বললেন, এগুলো নিয়ে সদকা করে
দাও। তখন লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার
চেয়েও বেশি অভাবগ্রস্ত কে সদকা করব? আল্লাহর
শপথ, মদীনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় (কালো পাথর
বিশিষ্ট) প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে
অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত
(আনইয়াব) দেখা গেল। এরপর তিনি বললেন এগুলো
তোমার পরিবারকে খাওয়াও”। [110]
রমযানে সাওম পালনকারী অবস্থা যে ব্যক্তি স্ত্রী
সহবাস করেছে সে ব্যক্তি কি কাফফারা থেকে তার
অভাবগ্রস্ত পরিবারকে খাওয়াতে পারবে?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺍﻵﺧَﺮَ ﻭَﻗَﻊَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗِﻪِ ﻓِﻲ
ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﺗَﺠِﺪُ ﻣَﺎ ﺗُﺤَﺮِّﺭُ ﺭَﻗَﺒَﺔً؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺘَﺴْﺘَﻄِﻴﻊُ ﺃَﻥْ ﺗَﺼُﻮﻡَ ﺷَﻬْﺮَﻳْﻦِ
ﻣُﺘَﺘَﺎﺑِﻌَﻴْﻦِ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻓَﺘَﺠِﺪُ ﻣَﺎ ﺗُﻄْﻌِﻢُ ﺑِﻪِ ﺳِﺘِّﻴﻦَ ﻣِﺴْﻜِﻴﻨًﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺄُﺗِﻲَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻌَﺮَﻕٍ ﻓِﻴﻪِ ﺗَﻤْﺮٌ، ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟﺰَّﺑِﻴﻞُ، ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻃْﻌِﻢْ ﻫَﺬَﺍ ﻋَﻨْﻚَ ﻗَﺎﻝَ: ﻋَﻠَﻰ
ﺃَﺣْﻮَﺝَ ﻣِﻨَّﺎ، ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﻻَﺑَﺘَﻴْﻬَﺎ ﺃَﻫْﻞُ ﺑَﻴْﺖٍ ﺃَﺣْﻮَﺝُ ﻣِﻨَّﺎ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺄَﻃْﻌِﻤْﻪُ ﺃَﻫْﻠَﻚَ »
“এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, এই হতভাগা
রমযানে স্ত্রী সহবাস করেছে। তিনি বললেন, তুমি
কি একটি গোলাম আযাদ করতে পারবে? লোকটি
বলল, না। তিনি বললেন, তুমি কি ক্রমাগত দু’মাস
সাওম পালন করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি
বললেন, তুমি কি ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে
পারবে? সে বলল, না। এমতাবস্থায় নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
এক ‘আরাক অর্থাৎ এক ঝুড়ি খেজুর এল। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো
তোমার তরফ থেকে লোকদেরকে আহার করাও।
লোকটি বলল, আমার চেয়েও বেশি
অভাবগ্রস্তকে? অথচ মদীনার উভয় লাবার অর্থাৎ
হররার মধ্যবর্তী স্থলে আমার পরিবারের চেয়ে
অধিক অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তোমার
পরিবারকেই খাওয়াও”। [111]
সাওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো ও বমি করা
ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, ইয়াহইয়া ইবন সালিহ
রহ. আমাকে বলেছেন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বমি করলে সাওম
ভঙ্গ হয় না। কেননা এতে কিছু বের হয়, ভিতরে
প্রবেশ করে না। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে এও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, সাওম
ভঙ্গ হয়ে যাবে। প্রথম উক্তিটি বেশি সহীহ। ইবন
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ‘ইকরিমা রহ. বলেন,
কোনো কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে সাওম নষ্ট হয়।
কিন্তু বের হওয়ার কারণে নষ্ট হয় না। ইবন উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সাওম পালন অবস্থায়
শিঙ্গা লাগাতেন। অবশ্য পরবর্তী সময় তিনি দিনে
শিঙ্গা লাগানো ছেড়ে দিয়ে রাতে শিঙ্গা
লাগাতেন। আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাতে
শিঙ্গা লাগিয়েছেন। সা‘ঈদ, যায়েদ, ইবন আরকাম ও
উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম সম্পর্কে
বর্ণিত আছে যে, তারা সকলেই সাওম অবস্থায়
শিঙ্গা লাগাতেন। বুকায়র রহ. উম্মে ‘আলকামা রহ.
থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার সামনে শিঙ্গা লাগাতাম,
তিনি আমাদের নিষেধ করতেন না। হাসান রহ.
থেকে একাধিক বর্ণনাকারী সূত্রে মারফু‘ হাদীসে
আছে যে, শিঙ্গা প্রয়োগকারী এবং গ্রহণকারী
উভয়ের সাওমই নষ্ট হয়ে যাবে। ইমাম বুখারী রহ.
বলেন, ‘আইয়াশ রহ. হাসান রহ. থেকে আমার নিকট
অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এ
কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
বর্ণিত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি বললেন,
আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﺣْﺘَﺠَﻢَ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺤْﺮِﻡٌ، ﻭَﺍﺣْﺘَﺠَﻢَ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম
অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং সাওম পালন
অবস্থায়ও সিংগা লাগিয়েছেন”। [112]
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺍﺣْﺘَﺠَﻢَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম
পালন অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন”। [113]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে প্রশ্ন
করা হলো,
« ﺃَﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗَﻜْﺮَﻫُﻮﻥَ ﺍﻟﺤِﺠَﺎﻣَﺔَ ﻟِﻠﺼَّﺎﺋِﻢِ؟ ﻗَﺎﻝَ: « ﻻَ، ﺇِﻟَّﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﻞِ ﺍﻟﻀَّﻌْﻒِ »، ﻭَﺯَﺍﺩَ ﺷَﺒَﺎﺑَﺔُ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ
ﺷُﻌْﺒَﺔُ، ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ »
“আপনারা কি সাওম পালনকারীর শিঙ্গা লাগানো
অপছন্দ করতেন? তিনি বললেন, না। তবে দূর্বল হয়ে
যাবার কারণে অপছন্দ করতাম। শাবাবা রহ.
শু’বা, রহ. থেকে ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ “নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কথাটি
অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন”। [114]
সফর অবস্থায় সাওম পালন করা ও না করা
আবু ইসহাক আশ-শায়বানী থেকে বর্ণিত, তিনি ইবন
আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
শুনেছেন, তিনি বলেন,
«ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟِﺮَﺟُﻞٍ : ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟِﻲ، ﻗَﺎﻝَ:
ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟِﻲ »، ﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ؟ ﻗَﺎﻝَ:
ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟِﻲ، ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﻓَﺠَﺪَﺡَ ﻟَﻪُ ﻓَﺸَﺮِﺏَ، ﺛُﻢَّ ﺭَﻣَﻰ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻢُ
ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﺃَﻗْﺒَﻞَ ﻣِﻦْ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ، ﺗَﺎﺑَﻌَﻪُ ﺟَﺮِﻳﺮٌ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮِ ﺑْﻦُ ﻋَﻴَّﺎﺵٍ، ﻋَﻦِ
ﺍﻟﺸَّﻴْﺒَﺎﻧِﻲِّ، ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺃَﻭْﻓَﻰ ﻗَﺎﻝَ: ﻛُﻨْﺖُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ »
“কোনো এক সফরে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে
বললেন, সওয়ারী থেকে নেমে আমার জন্য ছাতু
গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সূর্য এখনো
ডুবে নি। তিনি বললেন, সওয়ারী থেকে নামো এবং
আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে সওয়ারী
থেকে নেমে ছাতু গুলিয়ে আনলে তিনি তা পান
করলেন এবং হাতের ইশারায় বললেন, যখন দেখবে
রাত এদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে তখন বুঝবে, সাওম
পালনকারী ব্যক্তির ইফতারের সময় হয়েছে। জাবীর
এবং আবু বকর ইবন ‘আইয়াশ শায়বানী থেকে, তিনি
ইবন আবু ‘আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে অনুরূপ
হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কোনো এক
সফরে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম”। [115]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﺣَﻤْﺰَﺓَ ﺑْﻦَ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺍﻷَﺳْﻠَﻤِﻲَّ ﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺮُﺩُ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡَ »
“হামযা ইবন ‘আমর আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি ক্রমাগত সাওম
পালন করছি”। [116]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﺣَﻤْﺰَﺓَ ﺑْﻦَ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺍﻷَﺳْﻠَﻤِﻲَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺃَﺃَﺻُﻮﻡُ ﻓِﻲ
ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ؟ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻛَﺜِﻴﺮَ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻥْ ﺷِﺌْﺖَ ﻓَﺼُﻢْ، ﻭَﺇِﻥْ ﺷِﺌْﺖَ ﻓَﺄَﻓْﻄِﺮْ »
“হামযা ইবন ‘আমর আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
অধিক সাওম পালনে অভ্যস্থ ছিলেন। তিনি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
বললেন, আমি সফরেও কি সাওম পালন করতে
পারি? তিনি বললেন, ইচ্ছা করলে তুমি সাওম পালন
করতে পার, আবার ইচ্ছা করলে নাও করতে পার”। [117]
হামযা ইবন আমর আল-আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন,
« ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺃَﺟِﺪُ ﺑِﻲ ﻗُﻮَّﺓً ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ، ﻓَﻬَﻞْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺟُﻨَﺎﺡٌ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﻫِﻲَ ﺭُﺧْﺼَﺔٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻓَﻤَﻦْ ﺃَﺧَﺬَ ﺑِﻬَﺎ، ﻓَﺤَﺴَﻦٌ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣَﺐَّ ﺃَﻥْ
ﻳَﺼُﻮﻡَ ﻓَﻠَﺎ ﺟُﻨَﺎﺡَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ » ﻗَﺎﻝَ ﻫَﺎﺭُﻭﻥُ ﻓِﻲ ﺣَﺪِﻳﺜِﻪِ ﻫِﻲَ ﺭُﺧْﺼَﺔٌ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮْ : ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ
“হে আল্লাহর রাসূল! সফর অবস্থায়ও আমি আমার
মধ্যে সাওম রাখার মতো শক্তি রাখি। সাওম
রাখলে কি আমার কোনো অসুবিধা
আছে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, সাওম না রাখা মহান
আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সুযোগ বিশেষ। অতঃপর
যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো তার জন্য তা উত্তম। আর
যে ব্যক্তি সাওম রাখতে পছন্দ করল তার প্রতি এতে
কোনো প্রকার গুনাহ হবে না। হারুনের বর্ণিত
হাদীসে ﻫِﻲَ ﺭُﺧْﺼَﺔٌ এরপর ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ শব্দের উল্লেখ নেই”।
[118]
কাযা‘আ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺃَﺑَﺎ ﺳَﻌِﻴﺪٍ ﺍﻟْﺨُﺪْﺭِﻱَّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻭَﻫُﻮَ ﻣَﻜْﺜُﻮﺭٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺗَﻔَﺮَّﻕَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻋَﻨْﻪُ،
ﻗُﻠْﺖُ: ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺎ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻋَﻤَّﺎ ﻳَﺴْﺄَﻟُﻚَ ﻫَﺆُﻟَﺎﺀِ ﻋَﻨْﻪُ ﺳَﺄَﻟْﺘُﻪُ: ﻋَﻦِ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ:
ﺳَﺎﻓَﺮْﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﻜَّﺔَ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﺻِﻴَﺎﻡٌ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻨَﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﻗَﺪْ ﺩَﻧَﻮْﺗُﻢْ ﻣِﻦْ ﻋَﺪُﻭِّﻛُﻢْ، ﻭَﺍﻟْﻔِﻄْﺮُ ﺃَﻗْﻮَﻯ
ﻟَﻜُﻢْ » ﻓَﻜَﺎﻧَﺖْ ﺭُﺧْﺼَﺔً، ﻓَﻤِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ، ﻭَﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ، ﺛُﻢَّ ﻧَﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ ﺁﺧَﺮَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺇِﻧَّﻜُﻢْ
ﻣُﺼَﺒِّﺤُﻮ ﻋَﺪُﻭِّﻛُﻢْ، ﻭَﺍﻟْﻔِﻄْﺮُ ﺃَﻗْﻮَﻯ ﻟَﻜُﻢْ، ﻓَﺄَﻓْﻄِﺮُﻭﺍ ﻭَﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋَﺰْﻣَﺔً، ﻓَﺄَﻓْﻄَﺮْﻧَﺎ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﻘَﺪْ
ﺭَﺃَﻳْﺘُﻨَﺎ ﻧَﺼُﻮﻡُ، ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﻌْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ، ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ »
“একবার আমি আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর
নিকট গেলাম। তাঁর নিকট মানুষের খুব ভিড় ছিল।
যখন লোকজন পৃথক হয়ে এদিক ওদিক চলে গেল তখন
আমি বললাম, আমি আপনার নিকট ঐসব কথা
জিজ্ঞাসা করব, না যা লোকেরা জিজ্ঞাসা
করেছে। আমি তাকে সফরের অবস্থায় সাওম পালন
করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাথে সাওমরত অবস্থায় মক্কার
দিকে রওনা করলাম। এরপর একস্থানে আমরা অবতরণ
করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন তোমরা শত্রুদের
নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছ। এখন ইফতারই তোমাদের
জন্য শক্তিশালী থাকার উপায় এবং এ তোমাদের
জন্য বিশেষ এক অবকাশ। তখন আমাদের কতক লোক
সাওম পালন করল আবার কতক লোক সাওম ভঙ্গ করল।
এরপর আমরা অন্য এক স্থানে অবতরণ করলাম। তখন
তিনি বললেন ভোরেই তোমরা শত্রুর মুকাবিলা
করবে। সুতরাং সাওম ভঙ্গ করা তোমাদের জন্য
শক্তি বর্ধক। তাই তোমরা সাওম ভঙ্গ কর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
এ নির্দেশ অবশ্য পালনীয় ছিল। তাই আমরা সকলে
সওম ভঙ্গ করলাম। এরপর আমরা দেখেছি আমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামমের সাথে সফর অবস্থায় সাওম পালন
করতাম”। [119]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ، ﻓَﺼَﺎﻡَ ﺑَﻌْﺾٌ، ﻭَﺃَﻓْﻄَﺮَ ﺑَﻌْﺾٌ ﻓَﺘَﺤَﺰَّﻡَ
ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮُﻭﻥَ ﻭَﻋَﻤِﻠُﻮﺍ ﻭَﺿَﻌُﻒَ ﺍﻟﺼُّﻮَّﺍﻡُ، ﻋَﻦْ ﺑَﻌْﺾِ ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ: ﺫَﻫَﺐَ
ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮُﻭﻥَ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺑِﺎﻟْﺄَﺟْﺮِ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কোনো এক সফরে ছিলেন। তখন কেউ কেউ সাওম
পালন করলেন আবার কেউ কেউ সাওম ছেড়ে দিলেন।
এরপর যারা সাওম ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা
শক্তিমত্তার সাথে কাজ করলেন এবং সাওম
পালনকারী ব্যক্তিগণ সহজে দুর্বল হয়ে পড়লেন। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, আজ সাওম পরিত্যাগকারীরা নেকী অর্জন
করে নিল”। [120]
আবু সা‘ঈদ খুদরী ও জাবির ইবন আবদুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে
বলেন,
«ﺳَﺎﻓَﺮْﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻴَﺼُﻮﻡُ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ، ﻭَﻳُﻔْﻄِﺮُ ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮُ، ﻓَﻠَﺎ
ﻳَﻌِﻴﺐُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ »
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাথে সফর করেছিলাম।
এমতাবস্থায় সাওম পালনকারী সাওম পালন
করেছেন এবং সাওম ভঙ্গকারী সাওম ভঙ্গ করেছেন।
কিন্তু এতে কেউ একে অন্যের প্রতি দোষারোপ
করেন নি”। [121]
সফর অবস্থায় কোনো কাজের দায়িত্ব পালন
করাকালীন সাওম ভঙ্গ করলে তার প্রতিদান
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛُﻨَّﺎ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺃَﻛْﺜَﺮُﻧَﺎ ﻇِﻠًّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺴْﺘَﻈِﻞُّ ﺑِﻜِﺴَﺎﺋِﻪِ، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ
ﺻَﺎﻣُﻮﺍ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﺍ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﻓْﻄَﺮُﻭﺍ ﻓَﺒَﻌَﺜُﻮﺍ ﺍﻟﺮِّﻛَﺎﺏَ ﻭَﺍﻣْﺘَﻬَﻨُﻮﺍ ﻭَﻋَﺎﻟَﺠُﻮﺍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ
ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺫَﻫَﺐَ ﺍﻟﻤُﻔْﻄِﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻴَﻮْﻡَ ﺑِﺎﻷَﺟْﺮِ »
“আমরা (কোনো এক সফরে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। আমাদের
মধ্যে সেই ব্যক্তির ছায়াই ছিল সর্বাধিক যে তার
চাঁদর দ্বারা ছায়া গ্রহণ করছিল। যারা সাওম পালন
করছিল তারা কোনো কাজই করতে পারছিল না।
যারা সাওমরত ছিল না, তারা উটের তত্তাবধান
করছিল, খেদমতের দায়িত্ব পালন করছিল এবং
পরিশ্রমের কাজ করছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যারা সাওম পালন
করে নি তারাই আজ অধিক সওয়াব হাসিল করল”।
[122]
কাযা‘আ রহ. বলেন,
«ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺃَﺑَﺎ ﺳَﻌِﻴﺪٍ ﺍﻟْﺨُﺪْﺭِﻱَّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻭَﻫُﻮَ ﻣَﻜْﺜُﻮﺭٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺗَﻔَﺮَّﻕَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻋَﻨْﻪُ،
ﻗُﻠْﺖُ: ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺎ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻋَﻤَّﺎ ﻳَﺴْﺄَﻟُﻚَ ﻫَﺆُﻟَﺎﺀِ ﻋَﻨْﻪُ ﺳَﺄَﻟْﺘُﻪُ: ﻋَﻦِ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ:
ﺳَﺎﻓَﺮْﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﻜَّﺔَ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﺻِﻴَﺎﻡٌ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻨَﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﻗَﺪْ ﺩَﻧَﻮْﺗُﻢْ ﻣِﻦْ ﻋَﺪُﻭِّﻛُﻢْ، ﻭَﺍﻟْﻔِﻄْﺮُ ﺃَﻗْﻮَﻯ
ﻟَﻜُﻢْ » ﻓَﻜَﺎﻧَﺖْ ﺭُﺧْﺼَﺔً، ﻓَﻤِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ، ﻭَﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ، ﺛُﻢَّ ﻧَﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ ﺁﺧَﺮَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﺇِﻧَّﻜُﻢْ
ﻣُﺼَﺒِّﺤُﻮ ﻋَﺪُﻭِّﻛُﻢْ، ﻭَﺍﻟْﻔِﻄْﺮُ ﺃَﻗْﻮَﻯ ﻟَﻜُﻢْ، ﻓَﺄَﻓْﻄِﺮُﻭﺍ » ﻭَﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋَﺰْﻣَﺔً، ﻓَﺄَﻓْﻄَﺮْﻧَﺎ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﻘَﺪْ
ﺭَﺃَﻳْﺘُﻨَﺎ ﻧَﺼُﻮﻡُ، ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﻌْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ، ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ
“একদা আমি আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর
নিকট গেলাম। তাঁর নিকট মানুষের খুব ভিড় ছিল।
যখন লোকজন পৃথক হয়ে এদিক ওদিক চলে গেল তখন
আমি বললাম, আমি আপনার নিকট ঐসব কথা
জিজ্ঞাসা করব না যা লোকেরা জিজ্ঞাসা
করেছে। আমি তাকে সফরের অবস্থায় সাওম পালন
করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন,
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাওমরত অবস্থায় মক্কার
দিকে রওনা করলাম। এরপর একস্থানে আমরা অবতরণ
করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন তোমরা শত্রুদের
নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছ। এখন ইফতারই তোমাদের
জন্য শক্তিশালী থাকার উপায় এবং এ তোমাদের
জন্য বিশেষ এক অবকাশ। তখন আমাদের কতক লোক
সাওম পালন করল আবার কতক লোক ইফতার করল।
এরপর আমরা অন্য এক স্থানে অবতরণ করলাম। তখন
তিনি বললেন ভোরেই তোমরা শত্রুর মুকাবিলা
করবে। সুতরাং ইফতার তোমাদের জন্য শক্তি বর্ধক।
তাই তোমরা ইফতার কর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ নির্দেশ অবশ্য পালনীয়
ছিল। তাই আমরা সকলে ইফতার করলাম। এরপর
আমরা দেখেছি আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরের অবস্থায়
সাওম পালন করতাম”। [123]
রমযানে কয়েকদিন সাওম পালন করে যদি কেউ সফর
আরম্ভ করে
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত
যে,
« ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ « ﺧَﺮَﺝَ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﻜَّﺔَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﺼَﺎﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﺑَﻠَﻎَ
ﺍﻟﻜَﺪِﻳﺪَ، ﺃَﻓْﻄَﺮَ »، ﻓَﺄَﻓْﻄَﺮَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ: ﻭَﺍﻟﻜَﺪِﻳﺪُ: ﻣَﺎﺀٌ ﺑَﻴْﻦَ ﻋُﺴْﻔَﺎﻥَ ﻭَﻗُﺪَﻳْﺪٍ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাওম অবস্থায় কোনো এক রমযানে মক্কার পথে
যাত্রা করলেন। ‘কাদীদ’ নামক স্থানে পৌঁছার পর
তিনি সাওম ভঙ্গ করে ফেললে লোকেরা সকলেই
সাওম ভঙ্গ করলেন। আবু ‘আব্দুল্লাহ রহ. বলেন,
‘উসফান ও কুদায়দ নামক দুই স্থানের মধ্যে কাদীদ
একটি ঝর্ণা।” [124]
আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺧَﺮَﺟْﻨَﺎ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺑَﻌْﺾِ ﺃَﺳْﻔَﺎﺭِﻩِ ﻓِﻲ ﻳَﻮْﻡٍ ﺣَﺎﺭٍّ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻀَﻊَ
ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻳَﺪَﻩُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺃْﺳِﻪِ ﻣِﻦْ ﺷِﺪَّﺓِ ﺍﻟﺤَﺮِّ، ﻭَﻣَﺎ ﻓِﻴﻨَﺎ ﺻَﺎﺋِﻢٌ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻭَﺍﺑْﻦِ ﺭَﻭَﺍﺣَﺔَ »
“কোনো এক সফরে প্রচন্ড গরমের দিনে আমরা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে
রওয়ানা হলাম। গরম এত প্রচন্ড ছিল যে, প্রত্যেকেই
নিজ নিজ হাত মাথার উপরে তুলে ধরেছিলেন। এ
সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং
ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছাড়া আমাদের
কেউই সাওম পালনকারী ছিল না”। [125]
প্রচণ্ড গরমের কারণে যে ব্যক্তির উপর ছায়ার
ব্যবস্থা করা হয়েছে তার সম্পর্কে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
সফরে সাওম পালনে কোনো নেকী নেই
জাবির ইবন ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ، ﻓَﺮَﺃَﻯ ﺯِﺣَﺎﻣًﺎ ﻭَﺭَﺟُﻠًﺎ ﻗَﺪْ ﻇُﻠِّﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﻣَﺎ ﻫَﺬَﺍ؟ »، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺒِﺮِّ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এক সফরে ছিলেন, হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং
ছায়ার নিচে এক ব্যক্তিকে দেখে জিজ্ঞাসা
করলেন, এর কী হয়েছে? লোকেরা বলল, সে সাওম
পালনকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, সফরে সাওম পালনে কোনো
নেকী নেই”। [126]
সফর অবস্থায় সাওম পালনের ব্যাপারে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ
একে অন্যকে দোষারোপ করতেন না
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨَّﺎ ﻧُﺴَﺎﻓِﺮُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻌِﺐِ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻤُﻔْﻄِﺮِ، ﻭَﻻَ
ﺍﻟﻤُﻔْﻄِﺮُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢِ »
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সঙ্গে সফরে যেতাম। সাওম পালনকারী ব্যক্তি যে
সাওম পালন করছে না, এবং যে সাওম পালন করছে
না, সে সাওম পালনকারীকে দোষারোপ করতো
না”। [127]
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
«ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﻐْﺰُﻭ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﻤِﻨَّﺎ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ ﻭَﻣِﻨَّﺎ
ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮُ، ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺠِﺪُ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮِ، ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢِ، ﻳَﺮَﻭْﻥَ ﺃَﻥَّ ﻣَﻦْ ﻭَﺟَﺪَ
ﻗُﻮَّﺓً ﻓَﺼَﺎﻡَ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺣَﺴَﻦٌ ﻭَﻳَﺮَﻭْﻥَ ﺃَﻥَّ ﻣَﻦْ ﻭَﺟَﺪَ ﺿَﻌْﻔًﺎ، ﻓَﺄَﻓْﻄَﺮَ ﻓَﺈِﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺣَﺴَﻦٌ »
“রমযান মাসে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ষুদ্ধে অংশ গ্রহণ
করতাম। এ সময় আমাদের কেউ সাওম পালন করেছেন
আবার কেউ সাওম ছেড়েও দিয়েছেন। কিন্তু সাওম
পালনকারী সাওম ভঙ্গকারীকে খারাপ মনে করতেন
না এরং সাওম ভঙ্গকারীও সাওম পালনকারীকে
খারাপ মনে করতেন না। তারা মনে করতেন, যার
সামর্থ্য আছে সেই সাওম পালন করছে, এটাই তার
জন্য উত্তম। আর যে দুর্বল সে সাওম ছেড়ে
দিয়েছে, এটাও তার জন্য উত্তম”। [128]
আবু সা‘ঈদ খুদরী ও জাবির ইবন আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে
বলেন,
«ﺳَﺎﻓَﺮْﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻴَﺼُﻮﻡُ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ، ﻭَﻳُﻔْﻄِﺮُ ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮُ، ﻓَﻠَﺎ
ﻳَﻌِﻴﺐُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ »
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাথে সফর করেছিলাম।
এমতাবস্থায় সাওম পালনকারী সাওম পালন
করেছেন এবং সাওম ভঙ্গকারী সাওম ভঙ্গ করেছেন।
কিন্তু এতে কেউ একে অন্যের প্রতি দোষারোপ
করেন নি”। [129]
সফর অবস্থায় সাওম ভঙ্গ করা, যাতে লোকেরা
দেখতে পায়
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
» ﺧَﺮَﺝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻣِﻦَ ﺍﻟﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﻜَّﺔَ، ﻓَﺼَﺎﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﺑَﻠَﻎَ ﻋُﺴْﻔَﺎﻥَ،
ﺛُﻢَّ ﺩَﻋَﺎ ﺑِﻤَﺎﺀٍ ﻓَﺮَﻓَﻌَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻟِﻴُﺮِﻳَﻪُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ، ﻓَﺄَﻓْﻄَﺮَ ﺣَﺘَّﻰ ﻗَﺪِﻡَ ﻣَﻜَّﺔَ، ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ،
ﻓَﻜَﺎﻥَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﻗَﺪْ ﺻَﺎﻡَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﺃَﻓْﻄَﺮَ، ﻓَﻤَﻦْ ﺷَﺎﺀَ
ﺻَﺎﻡَ ﻭَﻣَﻦْ ﺷَﺎﺀَ ﺃَﻓْﻄَﺮَ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মদীনা থেকে মক্কায় রওয়ানা হলেন। তখন তিনি
সাওম পালন করছিলেন। ‘উসফানে পৌছার পর তিনি
পানি আনার জন্য আদেশ করলেন। তারপর তিনি
লোকদেরকে দেখানোর জন্য পানি হাতের উপর উচুঁ
করে ধরে সাওম ভঙ্গ করলেন এবং এ অবস্থায় মক্কায়
পৌঁছলেন। এ ছিল রমযান মাসে। তাই ইবন ‘আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন
করেছেন এবং সাওম ভঙ্গও করেছেন। যার ইচ্ছা
সাওম পালন করতে পারে আর যার ইচ্ছা সাওম ভঙ্গ
করতে পারে”। [130]
জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা
থেকে বর্ণিত,
ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺧَﺮَﺝَ ﻋَﺎﻡَ
ﺍﻟْﻔَﺘْﺢِ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﻜَّﺔَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓَﺼَﺎﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﺑَﻠَﻎَ ﻛُﺮَﺍﻉَ ﺍﻟْﻐَﻤِﻴﻢِ، ﻓَﺼَﺎﻡَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ﺛُﻢَّ ﺩَﻋَﺎ ﺑِﻘَﺪَﺡٍ ﻣِﻦْ
ﻣَﺎﺀٍ ﻓَﺮَﻓَﻌَﻪُ، ﺣَﺘَّﻰ ﻧَﻈَﺮَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ، ﺛُﻢَّ ﺷَﺮِﺏَ، ﻓَﻘِﻴﻞَ ﻟَﻪُ ﺑَﻌْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ : ﺇِﻥَّ ﺑَﻌْﺾَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻗَﺪْ
ﺻَﺎﻡَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺍﻟْﻌُﺼَﺎﺓُ، ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺍﻟْﻌُﺼَﺎﺓُ »
“মক্কা বিজয়ের বছর রমযান মাসে সাওমরত অবস্থায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলেন। এরপর যখন তিনি
‘কুরা‘উল গামীম’ নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন
লোকেরাও সাওমরত ছিল। এরপর তিনি একটি পানির
পাত্র চাইলেন। এমনকি লোকেরা তার দিকে
তাকাতে লাগল। এরপর তিনি পানি পান করলেন।
তখন তাঁকে বলা হলো কতিপয় লোক সাওমরত রয়েছে।
তিনি বললেন তারা অবাধ্য তারা অবাধ্য”। [131]
যাদের সাওম পালন অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের
সাওমের পরিবর্তে ফিদইয়া তথা একজন মিসকীনকে
খাদ্য দেওয়া
ইবন উমার ও সালামা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুমা বলেন,
ﺑﺎﺏٌ ﴿ﻭَﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻄِﻴﻘُﻮﻧَﻪُ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٤ ] ﻧَﺴَﺨَﺘْﻬَﺎ ﴿ﺷَﻬۡﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﭐﻟَّﺬِﻱٓ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﻓِﻴﻪِ
ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥُ ﻫُﺪٗﻯ ﻟِّﻠﻨَّﺎﺱِ ﻭَﺑَﻴِّﻨَٰﺖٖ ﻣِّﻦَ ﭐﻟۡﻬُﺪَﻯٰ ﻭَﭐﻟۡﻔُﺮۡﻗَﺎﻥِۚ ﻓَﻤَﻦ ﺷَﻬِﺪَ ﻣِﻨﻜُﻢُ ﭐﻟﺸَّﻬۡﺮَ ﻓَﻠۡﻴَﺼُﻤۡﻪُۖ ﻭَﻣَﻦ
ﻛَﺎﻥَ ﻣَﺮِﻳﻀًﺎ ﺃَﻭۡ ﻋَﻠَﻰٰ ﺳَﻔَﺮٖ ﻓَﻌِﺪَّﺓٞ ﻣِّﻦۡ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ﺃُﺧَﺮَۗ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻜُﻢُ ﭐﻟۡﻴُﺴۡﺮَ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺑِﻜُﻢُ ﭐﻟۡﻌُﺴۡﺮَ
ﻭَﻟِﺘُﻜۡﻤِﻠُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻌِﺪَّﺓَ ﻭَﻟِﺘُﻜَﺒِّﺮُﻭﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠَﻰٰ ﻣَﺎ ﻫَﺪَﻯٰﻜُﻢۡ ﻭَﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺸۡﻜُﺮُﻭﻥَ ١٨٥﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ:
١٨٥] »
“অধ্যায়: ﴿ﻭَﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻄِﻴﻘُﻮﻧَﻪُ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٤] “আর যাদের জন্য
তা (ফিদিয়া প্রদান) সম্ভব হবে।” [সূরা আল-
বাকারা, আয়াত: ১৮৪] উক্ত আয়াতকে রহিত করেছে এ
আয়াত: “রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা
হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং
হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার
পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে
মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সাওম
পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে
তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।
আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না।
আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি
তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য
আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা
শোকর কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
«ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻧُﻤَﻴْﺮٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﻷَﻋْﻤَﺶُ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﻤْﺮُﻭ ﺑْﻦُ ﻣُﺮَّﺓَ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻟَﻴْﻠَﻰ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ
ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﻧَﺰَﻝَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻓَﺸَﻖَّ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻣَﻦْ ﺃَﻃْﻌَﻢَ ﻛُﻞَّ ﻳَﻮْﻡٍ
ﻣِﺴْﻜِﻴﻨًﺎ ﺗَﺮَﻙَ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡَ ﻣِﻤَّﻦْ ﻳُﻄِﻴﻘُﻪُ، ﻭَﺭُﺧِّﺺَ ﻟَﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ، ﻓَﻨَﺴَﺨَﺘْﻬَﺎ : ﴿ﻭَﺃَﻥ ﺗَﺼُﻮﻣُﻮﺍْ ﺧَﻴۡﺮٞ
ﻟَّﻜُﻢۡ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٤] ﻓَﺄُﻣِﺮُﻭﺍ ﺑِﺎﻟﺼَّﻮْﻡِ »
“ইবন নুমায়ের রহ. ইবন আবু লায়লা রহ. থেকে (সনদসহ)
বর্ণনা করেন যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ আমাদের কাছে বর্ণনা
করেছেন, রমযানের হুকুম নাযিল হলে তা পালন করা
তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই তাদের মধ্যে
কেউ কেউ সাওম পালনে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও সাওম
ত্যাগ করে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন
মিসকীনকে খাওয়াতো। এ ব্যাপারে তাদের
অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। তারপর ﻭَﺃَﻥ ﺗَﺼُﻮﻣُﻮﺍْ ﺧَﻴۡﺮٞ
ﻟَّﻜُﻢۡ “সাওম পালন করাই তোমাদের জন্য উত্তম” [সূরা
আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪] এ আয়াতটি পূর্বের
হুকুমকে রহিত করে দেয় এবং সবাইকে সাওম পালনের
নির্দেশ দেওয়া হয়।” [132]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
ﻗَﺮَﺃَ : ﻓِﺪْﻳَﺔُ ﻃَﻌَﺎﻡِ ﻣَﺴَﺎﻛِﻴﻦَ ﻗَﺎﻝَ: ﻫِﻲَ ﻣَﻨْﺴُﻮﺧَﺔٌ
“তিনি ﻓِﺪْﻳَﺔُ ﻃَﻌَﺎﻡِ ﻣَﺴَﺎﻛِﻴﻦَ আয়াতটি পড়ে বলেছেন যে, এটি
রহিত।” [133]
ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀٍ، ﺳَﻤِﻊَ ﺍﺑْﻦَ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻄَﻮَّﻗُﻮﻧَﻪُ ﻓَﻼَ ﻳُﻄِﻴﻘُﻮﻧَﻪُ ﻓِﺪْﻳَﺔٌ ﻃَﻌَﺎﻡُ ﻣِﺴْﻜِﻴﻦٍ
ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ: « ﻟَﻴْﺴَﺖْ ﺑِﻤَﻨْﺴُﻮﺧَﺔٍ ﻫُﻮَ ﺍﻟﺸَّﻴْﺦُ ﺍﻟﻜَﺒِﻴﺮُ، ﻭَﺍﻟﻤَﺮْﺃَﺓُ ﺍﻟﻜَﺒِﻴﺮَﺓُ ﻻَ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻴﻌَﺎﻥِ ﺃَﻥْ
ﻳَﺼُﻮﻣَﺎ، ﻓَﻴُﻄْﻌِﻤَﺎﻥِ ﻣَﻜَﺎﻥَ ﻛُﻞِّ ﻳَﻮْﻡٍ ﻣِﺴْﻜِﻴﻨًﺎ »
‘আতা থেকে বর্ণিত, তিনি ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে বলতে শুনেছেন যে তিনি
পড়ছেন, ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻄَﻮَّﻗُﻮﻧَﻪُ ﻓَﻼَ ﻳُﻄِﻴﻘُﻮﻧَﻪُ ﻓِﺪْﻳَﺔٌ ﻃَﻌَﺎﻡُ ﻣِﺴْﻜِﻴﻦٍ অর্থাৎ ‘আর
যাদের উপর সাওম কষ্টকর হবে এবং তা আদায় করতে
অসমর্থ হবে তারা মিসকীনকে ফিদইয়া হিসেবে
খাবার খাওয়াবে।’ “ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন, আয়াতটি রহিত নয়, বরং তা অতিশয়
বৃদ্ধ, অত্যন্ত বৃদ্ধার জন্য, যারা সাওম রাখতে সমর্থ
নয়, তারা প্রতিদিনের সাওমের পরিবর্তে একজন
মিসকীন খাওয়াবে।” [134]
ইমাম আতা রহ. বলেন, সর্বপ্রকার রোগেই সাওম
ভঙ্গ করা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন। পক্ষান্তরে
ইমাম হাসান ও ইবরাহীম রহ. বলেন, সন্তানের
দাত্রী এবং গর্ভবতী স্ত্রীলোক যখন নিজ প্রাণ
অথবা তাদের সন্তানের জীবনের প্রতি হুমকির
আশংকা করে তখন তারা উভয়ে সাওম ভঙ্গ করতে
পারবে। পরে তা আদায় করে নিতে হবে। অতিবৃদ্ধ
ব্যক্তি যখন সাওম পালনে অক্ষম হয়ে পড়ে (তখন
ফিদইয়া আদায় করবে।) [135]
রমযানের কাযা সাওম কখন আদায় করা হবে?
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, পৃথক পৃথক
রাখলে কোনো ক্ষতি নেই। কেননা আল্লাহ
বলেছেন, ‘অন্যদিনে এর সংখ্যা পূর্ণ করবে’। সা‘ঈদ
ইবন মুসায়্যাব রহ. বলেছেন, রমযানের কাযা আদায়
না করে যিলহজ মাসের প্রথম দশকে সাওম পালন
করা উচিত নয়। ইবরাহীম নাখ‘ঈ রহ. বলেন,
অবহেলার কারণে যদি রমযান এসে যায় তাহলে উভয়
রমযানের সাওম এক সাথে আদায় করবে। মিসকীন
খাওয়াতে হবে বলে তিনি মনে করেন না। আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত একটি
মুরসাল হাদীসে এবং ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, সে খাওয়াবে অথচ
আল্লাহ তা‘আলা খাওয়ানোর কথাটি উল্লেখ করেন
নি; বরং তিনি বলেছেন ‘অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ
করবে’।
আবু সালামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বলতে
শুনেছি, তিনি বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﻤَﺎ ﺃَﺳْﺘَﻄِﻴﻊُ ﺃَﻥْ ﺃَﻗْﻀِﻲَ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ، ﻗَﺎﻝَ
ﻳَﺤْﻴَﻰ : ﺍﻟﺸُّﻐْﻞُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺃَﻭْ ﺑِﺎﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
“আমার ওপর রমযানের যে কাযা থেকে যেতো তা
পরবর্তী শা‘বান ছাড়া আমি আদায় করতে পারতাম
না। ইয়াহিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যস্ততার
কারণে কিংবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ব্যস্ততার কারণে।” [136]
ঋতুবতী মহিলা সালাত ও সাওম উভয়ই ত্যাগ করবে
আবু যিনাদ রহ. বলেন, শরী‘আতের হুকুম-আহকাম
অনেক সময় কিয়াসের বিপরীতও হয়ে থাকে।
মুসলিমের জন্য এর অনুসরণ ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এর একটি উদাহরণ হলো ঋতুবতী মহিলা সাওমের
কাযা করবে কিন্তু সালাতের কাযা করবে না।
আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
«ﺃَﻟَﻴْﺲَ ﺇِﺫَﺍ ﺣَﺎﺿَﺖْ ﻟَﻢْ ﺗُﺼَﻞِّ ﻭَﻟَﻢْ ﺗَﺼُﻢْ، ﻓَﺬَﻟِﻚَ ﻧُﻘْﺼَﺎﻥُ ﺩِﻳﻨِﻬَﺎ »
“এ কথা কি ঠিক নয় যে, হায়েয শুরু হলে মেয়েরা
সালাত আদায় করে না এবং সাওমও পালন করে না।
এ হলো তাদের দীনেরই ত্রুটি”। [137]
ঋতুবতী মহিলা সাওমের কাযা করবে কিন্তু
সালাতের কাযা করবে না
মু’আজা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা
করলাম,
«ﻋَﻦْ ﻣُﻌَﺎﺫَﺓَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﺳَﺄَﻟْﺖُ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﻣَﺎ ﺑَﺎﻝُ ﺍﻟْﺤَﺎﺋِﺾِ ﺗَﻘْﻀِﻲ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡَ، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘْﻀِﻲ
ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ. ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ: ﺃَﺣَﺮُﻭﺭِﻳَّﺔٌ ﺃَﻧْﺖِ؟ ﻗُﻠْﺖُ: ﻟَﺴْﺖُ ﺑِﺤَﺮُﻭﺭِﻳَّﺔٍ، ﻭَﻟَﻜِﻨِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻝُ. ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼِﻴﺒُﻨَﺎ
ﺫَﻟِﻚَ، ﻓَﻨُﺆْﻣَﺮُ ﺑِﻘَﻀَﺎﺀِ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡِ، ﻭَﻟَﺎ ﻧُﺆْﻣَﺮُ ﺑِﻘَﻀَﺎﺀِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ »
“আমাদের কেউ কি তার হায়েযের দিনগুলোর
সালাত কাযা করবে? ‘আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, তুমি কি
হারুরিয়্যা (খারেজী)? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আমাদের কারো
হায়েয হলে পরে তাকে (সালাত) কাযা করার
নির্দেশ দেওয়া হত না।” [138]
সাওমের কাযা যিম্মায় রেখে যে ব্যক্তি মারা
গেল
হাসান রহ. বলেছেন, তার পক্ষ থেকে ত্রিশজন লোক
একদিন সাওম পালন করলে হবে।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﻣَﻦْ ﻣَﺎﺕَ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻِﻴَﺎﻡٌ ﺻَﺎﻡَ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﻟِﻴُّﻪُ »
“সাওমের কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোনো ব্যক্তি
মারা যায় তাহলে তার অভিভাবকের পক্ষ থেকে
সাওম আদায় করবে।” [139]
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﻣَﺎﺗَﺖْ
ﻭَﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺻَﻮْﻡُ ﺷَﻬْﺮٍ، ﺃَﻓَﺄَﻗْﻀِﻴﻪِ ﻋَﻨْﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻧَﻌَﻢْ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺪَﻳْﻦُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺣَﻖُّ ﺃَﻥْ ﻳُﻘْﻀَﻰ، ﻗَﺎﻝَ
ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥُ: ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﺤَﻜَﻢُ، ﻭَﺳَﻠَﻤَﺔُ، ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﺟُﻠُﻮﺱٌ ﺣِﻴﻦَ ﺣَﺪَّﺙَ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﺑِﻬَﺬَﺍ ﺍﻟﺤَﺪِﻳﺚِ ﻗَﺎﻻَ:
ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﻣُﺠَﺎﻫِﺪًﺍ، ﻳَﺬْﻛُﺮُ ﻫَﺬَﺍ، ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻭَﻳُﺬْﻛَﺮُ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺧَﺎﻟِﺪٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﻷَﻋْﻤَﺶُ،
ﻋَﻦِ ﺍﻟﺤَﻜَﻢِ، ﻭَﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﺍﻟﺒَﻄِﻴﻦِ، ﻭَﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺑْﻦِ ﻛُﻬَﻴْﻞٍ، ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺟُﺒَﻴْﺮٍ، ﻭَﻋَﻄَﺎﺀٍ، ﻭَﻣُﺠَﺎﻫِﺪٍ، ﻋَﻦْ
ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ : ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﺇِﻥَّ ﺃُﺧْﺘِﻲ ﻣَﺎﺗَﺖْ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻳَﺤْﻴَﻰ، ﻭَﺃَﺑُﻮ
ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ: ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﻷَﻋْﻤَﺶُ، ﻋَﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ، ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺟُﺒَﻴْﺮٍ، ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ: ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ
ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﻣَﺎﺗَﺖْ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻋُﺒَﻴْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ: ﻋَﻦْ ﺯَﻳْﺪِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺃُﻧَﻴْﺴَﺔَ،
ﻋَﻦِ ﺍﻟﺤَﻜَﻢِ، ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺟُﺒَﻴْﺮٍ، ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ: ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﻣَﺎﺗَﺖْ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺻَﻮْﻡُ ﻧَﺬْﺭٍ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺣَﺮِﻳﺰٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋِﻜْﺮِﻣَﺔُ، ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ:
ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﻣَﺎﺗَﺖْ ﺃُﻣِّﻲ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺻَﻮْﻡُ ﺧَﻤْﺴَﺔَ ﻋَﺸَﺮَ ﻳَﻮْﻣًﺎ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট
এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা
এক মাসের সাওম জিম্মায় রেখে মারা
গেছেন, আমি কি তার পক্ষ থেকে সাওম কাযা
করতে পারি? তিনি বলেন: হ্যাঁ, আল্লাহর ঋণ
পরিশোধ করাই হলো অধিক যোগ্য। সুলায়মান রহ.
