আকীদাহ্ সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাস’আলাহ্
সূচিপত্র
ক্রম বিষয়
১. ভূমিকা
২. ‘আকীদার শাব্দিক বিশ্লেষণ
৩. ‘আকীদার পারিভাষিক অর্থ
৪. আকীদার গুরুত্ব
৫. প্রশ্নোত্তর
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
ভূমিকা
প্রতিটি মুসলিমের জেনে রাখা উচিত যে, আল-
কুরআন ও সহীহ সুন্নাহভিত্তিক বিশুদ্ধ ‘আমল ছাড়া
অন্যকিছু আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলার নিকট
গৃহীত হবে না; আর বিশুদ্ধ ‘আমলের অপরিহার্য
পূর্বশর্ত ‘‘ইসলাহুল ‘আকীদাহ বা ‘আকীদাহ্
সংশোধন করা। কারণ বিশুদ্ধ ‘আকীদাহ সম্পর্কিত
জ্ঞানার্জন এবং তা মনে-প্রাণে লালন করা
ব্যতীত একজন মুসলিম আপাদমস্তক খাঁটি মুমিন হতে
পারবে না। এটা অপ্রিয় সত্য যে, বাংলাদেশসহ
ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমগণ তাওহীদ তথা
একত্ববাদ, আল্লাহর পরিচয় ও অবস্থান এবং
রিসালাত ও ইসলামের অন্যান্য হুকুম-আহকাম
সম্পর্কে ভ্রান্ত ‘আকীদাহ্ পোষণ করে থাকেন:
তাদের এ ভ্রান্ত ধারণা কোনো কোনো ক্ষেত্রে
এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, ঈমানের অস্তিত্বই
হুমকির মুখে নিপতিত হয়েছে। সে সকল বিভ্রান্ত
মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথের দিশা দিতে ঈমানী
দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের এ
প্রয়াসকে কবুল করুন এবং পথহারা পথিককে সিরাতে
মুস্তাকিমের দিশা দান করুন। আমীন।
‘আকীদার শাব্দিক বিশ্লেষণ:
ﻛﻠﻤﺔ " ﻋﻘﻴﺪﺓ " ﻣﺄﺧﻮﺫﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻘﺪ ﻭﺍﻟﺮﺑﻂ ﻭﺍﻟﺸﺪّ ﺑﻘﻮﺓ، ﻭﻣﻨﻪ ﺍﻹﺣﻜﺎﻡ ﻭﺍﻹﺑﺮﺍﻡ،
ﻭﺍﻟﺘﻤﺎﺳﻚ ﻭﺍﻟﻤﺮﺍﺻﺔ. ( ﺑﻴﺎﻥ ﻋﻘﻴﺪﺓ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻭﻟﺰﻭﻡ ﺍﺗﺒﺎﻋﻬﺎ 1/4 )
‘আকীদাহ্ শব্দটি ‘আক্দ মূলধাতু থেকে গৃহীত। যার
অর্থ হচ্ছে, সূদৃঢ়করণ, মজবুত করে বাঁধা। (বায়ানু
আকীদাতু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, ১/৪)
‘আকীদার পারিভাষিক অর্থ:
ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﺍﻹﺳﻼﻣﻴﺔ : ﻫﻲ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺍﻟﺠﺎﺯﻡ ﺑﺎﻟﻠﻪ، ﻭﻣﻼﺋﻜﺘﻪ، ﻭﻛﺘﺒﻪ، ﻭﺭﺳﻠﻪ، ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﺧﺮ،
ﻭﺍﻟﻘﺪﺭ ﺧﻴﺮﻩ ﻭﺷﺮﻩ، ﻭﺑﻜﻞ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ، ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ﻣﻦ ﺃﺻﻮﻝ
ﺍﻟﺪﻳﻦ، ﻭﺃﻣﻮﺭﻩ، ﻭﺃﺧﺒﺎﺭﻩ. ( ﺭﺳﺎﺋﻞ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ 7/2 ).