বলেন, হাকাম এবং সালামা রহ. বলেছেন, মুসলিম
রহ. এ হাদীস বর্ণনা করার সময় আমরা সকলেই এক
সাথে উপবিষ্ট ছিলাম। তাঁরা উভয়েই বলেছেন
যে, ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
মুজাহিদ রহ.-কে এ হাদীস বর্ণনা করতে আমরা
শুনেছি। আবু খালিদ আহমার রহ. ইবন ‘আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, একজন মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমার বোন মারা গেছে।
ইয়াহইয়া রহ. ও আবু ম‘আবিয়া ইবন ‘আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমার
মা মারা গেছেন। ‘উবায়দুল্লাহ রহ. ইবন ‘আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমার
মা মারা গেছেন অথচ তার যিম্মায় মানতের সাওম
রয়েছে। আবু হারীয রহ. ইবন ‘আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমার
মা মারা গেছেন অথচ তার যিম্মায় পনেরো দিনের
সাওম রয়ে গেছে।” [140]
আব্দুল্লাহ ইবন বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার
পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
«ﺑَﻴْﻨَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺟَﺎﻟِﺲٌ ﻋِﻨْﺪَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺇِﺫْ ﺃَﺗَﺘْﻪُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ: ﺇِﻧِّﻲ
ﺗَﺼَﺪَّﻗْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻣِّﻲ ﺑِﺠَﺎﺭِﻳَﺔٍ، ﻭَﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻣَﺎﺗَﺖْ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﻭَﺟَﺐَ ﺃَﺟْﺮُﻙِ، ﻭَﺭَﺩَّﻫَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﺍﻟْﻤِﻴﺮَﺍﺙُ
ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺻَﻮْﻡُ ﺷَﻬْﺮٍ، ﺃَﻓَﺄَﺻُﻮﻡُ ﻋَﻨْﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﺻُﻮﻣِﻲ ﻋَﻨْﻬَﺎ
ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﺤُﺞَّ ﻗَﻂُّ، ﺃَﻓَﺄَﺣُﺞُّ ﻋَﻨْﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﺣُﺠِّﻲ ﻋَﻨْﻬَﺎ »
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এমতাবস্থায়
জনৈকা মহিলা এসে বললেন! আমি আমার মায়ের
জন্য একটি দাসী সদকা করেছিলাম। তিনি মৃত্যুবরণ
করেছেন। একথা শুনে তিনি বললেন, তুমি তো
তোমার সওয়াব পেয়ে গিয়েছ। তবে উত্তরাধিকার
তোমার নিকট তা ফিরিয়ে দিয়েছে। তখন ঐ
মহিলা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! তার ওপর এক
মাসের সাওমের কাযা রয়েছে। আমি তার পক্ষ
থেকে ঐ সাওম আদায় করতে পারি কি? তিনি
বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে সাওম পালন কর।
অতঃপর মহিলা বললেন, তিনি তো তখনও হজও
আদায় করেন নি আমি তার পক্ষ থেকে হজ আদায়
করতে পারি কি? তিনি বললেন, তুমি তার পক্ষ
থেকে হজ আদায় কর”। [141]
সাওম পালনকারীর জন্য কখন ইফতার করা হালাল
সূর্যের গোলাকার বৃত্ত অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথেই
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইফতার
করতেন।
উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: « ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻗْﺒَﻞَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞُ ﻣِﻦْ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﻭَﺃَﺩْﺑَﺮَ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭُ ﻣِﻦْ
ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﻭَﻏَﺮَﺑَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ »
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: “যখন রাত্র এ দিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও
দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন
সাওম পালনকারী ইফতার করবে”। [142]
‘আব্দুল্লাহ ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨَّﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻏَﺮَﺑَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ
ﻗَﺎﻝَ ﻟِﺒَﻌْﺾِ ﺍﻟﻘَﻮْﻡِ: ﻳَﺎ ﻓُﻼَﻥُ ﻗُﻢْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻮْ ﺃَﻣْﺴَﻴْﺖَ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻧْﺰِﻝْ
ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ ﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻓَﻠَﻮْ ﺃَﻣْﺴَﻴْﺖَ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﺍﻧْﺰِﻝْ، ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﻋَﻠَﻴْﻚَ
ﻧَﻬَﺎﺭًﺍ، ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ، ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﻓَﺠَﺪَﺡَ ﻟَﻬُﻢْ، ﻓَﺸَﺮِﺏَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺛُﻢَّ
ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﻗَﺪْ ﺃَﻗْﺒَﻞَ ﻣِﻦْ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ »
“কোনো এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। আর তিনি
ছিলেন সাওম পালনকারী। যখন সূর্য ডুবে গেল
তখন তিনি দলের কাউকে বললেন, হে অমুক! উঠ।
আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া
রাসূলুল্লাহ! সন্ধ্যা হলে ভালো হতো। তিনি
বললেন, নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে
আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সন্ধ্যা হলে ভালো
হতো। তিনি বললেন, নেমে যাও এবং আমাদের জন্য
ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সন্ধ্যা
হলে ভালো হতো। তিনি বললেন, নেমে যাও এবং
আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, দিন তো
আপনার এখনো রয়েছে। তিনি বললেন, তুমি নামো
এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে
নামলো এবং তাঁদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আনলো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তা পান করলেন, তারপর বললেন, যখন তোমরা
দেখবে, রাত একদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে, তখন
সাওম পালনকারী ইফতার করবে”। [143]
পানি বা সহজলভ্য অন্য কিছু দিয়ে ইফতার করবে
‘আব্দুল্লাহ ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺳِﺮْﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻏَﺮَﺑَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ ﻗَﺎﻝَ:
ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻮْ ﺃَﻣْﺴَﻴْﺖَ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: ﻳَﺎ
ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺇِﻥَّ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻧَﻬَﺎﺭًﺍ، ﻗَﺎﻝَ: ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ »، ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﻓَﺠَﺪَﺡَ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻢُ
ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﺃَﻗْﺒَﻞَ ﻣِﻦْ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺑِﺈِﺻْﺒَﻌِﻪِ ﻗِﺒَﻞَ ﺍﻟﻤَﺸْﺮِﻕِ »
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে রওয়ানা দিলাম এবং তিনি
সাওমদার ছিলেন। সূর্য অস্ত যেতেই তিনি
বললেন, তুমি সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য
ছাতু গুলিয়ে আন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ!
আর একটু সন্ধ্যা থেকে দিন। তিনি বললেন, তুমি
নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন।
তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এখনো তো আপনার
সামনে দিন রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি নেমে যাও
এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর তিনি
সওয়ারী থেকে নামলেন এবং ছাতু গুলিয়ে আনলেন।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দ্বারা পূর্বদিকে ইশারা করে
বললেন, যখন তোমরা দেখবে যে, রাত এদিক থেকে
আসছে, তখনই সাওমদারদের ইফতারের সময় হয়ে
গেলো”। [144]
ইফতার ত্বরান্বিত করা
সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻻَ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺑِﺨَﻴْﺮٍ ﻣَﺎ ﻋَﺠَّﻠُﻮﺍ ﺍﻟﻔِﻄْﺮَ »
“লোকেরা যতদিন যাবৎ ওয়াক্ত হওয়া মাত্র ইফতার
করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে”। [145]
ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨْﺖُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ، ﻓَﺼَﺎﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﻣْﺴَﻰ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﺮَﺟُﻞٍ : ﺍﻧْﺰِﻝْ
ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟِﻲ ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﻮِ ﺍﻧْﺘَﻈَﺮْﺕَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗُﻤْﺴِﻲَ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟِﻲ، ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺖَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﻗَﺪْ
ﺃَﻗْﺒَﻞَ ﻣِﻦْ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ »
“এক সফরে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত
সাওম পালন করেন। এরপর এক ব্যাক্তিকে
বললেন, সওয়ারী থেকে নেমে ছাতু গুলিয়ে আন।
লোকটি বলল, আপনি যদি (পূর্ণ সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত)
অপেক্ষা করতেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় বললেন, নেমে
আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন
তুমি এদিক (পূর্বদিক) থেকে রাত্রির আগমন দেখতে
পাবে তখন সাওম পালনকারী ইফতার করবে”। [146]
আবু ‘আতিয়্যা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺩَﺧَﻠْﺖُ ﺃَﻧَﺎ ﻭَﻣَﺴْﺮُﻭﻕٌ، ﻋَﻠَﻰ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻬَﺎ ﻣَﺴْﺮُﻭﻕٌ : ﺭَﺟُﻠَﺎﻥِ ﻣِﻦْ
ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻛِﻠَﺎﻫُﻤَﺎ ﻟَﺎ ﻳَﺄْﻟُﻮ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ، ﺃَﺣَﺪُﻫُﻤَﺎ ﻳُﻌَﺠِّﻞُ ﺍﻟْﻤَﻐْﺮِﺏَ
ﻭَﺍﻟْﺈِﻓْﻄَﺎﺭَ، ﻭَﺍﻟْﺂﺧَﺮُ ﻳُﺆَﺧِّﺮُ ﺍﻟْﻤَﻐْﺮِﺏَ ﻭَﺍﻟْﺈِﻓْﻄَﺎﺭَ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ : ﻣَﻦْ ﻳُﻌَﺠِّﻞُ ﺍﻟْﻤَﻐْﺮِﺏَ ﻭَﺍﻟْﺈِﻓْﻄَﺎﺭَ؟ ﻗَﺎﻝَ:
ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ: ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺼْﻨَﻊُ »
“আমি ও মাসরুক রহ. ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার
নিকট গেলাম। এরপর মাসরুক রহ. তাকে বললেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সাহাবীদের মধ্যে দুই ব্যক্তি যারা কল্যাণজনক
কাজে কোনো প্রকার অবহেলা প্রদর্শন করে না।
তাঁদের একজন মাগরিব এবং ইফতারের মধ্যে ত্বরা
করেন। আর অপর জন মাগরিব ও ইফতারে বিলম্ব
করেন। তিনি (‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)
বললেন সে কোনো ব্যক্তি যে মাগরিব ও ইফতার
ত্বরা করেন? তিনি বললেন, তিনি হলেন
‘আব্দুল্লাহ। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরূপ করতেন।” [147]
মাগরিবের সালাতের পূর্বে ইফতার করা মুস্তাহাব
এবং যে সব জিনিস দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻣَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﻂُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺻَﻠَﺎﺓَ ﺍﻟْﻤَﻐْﺮِﺏِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻔْﻄِﺮَ ﻭَﻟَﻮْ
ﻋﻠﻰ ﺷﺮﺑﺔ ﻣﻦ ﻣﺎﺀ »
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে কখনও মাগরিবের সালাত ইফতারের
পূর্বে পড়তে দেখি নি , কমপক্ষে এক ঢোক পানি
পান করে হলেও আগে ইফতার করতেন। ”[148]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﻔْﻄِﺮُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُﺼَﻠِّﻲَ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻃَﺒَﺎﺕٍ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ
ﺭُﻃَﺒَﺎﺕٌ ﻓَﺘُﻤَﻴْﺮَﺍﺕٌ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ ﺗُﻤَﻴْﺮَﺍﺕٌ ﺣَﺴَﺎ ﺣَﺴَﻮَﺍﺕٍ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﺀٍ ».
“তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম (মাগরিবের) সালাত আদায়ের আগেই
কিছু তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা
খেজুর না পেলে কিছু শুকনা খেজুর দিয়ে ইফতার
করে নিতেন। আর যদি শুকনা খেজুর না পেতেন তবে
কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন।” [149]
রমযানে ইফতার করার পরে যদি সূর্য দেখা দেয়
আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺃَﻓْﻄَﺮْﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻮْﻡَ ﻏَﻴْﻢٍ، ﺛُﻢَّ ﻃَﻠَﻌَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ، ﻗِﻴﻞَ
ﻟِﻬِﺸَﺎﻡٍ: ﻓَﺄُﻣِﺮُﻭﺍ ﺑِﺎﻟﻘَﻀَﺎﺀِ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻻَ ﺑُﺪَّ ﻣِﻦْ ﻗَﻀَﺎﺀٍ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻣَﻌْﻤَﺮٌ: ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﻫِﺸَﺎﻣًﺎ ﻻَ ﺃَﺩْﺭِﻱ
ﺃَﻗَﻀَﻮْﺍ ﺃَﻡْ ﻻَ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে
একবার মেঘাচ্ছন্ন দিনে আমরা ইফতার
করলাম, এরপর সূর্য দেখা যায়। বর্ণনাকারী
হিশামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তাদের কি কাযা
করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? হিশাম রহ.
বললেন, কাযা ছাড়া উপায় কি? (অপর বর্ণনাকারী)
মা‘মার রহ. বলেন, আমি হিশামকে বলতে
শুনেছি, তাঁরা কাযা করেছিলেন কিনা তা আমি
জানি না।” [150]
বাচ্চাদের সাওম পালন করা
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রমযানে এক নেশাগ্রস্ত
ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, আমাদের বাচ্চারা
পর্যন্ত সাওম পালন করছে। তোমার সর্বনাশ হোক!
অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে প্রহর
করলেন।
রুবায়্যি‘ বিনতে মু‘আব্বিয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺃَﺭْﺳَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻏَﺪَﺍﺓَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ ﺇِﻟَﻰ ﻗُﺮَﻯ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ: ﻣَﻦْ ﺃَﺻْﺒَﺢَ
ﻣُﻔْﻄِﺮًﺍ، ﻓَﻠْﻴُﺘِﻢَّ ﺑَﻘِﻴَّﺔَ ﻳَﻮْﻣِﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺻْﺒَﺢَ ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ، ﻓَﻠﻴَﺼُﻢْ » ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻓَﻜُﻨَّﺎ ﻧَﺼُﻮﻣُﻪُ ﺑَﻌْﺪُ، ﻭَﻧُﺼَﻮِّﻡُ
ﺻِﺒْﻴَﺎﻧَﻨَﺎ، ﻭَﻧَﺠْﻌَﻞُ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠُّﻌْﺒَﺔَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻌِﻬْﻦِ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺑَﻜَﻰ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡِ ﺃَﻋْﻄَﻴْﻨَﺎﻩُ ﺫَﺍﻙَ ﺣَﺘَّﻰ
ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻹِﻓْﻄَﺎﺭِ »
“আশুরার সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ
দিলেন, যে ব্যক্তি সাওম পালন করে নি সে যেন
দিনের বাকী অংশ না খেয়ে থাকে আর যার সাওম
অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সাওম পূর্ণ করে।
তিনি (রুবায়্যি‘) বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন
সাওম রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের সাওম
রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা
তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য
কাঁদলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ইফতার পর্যন্ত
ভুলিয়ে রাখতাম”। [151]
সাওমে বেসাল বা বিরতিহীনভাবে সাওম পালন
করা
আল্লাহর বাণী ﴿ﺃَﺗِﻤُّﻮﺍْ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟَّﻴۡﻞِۚ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧] “তোমরা
রাতের আগমন পর্যন্ত সাওম পালন কর। [সূরা
বাকারা, আয়াত: ১৮৭] এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতে
সাওম পালন করা যাবে না বলে যারা অভিমত ব্যক্ত
করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উম্মতের ওপর দয়াপরবশত হয়ে ও তাদের স্বাস্থ্য
রক্ষার খাতিরে সাওমে বেসাল বা
বিরতিহীনভাবে সাওম পালন করতে নিষেধ
করেছেন এবং কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা
নিন্দনীয়।
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻻَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻠُﻮﺍ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﺇِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ، ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﺴْﺖُ ﻛَﺄَﺣَﺪٍ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﺃُﻃْﻌَﻢُ، ﻭَﺃُﺳْﻘَﻰ، ﺃَﻭْ ﺇِﻧِّﻲ
ﺃَﺑِﻴﺖُ ﺃُﻃْﻌَﻢُ ﻭَﺃُﺳْﻘَﻰ »
“তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না। লোকেরা
বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল করেন? তিনি
বললেন, আমি তোমাদের মতো নই। আমাকে
পানাহার করানো হয়, (অথবা বললেন) আমি
পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি”। [ 152 ]
‘আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﻧَﻬَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻮِﺻَﺎﻝِ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﺇِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ، ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻧِّﻲ
ﻟَﺴْﺖُ ﻣِﺜْﻠَﻜُﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﺃُﻃْﻌَﻢُ ﻭَﺃُﺳْﻘَﻰ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমে
বেসাল পালন করতে নিষেধ করেছেন। তখন লোকেরা
তাঁকে বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল করেন? তিনি
বললেন, আমি তোমাদের মতো নই। আমাকে
পানাহার করানো হয়, (অথবা বললেন) আমি
পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি”। [ 153 ]
আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
বলতে শুনেছেন যে,
« ﻻَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻠُﻮﺍ، ﻓَﺄَﻳُّﻜُﻢْ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺃَﻥْ ﻳُﻮَﺍﺻِﻞَ، ﻓَﻠْﻴُﻮَﺍﺻِﻞْ ﺣَﺘَّﻰ ﺍﻟﺴَّﺤَﺮِ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ ﻳَﺎ
ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺴْﺖُ ﻛَﻬَﻴْﺌَﺘِﻜُﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺑِﻴﺖُ ﻟِﻲ ﻣُﻄْﻌِﻢٌ ﻳُﻄْﻌِﻤُﻨِﻲ، ﻭَﺳَﺎﻕٍ ﻳَﺴْﻘِﻴﻦِ »
“তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না।
তোমাদের কেউ সাওমে বেসাল পালন করতে চাইলে
সে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। লোকেরা
বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যে সাওমে বেসাল
পালন করেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদের মতো
নই, আমি রাত্রি যাপন করি এরূপ অবস্থায় যে, আমার
জন্য একজন খাদ্য পরিবেশনকারী থাকেন যিনি
আমাকে আহার করান এবং একজন পানীয়
পরিবেশনকারী আমাকে পান করান”। [154]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﻧَﻬَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻮِﺻَﺎﻝِ ﺭَﺣْﻤَﺔً ﻟَﻬُﻢْ، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﺇِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ،
ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺴْﺖُ ﻛَﻬَﻴْﺌَﺘِﻜُﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﻳُﻄْﻌِﻤُﻨِﻲ ﺭَﺑِّﻲ ﻭَﻳَﺴْﻘِﻴﻦِ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ : ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮْ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ
ﺭَﺣْﻤَﺔً ﻟَﻬُﻢْ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
লোকদের ওপর দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে সাওমে
বেসাল থেকে নিষেধ করলে তারা বলল, আপনি যে
সাওমে বেসাল করে থাকেন! তিনি বললেন, আমি
তোমাদের মতো নই, আমার রব আমাকে পানাহার
করান”। আবু ‘আব্দুল্লাহ বুখারী রহ.
বলেন, বর্ণনাকারী ‘উসমান রহ. ‘তাদের প্রতি
দয়াপরবশ হয়ে’ কথাটি উল্লেখ করেন নি।” [155]
যে অধিক পরিমাণ সাওমে বেসাল পালন করে তাঁকে
শাস্তি প্রদান
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ বর্ণনা করেছেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﻧَﻬَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻮِﺻَﺎﻝِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡِ » ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦَ
ﺍﻟﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ: ﺇِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﺃَﻳُّﻜُﻢْ ﻣِﺜْﻠِﻲ، ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺑِﻴﺖُ ﻳُﻄْﻌِﻤُﻨِﻲ ﺭَﺑِّﻲ
ﻭَﻳَﺴْﻘِﻴﻦِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺃَﺑَﻮْﺍ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﺘَﻬُﻮﺍ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻮِﺻَﺎﻝِ، ﻭَﺍﺻَﻞَ ﺑِﻬِﻢْ ﻳَﻮْﻣًﺎ، ﺛُﻢَّ ﻳَﻮْﻣًﺎ، ﺛُﻢَّ ﺭَﺃَﻭُﺍ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻟَﻮْ ﺗَﺄَﺧَّﺮَ ﻟَﺰِﺩْﺗُﻜُﻢْ ﻛَﺎﻟﺘَّﻨْﻜِﻴﻞِ ﻟَﻬُﻢْ ﺣِﻴﻦَ ﺃَﺑَﻮْﺍ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﺘَﻬُﻮﺍ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বিরতিহীন সাওম পালন করতে নিষেধ করলে
মুসলিমদের এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আপনি যে বিরতীহীন সাওম পালন
করেন? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার মত
কে আছ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার
রব আমাকে পানাহার করান। এরপর যখন লোকেরা
সাওমে বেসাল করা থেকে বিরত থাকল না, তখন
তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন সাওমে
বেসাল করতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ
দেখতে পেল তখন তিনি বললেন, যদি চাঁদ উঠতে
আরও দেরী হতো তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে
আরও বেশি দিন সাওমে বেসাল করতাম। এ কথা
তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদানস্বরূপ
বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃতি
জানিয়েছিল”। [156]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
বলেন,
« ﺇِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﺍﻟﻮِﺻَﺎﻝ ﻣَﺮَّﺗَﻴْﻦِ ﻗِﻴﻞَ: ﺇِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ، ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺑِﻴﺖُ ﻳُﻄْﻌِﻤُﻨِﻲ ﺭَﺑِّﻲ ﻭَﻳَﺴْﻘِﻴﻦِ،
ﻓَﺎﻛْﻠَﻔُﻮﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻌَﻤَﻞِ ﻣَﺎ ﺗُﻄِﻴﻘُﻮﻥَ »
“তোমরা সাওমে বেসাল পালন করা থেকে বিরত
থাক (বাক্যটি তিনি) দু’বার বললেন। তাঁকে বলা
হলো, আপনি তো সাওমে বেসাল করেন। তিনি
বললেন, আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার রব
আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন। তোমরা
তোমাদের সাধ্যানুযায়ী ‘আমল করার দায়িত্ব গ্রহণ
করো”। [157]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻤْﺖُ ﺇِﻟَﻰ ﺟَﻨْﺒِﻪِ
ﻭَﺟَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺁﺧَﺮُ، ﻓَﻘَﺎﻡَ ﺃَﻳْﻀًﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﻛُﻨَّﺎ ﺭَﻫْﻄًﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺣَﺲَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧَّﺎ
ﺧَﻠْﻔَﻪُ ﺟَﻌَﻞَ ﻳَﺘَﺠَﻮَّﺯُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ، ﺛُﻢَّ ﺩَﺧَﻞَ ﺭَﺣْﻠَﻪُ، ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﺻَﻠَﺎﺓً ﻟَﺎ ﻳُﺼَﻠِّﻴﻬَﺎ ﻋِﻨْﺪَﻧَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: ﻗُﻠْﻨَﺎ
ﻟَﻪُ: ﺣِﻴﻦَ ﺃَﺻْﺒَﺤْﻨَﺎ ﺃَﻓَﻄَﻨْﺖَ ﻟَﻨَﺎ ﺍﻟﻠَّﻴْﻠَﺔَ ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻧَﻌَﻢْ، ﺫَﺍﻙَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺣَﻤَﻠَﻨِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺻَﻨَﻌْﺖُ
ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺄَﺧَﺬَ ﻳُﻮَﺍﺻِﻞُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻭَﺫَﺍﻙَ ﻓِﻲ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮِ، ﻓَﺄَﺧَﺬَ
ﺭِﺟَﺎﻝٌ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺑِﻪِ ﻳُﻮَﺍﺻِﻠُﻮﻥَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﻣَﺎ ﺑَﺎﻝُ ﺭِﺟَﺎﻝٍ ﻳُﻮَﺍﺻِﻠُﻮﻥَ،
ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﻟَﺴْﺘُﻢْ ﻣِﺜْﻠِﻲ، ﺃَﻣَﺎ ﻭَﺍﻟﻠﻪِ، ﻟَﻮْ ﺗَﻤَﺎﺩَّ ﻟِﻲ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮُ ﻟَﻮَﺍﺻَﻠْﺖُ ﻭِﺻَﺎﻟًﺎ ﻳَﺪَﻉُ ﺍﻟْﻤُﺘَﻌَﻤِّﻘُﻮﻥَ
ﺗَﻌَﻤُّﻘَﻬُﻢْ »
“রমযান মাসে একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করছিলেন।
আমি তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালাম! এরপর অন্য এক
ব্যক্তি এসেও তাঁর পাশে দাঁড়ালেন। এভাবে আমরা
এক দল লোক হয়ে গেলাম। এরপর নরী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বুঝতে পারলেন যে
আমরা তাঁর পেছনে আছি তখন তিনি সালাত
সংক্ষেপ করে ফেললেন। তারপর তিনি আপন গৃহে
চলে গেলেন এবং এমন (দীর্ঘ) সালাত আদায় করলেন
যে, এভাবে তিনি আমাদের সাথে সালাত আদায়
করতেন না। সকালে আমরা তাকে বললাম, রাত্রে
আপনি আমাদের সম্পর্কে বুঝতে পেরেছিলেন
কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাইতো আমাকে
অনুপ্রাণিত করেছে ঐ কাজের যা আমি করেছি।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষভাগে আবার সাওমে
বেসাল করতে আরম্ভ করলেন। এ দেখে কতিপয়
সাহাবীও সাওমে বেসাল শুরু করলেন। তখন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
লোকদের কি হলো তারা যে সাওমে বেসাল আরম্ভ
করেছে! তোমরা তো আমার মত নও। আল্লাহর শপথ!
যদি মাস দীর্ঘায়িত হতো তবে আমি এমনভাবে
সাওমে বিসাল করতাম যার ফলে
সীমালংঘনকারীগণ সাওমে বেসাল করা ছেড়ে
দিত”। [158]
সাহরীর সময় পর্যন্ত সাওমে বেসাল পালন করা
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খেকে
বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে,
« ﻻَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻠُﻮﺍ، ﻓَﺄَﻳُّﻜُﻢْ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺃَﻥْ ﻳُﻮَﺍﺻِﻞَ، ﻓَﻠْﻴُﻮَﺍﺻِﻞْ ﺣَﺘَّﻰ ﺍﻟﺴَّﺤَﺮِ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ ﻳَﺎ
ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﺴْﺖُ ﻛَﻬَﻴْﺌَﺘِﻜُﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺑِﻴﺖُ ﻟِﻲ ﻣُﻄْﻌِﻢٌ ﻳُﻄْﻌِﻤُﻨِﻲ، ﻭَﺳَﺎﻕٍ ﻳَﺴْﻘِﻴﻦِ »
“তোমরা সাওমে বেসাল করবে না। তোমাদের কেউ
যদি সাওমে বেসাল করতে চায়, তবে যেন সাহরীর
সময় পর্যন্ত করে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আপনি তো সাওমে বেসাল পালন
করেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের মতো নই।
আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার জন্য একজন
আহারদাতা রয়েছেন যিনি আমাকে আহার
করান, একজন পানীয় দানকারী আছেন যিনি
আমাকে পান করান”। [159]
কোনো ব্যক্তি তার ভাইয়ের নফল সাওম ভঙ্গের জন্য
কসম দিলে এবং তার জন্য এ সাওমের কাযা ওয়াজিব
মনে না করলে, যখন সাওম পালন না করা তার জন্য
উত্তম হয়
আউন ইবন আবু জুহায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার
পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«ﺁﺧَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﻴْﻦَ ﺳَﻠْﻤَﺎﻥَ، ﻭَﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ، ﻓَﺰَﺍﺭَ ﺳَﻠْﻤَﺎﻥُ ﺃَﺑَﺎ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ،
ﻓَﺮَﺃَﻯ ﺃُﻡَّ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﻣُﺘَﺒَﺬِّﻟَﺔً، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻬَﺎ : ﻣَﺎ ﺷَﺄْﻧُﻚِ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﺃَﺧُﻮﻙَ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻪُ ﺣَﺎﺟَﺔٌ
ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ، ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﻓَﺼَﻨَﻊَ ﻟَﻪُ ﻃَﻌَﺎﻣًﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻛُﻞْ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺈِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺎ
ﺃَﻧَﺎ ﺑِﺂﻛِﻞٍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺄْﻛُﻞَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺄَﻛَﻞَ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞُ ﺫَﻫَﺐَ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﻳَﻘُﻮﻡُ، ﻗَﺎﻝَ: ﻧَﻢْ،
ﻓَﻨَﺎﻡَ، ﺛُﻢَّ ﺫَﻫَﺐَ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻧَﻢْ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻗَﺎﻝَ: ﺳَﻠْﻤَﺎﻥُ ﻗُﻢِ ﺍﻵﻥَ، ﻓَﺼَﻠَّﻴَﺎ
ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺳَﻠْﻤَﺎﻥُ : ﺇِﻥَّ ﻟِﺮَﺑِّﻚَ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺣَﻘًّﺎ، ﻭَﻟِﻨَﻔْﺴِﻚَ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺣَﻘًّﺎ، ﻭَﻟِﺄَﻫْﻠِﻚَ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺣَﻘًّﺎ، ﻓَﺄَﻋْﻂِ ﻛُﻞَّ
ﺫِﻱ ﺣَﻖٍّ ﺣَﻘَّﻪُ، ﻓَﺄَﺗَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﺬَﻛَﺮَ ﺫَﻟِﻚَ ﻟَﻪُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﺻَﺪَﻕَ ﺳَﻠْﻤَﺎﻥُ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান
ও আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মাঝে
ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। (একবার) সালমান
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবু দারদা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসে
উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে মলিন কাপড়
পরিহিত দেখতে পান। তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা
করলে উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
বললেন, আপনার ভাই আবু দারদার পার্থিব কোনো
কিছুর প্রতি মোহ নেই। কিছুক্ষণ পরে আবু দারদা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এলেন। তারপর তিনি সালমান
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য আহার্য প্রস্তুত করান
এবং বলেন, আপনি খেয়ে নিন, আমি সাওম পালন
করছি। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আপনি
না খেলে আমি খাবো না। এরপর আবু দারদা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর
সঙ্গে খেলেন। রাত হলে আবু দারদা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (সালাত আদায়ে) দাঁড়াতে
গেলেন। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এখন
ঘুমিয়ে যান। আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবু দারদা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবার সালাতে দাঁড়াতে উদ্যত
হলেন, সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ঘুমিয়ে
যান। যখন রাতের শেষভাগ হলো, সালমান
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবু দারদা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, এখন দাঁড়ান। এরপর
তারা দু’জনে সালাত আদায় করলেন। পরে সালমান
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, আপনার রবের হক
আপনার ওপর আছে। আপনার নিজেরও হক আপনার ওপর
রয়েছে। আবার আপনার পরিবারেরও হক রয়েছে।
প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করুন। এরপর আবু
দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে এ
ঘটনা বর্ণনা করলেন। (সব শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সালমান ঠিকই
বলেছে”। [160]
সাওমের নিয়ত করা এবং যে ব্যক্তি রাতের বেলায়
রমযানের সাওমের নিয়ত করবে না তার সাওম আদায়
হবে না
হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা
করেন, তিনি বলেন,
«ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳُﺒَﻴِّﺖِ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﻓَﻠَﺎ ﺻِﻴَﺎﻡَ ﻟَﻪُ »
“যে ব্যক্তি (রমযানের সাওম ব্যতীত) রাত্রে
সাওমের নিয়ত না করে তার সাওম পালন করা হবে
না”। [161]
হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সূত্রে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
«ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳُﺠْﻤِﻊِ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﻗَﺒْﻞَ ﻃُﻠُﻮﻉِ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ، ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺼُﻮﻡُ »
“যে ব্যক্তি ফজর উদয়ের পূর্বেই রাত্রে সাওমের
নিয়ত না করে তার সাওম পালন হবে না”। [162]
নফল সাওমের নিয়ত দিনের বেলায় সূর্য হেলে
যাওয়ার পূর্বে করা জায়েয এবং নফল সাওম
পালনকারীকে ওযর ব্যতীতই সাওম ভঙ্গ করানো
জায়েয
উম্মুল মুমিনীন ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻳَﺎ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ، ﻫَﻞْ ﻋِﻨْﺪَﻛُﻢْ ﺷَﻲْﺀٌ؟
ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻣَﺎ ﻋِﻨْﺪَﻧَﺎ ﺷَﻲْﺀٌ ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺈِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻓَﺨَﺮَﺝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺄُﻫْﺪِﻳَﺖْ ﻟَﻨَﺎ ﻫَﺪِﻳَّﺔٌ ﺃَﻭْ ﺟَﺎﺀَﻧَﺎ ﺯَﻭْﺭٌ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﺟَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗُﻠْﺖُ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺃُﻫْﺪِﻳَﺖْ ﻟَﻨَﺎ ﻫَﺪِﻳَّﺔٌ ﺃَﻭْ ﺟَﺎﺀَﻧَﺎ ﺯَﻭْﺭٌ ﻭَﻗَﺪْ ﺧَﺒَﺄْﺕُ
ﻟَﻚَ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻗَﺎﻝَ: ﻣَﺎ ﻫُﻮَ؟ » ﻗُﻠْﺖُ: ﺣَﻴْﺲٌ، ﻗَﺎﻝَ: «ﻫَﺎﺗِﻴﻪ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﺑِﻪِ ﻓَﺄَﻛَﻞَ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺪْ ﻛُﻨْﺖُ
ﺃَﺻْﺒَﺤْﺖُ ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻃَﻠْﺤَﺔُ: ﻓَﺤَﺪَّﺛْﺖُ ﻣُﺠَﺎﻫِﺪًﺍ ﺑِﻬَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺫَﺍﻙَ ﺑِﻤَﻨْﺰِﻟَﺔِ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻳُﺨْﺮِﺝُ
ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔَ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﻟِﻪِ، ﻓَﺈِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺃَﻣْﻀَﺎﻫَﺎ ﻭَﺇِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺃَﻣْﺴَﻜَﻬَﺎ »
“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তোমার
নিকট (খাওয়ার মতো) কোনো কিছু আছে কি? আমি
বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার নিকট কিছুই নেই।
তখন তিনি বললেন, তাহলে আমি সাওম পালন
করছি। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বাইরে চলে গেলেন। ইত্যবসরে
আমাদের নিকট কিছু হাদিয়া আসলো কিংবা
তিনি বলেছেন, দর্শনার্থী কতিপয় লোক আমাদের
নিকট আসলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসলে আমি
বললাম, ইয়া রাসুলল্লাহ! আমাদের কিছু হাদিয়া
দেওয়া হয়েছে কিংবা তিনি বলেছেন, কতিপয়
দর্শনার্থী আমাদের নিকট এসেছেন। আমি আপনার
জন্য কিছু খাবার সযত্নে রেখে দিয়েছি। তিনি
বললেন, তা কী? আমি বললাম, হায়স অর্থাৎ ঘি এবং
পনির মিশ্রিত খেজুর। তিনি বললেন, নিয়ে আস।
তখন আমি তা নিয়ে এলাম। তিনি তা খেলেন।
তারপর বললেন, আমি ভোরে সাওম পালনের নিয়ত
করেছিলাম। বর্ণনাকারী তালহা রহ. বলেন, আমি এ
হাদীস মুজাহিদ রহ.-এর নিকট বর্ণনা করার পর
তিনি বললেন, এ কাজটি ঐ ব্যক্তির মতো যে তার
মাল থেকে সদকা বের করলো। সে ইচ্ছা করলে তা
দান করতে পারেন আর ইচ্ছা করলে রেখেও দিতে
পারে।” [163]
লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻤﺄﻣﻮﻥ ﺍﻷﺯﻫﺮﻱ
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ﻣﺮﺍﺟﻌﺔ: ﺩ / ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻣﺤﻤﺪ ﺯﻛﺮﻳﺎ
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ,
সৌদিআরব
বিশ্বকোষ (১ম পর্ব)
সূচিপত্র
ক্রম বিষয়
1. ভূমিকা
2. প্রথম অধ্যয়: সাওমের পরিচয়, ইতিহাস ও তাৎপর্য
3. সাওমের পরিচয়, সাওমের অভিধানিক অর্থ
4. সাওমের ইতিহাস ও তাৎপর্য, যুগে যুগে বিভিন্ন
ধর্ম ও সম্প্রদায়ে সাওম
5. সাওমের তাৎপর্য
6. দ্বিতীয় অধ্যয়: সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম
7. রমযানের সাওম ফরয হওয়া প্রসঙ্গে
8. রমযান ও সাওমের ফযীলত
9. আল্লাহর রাস্তায় সাওমের ফযীলত
10. সাওম গুনাহের কাফফারা
11. সাওম ঢালস্বরূপ
12. সাওম পালনকারীর জন্য জান্নাতে রাইয়্যান
দরজা
13. রমযান নাকি রমযান মাস বলা হবে? কেউ কেউ
বলেছেন, উভয়টি বলা যাবে?
14. রমযানের চাঁদ দেখা
15. যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায়
নিয়তের সাথে সাওম পালন করবে
16. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান
মাসে অধিক দান করতেন
17. যে ব্যক্তি সাওম পালনের সময় মিথ্যা বলা ও সে
অনুযায়ী আমল বর্জন করে নি
18. কাউকে গালি দেওয়া হলে সে কী বলবে, আমি
সাওম পালনকারী?
19. অবিবাহিত ব্যক্তি যে নিজের ওপর ফিতনার
আশংকা করে তার জন্য সাওম পালন করা
20. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
বাণী, তোমরা চাঁদ দেখে সাওম পালন শুরু করবে,
আবার চাঁদ দেখে সাওম থেকে বিরত থাকবে
21. চাঁদ দেখার ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহণ
22. চাঁদ দেখতে কতজন সাক্ষ্য লাগবে?
23. প্রত্যেক দেশে আলাদা আলাদাভাবে চাঁদ
দেখা, এক দেশে চাঁদ দেখলে তার হুকুম অন্যের জন্য
যথেষ্ট নয়।
24. চাঁদ ছোট বা বড় দেখা ধর্তব্য নয়, আল্লাহ
তা‘আলা দেখার জন্য বর্ধিত করে দিয়েছেন। আর
যদি মেঘের কারণে দেখা না যায় তবে ত্রিশ দিন
পূর্ণ করবে।
25. ঈদের দু’মাস কম হয় না
26. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
বাণী: আমরা লিখি না এবং হিসাবও করি না
27. ইয়াওমুশ শক বা সন্দেহের দিনে সাওম পালন কর
28. অর্ধ শা‘বানের পরে নফল সাওম পালন করা
29. আল্লাহর বাণী: সিয়ামের রাতে তোমাদের
জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা
হয়েছে
30. আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা
রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত
পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর
31. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
বাণী: বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর আযান যেন
তোমাদেরকে সাহরী থেকে বিরত না রাখে
32. সাহরী খাওয়ায় তাড়াতাড়ি করা
33. সাহরী ও ফজরের সালাতের মাঝে ব্যবধানের
পরিমাণ
34. সাহরীতে রয়েছে অনেক বরকত কিন্তু তা
ওয়াজিব নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ একটানা সাওম
পালন করেছেন অথচ সেখানে সাহরীর উল্লেখ নেই।
35. সাহরীতে যা খাওয়া মুস্তাহাব
36. আযান দেওয়া অবস্থায় কারো হাতে খাবারের
পাত্র থাকলে কী করবে?
37. দিনের বেলায় (নফল) সাওমের নিয়াত করলে
38. সাওম পালনকারী জুনুবী অবস্থায় সকাল করলে।
39. সাওম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা
40. সাওম অবস্থায় চুম্বন করা
41. স্বামীর অনুমতিক্রমে স্ত্রীর নফল সাওম পালন
42. সাওম পালনকারীর গোসল করা
43. সাওম পালনকারী ভুলে কিছু খেলে বা পান
করলে
44. সাওম পালনকারীর শুকনো ও ভেজা মিসওয়াক
ব্যবহার করার হুকুম।
45. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
বাণী: যখন অযু করবে তখন নাকের ছিদ্র দিয়ে পানি
টেনে নিবে
46. রমযানে দিনের বেলায় সহবাস করলে
47. রমযানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করলে
সদকা দেওয়ার কিছু না থাকলে, সে যেন নিজে
নিজেকে সদকা দিয়ে কাফফারাস্বরূপ আদায় করে।
48. রমযানে সাওম পালনকারী অবস্থায় যে ব্যক্তি
স্ত্রী সহবাস করেছে সে ব্যক্তি কি কাফফারা
থেকে তার অভাবগ্রস্ত পরিবারকে খাওয়াতে
পারবে?
49. সাওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো ও বমি করা
50. সফর অবস্থায় সাওম পালন করা ও না করা
51. সফর অবস্থায় কোন কাজের দায়িত্ব পালন
করাকালীন সাওম ভঙ্গ করলে তার প্রতিদান
52. রমযানে কয়েক দিন সাওম পালন করে যদি কেউ
সফর আরম্ভ করে
53. প্রচণ্ড গরমের কারণে যে ব্যক্তির উপর ছায়ার
ব্যবস্থা করা হয়েছে তাঁর সম্পর্কে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
সফরে সাওম পালনে কোনো নেকী নেই
54. সফর অবস্থায় সাওম পালনের ব্যাপারে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ
একে অন্যকে দোষারোপ করতেন না
55. সফর অবস্থায় সাওম ভঙ্গ করা, যাতে লোকেরা
দেখতে পায়।
56. যাদের সাওম পালন অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের
সাওমের পরিবর্তে ফিদইয়া তথা একজন মিসকীনকে
খাদ্য দেওয়া
57. রমযানের কাযা সাওম কখন আদায় করা হবে?
58. ঋতুবতী মহিলা সালাত ও সাওম উভয়ই ত্যাগ
করবে
59. ঋতুবতী মহিলা সাওমের কাযা করবে কিন্তু
সালাতের কাযা করবে না
60. সাওমের কাযা যিম্মায় রেখে যে ব্যক্তি মারা
গেল।
61. সাওম পালনকারীর জন্য কখন ইফতার করা
হালাল
62. পানি বা সহজলভ্য অন্য কিছু দিয়ে ইফতার
করবে
63. ইফতার ত্বরান্বিত করা
64. মাগরিবের সালাতের পূর্বে ইফতার করা
মুস্তাহাব এবং যে সব জিনিস দ্বারা ইফতার করা
মুস্তাহাব
65. রমযানে ইফতার করার পরে যদি সূর্য দেখা দেয়
66. বাচ্চাদের সাওম পালন করা
67. সাওমে বেসাল বা বিরতিহীনভাবে সাওম
পালন করা
68. যে অধিক পরিমাণ সাওমে বেসাল পালন করে
তাঁকে শাস্তি প্রদান
69. সাহরীর সময় পর্যন্ত সাওমে বেসাল পালন করা
70. কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের নফল সাওম ভঙ্গের
জন্য কসম দিলে এবং তার জন্য এ সাওমের কাযা
ওয়াজিব মনে না করলে, যখন সাওম পালন না করা
তার জন্য উত্তম হয়
71. সাওমের নিয়ত করা এবং যে ব্যক্তি রাতের
বেলায় রমযানের সাওমের নিয়ত করবে না তার
সাওম আদায় হবে না
72. নফল সাওমের নিয়ত দিনের বেলায় সূর্য হেলে
যাওয়ার পূর্বে করা জায়েয এবং নফল সাওম
পালনকারীকে উযর ব্যতীতই সাওম ভঙ্গ করানো
জায়েয।
73. শা‘বান মাসের সাওম
74. মুহাররম মাসের সাওম পালনের ফযিলত
75. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সাওম পালন করা ও না পালনের বর্ণনা
76. নফল সাওম পালনের ব্যাপারে মেহমানের হক
77. নফল সাওমে শরীরের হক
78. সারা বছর সাওম পালন করা
79. সাওম পালনের ব্যাপারে পরিবার পরিজনের হক
80. একদিন সাওম পালন করা একদিন ছেড়ে দেওয়া
81. দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম
82. সাওমে বীয বা প্রতিমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫
তারিখে সাওম পালন করা
83. সাওম পালনকারী কারো দাওয়াতে সাড়া
দেওয়া
84. সাওম পালনকারীকে খাবারের জন্য ডাকলে সে
যেন বলে, আমি সাওম পালনকারী
85. কারো সাথে দেখা করতে গেলে নফল সাওম ভঙ্গ
না করা
86. সাওম পালনকারীকে ইফতার করানোর সাওয়াব
87. মাসের শেষভাগে সাওম পালন
88. জুমু‘আর দিনে সাওম পালন
89. সাওম পালনের ব্যাপারে কোন দিন কি
নির্দিষ্ট করা যায়?
90. শাওয়াল মাসে ছয়টি সাওম পালন
91. যিলহজ মাসের সাওম পালন
92. ‘আরাফাহ দিবসে সাওম পালন
93. ঈদের দিনে সাওম পালন
94. কুরবানীর দিনে সাওম পালন
95. আইয়ামুত তাশরিকে সাওম পালন
96. আশুরার দিনে সাওম পালন
97. সোমবার ও বৃহস্পতিবার সাওম পালন
98. কেউ স্বাভাবিক সাওমের সাথে অন্য কিছু যেমন
চুপ থাকা ইত্যাদি মিশ্রিত করে
99. রমযানে ‘উমরা পালনের ফযীলত
100. তৃতীয় অধ্যয়: সালাতুত তারাবীহ
101. রমযানে ঈমান ও সাওয়াবের আশায় যে রাত
জেগে ইবাদত করে তার ফযীলত
102. রমযানে রাতে কত রাকা‘আত সালাত?
103. লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
104. শেষ সাত রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করবে
105. শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর
তালাশ করা
106. মানুষের ঝগড়ার কারণে লাইলাতুল কদরের
নির্দিষ্ট তারিখ হারিয়ে যায়
107. লাইলাতুল কদরের ‘আলামত
108. লাইলাতুল কদরে যেসব দো‘আ পড়া মুস্তাহাব।
109. রমযানের শেষ দশকের আমল
110. চতুর্থ অধ্যয়: ই‘তিকাফ
111. রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা, সব
মসজিদে ইতিকাফ করা
112. হায়েযপ্রাপ্তা ব্যক্তি ইতিকাফকারীর চুল
আঁচড়ানো
113. ই‘তিকাফকারী প্রয়োজন ব্যতীত গৃহে প্রবেশ
না করা
114. ইতিকাফকারীর গোসল
115. রাতে ই‘তিকাফ করা
116. মহিলাদের ই‘তিকাফ
117. মসজিদে ইতিকাফ করার উদ্দেশ্যে তাঁবু
খাটানো
118. ই‘তিকাফকারী কি প্রয়োজনে মসজিদের
দরজায় বের হতে পারবে?
119. ই‘তিকাফ অধ্যয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বিশ তারিখ সকালে ই‘তিকাফের
উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন
120. মুস্তাহাযা বা রোগাক্রান্ত নারীর ইতিকাফ
করা
121. ই‘তিকাফকারী স্বামীকে স্ত্রী দেখতে
যাওয়া
122. ই‘তিকাফকারী কি নিজের থেকে সন্দেহ দূর
করবে?
123. যে ব্যক্তি প্রত্যুষে ই‘তিকাফ থেকে ফিরে
আসে
124. শাওয়াল মাসে ই‘তিকাফ করা
125. যারা সাওম ব্যতীত ই‘তিকাফ করা বৈধ মনে
করেন
126. যে ব্যক্তি জাহেলী যুগে ই‘তিকাফের মানত
করেছে সে তা ইসলামে প্রবেশ করলে তা আদায়
করবে
127. রমযানের মধ্য দশকে ই‘তিকাফ করা
128. ই‘তিকাফের নিয়ত করে ই‘তিকাফ না করা
129. রোগ বা সফরের কারণে রমযানে ই‘তিকাফ
করতে না পারলে
130. ই‘তিকাফকারী গোসলের জন্য মাথা ঘরে
ঢুকিয়ে দেওয়া
131. ই‘তিকাফকারী কখন ই‘তিকাফের স্থানে
প্রবেশ করবে
132. পঞ্চম অধ্যয়: সদাকাতুল ফিতর
133. সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে
134. মুসলিমদের গোলাম ও অন্যান্যের পক্ষ থেকে
সদকাতুল ফিতর আদায় করা
135. সদকাতুল ফিতর এক সা‘ পরিমাণ যব
136. সদকাতুল ফিতর এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য
137. সদকাতুল ফিতর এক সা‘ পরিমাণ খেজুর
138. সদকাতুল ফিতর এক সা‘ পরিমাণ কিসমিস
থেকে
139. ঈদের সালাতের পূর্বেই সদকাতুল ফিতর আদায়
করা
140. স্বাধীন ও গোলামের পক্ষ থেকে সদকাতুল
ফিতর আদায় করা ওয়াজিব
141. অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও প্রাপ্ত বয়স্কদের পক্ষ থেকে
সদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব
142. ষষ্ঠ অধ্যয়: ঈদের সালাত
143. দু’ঈদ ও সুন্দর পোশাক পরিধান করা
144. ঈদের দিন বর্শা ও ঢালের খেলা
145. মুসলিমদের জন্য উভয় ঈদের রীতিনীতি
146. ঈদুল ফিতরের দিন সালাতে বের হওয়ার আগে
আহার করা
147. কুরবানীর দিন আহার করা
148. মিম্বার না নিয়ে ঈদগাহে গমন
149. পায়ে হেঁটে বা সাওয়ারীতে আরোহণ করে
ঈদের জামা‘আতে যাওয়া এবং আযান ও অকামত
ছাড়া খুতবার পূর্বে সালাত আদায় করা
150. ঈদের সালাতের পরে খুতবা দেওয়া
151. ঈদের জামা‘আতে এবং হারাম শরীফে অস্ত্র
বহন নিষিদ্ধ
152. ঈদের সালাতের জন্য সকাল সকাল রওয়ানা
হওয়া
153. ঈদের দিন বর্শা সামনে পুতে সালাত আদায়
করা
154. ঈদের দিন ইমামের সামনে বল্লম বা বর্শা বহন
করা
155. মহিলাদের ও ঋতুবতীদের ঈদগাহে গমন
156. বালকদের ঈদগাহে গমন
157. ঈদের খুতবা দেওয়ার সময় মুসল্লীদের দিকে
ইমামের মুখ করে দাঁড়ানো
158. ঈদগাহে চিহ্ন রাখা
159. ঈদের দিন মহিলাগণের উদ্দেশ্যে ঈমামের
উপদেশ দেওয়া
160. ঈদের সালাতে যাওয়ার জন্য মহিলাদের ওড়না
না থাকলে
161. ঈদগাহে ঋতুবতী মহিলারা পৃথক অবস্থান করবে
162. ঈদের দিন ফিরার সময় যে ব্যক্তি ভিন্ন পথে
আসে।
163. কেউ ঈদের সালাত না পেলে সে দু’রাকা‘আত
সালাত আদায় করবে।
164. ঈদের সালাতের পূর্বে ও পরে সালাত আদায়
করা
165. সপ্তম অধ্যয়: সংক্ষেপে পবিত্র রমযান মাসে
আমাদের করণীয় ‘আমল
166. অষ্টম অধ্যায়: সাওম সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ
মাসআলা
ভূমিকা
সকল প্রশংসা আল্লাহর, আমরা তাঁর প্রশংসা করছি,
তাঁরই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, তাঁর নিকট
ক্ষমা চাচ্ছি, তাঁর কাছে তাওবা করছি। তাঁর কাছে
আমাদের অন্তরের সব কলুষিতা ও সব পাপ কাজ
থেকে পানাহ চাই। তিনি যাকে হিদায়াত দান
করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না আর
তিনি যাকে পথ-ভ্রষ্ট করেন কেউ তাকে হিদায়াত
দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ
ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো
শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর
বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাকে হিদায়াত ও সত্য
দীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তা সব দীনের ওপর
বিজয় লাভ করে। তিনি তাঁর রিসালাহ (দাওয়াত)
পৌঁছেছেন, আমানত আদায় করেছেন, উম্মতকে
উপদেশ দিয়েছেন, আল্লাহর পথে যথাযথ প্রচেষ্টা
করেছেন। তাঁর উম্মতকে সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণের
রেখে গেছেন, যার দিবারাত্রি সমানভাবেই স্পষ্ট,
একমাত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত ছাড়া কেউ সে পথ থেকে সরে
যায় না। তাই আল্লাহর সালাত ও সালাম তাঁর ওপর,
তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীগণ ও কিয়ামত পর্যন্ত
একনিষ্ঠার সাথে যারা তাঁর অনুসরণ করবে সকলের
ওপর বর্ষিত হোক। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি
তিনি যেন আমাকে ও আপনাদেরকে প্রকাশ্য ও
অপ্রকাশ্য সব কাজে তাঁর অনুসারী করেন। যিনি
যেন তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের দলের অন্তর্ভুক্ত করে আমাদেরকে
মৃত্যু দান করেন। তাঁর উম্মতের কাতারে যেন
হাশরের দিনে একত্রিত করেন। তাঁর শাফা‘আতের
অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তিনি যেন আমাদেরকে
চিরস্থায়ী জান্নাতে তাঁর সাথে ও সে সব নবী
রাসূল, সিদ্দিকীন, শুহাদা ও সালেহীন বান্দাদের
সাথে একত্রিত করেন যাদের ওপর আল্লাহ অনুগ্রহ
করেছেন।
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺣَﻖَّ ﺗُﻘَﺎﺗِﻪِۦ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻤُﻮﺗُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢ ﻣُّﺴۡﻠِﻤُﻮﻥَ ١٠٢﴾ [ﺍﻝ
ﻋﻤﺮﺍﻥ: ١٠٢]
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন
কর, যথাযথ তাকওয়া। আর তোমরা মুসলিম হওয়া
ছাড়া মারা যেও না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত:
১০২]
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟﻨَّﺎﺱُ ﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﺭَﺑَّﻜُﻢُ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻘَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﻧَّﻔۡﺲٖ ﻭَٰﺣِﺪَﺓٖ ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﻣِﻨۡﻬَﺎ ﺯَﻭۡﺟَﻬَﺎ ﻭَﺑَﺚَّ ﻣِﻨۡﻬُﻤَﺎ ٗﺍ
ﻛَﺜِﻴﺮٗﺍ ﻭَﻧِﺴَﺎٓﺀٗۚ ﻭَﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﺗَﺴَﺎٓﺀَﻟُﻮﻥَ ﺑِﻪِۦ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺭۡﺣَﺎﻡَۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡ ﺭَﻗِﻴﺒٗﺎ
١﴾ [ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ: ١ ]
“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি
তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর
তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের
থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর
তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার
মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর
তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের
ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর
পর্যবেক্ষক”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১]
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻗُﻮﻟُﻮﺍْ ﻗَﻮۡﻟٗﺎ ﺳَﺪِﻳﺪٗﺍ ٧٠ ﻳُﺼۡﻠِﺢۡ ﻟَﻜُﻢۡ ﺃَﻋۡﻤَٰﻠَﻜُﻢۡ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡ
ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢۡۗ ﻭَﻣَﻦ ﻳُﻄِﻊِ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُۥ ﻓَﻘَﺪۡ ﻓَﺎﺯَ ﻓَﻮۡﺯًﺍ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ ٧١ ﴾ [ ﺍﻻﺣﺰﺍﺏ: ٧٠، ٧١]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া
অবলম্বন কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের
জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং
তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে
ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে
অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল”। [সূরা: আল-
আহযাব, আয়াত: ৭০-৭১]
মহান আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে শয়তানের ধোঁকা
থেকে বাঁচার জন্য কিছু ইবাদত প্রবর্তন করে তাদের
ওপর অনুগ্রহ ও দয়া করেছেন। যেহেতু তিনি সাওমকে
বান্দাহর জন্য দূর্গ ও ঢাল স্বরূপ করেছেন। সাওমের
মাধ্যমে তিনি জান্নাতের পথ সুপ্রশস্ত করেছেন।
মানুষের অন্তরের কুপ্রবৃত্তি দমন করে তাকে
করেছেন পবিত্র। সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ
জাগরণ, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কষ্ট উপলব্ধি,
শারীরিক সুস্থতা, সর্বোপরি মহান আল্লাহর
নৈকট্যলাভ ইত্যাদি হলো সাওমের সওগাত।
সাওমের অপরিসীম ফযিলতের কারণেই আল্লাহ
বলেছেন, “সাওম আমার জন্য, আর এর প্রতিদান আমি
নিজেই দিব”।
ইসলামী কিতাবের ভাণ্ডারের দিকে কেউ
তাকালে দেখবে সাওম সম্পর্কে অসংখ্য কিতাব
বিভিন্ন ভাষায় রচিত হয়েছে। এ সব কিতাবে সহীহ
ও দ‘য়ীফ হাদীস সন্নিবেশিত হয়েছে, ফলে সাধারণ
মানুষের জন্য সহীহ হাদীসের ওপর ‘আমল করা কঠিন
হয়ে পড়ে। এসব কথা বিবেচনা করেই বাংলাদেশের
একজন স্বনামধন্য ‘আলেম, আমার সম্মানিত উস্তাদ
আমাকে “সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম
বিশ্বকোষ” সংকলনের নির্দেশ দেন। শাইখের
আদেশেই আমি এ কিতাবখানা ‘আলেম ওলামা ও
সাধারণ মানুষের জন্য লিপিবদ্ধ করেছি।
সংকলনের ক্ষেত্রে আমি নিম্নের পদ্ধতি
অনুসরণ করেছি
১- সহীহ বুখারীকে এ কিতাবের মূল হিসেবে
রেখেছি। বুখারীর সব হাদীস হুবহু উল্লেখ করেছি।
এমনকি বুখারীর ‘তালিকসমূহও অনেক ক্ষেত্রে
উল্লেখ করেছি।
২- বুখারীর বাবের সাথে অন্যান্য সহীহ হাদীসের
কিতাব থেকে হাদীস সংযোগ করেছি এবং
প্রয়োজনে আরো বাব সংযোজন করেছি।
৩- বুখারীর সাথে মুসলিমেরও হাদীসসমূহ উল্লেখ
করেছি।
৪- তাখরীজ ও হুকুমের ক্ষেত্রে বুখারী ও মুসলিম
থেকে হাদীস উল্লেখ করলে শুধু এ কিতাবের নাম
উল্লেখ করেছি। আলাদা কোনো হুকুম উল্লেখ করি
নি। কেননা সব ‘আলেমদের ঐক্যমতে এ দুই কিতাবের
হাদীসসমূহ সহীহ। কখনও কখনও শুধু বুখারী বা শুধু
মুসলিম উল্লেখ করেছি। অর্থাৎ এ দু’কিতাবের যে
কোনো একটির নাম উল্লেখ করা মানেই হাদীসটি
সহীহ প্রমাণিত হয়।
৫- বুখারী ও মুসলিম ছাড়া অন্যান্য হাদীসের
কিতাব থেকে হাদীস উল্লেখ করলে সে হাদীসের
হুকুম উক্ত কিতাবসমূহে পাওয়া গেলে তা উল্লেখ
করেছি। তাদের দেওয়া হুকুমকে আরো শক্তিশালী
করতে সাথে সাথে সুনানের ক্ষেত্রে আল্লামা
আলবানী রহ. ও মুসনাদে আহমদ ও ইবন হিব্বানের
ক্ষেত্রে শাইখ শু‘আইব আরনাঊত-এর দেওয়া হুকুমও
বর্ণনা করেছি।
৬- বুখারী, মুসলিম, সুনান, মুসতাদরাক হাকিম, ইবন
হিব্বান, মুসনাদে আহমদ ইত্যাদি হাদীসের
কিতাবের ক্ষেত্রে হাদীস নম্বর উল্লেখ করেছি।
কেননা বর্তমানে হাদীস নম্বর দিয়ে সহজেই
সাধারণ মানুষ উক্ত কিতাবের কাঙ্ক্ষিত হাদীসে
পৌঁছতে পারে। যেসব কিতাবের হাদীস নম্বর
পাওয়া যায় নি সে ক্ষেত্রে কিতাবের খণ্ড ও পৃষ্ঠা
নম্বর উল্লেখ করেছি।
৭- কোনো কোনো সময় টীকাতে হাদীসের সাথে
সম্পৃক্ত মাসআলা থাকলে তা উল্লেখ করেছি, তবে
এগুলো খুবই স্বল্প। আমার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষ
সরাসরি সহীহ হাদীসের ওপর আমল করুক। তাই
ফিকহি মাসআলা বেশি উল্লেখ করি নি।
৮- কিতাবের শুরুতে সাওমের সংজ্ঞা, তাৎপর্য,
নানা ধর্মে সাওম পালন নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা
করেছি, যাতে সাধারণ মানুষ সাওম সম্পর্কে কিছুটা
ধারণা পায়।
৯- কিতাবের শেষে সাওম সম্পর্কিত জরুরী কিছু
মাসআলা উল্লেখ করেছি।
১০- কিতাবটি আটটি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়েছে।
প্রথম অধ্যায়ে সাওমের পরিচয়, ইতিহাস ও তাৎপর্য,
দ্বিতীয় অধ্যায়ে সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম,
তৃতীয় অধ্যায়ে সালাতুত
তারাবীহ, চতুর্থ অধ্যায়ে ই‘তিকাফ, পঞ্চম অধ্যায়ে
সদকাতুল ফিতর, ষষ্ঠ অধ্যায়ে ঈদের সালাত, সপ্তম
অধ্যায়ে সংক্ষেপে পবিত্র রমযান মাসে আমাদের
করণীয় ‘আমল এবং অষ্টম অধ্যায়ে সাওম সম্পর্কিত
কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা উল্লেখ করেছি।
পরিশেষে সম্মানিত ‘আলেম, তালিবে ইলম ও
অন্যান্য সবার কাছে অনুরোধ থাকবে এ কিতাবে
কোনো দ‘য়ীফ হাদীস পাওয়া গেলে অনুগ্রহ করে
জানাবেন। পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করে
দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। কেননা আমি সহীহ
হাদীসের আলোকেই কিতাবটি সাজিয়েছি।
কিতাবটির নামকরণ করেছি, “ সহীহ হাদীসের
আলোকে সাওম বিশ্বকোষ ”। মহান আল্লাহ রাব্বুল
আলামীনের দরবারে এ দো‘আ করছি যে, তিনি যেন
আমাদেরকে সহীহ হাদীসের ওপর সর্বদা ‘আমল
করার তাওফীক দান করেন। বিদ‘আত, দুর্বল ও জাল
হাদীসের ওপর ‘আমল করা থেকে বিরত রাখেন।
কিয়ামতের দিন এ ক্ষুদ্র কাজটি নাজাতের অসীলা
করে দিন। সব মুসলিম যেন এ কিতাবটি থেকে উপকৃত
হন। আমীন।
প্রথম অধ্যায়
সাওমের পরিচয়, ইতিহাস ও তাৎপর্য
সাওমের পরিচয়
সাওমের অভিধানিক অর্থ:
সাওম (ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ) শব্দটি আরবী, একবচন, এর বহু বচন হলো
(ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡ ) সাওম। সাওম পালনকারীকে ‘সায়েম’ বলা হয়।
ফার্সিতে বলা হয় রোযা এবং রোযা পালনকারীকে
বলা হয় রোযাদার। এর শাব্দিক অর্থ হলো,
পানাহার ও নির্জনবাস থেকে বিরত থাকা।
অভিধানে শব্দটির অর্থ সম্পর্কে বলা হয়েছে,
ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠُّﻐَﺔ: ﺍﻹﻣﺴﺎﻙُ ﻋَﻦ ﺍﻟﺸﻲﺀِ ﻭﺍﻟﺘَّﺮْﻙُ ﻟَﻪُ. ﻭَﻗﻴﻞ ﻟﻠﺼﺎﺋﻢِ ﺻَﺎﺋِﻢ: ﻹﻣﺴﺎﻛﻪ ﻋَﻦ
ﺍﻟْﻤﻄﻌﻢ ﻭَﺍﻟْﻤﺸْﺮَﺏ ﻭﺍﻟﻤﻨﻜﺢ.
“কোনো কিছু থেকে বিরত থাকা, সাওম
পালনকারীকে ‘সায়েম’ বলা হয় এজন্য যে, সে খাদ্য,
পানীয় ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত থেকেছে।”
ﻭَﻗﻴﻞ ﻟﻠﺼﺎﻣﺖ: ﺻَﺎﺋِﻢ، ﻹﻣﺴﺎﻛﻪ ﻋَﻦ ﺍﻟْﻜَﻠَﺎﻡ. ﻭَﻗﻴﻞ ﻟﻠﻔﺮﺱِ: ﺻَﺎﺋِﻢ، ﻹﻣﺴﺎﻛﻪ ﻋَﻦ ﺍﻟﻌَﻠَﻒ
ﻣَﻊَ ﻗِﻴَﺎﻣﻪ.
“চুপ থাকা ব্যক্তিকে ‘সায়েম’ বলা হয়, কেননা সে
কথা বলা থেকে বিরত থেকেছে। এমনিভাবে যে
ঘোড়া খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত রয়েছে তাকেও
‘সায়েম’ বলা হয়।”
ইবন ‘আরাবী রহ. বলেছেন,
ﻭﺻﺎﻡَ ﺍﻟﺮﺟﻞُ: ﺇِﺫﺍ ﺗَﻈَﻠَّﻞَ ﺑﺎﻟﺼَّﻮْﻡ، ﻭَﻫُﻮَ ﺷﺠﺮ؛ ﻗﺎﻟﻪُ ﺍﺑْﻦ ﺍﻟْﺄَﻋﺮَﺍﺑِﻲ.
“কোনো ব্যক্তি যখন গাছের নিচে ছায়া নিচ্ছে
তাকে বলা হয় ‘সমার রজুল।” (লোকটি ছায়ায় থেকে
চলাফেরা থেকে বিরত থেকেছে)।
লাইস রহ. বলেছেন,
ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ: ﺗَﺮْﻙُ ﺍﻟْﺄﻛﻞ ﻭﺗﺮْﻙُ ﺍﻟْﻜَﻠَﺎﻡ.
“সাওম হলো খাদ্য ও কথা বলা থেকে বিরত থাকা।”
যেমন কুরআনে এসেছে,
﴿ﻓَﻜُﻠِﻲ ﻭَﭐﺷۡﺮَﺑِﻲ ﻭَﻗَﺮِّﻱ ﻋَﻴۡﻨٗﺎۖ ﻓَﺈِﻣَّﺎ ﺗَﺮَﻳِﻦَّ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺒَﺸَﺮِ ﺃَﺣَﺪٗﺍ ﻓَﻘُﻮﻟِﻲٓ ﺇِﻧِّﻲ ﻧَﺬَﺭۡﺕُ ﻟِﻠﺮَّﺣۡﻤَٰﻦِ
ﺻَﻮۡﻣٗﺎ ﻓَﻠَﻦۡ ﺃُﻛَﻠِّﻢَ ﭐﻟۡﻴَﻮۡﻡَ ﺇِﻧﺴِﻴّٗﺎ ٢٦﴾ [ ﻣﺮﻳﻢ : ٢٦]
“অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। আর
যদি তুমি কোনো লোককে দেখতে পাও তাহলে বলে
দিও, ‘আমি পরম করুণাময়ের জন্য চুপ থাকার মানত
করেছি। অতএব, আজ আমি কোনো মানুষের সাথে
কিছুতেই কথা বলব না।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ২৬]
ﻭَﺻَﺎﻡَ ﺍﻟﻔَﺮَﺱ ﻋﻠﻰ ﺁﺭِﻳِّﻪ: ﺇِﺫﺍ ﻟﻢ ﻳَﻌْﺘَﻠِﻒ. ﻭﺍﻟﺼﻮﻡُ: ﻗِﻴَﺎﻡٌ ﺑِﻠَﺎ ﻋَﻤﻞ. ﻭﺻﺎﻣَﺖِ ﺍﻟﺮِّﻳﺢُ : ﺇِﺫﺍ
ﺭَﻛَﺪَﺕْ.
“ঘোড়া যখন খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকে তাকে
বলা হয় ‘সমাল ফারাস’, আবার সাওম অর্থ কোনো
কাজ না করা। বলা হয়, ‘সমাতির রিহ’ বাতাস যখন
থেমে থাকে।”
সুফিয়ান ইবন ‘উয়াইনাহ রহ. বলেছেন,
ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ ﻫُﻮ ﺍﻟﺼَّﺒْﺮُ، ﻳَﺼْﺒِﺮُ ﺍﻹِﻧﺴﺎﻥُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡِ ﻭَﺍﻟﺸَّﺮَﺍﺏِ ﻭَﺍﻟﻨِّﻜَﺎﺡِ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺮَﺃَ: ﺇِﻧَّﻤﺎ ﻳُﻮَﻓَّﻰ
ﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺮُﻭﻥَ ﺃَﺟْﺮَﻫُﻢْ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣِﺴﺎﺏٍ.
“সাওম অর্থ ধৈর্য। কেননা মানুষ খাদ্য, পানীয় ও
স্ত্রী সহবাস থেকে ধৈর্য ধারণ করে। অতঃপর তিনি
এ আয়াতটি পড়েন,
﴿ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﻮَﻓَّﻰ ﭐﻟﺼَّٰﺒِﺮُﻭﻥَ ﺃَﺝۡﺭَﻫُﻢ ﺑِﻐَﻲۡﺭِ ﺣِﺴَﺎﺏٖ ١٠﴾ [ ﺍﻟﺰﻣﺮ: ١٠]
“কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে
দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই”। [সূরা আয-
যুমার, আয়াত: ১০] [1]
সাওমের পারিভাষিক সংজ্ঞা:
আল-কামুসুল ফিকহি গ্রন্থে বলা হয়েছে,
ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻫﻮ ﺇﻣﺴﺎﻙ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻔﻄﺮﺍﺕ، ﺣﻘﻴﻘﺔ، ﺃﻭ ﺣﻜﻤﺎ، ﻓﻲ ﻭﻗﺖ ﻣﺨﺼﻮﺹ، ﻣﻦ ﺷﺨﺺ
ﻣﺨﺼﻮﺹ، ﻣﻊ ﺍﻟﻨﻴﺔ.
ﻭﻗﻴﻞ : ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻫﻮ ﺇﻣﺴﺎﻙ ﺍﻟﻤﻜﻠﻒ ﺑﺎﻟﻨﻴﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻣﻦ ﺗﻨﺎﻭﻝ ﺍﻟﻤﻄﻌﻢ.
“সাওম হলো, নির্দিষ্ট সময় সুনির্দিষ্ট কার্যাবলী
থেকে নিয়তসহ সাওম ভঙ্গকারী হাকীকী ও হুকমী
(খাওয়া, পান করা এবং যৌনসম্ভোগ) বিষয় থেকে
বিরত থাকা।” [2]
কারও কারও মতে, ‘সাওম হচ্ছে মুকাল্লাফ তথা
শরী‘আতের নির্দেশনা প্রযোজ্য এমন লোকের পক্ষ
থেকে নিয়তসহ রাত থেকে খাবার-পানীয় থেকে
বিরত থাকা।
যুরযানী রহ. বলনে,
ﻋﺒﺎﺭﺓ ﻋﻦ ﺇﻣﺴﺎﻙ ﻣﺨﺼﻮﺹ ﻭﻫﻮ ﺍﻹﻣﺴﺎﻙ ﻋﻦ ﺍﻷﻛﻞ ﻭﺍﻟﺸﺮﺏ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻉ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺒﺢ ﺇﻟﻰ
ﺍﻟﻤﻐﺮﺏ ﻣﻊ ﺍﻟﻨﻴﺔ.
“সুবহে সাদিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ
এবং যৌনাচার থেকে নিয়তের সাথে বিরত থকার
নাম হলো সাওম।” [3]
বদরুদ্দীন ‘আইনী রহ. বলেন,
ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻫﻮ ﺍﻹﻣﺴﺎﻙ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻔﻄﺮﺍﺕ ﺍﻟﺜﻼﺛﺔ ﻧﻬﺎﺭﺍً ﻣﻊ ﺍﻟﻨﻴﺔ.
“খাওয়া, পান করা এবং যৌনসম্ভোগ -এ তিনটি
কাজ থেকে নিয়তসহ বিরত থাকার নাম হলো
সাওম।” [4]
শরী‘আতের দৃষ্টিতে সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত
পর্যন্ত পানাহার, যৌন সম্ভোগ ও শরী‘আত
নির্ধারিত বিধি-নিষেধ থেকে নিয়তসহ বিরত
থাকাকে সাওম বলে। শরী‘আতে ঈমান, সালাত ও
যাকাতের পরেই সাওমের স্থান। যা ইসলামের চতুর্থ
রুকন।
সাওমের ইতিহাস ও তাৎপর্য
যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ে সাওম:
সাওম বা রোযা নাম ও ধরণভেদে বিভিন্ন জাতি-
ধর্ম নির্বিশেষে বহুল প্রচলিত একটি ধর্মীয়
বিধান, যা মুসলিমদের জন্য অবশ্য পালনীয় (ফরয)
একটি ইবাদত। শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আতে যেমন
আল্লাহর পক্ষ থেকে সাওমের বিধান দেওয়া
হয়েছে, তেমনি সাওমের বিধান দেওয়া হয়েছিল
পূর্ববর্তী নবীদের শরী‘আতেও; পূর্ববর্তী
জাতিগুলোর ধর্ম-কর্মেও। আসমানী ধর্ম ছাড়াও
মানব রচিত বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ে সাওমের
বিধান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ
١٨٣﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٣]
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা
হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া
অর্জন করতে পার।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী প্রত্যেক
নবী ও প্রত্যেক জাতির মধ্যেই প্রচলিত
ছিল ‘সাওম’ বা রোযা নামের এই ধর্মানুষ্ঠান।
তাফসীরে কুরতুবীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখায় বলা
হয়েছে,
ﺍﻟْﻤَﻌْﻨَﻰ: ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺼِّﻴﺎﻡُ ﺃَﻱْ ﻓِﻲ ﺃَﻭَّﻝِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺷَﻬْﺮٍ ﻭَﻳَﻮْﻡَ
ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻛَﻤﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻜُﻢْ ﻭَﻫُﻢُ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩُ - ﻓِﻲ ﻗَﻮْﻝِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ - ﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ
ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ. ﺛُﻢَّ ﻧُﺴِﺦَ ﻫَﺬَﺍ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺄُﻣَّﺔِ ﺑِﺸَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ. ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻣُﻌَﺎﺫُ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ: ﻧﺴﺦ
ﺫﻟﻚ ﺏ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ﻣَﻌْﺪُﻭﺩﺍﺕٍ ﺛُﻢَّ ﻧُﺴِﺨَﺖِ ﺍﻟْﺄَﻳَّﺎﻡُ ﺑِﺮَﻣَﻀَﺎﻥَ.
“আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার
মতে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রত্যেক মাসে তিন
দিন ও আশুরার দিনে সাওম ফরয ছিল, যেমনিভাবে
তোমাদের পূর্ববর্তী ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের ওপর
মাসে তিন দিন ও ‘আশুরার দিনে সাওম ফরয ছিল।
পরবর্তীতে রমযান মাসের দ্বারা এ সাওম রহিত
হয়। মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বলেন, উক্ত তিন দিনের সাওম নির্দিষ্ট কয়েক
দিনের সাওমের দ্বারা রহিত হয়। অতঃপর উক্ত
কয়েক দিনের সাওম আবার রমযানের সাওম দ্বারা
রহিত হয়। [5]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﺻَﺎﻡَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻓُﺮِﺽَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺗُﺮِﻙَ »،
ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻻَ ﻳَﺼُﻮﻣُﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳُﻮَﺍﻓِﻖَ ﺻَﻮْﻣَﻪُ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার
দিন সাওম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য
আদেশও পালন করেছে। পরে যখন রমযানের সাওম
ফরয হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়।
‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সাওম পালিন
করতেন না, তবে মাসের যে দিনগুলোতে সাধারন
সাওম পালন করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।
[6]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
« ﺃَﻥَّ ﻗُﺮَﻳْﺸًﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺗَﺼُﻮﻡُ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ، ﺛُﻢَّ ﺃَﻣَﺮَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻓُﺮِﺽَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﻣَﻦْ ﺷَﺎﺀَ
ﻓَﻠْﻴَﺼُﻤْﻪُ ﻭَﻣَﻦْ ﺷَﺎﺀَ ﺃَﻓْﻄَﺮَ »
“জাহেলী যুগে কুরাইশগন ‘আশুরার দিন সাওম পালন
করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামও পরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন।
অবশেষে রমযানের সাওম ফরয হলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার
ইচ্ছা ‘আশুরার সাওম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে
সাওম পালন করবে না।” [7]
আমরা এখানে আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম
থেকে শুরু করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত বিভিন্ন আসমানী ধর্মে ও
মানব রচিত অন্যান্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের যুগে
যুগে সাওমের বিধান ও ধরণ নিয়ে আলোচনা করব।
আদম আলাইহিস সালামের শরী‘আতে সাওম:
প্রথম নবী আদম আলাইহিস সালামের শরী‘আতে
সিয়ামের বিধান দেওয়া হয়েছিল বলে তাফসীর
গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়। অবশ্য সেই সিয়ামের
ধরণ ও প্রকৃতি কেমন ছিল তা আমাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে বাইবেল, কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের
কিতাব একেবারে নিশ্চুপ। বলা হয়ে
থাকে, পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবীর শরী‘আতেই
চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়ামের বিধান
ছিল। এ সাওম আইয়্যামে বীদ বা শুভ্ররাত্রিগুলোর
দিনের সাওম নামে খ্যাত।
নূহ আলাইহিস সালামের সাওম:
তাফসীরে ইবন কাসীরে এসেছে,
ﻗَﺪْ ﻛَﺎﻥَ ﻫَﺬَﺍ ﻓِﻲ ﺍﺑْﺘِﺪَﺍﺀِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﻳَﺼُﻮﻣُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺷَﻬْﺮٍ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ، ﺛُﻢَّ ﻧُﺴِﺦَ ﺫَﻟِﻚَ ﺑِﺼَﻮْﻡِ
ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻛَﻤَﺎ ﺳَﻴَﺄْﺗِﻲ ﺑَﻴَﺎﻧُﻪُ. ﻭَﻗَﺪْ ﺭُﻭﻱ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻭَّﻟًﺎ ﻛَﻤَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺄُﻣَﻢُ
ﻗَﺒْﻠَﻨَﺎ، ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺷَﻬْﺮٍ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ - ﻋَﻦْ ﻣُﻌَﺎﺫٍ، ﻭَﺍﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ، ﻭَﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻭَﻋَﻄَﺎﺀٍ، ﻭَﻗَﺘَﺎﺩَﺓَ،
ﻭَﺍﻟﻀَّﺤَّﺎﻙِ ﺑْﻦِ ﻣُﺰَﺍﺣِﻢٍ. ﻭَﺯَﺍﺩَ: ﻟَﻢْ ﻳَﺰَﻝْ ﻫَﺬَﺍ ﻣَﺸْﺮُﻭﻋًﺎ ﻣِﻦْ ﺯَﻣَﺎﻥِ ﻧُﻮﺡٍ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻥْ ﻧَﺴَﺦ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺫَﻟِﻚَ
ﺑِﺼِﻴَﺎﻡِ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ.
“প্রসিদ্ধ তাফসীরবিদ মু‘য়ায, আব্দুল্লাহ ইবন
মাসউদ, ‘আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু, ‘আতা, কাতাদা ও দাহহাক রহ. বর্ণনা করেন,
নূহ আলাইহিস সালাম হতে শেষ নবী মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত
প্রত্যেক নবীর যুগেই প্রতি মাসে তিনটি করে
সিয়ামের বিধান ছিল। পরবর্তীতে ইহা
রমযানের সাওম দ্বারা রহিত হয়।[8]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ : « ﺻَﺎﻡَ ﻧُﻮﺡٌ ﺍﻟﺪَّﻫْﺮَ، ﺇِﻟَّﺎ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ
ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺄَﺿْﺤَﻰ »
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, নূহ আলাইহিস
সালাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন বাদে সারা
বছর সাওম পালন করতেন।” [9]
ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাওম:
মুসলিম মিল্লাতের পিতা সহিফাপ্রাপ্ত নবী
ইবরাহীম আলাইহিস সালামের যুগে ৩০টি সাওম
ছিল বলে কেউ কেউ লিখেছেন।
দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম:
আসমানী কিতাব ‘যবুর’ প্রাপ্ত বিখ্যাত নবী দাউদ
আলাইহিস সালামের যুগেও সাওমের প্রচলন ছিল।
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« « ﺻُﻢْ ﺃَﻓْﻀَﻞَ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺻَﻮْﻡَ ﺩَﺍﻭُﺩَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻭَﻳُﻔْﻄِﺮُ ﻳَﻮْﻣًﺎ »
“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সাওম দাউদ
আলাইহিস সালামের সাওম -তিনি এক দিন সাওম
পালন করতেন এবং এক দিন বিনা সাওমে থাকতেন”।
[10]
মূসা আলাইহিস সালাম ও ইয়াহূদী ধর্মে সাওম:
ইয়াহূদীদের ওপর প্রতি শনিবার, বছরের মধ্যে
মহররমের ১০ তারিখে আশুরার দিন এবং অন্যান্য
সময় সাওম ফরয ছিল। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻗَﺪِﻡَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟﻤَﺪِﻳﻨَﺔَ ﻓَﺮَﺃَﻯ ﺍﻟﻴَﻬُﻮﺩَ ﺗَﺼُﻮﻡُ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻣَﺎ
ﻫَﺬَﺍ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﻫَﺬَﺍ ﻳَﻮْﻡٌ ﺻَﺎﻟِﺢٌ ﻫَﺬَﺍ ﻳَﻮْﻡٌ ﻧَﺠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﻣِﻦْ ﻋَﺪُﻭِّﻫِﻢْ، ﻓَﺼَﺎﻣَﻪُ
ﻣُﻮﺳَﻰ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺄَﻧَﺎ ﺃَﺣَﻖُّ ﺑِﻤُﻮﺳَﻰ ﻣِﻨْﻜُﻢْ، ﻓَﺼَﺎﻣَﻪُ، ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মদিনায় হিজরত করে ইয়াহূদীদের আশুরার দিনে
সাওম অবস্থায় পেলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস
করলেন, ‘আজকে তোমরা কিসের সাওম করছ?’ তারা
বলল, ‘এটা সেই মহান দিন যেদিন আল্লাহ তা‘আলা
মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর কওম বনী ইসরাইল
ফির‘আউনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন। ফলে
শুকরিয়াস্বরূপ মূসা আলাইহিস সালাম ঐ দিনে
সাওম রেখেছিলেন, তাই আমরা আজকে সাওম
করছি।’ এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি তোমাদের
অপেক্ষা মূসা আলাইহিস সালামের অধিক
নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিন সাওম পালন করেন
এবং সবাইকে সাওম রাখার নির্দেশ দেন”। [11]
মূসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে আল্লাহর কাছ
থেকে তাওরাতপ্রাপ্তির আগে ৪০ দিন পানাহার
ত্যাগ করেছিলেন। ইয়াহূদীদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে
বর্ণিত আছে, মূসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে
৪০ দিন পানাহার না করে কাটিয়েছিলেন। তাই
ইয়াহূদীরা সাধারণভাবে মূসা আলাইহিস
সালামের অনুসরণে ৪০টি সাওম রাখা ভালো মনে
করত। তন্মধ্যে ৪০তম দিনটিতে তাদের ওপর সাওম
রাখা ফরয ছিল। যা ইয়াহূদীদের সপ্তম মাস
তিশরিনের দশম তারিখে পড়ত। এ জন্য ঐ দিনটিকে
আশুরা বা দশম দিন বলা হয়। এ ছাড়া ইয়াহূদী
সহিফাতে অন্যান্য সাওমেরও সুস্পষ্ট হুকুম রয়েছে।
ইয়াহূদীরা বর্তমানে ৯ আগস্ট ইয়াহূদী হাইকাল
বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংস দিবসে সাওম রাখে, এ দিন
তারা খাদ্য, স্ত্রী সহবাস ও জুতা পরিধান থেকে
বিরত থাকে। এছাড়াও ১৩ নভেম্বর, ১৭ জুলাই, ১৩
মার্চ ও বিভিন্ন দিবসে সাওম পালন করে।
ঈসা আলাইহিস সালাম ও খ্রিস্টান ধর্মে সাওম:
আসমানী কিতাব ‘ইঞ্জিল’ প্রাপ্ত বিশিষ্ট
নবী ‘ঈসা আলাইহিস সালামের যুগে সাওমের
প্রমাণ পাওয়া যায়। ঈসা আলাইহিস সালামের
অনুসারী সম্প্রদায় সাওম রাখতেন।
বর্তমানে তাদের দু’ধরণের সাওম আছে।
প্রথম হলো, তাদের ফাদারের উপদেশে নির্দিষ্ট
কয়েক
দিন খাদ্য পানীয় থেকে বিরত থাকা আর ইফতার
হবে নিরামিষ দিয়ে।
মাছ, মাংস ও দুগ্ধজাত জিনিস খাওয়া যাবে না।
যেমন, বড় দিনের সাওম, তাওবার সাওম যা ৫৫ দিন
পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়। এমনিভাবে সপ্তাহে বুধ ও
শুক্রবারে সাওম।
দ্বিতীয় ধরণের সাওম হলো খাদ্য থেকে বিরত
থাকা, তবে মাছ ভক্ষণ করা যাবে। এ সাওমের মধ্যে
ছোট সাওম বা জন্মদিনের সাওম, ইহা ৪৩ দিন
দীর্ঘায়িত হয়, দূতগণের সাওম, মারিয়ামের সাওম
ইত্যাদি। তবে তাদের ধর্মে কোনো সাওমই ফরয নয়;
বরং কেউ ইচ্ছা করলে রাখতে পারে।
গ্রীক ও রোমানদের সাওম:
গ্রীস ও রোমানরা যুদ্ধের আগে সাওম রাখত যাতে
ক্ষুধা ও কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খ্রিস্টান
পাদরীদের ও পারসিক অগ্নিপূজকদের এবং হিন্দু
যোগী ইত্যাকার ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে
সাওমের বিধান ছিল। পারসিক ও হিন্দু যোগীদের
সাওমের ধরন ছিল এরূপ -তারা সাওম থাকা অবস্থায়
মাছ-মাংস, পাখি ইত্যাদি ভক্ষণ করা থেকে বিরত
থাকত বটে; কিন্তু ফল-মূল এবং সামান্য পানীয়
গ্রহণ করত। মূর্তিপূজক ঋষীরা সাওমের ব্যাপারে
এতই কঠোর ছিল যে, তারা সাওম থাকা অবস্থায়
মাছ-মাংস, পাখি ইত্যাদি ভক্ষণ করা থেকে বিরত
থাকত, স্ত্রী সহবাস করত না। সারা বছর সাওম
রেখে আত্মার কষ্ট দিত আর এভাবে তারা
পবিত্রতা অর্জনের সাধনা করত। প্রাচীন চীনা
সম্প্রদায়ের লোকরা একাধারে কয়েক সপ্তাহ সাওম
রাখত।
জাহেলী যুগে সাবে‘ঈ সম্প্রদায়ের সাওম:
ইবন নাদিম তার ‘ফিহরাসাত’ কিতাবের নবম খণ্ডে
উল্লেখ করেন, সাবে‘ঈ সম্প্রদায়ের লোকেরা (যারা
গ্রহ-নক্ষত্র পূজা করে) ত্রিশ দিন সাওম পালন করত।
আযার মাসের ৮দিন অতিবাহিত হলে এ সাওম শুরু
হতো, কানুনে আউয়াল মাসে ৯টি, শাবাত মাসে
৭টি সাওম। এ সাত সাওম পালনের পরে তারা ঈদুল
ফিতর উদযাপন করত। সাওম অবস্থায় তারা খাদ্য,
পানীয় ও স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি থেকে বিরত থাকত।
হিন্দু ধর্মে সাওম বা উপবাস:
বেদের অনুসারী ভারতের হিন্দুদের মধ্যেও ব্রত
অর্থাৎ উপবাস ছিল। প্রত্যেক হিন্দি মাসের ১১
তারিখে ব্রাহ্মণদের ওপর ‘একাদশীর’ উপবাস
রয়েছে। এ হিসাবে তাদের উপবাস ২৪টি হয়। কোনো
কোনো ব্রাহ্মণ কার্তিক মাসে প্রত্যেক সোমবার
উপবাস করেন। কখনো হিন্দু যোগীরা ৪০ দিন
পানাহার ত্যাগ করে চল্লিশে ব্রত পালন করেন।
হিন্দু মেয়েরা তাদের স্বামীদের মঙ্গল কামনায়
কার্তিক মাসের ১৮তম দিবসে ‘কারওয়া চাওত’
নামে উপবাস রাখে।
বৌদ্ধ ধর্মে সাওম বা উপবাস:
তারা তাদের চন্দ্রমাসের Upisata মাসে ১, ৯, ১৫ ও ২২
তারিখে ৪দিন উপবাস পালন করে। এছাড়া বৌদ্ধ
গুরুরা দুপুরের খাবারের পর থেকে সব ধরণের খাদ্য
গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। তারা এভাবে খাদ্য থেকে
বিরত থেকে সংযম ও শারীরিক নিয়ন্ত্রণ করে।
মংগোলীরা প্রতি ১০দিন অন্তর ও যারাদাশতিরা
প্রতি ৫দিন অন্তর সাওম পালন করত।
জাহেলী যুগে সাওম:
ইসলামের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত লাভের আগে
আরবের মুশরিকদের মধ্যেও সিয়ামের প্রচলন ছিল।
যেমন আশুরার দিনে কুরাইশরা জাহেলী যুগে সাওম
রাখত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জাহেলী যুগে ঐ সাওম রাখতেন।
ইসলামে সাওম
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ
١٨٣﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٣]
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা
হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া
অর্জন করতে পার।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]
ইসলামে সাওমের রয়েছে কতিপয় শর্ত ও বৈশিষ্ট্য।
সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত ইবাদাতের নিয়তে
যাবতীয় পানাহার, স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত
থাকার নাম সাওম। সাহরী খাওয়া ইসলামী
শরী‘আতের সাওমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলামে
রমযানের সাওম ফরয, অন্যান্য সাওম মুস্তাহাব,
যেমন, ‘আরাফার সাওম, মহররমের সাওম, শবে
বরাতের সাওম, প্রতি চন্দ্র মাসে ১৩, ১৪, ১৫
তারিখের সাওম ইত্যাদি।
সাওমের তাৎপর্য
সংযম অর্জন:
সাওমের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যে বিষয়টি
বেরিয়ে আসে তা হচ্ছে সংযম। মূলত সংযম ও
আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্ম ও
সমাজে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সাওমের
প্রচলন ছিল। ইসলামী শরী‘আতে ফরযকৃত সাওম সেই
লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক। তাই
প্রতিটি মুমিনের জন্য কর্তব্য হলো সাওমের
মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ব্রতী হওয়া।
আমাদের প্রিয় নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, রমযান মাস হলো ধৈর্যের
মাস আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত। এ
মাসেই আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে ধৈর্যের
প্রশিক্ষণ নিতে হবে। যাতে রমযান পরবর্তী সময়ে
প্রতিটি মুহূর্তে, কথায় কাজে ও জীবনের সকল
ক্ষেত্রে এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটানোর জন্যই সাওম।
তাকওয়া অর্জন:
সাওমের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ
তায়া‘লা বলেছেন,
﴿ﻱﺎَﻬُّﻳَﺃَٰٓ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻲۡﻛُﻢُ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺐۡﻟِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢ
ۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ ١٨٣﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٣]
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা
হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তী লোকদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া
অর্জন করতে পার” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]
( ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ ) যাতে তোমরা তাকওয়াবান হও। এখানেই
সমাজ গঠনে সাওমের ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
তাকওয়ার ভিত্তির ওপর যে সমাজ গঠিত হবে
সেখানে থাকবে না কোনো হিংসা বিদ্বেষ,
মারামারি, কাটাকাটি, দুর্নীতি ও রাহাজানি।
সাওমের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা।
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সকল প্রকার
নাফরমানী কাজ থেকে দূরে থাকার নামই তাকওয়া।
মানুষের মনের গোপন কোণে যে কামনা-বাসনা
আছে, আল্লাহ তা‘আলা সে সম্পর্কেও জ্ঞাত।
আল্লাহর কাছে বান্দার মান-মর্যাদা নির্ধারণের
একমাত্র উপায় তাকওয়া। এ তাকওয়াই মানুষের মনে
সৎ মানবিক গুণাবলি সৃষ্টি করে। সুতরাং যাবতীয়
অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে ভালো কাজ করতে
পারলেই সাওম পালন সফল ও সার্থক হবে। এভাবে
সাওম পালনের মাধ্যমে অর্জিত প্রশিক্ষণ দ্বারা
নিজেদের একজন সৎ, আল্লাহভীরু নাগরিক হিসেবে
গড়ে তুলতে সচেষ্ট থেকে হবে।
সাওম থেকে তাকওয়া শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
তাকওয়া অর্জন করার ক্ষেত্রে সাওমের কোনো
বিকল্প নেই। সাওমের শিক্ষা নিয়ে তাকওয়ার
গুণাবলি অর্জনের মধ্য দিয়ে মানুষ ইহকালীন
কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি লাভ করতে পারে।
ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে সাওম রাখলে
জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এ শিক্ষা যদি
বাকি ১১ মাস কাজে লাগানো যেত, তাহলে
পৃথিবীতে এত অশান্তি, অনাচার থাকত না। পবিত্র
কুরআনে এসেছে,
﴿ﻗَﺪۡ ﺃَﻑۡﻟَﺢَ ﻣَﻦ ﺗَﺰَﻛَّﻰٰ ١٤﴾ [ ﺍﻷﻋﻠﻰ : ١٤]
“যে সংশোধিত হলো, সেই সফলকাম হলো”। [সূরা
আল-আ‘লা, আয়াত: ১৪]
আত্মিক ও দৈহিক সুস্থতা অর্জন:
সাওম মানুষের ভেতর ও বাহির -দুই দিকের
সংশোধন করে। মানুষের ভেতরের অবস্থা পরিবর্তন
করা অর্থাৎ আলোকিত করা এবং তার
স্বভাব, চরিত্র, আচার-আচরণ সংশোধনপূর্বক
প্রকাশ্যভাবে সুন্দর করে গড়ে তোলা
সাওমের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে
সাওম মানুষকে পার্থিব লোভ-লালসা, হিংসা-
বিদ্বেষ, পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার, প্রতারণা,
অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি থেকে
দূরে সরিয়ে রেখে আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়।
মানুষের শারীরিক অবকাঠামো ঠিক রাখতে
বর্তমানে চিকিৎসকেরা সাওম রাখার নির্দেশ
দিয়ে থাকেন। শরীর ঠিক তো মন ঠিক। সমাজে
শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শারীরিক সুস্থতা
অত্যাবশ্যকীয়।
ইবন সিনা সাওমকে দুরারোগ্য সব রোগের চিকিৎসা
বলতেন। মিশরে নেপোলিয়ানের আগ্রাসন পরবর্তী
যুগে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসার জন্য সাওম
রাখতে বলা হতো।
সুন্দর সমাজ গঠন:
সাওমের মাধ্যমে দরিদ্র ও অভুক্ত মানুষের দুঃখ
দুর্দশা অনুধাবন করা যায়, ফলে সমাজে এর প্রভাব
সুদূর প্রসারী। সাওম সাধনা সহমর্মিতা শিক্ষা
জাগ্রত করার কার্যকর মাধ্যম। অনাহার কাকে
বলে, খাদ্যাভাব কাকে বলে যারা অনুভব করে
নি, তারা সমাজের বঞ্চিত ও পীড়িত মানুষের কষ্ট
কীভাবে বুঝবে ? সাওম রাখার কারণে এই মানুষগুলো
ক্ষুধার যন্ত্রণা সম্পর্কে সামান্য হলেও ধারণা
পাবে। ফলে প্রতিবেশি ও কাছে অবস্থানকারীদের
কষ্টের জীবন কিছুটা অনুধাবন করা সহজ হবে। সাওম
রাখার কারণে শরীরের শক্তি কমে আসবে। তখন
অধীনস্থদের কাজের ভার লাঘব করার
প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হবে। আর এতে মনিব-ভৃত্যের
দূরত্ব কমে একে অপরের পরিপূরক মনে করার পরিবেশ
সৃষ্টি হবে। মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে
বৈরিতা থাকবে না।
সাওম পালনের দ্বারা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক
স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া-
মমতা, আন্তরিকতা, দানশীলতা, বদান্যতা,
উদারতা, ক্ষমা, পরোপকারিতা, সহানুভূতি,
সমবেদনা প্রভৃতি সদাচরণ জন্মায়। সাওমের এ মহান
শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের সমাজ ও পারিবারিক
জীবনে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
রমযান মাস আসলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি দান সদকা
করতেন। যেমন হাদীসে এসেছে, ইবন ‘আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﺟْﻮَﺩَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﺎﻟﺨَﻴْﺮِ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺃَﺟْﻮَﺩُ ﻣَﺎ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ
ﺣِﻴﻦَ ﻳَﻠْﻘَﺎﻩُ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻳَﻠْﻘَﺎﻩُ ﻛُﻞَّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻨْﺴَﻠِﺦَ،
ﻳَﻌْﺮِﺽُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟﻘُﺮْﺁﻥَ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻟَﻘِﻴَﻪُ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ، ﻛَﺎﻥَ
ﺃَﺟْﻮَﺩَ ﺑِﺎﻟﺨَﻴْﺮِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﻳﺢِ ﺍﻟﻤُﺮْﺳَﻠَﺔِ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ
ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন।
রমযানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর
সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান
করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই
জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর সাথে একবার
সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল
আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন
তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-
সম্পদ দান করতেন।” [12]
তাই সাওম পালনের দ্বারা সমাজের দারিদ্র
মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। প্রকৃতপক্ষে সাওম
প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে
পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক
জীবনসহ সর্বস্তরে অনুশীলনের দীক্ষা দিয়ে যায়।
তাই আসুন, সাওমের প্রকৃত শিক্ষা ও উদ্দেশ্যের
প্রতি যত্নবান হয়ে সাওম পালনের মাধ্যমে
নিজেদের মনুষ্যত্ববোধকে জাগ্রত করি, মানবিক
গুণাবলিতে জীবনকে আলোকিত করি; তাহলে
আমাদের সাওম সাধনা অর্থবহ হবে। তখন মানুষের
মধ্যে গড়ে উঠবে সুমধুর সম্পর্ক, বিদায় নেবে
অরাজকতা, অন্যায়-অনাচার এবং দুর্নীতি ও
ভেজালমুক্ত হয়ে আদর্শ জাতি হিসেবে আমরা
মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব। সাওমের মাসের
পরিসমাপ্তি বয়ে আনুক সমাজ জীবনে আমূল
পরিবর্তন, আল্লাহভীতি, আত্মসংযম ও মানবপ্রেম।
সাওমের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের আলোকে যেন সারা
জীবন সৎভাবে অতিবাহিত করে আল্লাহর অশেষ
করুণা ও ক্ষমা লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি
পেতে পারি, আল্লাহ পাক আমাদের সে তাওফীক
দান করুন। আমীন।
দ্বিতীয় অধ্যায়
সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম
রমযানের সাওম ফরয হওয়া প্রসঙ্গে
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ
١٨٣﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٣]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা
হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন
কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]
তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﺃَﻋْﺮَﺍﺑِﻴًّﺎ ﺟَﺎﺀَ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺛَﺎﺋِﺮَ ﺍﻟﺮَّﺃْﺱِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻲ ﻣَﺎﺫَﺍ ﻓَﺮَﺽَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﺍﻟﺼَّﻠَﻮَﺍﺕِ ﺍﻟﺨَﻤْﺲَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﺗَﻄَّﻮَّﻉَ
ﺷَﻴْﺌًﺎ »، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻲ ﻣَﺎ ﻓَﺮَﺽَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺷَﻬْﺮَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ
ﺗَﻄَّﻮَّﻉَ ﺷَﻴْﺌًﺎ » ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻲ ﺑِﻤَﺎ ﻓَﺮَﺽَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮَﻩُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺷَﺮَﺍﺋِﻊَ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃَﻛْﺮَﻣَﻚَ، ﻻَ ﺃَﺗَﻄَﻮَّﻉُ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻭَﻻَ ﺃَﻧْﻘُﺺُ
ﻣِﻤَّﺎ ﻓَﺮَﺽَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ «ﺃَﻓْﻠَﺢَ ﺇِﻥْ ﺻَﺪَﻕَ، ﺃَﻭْ
ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ ﺇِﻥْ ﺻَﺪَﻕَ »
“এলোমেলো চুলবিশিষ্ট একজন গ্রাম্য আরব
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
নিকট এলেন। তারপর বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ!