“শারী‘আতের পরিভাষায় ‘আকীদাহ্ হচ্ছে, মহান
আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর
কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, শেস দিবস তথা মৃত্যু
পরবর্তী যাবতীয় বিষয় ও তাকদীরের ভাল-মন্দের
প্রতি এবং আল-কুরআনুল হাকীম ও সহীহ হাদীসে
উল্লেখিত দীনের সকল মৌলিক বিষয়ের প্রতি
অন্তরের সুদৃঢ় মজবুত ও বিশুদ্ধ বিশ্বাসের নাম
‘আকীদাহ।” (রিসালাতুম শাইখ মুহাম্মাদ ইবন
ইবরাহীম ফিল ‘আকীদাহ্ ৭/২)
‘আকীদার গুরুত্ব:
আকীদার গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে এর গুরুত্ব
বহনকারী কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো:
১. এক আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসীগণ
প্রশান্তচিত্তের অধিকারী, বিপদে-আপদে, হর্যে-
বিষাদে তারা শুধু তাঁকেই আহ্বান করে, পক্ষান্তরে
বহু-ঈশ্বরবাদীরা বিপদক্ষণে কাকে ডাকবে, এ
সিদ্ধান্ত নিতেই কিংকর্তব্য বিমুঢ়।
২. মহান আল্লাহ সর্বোজ্ঞ, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা
সুতরাং তিনি সব জানেন, সব দেখেন এবং সব
শোনেন। কোনো কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়-এমন
বিশ্বাস যিনি করবেন, তিনি আল্লাহর ইচ্ছায়
প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল পাপ হতে মুক্ত থাকতে
পারবেন।
৩. নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন
ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের অতি নিকটবর্তী। তিনি
দো‘আকারীর দো‘আ কবুল করেন, বিপদগ্রস্তকে
বিপদমুক্ত করেন। বিশুদ্ধ ‘আকীদাহ্ বিশ্বাস
লালনকারীগণ এটি মনেপ্রাণে গ্রহণ করে
সর্বাবস্থায় তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে।
পক্ষান্তরে একাধিক মা‘বুদে বিশ্বাসীগণ
দোদুল্যমান অবস্থায় অস্থির-অশান্ত মনে এদিক-
ওদিক ছুটোছুটি করে।
আমরা এ ক্ষুদ্র পুস্তিকায় মহান আল্লাহর সত্তা
সংক্রান্ত এবং তিনি তাঁর নিজের সম্পর্কে যে
সকল সুন্দর নাম উন্নত গুণাবলী ও কর্মের কথা ব্যক্ত
করেছেন, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার
প্রয়াস পাব ইনশা-আল্লাহ।
প্রশ্নোত্তর
১. প্রশ্ন: আল্লাহ কোথায়?
উত্তর: মহান আল্লাহ স্ব-সত্তায় সপ্ত আসমানের
উপর অবস্থিত মহান আরশের উপরে আছেন। দলীল:
কুরআন, সুন্নাহ ও প্রসিদ্ধ চার ইমামের উক্তি- মহান
আল্লাহর বাণী:
﴿ ﭐﻟﺮَّﺣۡﻤَٰﻦُ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﻌَﺮۡﺵِ ﭐﺳۡﺘَﻮَﻯٰ ٥﴾ [ ﻃﻪ: ٥ ]