আমাকে বলুন, আল্লাহ তা‘আলা আমার ওপর কত
(ওয়াক্ত) সালাত ফরয করেছেন? তিনি বলেন, পাঁচ
(ওয়াক্ত) সালাত; তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় কর
তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আমার
ওপর কত সাওম আল্লাহ তা‘আলা ফরয
করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, রমযান মাসের সাওম; তবে
তুমি যদি কিছু নফল কর তবে তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর
তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ আমার ওপর কী পরিমাণ
যাকাত ফরয করেছেন? বর্ণনাকারী
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে
দিলেন। এরপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম, যিনি
আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ
আমার ওপর যা ফরয করেছেন, আমি এর মাঝে কিছু
বাড়াব না এবং কমাবও না। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে
সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা
বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ
করল।” [13]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺻَﺎﻡَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻓُﺮِﺽَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺗُﺮِﻙَ »،
ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻻَ ﻳَﺼُﻮﻣُﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳُﻮَﺍﻓِﻖَ ﺻَﻮْﻣَﻪُ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার
দিন সাওম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য
আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সাওম ফরয
হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সাওম পালন করতেন না, তবে
মাসের যে দিনগুলোতে সাধারন সাওম পালন
করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।” [14]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺑَﻴْﻨَﻤَﺎ ﻧَﺤْﻦُ ﺟُﻠُﻮﺱٌ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻤَﺴْﺠِﺪِ، ﺩَﺧَﻞَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻋَﻠَﻰ ﺟَﻤَﻞٍ،
ﻓَﺄَﻧَﺎﺧَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺛُﻢَّ ﻋَﻘَﻠَﻪُ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻬُﻢْ : ﺃَﻳُّﻜُﻢْ ﻣُﺤَﻤَّﺪٌ؟ ﻭَﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
ﻣُﺘَّﻜِﺊٌ ﺑَﻴْﻦَ ﻇَﻬْﺮَﺍﻧَﻴْﻬِﻢْ، ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ: ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺍﻷَﺑْﻴَﺾُ ﺍﻟﻤُﺘَّﻜِﺊُ. ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ: ﻳَﺎ ﺍﺑْﻦَ ﻋَﺒْﺪِ
ﺍﻟﻤُﻄَّﻠِﺐِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: « ﻗَﺪْ ﺃَﺟَﺒْﺘُﻚَ » . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﺇِﻧِّﻲ ﺳَﺎﺋِﻠُﻚَ ﻓَﻤُﺸَﺪِّﺩٌ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻤَﺴْﺄَﻟَﺔِ، ﻓَﻼَ ﺗَﺠِﺪْ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓِﻲ ﻧَﻔْﺴِﻚَ؟
ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺳَﻞْ ﻋَﻤَّﺎ ﺑَﺪَﺍ ﻟَﻚَ » ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺑِﺮَﺑِّﻚَ ﻭَﺭَﺏِّ ﻣَﻦْ ﻗَﺒْﻠَﻚَ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻚَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ
ﻛُﻠِّﻬِﻢْ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻧَﻌَﻢْ » . ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﻧْﺸُﺪُﻙَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَﻙَ ﺃَﻥْ ﻧُﺼَﻠِّﻲَ ﺍﻟﺼَّﻠَﻮَﺍﺕِ ﺍﻟﺨَﻤْﺲَ
ﻓِﻲ ﺍﻟﻴَﻮْﻡِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻴْﻠَﺔِ؟ ﻗَﺎﻝَ: « ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻧَﻌَﻢْ ». ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻧْﺸُﺪُﻙَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَﻙَ ﺃَﻥْ ﻧَﺼُﻮﻡَ ﻫَﺬَﺍ
ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﻨَﺔِ؟ ﻗَﺎﻝَ: « ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻧَﻌَﻢْ ». ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﻧْﺸُﺪُﻙَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَﻙَ ﺃَﻥْ ﺗَﺄْﺧُﺬَ ﻫَﺬِﻩِ
ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔَ ﻣِﻦْ ﺃَﻏْﻨِﻴَﺎﺋِﻨَﺎ ﻓَﺘَﻘْﺴِﻤَﻬَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻓُﻘَﺮَﺍﺋِﻨَﺎ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: « ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ
ﻧَﻌَﻢْ ». ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ: ﺁﻣَﻨْﺖُ ﺑِﻤَﺎ ﺟِﺌْﺖَ ﺑِﻪِ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﻣَﻦْ ﻭَﺭَﺍﺋِﻲ ﻣِﻦْ ﻗَﻮْﻣِﻲ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺿِﻤَﺎﻡُ
ﺑْﻦُ ﺛَﻌْﻠَﺒَﺔَ ﺃَﺧُﻮ ﺑَﻨِﻲ ﺳَﻌْﺪِ ﺑْﻦِ ﺑَﻜْﺮٍ ﻭَﺭَﻭَﺍﻩُ ﻣُﻮﺳَﻰ ﺑْﻦُ ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞَ، ﻭَﻋَﻠِﻲُّ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺤَﻤِﻴﺪِ، ﻋَﻦْ
ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﺑْﻦِ ﺍﻟﻤُﻐِﻴﺮَﺓِ، ﻋَﻦْ ﺛَﺎﺑِﺖٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲٍ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻬَﺬَﺍ »
“একবার আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন
এক ব্যক্তি সওয়ার অবস্থায় ঢুকল। মসজিদে
(প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে বেঁধে রাখল। এরপর
সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলল, ‘তোমাদের
মধ্যে আল্লাহর রাসূল কে?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার সামনেই হেলান
দিয়ে বসা ছিলেন। আমরা বললাম, ‘এই হেলান দিয়ে
বসা ফর্সা রঙের ব্যক্তিই হলেন তিনি।’ তারপর
লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বলল, ‘হে আব্দুল
মুত্তালিবের পুত্র!’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আমি
তোমার জওয়াব দিচ্ছি।’ লোকটি বলল, ‘আমি
আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব এবং সে প্রশ্ন করার
ব্যাপারে কঠোর হব, এতে আপনি রাগ করবেন
না।’ তিনি বললেন, ‘তোমার যেমন ইচ্ছা প্রশ্ন
কর।’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে আপনার রব ও আপনার
পূর্ববর্তীদের রবের কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা
করছি, আল্লাহই কি আপনাকে সব মানুষের জন্য
রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ
সাক্ষী, হ্যাঁ।’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে আল্লাহর
কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে দিন ও
রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে নির্দেশ
দিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ।
সে বলল, ‘আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে
বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে বছরের এ মাসে
(রমযান) সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন?’ তিনি
বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ সে বলল, ‘আমি
আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি
আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদের ধনীদের
থেকে সদকা (যাকাত) উসূল করে গরীবদের মধ্যে ভাগ
করে দিতে?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ এরপর
লোকটি বলল, ‘আমি ঈমান আনলাম আপনি যা (যে
শরী‘আত) এনেছেন তার ওপর। আর আমি আমার
কওমের রেখে আসা লোকজনের পক্ষে
প্রতিনিধি, আমার নাম যিমাম ইবন সা‘লাবা, বনী
সা‘দ ইবন বকর গোত্রের একজন। মূসা ও আলী ইবন
আব্দুল হামীদ রহ. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর
সূত্রেও এরূপ বর্ণনা করেছেন।” [15]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻧُﻬِﻴﻨَﺎ ﺃَﻥْ ﻧَﺴْﺄَﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻳُﻌْﺠِﺒُﻨَﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﺠِﻲﺀَ
ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺒَﺎﺩِﻳَﺔِ ﺍﻟْﻌَﺎﻗِﻞُ، ﻓَﻴَﺴْﺄَﻟَﻪُ، ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻧَﺴْﻤَﻊُ، ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺒَﺎﺩِﻳَﺔِ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ، ﺃَﺗَﺎﻧَﺎ ﺭَﺳُﻮﻟُﻚَ ﻓَﺰَﻋَﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺃَﻧَّﻚَ ﺗَﺰْﻋُﻢُ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻚَ، ﻗَﺎﻝَ : « ﺻَﺪَﻕَ »،
ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻤَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀَ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﺍﻟﻠﻪُ »، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻤَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﺍﻟﻠﻪُ »، ﻗَﺎﻝَ:
ﻓَﻤَﻦْ ﻧَﺼَﺐَ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺠِﺒَﺎﻝَ، ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣَﺎ ﺟَﻌَﻞَ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﺍﻟﻠﻪُ »، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺒِﺎﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀَ،
ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ، ﻭَﻧَﺼَﺐَ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺠِﺒَﺎﻝَ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻚَ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﻧَﻌَﻢْ »، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﺯَﻋَﻢَ ﺭَﺳُﻮﻟُﻚَ ﺃَﻥَّ
ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺧَﻤْﺲَ ﺻَﻠَﻮَﺍﺕٍ ﻓِﻲ ﻳَﻮْﻣِﻨَﺎ، ﻭَﻟَﻴْﻠَﺘِﻨَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : « ﺻَﺪَﻕَ »، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺒِﺎﻟَّﺬِﻱ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻚَ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَﻙَ
ﺑِﻬَﺬَﺍ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﻧَﻌَﻢْ »، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﺯَﻋَﻢَ ﺭَﺳُﻮﻟُﻚَ ﺃَﻥَّ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺯَﻛَﺎﺓً ﻓِﻲ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟِﻨَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : « ﺻَﺪَﻕَ »،
ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺒِﺎﻟَّﺬِﻱ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻚَ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَﻙَ ﺑِﻬَﺬَﺍ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﻧَﻌَﻢْ »، ﻗَﺎﻝَ: ﻭَﺯَﻋَﻢَ ﺭَﺳُﻮﻟُﻚَ ﺃَﻥَّ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺻَﻮْﻡَ
ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺳَﻨَﺘِﻨَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: « ﺻَﺪَﻕَ »، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺒِﺎﻟَّﺬِﻱ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻚَ، ﺁﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَﻙَ ﺑِﻬَﺬَﺍ؟ ﻗَﺎﻝَ:
«ﻧَﻌَﻢْ »، ﻗَﺎﻝَ: ﻭَﺯَﻋَﻢَ ﺭَﺳُﻮﻟُﻚَ ﺃَﻥَّ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺣَﺞَّ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻉَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺳَﺒِﻴﻠًﺎ، ﻗَﺎﻝَ: « ﺻَﺪَﻕَ »،
ﻗَﺎﻝَ: ﺛُﻢَّ ﻭَﻟَّﻰ، ﻗَﺎﻝَ: ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑَﻌَﺜَﻚَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ، ﻟَﺎ ﺃَﺯِﻳﺪُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ، ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻧْﻘُﺺُ ﻣِﻨْﻬُﻦَّ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: « ﻟَﺌِﻦْ ﺻَﺪَﻕَ ﻟَﻴَﺪْﺧُﻠَﻦَّ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের
নিষেধ করা হয়েছিল। তাই আমরা চাইতাম
যে, গ্রাম থেকে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে
তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর
একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, হে
মুহাম্মদ! আমাদের কাছে আপনার দূত এসে
বলেছে, আপনি দাবি করেছেন যে, আল্লাহ
আপনাকে রাসুল হিসাবে পাঠিয়েছেন। রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই
বলেছে। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি
করেছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক
বলল, জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক
বলল, এসব পর্বতমালা কে স্থাপন করেছেন এবং এর
মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি
করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, কসম
সেই সত্তার! যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন
এবং এসব পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। আল্লাহই
আপনাকে রাসুলরূপে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।
আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের ওপর
দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই
বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরূপে
পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর
নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক
বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের ওপর আমাদের
মালের যাকাত দেওয়া ফরয। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিকই
বলেছো আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরূপে
পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর
নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক
বলল, আপনার দূত বলে যে, প্রতি বছর রমযান মাসের
সাওম পালন করা আমাদের ওপর ফরয। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই
বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল
হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহ-ই কি
আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।
আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের মধ্যে
যে বায়তুল্লায় যেতে সক্ষম তার ওপর হজ ফরয।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, সত্যি বলেছে। বর্ণনাকারী বলেন
যে, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে বলল, যিনি
আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি
এর অতিরিক্তও করব না এবং এর কমও করব না। এ কথা
শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে
জান্নাতে যাবে।” [16]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺻَﺎﻡَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻓُﺮِﺽَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺗُﺮِﻙَ »،
ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻻَ ﻳَﺼُﻮﻣُﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳُﻮَﺍﻓِﻖَ ﺻَﻮْﻣَﻪُ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার
দিন সাওম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য
আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সাওম ফরয
হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সাওম পালন করতেন না, তবে
মাসের যে দিনগুলোতে সাধারণ সাওম পালন
করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।” [17]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,
ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ، : ﺃَﻥَّ ﻗُﺮَﻳْﺸًﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺗَﺼُﻮﻡُ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ، ﺛُﻢَّ ﺃَﻣَﺮَ
ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻓُﺮِﺽَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: « ﻣَﻦْ ﺷَﺎﺀَ ﻓَﻠْﻴَﺼُﻤْﻪُ ﻭَﻣَﻦْ ﺷَﺎﺀَ ﺃَﻓْﻄَﺮَ »
“জাহেলী যুগে কুরাইশগণ ‘আশুরার দিন সাওম পালন
করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামও পরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন।
অবশেষে রমযানের সাওম ফরয হলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার
ইচ্ছা ‘আশুরার সাওম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে
সাওম পালন করবে না।” [18]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ " ﺑُﻨِﻲَ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻰ ﺧَﻤْﺲٍ: ﺷَﻬَﺎﺩَﺓِ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ
ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﺇِﻗَﺎﻡِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ، ﻭَﺇِﻳﺘَﺎﺀِ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ، ﻭَﺍﻟﺤَﺞِّ، ﻭَﺻَﻮْﻡِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ »
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। আল্লাহ ছাড়া
কোনো ইলাহ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল
-এ কথার সাক্ষ্য দান, সালাত কায়েম করা, যাকাত
দেওয়া, হজ করা এবং রমযানের সাওম পালন
করা।”[19]
আবু জামরা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﻗْﻌُﺪُ ﻣَﻊَ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻳُﺠْﻠِﺴُﻨِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺳَﺮِﻳﺮِﻩِ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﻗِﻢْ ﻋِﻨْﺪِﻱ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﺟْﻌَﻞَ ﻟَﻚَ ﺳَﻬْﻤًﺎ
ﻣِﻦْ ﻣَﺎﻟِﻲ ﻓَﺄَﻗَﻤْﺖُ ﻣَﻌَﻪُ ﺷَﻬْﺮَﻳْﻦِ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﻭَﻓْﺪَ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻘَﻴْﺲِ ﻟَﻤَّﺎ ﺃَﺗَﻮُﺍ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ: «ﻣَﻦِ ﺍﻟﻘَﻮْﻡُ؟ - ﺃَﻭْ ﻣَﻦِ ﺍﻟﻮَﻓْﺪُ؟ - » ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﺭَﺑِﻴﻌَﺔُ. ﻗَﺎﻝَ : «ﻣَﺮْﺣَﺒًﺎ
ﺑِﺎﻟﻘَﻮْﻡِ، ﺃَﻭْ ﺑِﺎﻟﻮَﻓْﺪِ، ﻏَﻴْﺮَ ﺧَﺰَﺍﻳَﺎ ﻭَﻻَ ﻧَﺪَﺍﻣَﻰ »، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻧَّﺎ ﻻَ ﻧَﺴْﺘَﻄِﻴﻊُ ﺃَﻥْ
ﻧَﺄْﺗِﻴﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮِ ﺍﻟﺤَﺮَﺍﻡِ، ﻭَﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻚَ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺤَﻲُّ ﻣِﻦْ ﻛُﻔَّﺎﺭِ ﻣُﻀَﺮَ، ﻓَﻤُﺮْﻧَﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮٍ ﻓَﺼْﻞٍ،
ﻧُﺨْﺒِﺮْ ﺑِﻪِ ﻣَﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀَﻧَﺎ، ﻭَﻧَﺪْﺧُﻞْ ﺑِﻪِ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ، ﻭَﺳَﺄَﻟُﻮﻩُ ﻋَﻦِ ﺍﻷَﺷْﺮِﺑَﺔِ: ﻓَﺄَﻣَﺮَﻫُﻢْ ﺑِﺄَﺭْﺑَﻊٍ، ﻭَﻧَﻬَﺎﻫُﻢْ ﻋَﻦْ
ﺃَﺭْﺑَﻊٍ، ﺃَﻣَﺮَﻫُﻢْ: ﺑِﺎﻹِﻳﻤَﺎﻥِ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺣْﺪَﻩُ، ﻗَﺎﻝَ: «ﺃَﺗَﺪْﺭُﻭﻥَ ﻣَﺎ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥُ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺣْﺪَﻩُ » ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﺍﻟﻠَّﻪُ
ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ، ﻗَﺎﻝَ: « ﺷَﻬَﺎﺩَﺓُ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﺇِﻗَﺎﻡُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ،
ﻭَﺇِﻳﺘَﺎﺀُ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ، ﻭَﺻِﻴَﺎﻡُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺃَﻥْ ﺗُﻌْﻄُﻮﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻤَﻐْﻨَﻢِ ﺍﻟﺨُﻤُﺲَ » ﻭَﻧَﻬَﺎﻫُﻢْ ﻋَﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ: ﻋَﻦِ
ﺍﻟﺤَﻨْﺘَﻢِ ﻭَﺍﻟﺪُّﺑَّﺎﺀِ ﻭَﺍﻟﻨَّﻘِﻴﺮِ ﻭَﺍﻟﻤُﺰَﻓَّﺖِ "، ﻭَﺭُﺑَّﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ: «ﺍﻟﻤُﻘَﻴَّﺮِ » ﻭَﻗَﺎﻝَ: «ﺍﺣْﻔَﻈُﻮﻫُﻦَّ ﻭَﺃَﺧْﺒِﺮُﻭﺍ
ﺑِﻬِﻦَّ ﻣَﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀَﻛُﻢْ »
“আমি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সঙ্গে
বসতাম। তিনি আমাকে তাঁর আসনে বসাতেন।
একবার তিনি বললেন, তুমি আমার কাছে থেকে
যাও, আমি তোমাকে আমার সম্পদ থেকে কিছু অংশ
দেব। আমি দু’মাস তাঁর সঙ্গে অবস্থান করলাম।
তারপর একদিন তিনি বললেন, আব্দুল কায়েসের
একটি প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলে তিনি
জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোন কওমের? অথবা
কোন প্রতিনিধি দলের? তারা বলল, রাবী‘আ
গোত্রের।’ তিনি বললেন, মারহাবা সে গোত্র বা
সে প্রতিনিধি দলের প্রতি, যারা অপদস্থ ও লজ্জিত
না হয়েই এসেছে। তারা বলল, ইয়া
রাসূলুল্লহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
নিষিদ্ধ মাসসমূহ ছাড়া অন্য কোনো সময় আমরা
আপনার কাছে আসতে পারি না। (কারণ) আমাদের
এবং আপনার মাঝখানে মুদার গোত্রীয় কাফিরদের
বসবাস। তাই আমাদের কিছু স্পষ্ট হুকুম দিন, যাতে
আমরা যাদের পিছনে রেখে এসেছি তাদের
জানিয়ে দিতে পারি এবং যাতে আমরা জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারি। তারা পানীয় সম্পর্কেও
জিজ্ঞাসা করল। তখন তিনি তাদের চারটি
জিনিসের নির্দেশ এবং চারটি জিনিস থেকে
নিষেধ করলেন। তাদের এক আল্লাহর প্রতি ঈমান
আনার আদেশ দিয়ে বললেন, ‘এক আল্লাহ্ প্রতি
ঈমান আনা কিভাবে হয় তা কি তোমরা
জান?’ তাঁরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল
জানেন।’ তিনি বললেন, ‘তা হলো এ সাক্ষ্য দেওয়া
যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল
এবং সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রমযানের
সাওম পালন করা আর তোমরা গণীমতের মাল থেকে
এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। তিনি তাদেরকে
চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তা হলো সবুজ
কলসী, শুকনো লাউয়ের খোল, খেজুর গাছের গুঁড়ি
থেকে তৈরিকৃত পাত্র এবং আলকাতরার পালিশকৃত
পাত্র। বর্ণনাকারী বলেন, বর্ণনাকারী ( ﺍﻟﻤُﺰَﻓَّﺖِ এর
স্থলে) কখনও ﺍﻟﻤُﻘَﻴَّﺮِ উল্লেখ করেছেন (উভয় শব্দের অর্থ
একই)। তিনি আরো বলেন, তোমরা এগুলো ভালো
করে আয়ত্ত করে নাও এবং অন্যদেরও এগুলি জানিয়ে
দিও।”[20]
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন
যে,
« ﺃَﻥَّ ﺃُﻧَﺎﺳًﺎ ﻣِﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻘَﻴْﺲِ ﻗَﺪِﻣُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﻳَﺎ
ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧَّﺎ ﺣَﻲٌّ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِﻴﻌَﺔَ، ﻭَﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻚَ ﻛُﻔَّﺎﺭُ ﻣُﻀَﺮَ، ﻭَﻟَﺎ ﻧَﻘْﺪِﺭُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺃَﺷْﻬُﺮِ
ﺍﻟْﺤُﺮُﻡِ، ﻓَﻤُﺮْﻧَﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮٍ ﻧَﺄْﻣُﺮُ ﺑِﻪِ ﻣَﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀَﻧَﺎ، ﻭَﻧَﺪْﺧُﻞُ ﺑِﻪِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﺇِﺫَﺍ ﻧَﺤْﻦُ ﺃَﺧَﺬْﻧَﺎ ﺑِﻪِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: " ﺁﻣُﺮُﻛُﻢْ ﺑِﺄَﺭْﺑَﻊٍ، ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﻛُﻢْ ﻋَﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ: ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻛُﻮﺍ
ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻭَﺃَﻗِﻴﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ، ﻭَﺁﺗُﻮﺍ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ، ﻭَﺻُﻮﻣُﻮﺍ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ »
“আব্দুল কায়স গোত্রের কয়েকজন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে
উপস্থিত হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর নবী! আমরা
রাবী’আ গোত্রের লোক। আপনার ও আমাদের
মধ্যবতী যাতায়াত পথে মুদার গোত্রের কাফিররা
অবস্থান করায় ‘হারাম মাস’ ছাড়া আমরা আপনার
কাছে আসতে পারি না। অতএব, আপনি আমাদের
এমন কাজের আদেশ দিন, আমাদের যারা আসে নি
তাদের জানাতে পারি এবং যা পালন করে আমরা
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমাদের চারটি বিষয় পালনের এবং
চারটি বিষয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিচ্ছি।
পালনীয় চারটি বিষয় হলো, তোমরা আল্লাহর
ইবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে
না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রমযানের
সাওম পালন করবে এবং গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ
প্রদান করবে।” [21]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﺎﺭِﺯًﺍ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ، ﻓَﺄَﺗَﺎﻩُ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻣَﺎ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥُ؟
ﻗَﺎﻝَ: «ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥُ ﺃَﻥْ ﺗُﺆْﻣِﻦَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﻼَﺋِﻜَﺘِﻪِ، ﻭَﻛُﺘُﺒِﻪِ، ﻭَﺑِﻠِﻘَﺎﺋِﻪِ، ﻭَﺭُﺳُﻠِﻪِ ﻭَﺗُﺆْﻣِﻦَ ﺑِﺎﻟْﺒَﻌْﺚِ » . ﻗَﺎﻝَ:
ﻣَﺎ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡُ؟ ﻗَﺎﻝَ: " ﺍﻹِﺳْﻼَﻡُ : ﺃَﻥْ ﺗَﻌْﺒُﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪَ، ﻭَﻻَ ﺗُﺸْﺮِﻙَ ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻭَﺗُﻘِﻴﻢَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ، ﻭَﺗُﺆَﺩِّﻱَ
ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ ﺍﻟﻤَﻔْﺮُﻭﺿَﺔَ، ﻭَﺗَﺼُﻮﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ." ﻗَﺎﻝَ: ﻣَﺎ ﺍﻹِﺣْﺴَﺎﻥُ؟ ﻗَﺎﻝَ: « ﺃَﻥْ ﺗَﻌْﺒُﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺄَﻧَّﻚَ
ﺗَﺮَﺍﻩُ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ ﺗَﺮَﺍﻩُ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳَﺮَﺍﻙَ »، ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺘَﻰ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ؟ ﻗَﺎﻝَ: " ﻣَﺎ ﺍﻟﻤَﺴْﺌُﻮﻝُ ﻋَﻨْﻬَﺎ
ﺑِﺄَﻋْﻠَﻢَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﺎﺋِﻞِ، ﻭَﺳَﺄُﺧْﺒِﺮُﻙَ ﻋَﻦْ ﺃَﺷْﺮَﺍﻃِﻬَﺎ: ﺇِﺫَﺍ ﻭَﻟَﺪَﺕِ ﺍﻷَﻣَﺔُ ﺭَﺑَّﻬَﺎ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺗَﻄَﺎﻭَﻝَ ﺭُﻋَﺎﺓُ
ﺍﻹِﺑِﻞِ ﺍﻟﺒُﻬْﻢُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺒُﻨْﻴَﺎﻥِ، ﻓِﻲ ﺧَﻤْﺲٍ ﻻَ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ " ﺛُﻢَّ ﺗَﻼَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻋِﻨﺪَﻩُۥ ﻋِﻠۡﻢُ ﭐﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ﴾ [ ﻟﻘﻤﺎﻥ : ٣٤]، ﺛُﻢَّ ﺃَﺩْﺑَﺮَ ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﺭُﺩُّﻭﻩُ » ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺮَﻭْﺍ
ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: «ﻫَﺬَﺍ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﺟَﺎﺀَ ﻳُﻌَﻠِّﻢُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺩِﻳﻨَﻬُﻢْ » ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ: ﺟَﻌَﻞَ ﺫَﻟِﻚَ ﻛُﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ
ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥِ »
“একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জনসমক্ষে বসা ছিলেন, এমন সময় তাঁর
কাছে এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন ‘ঈমান
কী?’ তিনি বললেন, ‘ঈমান হলো, আপনি বিশ্বাস
রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের
প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের
প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো
বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি।’ তিনি
জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলাম কী?’ তিনি
বললেন, ‘ইসলাম হলো, আপনি আল্লাহর ইবাদত
করবেন এবং তাঁর সঙ্গে শরীক করবেন না, সালাত
কায়েম করবেন, ফরয যাকাত আদায় করবেন এবং
রমযানের সাওম পালন করবেন।’ ঐ ব্যক্তি
জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইহসান কী?’ তিনি
বললেন, ‘আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন
যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে
দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে) তিনি
আপনাকে দেখছেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন,
‘কিয়ামত কবে?’ তিনি বললেন, ‘এ ব্যাপারে যাকে
জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসাকারী
অপেক্ষা বেশি জানেন না। তবে আমি আপনাকে
কিয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছি: বাঁদী যখন
তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা
যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা
করবে। (কিয়ামতের বিষয়) সেই পাঁচটি জিনিসের
অন্তর্ভূক্ত, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’ এরপর
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই
আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন,
﴿ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻋِﻨﺪَﻩُۥ ﻋِﻞۡﻡُ ﭐﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ﴾ [ ﻟﻘﻤﺎﻥ: ٣٤]
“কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহই নিকট..।” [সূরা
লুকমান, আয়াত: ৩৪], এরপর ঐ ব্যক্তি চলে গেলে
তিনি বললেন, ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন।’ তারা
কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি
জিবরীল আলাইহিস সালাম। লোকদের দীন
শেখাতে এসেছিলেন।” [22]
রমযান ও সাওমের ফযীলত
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ ﻓَﻼَ ﻳَﺮْﻓُﺚْ ﻭَﻻَ ﻳَﺠْﻬَﻞْ، ﻭَﺇِﻥِ ﺍﻣْﺮُﺅٌ ﻗَﺎﺗَﻠَﻪُ ﺃَﻭْ ﺷَﺎﺗَﻤَﻪُ ﻓَﻠْﻴَﻘُﻞْ: ﺇِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ
ﻣَﺮَّﺗَﻴْﻦِ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻟَﺨُﻠُﻮﻑُ ﻓَﻢِ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢِ ﺃَﻃْﻴَﺐُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻣِﻦْ ﺭِﻳﺢِ
ﺍﻟﻤِﺴْﻚِ » « ﻳَﺘْﺮُﻙُ ﻃَﻌَﺎﻣَﻪُ ﻭَﺷَﺮَﺍﺑَﻪُ ﻭَﺷَﻬْﻮَﺗَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﻠِﻲ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻟِﻲ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺟْﺰِﻱ ﺑِﻪِ ﻭَﺍﻟﺤَﺴَﻨَﺔُ
ﺑِﻌَﺸْﺮِ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ »
“সাওম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং
মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে
ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই
বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার
শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম
পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের
গন্ধের চেয়েও উৎকৃষ্ট। সে আমার জন্য আহার, পান ও
কামাচার পরিত্যাগ করে। সাওম আমারই জন্য। তাই
এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক
নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ”। [23]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻓُﺘِّﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ، ﻭَﻏُﻠِّﻘَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻭَﺻُﻔِّﺪَﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦُ »
“যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ
উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ
বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলে
বন্দী করা হয়”। [24]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻓُﺘِّﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ، ﻭَﻏُﻠِّﻘَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ، ﻭَﺳُﻠْﺴِﻠَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦُ »
“রমযান মাস আসলে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত
করে দেওয়া হয়, জাহান্নমের দরজাসমূহ বন্ধ করে
দেওয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলে বন্দী করা
হয়”। [25]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরও
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻭَّﻝُ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺻُﻔِّﺪَﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦُ، ﻭَﻣَﺮَﺩَﺓُ ﺍﻟﺠِﻦِّ، ﻭَﻏُﻠِّﻘَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ
ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﻔْﺘَﺢْ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺑَﺎﺏٌ، ﻭَﻓُﺘِّﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ، ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﻐْﻠَﻖْ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺑَﺎﺏٌ، ﻭَﻳُﻨَﺎﺩِﻱ ﻣُﻨَﺎﺩٍ: ﻳَﺎ
ﺑَﺎﻏِﻲَ ﺍﻟﺨَﻴْﺮِ ﺃَﻗْﺒِﻞْ، ﻭَﻳَﺎ ﺑَﺎﻏِﻲَ ﺍﻟﺸَّﺮِّ ﺃَﻗْﺼِﺮْ، ﻭَﻟِﻠَّﻪِ ﻋُﺘَﻘَﺎﺀُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻭَﺫَﻟﻚَ ﻛُﻞُّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ».
“শয়তান ও দুষ্ট জিন্নদেরকে রমযান মাসের প্রথম
রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের
দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং এর একটি দরজাও তখন
আর খোলা হয় না, খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের
দরজাগুলো এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা
হয় না। (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে
থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে
পাপাসক্ত! বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ
তা‘আলার পক্ষ থেকে এ মাসে জাহান্নাম থেকে
মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ
থেকে থাকে।” [26]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﺃَﺗَﺎﻛُﻢْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺷَﻬْﺮٌ ﻣُﺒَﺎﺭَﻙٌ ﻓَﺮَﺽَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺻِﻴَﺎﻣَﻪُ، ﺗُﻔْﺘَﺢُ ﻓِﻴﻪِ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ،
ﻭَﺗُﻐْﻠَﻖُ ﻓِﻴﻪِ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟْﺠَﺤِﻴﻢِ، ﻭَﺗُﻐَﻞُّ ﻓِﻴﻪِ ﻣَﺮَﺩَﺓُ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦِ، ﻟِﻠَّﻪِ ﻓِﻴﻪِ ﻟَﻴْﻠَﺔٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻟْﻒِ ﺷَﻬْﺮٍ،
ﻣَﻦْ ﺣُﺮِﻡَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ ﻓَﻘَﺪْ ﺣُﺮِﻡَ »
“তোমাদের নিকট রমযান উপস্থিত হয়েছে, যা
একটি বরকতময় মাস। তোমাদের ওপরে আল্লাহ
তা‘আলা অত্র মাসের সাওম ফরয করেছেন। এ মাস
আগমনের কারণে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া
হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া
হয়, আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার
বেড়ী পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক
হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সে
রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত
বঞ্চিত রয়ে গেল।” [27]
ওয়াসিলা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ﺃُﻧْﺰِﻟَﺖْ ﺻُﺤُﻒُ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﺃَﻭَّﻝَ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺃُﻧْﺰِﻟَﺖِ ﺍﻟﺘَّﻮْﺭَﺍﺓُ ﻟِﺴِﺖٍّ ﻣَﻀَﻴْﻦَ ﻣِﻦْ
ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺍﻟْﺈِﻧْﺠِﻴﻞُ ﻟِﺜَﻠَﺎﺙَ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﻣَﻀَﺖْ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺍﻟﺰَّﺑُﻮﺭُ ﻟِﺜَﻤَﺎﻥَ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﺧَﻠَﺖْ
ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻟِﺄَﺭْﺑَﻊٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺧَﻠَﺖْ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ »
“রমযানের প্রথম রাত্রিতে ইবরাহীম আলাইহিস
সালামের ওপর সহীফা নাযিল হয়, রমযানের ছয় দিন
অতিবাহিত হলে (মূসা আলাইহিস সালামের ওপর)
তাওরাত নাযিল হয়, তের রমযান শেষে (ঈসা
আলাইহিস সালামের ওপর) ইঞ্জিল নাযিল হয়,
আঠারো রমযান শেষ হলে (দাউদ আলাইহিস
সালামের ওপর) যাবুর নাযিল হয় এবং চব্বিশ রমযান
শেষে (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ওপর) কুরআন নাযিল হয়।” [28]
কা‘ব ইবন উজরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একবার বললেন,
«ﺍﺣْﻀَﺮُﻭﺍ ﺍﻟْﻤِﻨْﺒَﺮَ ﻓَﺤَﻀَﺮْﻧَﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺍﺭْﺗَﻘَﻰ ﺩَﺭَﺟَﺔً ﻗَﺎﻝَ : ﺁﻣِﻴﻦَ ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺍﺭْﺗَﻘَﻰ ﺍﻟﺪَّﺭَﺟَﺔَ ﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻴَﺔَ
ﻗَﺎﻝَ: «ﺁﻣِﻴﻦَ » ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺍﺭْﺗَﻘَﻰ ﺍﻟﺪَّﺭَﺟَﺔَ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔَ ﻗَﺎﻝَ: ﺁﻣِﻴﻦَ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻧَﺰَﻝَ ﻗُﻠْﻨَﺎ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻘَﺪْ
ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﻣِﻨْﻚَ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻣَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﺴْﻤَﻌُﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻋَﺮَﺽَ ﻟِﻲ
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺑُﻌْﺪًﺍ ﻟِﻤَﻦْ ﺃَﺩْﺭَﻙَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻐْﻔَﺮْ ﻟَﻪُ ﻗُﻠْﺖُ: ﺁﻣِﻴﻦَ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﻗِﻴﺖُ ﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻴَﺔَ ﻗَﺎﻝَ: ﺑُﻌْﺪًﺍ
ﻟِﻤَﻦْ ﺫُﻛِﺮْﺕُ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻗُﻠْﺖُ : ﺁﻣِﻴﻦَ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﻗِﻴﺖُ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔَ ﻗَﺎﻝَ : ﺑُﻌْﺪًﺍ ﻟِﻤَﻦْ ﺃَﺩْﺭَﻙَ
ﺃَﺑَﻮَﺍﻩُ ﺍﻟْﻜِﺒَﺮَ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﺃَﻭْ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻤَﺎ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺪْﺧِﻠَﺎﻩُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻗُﻠْﺖُ: ﺁﻣِﻴﻦَ »
“তোমরা মিম্বার নিয়ে আসো, ফলে আমরা
মিম্বার নিয়ে আসলাম। যখন তিনি মিম্বারের
প্রথম সিঁড়িতে উঠলেন, বললেন, আমীন। দ্বিতীয়
সিঁড়িতে উঠে আবার বললেন, আমীন। অনুরূ পভাবে
তৃতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। তিনি
মিম্বার থেকে নেমে আসলে আমরা জিজ্ঞেস
করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে আমরা
আজ যা শুনলাম ইতোপূর্বে কখনও এরূপ শুনি নি।
তিনি বললেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম আমার
কাছে আসলেন, তিনি বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস
হোক যে রমযান পেলো অথচ নিজের গুনাহ মাফ
করাতে পারল না, আমি বললাম, আমীন। আমি যখন
দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠলাম জিবরীল আলাইহিস
সালাম বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার কাছে
আপনার নাম উল্লেখ করা হলো অথচ সে আপনার ওপর
দুরুদ ও সালাম পেশ করল না। আমি বললাম, আমীন।
আবার আমি যখন তৃতীয় সিঁড়িতে উঠলাম তখন
জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, সে ব্যক্তি
ধ্বংস হোক যে বৃদ্ধ অবস্থায় তার পিতামাতা
দু’জনকে বা একজনকে পেল অথচ তাদের সেবা যত্ন
করে জান্নাতে যেতে পারল না। আমি বললাম,
আমীন।”[29]
মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨْﺖُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ، ﻓَﺄَﺻْﺒَﺤْﺖُ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻗَﺮِﻳﺒًﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻧَﺴِﻴﺮُ،
ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻲ ﺑِﻌَﻤَﻞٍ ﻳُﺪْﺧِﻠُﻨِﻲ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﻳُﺒَﺎﻋِﺪُﻧِﻲ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﻘَﺪْ
ﺳَﺄَﻟْﺘَﻨِﻲ ﻋَﻦْ ﻋَﻈِﻴﻢٍ، ﻭَﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻴَﺴِﻴﺮٌ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻦْ ﻳَﺴَّﺮَﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﺗَﻌْﺒُﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻻَ ﺗُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ،
ﻭَﺗُﻘِﻴﻢُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ، ﻭَﺗُﺆْﺗِﻲ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ، ﻭَﺗَﺼُﻮﻡُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺗَﺤُﺞُّ ﺍﻟﺒَﻴْﺖَ , ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻻَ ﺃَﺩُﻟُّﻚَ ﻋَﻠَﻰ
ﺃَﺑْﻮَﺍﺏِ ﺍﻟﺨَﻴْﺮِ : ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ، ﻭَﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔُ ﺗُﻄْﻔِﺊُ ﺍﻟﺨَﻄِﻴﺌَﺔَ ﻛَﻤَﺎ ﻳُﻄْﻔِﺊُ ﺍﻟْﻤَﺎﺀُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ، ﻭَﺻَﻼَﺓُ
ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻣِﻦْ ﺟَﻮْﻑِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻗَﺎﻝَ: ﺛُﻢَّ ﺗَﻼَ ﴿ ﺗَﺘَﺠَﺎﻓَﻰٰ ﺟُﻨُﻮﺑُﻬُﻢۡ ﻋَﻦِ ﭐﻟۡﻤَﻀَﺎﺟِﻊِ﴾ [ ﺍﻟﺴﺠﺪﺓ:
١٦] ﺣَﺘَّﻰ ﺑَﻠَﻎَ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ , ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻻَ ﺃُﺧْﺒِﺮُﻙَ ﺑِﺮَﺃْﺱِ ﺍﻷَﻣْﺮِ ﻛُﻠِّﻪِ ﻭَﻋَﻤُﻮﺩِﻩِ، ﻭَﺫِﺭْﻭَﺓِ ﺳَﻨَﺎﻣِﻪِ؟
ﻗُﻠْﺖُ: ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻗَﺎﻝَ: ﺭَﺃْﺱُ ﺍﻷَﻣْﺮِ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡُ، ﻭَﻋَﻤُﻮﺩُﻩُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ، ﻭَﺫِﺭْﻭَﺓُ ﺳَﻨَﺎﻣِﻪِ
ﺍﻟﺠِﻬَﺎﺩُ , ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻻَ ﺃُﺧْﺒِﺮُﻙَ ﺑِﻤَﻼَﻙِ ﺫَﻟِﻚَ ﻛُﻠِّﻪِ؟ ﻗُﻠْﺖُ: ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎ ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻓَﺄَﺧَﺬَ ﺑِﻠِﺴَﺎﻧِﻪِ ﻗَﺎﻝَ:
ﻛُﻒَّ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻫَﺬَﺍ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﻳَﺎ ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻭَﺇِﻧَّﺎ ﻟَﻤُﺆَﺍﺧَﺬُﻭﻥَ ﺑِﻤَﺎ ﻧَﺘَﻜَﻠَّﻢُ ﺑِﻪِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺛَﻜِﻠَﺘْﻚَ ﺃُﻣُّﻚَ ﻳَﺎ
ﻣُﻌَﺎﺫُ، ﻭَﻫَﻞْ ﻳَﻜُﺐُّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻋَﻠَﻰ ﻭُﺟُﻮﻫِﻬِﻢْ ﺃَﻭْ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻨَﺎﺧِﺮِﻫِﻢْ ﺇِﻻَّ ﺣَﺼَﺎﺋِﺪُ ﺃَﻟْﺴِﻨَﺘِﻬِﻢْ ».
“আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। একদিন
চলার সময় আমি তাঁর নিকটবর্তী হয়ে গেলাম। আমি
বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি
‘আমল সম্পর্কে অবহিত করুন যা আমাকে জান্নাতে
দাখিল করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে
দিবে। তিনি বললেন, তুমি তো বিরাট একটা বিষয়ে
আমাকে জিজ্ঞাসা করলে। তবে আল্লাহ তা‘আলা
যার জন্য তা সহজ করে দেন তার জন্য বিষয়টি অবশ্য
সহজ। আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কোনো
কিছু শরীক করবে না। সালাত কায়েম করবে, যাকাত
প্রদান করবে, রমযানের সাওম পালন
করবে, বায়তুল্লাহর হজ করবে। এরপর তিনি
বললেন, সব কল্যাণের দ্বার (দরজা) সম্পর্কে কি
আমি তোমাকে দিক-নির্দেশনা দিব? সাওম হলো
ঢালস্বরূপ, পানি যেমন আগুন নিভিয়ে দেয় তেমনি
সদকাও গুনাহসমূহকে নিশ্চিহ্ন করে দেয় আর হলো
মধ্য রাতের সালাত। এরপর তিনি তিলাওয়াত
করলেন,
﴿ ﺗَﺘَﺠَﺎﻓَﻰٰ ﺟُﻨُﻮﺑُﻬُﻢۡ ﻋَﻦِ ﭐﻟۡﻤَﻀَﺎﺟِﻊِ﴾ [ ﺍﻟﺴﺠﺪﺓ: ١٦]
“তারা (মুমিনরা গভীর রাতে) শয্যা ত্যাগ
করে।” [সূরা আস-সাজদা, আয়াত: ১৬] তারপর
বললেন, তোমাকে এই সব কিছুর মাথা ও বুনিয়াদ
এবং সর্বোচ্চ শীর্ষদেশ স্বরূপ আমল সম্পর্কে অবহিত
করব কি? এরপর বললেন, অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
তিনি বললেন, সব কিছুর মাথা হলো
ইসলাম, বুনিয়াদ হলো সালাত আর সর্বোচ্চ শীর্ষ
হলো জিহাদ। এরপর বললেন, এ সব কিছুর মূল পুঁজি
সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করব কি? আমি বললাম,
অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি তাঁর জিহ্বা ধরে
বললেন, এটিকে সংযত রাখ। আমি বললাম, হে
আল্লাহর নবী, আমরা যে কথাবার্তা বলি সে
কারণেও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? তিনি
বললেন, তোমাদের মা তোমাকে হারিয়ে
ফেলুক, হে মু‘আয! লোকদের অধঃমুখে জাহান্নামে
নিক্ষিপ্ত হওয়ার জন্য এ যবানের কামাই ছাড়া আর
কি কিছু আছে নাকি?” [30]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ﻣَﻦْ ﺁﻣَﻦَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺑِﺮَﺳُﻮﻟِﻪِ، ﻭَﺃَﻗَﺎﻡَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ، ﻭَﺻَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﻘًّﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻥْ ﻳُﺪْﺧِﻠَﻪُ
ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ، ﺟَﺎﻫَﺪَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻭْ ﺟَﻠَﺲَ ﻓِﻲ ﺃَﺭْﺿِﻪِ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻭُﻟِﺪَ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ،
ﺃَﻓَﻼَ ﻧُﺒَﺸِّﺮُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﻓِﻲ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ ﻣِﺎﺋَﺔَ ﺩَﺭَﺟَﺔٍ، ﺃَﻋَﺪَّﻫَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻠْﻤُﺠَﺎﻫِﺪِﻳﻦَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ
ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﺪَّﺭَﺟَﺘَﻴْﻦِ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻭَﺍﻷَﺭْﺽِ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺳَﺄَﻟْﺘُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪَ، ﻓَﺎﺳْﺄَﻟُﻮﻩُ ﺍﻟﻔِﺮْﺩَﻭْﺱَ،
ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺃَﻭْﺳَﻂُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ ﻭَﺃَﻋْﻠَﻰ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ - ﺃُﺭَﺍﻩُ - ﻓَﻮْﻗَﻪُ ﻋَﺮْﺵُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ، ﻭَﻣِﻨْﻪُ ﺗَﻔَﺠَّﺮُ ﺃَﻧْﻬَﺎﺭُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ »
ﻗَﺎﻝَ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻓُﻠَﻴْﺢٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ : ﻭَﻓَﻮْﻗَﻪُ ﻋَﺮْﺵُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ »
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যে ঈমান
আনল, সালাত আদায় করল ও রমযানের সাওম পালন
করল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয়
জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাতে প্রবেশ
করিয়ে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়।
সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি
লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি
বলেন, আল্লাহর পথে মুজাহিদদের জন্য আল্লাহ
তা‘আলা জান্নাতে একশটি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত
রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও জমিনের
দুরত্বের ন্যায়। তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে
ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হলো সবচেয়ে
উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আমার মনে
হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এ-ও বলেছেন, এর উপরে রয়েছে ‘আরশে রহমান। আর
সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইবন ফুলাইহ্ রহ. তাঁর পিতার সূত্রে
(নিঃসন্দেহে) বলেন, এর উপরে রয়েছে ‘আরশে
রহমান।” [31]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
«ﻗَﺪِﻡَ ﻭَﻓْﺪُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻘَﻴْﺲِ ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺇِﻧَّﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺤَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِﻴﻌَﺔَ، ﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻚَ ﻛُﻔَّﺎﺭُ
ﻣُﻀَﺮَ، ﻓَﻠَﺴْﻨَﺎ ﻧَﺼِﻞُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮِ ﺍﻟﺤَﺮَﺍﻡِ، ﻓَﻤُﺮْﻧَﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮٍ ﻧَﺄْﺧُﺬُ ﺑِﻪِ ﻭَﻧَﺪْﻋُﻮ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣَﻦْ
ﻭَﺭَﺍﺀَﻧَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: " ﺁﻣُﺮُﻛُﻢْ ﺑِﺄَﺭْﺑَﻊٍ، ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﻛُﻢْ ﻋَﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ، ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥِ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ: ﺷَﻬَﺎﺩَﺓِ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ
ﺍﻟﻠَّﻪُ، - ﻭَﻋَﻘَﺪَ ﺑِﻴَﺪِﻩِ - ﻭَﺇِﻗَﺎﻡِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ، ﻭَﺇِﻳﺘَﺎﺀِ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ، ﻭَﺻِﻴَﺎﻡِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺃَﻥْ ﺗُﺆَﺩُّﻭﺍ ﻟِﻠَّﻪِ ﺧُﻤُﺲَ
ﻣَﺎ ﻏَﻨِﻤْﺘُﻢْ، ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﻛُﻢْ: ﻋَﻦِ ﺍﻟﺪُّﺑَّﺎﺀِ، ﻭَﺍﻟﻨَّﻘِﻴﺮِ، ﻭَﺍﻟﺤَﻨْﺘَﻢِ، ﻭَﺍﻟﻤُﺰَﻓَّﺖِ »
“আব্দুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে
বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা রাবী‘আ গোত্রের
একটি উপদল। আপনার ও আমাদের মাঝে মুদার
(কাফির) গোত্রের বসবাস। তাই আমরা আপনার
নিকট নিষিদ্ধ মাসসমূহ ব্যতীত অন্য সময় আসতে
পারি না। কাজেই আপনি আমাদের এমন কাজের
আদেশ করুন, যার ওপর আমরা আমল করব এবং
আমাদের পশ্চাতে যারা রয়ে গেছে, তাদে কেও তা
আমল করতে আহবান জানাবো। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি
তোমদেরকে চারটি কাজের আদেশ করছি এবং
চারটি কাজ থেকে নিষেধ করছি। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের অঙ্গুলে
তা গণনা করে বলেন, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি
ঈমান আন। আর তা হচ্ছে এ সাক্ষ্য দান করা
যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই আর
সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দান করা, রমযান
মাসে সাওম পালন করা এবং আল্লাহর জন্য গনীমাত
লব্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ আদায় করা। আর আমি
তোমাদের শুল্ক লাউয়ের খোলে তৈরি পাত্র, খেজুর
গাছের মূল দ্বারা তৈরি পাত্র, সবুজ
মটকা, আলকাতরা প্রলিপ্ত মটকা ব্যবহার করতে
নিষেধ করছি।” [32]
আল্লাহর রাস্তায় সাওমের ফযীলত
আবু সঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺑَﻌَّﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﺳَﺒْﻌِﻴﻦَ ﺧَﺮِﻳﻔًﺎ »
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও সাওম পালন
করে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে (অর্থাৎ তাকে)
জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে
সরিয়ে নেন।” [33]
সাওম গুনাহের কাফফারা
হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻗَﺎﻝَ ﻋُﻤَﺮُ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻣَﻦْ ﻳَﺤْﻔَﻆُ ﺣَﺪِﻳﺜًﺎ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ
ﺍﻟﻔِﺘْﻨَﺔِ؟ ﻗَﺎﻝَ ﺣُﺬَﻳْﻔَﺔُ ﺃَﻧَﺎ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻪُ ﻳَﻘُﻮﻝُ: « ﻓِﺘْﻨَﺔُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻓِﻲ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﻭَﻣَﺎﻟِﻪِ ﻭَﺟَﺎﺭِﻩِ، ﺗُﻜَﻔِّﺮُﻫَﺎ
ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻭَﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻭَﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔُ »، ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﻴْﺲَ ﺃَﺳْﺄَﻝُ ﻋَﻦْ ﺫِﻩِ، ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﺳْﺄَﻝُ ﻋَﻦِ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗَﻤُﻮﺝُ ﻛَﻤَﺎ
ﻳَﻤُﻮﺝُ ﺍﻟﺒَﺤْﺮُ، ﻗَﺎﻝَ: ﻭَﺇِﻥَّ ﺩُﻭﻥَ ﺫَﻟِﻚَ ﺑَﺎﺑًﺎ ﻣُﻐْﻠَﻘًﺎ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻴُﻔْﺘَﺢُ ﺃَﻭْ ﻳُﻜْﺴَﺮُ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻳُﻜْﺴَﺮُ، ﻗَﺎﻝَ:
ﺫَﺍﻙَ ﺃَﺟْﺪَﺭُ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳُﻐْﻠَﻖَ ﺇِﻟَﻰ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ، ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ ﻟِﻤَﺴْﺮُﻭﻕٍ: ﺳَﻠْﻪُ ﺃَﻛَﺎﻥَ ﻋُﻤَﺮُ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﻦِ
ﺍﻟﺒَﺎﺏُ؟ ﻓَﺴَﺄَﻟَﻪُ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻧَﻌَﻢْ، ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻥَّ ﺩُﻭﻥَ ﻏَﺪٍ ﺍﻟﻠَّﻴْﻠَﺔَ »
“একদিন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ফিতনা
সম্পর্কিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের হাদীসটি কার মুখস্ত
আছে? হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি যে, পরিবার, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশিই
মানুষের জন্য ফিতনা। সালাত, সাওম এবং সদকা এর
কাফফারা হয়ে যায়। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বললেন, এ ফিতনা সম্পর্কে আমি জিজ্ঞাসা করছি
না, আমি তো জিজ্ঞাসা করেছি ঐ ফিতনা
সম্পর্কে, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত
থেকে থাকবে। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বললেন, এ ফিতনার সামনে বন্ধ দরজা আছে। উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এ দরজা কি খুলে
যাবে, না ভেঙ্গে যাবে? হুযায়ফা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ভেঙ্গে যাবে। উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাহলে তো তা
কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। আমরা মাসরূক রহ. কে
বললাম, হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস
করুন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কি জানতেন, কে
সেই দরজা? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি এরূপ
জানতেন যেরূপ আগামীকালের দিনের পূর্বে
আজকের রাত।” [34]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলতেন,
« ﺍﻟﺼَّﻠَﻮَﺍﺕُ ﺍﻟْﺨَﻤْﺲُ، ﻭَﺍﻟْﺠُﻤْﻌَﺔُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺠُﻤْﻌَﺔِ، ﻭَﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻣُﻜَﻔِّﺮَﺍﺕٌ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻦَّ ﺇِﺫَﺍ
ﺍﺟْﺘَﻨَﺐَ ﺍﻟْﻜَﺒَﺎﺋِﺮَ »
“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু‘আ থেকে আরেক জুমু‘আ
পর্যন্ত এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান পর্যন্ত এসব
তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা হয়ে
যাবে, যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত
থাকে।” [35]
সাওম ঢালস্বরূপ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ ﻓَﻼَ ﻳَﺮْﻓُﺚْ ﻭَﻻَ ﻳَﺠْﻬَﻞْ، ﻭَﺇِﻥِ ﺍﻣْﺮُﺅٌ ﻗَﺎﺗَﻠَﻪُ ﺃَﻭْ ﺷَﺎﺗَﻤَﻪُ ﻓَﻠْﻴَﻘُﻞْ: ﺇِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ ﻣَﺮَّﺗَﻴْﻦِ
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻟَﺨُﻠُﻮﻑُ ﻓَﻢِ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢِ ﺃَﻃْﻴَﺐُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻣِﻦْ ﺭِﻳﺢِ ﺍﻟﻤِﺴْﻚِ ﻳَﺘْﺮُﻙُ
ﻃَﻌَﺎﻣَﻪُ ﻭَﺷَﺮَﺍﺑَﻪُ ﻭَﺷَﻬْﻮَﺗَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﻠِﻲ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻟِﻲ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺟْﺰِﻱ ﺑِﻪِ ﻭَﺍﻟﺤَﺴَﻨَﺔُ ﺑِﻌَﺸْﺮِ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ »
“সাওম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং
মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে
ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই
বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার
শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম
পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের
ঘ্রাণের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান
ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সাওম আমারই জন্য।
তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর
প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন।” [36]
সা‘ঈদ ইবন আবু হিন্দ রহ. থেকে বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﻣُﻄَﺮِّﻓًﺎ، ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻣِﻦْ ﺑَﻨِﻲ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺑْﻦِ ﺻَﻌْﺼَﻌَﺔَ، ﺣَﺪَّﺛَﻪُ ﺃَﻥَّ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺑْﻦَ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ، ﺩَﻋَﺎ ﻟَﻪُ
ﺑِﻠَﺒَﻦٍ ﻟِﻴَﺴْﻘِﻴَﻪُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣُﻄَﺮِّﻑٌ: ﺇِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ: ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻳَﻘُﻮﻝُ: « ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ ﻛَﺠُﻨَّﺔِ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘِﺘَﺎﻝِ »
“বনী ‘আমের ইবন সা‘আসা‘আ গোত্রের মুতাররিফ
রহ. তাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,
ওসমান ইবন আবু ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দুধ পান
করার জন্য তাকে দুধ নিয়ে আসতে বললেন। তখন
মুতাররিফ রহ. বললেন, আমি সাওম পালনকারী।
ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি, তিনি বলেছেন, সাওম এমন ঢালস্বরূপ,
তোমাদের যুদ্ধে ব্যবহৃত ঢালের ন্যায়।” [37]
সাওম পালনকারীর জন্য জান্নাতে রাইয়্যান দরজা
সাহল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺇِﻥَّ ﻓِﻲ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ ﺑَﺎﺑًﺎ ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻪُ ﺍﻟﺮَّﻳَّﺎﻥُ، ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﻣِﻨْﻪُ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻤُﻮﻥَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ، ﻻَ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﻣِﻨْﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ
ﻏَﻴْﺮُﻫُﻢْ، ﻳُﻘَﺎﻝُ: ﺃَﻳْﻦَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻤُﻮﻥَ؟ ﻓَﻴَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﻻَ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﻣِﻨْﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ﻏَﻴْﺮُﻫُﻢْ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺩَﺧَﻠُﻮﺍ ﺃُﻏْﻠِﻖَ
ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺪْﺧُﻞْ ﻣِﻨْﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ »
“জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ
দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম পালনকারীরাই
প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে
প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া
হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা
দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে
প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ
করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ
প্রবেশ না করে।” [38]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﻣَﻦْ ﺃَﻧْﻔَﻖَ ﺯَﻭْﺟَﻴْﻦِ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻧُﻮﺩِﻱَ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏِ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ: ﻳَﺎ ﻋَﺒْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻫَﺬَﺍ ﺧَﻴْﺮٌ، ﻓَﻤَﻦْ
ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺩُﻋِﻲَ ﻣِﻦْ ﺑَﺎﺏِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﺠِﻬَﺎﺩِ ﺩُﻋِﻲَ ﻣِﻦْ ﺑَﺎﺏِ
ﺍﻟﺠِﻬَﺎﺩِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﺩُﻋِﻲَ ﻣِﻦْ ﺑَﺎﺏِ ﺍﻟﺮَّﻳَّﺎﻥِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ
ﺩُﻋِﻲَ ﻣِﻦْ ﺑَﺎﺏِ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ "، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ : ﺑِﺄَﺑِﻲ ﺃَﻧْﺖَ ﻭَﺃُﻣِّﻲ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻦْ ﺩُﻋِﻲَ ﻣِﻦْ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻷَﺑْﻮَﺍﺏِ ﻣِﻦْ ﺿَﺮُﻭﺭَﺓٍ، ﻓَﻬَﻞْ ﻳُﺪْﻋَﻰ ﺃَﺣَﺪٌ ﻣِﻦْ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻷَﺑْﻮَﺍﺏِ ﻛُﻠِّﻬَﺎ،
ﻗَﺎﻝَ: « ﻧَﻌَﻢْ ﻭَﺃَﺭْﺟُﻮ ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ »
“যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে
তাঁকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে
আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব, যে সালাত
আদায়কারী, তাঁকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা
হবে। সে মুজাহিদ তাঁকে জিহাদের দরজা থেকে
ডাকা হবে, যে সাওম পালনকারী, তাঁকে রাইয়্যাব
দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সদকা দানকারী তাঁকে
সদকা দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবু বকর
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ!
আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান, সব দরজা
থেকে কাউকে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই, তবে
কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।
আমি আশা করি তুমি তাঁদের মধ্যে হবে।” [39]
রমযান নাকি রমযান মাস বলা হবে? কেউ কেউ
বলেছেন, উভয়টি বলা যাবে?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻓُﺘِﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ »
“যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে
দেওয়া হয়।” [40]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﺩَﺧَﻞَ ﺷَﻬْﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓُﺘِّﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ، ﻭَﻏُﻠِّﻘَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ، ﻭَﺳُﻠْﺴِﻠَﺖِ
ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦُ »
“রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়
এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়
আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে দেওয়া হয়।” [41]
রমযানের চাঁদ দেখা
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻓَﺼُﻮﻣُﻮﺍ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻓَﺄَﻓْﻄِﺮُﻭﺍ، ﻓَﺈِﻥْ ﻏُﻢَّ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﺎﻗْﺪُﺭُﻭﺍ ﻟَﻪُ » ﻭَﻗَﺎﻝَ
ﻏَﻴْﺮُﻩُ: ﻋَﻦِ ﺍﻟﻠَّﻴْﺚِ، ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻋُﻘَﻴْﻞٌ، ﻭَﻳُﻮﻧُﺲُ: ﻟِﻬِﻼَﻝِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ »
“যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সাওম পালন
করবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফতার করবে। আর
যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তাঁর সময়
হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে। ইয়াহইয়া ইবন
বুকায়র রহ. ব্যতীত অন্যরা লায়স রহ. থেকে উকায়লা
এবং ইউনুস রহ. সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি
বলেছেন রমযানের চাঁদ সম্পর্কে।” [42]
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায়
নিয়তের সাথে সাওম পালন করবে
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
« ﻳُﺒْﻌَﺜُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﻧِﻴَّﺎﺗِﻬِﻢْ »
“তারা (সাওম পালনকারী) তাদের নিয়ত অনুসারে
কিয়ামতের দিন উত্থিত হবেন।” [43]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﻣَﻦْ ﻗَﺎﻡَ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﻘَﺪْﺭِ ﺇِﻳﻤَﺎﻧًﺎ ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ، ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ، ﻭَﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺇِﻳﻤَﺎﻧًﺎ
ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ »
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বাদরে ঈমানের সাথে
সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর
পিছনের সমস্ত গুনাহ মাপ করা হবে। আর যে ব্যক্তি
ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানের সাওম পালন
করবে, তাঁরও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা
হবে”[44]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান
মাসে অধিক দান করতেন
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﺟْﻮَﺩَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﺎﻟﺨَﻴْﺮِ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺃَﺟْﻮَﺩُ ﻣَﺎ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ
ﺣِﻴﻦَ ﻳَﻠْﻘَﺎﻩُ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻳَﻠْﻘَﺎﻩُ ﻛُﻞَّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻨْﺴَﻠِﺦَ،
ﻳَﻌْﺮِﺽُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟﻘُﺮْﺁﻥَ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻟَﻘِﻴَﻪُ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ، ﻛَﺎﻥَ
ﺃَﺟْﻮَﺩَ ﺑِﺎﻟﺨَﻴْﺮِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﻳﺢِ ﺍﻟﻤُﺮْﺳَﻠَﺔِ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ
ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন।
রমযানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর
সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান
করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই
জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর একবার সাক্ষাৎ
করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল
আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন
তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-
সম্পদ দান করতেন।” [45]
যে ব্যক্তি সাওম পালনের সময় মিথ্যা বলা ও সে
অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺪَﻉْ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ ﻭَﺍﻟﻌَﻤَﻞَ ﺑِﻪِ، ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻟِﻠَّﻪِ ﺣَﺎﺟَﺔٌ ﻓِﻲ ﺃَﻥْ ﻳَﺪَﻉَ ﻃَﻌَﺎﻣَﻪُ ﻭَﺷَﺮَﺍﺑَﻪُ »
“যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন
করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর
কোনো প্রয়োজন নেই।” [46]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺭُﺏَّ ﺻَﺎﺋِﻢٍ ﺣَﻈُّﻪُ ﻣِﻦْ ﺻِﻴَﺎﻣِﻪِ ﺍﻟْﺠُﻮﻉُ ﻭَﺍﻟْﻌَﻄَﺶُ، ﻭَﺭُﺏَّ ﻗَﺎﺋِﻢٍ ﺣَﻈُّﻪُ ﻣِﻦْ ﻗِﻴَﺎﻣِﻪِ ﺍﻟﺴَّﻬَﺮُ »
“কিছু সাওম পালনকারীর সাওমের বিনিময়ে ক্ষুধা
ও পিপাসা ছাড়া কিছুই পায় না, আবার রাতে
জাগরণকারী কিছু সালাত আদায়কারীর রাত্রি
জাগরণ ব্যতীত কিছুই পায় না।” [47]
কাউকে গালি দেওয়া হলে সে কি বলবে, আমি
সাওম পালনকারী?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ: ﻛُﻞُّ ﻋَﻤَﻞِ ﺍﺑْﻦِ ﺁﺩَﻡَ ﻟَﻪُ، ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺟْﺰِﻱ ﺑِﻪِ، ﻭَﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ،
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻮْﻡُ ﺻَﻮْﻡِ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﻓَﻼَ ﻳَﺮْﻓُﺚْ ﻭَﻻَ ﻳَﺼْﺨَﺐْ، ﻓَﺈِﻥْ ﺳَﺎﺑَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ﺃَﻭْ ﻗَﺎﺗَﻠَﻪُ، ﻓَﻠْﻴَﻘُﻞْ ﺇِﻧِّﻲ
ﺍﻣْﺮُﺅٌ ﺻَﺎﺋِﻢٌ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺲُ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﺑِﻴَﺪِﻩِ، ﻟَﺨُﻠُﻮﻑُ ﻓَﻢِ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢِ ﺃَﻃْﻴَﺐُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣِﻦْ ﺭِﻳﺢِ ﺍﻟﻤِﺴْﻚِ
ﻟِﻠﺼَّﺎﺋِﻢِ ﻓَﺮْﺣَﺘَﺎﻥِ ﻳَﻔْﺮَﺣُﻬُﻤَﺎ: ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﻓَﺮِﺡَ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻟَﻘِﻲَ ﺭَﺑَّﻪُ ﻓَﺮِﺡَ ﺑِﺼَﻮْﻣِﻪِ »
“আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, সাওম ব্যতীত আদম
সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু
সাওম আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেব।
সাওম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সাওম
পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-
বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা
তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি
একজন সাওম পালনকারী। যার হাতে মুহাম্মদের
প্রাণ তাঁর শপথ! সাওম পালনকারীর মুখের (না
খাওয়াজনিত) ঘ্রাণ আল্লাহর নিকট মিশকের
ঘ্রাণের চেয়েও বেশি উত্তম। সাওম পালনকারীর
জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে
ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের
সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে
আনন্দিত হবে।” [48]
অবিবাহিত ব্যক্তি যে নিজের ওপর ফিতনার
আশংকা করে তার জন্য সাওম পালন করা
আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺑَﻴْﻨَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺃَﻣْﺸِﻲ، ﻣَﻊَ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻛُﻨَّﺎ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻉَ ﺍﻟﺒَﺎﺀَﺓَ ﻓَﻠْﻴَﺘَﺰَﻭَّﺝْ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺃَﻏَﺾُّ ﻟِﻠْﺒَﺼَﺮِ، ﻭَﺃَﺣْﺼَﻦُ ﻟِﻠْﻔَﺮْﺝِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ
ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻪِ ﺑِﺎﻟﺼَّﻮْﻡِ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﻪُ ﻭِﺟَﺎﺀٌ »
“আমি আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে চলতে
ছিলাম তখন তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে
ছিলাম, তিনি বললেন, যে ব্যক্তির সামর্থ্য
আছে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কেননা বিবাহ
চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান সংরক্ষণ
করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন
করে। কেননা সাওম তাঁর প্রবৃত্তিকে দমন করে”। [49]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী,
তোমরা চাঁদ দেখে সাওম পালন শুরু করবে, আবার
চাঁদ দেখে সাওম থেকে বিরত থাকবে
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺫَﻛَﺮَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻻَ ﺗَﺼُﻮﻣُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮَﻭُﺍ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ،
ﻭَﻻَ ﺗُﻔْﻄِﺮُﻭﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮَﻭْﻩُ، ﻓَﺈِﻥْ ﻏُﻢَّ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﺎﻗْﺪُﺭُﻭﺍ ﻟَﻪُ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
রমযানের কথা আলোচনা করে বললেন, চাঁদ না দেখে
তোমরা সাওম পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে
ইফতার করবে না। যদি মেঘাছন্ন থাকে তাহলে তাঁর
সময় (ত্রিশ দিন) পরিমাণ পূর্ণ করবে”। [50]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺍﻟﺸَّﻬْﺮُ ﺗِﺴْﻊٌ ﻭَﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﻟَﻴْﻠَﺔً، ﻓَﻼَ ﺗَﺼُﻮﻣُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮَﻭْﻩُ، ﻓَﺈِﻥْ ﻏُﻢَّ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﺄَﻛْﻤِﻠُﻮﺍ ﺍﻟﻌِﺪَّﺓَ
ﺛَﻼَﺛِﻴﻦَ »
“মাস ঊনত্রিশ রাত বিশিষ্ট হয়। তাই তোমরা চাঁদ
না দেখে সাওম শুরু করবে না। যদি আকাশ মেঘাবৃত
থাকে তাহলে তোমরা ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে”। [51]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’হাতের
অঙ্গুলী তুলে ইশারা করে) বলেন,
«ﺍﻟﺸَّﻬْﺮُ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻭَﻫَﻜَﺬَﺍ » ﻭَﺧَﻨَﺲَ ﺍﻹِﺑْﻬَﺎﻡَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔِ »
“মাস এত এত দিনে হয় এবং তৃতীয় বার বৃদ্ধাঙ্গুলীটি
বন্ধ করে নিলেন”। [52]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা আবুল
কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
«ﺻُﻮﻣُﻮﺍ ﻟِﺮُﺅْﻳَﺘِﻪِ ﻭَﺃَﻓْﻄِﺮُﻭﺍ ﻟِﺮُﺅْﻳَﺘِﻪِ، ﻓَﺈِﻥْ ﻏُﺒِّﻲَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﺄَﻛْﻤِﻠُﻮﺍ ﻋِﺪَّﺓَ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺛَﻼَﺛِﻴﻦَ »
“তোমরা চাঁদ দেখে সাওম আরম্ভ করবে এবং চাঁদ
দেখে ইফতার করবে। আকাশ যদি মেঘে ঢাকা থাকে
তাহলে শা‘বানের গণনা ত্রিশ দিন পুরা করবে”। [53]
উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺁﻟَﻰ ﻣِﻦْ ﻧِﺴَﺎﺋِﻪِ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻣَﻀَﻰ ﺗِﺴْﻌَﺔٌ ﻭَﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ
ﻳَﻮْﻣًﺎ، ﻏَﺪَﺍ ﺃَﻭْ ﺭَﺍﺡَ ﻓَﻘِﻴﻞَ ﻟَﻪُ: ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻠَﻔْﺖَ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺗَﺪْﺧُﻞَ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﻳَﻜُﻮﻥُ
ﺗِﺴْﻌَﺔً ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﻳَﻮْﻣًﺎ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক
মাসের জন্য তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে ঈলা (পণ করা)
করলেন। ঊনত্রিশ দিন পার হওয়ার পর সকালে বা
সন্ধায় তিনি তাঁদের নিকট গেলেন। তাঁকে প্রশ্ন
করা হলো, আপনি তো এক মাস পর্যন্ত না আসার
শপথ করেছিলেন? তিনি বলেলেন, মাস ঊনত্রিশ
হয়েও থাকে”। [54]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﺁﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻣِﻦْ ﻧِﺴَﺎﺋِﻪِ، ﻭَﻛَﺎﻧَﺖْ ﺍﻧْﻔَﻜَّﺖْ ﺭِﺟْﻠُﻪُ، ﻓَﺄَﻗَﺎﻡَ ﻓِﻲ
ﻣَﺸْﺮُﺑَﺔٍ ﺗِﺴْﻌًﺎ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً، ﺛُﻢَّ ﻧَﺰَﻝَ ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺁﻟَﻴْﺖَ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ
ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﺗِﺴْﻌًﺎ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
স্ত্রীদের সঙ্গে ঈলা (পণ করা) করলেন। এ সময় তাঁর
পা মচকে গিয়েছিল। তখন তিনি উপরের কামরায়
উনত্রিশ রাত অবস্থান করেন। এরপর অবতরণ করলে
ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি তো এক মাসের জন্য ঈলা
করেছিলেন। তিনি বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও
হয়ে থাকে”। [55]
যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত যে,
« ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻗْﺴَﻢَ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﻳَﺪْﺧُﻞَ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻪِ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺰُّﻫْﺮِﻱُّ:
ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮَﻧِﻲ ﻋُﺮْﻭَﺓُ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻟَﻤَّﺎ ﻣَﻀَﺖْ ﺗِﺴْﻊٌ ﻭَﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﻟَﻴْﻠَﺔً
ﺃَﻋُﺪُّﻫُﻦَّ، ﺩَﺧَﻞَ ﻋَﻠَﻲَّ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺑَﺪَﺃَ ﺑِﻲ - ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﻳَﺎ
ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻗْﺴَﻤْﺖَ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﺗَﺪْﺧُﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻭَﺇِﻧَّﻚَ ﺩَﺧَﻠْﺖَ ﻣِﻦْ ﺗِﺴْﻊٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ
ﺃَﻋُﺪُّﻫُﻦَّ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﺗِﺴْﻊٌ ﻭَﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পণ
করলেন যে, তিনি এক মাস পর্যন্ত তাঁর বিবিদের
কাছে যাবেন না। যুহরী রহ. উরওয়া রহ. এর সুত্রে
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত
যে, তিনি বলেন, যখন ঊনত্রিশ রাত্র অতিবাহিত
হয়ে গেল, আমি তা হিসাব রাখছিলাম, তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমার নিকট আসলেন এবং আমার থেকেই আরম্ভ
করলেন। এ সময় আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
আপনি তো একমাস পর্যন্ত আমাদের নিকট না আসার
শপথ করেছেন অথচ আপনি ঊনত্রিশ তারিখের পরই
চলে আসলেন আমি তো গুণে রেখেছি। তখন তিনি
বললেন, মাস তো উনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।” [56]
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻋْﺘَﺰَﻝَ ﻧِﺴَﺎﺀَﻩُ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻓَﺨَﺮَﺝَ ﺇِﻟَﻴْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺗِﺴْﻊٍ
ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ، ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ: ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡُ ﺗِﺴْﻊٌ ﻭَﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮُ ﻭَﺻَﻔَّﻖَ ﺑِﻴَﺪَﻳْﻪِ ﺛَﻠَﺎﺙَ
ﻣَﺮَّﺍﺕٍ، ﻭَﺣَﺒَﺲَ ﺇِﺻْﺒَﻌًﺎ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﻓِﻲ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এক মাসের জন্য তাঁর স্ত্রীদের থেকে পৃথক হয়ে
গেলেন। এরপর ঊনত্রিশ দিন পর তিনি আমাদের
নিকট বের হয়ে এলেন। আমরা বললাম আজ তো
ঊনত্রিশতম দিবস। তখন তিনি তাঁর উভয় হাত দিয়ে
তিনবার ইশারা করে শেষবার একটি আঙ্গূল গুটিয়ে
রেখে বললেন, মাস তো এভাবেও হয়ে থাকে।” [57]
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺍﻋْﺘَﺰَﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻧِﺴَﺎﺀَﻩُ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﻓَﺨَﺮَﺝَ ﺇِﻟَﻴْﻨَﺎ ﺻَﺒَﺎﺡَ ﺗِﺴْﻊٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﺻْﺒَﺤْﻨَﺎ ﻟِﺘِﺴْﻊٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: " ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﺗِﺴْﻌًﺎ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺛُﻢَّ ﻃَﺒَّﻖَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
ﺑِﻴَﺪَﻳْﻪِ ﺛَﻠَﺎﺛًﺎ: ﻣَﺮَّﺗَﻴْﻦِ ﺑِﺄَﺻَﺎﺑِﻊِ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻛُﻠِّﻬَﺎ، ﻭَﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔَ ﺑِﺘِﺴْﻊٍ ﻣِﻨْﻬَﺎ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
স্ত্রীদের থেকে এক মাসের জন্য পৃথক হয়ে গেলেন।
তারপর ঊনত্রিশতম দিবসে ভোর বেলা তিনি
আমাদের নিকট আসলেন। কেউ কেউ বললেন, ইয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আজ তো ঊনত্রিশতম দিনের ভোরবেলা। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু
বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে। এরপর নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় হাতের
সমস্ত আঙ্গুল খুলে দু’বার ইঙ্গিত করলেন এবং
তৃতীয়বার ইঙ্গিত করলেন নয় আঙ্গুল দ্বারা।” [58]
সা‘দ ইবন আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺿَﺮَﺏَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄُﺧْﺮَﻯ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺍﻟﺸَّﻬْﺮُ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻭَﻫَﻜَﺬَﺍ
ﺛُﻢَّ ﻧَﻘَﺺَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔِ ﺇِﺻْﺒَﻌًﺎ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর এক হাত অপর হাতের ওপর মেরে বললেন, মাস
এভাবে এভাবে হয়ে থাকে। তৃতীয়বার তিনি একটি
আঙ্গুল গুটিয়ে রাখলেন”। [59]
চাঁদ দেখার ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহণ
আবু উমাইর ইবন আনাস ইবন মালিক রহ. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻋُﻤُﻮﻣَﺘِﻲ، ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﻧْﺼَﺎﺭِ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ:
ﺃُﻏْﻤِﻲَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻫِﻠَﺎﻝُ ﺷَﻮَّﺍﻝٍ، ﻓَﺄَﺻْﺒَﺤْﻨَﺎ ﺻِﻴَﺎﻣًﺎ، ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺭَﻛْﺐٌ ﻣِﻦْ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ، ﻓَﺸَﻬِﺪُﻭﺍ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺭَﺃَﻭُﺍ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ ﺑِﺎﻟْﺄَﻣْﺲِ، ﻓَﺄَﻣَﺮَﻫُﻢْ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻥْ ﻳُﻔْﻄِﺮُﻭﺍ، ﻭَﺃَﻥْ ﻳَﺨْﺮُﺟُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻋِﻴﺪِﻫِﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻐَﺪِ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সাহাবী এবং আনসার সম্প্রদায়ভুক্ত আমার এক
চাচা আমার নিকট বর্ণনা করেন, মেঘের কারণে
আমরা শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখতে পাই নি। আমরা
(পরের দিন) সাওম রাখলাম। দিনের শেষভাগে
একটি কাফেলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট এসে গতকাল চাঁদ দেখার
সাক্ষ্য দিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে ইফতার (সাওম ভঙ্গ) করার
এবং পরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দেন।” [60]
চাঁদ দেখতে কতজন সাক্ষ্য লাগবে?
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
« ﺗَﺮَﺍﺀَﻯ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ، ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮْﺕُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧِّﻲ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻪُ ﻓَﺼَﺎﻣَﻪ
ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺑﺼﻴﺎﻣﻪ ».
“একবার লোকজন চাঁদ দেখল। আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে
বললাম যে, আমি চাঁদ দেখেছি, ফলে তিনি নিজে
সাওম পালন করলেন এবং লোকদেরকেও সাওম পালন
করতে নির্দেশ দিলেন।” [61]
• প্রত্যেক দেশে আলাদা আলাদাভাবে চাঁদ দেখা,
এক দেশে চাঁদ দেখলে তার হুকুম অন্যের জন্য যথেষ্ট
নয়
কুরায়ব রহ. থেকে বর্ণিত যে,
« ﺃَﻥَّ ﺃُﻡَّ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞِ ﺑِﻨْﺖَ ﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ، ﺑَﻌَﺜَﺘْﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﺑِﺎﻟﺸَّﺎﻡِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻘَﺪِﻣْﺖُ ﺍﻟﺸَّﺎﻡَ، ﻓَﻘَﻀَﻴْﺖُ
ﺣَﺎﺟَﺘَﻬَﺎ، ﻭَﺍﺳْﺘُﻬِﻞَّ ﻋَﻠَﻲَّ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺑِﺎﻟﺸَّﺎﻡِ، ﻓَﺮَﺃَﻳْﺖُ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺪِﻣْﺖُ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔَ
ﻓِﻲ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮِ، ﻓَﺴَﺄَﻟَﻨِﻲ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ، ﺛُﻢَّ ﺫَﻛَﺮَ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ ﻓَﻘَﺎﻝَ:
ﻣَﺘَﻰ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ؟ ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﺭَﺃَﻳْﻨَﺎﻩُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺃَﻳْﺘَﻪُ؟ ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﻧَﻌَﻢْ، ﻭَﺭَﺁﻩُ
ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ﻭَﺻَﺎﻣُﻮﺍ ﻭَﺻَﺎﻡَ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: " ﻟَﻜِﻨَّﺎ ﺭَﺃَﻳْﻨَﺎﻩُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﺴَّﺒْﺖِ، ﻓَﻠَﺎ ﻧَﺰَﺍﻝُ ﻧَﺼُﻮﻡُ ﺣَﺘَّﻰ
ﻧُﻜْﻤِﻞَ ﺛَﻠَﺎﺛِﻴﻦَ، ﺃَﻭْ ﻧَﺮَﺍﻩُ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﺃَﻭَ ﻟَﺎ ﺗَﻜْﺘَﻔِﻲ ﺑِﺮُﺅْﻳَﺔِ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻭَﺻِﻴَﺎﻣِﻪِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻟَﺎ، ﻫَﻜَﺬَﺍ
ﺃَﻣَﺮَﻧَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ " ﻭَﺷَﻚَّ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﺑْﻦُ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﻓِﻲ ﻧَﻜْﺘَﻔِﻲ ﺃَﻭْ ﺗَﻜْﺘَﻔِﻲ »
“উম্মুল ফযল বিনত হারিস তাকে সিরিয়ায়
মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট পাঠালেন।
(কুরায়ব বলেন) আমি সিরিয়ায় পৌঁছলাম এবং তার
প্রয়োজনীয় কাজটি সমাধা করে নিলাম। আমি
সিরিয়া থাকা অবস্থায়ই রমযানের চাঁদ দেখা
গেল। জুমু‘আর দিন সন্ধ্যায় আমি চাঁদ দেখলাম।
এরপর রমযানের শেষ ভাগে আমি মদীনায় ফিরলাম।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার
নিকট জিজ্ঞাসা করলেন এবং চাঁদ সম্পর্কে
আলোচনা করলেন। এরপর জিজ্ঞাসা
করলেন, তোমরা কোনো দিন চাঁদ দেখেছ? আমি
বললাম, আমরা তো জুমু‘আর দিন সন্ধায় চাঁদ
দেখেছি। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি
নিজে দেখেছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি
দেখেছি এবং লোকেরাও দেখেছে। তারা সাওম
পালন করেছে এবং মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও
সাওম পালন করেছেন। তিনি বললেন, আমরা কিন্তু
শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেছি। আমরা সাওম পালন
করতে থাকব, শেষ পর্যন্ত ত্রিশ দিন পূর্ণ করব অথবা
চাঁদ দেখব। আমি বললাম, মু‘আবিয়া
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চাঁদ দেখা এবং তাঁর সাওম
পালন করা আপনার জন্য যথেষ্ট নয় কি? তিনি
বললেন, না, যথেষ্ট নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে
এরূপ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।” [62]
চাঁদ ছোট বা বড় দেখা ধর্তব্য নয়, আল্লাহ তা‘আলা
দেখার জন্য বর্ধিত করে দিয়েছেন। আর যদি মেঘের
কারণে দেখা না যায় তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে
আবুল বাখতারী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺧَﺮَﺟْﻨَﺎ ﻟِﻠْﻌُﻤْﺮَﺓِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻧَﺰَﻟْﻨَﺎ ﺑِﺒَﻄْﻦِ ﻧَﺨْﻠَﺔَ ﻗَﺎﻝَ: ﺗَﺮَﺍﺀَﻳْﻨَﺎ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ : ﻫُﻮَ ﺍﺑْﻦُ
ﺛَﻠَﺎﺙٍ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ: ﻫُﻮَ ﺍﺑْﻦُ ﻟَﻴْﻠَﺘَﻴْﻦِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻠَﻘِﻴﻨَﺎ ﺍﺑْﻦَ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ: ﺇِﻧَّﺎ ﺭَﺃَﻳْﻨَﺎ
ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ: ﻫُﻮَ ﺍﺑْﻦُ ﺛَﻠَﺎﺙٍ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ: ﻫُﻮَ ﺍﺑْﻦُ ﻟَﻴْﻠَﺘَﻴْﻦِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﻱَّ
ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻩُ؟ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ: ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﻛَﺬَﺍ ﻭَﻛَﺬَﺍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ،
ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻣَﺪَّﻩُ ﻟِﻠﺮُّﺅْﻳَﺔِ، ﻓَﻬُﻮَ ﻟِﻠَﻴْﻠَﺔٍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻩُ »
“আমরা ‘উমরা করার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম
এবং ‘বাতনে নাখলা’ নামক স্থানে উপস্থিত হলাম
তখন আমরা (রমযানের) চাঁদ! দেখতে পেলাম। এ সময়
কেউ কেউ বলতে লাগলেন এ তো তিন তারিখের
চাঁদ। আবার কেউ কেউ বললেন, এ তো দুই তারিখের
চাঁদ। তারপর আমরা ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং
বললাম, আমরা তো চাঁদ দেখেছি। কিন্তু আমাদের
কেউ কেউ বলছেন, এ দু’রাত্রির চাঁদ। আবার কেউ
কেউ বললেন, এ এক রাত্রির চাঁদ। তখন তিনি
জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোনো রাত্রে চাঁদ
দেখেছ? আমরা বললাম, অমুক অমুক রাত্রে। তিনি
বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দেখার সুবিধার্থে আল্লাহ
একে বঁর্ধিত করে করেছেন। মূলত এ ঐ রাত্রিরই চাঁদ
যে রাত্রে তোমরা দেখেছো।” [63]
ঈদের দু’মাস কম হয় না
আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত
যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
«ﺷَﻬْﺮَﺍﻥِ ﻻَ ﻳَﻨْﻘُﺼَﺎﻥِ، ﺷَﻬْﺮَﺍ ﻋِﻴﺪٍ: ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ، ﻭَﺫُﻭ ﺍﻟﺤَﺠَّﺔِ »
“দু’টি মাস কম হয় না। তা হলো ঈদের দু’মাস
রমযানের মাস ও যিলহজের মাস।” আবু ‘আব্দুল্লাহ
রহ. বলেছেন, আহমদ ইবন হাম্বল রহ. বলেন, রমযান
ঘাটতি হলে যিলহজ পূর্ণ হবে। আর যিলহজ ঘাটতি
হলে রমযান পূর্ণ হবে। আবুল হাসান রহ.
বলেন, ইসহাক ইবন রাহওয়াই রহ. বলেন, ফযীলতের
দিক থেকে এ দুই মাসে ঘাটতি নেই, মাস ঊনত্রিশ
দিনে হোক বা ত্রিশ দিনে হোক। [64]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
আমরা লিখি না এবং হিসাবও করি না
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
« ﺇِﻧَّﺎ ﺃُﻣَّﺔٌ ﺃُﻣِّﻴَّﺔٌ، ﻻَ ﻧَﻜْﺘُﺐُ ﻭَﻻَ ﻧَﺤْﺴُﺐُ، ﺍﻟﺸَّﻬْﺮُ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻭَﻫَﻜَﺬَﺍ » ﻳَﻌْﻨِﻲ ﻣَﺮَّﺓً ﺗِﺴْﻌَﺔً ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ،
ﻭَﻣَﺮَّﺓً ﺛَﻼَﺛِﻴﻦَ »
“আমরা উম্মী জাতি, আমরা লিখি না এবং
হিসাবও করি না। মাস এরূপ এরূপ হয়। অর্থাৎ কখনও
ঊনত্রিশ আবার কখনও ত্রিশ দিন হয়ে থাকে”। [65]
রমযানের একদিন বা দু’দিন আগে সাওম শুরু করবে না
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻻَ ﻳَﺘَﻘَﺪَّﻣَﻦَّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺑِﺼَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡٍ ﺃَﻭْ ﻳَﻮْﻣَﻴْﻦِ، ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﺻَﻮْﻣَﻪُ،
ﻓَﻠْﻴَﺼُﻢْ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﻴَﻮْﻡَ »
“তোমরা কেউ রমযানের একদিন কিংবা দুই দিন
আগে থেকে সাওম শুরু করবে না। তবে কেউ যদি এ
সময় সাওম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিন
সাওম করতে পারবে”। [66]
ইয়াওমুশ-শক বা সন্দেহের দিনে সাওম পালন করা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻻَ ﻳَﺘَﻘَﺪَّﻣَﻦَّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺑِﺼَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡٍ ﺃَﻭْ ﻳَﻮْﻣَﻴْﻦِ، ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﺻَﻮْﻣَﻪُ،
ﻓَﻠْﻴَﺼُﻢْ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﻴَﻮْﻡَ »
“তোমরা কেউ রমযানের একদিন কিংবা দুই দিন
আগে থেকে সাওম শুরু করবে না। তবে কেউ যদি এ
সময় সাওম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিন
সাওম করতে পারবে”। [67]
সিলা ইবন যুফার রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨَّﺎ ﻋِﻨْﺪَ ﻋَﻤَّﺎﺭِ ﺑْﻦِ ﻳَﺎﺳِﺮٍ ﻓَﺄُﺗِﻲَ ﺑِﺸَﺎﺓٍ ﻣَﺼْﻠِﻴَّﺔٍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻛُﻠُﻮﺍ، ﻓَﺘَﻨَﺤَّﻰ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟﻘَﻮْﻡِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ:
ﺇِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋَﻤَّﺎﺭٌ: ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ ﺍﻟﻴَﻮْﻡَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺸُﻚُّ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻓَﻘَﺪْ ﻋَﺼَﻰ ﺃَﺑَﺎ ﺍﻟﻘَﺎﺳِﻢِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ».
“আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকটে
আমরা উপস্থিত ছিলাম। একটি ভুনা বকরি
(খাবারের উদ্দেশ্যে) নিয়ে আসা হলে তিনি
বললেন, তোমরা সকলেই খাও। কিন্তু কোনো এক
লোক দূরে সরে গিয়ে বলল, আমি সাওম পালনকারী।
‘আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, সন্দেহযুক্ত
দিনে যে লোক সাওম পালন করে, সে লোক আবুল
কাসিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর
নাফরমানি করে”। [68]
অর্ধ শা‘বানের পরে নফল সাওম পালন করা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﺑَﻘِﻲَ ﻧِﺼْﻒٌ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻓَﻼَ ﺗَﺼُﻮﻣُﻮﺍ ».
“শা‘বানের অর্ধাংশ যখন বাকী থাকে তখন আর
তোমরা সাওম পালন করবে না”। [69]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒُ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻓَﻠَﺎ ﺻَﻮْﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺠِﻲﺀَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ »
“শা‘বানের অর্ধাংশ চলে গেলে তোমরা রমযান না
আসা পর্যন্ত আর সাওম পালন করবে না”। [70]
আল্লাহর বাণী:
﴿ﺃُﺣِﻞَّ ﻟَﻜُﻢۡ ﻟَﻴۡﻠَﺔَ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﭐﻟﺮَّﻓَﺚُ ﺇِﻟَﻰٰ ﻧِﺴَﺎٓﺋِﻜُﻢۡۚ ﻫُﻦَّ ﻟِﺒَﺎﺱٞ ﻟَّﻜُﻢۡ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢۡ ﻟِﺒَﺎﺱٞ ﻟَّﻬُﻦَّۗ ﻋَﻠِﻢَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻧَّﻜُﻢۡ
ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗَﺨۡﺘَﺎﻧُﻮﻥَ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡ ﻓَﺘَﺎﺏَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡ ﻭَﻋَﻔَﺎ ﻋَﻨﻜُﻢۡۖ ﻓَﭑﻟۡـَٰٔﻦَ ﺑَٰﺸِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﻭَﭐﺑۡﺘَﻐُﻮﺍْ ﻣَﺎ ﻛَﺘَﺐَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢۡۚ
﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧]
“সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের
স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা
তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য
পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের
সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের
তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা
করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত
হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে
দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। [সূরা আল-বাকারা,
আয়াত: ১৮৭]
বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ، ﻓَﺤَﻀَﺮَ ﺍﻹِﻓْﻄَﺎﺭُ، ﻓَﻨَﺎﻡَ
ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُﻔْﻄِﺮَ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﻛُﻞْ ﻟَﻴْﻠَﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﻳَﻮْﻣَﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻤْﺴِﻲَ، ﻭَﺇِﻥَّ ﻗَﻴْﺲَ ﺑْﻦَ ﺻِﺮْﻣَﺔَ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِﻱَّ ﻛَﺎﻥَ
ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺣَﻀَﺮَ ﺍﻹِﻓْﻄَﺎﺭُ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗَﻪُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻬَﺎ: ﺃَﻋِﻨْﺪَﻙِ ﻃَﻌَﺎﻡٌ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻻَ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺃَﻧْﻄَﻠِﻖُ
ﻓَﺄَﻃْﻠُﺐُ ﻟَﻚَ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳَﻮْﻣَﻪُ ﻳَﻌْﻤَﻞُ، ﻓَﻐَﻠَﺒَﺘْﻪُ ﻋَﻴْﻨَﺎﻩُ، ﻓَﺠَﺎﺀَﺗْﻪُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗُﻪُ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﺃَﺗْﻪُ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﺧَﻴْﺒَﺔً ﻟَﻚَ،
ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺍﻧْﺘَﺼَﻒَ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭُ ﻏُﺸِﻲَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻓَﺬُﻛِﺮَ ﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻨَﺰَﻟَﺖْ ﻫَﺬِﻩِ
ﺍﻵﻳَﺔُ : ﴿ﺃُﺣِﻞَّ ﻟَﻜُﻢۡ ﻟَﻴۡﻠَﺔَ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﭐﻟﺮَّﻓَﺚُ ﺇِﻟَﻰٰ ﻧِﺴَﺎٓﺋِﻜُﻢۡۚ ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧ ] ﻓَﻔَﺮِﺣُﻮﺍ ﺑِﻬَﺎ ﻓَﺮَﺣًﺎ
ﺷَﺪِﻳﺪًﺍ، ﻭَﻧَﺰَﻟَﺖْ : ﴿ﻭَﻛُﻠُﻮﺍْ ﻭَﭐﺷۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ ﻣِﻦَ
ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧]
“মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সাহাবীগণের অবস্থা এই ছিল যে, যদি তাঁদের কেউ
সাওম পালন করতেন ইফতারে সময় হলে ইফতার না
করে ঘুমিয়ে গেল সে রাতে এবং পরের সন্ধ্যা
পর্যন্ত কিছুই খেতেন না। কায়স ইবন সিরমা
আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সাওম পালন
করেছিলেন। ইফতারের সময় তিনি তাঁর স্ত্রীর
নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট কিছু
খাবার আছে কি? তিনি বললেন, না, তবে আমি
যাচ্ছি, দেখি আপনার জন্য কিছু তালাশ করে আনি।
তিনি কাজে রত থাকতেন। তাই ঘুমে তাঁর চোখ বুজে
গেল। এরপর স্ত্রী এসে যখন তাকে দেখলেন, তখন
তাঁকে বললেন, হায়, তোমার জন্য বঞ্ছনা! পরদিন
দুপুর হলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। এ
ঘটনাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট উল্লেখ করা হলে এ আয়াতটি
নাযিল হয়,
﴿ﺃُﺣِﻞَّ ﻟَﻜُﻢۡ ﻟَﻴۡﻠَﺔَ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﭐﻟﺮَّﻓَﺚُ ﺇِﻟَﻰٰ ﻧِﺴَﺎٓﺋِﻜُﻢۡۚ ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٧]
“সিয়ামের রাত্রে তোমাদের স্ত্রী সম্ভোগ
হালাল করা হয়েছে”। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭] এ
হুকুম সমন্ধে অবহিত হয়ে সাহাবীগণ খুবই আনন্দিত
হলেন। এরপর নাযিল হলো,
﴿ﻭَﻛُﻠُﻮﺍْ ﻭَﭐﺷۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ:
١٨٧]
“তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালো রেখা
থেকে (ভোরের) সাদা রেখা স্পষ্ট তোমাদের নিকট
প্রতিভাত না হয়”। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭] [71]
﴿ﻭَﻛُﻠُﻮﺍْ ﻭَﭐﺷۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ ﺛُﻢَّ ﺃَﺗِﻤُّﻮﺍْ
ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟَّﻴۡﻞِۚ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧]
“আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা
রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত
পর্যন্ত সাওম পূর্ণ কর। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত:
১৮৭]
‘আদী ইবন হাতিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻟَﻤَّﺎ ﻧَﺰَﻟَﺖْ : ﴿ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ:
١٨٧] ﻋَﻤَﺪْﺕُ ﺇِﻟَﻰ ﻋِﻘَﺎﻝٍ ﺃَﺳْﻮَﺩَ، ﻭَﺇِﻟَﻰ ﻋِﻘَﺎﻝٍ ﺃَﺑْﻴَﺾَ، ﻓَﺠَﻌَﻠْﺘُﻬُﻤَﺎ ﺗَﺤْﺖَ ﻭِﺳَﺎﺩَﺗِﻲ، ﻓَﺠَﻌَﻠْﺖُ
ﺃَﻧْﻈُﺮُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ، ﻓَﻼَ ﻳَﺴْﺘَﺒِﻴﻦُ ﻟِﻲ، ﻓَﻐَﺪَﻭْﺕُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ،
ﻓَﺬَﻛَﺮْﺕُ ﻟَﻪُ ﺫَﻟِﻚَ ﻓَﻘَﺎﻝَ: «ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺫَﻟِﻚَ ﺳَﻮَﺍﺩُ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺑَﻴَﺎﺽُ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ »
যখন এই আয়াত নাযিল হলো,
﴿ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧]
“তোমরা পানাহার কর রাত্রির কালো রেখা থেকে
সাদা রেখা যতক্ষণ স্পষ্ট রূপে তোমাদের নিকট
প্রতিভাত না হয়।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭]
ততক্ষণ আমি একটি কালো এবং একটি সাদা রশি
নিলাম এবং উভয়টিকে আমার বালিশের নিচে
রেখে দিলাম। রাতে আমি এগুলোর দিকে বারবার
তাকাতে থাকি; কিন্তু আমার নিকট পার্থক্য
প্রকাশিত হলো না। তাই সকালেই রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে
এ বিষয় বললাম। তিনি বললেন, এতো রাতের আধাঁর
এবং দিনের আলো”। [72]
সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺃُﻧْﺰِﻟَﺖْ : ﴿ﻭَﻛُﻠُﻮﺍْ ﻭَﭐﺷۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﻂِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻮَﺩِ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ:
١٨٧] ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻨْﺰِﻝْ ﴿ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧ ]، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﺭِﺟَﺎﻝٌ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩُﻭﺍ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡَ ﺭَﺑَﻂَ
ﺃَﺣَﺪُﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﺭِﺟْﻠِﻪِ ﺍﻟﺨَﻴْﻂَ ﺍﻷَﺑْﻴَﺾَ ﻭَﺍﻟﺨَﻴْﻂَ ﺍﻷَﺳْﻮَﺩَ، ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺰَﻝْ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻪُ ﺭُﺅْﻳَﺘُﻬُﻤَﺎ،
ﻓَﺄَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻌْﺪُ : ﴿ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِۖ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧] ﻓَﻌَﻠِﻤُﻮﺍ ﺃَﻧَّﻪُ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﻭَﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭَ »
“যখন এ আয়াত নাযিল হলো, ‘’তোমরা পানাহার
কর, যতক্ষণ না কালো রেখা সাদা রেখা স্পষ্টরূপে
তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। কিন্তু তখনো
কথাটি নাযিল হয় নি। তখন সাওম পালন করতে ইচ্ছুক
লোকেরা নিজেদের দুই পায়ে একটি কাল এবং একটি
সাদা সুতলি বেধে নিতেন এবং সাদা কালো এ
দু’টির পার্থক্য না দেখা পর্যন্ত তাঁরা পানাহার
করতে থাকতেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা শব্দটি
নাযিল করলে সকলেই বুঝতে পারলেন যে, এ দ্বারা
উদ্দেশ্য হলো রাত (এর আধার) এবং দিন (এর
আলো)।” [73]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
বিলালের আযান যেন তোমাদেরকে সাহরী থেকে
বিরত না রাখে
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এবং কাসিম ইবব
মুহাম্মদ রহ. ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণনা করেন,
« ﺃَﻥَّ ﺑِﻼَﻟًﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺆَﺫِّﻥُ ﺑِﻠَﻴْﻞٍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﻛُﻠُﻮﺍ ﻭَﺍﺷْﺮَﺑُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ
ﻳُﺆَﺫِّﻥَ ﺍﺑْﻦُ ﺃُﻡِّ ﻣَﻜْﺘُﻮﻡٍ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻻَ ﻳُﺆَﺫِّﻥُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟﻔَﺠْﺮُ، ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻘَﺎﺳِﻢُ: ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﺫَﺍﻧِﻬِﻤَﺎ
ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﺮْﻗَﻰ ﺫَﺍ ﻭَﻳَﻨْﺰِﻝَ ﺫَﺍ »
“বিলাল (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাতে আযান
দিতেন। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবন উম্মে মাকতূম
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আযান দেওয়া পর্যন্ত তোমরা
পানাহার কর। কেননা সে ফজর না হওয়া পর্যন্ত
আযান দেয় না। কাসিম রহ. বলেন, এদের উভয়ের
মাঝে শুধু এতটুকু ব্যবধান ছিল যে, একজন নামতেন
এবং অন্যজন উঠতেন”। [74]
সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
« ﻟَﺎ ﻳَﻐُﺮَّﻧَّﻜُﻢْ ﻧِﺪَﺍﺀُ ﺑِﻠَﺎﻝٍ، ﻭَﻟَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺒَﻴَﺎﺽُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺒْﺪُﻭَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻨْﻔَﺠِﺮَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ »
“বিলালের আযান ও এ শুভ্ররেখা যেন তোমাদেরকে
ধোকায় না ফেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না সুবহে সাদিক
সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়”। [75]
সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻟَﺎ ﻳَﻐُﺮَّﻧَّﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺳَﺤُﻮﺭِﻛُﻢْ ﺃَﺫَﺍﻥُ ﺑِﻠَﺎﻝٍ، ﻭَﻟَﺎ ﺑَﻴَﺎﺽُ ﺍﻟْﺄُﻓُﻖِ ﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﻄِﻴﻞُ ﻫَﻜَﺬَﺍ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻴﺮَ
ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻭَﺣَﻜَﺎﻩُ ﺣَﻤَّﺎﺩٌ ﺑِﻴَﺪَﻳْﻪِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻳَﻌْﻨِﻲ ﻣُﻌْﺘَﺮِﺿًﺎ
“বিলালের আযান এবং আকাশ প্রান্তে এ লাল
রেখা যেন তোমাদেরকে সাহরী খাওয়ার ব্যাপারে
ধোকায় না ফেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না এ শুভ্র রেখা
পূর্বাকাশে এভাবে বিস্তৃত হয়। হাম্মাদ রহ.
বলেন, এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার উভয় হাত দ্বারা আড়াআড়ি
হওয়ার প্রতি ইংগিত করেছেন”। [76]
সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻟَﺎ ﻳَﻐُﺮَّﻧَّﻜُﻢْ ﺃَﺫَﺍﻥُ ﺑِﻠَﺎﻝٍ، ﻭَﻟَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺒَﻴَﺎﺽُ - ﻟِﻌَﻤُﻮﺩِ ﺍﻟﺼُّﺒْﺢِ - ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻴﺮَ ﻫَﻜَﺬَﺍ »
“বিলালের আযান এবং আকাশ প্রান্তে এ লাল
রেখা যেন তোমাদেরকে সাহরী খাওয়ার ব্যাপারে
ধোকায় না ফেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না এ শুভ্র রেখা
পূর্বাকাশে এভাবে বিস্তৃত হয়”। [77]
সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি যে,
« ﻟَﺎ ﻳَﻐُﺮَّﻥَّ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢْ ﻧِﺪَﺍﺀُ ﺑِﻠَﺎﻝٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﺤُﻮﺭِ، ﻭَﻟَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺒَﻴَﺎﺽُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻴﺮَ »
“বিলালের আযান যেন তোমাদেরকে ধোকায় না
ফেলে এবং শুভ্র রেখা যা স্তম্ভের মতো দেখা যায়
যতক্ষণ না তা বিস্তৃতভাবে উদ্ভাসিত হবে”। [78]
সাহরী খাওয়ায় তাড়াতাড়ি করা
সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﺗَﺴَﺤَّﺮُ ﻓِﻲ ﺃَﻫْﻠِﻲ، ﺛُﻢَّ ﺗَﻜُﻮﻥُ ﺳُﺮْﻋَﺘِﻲ ﺃَﻥْ ﺃُﺩْﺭِﻙَ ﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩَ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ »
“আমি আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে সাহরী
খেতাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সালাতে শরীক হওয়ার জন্য
তাড়াতাড়ি করতাম”। [79]
যির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻗُﻠْﻨَﺎ ﻟِﺤُﺬَﻳْﻔَﺔَ : ﺃَﻱَّ ﺳَﺎﻋَﺔٍ ﺗَﺴَﺤَّﺮْﺕَ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﻫُﻮَ
ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲَ ﻟَﻢْ ﺗَﻄْﻠُﻊْ »
“আমরা হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে
বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাথে আপনি কখন সাহরী
খেতেন? তিনি বললেন, খুব ভোরেই। তবে
হ্যাঁ, তখনো সূর্য উদয় হত না (ভোর রাত্রের শেষের
দিকে)।” [80]
‘আদী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যির
ইবন হুবাইস রহ.কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন যে,
«ﺗَﺴَﺤَّﺮْﺕُ ﻣَﻊَ ﺣُﺬَﻳْﻔَﺔَ، ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺟْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺃَﺗَﻴْﻨَﺎ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ ﺻَﻠَّﻴْﻨَﺎ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ، ﻭَﺃُﻗِﻴﻤَﺖِ
ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻭَﻟَﻴْﺲَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻤَﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻨَﻴْﻬَﺔٌ »
“আমি হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাহরী
খেলাম। অতঃপর সালাত আদায় করার জন্য বের
হলাম। যখন আমরা মসজিদে পৌছে দু’রাকা‘আত
সালাত আদায় করলাম (ফজরের সুন্নাত)। তখনই
(জামা‘আতের) ইকামাত বলা হলো। উভয়ের
মাঝখানে মাত্র অল্প কিছুক্ষণ সময়ের ব্যবধান
ছিল।” [81]
মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক রহ. বর্ণনায় এসেছে যে,
« ﻓَﺸَﺮِﺑْﺖُ، ﻭَﺍﻟْﻤُﺆَﺫِّﻥُ ﻳُﺆَﺫِّﻥُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻗَﺎﻝَ: « ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺩَﺧَﻠْﻨَﺎ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ ﺃُﻗِﻴﻤَﺖِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ، ﻭَﻫُﻢْ
ﻳَﻐْﻠِﺴُﻮﻥَ »
“আমি পানি পান করছিলাম, তখন মসজিদে
মুয়াজ্জিন আযান দিচ্ছিল। আমরা যখন মসজিদে
প্রবেশ করলাম তখন সালাতের ইকামত দেওয়া হলো,
লোকজন তখন অন্ধকারে সালাত আদায় করছিল”। [82]
সাহরী ও ফজরের সালাতের মাঝে ব্যবধানের
পরিমাণ
যায়েদ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺗَﺴَﺤَّﺮْﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻡَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ »، ﻗُﻠْﺖُ : ﻛَﻢْ ﻛَﺎﻥَ ﺑَﻴْﻦَ
ﺍﻷَﺫَﺍﻥِ ﻭَﺍﻟﺴَّﺤُﻮﺭِ؟ " ﻗَﺎﻝَ: «ﻗَﺪْﺭُ ﺧَﻤْﺴِﻴﻦَ ﺁﻳَﺔً »
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাহরী খাই, এরপর তিনি
সালাতের জন্য দাঁড়ান। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা
জিজ্ঞেসা করলাম আযান ও সাহরীর মাঝে কতটুকু
ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত (পাঠ
করা) পরিমান”। [ 83 ]
সাহরীতে রয়েছে অনেক বরকত কিন্তু তা ওয়াজিব
নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ একটানা সাওম
পালন করেছেন অথচ সেখানে সাহরীর উল্লেখ নেই
‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﺍﺻَﻞَ، ﻓَﻮَﺍﺻَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ﻓَﺸَﻖَّ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻓَﻨَﻬَﺎﻫُﻢْ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ:
ﺇِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ، ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﺴْﺖُ ﻛَﻬَﻴْﺌَﺘِﻜُﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻇَﻞُّ ﺃُﻃْﻌَﻢُ ﻭَﺃُﺳْﻘَﻰ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটানা
সাওম পালন করতে থাকলে লোকেরাও একটানা
সাওম পালন করতে শুরু করে। এ কাজ তাদের জন্য
কষ্টকর হয়ে দাঁড়াল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাদের নিষেধ করলেন। তারা
বলল, আপনি যে একনাগাড়ে সাওম পালন
করছেন? তিনি বললেন, আমি তো তোমাদের মতো
নই। আমাকে খাওয়ানো হয় ও পান করানো হয়”। [84]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺗَﺴَﺤَّﺮُﻭﺍ ﻓَﺈِﻥَّ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﺤُﻮﺭِ ﺑَﺮَﻛَﺔً »
“তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে বরকত
রয়েছে”। [85]
‘আমর ইবনু ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
« ﻓَﺼْﻞُ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﺻِﻴَﺎﻣِﻨَﺎ ﻭَﺻِﻴَﺎﻡِ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ، ﺃَﻛْﻠَﺔُ ﺍﻟﺴَّﺤَﺮِ »
“আমাদের ও আহলে কিতাবীদের সিয়ামের মধ্যে
পার্থক্য হলো সাহরী খাওয়া”। [86]
সাহরীতে যা খাওয়া মুস্তাহাব
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : «ﻧِﻌْﻢَ ﺳَﺤُﻮﺭُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﺍﻟﺘَّﻤْﺮُ »
“মুমিনের উত্তম সাহরী হলো খেজুর দ্বারা সাহরী
খাওয়া”। [87]
আযান দেওয়া অবস্থায় কারো হাতে খাবারের
পাত্র থাকলে কী করবে?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻊَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢُ ﺍﻟﻨِّﺪَﺍﺀَ ﻭَﺍﻟْﺈِﻧَﺎﺀُ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺪِﻩِ، ﻓَﻠَﺎ ﻳَﻀَﻌْﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘْﻀِﻲَ ﺣَﺎﺟَﺘَﻪُ ﻣِﻨْﻪُ »
“তোমাদের কেউ যখন ফজরের আযান শ্রবণ করে আর এ
সময় তার হাতে
খাদ্যের পাত্র থাকে, সে যেন আযানের কারণে
খাদ্য গ্রহণ বন্ধ না করে
যতক্ষণ না সে তদ্বারা স্বীয় প্রয়োজন পূর্ণ না
করে”। [88]
দিনের বেলায় (নফল) সাওমের নিয়ত করলে
উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আবু
দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন,
« ﻋِﻨْﺪَﻛُﻢْ ﻃَﻌَﺎﻡٌ؟ ﻓَﺈِﻥْ ﻗُﻠْﻨَﺎ: ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ: « ﻓَﺈِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ ﻳَﻮْﻣِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﻓَﻌَﻠَﻪُ ﺃَﺑُﻮ ﻃَﻠْﺤَﺔَ، ﻭَﺃَﺑُﻮ
ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻭَﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻭَﺣُﺬَﻳْﻔَﺔُ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻢْ »
“ঘরে কি খাদ্য আছে? যদি আমরা বলতাম না, তবে
তিনি বলতেন তাহলে আজকে আমি সাওম
পালনকারী। এমনিভাবে আবু তালহা, আবু হুরাইরা,
ইবন আব্বাস ও হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম এ কাজ
করতেন।” [89]
সালামাহ ইবন আকওয়া‘ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﻌَﺚَ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻳُﻨَﺎﺩِﻱ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ ﺇِﻥَّ ﻣَﻦْ ﺃَﻛَﻞَ
ﻓَﻠْﻴُﺘِﻢَّ ﺃَﻭْ ﻓَﻠْﻴَﺼُﻢْ، ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﻛُﻞْ ﻓَﻼَ ﻳَﺄْﻛُﻞْ »
“আশুরার দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে এ বলে লোকদের মধ্যে
ঘোষণা দেওয়ার জন্য পাঠালেন, যে ব্যক্তি খেয়ে
ফেলেছে সে যেন পূর্ণ করে নেয় অথবা বলেছেন, সে
যেন সাওম আদায় করে নেয় আর যে এখনো খায় নি
সে যেন আর না খায়”। [90]
সাওম পালনকারী জুনূবী (অপবিত্র) অবস্থায় সকাল
করলে
মারওয়ান রহ. থেকে বর্ণিত যে, ‘আয়শা এবং উম্মে
সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা তাকে সংবাদ
দিয়েছেন,
« ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺪْﺭِﻛُﻪُ ﺍﻟﻔَﺠْﺮُ ﻭَﻫُﻮَ ﺟُﻨُﺐٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻠِﻪِ، ﺛُﻢَّ
ﻳَﻐْﺘَﺴِﻞُ، ﻭَﻳَﺼُﻮﻡُ »
“নিজ নিজ স্ত্রীর সাথে মিলনজনিত জুনূবী
অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ফজরের সময় হয়ে যেত। তখন তিনি
গোসল করতেন এবং সাওম পালন করতেন।” [91]
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তাঁর
আলোচনায় বলতে শুনেছি যে,
«ﻣَﻦْ ﺃَﺩْﺭَﻛَﻪُ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺼُﻢْ »، ﻓَﺬَﻛَﺮْﺕُ ﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻌَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ ﻟِﺄَﺑِﻴﻪِ ﻓَﺄَﻧْﻜَﺮَ
ﺫَﻟِﻚَ، ﻓَﺎﻧْﻄَﻠَﻖَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﻭَﺍﻧْﻄَﻠَﻘْﺖُ ﻣَﻌَﻪُ، ﺣَﺘَّﻰ ﺩَﺧَﻠْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻭَﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ، ﻓَﺴَﺄَﻟَﻬُﻤَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﻋَﻦْ ﺫَﻟِﻚَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻜِﻠْﺘَﺎﻫُﻤَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺣُﻠُﻢٍ، ﺛُﻢَّ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺎﻧْﻄَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﺩَﺧَﻠْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺮْﻭَﺍﻥَ، ﻓَﺬَﻛَﺮَ
ﺫَﻟِﻚَ ﻟَﻪُ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣَﺮْﻭَﺍﻥُ: ﻋَﺰَﻣْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﺫَﻫَﺒْﺖَ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻓَﺮَﺩَﺩْﺕَ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣَﺎ ﻳَﻘُﻮﻝُ: ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺠِﺌْﻨَﺎ ﺃَﺑَﺎ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮٍ ﺣَﺎﺿِﺮُ ﺫَﻟِﻚَ ﻛُﻠِّﻪِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺬَﻛَﺮَ ﻟَﻪُ ﻋَﺒْﺪُ
ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ: ﺃَﻫُﻤَﺎ ﻗَﺎﻟَﺘَﺎﻩُ ﻟَﻚَ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻧَﻌَﻢْ، ﻗَﺎﻝَ: ﻫُﻤَﺎ ﺃَﻋْﻠَﻢُ، ﺛُﻢَّ ﺭَﺩَّ ﺃَﺑُﻮ
ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞِ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺒَّﺎﺱِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ: ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺫَﻟِﻚَ
ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞِ، ﻭَﻟَﻢْ ﺃَﺳْﻤَﻌْﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺮَﺟَﻊَ ﺃَﺑُﻮ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻋَﻤَّﺎ
ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ، ﻗُﻠْﺖُ ﻟِﻌَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻤَﻠِﻚِ : ﺃَﻗَﺎﻟَﺘَﺎ: ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ
ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺣُﻠُﻢٍ ﺛُﻢَّ ﻳَﺼُﻮﻡُ »
“জানাবাত (অপবিত্র) অবস্থায় কারো ভোর হলে
তার সাওম হবে না। এরপর এ কথাটি আমি আবদুর
রহমান ইবন হারিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট
বর্ণনা করলাম। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করলেন।
তারপর আব্দুর রহমান চললেন। আমিও তাঁর সাথে
সাথে চললাম। আমরা ‘আয়েশা এবং উম্মে সালামা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার নিকট গেলাম। এরপর আব্দুর
রহমান তাঁদের উভয়কে এ সমন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন।
তারা বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইহতিলাম ব্যাতিরেকে ও জানাবাতের অবস্থায়
ভোর করতেন এবং সাওম পালন করতেন। এরপর আমরা
মারওয়ানের নিকট আসলাম এবং আব্দুর রহমান তার
সাথে এ নিয়ে আলোচনা করলেন। এরপর মারওয়ান
বললেন আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, তুমি আবু
হুরায়রার নিকট যাও এবং তার কথাটি রদ করে দাও।
এরপর আমি আবু হুরায়রার নিকট গেলাম। এ সময় আবু
বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবদুর রহমানের সাথে
ছিলেন। আব্দুর রহমান এ নিয়ে আবু হুরায়রার সঙ্গে
আলোচনা করলেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বললেন, তোমার নিকট তাঁরা উভয়েই কি এ কথা
বলেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, তাঁরা উভয়েই এ কথা
বলেছেন। তখন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বললেন, বস্তুত তাঁরাই সর্বাধিক অবগত। তারপর আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর এ কথাটিকে ফযল
ইবন আব্বাসের প্রতি সম্পর্কিত করে বললেন আমি এ
কথাটি ফযলের (ইবন আব্বাস) থেকে শুনেছিলাম,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনি
নি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আবু হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ বিষয়ে তাঁর মত পরিবর্তন
করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আব্দুল মালিককে
জিজ্জাসা করলাম। তারা রমযানের কথা বলেছে
কি? তিনি বললেন হ্যাঁ অনুরূপই নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহতিলাম ব্যতিরেকেও
জানাবাত অবস্থায় ভোর করতেন। এরপর সাওম পালন
করতেন।” [92]
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
« ﺃَﻥَّ ﻣَﺮْﻭَﺍﻥَ ﺃَﺭْﺳَﻠَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻳَﺴْﺄَﻝُ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ، ﺃَﻳَﺼُﻮﻡُ؟
ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ: « ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﻣِﻦْ ﺟِﻤَﺎﻉٍ، ﻟَﺎ ﻣِﻦْ ﺣُﻠُﻢٍ، ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ
ﻳُﻔْﻄِﺮُ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻘْﻀِﻲ »
“একদা মারওয়ান তাকে উম্মে সালামা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট পাঠালেন ঐ ব্যক্তি
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য যার জানাবাত
অবস্থায় ভোর হলো, সে সাওম পালন করতে পারবে
কি? তিনি বললেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইহতিলাম ব্যতিরেকে
স্ত্রী সহবাসের কারণে গোসল ফরয হওয়া অবস্থায়
ভোর হতো। এরপর সাওম ভেঙ্গে ইফতারও করতেন
করতেন না এবং সাওমের কাযাও করতেন না”। [93]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
« ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﺟَﺎﺀَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺴْﺘَﻔْﺘِﻴﻪِ، ﻭَﻫِﻲَ ﺗَﺴْﻤَﻊُ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀِ ﺍﻟْﺒَﺎﺏِ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺗُﺪْﺭِﻛُﻨِﻲ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺟُﻨُﺐٌ، ﺃَﻓَﺄَﺻُﻮﻡُ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: « ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺗُﺪْﺭِﻛُﻨِﻲ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺟُﻨُﺐٌ ﻓَﺄَﺻُﻮﻡُ » ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻟَﺴْﺖَ ﻣِﺜْﻠَﻨَﺎ، ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠﻪِ، ﻗَﺪْ ﻏَﻔَﺮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻚَ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻚَ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﺄَﺧَّﺮَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﻭَﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺄَﺭْﺟُﻮ ﺃَﻥْ ﺃَﻛُﻮﻥَ
ﺃَﺧْﺸَﺎﻛُﻢْ ﻟِﻠَّﻪِ، ﻭَﺃَﻋْﻠَﻤَﻜُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﺗَّﻘِﻲ »
“ফতোয়া জিজ্ঞাসা করার জন্য এক ব্যক্তি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট
আসলো। এ সময় তিনি দরজার পেছন থেকে কথাগুলো
শুনছিলেন। লোকটি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ!
জানাবাত অবস্থায় আমার ফজরের সালাতের সময়
হয়ে যায়, এমতাবস্থায় আমি সাওম পালন করতে
পারি কি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জানাবাত অবস্থায়
আমারও ফজরের সালাতের সময় হয়ে যায় আমি তো
সাওম পালন করি। এরপর লোকটি বলল, হে আল্লাহর
রাসূল! আপনি তো আমাদের মতো নন। আল্লাহ
তা‘আলা আপনার পূর্বাপর সমুদয় গুনাহ ক্ষমা করে
দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ!
আমার আশা, আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে
সর্বাধিক ভয় করি এবং আমি সর্বাধিক অবগত ঐ
বিষয় সম্পর্কে যা থেকে আমার বিরত থাকা
আবশ্যক”। [94]
সুলাইমান ইবন ইয়াসার থেকে বর্ণিত,
«ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﺄَﻝَ ﺃُﻡَّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﺃَﻳَﺼُﻮﻡُ، ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﺣْﺘِﻠَﺎﻡٍ، ﺛُﻢَّ ﻳَﺼُﻮﻡُ »
“তিনি উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে ঐ
ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে জানাবাত
অবস্থায় ভোর করলো। সে কি সাওম পালন করবে?
তিনি (উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)
বলেন, রমযান মাসে ইহতিলাম ছাড়াই স্ত্রী
সহবাসের কারণে জানাবাত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভোর
হতো, এরপর তিনি সাওম পালন করতেন”। [95]
সাওম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,
«ﻳَﺤْﺮُﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓَﺮْﺟُﻬَﺎ »
“যৌনাঙ্গ দিয়ে সহবাস করা হারাম।”
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﻘَﺒِّﻞُ ﻭَﻳُﺒَﺎﺷِﺮُ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺃَﻣْﻠَﻜَﻜُﻢْ ﻟِﺈِﺭْﺑِﻪِ، ﻭَﻗَﺎﻝَ:
ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﴿ﻣََٔﺎﺭِﺏُ﴾ [ﻃﻪ: ١٨ ] ﺣَﺎﺟَﺔٌ، ﻗَﺎﻝَ ﻃَﺎﻭُﺱٌ : ﴿ﻏَﻴۡﺮِ ﺃُﻭْﻟِﻲ ﭐﻟۡﺈِﺭۡﺑَﺔِ﴾ [ ﺍﻟﻨﻮﺭ:
٣١] ﺍﻷَﺣْﻤَﻖُ ﻻَ ﺣَﺎﺟَﺔَ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমের
অবস্থায় চুমু খেতেন এবং গায়ে গা লাগাতেন। তবে
তিনি তাঁর প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চাইতে
অধিক সক্ষম ছিলেন। ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ﻣََٔﺎﺭِﺏُ মানে হাজত বা
চাহিদা। তাউস রহ. বলেন, ﻏَﻴۡﺮِ ﺃُﻭْﻟِﻲ ﭐﻟۡﺈِﺭۡﺑَﺔِ মানে
বোধহীন, যার মেয়েদের প্রতি কোনো খাহিশ
নেই।”[96]
সাওম অবস্থায় চুম্বন করা
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﻴُﻘَﺒِّﻞُ ﺑَﻌْﺾَ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﺛُﻢَّ ﺿَﺤِﻜَﺖْ »
“সাওম পালন অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর কোনো কোনো স্ত্রীকে চুমু
খেতেন। (এ কথা বলে) ‘আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হেসে দিলেন।” [97]
উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺑَﻴْﻨَﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺨَﻤِﻴﻠَﺔِ، ﺇِﺫْ ﺣِﻀْﺖُ ﻓَﺎﻧْﺴَﻠَﻠْﺖُ،
ﻓَﺄَﺧَﺬْﺕُ ﺛِﻴَﺎﺏَ ﺣِﻴﻀَﺘِﻲ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻣَﺎ ﻟَﻚِ ﺃَﻧَﻔِﺴْﺖِ؟ ﻗُﻠْﺖُ: ﻧَﻌَﻢْ، ﻓَﺪَﺧَﻠْﺖُ ﻣَﻌَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺨَﻤِﻴﻠَﺔِ ﻭَﻛَﺎﻧَﺖْ
ﻫِﻲَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻐْﺘَﺴِﻼَﻥِ ﻣِﻦْ ﺇِﻧَﺎﺀٍ ﻭَﺍﺣِﺪٍ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳُﻘَﺒِّﻠُﻬَﺎ ﻭَﻫُﻮَ
ﺻَﺎﺋِﻢٌ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সঙ্গে একই চাঁদরে আমি ছিলাম। এমন সময় আমার
হায়েয শুরু হলো। তখন আমি আমার হায়েযের কাপড়
পরিধান করলাম। তিনি বললেন, তোমার কী
হলো? তোমার কি হায়েয দেখো দিয়েছে? আমি
বললাম, হ্যাঁ। তারপর আমি আবার তাঁর সঙ্গে
চাঁদরের ভিতর ঢুকে পড়লাম। তিনি এবং রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র
থেকে গোসল করতেন এবং সাওম পালন অবস্থায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁকে চুমু দিতেন।” [98]
হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﻘَﺒِّﻞُ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাওম অবস্বায় চুমু দিতেন।” [99]
উমার ইবন আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত,
«ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﺄَﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﺃَﻳُﻘَﺒِّﻞُ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: «ﺳَﻞْ ﻫَﺬِﻩِ » ﻟِﺄُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮَﺗْﻪُ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
ﻳَﺼْﻨَﻊُ ﺫَﻟِﻚَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻗَﺪْ ﻏَﻔَﺮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻚَ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻚَ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﺄَﺧَّﺮَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ
ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: «ﺃَﻣَﺎ ﻭَﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺄَﺗْﻘَﺎﻛُﻢْ ﻟِﻠَّﻪِ، ﻭَﺃَﺧْﺸَﺎﻛُﻢْ ﻟَﻪُ »
“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, সাওম
পালনকারী ব্যক্তি চুম্বন করতে পারে কি? তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে বললেন, কথাটি উম্মে সালমাকে জিজ্ঞাসা
কর। (তাকে জিজ্ঞাসা করার পর) তিনি বললেন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরূপ করেন। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল!
আল্লাহ তো আপনার আগে পরের সমূদয় গুনাহ ক্ষমা
করে দিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, শোন!
আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহ তা‘আলাকে
তোমাদের সকলের চেয়ে অধিক ভয় করি”। [100]
স্বামীর অনুমতিক্রমে স্ত্রীর নফল সাওম পালন
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলেন,
« ﻻَ ﺗَﺼُﻮﻡُ ﺍﻟﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻭَﺑَﻌْﻠُﻬَﺎ ﺷَﺎﻫِﺪٌ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺈِﺫْﻧِﻪِ »
“কোনো স্ত্রী স্বামীর উপস্থিতিতে তাঁর অনুমতি
ছাড়া নফল সাওম রাখবে না”। [101]
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻌِﻴﺪٍ ﻗَﺎﻝَ: ﺟَﺎﺀَﺕِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻋِﻨْﺪَﻩُ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ:
ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺇِﻥَّ ﺯَﻭْﺟِﻲ ﺻَﻔْﻮَﺍﻥَ ﺑْﻦَ ﺍﻟْﻤُﻌَﻄَّﻞِ، ﻳَﻀْﺮِﺑُﻨِﻲ ﺇِﺫَﺍ ﺻَﻠَّﻴْﺖُ، ﻭَﻳُﻔَﻄِّﺮُﻧِﻲ ﺇِﺫَﺍ ﺻُﻤْﺖُ،
ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺻَﻠَﺎﺓَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ، ﻗَﺎﻝَ ﻭَﺻَﻔْﻮَﺍﻥُ ﻋِﻨْﺪَﻩُ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺴَﺄَﻟَﻪُ ﻋَﻤَّﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺃَﻣَّﺎ ﻗَﻮْﻟُﻬَﺎ ﻳَﻀْﺮِﺑُﻨِﻲ ﺇِﺫَﺍ ﺻَﻠَّﻴْﺖُ، ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﺗَﻘْﺮَﺃُ ﺑِﺴُﻮﺭَﺗَﻴْﻦِ ﻭَﻗَﺪْ ﻧَﻬَﻴْﺘُﻬَﺎ،
ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﻟَﻮْ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺳُﻮﺭَﺓً ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﻟَﻜَﻔَﺖِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ »، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻗَﻮْﻟُﻬَﺎ: ﻳُﻔَﻄِّﺮُﻧِﻲ، ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﺗَﻨْﻄَﻠِﻖُ
ﻓَﺘَﺼُﻮﻡُ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺭَﺟُﻞٌ ﺷَﺎﺏٌّ، ﻓَﻠَﺎ ﺃَﺻْﺒِﺮُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ: « ﻟَﺎ
ﺗَﺼُﻮﻡُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺯَﻭْﺟِﻬَﺎ »، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻗَﻮْﻟُﻬَﺎ: ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺎ ﺃُﺻَﻠِّﻲ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ، ﻓَﺈِﻧَّﺎ ﺃَﻫْﻞُ
ﺑَﻴْﺖٍ ﻗَﺪْ ﻋُﺮِﻑَ ﻟَﻨَﺎ ﺫَﺍﻙَ، ﻟَﺎ ﻧَﻜَﺎﺩُ ﻧَﺴْﺘَﻴْﻘِﻆُ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ، ﻗَﺎﻝَ: « ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺍﺳْﺘَﻴْﻘَﻈْﺖَ
ﻓَﺼَﻞِّ »
“জনৈকা মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের খেদমতে আগমন করে এবং এ সময়
আমরাও তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলাম। সে মহিলা
বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার স্বামী সাফওয়ান
ইবন মু‘আত্তাল, যখন আমি সালাত পড়ি তখন
আমাকে মারধর করে আর আমি সাওম পালন করলে
সে আমাকে সাওম ভাঙ্গতে বলে। অথচ সে সে
সূর্যোদয়ের পূর্বে কখনো ফজরের সালাত পড়ে না ।
বর্ণনাকারী বলেন, সাফওয়ানও তাঁর নিকট উপস্থিত
ছিলেন। তিনি তাঁর নিকট উক্ত মহিলার অভিযোগ
সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইয়া
রাসূলুল্লাহ্! তার বক্তব্য ‘আমাকে মারধর করে, যখন
আমি সালাত আদায় করি।’ প্রকৃত ব্যাপার এই যে, সে
এমন (দীর্ঘ) দু’টি সূরা (সালাতের মধ্যে) পড়ে, যা
যা পড়তে তাকে আমি নিষেধ করি। বর্ণনাকারী
বলেন, তিনি বলেছেন, যদি কেউ (ছোট) একটি সূরা
পড়ে, তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। আর তার বক্তব্য
‘আমি সাওম পালন করলে সে তা ভাঙ্গতে বলে।’
ব্যাপার এই যে, সে সব সময়ই (নফল) সাওম রাখে। আর
আমি যুবক হওয়ার কারণে (স্ত্রী সহবাস ব্যতীত)
থাকতে পারি না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ থেকে কোনো
স্ত্রীলোক স্বামীর অনুমতি ব্যতীত (নফল) সাওম
রাখতে পারবে না। আর তার বক্তব্য যে, ‘আমি
সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজরের) সালাত আদায় করি না।’
এ সম্পর্কে আমার বক্তব্য এই যে, আমরা পানি
সরবরাহকারী পরিবারের লোক। রাতের প্রথম ভাগে
কাজ করি, শেষ রাতে নিদ্রা যাই এবং এটাই
আমাদের অভ্যাস। এ জন্য আমরা সূর্যোদয় হওয়া
ব্যতীত নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতে পারি না। তিনি
বলেন, তুমি যখই নিদ্রা থেকে জাগ্রত হবে তখনই
সালাত পড়ে নিবে।” [102]
সাওম পালনকারীর গোসল করা
সাওমরত অবস্থায় ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা
একটি কাপড় ভিজিয়ে গায়ে দিতেন। শা‘বী রহ.
গোসলখানায় প্রবেশ করেছেন। (অর্থাৎ পানি দিযে
গোসল করেছেন।) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বলেন, হাঁড়ি থেকে কিছু বা অন্য কোনো জিনিস
চেটে স্বাদ দেখায় কোনো দোষ নেই। হাসান রহ.
বলেন, সাওম পালনকারীর কুলি করা এবং ঠাণ্ডা
লাগান দোষনীয় নয়। ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন, তোমাদের কেউ সাওম পালন করলে সে
যেন সকালে তেল লাগায় এবং চুল আঁচড়িয়ে নেয়।
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমার একটি
হাউজ আছে, আমি সাওম পালন অবস্থায় তাতে
প্রবেশ করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি সাওম পালন
অবস্থায় মিসওয়াক করতেন। ইবন উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সাওম পালন অবস্থায় দিনের
প্রথম ভাগে এবং শেষ ভাগে মিসওয়াক করতেন।
‘আতা রহ. বলেন, থুতু গিলে ফেললে সাওম ভঙ্গ
হয়েছে বলা যায় না। ইবন সীরীন রহ. বলেন, কাঁচা
বা ভেজা মিসওয়াক ব্যবহারে কোনো দোষ নেই।
তাকে প্রশ্ন করা হলো, কাঁচা মিসওয়াকের তো
স্বাদ রয়েছে? তিনি বলেন, পানিরও তো স্বাদ
আছে অথচ এ পানি দিয়েই তুমি কুলি কর। আনাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, হাসান রহ. ও ইবরাহীম রহ.