“রহমান (পরম দয়াময় আল্লাহ) ‘‘আরশের উপর
উঠেছেন।” [সূরা ত্বা-হা: ২০: ৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একজন দাসীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন:
« ﺃَﻳْﻦَ ﺍﻟﻠﻪُ؟ » ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ، ﻗَﺎﻝَ : «ﻣَﻦْ ﺃَﻧَﺎ؟ » ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻗَﺎﻝَ:
«ﺃَﻋْﺘِﻘْﻬَﺎ، ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻣُﺆْﻣِﻨَﺔٌ »
“আল্লাহ কোথায়? দাসী বলল: আসমানের উপরে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন: আমি কে? দাসী বলল: আপনি আল্লাহর
রাসূল। অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন: একে আজাদ (মুক্ত) করে দাও,
কেননা সে একজন মুমিনা নারী।” (সহীহ মুসলিম:
১২২৭)
ইমাম আবু হানীফাহ (র)-এর উক্তি:
ইমাম আবু হানীফাহ রহ. বলেন,
« ﻣﻦ ﻗﺎﻝ: ﻻ ﺃﻋﺮﻑ ﺭﺑﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺃﻭ ﻓﻲ ﺍﻷﺭﺽ ﻓﻘﺪ ﻛﻔﺮ، ﻭﻛﺬﺍ ﻣﻦ ﻗﺎﻝ: ﺇﻧﻪ ﻋﻠﻰ
ﺍﻟﻌﺮﺵ ﻭﻻ ﺃﺩﺭﻱ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﺃﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺃﻭ ﻓﻲ ﺍﻷﺭﺽ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳُﺪﻋﻰ ﻣﻦ ﺃﻋﻠﻰ ﻻ
ﻣﻦ ﺃﺳﻔﻞ » [ﺍﻟﻔﻘﻪ ﺍﻷﻛﺒﺮ ( 1/135 )]
“যে ব্যক্তি বলবে, আমি জানি না, আমার রব
আসমানে না জমিনে - সে কাফির। অনুরূপ (সেও
কাফির) যে বলবে, তিনি আরশে আছেন, তবে আমি
জানি না, ‘আরশ আসমানে না জমিনে। (আল ফিকহুল
আকবার: ১/১৩৫)
ইমাম মালিক (র)-এর উক্তি:
তার ছাত্র ইয়াহইয়া ইবন ইয়াহইয়া বলেন, একদা
আমরা ইমাম মালিক ইবন আনাস রহ. এর কাছে বসা
ছিলাম, এমন সময় তার কাছে এক লোক এসে বলল,
« ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ، ( ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﺍﺳﺘﻮﻯ )، ﻛﻴﻒ ﺍﺳﺘﻮﻯ؟ ﻗﺎﻝ: ﻓﺄﻃﺮﻕ ﻣﺎﻟﻚ
ﺭﺃﺳﻪ، ﺣﺘﻰ ﻋﻼﻩ ﺍﻟﺮﺣﻀﺎﺀ، ﺛﻢ ﻗﺎﻝ: ﺍﻻﺳﺘﻮﺍﺀ ﻏﻴﺮ ﻣﺠﻬﻮﻝ، ﻭﺍﻟﻜﻴﻒ ﻏﻴﺮ ﻣﻌﻘﻮﻝ،
ﻭﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺑﻪ ﻭﺍﺟﺐ، ﻭﺍﻟﺴﺆﺍﻝ ﻋﻨﻪ ﺑﺪﻋﺔ، ﻭﻣﺎ ﺃﺭﺍﻙ ﺇﻻ ﻣﺒﺘﺪﻋﺎً، ﻓﺄﻣﺮ ﺑﻪ ﺃﻥ ﻳﺨﺮﺝ. ﻭﻓﻲ
ﺭﻭﺍﻳﺔ: ﺍﻻﺳﺘﻮﺍﺀ ﻣﻌﻠﻮﻡ ﻭﺍﻟﻜﻴﻒ ﻏﻴﺮ ﻣﻌﻠﻮﻡ، ﻭﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺑﻪ ﻭﺍﺟﺐ، ﻭﺍﻟﺴﺆﺍﻝ ﻋﻨﻪ ﺑﺪﻋﺔ.
[ﺍﻻﻋﺘﻘﺎﺩ ﻟﻠﺒﻴﻬﻘﻲ ( 1/67) ، ﺣﺎﺷﻴﺔ ﺍﻟﺴﻨﺪﻱ ﻋﻠﻰ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ( 1/167) ، ﺣﺎﺷﻴﺔ
ﺍﻟﺴﻨﺪﻱ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ( 