সাওম পালনকারীর সুরমা ব্যবহারে কোনো দোষ
মনে করতেন না। [103]
‘উরওয়াহ এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ « ﻳُﺪْﺭِﻛُﻪُ ﺍﻟﻔَﺠْﺮُ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺣُﻠْﻢٍ، ﻓَﻴَﻐْﺘَﺴِﻞُ
ﻭَﻳَﺼُﻮﻡُ »
“রমযান মাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর ভোর হতো ইহতিলাম ব্যতীত
(জুনুবী অবস্থায়)। তখন তিনি গোসল করতেন এবং
সাওম পালন করতেন।” [104 ]
আবু বাকর ইবন ‘আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﻧَﺎ ﻭَﺃَﺑِﻲ ﻓَﺬَﻫَﺒْﺖُ ﻣَﻌَﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﺩَﺧَﻠْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﻋَﻠَﻰ
ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻴُﺼْﺒِﺢُ ﺟُﻨُﺒًﺎ ﻣِﻦْ ﺟِﻤَﺎﻉٍ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﺣْﺘِﻼَﻡٍ، ﺛُﻢَّ
ﻳَﺼُﻮﻣُﻪُ ﺛُﻢَّ ﺩَﺧَﻠْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ : ﻣِﺜْﻞَ ﺫَﻟِﻚَ »
“আমি আমার পিতার সঙ্গে রওয়ানা হয়ে ‘আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট পৌছলাম। তিনি
বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি
ইহতিলাম ছাড়া স্ত্রী সহবাসের কারণে জুনূবী
অবস্থায় সকাল পর্যন্ত থেকেছেন এবং এরপর সাওম
পালন করেছেন। তারপর আমরা উম্মে সালামা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট গেলাম। তিনিও অনুরূপ
কথাই বললেন।
আবু জা‘ফর বলেন, ‘আব্দুল্লাহ রহ.-কে আমি
জিজ্ঞাসা করলাম, কোনো ব্যক্তি সাওম ভঙ্গ করলে
সে কি স্ত্রী সহবাসকারীর মতো কাফফারা আদায়
করবে? তিনি বললেন, না; তুমি কি সে হাদীসগুলো
সম্পর্কে জান না যাতে বর্ণিত আছে যে, যুগ যুগ ধরে
সাওম পালন করলেও তার কাযা আদায় হবে না? [105]
সাওম পালনকারী যদি ভুলে কিছু খেলে বা পান
করলে
‘আতা রহ. বলেন, নাকে পানি দিতে গিয়ে যদি তা
কন্ঠনালীতে ঢুকে যায়, আর সে ফিরাতে সক্ষম না
হয় তা হলে কোনো দোষ নেই। হাসান রহ. বলেন,
সাওম পালনকারী ব্যক্তির কন্ঠনালীতে মাছি ঢুকে
পড়লে তাঁর কিছু করতে হবে না। হাসান ও মুজাহিদ
রহ. বলেছেন, সাওম পালনকারী ব্যক্তি যদি
ভুলবশতঃ স্ত্রী সহবাস করে ফেলে, তবে তাঁর কিছু
করতে হবে না।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,
«ﺇِﺫَﺍ ﻧَﺴِﻲَ ﻓَﺄَﻛَﻞَ ﻭَﺷَﺮِﺏَ، ﻓَﻠْﻴُﺘِﻢَّ ﺻَﻮْﻣَﻪُ، ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻃْﻌَﻤَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺳَﻘَﺎﻩُ »
“সাওমদার ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে
ফেলে তাহলে সে যেন তার সাওম পুরা করে নেয়।
কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।” [106]
সাওম পালনকারীর শুকনো ও ভেজা মিসওয়াক
ব্যবহার করার হুকুম
‘আমির ইবন রবী‘আ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাওম পালন অবস্থায়
অসংখ্য বার মিসওয়াক করতে দেখেছি। আবু হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না
করতাম তবে প্রতিবার অযুর সময় আমি তাদেরকে
মিসওয়াকের নির্দেশ দিতাম। জাবির ও যায়েদ ইবন
খালিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সূত্রে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ
বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি সাওম পালনকারী ও
সাওম পালনকারী নয়, তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য
করেন নি। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা
করেন যে, মিসওয়াক করায় রয়েছে মুখের পবিত্রতা ও
আল্লাহর সন্তুষ্টি। ‘আতা ও কাতাদাহ রহ. বলেছেন,
সাওম পালনকারী তার মুখের থুতু গিলে ফেলতে
পারে।
হুমরান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﻓْﺮَﻍَ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﺛُﻢَّ ﺗَﻤَﻀْﻤَﺾَ ﻭَﺍﺳْﺘَﻨْﺜَﺮَ، ﺛُﻢَّ
ﻏَﺴَﻞَ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﺛُﻢَّ ﻏَﺴَﻞَ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟﻴُﻤْﻨَﻰ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻤَﺮْﻓِﻖِ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﺛُﻢَّ ﻏَﺴَﻞَ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟﻴُﺴْﺮَﻯ ﺇِﻟَﻰ
ﺍﻟﻤَﺮْﻓِﻖِ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﺛُﻢَّ ﻣَﺴَﺢَ ﺑِﺮَﺃْﺳِﻪِ، ﺛُﻢَّ ﻏَﺴَﻞَ ﺭِﺟْﻠَﻪُ ﺍﻟﻴُﻤْﻨَﻰ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﺛُﻢَّ ﺍﻟﻴُﺴْﺮَﻯ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ:
ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻧَﺤْﻮَ ﻭَﺿُﻮﺋِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ
ﻭُﺿُﻮﺋِﻲ ﻫَﺬَﺍ، ﺛُﻢَّ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﻻَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻓِﻴﻬِﻤَﺎ ﺑِﺸَﻲْﺀٍ، ﺇِﻟَّﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ
ﺫَﻧْﺒِﻪِ »
“আমি ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে অযু করতে
দেখেছি। তিনি তিনবার হাতের উপর পানি
ঢাললেন। এরপর তিনি কুলি করলেন, নাকে পানি
দিলেন। তারপর তিনবার চেহারা (মুখমণ্ডল) ধৌত
করলেন। এরপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত
করলেন এবং বামহাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত
করলেন। এরপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। তারপর
ডান পা তিনবার ধৌত করলেন তারপর বাম
পা তিনবার ধৌত করলেন। এরপর বললেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
অযু করতে দেখেছি আমার এ অযুর মতোই। এরপর
তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ অযুর মতো অযু
করে দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করবে এবং মনে
মনে কোনো কিছুর চিন্তা ভাবনায় লিপ্ত হবে
না, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া
হবে।” [107]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
যখন অযু করবে তখন নাকের ছিদ্র দিয়ে পানি টেনে
নিবে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে
সাওম পালনকারী ও সাওম পালনকারী
নয় এতদোভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেন নি।
হাসান রহ. বলেন, সাওম পালনকারীর জন্য নাকে
ঔষধ ব্যবহার করায় দোষ নেই যদি তা কণ্ঠনালীতে
না পৌঁছে এবং সে সুরমা ব্যবহার করতে পারবে।
‘আতা রহ. বলেন, কুলি করে মুখের পানি ফেলে
দেওয়ার পর থুতু এবং মুখের অবশিষ্ট পানি গিলে
ফেলায় কোনো ক্ষতি নেই এবং সাওম পালনকারী
গোন্দ (আঠা) চিবাবে না। গোন্দ চিবিয়ে যদি কেউ
থুতু গিলে ফেলে, তাহলে তার সাওম নষ্ট হয়ে যাবে,
আমি এ কথা বলছি না, তবে এরূপ করা থেকে নিষেধ
করা উচিত।
লাকীত ইবন সাবিরা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর
পিতা বর্ণনা করেন,
«ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻲ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻮُﺿُﻮﺀِ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺳْﺒِﻎِ ﺍﻟﻮُﺿُﻮﺀَ، ﻭَﺧَﻠِّﻞْ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻷَﺻَﺎﺑِﻊِ،
ﻭَﺑَﺎﻟِﻎْ ﻓِﻲ ﺍﻻِﺳْﺘِﻨْﺸَﺎﻕِ، ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ ».
“আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অযু সম্পর্কে জ্ঞাত
করুন। তিনি বললেন, অযু পরিপূর্ণভাবে করবে।
আঙ্গুলসমূহের মাঝে খিলাল করবে। খুব উত্তমরূপে
নাকে পানি ব্যবহার করবে, তবে সাওমরত থাকলে
ভিন্ন কথা।” [108]
রমযানে দিনের বেলায় সহবাস করলে
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে একটি মরফু‘
হাদীস বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ওযর এবং রোগ
ব্যতীত রমযানের একটি সাওম ভেঙ্গে ফেলল, তার
সারা জীবনের সাওমের দ্বারাও এর কাযা আদায়
হবে না, যদিও সে সারা জীবন সাওম পালন করে।
ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও অনুরূপ কথাই
বলেছেন। সা‘ঈদ ইবন মুসায়্যিব, শা‘বী, ইবন
যোবায়ের, ইবরাহীম, কাতাদা ও হাম্মাদ রহ.
বলেছেন, তার স্থলে একদিন কাযা করবে।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺇِﻥَّ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺇِﻧَّﻪُ ﺍﺣْﺘَﺮَﻕَ، ﻗَﺎﻝَ: « ﻣَﺎ ﻟَﻚَ؟ » ، ﻗَﺎﻝَ:
ﺃَﺻَﺒْﺖُ ﺃَﻫْﻠِﻲ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﺄُﺗِﻲَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻤِﻜْﺘَﻞٍ ﻳُﺪْﻋَﻰ ﺍﻟﻌَﺮَﻕَ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃَﻳْﻦَ ﺍﻟﻤُﺤْﺘَﺮِﻕُ » ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻧَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: ﺗَﺼَﺪَّﻕْ ﺑِﻬَﺬَﺍ »
“এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, সে তো জ্বলে
গেছে। তিনি বললেন, তোমার কি হয়েছে? লোকটি
বলল, রমযানে আমি স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। এ
সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কাছে (খেজুর ভর্তি) ঝুড়ি আসলো, যাকে ‘আরাক (১৫
সা‘ পরিমাণ) বলা হয়। তখন নবীসাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অগ্নিদগ্ধ লোকটি
কোথায়? লোকটি বলল, আমি। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো সদকা করে
দাও”। [109]
রমযানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করলে সদকা
দেওয়ার কিছু না থাকলে, সে যেন নিজে নিজেকে
সদকা দিয়ে কাফফারাস্বরূপ আদায় করে
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺑَﻴْﻨَﻤَﺎ ﻧَﺤْﻦُ ﺟُﻠُﻮﺱٌ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺇِﺫْ ﺟَﺎﺀَﻩُ ﺭَﺟُﻞٌ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻫَﻠَﻜْﺖُ. ﻗَﺎﻝَ: « ﻣَﺎ ﻟَﻚَ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻗَﻌْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﻫَﻞْ ﺗَﺠِﺪُ ﺭَﻗَﺒَﺔً ﺗُﻌْﺘِﻘُﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻬَﻞْ ﺗَﺴْﺘَﻄِﻴﻊُ ﺃَﻥْ ﺗَﺼُﻮﻡَ ﺷَﻬْﺮَﻳْﻦِ
ﻣُﺘَﺘَﺎﺑِﻌَﻴْﻦِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻻَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻓَﻬَﻞْ ﺗَﺠِﺪُ ﺇِﻃْﻌَﺎﻡَ ﺳِﺘِّﻴﻦَ ﻣِﺴْﻜِﻴﻨًﺎ . ﻗَﺎﻝَ: ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻤَﻜَﺚَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﺒَﻴْﻨَﺎ ﻧَﺤْﻦُ ﻋَﻠَﻰ ﺫَﻟِﻚَ ﺃُﺗِﻲَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻌَﺮَﻕٍ ﻓِﻴﻬَﺎ
ﺗَﻤْﺮٌ ﻭَﺍﻟﻌَﺮَﻕُ ﺍﻟﻤِﻜْﺘَﻞُ ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻳْﻦَ ﺍﻟﺴَّﺎﺋِﻞُ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﻧَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: « ﺧُﺬْﻫَﺎ، ﻓَﺘَﺼَﺪَّﻕْ ﺑِﻪِ ﻓَﻘَﺎﻝَ
ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ: ﺃَﻋَﻠَﻰ ﺃَﻓْﻘَﺮَ ﻣِﻨِّﻲ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ؟ ﻓَﻮَﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﻻَﺑَﺘَﻴْﻬَﺎ - ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﺤَﺮَّﺗَﻴْﻦِ ﺃَﻫْﻞُ
ﺑَﻴْﺖٍ ﺃَﻓْﻘَﺮُ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺑَﻴْﺘِﻲ، ﻓَﻀَﺤِﻚَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺣَﺘَّﻰ ﺑَﺪَﺕْ ﺃَﻧْﻴَﺎﺑُﻪُ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ:
«ﺃَﻃْﻌِﻤْﻪُ ﺃَﻫْﻠَﻚَ »
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক
ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ধ্বংস
হয়ে গিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কী হয়েছে? সে
বলল, আমি সাওম পালন অবস্থায় আমার স্ত্রীর
সাথে মিলিত হয়েছি। রাসূলুল্লাহ বললেন, আযাদ
করার মতো কোনো ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে
বলল, না। তিনি বললেন, তুমি কি একাধারে দু’মাস
সাওম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর
তিনি বললেন, ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে
কি? সে বলল, না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে
গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে
এক ‘আরাক পেশ করা হলো যাতে খেজুর ছিল।
‘আরাক হলো ঝুড়ি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে
বলল, আমি। তিনি বললেন, এগুলো নিয়ে সদকা করে
দাও। তখন লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার
চেয়েও বেশি অভাবগ্রস্ত কে সদকা করব? আল্লাহর
শপথ, মদীনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় (কালো পাথর
বিশিষ্ট) প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে
অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত
(আনইয়াব) দেখা গেল। এরপর তিনি বললেন এগুলো
তোমার পরিবারকে খাওয়াও”। [110]
রমযানে সাওম পালনকারী অবস্থা যে ব্যক্তি স্ত্রী
সহবাস করেছে সে ব্যক্তি কি কাফফারা থেকে তার
অভাবগ্রস্ত পরিবারকে খাওয়াতে পারবে?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺍﻵﺧَﺮَ ﻭَﻗَﻊَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗِﻪِ ﻓِﻲ
ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺃَﺗَﺠِﺪُ ﻣَﺎ ﺗُﺤَﺮِّﺭُ ﺭَﻗَﺒَﺔً؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺘَﺴْﺘَﻄِﻴﻊُ ﺃَﻥْ ﺗَﺼُﻮﻡَ ﺷَﻬْﺮَﻳْﻦِ
ﻣُﺘَﺘَﺎﺑِﻌَﻴْﻦِ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻓَﺘَﺠِﺪُ ﻣَﺎ ﺗُﻄْﻌِﻢُ ﺑِﻪِ ﺳِﺘِّﻴﻦَ ﻣِﺴْﻜِﻴﻨًﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺄُﺗِﻲَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻌَﺮَﻕٍ ﻓِﻴﻪِ ﺗَﻤْﺮٌ، ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟﺰَّﺑِﻴﻞُ، ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻃْﻌِﻢْ ﻫَﺬَﺍ ﻋَﻨْﻚَ ﻗَﺎﻝَ: ﻋَﻠَﻰ
ﺃَﺣْﻮَﺝَ ﻣِﻨَّﺎ، ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﻻَﺑَﺘَﻴْﻬَﺎ ﺃَﻫْﻞُ ﺑَﻴْﺖٍ ﺃَﺣْﻮَﺝُ ﻣِﻨَّﺎ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺄَﻃْﻌِﻤْﻪُ ﺃَﻫْﻠَﻚَ »
“এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, এই হতভাগা
রমযানে স্ত্রী সহবাস করেছে। তিনি বললেন, তুমি
কি একটি গোলাম আযাদ করতে পারবে? লোকটি
বলল, না। তিনি বললেন, তুমি কি ক্রমাগত দু’মাস
সাওম পালন করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি
বললেন, তুমি কি ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে
পারবে? সে বলল, না। এমতাবস্থায় নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
এক ‘আরাক অর্থাৎ এক ঝুড়ি খেজুর এল। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো
তোমার তরফ থেকে লোকদেরকে আহার করাও।
লোকটি বলল, আমার চেয়েও বেশি
অভাবগ্রস্তকে? অথচ মদীনার উভয় লাবার অর্থাৎ
হররার মধ্যবর্তী স্থলে আমার পরিবারের চেয়ে
অধিক অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তোমার
পরিবারকেই খাওয়াও”। [111]
সাওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো ও বমি করা
ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, ইয়াহইয়া ইবন সালিহ
রহ. আমাকে বলেছেন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বমি করলে সাওম
ভঙ্গ হয় না। কেননা এতে কিছু বের হয়, ভিতরে
প্রবেশ করে না। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে এও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, সাওম
ভঙ্গ হয়ে যাবে। প্রথম উক্তিটি বেশি সহীহ। ইবন
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ‘ইকরিমা রহ. বলেন,
কোনো কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে সাওম নষ্ট হয়।
কিন্তু বের হওয়ার কারণে নষ্ট হয় না। ইবন উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সাওম পালন অবস্থায়
শিঙ্গা লাগাতেন। অবশ্য পরবর্তী সময় তিনি দিনে
শিঙ্গা লাগানো ছেড়ে দিয়ে রাতে শিঙ্গা
লাগাতেন। আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাতে
শিঙ্গা লাগিয়েছেন। সা‘ঈদ, যায়েদ, ইবন আরকাম ও
উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম সম্পর্কে
বর্ণিত আছে যে, তারা সকলেই সাওম অবস্থায়
শিঙ্গা লাগাতেন। বুকায়র রহ. উম্মে ‘আলকামা রহ.
থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার সামনে শিঙ্গা লাগাতাম,
তিনি আমাদের নিষেধ করতেন না। হাসান রহ.
থেকে একাধিক বর্ণনাকারী সূত্রে মারফু‘ হাদীসে
আছে যে, শিঙ্গা প্রয়োগকারী এবং গ্রহণকারী
উভয়ের সাওমই নষ্ট হয়ে যাবে। ইমাম বুখারী রহ.
বলেন, ‘আইয়াশ রহ. হাসান রহ. থেকে আমার নিকট
অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এ
কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
বর্ণিত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি বললেন,
আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﺣْﺘَﺠَﻢَ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺤْﺮِﻡٌ، ﻭَﺍﺣْﺘَﺠَﻢَ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম
অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং সাওম পালন
অবস্থায়ও সিংগা লাগিয়েছেন”। [112]
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺍﺣْﺘَﺠَﻢَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম
পালন অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন”। [113]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে প্রশ্ন
করা হলো,
« ﺃَﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗَﻜْﺮَﻫُﻮﻥَ ﺍﻟﺤِﺠَﺎﻣَﺔَ ﻟِﻠﺼَّﺎﺋِﻢِ؟ ﻗَﺎﻝَ: « ﻻَ، ﺇِﻟَّﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﻞِ ﺍﻟﻀَّﻌْﻒِ »، ﻭَﺯَﺍﺩَ ﺷَﺒَﺎﺑَﺔُ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ
ﺷُﻌْﺒَﺔُ، ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ »
“আপনারা কি সাওম পালনকারীর শিঙ্গা লাগানো
অপছন্দ করতেন? তিনি বললেন, না। তবে দূর্বল হয়ে
যাবার কারণে অপছন্দ করতাম। শাবাবা রহ.
শু’বা, রহ. থেকে ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ “নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কথাটি
অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন”। [114]
সফর অবস্থায় সাওম পালন করা ও না করা
আবু ইসহাক আশ-শায়বানী থেকে বর্ণিত, তিনি ইবন
আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
শুনেছেন, তিনি বলেন,
«ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟِﺮَﺟُﻞٍ : ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟِﻲ، ﻗَﺎﻝَ:
ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟِﻲ »، ﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ؟ ﻗَﺎﻝَ:
ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟِﻲ، ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﻓَﺠَﺪَﺡَ ﻟَﻪُ ﻓَﺸَﺮِﺏَ، ﺛُﻢَّ ﺭَﻣَﻰ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻢُ
ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﺃَﻗْﺒَﻞَ ﻣِﻦْ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ، ﺗَﺎﺑَﻌَﻪُ ﺟَﺮِﻳﺮٌ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮِ ﺑْﻦُ ﻋَﻴَّﺎﺵٍ، ﻋَﻦِ
ﺍﻟﺸَّﻴْﺒَﺎﻧِﻲِّ، ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺃَﻭْﻓَﻰ ﻗَﺎﻝَ: ﻛُﻨْﺖُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ »
“কোনো এক সফরে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে
বললেন, সওয়ারী থেকে নেমে আমার জন্য ছাতু
গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সূর্য এখনো
ডুবে নি। তিনি বললেন, সওয়ারী থেকে নামো এবং
আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে সওয়ারী
থেকে নেমে ছাতু গুলিয়ে আনলে তিনি তা পান
করলেন এবং হাতের ইশারায় বললেন, যখন দেখবে
রাত এদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে তখন বুঝবে, সাওম
পালনকারী ব্যক্তির ইফতারের সময় হয়েছে। জাবীর
এবং আবু বকর ইবন ‘আইয়াশ শায়বানী থেকে, তিনি
ইবন আবু ‘আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে অনুরূপ
হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কোনো এক
সফরে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম”। [115]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﺣَﻤْﺰَﺓَ ﺑْﻦَ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺍﻷَﺳْﻠَﻤِﻲَّ ﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺮُﺩُ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡَ »
“হামযা ইবন ‘আমর আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি ক্রমাগত সাওম
পালন করছি”। [116]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,
« ﺃَﻥَّ ﺣَﻤْﺰَﺓَ ﺑْﻦَ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺍﻷَﺳْﻠَﻤِﻲَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺃَﺃَﺻُﻮﻡُ ﻓِﻲ
ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ؟ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻛَﺜِﻴﺮَ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻥْ ﺷِﺌْﺖَ ﻓَﺼُﻢْ، ﻭَﺇِﻥْ ﺷِﺌْﺖَ ﻓَﺄَﻓْﻄِﺮْ »
“হামযা ইবন ‘আমর আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
অধিক সাওম পালনে অভ্যস্থ ছিলেন। তিনি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
বললেন, আমি সফরেও কি সাওম পালন করতে
পারি? তিনি বললেন, ইচ্ছা করলে তুমি সাওম পালন
করতে পার, আবার ইচ্ছা করলে নাও করতে পার”। [117]
হামযা ইবন আমর আল-আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন,
« ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺃَﺟِﺪُ ﺑِﻲ ﻗُﻮَّﺓً ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ، ﻓَﻬَﻞْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺟُﻨَﺎﺡٌ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﻫِﻲَ ﺭُﺧْﺼَﺔٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻓَﻤَﻦْ ﺃَﺧَﺬَ ﺑِﻬَﺎ، ﻓَﺤَﺴَﻦٌ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣَﺐَّ ﺃَﻥْ
ﻳَﺼُﻮﻡَ ﻓَﻠَﺎ ﺟُﻨَﺎﺡَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ » ﻗَﺎﻝَ ﻫَﺎﺭُﻭﻥُ ﻓِﻲ ﺣَﺪِﻳﺜِﻪِ ﻫِﻲَ ﺭُﺧْﺼَﺔٌ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮْ : ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ
“হে আল্লাহর রাসূল! সফর অবস্থায়ও আমি আমার
মধ্যে সাওম রাখার মতো শক্তি রাখি। সাওম
রাখলে কি আমার কোনো অসুবিধা
আছে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, সাওম না রাখা মহান
আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সুযোগ বিশেষ। অতঃপর
যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো তার জন্য তা উত্তম। আর
যে ব্যক্তি সাওম রাখতে পছন্দ করল তার প্রতি এতে
কোনো প্রকার গুনাহ হবে না। হারুনের বর্ণিত
হাদীসে ﻫِﻲَ ﺭُﺧْﺼَﺔٌ এরপর ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ শব্দের উল্লেখ নেই”।
[118]
কাযা‘আ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺃَﺑَﺎ ﺳَﻌِﻴﺪٍ ﺍﻟْﺨُﺪْﺭِﻱَّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻭَﻫُﻮَ ﻣَﻜْﺜُﻮﺭٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺗَﻔَﺮَّﻕَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻋَﻨْﻪُ،
ﻗُﻠْﺖُ: ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺎ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻋَﻤَّﺎ ﻳَﺴْﺄَﻟُﻚَ ﻫَﺆُﻟَﺎﺀِ ﻋَﻨْﻪُ ﺳَﺄَﻟْﺘُﻪُ: ﻋَﻦِ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ:
ﺳَﺎﻓَﺮْﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﻜَّﺔَ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﺻِﻴَﺎﻡٌ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻨَﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﻗَﺪْ ﺩَﻧَﻮْﺗُﻢْ ﻣِﻦْ ﻋَﺪُﻭِّﻛُﻢْ، ﻭَﺍﻟْﻔِﻄْﺮُ ﺃَﻗْﻮَﻯ
ﻟَﻜُﻢْ » ﻓَﻜَﺎﻧَﺖْ ﺭُﺧْﺼَﺔً، ﻓَﻤِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ، ﻭَﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ، ﺛُﻢَّ ﻧَﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ ﺁﺧَﺮَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺇِﻧَّﻜُﻢْ
ﻣُﺼَﺒِّﺤُﻮ ﻋَﺪُﻭِّﻛُﻢْ، ﻭَﺍﻟْﻔِﻄْﺮُ ﺃَﻗْﻮَﻯ ﻟَﻜُﻢْ، ﻓَﺄَﻓْﻄِﺮُﻭﺍ ﻭَﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋَﺰْﻣَﺔً، ﻓَﺄَﻓْﻄَﺮْﻧَﺎ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﻘَﺪْ
ﺭَﺃَﻳْﺘُﻨَﺎ ﻧَﺼُﻮﻡُ، ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﻌْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ، ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ »
“একবার আমি আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর
নিকট গেলাম। তাঁর নিকট মানুষের খুব ভিড় ছিল।
যখন লোকজন পৃথক হয়ে এদিক ওদিক চলে গেল তখন
আমি বললাম, আমি আপনার নিকট ঐসব কথা
জিজ্ঞাসা করব, না যা লোকেরা জিজ্ঞাসা
করেছে। আমি তাকে সফরের অবস্থায় সাওম পালন
করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাথে সাওমরত অবস্থায় মক্কার
দিকে রওনা করলাম। এরপর একস্থানে আমরা অবতরণ
করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন তোমরা শত্রুদের
নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছ। এখন ইফতারই তোমাদের
জন্য শক্তিশালী থাকার উপায় এবং এ তোমাদের
জন্য বিশেষ এক অবকাশ। তখন আমাদের কতক লোক
সাওম পালন করল আবার কতক লোক সাওম ভঙ্গ করল।
এরপর আমরা অন্য এক স্থানে অবতরণ করলাম। তখন
তিনি বললেন ভোরেই তোমরা শত্রুর মুকাবিলা
করবে। সুতরাং সাওম ভঙ্গ করা তোমাদের জন্য
শক্তি বর্ধক। তাই তোমরা সাওম ভঙ্গ কর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
এ নির্দেশ অবশ্য পালনীয় ছিল। তাই আমরা সকলে
সওম ভঙ্গ করলাম। এরপর আমরা দেখেছি আমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামমের সাথে সফর অবস্থায় সাওম পালন
করতাম”। [119]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ، ﻓَﺼَﺎﻡَ ﺑَﻌْﺾٌ، ﻭَﺃَﻓْﻄَﺮَ ﺑَﻌْﺾٌ ﻓَﺘَﺤَﺰَّﻡَ
ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮُﻭﻥَ ﻭَﻋَﻤِﻠُﻮﺍ ﻭَﺿَﻌُﻒَ ﺍﻟﺼُّﻮَّﺍﻡُ، ﻋَﻦْ ﺑَﻌْﺾِ ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ: ﺫَﻫَﺐَ
ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮُﻭﻥَ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺑِﺎﻟْﺄَﺟْﺮِ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কোনো এক সফরে ছিলেন। তখন কেউ কেউ সাওম
পালন করলেন আবার কেউ কেউ সাওম ছেড়ে দিলেন।
এরপর যারা সাওম ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা
শক্তিমত্তার সাথে কাজ করলেন এবং সাওম
পালনকারী ব্যক্তিগণ সহজে দুর্বল হয়ে পড়লেন। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, আজ সাওম পরিত্যাগকারীরা নেকী অর্জন
করে নিল”। [120]
আবু সা‘ঈদ খুদরী ও জাবির ইবন আবদুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে
বলেন,
«ﺳَﺎﻓَﺮْﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻴَﺼُﻮﻡُ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ، ﻭَﻳُﻔْﻄِﺮُ ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮُ، ﻓَﻠَﺎ
ﻳَﻌِﻴﺐُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ »
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাথে সফর করেছিলাম।
এমতাবস্থায় সাওম পালনকারী সাওম পালন
করেছেন এবং সাওম ভঙ্গকারী সাওম ভঙ্গ করেছেন।
কিন্তু এতে কেউ একে অন্যের প্রতি দোষারোপ
করেন নি”। [121]
সফর অবস্থায় কোনো কাজের দায়িত্ব পালন
করাকালীন সাওম ভঙ্গ করলে তার প্রতিদান
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛُﻨَّﺎ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺃَﻛْﺜَﺮُﻧَﺎ ﻇِﻠًّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺴْﺘَﻈِﻞُّ ﺑِﻜِﺴَﺎﺋِﻪِ، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ
ﺻَﺎﻣُﻮﺍ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﺍ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﻓْﻄَﺮُﻭﺍ ﻓَﺒَﻌَﺜُﻮﺍ ﺍﻟﺮِّﻛَﺎﺏَ ﻭَﺍﻣْﺘَﻬَﻨُﻮﺍ ﻭَﻋَﺎﻟَﺠُﻮﺍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ
ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺫَﻫَﺐَ ﺍﻟﻤُﻔْﻄِﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻴَﻮْﻡَ ﺑِﺎﻷَﺟْﺮِ »
“আমরা (কোনো এক সফরে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। আমাদের
মধ্যে সেই ব্যক্তির ছায়াই ছিল সর্বাধিক যে তার
চাঁদর দ্বারা ছায়া গ্রহণ করছিল। যারা সাওম পালন
করছিল তারা কোনো কাজই করতে পারছিল না।
যারা সাওমরত ছিল না, তারা উটের তত্তাবধান
করছিল, খেদমতের দায়িত্ব পালন করছিল এবং
পরিশ্রমের কাজ করছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যারা সাওম পালন
করে নি তারাই আজ অধিক সওয়াব হাসিল করল”।
[122]
কাযা‘আ রহ. বলেন,
«ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺃَﺑَﺎ ﺳَﻌِﻴﺪٍ ﺍﻟْﺨُﺪْﺭِﻱَّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻭَﻫُﻮَ ﻣَﻜْﺜُﻮﺭٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺗَﻔَﺮَّﻕَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻋَﻨْﻪُ،
ﻗُﻠْﺖُ: ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺎ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻋَﻤَّﺎ ﻳَﺴْﺄَﻟُﻚَ ﻫَﺆُﻟَﺎﺀِ ﻋَﻨْﻪُ ﺳَﺄَﻟْﺘُﻪُ: ﻋَﻦِ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ:
ﺳَﺎﻓَﺮْﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﻜَّﺔَ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﺻِﻴَﺎﻡٌ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﻨَﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﻗَﺪْ ﺩَﻧَﻮْﺗُﻢْ ﻣِﻦْ ﻋَﺪُﻭِّﻛُﻢْ، ﻭَﺍﻟْﻔِﻄْﺮُ ﺃَﻗْﻮَﻯ
ﻟَﻜُﻢْ » ﻓَﻜَﺎﻧَﺖْ ﺭُﺧْﺼَﺔً، ﻓَﻤِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ، ﻭَﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ، ﺛُﻢَّ ﻧَﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ ﺁﺧَﺮَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﺇِﻧَّﻜُﻢْ
ﻣُﺼَﺒِّﺤُﻮ ﻋَﺪُﻭِّﻛُﻢْ، ﻭَﺍﻟْﻔِﻄْﺮُ ﺃَﻗْﻮَﻯ ﻟَﻜُﻢْ، ﻓَﺄَﻓْﻄِﺮُﻭﺍ » ﻭَﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋَﺰْﻣَﺔً، ﻓَﺄَﻓْﻄَﺮْﻧَﺎ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﻘَﺪْ
ﺭَﺃَﻳْﺘُﻨَﺎ ﻧَﺼُﻮﻡُ، ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﻌْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ، ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ
“একদা আমি আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর
নিকট গেলাম। তাঁর নিকট মানুষের খুব ভিড় ছিল।
যখন লোকজন পৃথক হয়ে এদিক ওদিক চলে গেল তখন
আমি বললাম, আমি আপনার নিকট ঐসব কথা
জিজ্ঞাসা করব না যা লোকেরা জিজ্ঞাসা
করেছে। আমি তাকে সফরের অবস্থায় সাওম পালন
করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন,
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাওমরত অবস্থায় মক্কার
দিকে রওনা করলাম। এরপর একস্থানে আমরা অবতরণ
করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন তোমরা শত্রুদের
নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছ। এখন ইফতারই তোমাদের
জন্য শক্তিশালী থাকার উপায় এবং এ তোমাদের
জন্য বিশেষ এক অবকাশ। তখন আমাদের কতক লোক
সাওম পালন করল আবার কতক লোক ইফতার করল।
এরপর আমরা অন্য এক স্থানে অবতরণ করলাম। তখন
তিনি বললেন ভোরেই তোমরা শত্রুর মুকাবিলা
করবে। সুতরাং ইফতার তোমাদের জন্য শক্তি বর্ধক।
তাই তোমরা ইফতার কর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ নির্দেশ অবশ্য পালনীয়
ছিল। তাই আমরা সকলে ইফতার করলাম। এরপর
আমরা দেখেছি আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরের অবস্থায়
সাওম পালন করতাম”। [123]
রমযানে কয়েকদিন সাওম পালন করে যদি কেউ সফর
আরম্ভ করে
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত
যে,
« ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ « ﺧَﺮَﺝَ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﻜَّﺔَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﺼَﺎﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﺑَﻠَﻎَ
ﺍﻟﻜَﺪِﻳﺪَ، ﺃَﻓْﻄَﺮَ »، ﻓَﺄَﻓْﻄَﺮَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ: ﻭَﺍﻟﻜَﺪِﻳﺪُ: ﻣَﺎﺀٌ ﺑَﻴْﻦَ ﻋُﺴْﻔَﺎﻥَ ﻭَﻗُﺪَﻳْﺪٍ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাওম অবস্থায় কোনো এক রমযানে মক্কার পথে
যাত্রা করলেন। ‘কাদীদ’ নামক স্থানে পৌঁছার পর
তিনি সাওম ভঙ্গ করে ফেললে লোকেরা সকলেই
সাওম ভঙ্গ করলেন। আবু ‘আব্দুল্লাহ রহ. বলেন,
‘উসফান ও কুদায়দ নামক দুই স্থানের মধ্যে কাদীদ
একটি ঝর্ণা।” [124]
আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺧَﺮَﺟْﻨَﺎ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺑَﻌْﺾِ ﺃَﺳْﻔَﺎﺭِﻩِ ﻓِﻲ ﻳَﻮْﻡٍ ﺣَﺎﺭٍّ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻀَﻊَ
ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻳَﺪَﻩُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺃْﺳِﻪِ ﻣِﻦْ ﺷِﺪَّﺓِ ﺍﻟﺤَﺮِّ، ﻭَﻣَﺎ ﻓِﻴﻨَﺎ ﺻَﺎﺋِﻢٌ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻭَﺍﺑْﻦِ ﺭَﻭَﺍﺣَﺔَ »
“কোনো এক সফরে প্রচন্ড গরমের দিনে আমরা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে
রওয়ানা হলাম। গরম এত প্রচন্ড ছিল যে, প্রত্যেকেই
নিজ নিজ হাত মাথার উপরে তুলে ধরেছিলেন। এ
সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং
ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছাড়া আমাদের
কেউই সাওম পালনকারী ছিল না”। [125]
প্রচণ্ড গরমের কারণে যে ব্যক্তির উপর ছায়ার
ব্যবস্থা করা হয়েছে তার সম্পর্কে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
সফরে সাওম পালনে কোনো নেকী নেই
জাবির ইবন ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ، ﻓَﺮَﺃَﻯ ﺯِﺣَﺎﻣًﺎ ﻭَﺭَﺟُﻠًﺎ ﻗَﺪْ ﻇُﻠِّﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﻣَﺎ ﻫَﺬَﺍ؟ »، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺒِﺮِّ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮِ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এক সফরে ছিলেন, হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং
ছায়ার নিচে এক ব্যক্তিকে দেখে জিজ্ঞাসা
করলেন, এর কী হয়েছে? লোকেরা বলল, সে সাওম
পালনকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, সফরে সাওম পালনে কোনো
নেকী নেই”। [126]
সফর অবস্থায় সাওম পালনের ব্যাপারে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ
একে অন্যকে দোষারোপ করতেন না
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨَّﺎ ﻧُﺴَﺎﻓِﺮُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻌِﺐِ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻤُﻔْﻄِﺮِ، ﻭَﻻَ
ﺍﻟﻤُﻔْﻄِﺮُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢِ »
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সঙ্গে সফরে যেতাম। সাওম পালনকারী ব্যক্তি যে
সাওম পালন করছে না, এবং যে সাওম পালন করছে
না, সে সাওম পালনকারীকে দোষারোপ করতো
না”। [127]
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
«ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﻐْﺰُﻭ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﻤِﻨَّﺎ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ ﻭَﻣِﻨَّﺎ
ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮُ، ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺠِﺪُ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮِ، ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢِ، ﻳَﺮَﻭْﻥَ ﺃَﻥَّ ﻣَﻦْ ﻭَﺟَﺪَ
ﻗُﻮَّﺓً ﻓَﺼَﺎﻡَ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺣَﺴَﻦٌ ﻭَﻳَﺮَﻭْﻥَ ﺃَﻥَّ ﻣَﻦْ ﻭَﺟَﺪَ ﺿَﻌْﻔًﺎ، ﻓَﺄَﻓْﻄَﺮَ ﻓَﺈِﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺣَﺴَﻦٌ »
“রমযান মাসে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ষুদ্ধে অংশ গ্রহণ
করতাম। এ সময় আমাদের কেউ সাওম পালন করেছেন
আবার কেউ সাওম ছেড়েও দিয়েছেন। কিন্তু সাওম
পালনকারী সাওম ভঙ্গকারীকে খারাপ মনে করতেন
না এরং সাওম ভঙ্গকারীও সাওম পালনকারীকে
খারাপ মনে করতেন না। তারা মনে করতেন, যার
সামর্থ্য আছে সেই সাওম পালন করছে, এটাই তার
জন্য উত্তম। আর যে দুর্বল সে সাওম ছেড়ে
দিয়েছে, এটাও তার জন্য উত্তম”। [128]
আবু সা‘ঈদ খুদরী ও জাবির ইবন আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে
বলেন,
«ﺳَﺎﻓَﺮْﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻴَﺼُﻮﻡُ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ، ﻭَﻳُﻔْﻄِﺮُ ﺍﻟْﻤُﻔْﻄِﺮُ، ﻓَﻠَﺎ
ﻳَﻌِﻴﺐُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ »
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাথে সফর করেছিলাম।
এমতাবস্থায় সাওম পালনকারী সাওম পালন
করেছেন এবং সাওম ভঙ্গকারী সাওম ভঙ্গ করেছেন।
কিন্তু এতে কেউ একে অন্যের প্রতি দোষারোপ
করেন নি”। [129]
সফর অবস্থায় সাওম ভঙ্গ করা, যাতে লোকেরা
দেখতে পায়
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
» ﺧَﺮَﺝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻣِﻦَ ﺍﻟﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﻜَّﺔَ، ﻓَﺼَﺎﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﺑَﻠَﻎَ ﻋُﺴْﻔَﺎﻥَ،
ﺛُﻢَّ ﺩَﻋَﺎ ﺑِﻤَﺎﺀٍ ﻓَﺮَﻓَﻌَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻟِﻴُﺮِﻳَﻪُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ، ﻓَﺄَﻓْﻄَﺮَ ﺣَﺘَّﻰ ﻗَﺪِﻡَ ﻣَﻜَّﺔَ، ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ،
ﻓَﻜَﺎﻥَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﻗَﺪْ ﺻَﺎﻡَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﺃَﻓْﻄَﺮَ، ﻓَﻤَﻦْ ﺷَﺎﺀَ
ﺻَﺎﻡَ ﻭَﻣَﻦْ ﺷَﺎﺀَ ﺃَﻓْﻄَﺮَ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মদীনা থেকে মক্কায় রওয়ানা হলেন। তখন তিনি
সাওম পালন করছিলেন। ‘উসফানে পৌছার পর তিনি
পানি আনার জন্য আদেশ করলেন। তারপর তিনি
লোকদেরকে দেখানোর জন্য পানি হাতের উপর উচুঁ
করে ধরে সাওম ভঙ্গ করলেন এবং এ অবস্থায় মক্কায়
পৌঁছলেন। এ ছিল রমযান মাসে। তাই ইবন ‘আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন
করেছেন এবং সাওম ভঙ্গও করেছেন। যার ইচ্ছা
সাওম পালন করতে পারে আর যার ইচ্ছা সাওম ভঙ্গ
করতে পারে”। [130]
জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা
থেকে বর্ণিত,
ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺧَﺮَﺝَ ﻋَﺎﻡَ
ﺍﻟْﻔَﺘْﺢِ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﻜَّﺔَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓَﺼَﺎﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﺑَﻠَﻎَ ﻛُﺮَﺍﻉَ ﺍﻟْﻐَﻤِﻴﻢِ، ﻓَﺼَﺎﻡَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ﺛُﻢَّ ﺩَﻋَﺎ ﺑِﻘَﺪَﺡٍ ﻣِﻦْ
ﻣَﺎﺀٍ ﻓَﺮَﻓَﻌَﻪُ، ﺣَﺘَّﻰ ﻧَﻈَﺮَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ، ﺛُﻢَّ ﺷَﺮِﺏَ، ﻓَﻘِﻴﻞَ ﻟَﻪُ ﺑَﻌْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ : ﺇِﻥَّ ﺑَﻌْﺾَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻗَﺪْ
ﺻَﺎﻡَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺍﻟْﻌُﺼَﺎﺓُ، ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺍﻟْﻌُﺼَﺎﺓُ »
“মক্কা বিজয়ের বছর রমযান মাসে সাওমরত অবস্থায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলেন। এরপর যখন তিনি
‘কুরা‘উল গামীম’ নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন
লোকেরাও সাওমরত ছিল। এরপর তিনি একটি পানির
পাত্র চাইলেন। এমনকি লোকেরা তার দিকে
তাকাতে লাগল। এরপর তিনি পানি পান করলেন।
তখন তাঁকে বলা হলো কতিপয় লোক সাওমরত রয়েছে।
তিনি বললেন তারা অবাধ্য তারা অবাধ্য”। [131]
যাদের সাওম পালন অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের
সাওমের পরিবর্তে ফিদইয়া তথা একজন মিসকীনকে
খাদ্য দেওয়া
ইবন উমার ও সালামা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুমা বলেন,
ﺑﺎﺏٌ ﴿ﻭَﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻄِﻴﻘُﻮﻧَﻪُ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٤ ] ﻧَﺴَﺨَﺘْﻬَﺎ ﴿ﺷَﻬۡﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﭐﻟَّﺬِﻱٓ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﻓِﻴﻪِ
ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥُ ﻫُﺪٗﻯ ﻟِّﻠﻨَّﺎﺱِ ﻭَﺑَﻴِّﻨَٰﺖٖ ﻣِّﻦَ ﭐﻟۡﻬُﺪَﻯٰ ﻭَﭐﻟۡﻔُﺮۡﻗَﺎﻥِۚ ﻓَﻤَﻦ ﺷَﻬِﺪَ ﻣِﻨﻜُﻢُ ﭐﻟﺸَّﻬۡﺮَ ﻓَﻠۡﻴَﺼُﻤۡﻪُۖ ﻭَﻣَﻦ
ﻛَﺎﻥَ ﻣَﺮِﻳﻀًﺎ ﺃَﻭۡ ﻋَﻠَﻰٰ ﺳَﻔَﺮٖ ﻓَﻌِﺪَّﺓٞ ﻣِّﻦۡ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ﺃُﺧَﺮَۗ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻜُﻢُ ﭐﻟۡﻴُﺴۡﺮَ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺑِﻜُﻢُ ﭐﻟۡﻌُﺴۡﺮَ
ﻭَﻟِﺘُﻜۡﻤِﻠُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻌِﺪَّﺓَ ﻭَﻟِﺘُﻜَﺒِّﺮُﻭﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠَﻰٰ ﻣَﺎ ﻫَﺪَﻯٰﻜُﻢۡ ﻭَﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺸۡﻜُﺮُﻭﻥَ ١٨٥﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ:
١٨٥] »
“অধ্যায়: ﴿ﻭَﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻄِﻴﻘُﻮﻧَﻪُ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٤] “আর যাদের জন্য
তা (ফিদিয়া প্রদান) সম্ভব হবে।” [সূরা আল-
বাকারা, আয়াত: ১৮৪] উক্ত আয়াতকে রহিত করেছে এ
আয়াত: “রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা
হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং
হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার
পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে
মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সাওম
পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে
তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।
আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না।
আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি
তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য
আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা
শোকর কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
«ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻧُﻤَﻴْﺮٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﻷَﻋْﻤَﺶُ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﻤْﺮُﻭ ﺑْﻦُ ﻣُﺮَّﺓَ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻟَﻴْﻠَﻰ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ
ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﻧَﺰَﻝَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻓَﺸَﻖَّ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻣَﻦْ ﺃَﻃْﻌَﻢَ ﻛُﻞَّ ﻳَﻮْﻡٍ
ﻣِﺴْﻜِﻴﻨًﺎ ﺗَﺮَﻙَ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡَ ﻣِﻤَّﻦْ ﻳُﻄِﻴﻘُﻪُ، ﻭَﺭُﺧِّﺺَ ﻟَﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ، ﻓَﻨَﺴَﺨَﺘْﻬَﺎ : ﴿ﻭَﺃَﻥ ﺗَﺼُﻮﻣُﻮﺍْ ﺧَﻴۡﺮٞ
ﻟَّﻜُﻢۡ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٤] ﻓَﺄُﻣِﺮُﻭﺍ ﺑِﺎﻟﺼَّﻮْﻡِ »
“ইবন নুমায়ের রহ. ইবন আবু লায়লা রহ. থেকে (সনদসহ)
বর্ণনা করেন যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ আমাদের কাছে বর্ণনা
করেছেন, রমযানের হুকুম নাযিল হলে তা পালন করা
তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই তাদের মধ্যে
কেউ কেউ সাওম পালনে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও সাওম
ত্যাগ করে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন
মিসকীনকে খাওয়াতো। এ ব্যাপারে তাদের
অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। তারপর ﻭَﺃَﻥ ﺗَﺼُﻮﻣُﻮﺍْ ﺧَﻴۡﺮٞ
ﻟَّﻜُﻢۡ “সাওম পালন করাই তোমাদের জন্য উত্তম” [সূরা
আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪] এ আয়াতটি পূর্বের
হুকুমকে রহিত করে দেয় এবং সবাইকে সাওম পালনের
নির্দেশ দেওয়া হয়।” [132]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
ﻗَﺮَﺃَ : ﻓِﺪْﻳَﺔُ ﻃَﻌَﺎﻡِ ﻣَﺴَﺎﻛِﻴﻦَ ﻗَﺎﻝَ: ﻫِﻲَ ﻣَﻨْﺴُﻮﺧَﺔٌ
“তিনি ﻓِﺪْﻳَﺔُ ﻃَﻌَﺎﻡِ ﻣَﺴَﺎﻛِﻴﻦَ আয়াতটি পড়ে বলেছেন যে, এটি
রহিত।” [133]
ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀٍ، ﺳَﻤِﻊَ ﺍﺑْﻦَ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻄَﻮَّﻗُﻮﻧَﻪُ ﻓَﻼَ ﻳُﻄِﻴﻘُﻮﻧَﻪُ ﻓِﺪْﻳَﺔٌ ﻃَﻌَﺎﻡُ ﻣِﺴْﻜِﻴﻦٍ
ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ: « ﻟَﻴْﺴَﺖْ ﺑِﻤَﻨْﺴُﻮﺧَﺔٍ ﻫُﻮَ ﺍﻟﺸَّﻴْﺦُ ﺍﻟﻜَﺒِﻴﺮُ، ﻭَﺍﻟﻤَﺮْﺃَﺓُ ﺍﻟﻜَﺒِﻴﺮَﺓُ ﻻَ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻴﻌَﺎﻥِ ﺃَﻥْ
ﻳَﺼُﻮﻣَﺎ، ﻓَﻴُﻄْﻌِﻤَﺎﻥِ ﻣَﻜَﺎﻥَ ﻛُﻞِّ ﻳَﻮْﻡٍ ﻣِﺴْﻜِﻴﻨًﺎ »
‘আতা থেকে বর্ণিত, তিনি ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে বলতে শুনেছেন যে তিনি
পড়ছেন, ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻄَﻮَّﻗُﻮﻧَﻪُ ﻓَﻼَ ﻳُﻄِﻴﻘُﻮﻧَﻪُ ﻓِﺪْﻳَﺔٌ ﻃَﻌَﺎﻡُ ﻣِﺴْﻜِﻴﻦٍ অর্থাৎ ‘আর
যাদের উপর সাওম কষ্টকর হবে এবং তা আদায় করতে
অসমর্থ হবে তারা মিসকীনকে ফিদইয়া হিসেবে
খাবার খাওয়াবে।’ “ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন, আয়াতটি রহিত নয়, বরং তা অতিশয়
বৃদ্ধ, অত্যন্ত বৃদ্ধার জন্য, যারা সাওম রাখতে সমর্থ
নয়, তারা প্রতিদিনের সাওমের পরিবর্তে একজন
মিসকীন খাওয়াবে।” [134]
ইমাম আতা রহ. বলেন, সর্বপ্রকার রোগেই সাওম
ভঙ্গ করা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন। পক্ষান্তরে
ইমাম হাসান ও ইবরাহীম রহ. বলেন, সন্তানের
দাত্রী এবং গর্ভবতী স্ত্রীলোক যখন নিজ প্রাণ
অথবা তাদের সন্তানের জীবনের প্রতি হুমকির
আশংকা করে তখন তারা উভয়ে সাওম ভঙ্গ করতে
পারবে। পরে তা আদায় করে নিতে হবে। অতিবৃদ্ধ
ব্যক্তি যখন সাওম পালনে অক্ষম হয়ে পড়ে (তখন
ফিদইয়া আদায় করবে।) [135]
রমযানের কাযা সাওম কখন আদায় করা হবে?
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, পৃথক পৃথক
রাখলে কোনো ক্ষতি নেই। কেননা আল্লাহ
বলেছেন, ‘অন্যদিনে এর সংখ্যা পূর্ণ করবে’। সা‘ঈদ
ইবন মুসায়্যাব রহ. বলেছেন, রমযানের কাযা আদায়
না করে যিলহজ মাসের প্রথম দশকে সাওম পালন
করা উচিত নয়। ইবরাহীম নাখ‘ঈ রহ. বলেন,
অবহেলার কারণে যদি রমযান এসে যায় তাহলে উভয়
রমযানের সাওম এক সাথে আদায় করবে। মিসকীন
খাওয়াতে হবে বলে তিনি মনে করেন না। আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত একটি
মুরসাল হাদীসে এবং ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, সে খাওয়াবে অথচ
আল্লাহ তা‘আলা খাওয়ানোর কথাটি উল্লেখ করেন
নি; বরং তিনি বলেছেন ‘অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ
করবে’।
আবু সালামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বলতে
শুনেছি, তিনি বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﻤَﺎ ﺃَﺳْﺘَﻄِﻴﻊُ ﺃَﻥْ ﺃَﻗْﻀِﻲَ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ، ﻗَﺎﻝَ
ﻳَﺤْﻴَﻰ : ﺍﻟﺸُّﻐْﻞُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺃَﻭْ ﺑِﺎﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
“আমার ওপর রমযানের যে কাযা থেকে যেতো তা
পরবর্তী শা‘বান ছাড়া আমি আদায় করতে পারতাম
না। ইয়াহিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যস্ততার
কারণে কিংবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ব্যস্ততার কারণে।” [136]
ঋতুবতী মহিলা সালাত ও সাওম উভয়ই ত্যাগ করবে
আবু যিনাদ রহ. বলেন, শরী‘আতের হুকুম-আহকাম
অনেক সময় কিয়াসের বিপরীতও হয়ে থাকে।
মুসলিমের জন্য এর অনুসরণ ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এর একটি উদাহরণ হলো ঋতুবতী মহিলা সাওমের
কাযা করবে কিন্তু সালাতের কাযা করবে না।
আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
«ﺃَﻟَﻴْﺲَ ﺇِﺫَﺍ ﺣَﺎﺿَﺖْ ﻟَﻢْ ﺗُﺼَﻞِّ ﻭَﻟَﻢْ ﺗَﺼُﻢْ، ﻓَﺬَﻟِﻚَ ﻧُﻘْﺼَﺎﻥُ ﺩِﻳﻨِﻬَﺎ »
“এ কথা কি ঠিক নয় যে, হায়েয শুরু হলে মেয়েরা
সালাত আদায় করে না এবং সাওমও পালন করে না।
এ হলো তাদের দীনেরই ত্রুটি”। [137]
ঋতুবতী মহিলা সাওমের কাযা করবে কিন্তু
সালাতের কাযা করবে না
মু’আজা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা
করলাম,
«ﻋَﻦْ ﻣُﻌَﺎﺫَﺓَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﺳَﺄَﻟْﺖُ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﻣَﺎ ﺑَﺎﻝُ ﺍﻟْﺤَﺎﺋِﺾِ ﺗَﻘْﻀِﻲ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡَ، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘْﻀِﻲ
ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ. ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ: ﺃَﺣَﺮُﻭﺭِﻳَّﺔٌ ﺃَﻧْﺖِ؟ ﻗُﻠْﺖُ: ﻟَﺴْﺖُ ﺑِﺤَﺮُﻭﺭِﻳَّﺔٍ، ﻭَﻟَﻜِﻨِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻝُ. ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼِﻴﺒُﻨَﺎ
ﺫَﻟِﻚَ، ﻓَﻨُﺆْﻣَﺮُ ﺑِﻘَﻀَﺎﺀِ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡِ، ﻭَﻟَﺎ ﻧُﺆْﻣَﺮُ ﺑِﻘَﻀَﺎﺀِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ »
“আমাদের কেউ কি তার হায়েযের দিনগুলোর
সালাত কাযা করবে? ‘আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, তুমি কি
হারুরিয়্যা (খারেজী)? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আমাদের কারো
হায়েয হলে পরে তাকে (সালাত) কাযা করার
নির্দেশ দেওয়া হত না।” [138]
সাওমের কাযা যিম্মায় রেখে যে ব্যক্তি মারা
গেল
হাসান রহ. বলেছেন, তার পক্ষ থেকে ত্রিশজন লোক
একদিন সাওম পালন করলে হবে।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ﻣَﻦْ ﻣَﺎﺕَ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻِﻴَﺎﻡٌ ﺻَﺎﻡَ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﻟِﻴُّﻪُ »
“সাওমের কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোনো ব্যক্তি
মারা যায় তাহলে তার অভিভাবকের পক্ষ থেকে
সাওম আদায় করবে।” [139]
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﻣَﺎﺗَﺖْ
ﻭَﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺻَﻮْﻡُ ﺷَﻬْﺮٍ، ﺃَﻓَﺄَﻗْﻀِﻴﻪِ ﻋَﻨْﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻧَﻌَﻢْ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺪَﻳْﻦُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺣَﻖُّ ﺃَﻥْ ﻳُﻘْﻀَﻰ، ﻗَﺎﻝَ
ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥُ: ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﺤَﻜَﻢُ، ﻭَﺳَﻠَﻤَﺔُ، ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﺟُﻠُﻮﺱٌ ﺣِﻴﻦَ ﺣَﺪَّﺙَ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﺑِﻬَﺬَﺍ ﺍﻟﺤَﺪِﻳﺚِ ﻗَﺎﻻَ:
ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﻣُﺠَﺎﻫِﺪًﺍ، ﻳَﺬْﻛُﺮُ ﻫَﺬَﺍ، ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻭَﻳُﺬْﻛَﺮُ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺧَﺎﻟِﺪٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﻷَﻋْﻤَﺶُ،
ﻋَﻦِ ﺍﻟﺤَﻜَﻢِ، ﻭَﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﺍﻟﺒَﻄِﻴﻦِ، ﻭَﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺑْﻦِ ﻛُﻬَﻴْﻞٍ، ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺟُﺒَﻴْﺮٍ، ﻭَﻋَﻄَﺎﺀٍ، ﻭَﻣُﺠَﺎﻫِﺪٍ، ﻋَﻦْ
ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ : ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﺇِﻥَّ ﺃُﺧْﺘِﻲ ﻣَﺎﺗَﺖْ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻳَﺤْﻴَﻰ، ﻭَﺃَﺑُﻮ
ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ: ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﻷَﻋْﻤَﺶُ، ﻋَﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ، ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺟُﺒَﻴْﺮٍ، ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ: ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ
ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﻣَﺎﺗَﺖْ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻋُﺒَﻴْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ: ﻋَﻦْ ﺯَﻳْﺪِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺃُﻧَﻴْﺴَﺔَ،
ﻋَﻦِ ﺍﻟﺤَﻜَﻢِ، ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺟُﺒَﻴْﺮٍ، ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ: ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﻣَﺎﺗَﺖْ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺻَﻮْﻡُ ﻧَﺬْﺭٍ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺣَﺮِﻳﺰٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋِﻜْﺮِﻣَﺔُ، ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ:
ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﻣَﺎﺗَﺖْ ﺃُﻣِّﻲ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺻَﻮْﻡُ ﺧَﻤْﺴَﺔَ ﻋَﺸَﺮَ ﻳَﻮْﻣًﺎ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট
এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা
এক মাসের সাওম জিম্মায় রেখে মারা
গেছেন, আমি কি তার পক্ষ থেকে সাওম কাযা
করতে পারি? তিনি বলেন: হ্যাঁ, আল্লাহর ঋণ
পরিশোধ করাই হলো অধিক যোগ্য। সুলায়মান রহ.
বলেন, হাকাম এবং সালামা রহ. বলেছেন, মুসলিম
রহ. এ হাদীস বর্ণনা করার সময় আমরা সকলেই এক
সাথে উপবিষ্ট ছিলাম। তাঁরা উভয়েই বলেছেন
যে, ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
মুজাহিদ রহ.-কে এ হাদীস বর্ণনা করতে আমরা
শুনেছি। আবু খালিদ আহমার রহ. ইবন ‘আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, একজন মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমার বোন মারা গেছে।
ইয়াহইয়া রহ. ও আবু ম‘আবিয়া ইবন ‘আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমার
মা মারা গেছেন। ‘উবায়দুল্লাহ রহ. ইবন ‘আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমার
মা মারা গেছেন অথচ তার যিম্মায় মানতের সাওম
রয়েছে। আবু হারীয রহ. ইবন ‘আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমার
মা মারা গেছেন অথচ তার যিম্মায় পনেরো দিনের
সাওম রয়ে গেছে।” [140]
আব্দুল্লাহ ইবন বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার
পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
«ﺑَﻴْﻨَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺟَﺎﻟِﺲٌ ﻋِﻨْﺪَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺇِﺫْ ﺃَﺗَﺘْﻪُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ: ﺇِﻧِّﻲ
ﺗَﺼَﺪَّﻗْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻣِّﻲ ﺑِﺠَﺎﺭِﻳَﺔٍ، ﻭَﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻣَﺎﺗَﺖْ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻘَﺎﻝَ: « ﻭَﺟَﺐَ ﺃَﺟْﺮُﻙِ، ﻭَﺭَﺩَّﻫَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﺍﻟْﻤِﻴﺮَﺍﺙُ
ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺻَﻮْﻡُ ﺷَﻬْﺮٍ، ﺃَﻓَﺄَﺻُﻮﻡُ ﻋَﻨْﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ: «ﺻُﻮﻣِﻲ ﻋَﻨْﻬَﺎ
ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﺤُﺞَّ ﻗَﻂُّ، ﺃَﻓَﺄَﺣُﺞُّ ﻋَﻨْﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﺣُﺠِّﻲ ﻋَﻨْﻬَﺎ »
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এমতাবস্থায়
জনৈকা মহিলা এসে বললেন! আমি আমার মায়ের
জন্য একটি দাসী সদকা করেছিলাম। তিনি মৃত্যুবরণ
করেছেন। একথা শুনে তিনি বললেন, তুমি তো
তোমার সওয়াব পেয়ে গিয়েছ। তবে উত্তরাধিকার
তোমার নিকট তা ফিরিয়ে দিয়েছে। তখন ঐ
মহিলা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! তার ওপর এক
মাসের সাওমের কাযা রয়েছে। আমি তার পক্ষ
থেকে ঐ সাওম আদায় করতে পারি কি? তিনি
বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে সাওম পালন কর।
অতঃপর মহিলা বললেন, তিনি তো তখনও হজও
আদায় করেন নি আমি তার পক্ষ থেকে হজ আদায়
করতে পারি কি? তিনি বললেন, তুমি তার পক্ষ
থেকে হজ আদায় কর”। [141]
সাওম পালনকারীর জন্য কখন ইফতার করা হালাল
সূর্যের গোলাকার বৃত্ত অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথেই
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইফতার
করতেন।
উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: « ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻗْﺒَﻞَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞُ ﻣِﻦْ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﻭَﺃَﺩْﺑَﺮَ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭُ ﻣِﻦْ
ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﻭَﻏَﺮَﺑَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ »
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: “যখন রাত্র এ দিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও
দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন
সাওম পালনকারী ইফতার করবে”। [142]
‘আব্দুল্লাহ ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨَّﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻏَﺮَﺑَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ
ﻗَﺎﻝَ ﻟِﺒَﻌْﺾِ ﺍﻟﻘَﻮْﻡِ: ﻳَﺎ ﻓُﻼَﻥُ ﻗُﻢْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻮْ ﺃَﻣْﺴَﻴْﺖَ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻧْﺰِﻝْ
ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ ﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻓَﻠَﻮْ ﺃَﻣْﺴَﻴْﺖَ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﺍﻧْﺰِﻝْ، ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻥَّ ﻋَﻠَﻴْﻚَ
ﻧَﻬَﺎﺭًﺍ، ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ، ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﻓَﺠَﺪَﺡَ ﻟَﻬُﻢْ، ﻓَﺸَﺮِﺏَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺛُﻢَّ
ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﻗَﺪْ ﺃَﻗْﺒَﻞَ ﻣِﻦْ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ »
“কোনো এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। আর তিনি
ছিলেন সাওম পালনকারী। যখন সূর্য ডুবে গেল
তখন তিনি দলের কাউকে বললেন, হে অমুক! উঠ।
আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া
রাসূলুল্লাহ! সন্ধ্যা হলে ভালো হতো। তিনি
বললেন, নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে
আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সন্ধ্যা হলে ভালো
হতো। তিনি বললেন, নেমে যাও এবং আমাদের জন্য
ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সন্ধ্যা
হলে ভালো হতো। তিনি বললেন, নেমে যাও এবং
আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, দিন তো
আপনার এখনো রয়েছে। তিনি বললেন, তুমি নামো
এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে
নামলো এবং তাঁদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আনলো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তা পান করলেন, তারপর বললেন, যখন তোমরা
দেখবে, রাত একদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে, তখন
সাওম পালনকারী ইফতার করবে”। [143]
পানি বা সহজলভ্য অন্য কিছু দিয়ে ইফতার করবে
‘আব্দুল্লাহ ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺳِﺮْﻧَﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻏَﺮَﺑَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ ﻗَﺎﻝَ:
ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻮْ ﺃَﻣْﺴَﻴْﺖَ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: ﻳَﺎ
ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺇِﻥَّ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻧَﻬَﺎﺭًﺍ، ﻗَﺎﻝَ: ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟَﻨَﺎ »، ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﻓَﺠَﺪَﺡَ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻢُ
ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﺃَﻗْﺒَﻞَ ﻣِﻦْ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺑِﺈِﺻْﺒَﻌِﻪِ ﻗِﺒَﻞَ ﺍﻟﻤَﺸْﺮِﻕِ »
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে রওয়ানা দিলাম এবং তিনি
সাওমদার ছিলেন। সূর্য অস্ত যেতেই তিনি
বললেন, তুমি সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য
ছাতু গুলিয়ে আন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ!
আর একটু সন্ধ্যা থেকে দিন। তিনি বললেন, তুমি
নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন।
তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এখনো তো আপনার
সামনে দিন রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি নেমে যাও
এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর তিনি
সওয়ারী থেকে নামলেন এবং ছাতু গুলিয়ে আনলেন।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দ্বারা পূর্বদিকে ইশারা করে
বললেন, যখন তোমরা দেখবে যে, রাত এদিক থেকে
আসছে, তখনই সাওমদারদের ইফতারের সময় হয়ে
গেলো”। [144]
ইফতার ত্বরান্বিত করা
সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻻَ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺑِﺨَﻴْﺮٍ ﻣَﺎ ﻋَﺠَّﻠُﻮﺍ ﺍﻟﻔِﻄْﺮَ »
“লোকেরা যতদিন যাবৎ ওয়াক্ত হওয়া মাত্র ইফতার
করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে”। [145]
ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻛُﻨْﺖُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ، ﻓَﺼَﺎﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﻣْﺴَﻰ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﺮَﺟُﻞٍ : ﺍﻧْﺰِﻝْ
ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟِﻲ ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﻮِ ﺍﻧْﺘَﻈَﺮْﺕَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗُﻤْﺴِﻲَ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﺍﻧْﺰِﻝْ ﻓَﺎﺟْﺪَﺡْ ﻟِﻲ، ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺖَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﻗَﺪْ
ﺃَﻗْﺒَﻞَ ﻣِﻦْ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢُ »
“এক সফরে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত
সাওম পালন করেন। এরপর এক ব্যাক্তিকে
বললেন, সওয়ারী থেকে নেমে ছাতু গুলিয়ে আন।
লোকটি বলল, আপনি যদি (পূর্ণ সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত)
অপেক্ষা করতেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় বললেন, নেমে
আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন
তুমি এদিক (পূর্বদিক) থেকে রাত্রির আগমন দেখতে
পাবে তখন সাওম পালনকারী ইফতার করবে”। [146]
আবু ‘আতিয়্যা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺩَﺧَﻠْﺖُ ﺃَﻧَﺎ ﻭَﻣَﺴْﺮُﻭﻕٌ، ﻋَﻠَﻰ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻬَﺎ ﻣَﺴْﺮُﻭﻕٌ : ﺭَﺟُﻠَﺎﻥِ ﻣِﻦْ
ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻛِﻠَﺎﻫُﻤَﺎ ﻟَﺎ ﻳَﺄْﻟُﻮ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ، ﺃَﺣَﺪُﻫُﻤَﺎ ﻳُﻌَﺠِّﻞُ ﺍﻟْﻤَﻐْﺮِﺏَ
ﻭَﺍﻟْﺈِﻓْﻄَﺎﺭَ، ﻭَﺍﻟْﺂﺧَﺮُ ﻳُﺆَﺧِّﺮُ ﺍﻟْﻤَﻐْﺮِﺏَ ﻭَﺍﻟْﺈِﻓْﻄَﺎﺭَ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ : ﻣَﻦْ ﻳُﻌَﺠِّﻞُ ﺍﻟْﻤَﻐْﺮِﺏَ ﻭَﺍﻟْﺈِﻓْﻄَﺎﺭَ؟ ﻗَﺎﻝَ:
ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ: ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺼْﻨَﻊُ »
“আমি ও মাসরুক রহ. ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার
নিকট গেলাম। এরপর মাসরুক রহ. তাকে বললেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সাহাবীদের মধ্যে দুই ব্যক্তি যারা কল্যাণজনক
কাজে কোনো প্রকার অবহেলা প্রদর্শন করে না।
তাঁদের একজন মাগরিব এবং ইফতারের মধ্যে ত্বরা
করেন। আর অপর জন মাগরিব ও ইফতারে বিলম্ব
করেন। তিনি (‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)
বললেন সে কোনো ব্যক্তি যে মাগরিব ও ইফতার
ত্বরা করেন? তিনি বললেন, তিনি হলেন
‘আব্দুল্লাহ। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরূপ করতেন।” [147]
মাগরিবের সালাতের পূর্বে ইফতার করা মুস্তাহাব
এবং যে সব জিনিস দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻣَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﻂُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺻَﻠَﺎﺓَ ﺍﻟْﻤَﻐْﺮِﺏِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻔْﻄِﺮَ ﻭَﻟَﻮْ
ﻋﻠﻰ ﺷﺮﺑﺔ ﻣﻦ ﻣﺎﺀ »
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে কখনও মাগরিবের সালাত ইফতারের
পূর্বে পড়তে দেখি নি , কমপক্ষে এক ঢোক পানি
পান করে হলেও আগে ইফতার করতেন। ”[148]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﻔْﻄِﺮُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُﺼَﻠِّﻲَ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻃَﺒَﺎﺕٍ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ
ﺭُﻃَﺒَﺎﺕٌ ﻓَﺘُﻤَﻴْﺮَﺍﺕٌ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ ﺗُﻤَﻴْﺮَﺍﺕٌ ﺣَﺴَﺎ ﺣَﺴَﻮَﺍﺕٍ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﺀٍ ».
“তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম (মাগরিবের) সালাত আদায়ের আগেই
কিছু তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা
খেজুর না পেলে কিছু শুকনা খেজুর দিয়ে ইফতার
করে নিতেন। আর যদি শুকনা খেজুর না পেতেন তবে
কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন।” [149]
রমযানে ইফতার করার পরে যদি সূর্য দেখা দেয়
আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺃَﻓْﻄَﺮْﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻮْﻡَ ﻏَﻴْﻢٍ، ﺛُﻢَّ ﻃَﻠَﻌَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ، ﻗِﻴﻞَ
ﻟِﻬِﺸَﺎﻡٍ: ﻓَﺄُﻣِﺮُﻭﺍ ﺑِﺎﻟﻘَﻀَﺎﺀِ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻻَ ﺑُﺪَّ ﻣِﻦْ ﻗَﻀَﺎﺀٍ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻣَﻌْﻤَﺮٌ: ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﻫِﺸَﺎﻣًﺎ ﻻَ ﺃَﺩْﺭِﻱ
ﺃَﻗَﻀَﻮْﺍ ﺃَﻡْ ﻻَ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে
একবার মেঘাচ্ছন্ন দিনে আমরা ইফতার
করলাম, এরপর সূর্য দেখা যায়। বর্ণনাকারী
হিশামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তাদের কি কাযা
করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? হিশাম রহ.
বললেন, কাযা ছাড়া উপায় কি? (অপর বর্ণনাকারী)
মা‘মার রহ. বলেন, আমি হিশামকে বলতে
শুনেছি, তাঁরা কাযা করেছিলেন কিনা তা আমি
জানি না।” [150]
বাচ্চাদের সাওম পালন করা
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রমযানে এক নেশাগ্রস্ত
ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, আমাদের বাচ্চারা
পর্যন্ত সাওম পালন করছে। তোমার সর্বনাশ হোক!
অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে প্রহর
করলেন।
রুবায়্যি‘ বিনতে মু‘আব্বিয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﺃَﺭْﺳَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻏَﺪَﺍﺓَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ ﺇِﻟَﻰ ﻗُﺮَﻯ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ: ﻣَﻦْ ﺃَﺻْﺒَﺢَ
ﻣُﻔْﻄِﺮًﺍ، ﻓَﻠْﻴُﺘِﻢَّ ﺑَﻘِﻴَّﺔَ ﻳَﻮْﻣِﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺻْﺒَﺢَ ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ، ﻓَﻠﻴَﺼُﻢْ » ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻓَﻜُﻨَّﺎ ﻧَﺼُﻮﻣُﻪُ ﺑَﻌْﺪُ، ﻭَﻧُﺼَﻮِّﻡُ
ﺻِﺒْﻴَﺎﻧَﻨَﺎ، ﻭَﻧَﺠْﻌَﻞُ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠُّﻌْﺒَﺔَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻌِﻬْﻦِ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺑَﻜَﻰ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡِ ﺃَﻋْﻄَﻴْﻨَﺎﻩُ ﺫَﺍﻙَ ﺣَﺘَّﻰ
ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻹِﻓْﻄَﺎﺭِ »
“আশুরার সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ
দিলেন, যে ব্যক্তি সাওম পালন করে নি সে যেন
দিনের বাকী অংশ না খেয়ে থাকে আর যার সাওম
অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সাওম পূর্ণ করে।
তিনি (রুবায়্যি‘) বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন
সাওম রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের সাওম
রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা
তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য
কাঁদলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ইফতার পর্যন্ত
ভুলিয়ে রাখতাম”। [151]
সাওমে বেসাল বা বিরতিহীনভাবে সাওম পালন
করা
আল্লাহর বাণী ﴿ﺃَﺗِﻤُّﻮﺍْ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟَّﻴۡﻞِۚ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٨٧] “তোমরা
রাতের আগমন পর্যন্ত সাওম পালন কর। [সূরা
বাকারা, আয়াত: ১৮৭] এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতে
সাওম পালন করা যাবে না বলে যারা অভিমত ব্যক্ত
করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উম্মতের ওপর দয়াপরবশত হয়ে ও তাদের স্বাস্থ্য
রক্ষার খাতিরে সাওমে বেসাল বা
বিরতিহীনভাবে সাওম পালন করতে নিষেধ
করেছেন এবং কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা
নিন্দনীয়।
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻻَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻠُﻮﺍ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﺇِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ، ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﺴْﺖُ ﻛَﺄَﺣَﺪٍ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﺃُﻃْﻌَﻢُ، ﻭَﺃُﺳْﻘَﻰ، ﺃَﻭْ ﺇِﻧِّﻲ
ﺃَﺑِﻴﺖُ ﺃُﻃْﻌَﻢُ ﻭَﺃُﺳْﻘَﻰ »
“তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না। লোকেরা
বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল করেন? তিনি
বললেন, আমি তোমাদের মতো নই। আমাকে
পানাহার করানো হয়, (অথবা বললেন) আমি
পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি”। [ 152 ]
‘আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﻧَﻬَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻮِﺻَﺎﻝِ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﺇِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ، ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻧِّﻲ
ﻟَﺴْﺖُ ﻣِﺜْﻠَﻜُﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﺃُﻃْﻌَﻢُ ﻭَﺃُﺳْﻘَﻰ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমে
বেসাল পালন করতে নিষেধ করেছেন। তখন লোকেরা
তাঁকে বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল করেন? তিনি
বললেন, আমি তোমাদের মতো নই। আমাকে
পানাহার করানো হয়, (অথবা বললেন) আমি
পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি”। [ 153 ]
আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
বলতে শুনেছেন যে,
« ﻻَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻠُﻮﺍ، ﻓَﺄَﻳُّﻜُﻢْ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺃَﻥْ ﻳُﻮَﺍﺻِﻞَ، ﻓَﻠْﻴُﻮَﺍﺻِﻞْ ﺣَﺘَّﻰ ﺍﻟﺴَّﺤَﺮِ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ ﻳَﺎ
ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺴْﺖُ ﻛَﻬَﻴْﺌَﺘِﻜُﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺑِﻴﺖُ ﻟِﻲ ﻣُﻄْﻌِﻢٌ ﻳُﻄْﻌِﻤُﻨِﻲ، ﻭَﺳَﺎﻕٍ ﻳَﺴْﻘِﻴﻦِ »
“তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না।
তোমাদের কেউ সাওমে বেসাল পালন করতে চাইলে
সে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। লোকেরা
বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যে সাওমে বেসাল
পালন করেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদের মতো
নই, আমি রাত্রি যাপন করি এরূপ অবস্থায় যে, আমার
জন্য একজন খাদ্য পরিবেশনকারী থাকেন যিনি
আমাকে আহার করান এবং একজন পানীয়
পরিবেশনকারী আমাকে পান করান”। [154]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﻧَﻬَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻮِﺻَﺎﻝِ ﺭَﺣْﻤَﺔً ﻟَﻬُﻢْ، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ: ﺇِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ،
ﻗَﺎﻝَ: ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺴْﺖُ ﻛَﻬَﻴْﺌَﺘِﻜُﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﻳُﻄْﻌِﻤُﻨِﻲ ﺭَﺑِّﻲ ﻭَﻳَﺴْﻘِﻴﻦِ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ : ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮْ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ
ﺭَﺣْﻤَﺔً ﻟَﻬُﻢْ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
লোকদের ওপর দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে সাওমে
বেসাল থেকে নিষেধ করলে তারা বলল, আপনি যে
সাওমে বেসাল করে থাকেন! তিনি বললেন, আমি
তোমাদের মতো নই, আমার রব আমাকে পানাহার
করান”। আবু ‘আব্দুল্লাহ বুখারী রহ.
বলেন, বর্ণনাকারী ‘উসমান রহ. ‘তাদের প্রতি
দয়াপরবশ হয়ে’ কথাটি উল্লেখ করেন নি।” [155]
যে অধিক পরিমাণ সাওমে বেসাল পালন করে তাঁকে
শাস্তি প্রদান
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ বর্ণনা করেছেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﻧَﻬَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻮِﺻَﺎﻝِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡِ » ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦَ
ﺍﻟﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ: ﺇِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﺃَﻳُّﻜُﻢْ ﻣِﺜْﻠِﻲ، ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺑِﻴﺖُ ﻳُﻄْﻌِﻤُﻨِﻲ ﺭَﺑِّﻲ
ﻭَﻳَﺴْﻘِﻴﻦِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺃَﺑَﻮْﺍ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﺘَﻬُﻮﺍ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻮِﺻَﺎﻝِ، ﻭَﺍﺻَﻞَ ﺑِﻬِﻢْ ﻳَﻮْﻣًﺎ، ﺛُﻢَّ ﻳَﻮْﻣًﺎ، ﺛُﻢَّ ﺭَﺃَﻭُﺍ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻟَﻮْ ﺗَﺄَﺧَّﺮَ ﻟَﺰِﺩْﺗُﻜُﻢْ ﻛَﺎﻟﺘَّﻨْﻜِﻴﻞِ ﻟَﻬُﻢْ ﺣِﻴﻦَ ﺃَﺑَﻮْﺍ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﺘَﻬُﻮﺍ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বিরতিহীন সাওম পালন করতে নিষেধ করলে
মুসলিমদের এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আপনি যে বিরতীহীন সাওম পালন
করেন? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার মত
কে আছ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার
রব আমাকে পানাহার করান। এরপর যখন লোকেরা
সাওমে বেসাল করা থেকে বিরত থাকল না, তখন
তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন সাওমে
বেসাল করতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ
দেখতে পেল তখন তিনি বললেন, যদি চাঁদ উঠতে
আরও দেরী হতো তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে
আরও বেশি দিন সাওমে বেসাল করতাম। এ কথা
তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদানস্বরূপ
বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃতি
জানিয়েছিল”। [156]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
বলেন,
« ﺇِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﺍﻟﻮِﺻَﺎﻝ ﻣَﺮَّﺗَﻴْﻦِ ﻗِﻴﻞَ: ﺇِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ، ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺑِﻴﺖُ ﻳُﻄْﻌِﻤُﻨِﻲ ﺭَﺑِّﻲ ﻭَﻳَﺴْﻘِﻴﻦِ،
ﻓَﺎﻛْﻠَﻔُﻮﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻌَﻤَﻞِ ﻣَﺎ ﺗُﻄِﻴﻘُﻮﻥَ »
“তোমরা সাওমে বেসাল পালন করা থেকে বিরত
থাক (বাক্যটি তিনি) দু’বার বললেন। তাঁকে বলা
হলো, আপনি তো সাওমে বেসাল করেন। তিনি
বললেন, আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার রব
আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন। তোমরা
তোমাদের সাধ্যানুযায়ী ‘আমল করার দায়িত্ব গ্রহণ
করো”। [157]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻤْﺖُ ﺇِﻟَﻰ ﺟَﻨْﺒِﻪِ
ﻭَﺟَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺁﺧَﺮُ، ﻓَﻘَﺎﻡَ ﺃَﻳْﻀًﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﻛُﻨَّﺎ ﺭَﻫْﻄًﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺣَﺲَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧَّﺎ
ﺧَﻠْﻔَﻪُ ﺟَﻌَﻞَ ﻳَﺘَﺠَﻮَّﺯُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ، ﺛُﻢَّ ﺩَﺧَﻞَ ﺭَﺣْﻠَﻪُ، ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﺻَﻠَﺎﺓً ﻟَﺎ ﻳُﺼَﻠِّﻴﻬَﺎ ﻋِﻨْﺪَﻧَﺎ، ﻗَﺎﻝَ: ﻗُﻠْﻨَﺎ
ﻟَﻪُ: ﺣِﻴﻦَ ﺃَﺻْﺒَﺤْﻨَﺎ ﺃَﻓَﻄَﻨْﺖَ ﻟَﻨَﺎ ﺍﻟﻠَّﻴْﻠَﺔَ ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻧَﻌَﻢْ، ﺫَﺍﻙَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺣَﻤَﻠَﻨِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺻَﻨَﻌْﺖُ
ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺄَﺧَﺬَ ﻳُﻮَﺍﺻِﻞُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻭَﺫَﺍﻙَ ﻓِﻲ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮِ، ﻓَﺄَﺧَﺬَ
ﺭِﺟَﺎﻝٌ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺑِﻪِ ﻳُﻮَﺍﺻِﻠُﻮﻥَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﻣَﺎ ﺑَﺎﻝُ ﺭِﺟَﺎﻝٍ ﻳُﻮَﺍﺻِﻠُﻮﻥَ،
ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﻟَﺴْﺘُﻢْ ﻣِﺜْﻠِﻲ، ﺃَﻣَﺎ ﻭَﺍﻟﻠﻪِ، ﻟَﻮْ ﺗَﻤَﺎﺩَّ ﻟِﻲ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮُ ﻟَﻮَﺍﺻَﻠْﺖُ ﻭِﺻَﺎﻟًﺎ ﻳَﺪَﻉُ ﺍﻟْﻤُﺘَﻌَﻤِّﻘُﻮﻥَ
ﺗَﻌَﻤُّﻘَﻬُﻢْ »
“রমযান মাসে একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করছিলেন।
আমি তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালাম! এরপর অন্য এক
ব্যক্তি এসেও তাঁর পাশে দাঁড়ালেন। এভাবে আমরা
এক দল লোক হয়ে গেলাম। এরপর নরী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বুঝতে পারলেন যে
আমরা তাঁর পেছনে আছি তখন তিনি সালাত
সংক্ষেপ করে ফেললেন। তারপর তিনি আপন গৃহে
চলে গেলেন এবং এমন (দীর্ঘ) সালাত আদায় করলেন
যে, এভাবে তিনি আমাদের সাথে সালাত আদায়
করতেন না। সকালে আমরা তাকে বললাম, রাত্রে
আপনি আমাদের সম্পর্কে বুঝতে পেরেছিলেন
কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাইতো আমাকে
অনুপ্রাণিত করেছে ঐ কাজের যা আমি করেছি।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষভাগে আবার সাওমে
বেসাল করতে আরম্ভ করলেন। এ দেখে কতিপয়
সাহাবীও সাওমে বেসাল শুরু করলেন। তখন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
লোকদের কি হলো তারা যে সাওমে বেসাল আরম্ভ
করেছে! তোমরা তো আমার মত নও। আল্লাহর শপথ!
যদি মাস দীর্ঘায়িত হতো তবে আমি এমনভাবে
সাওমে বিসাল করতাম যার ফলে
সীমালংঘনকারীগণ সাওমে বেসাল করা ছেড়ে
দিত”। [158]
সাহরীর সময় পর্যন্ত সাওমে বেসাল পালন করা
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খেকে
বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে,
« ﻻَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻠُﻮﺍ، ﻓَﺄَﻳُّﻜُﻢْ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺃَﻥْ ﻳُﻮَﺍﺻِﻞَ، ﻓَﻠْﻴُﻮَﺍﺻِﻞْ ﺣَﺘَّﻰ ﺍﻟﺴَّﺤَﺮِ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺗُﻮَﺍﺻِﻞُ ﻳَﺎ
ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻗَﺎﻝَ: ﻟَﺴْﺖُ ﻛَﻬَﻴْﺌَﺘِﻜُﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺑِﻴﺖُ ﻟِﻲ ﻣُﻄْﻌِﻢٌ ﻳُﻄْﻌِﻤُﻨِﻲ، ﻭَﺳَﺎﻕٍ ﻳَﺴْﻘِﻴﻦِ »
“তোমরা সাওমে বেসাল করবে না। তোমাদের কেউ
যদি সাওমে বেসাল করতে চায়, তবে যেন সাহরীর
সময় পর্যন্ত করে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আপনি তো সাওমে বেসাল পালন
করেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের মতো নই।
আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার জন্য একজন
আহারদাতা রয়েছেন যিনি আমাকে আহার
করান, একজন পানীয় দানকারী আছেন যিনি
আমাকে পান করান”। [159]
কোনো ব্যক্তি তার ভাইয়ের নফল সাওম ভঙ্গের জন্য
কসম দিলে এবং তার জন্য এ সাওমের কাযা ওয়াজিব
মনে না করলে, যখন সাওম পালন না করা তার জন্য
উত্তম হয়
আউন ইবন আবু জুহায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার
পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«ﺁﺧَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﻴْﻦَ ﺳَﻠْﻤَﺎﻥَ، ﻭَﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ، ﻓَﺰَﺍﺭَ ﺳَﻠْﻤَﺎﻥُ ﺃَﺑَﺎ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ،
ﻓَﺮَﺃَﻯ ﺃُﻡَّ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﻣُﺘَﺒَﺬِّﻟَﺔً، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻬَﺎ : ﻣَﺎ ﺷَﺄْﻧُﻚِ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﺃَﺧُﻮﻙَ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻪُ ﺣَﺎﺟَﺔٌ
ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ، ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﻓَﺼَﻨَﻊَ ﻟَﻪُ ﻃَﻌَﺎﻣًﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻛُﻞْ؟ ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺈِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺎ
ﺃَﻧَﺎ ﺑِﺂﻛِﻞٍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺄْﻛُﻞَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺄَﻛَﻞَ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞُ ﺫَﻫَﺐَ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﻳَﻘُﻮﻡُ، ﻗَﺎﻝَ: ﻧَﻢْ،
ﻓَﻨَﺎﻡَ، ﺛُﻢَّ ﺫَﻫَﺐَ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻧَﻢْ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻗَﺎﻝَ: ﺳَﻠْﻤَﺎﻥُ ﻗُﻢِ ﺍﻵﻥَ، ﻓَﺼَﻠَّﻴَﺎ
ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺳَﻠْﻤَﺎﻥُ : ﺇِﻥَّ ﻟِﺮَﺑِّﻚَ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺣَﻘًّﺎ، ﻭَﻟِﻨَﻔْﺴِﻚَ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺣَﻘًّﺎ، ﻭَﻟِﺄَﻫْﻠِﻚَ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺣَﻘًّﺎ، ﻓَﺄَﻋْﻂِ ﻛُﻞَّ
ﺫِﻱ ﺣَﻖٍّ ﺣَﻘَّﻪُ، ﻓَﺄَﺗَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﺬَﻛَﺮَ ﺫَﻟِﻚَ ﻟَﻪُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﺻَﺪَﻕَ ﺳَﻠْﻤَﺎﻥُ »
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান
ও আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মাঝে
ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। (একবার) সালমান
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবু দারদা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসে
উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে মলিন কাপড়
পরিহিত দেখতে পান। তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা
করলে উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
বললেন, আপনার ভাই আবু দারদার পার্থিব কোনো
কিছুর প্রতি মোহ নেই। কিছুক্ষণ পরে আবু দারদা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এলেন। তারপর তিনি সালমান
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য আহার্য প্রস্তুত করান
এবং বলেন, আপনি খেয়ে নিন, আমি সাওম পালন
করছি। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আপনি
না খেলে আমি খাবো না। এরপর আবু দারদা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর
সঙ্গে খেলেন। রাত হলে আবু দারদা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (সালাত আদায়ে) দাঁড়াতে
গেলেন। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এখন
ঘুমিয়ে যান। আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবু দারদা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবার সালাতে দাঁড়াতে উদ্যত
হলেন, সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ঘুমিয়ে
যান। যখন রাতের শেষভাগ হলো, সালমান
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবু দারদা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, এখন দাঁড়ান। এরপর
তারা দু’জনে সালাত আদায় করলেন। পরে সালমান
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, আপনার রবের হক
আপনার ওপর আছে। আপনার নিজেরও হক আপনার ওপর
রয়েছে। আবার আপনার পরিবারেরও হক রয়েছে।
প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করুন। এরপর আবু
দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে এ
ঘটনা বর্ণনা করলেন। (সব শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সালমান ঠিকই
বলেছে”। [160]
সাওমের নিয়ত করা এবং যে ব্যক্তি রাতের বেলায়
রমযানের সাওমের নিয়ত করবে না তার সাওম আদায়
হবে না
হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা
করেন, তিনি বলেন,
«ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳُﺒَﻴِّﺖِ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﻓَﻠَﺎ ﺻِﻴَﺎﻡَ ﻟَﻪُ »
“যে ব্যক্তি (রমযানের সাওম ব্যতীত) রাত্রে
সাওমের নিয়ত না করে তার সাওম পালন করা হবে
না”। [161]
হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সূত্রে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
«ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳُﺠْﻤِﻊِ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﻗَﺒْﻞَ ﻃُﻠُﻮﻉِ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ، ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺼُﻮﻡُ »
“যে ব্যক্তি ফজর উদয়ের পূর্বেই রাত্রে সাওমের
নিয়ত না করে তার সাওম পালন হবে না”। [162]
নফল সাওমের নিয়ত দিনের বেলায় সূর্য হেলে
যাওয়ার পূর্বে করা জায়েয এবং নফল সাওম
পালনকারীকে ওযর ব্যতীতই সাওম ভঙ্গ করানো
জায়েয
উম্মুল মুমিনীন ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻳَﺎ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ، ﻫَﻞْ ﻋِﻨْﺪَﻛُﻢْ ﺷَﻲْﺀٌ؟
ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻓَﻘُﻠْﺖُ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻣَﺎ ﻋِﻨْﺪَﻧَﺎ ﺷَﻲْﺀٌ ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺈِﻧِّﻲ ﺻَﺎﺋِﻢٌ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻓَﺨَﺮَﺝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺄُﻫْﺪِﻳَﺖْ ﻟَﻨَﺎ ﻫَﺪِﻳَّﺔٌ ﺃَﻭْ ﺟَﺎﺀَﻧَﺎ ﺯَﻭْﺭٌ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﺟَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗُﻠْﺖُ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺃُﻫْﺪِﻳَﺖْ ﻟَﻨَﺎ ﻫَﺪِﻳَّﺔٌ ﺃَﻭْ ﺟَﺎﺀَﻧَﺎ ﺯَﻭْﺭٌ ﻭَﻗَﺪْ ﺧَﺒَﺄْﺕُ
ﻟَﻚَ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻗَﺎﻝَ: ﻣَﺎ ﻫُﻮَ؟ » ﻗُﻠْﺖُ: ﺣَﻴْﺲٌ، ﻗَﺎﻝَ: «ﻫَﺎﺗِﻴﻪ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﺑِﻪِ ﻓَﺄَﻛَﻞَ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺪْ ﻛُﻨْﺖُ
ﺃَﺻْﺒَﺤْﺖُ ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻃَﻠْﺤَﺔُ: ﻓَﺤَﺪَّﺛْﺖُ ﻣُﺠَﺎﻫِﺪًﺍ ﺑِﻬَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺫَﺍﻙَ ﺑِﻤَﻨْﺰِﻟَﺔِ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻳُﺨْﺮِﺝُ
ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔَ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﻟِﻪِ، ﻓَﺈِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺃَﻣْﻀَﺎﻫَﺎ ﻭَﺇِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺃَﻣْﺴَﻜَﻬَﺎ »
“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তোমার
নিকট (খাওয়ার মতো) কোনো কিছু আছে কি? আমি
বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার নিকট কিছুই নেই।
তখন তিনি বললেন, তাহলে আমি সাওম পালন
করছি। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বাইরে চলে গেলেন। ইত্যবসরে
আমাদের নিকট কিছু হাদিয়া আসলো কিংবা
তিনি বলেছেন, দর্শনার্থী কতিপয় লোক আমাদের
নিকট আসলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসলে আমি
বললাম, ইয়া রাসুলল্লাহ! আমাদের কিছু হাদিয়া
দেওয়া হয়েছে কিংবা তিনি বলেছেন, কতিপয়
দর্শনার্থী আমাদের নিকট এসেছেন। আমি আপনার
জন্য কিছু খাবার সযত্নে রেখে দিয়েছি। তিনি
বললেন, তা কী? আমি বললাম, হায়স অর্থাৎ ঘি এবং
পনির মিশ্রিত খেজুর। তিনি বললেন, নিয়ে আস।
তখন আমি তা নিয়ে এলাম। তিনি তা খেলেন।
তারপর বললেন, আমি ভোরে সাওম পালনের নিয়ত
করেছিলাম। বর্ণনাকারী তালহা রহ. বলেন, আমি এ
হাদীস মুজাহিদ রহ.-এর নিকট বর্ণনা করার পর
তিনি বললেন, এ কাজটি ঐ ব্যক্তির মতো যে তার
মাল থেকে সদকা বের করলো। সে ইচ্ছা করলে তা
দান করতে পারেন আর ইচ্ছা করলে রেখেও দিতে
পারে।” [163]
লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻤﺄﻣﻮﻥ ﺍﻷﺯﻫﺮﻱ
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ﻣﺮﺍﺟﻌﺔ: ﺩ / ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻣﺤﻤﺪ ﺯﻛﺮﻳﺎ
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ,
সৌদিআরব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন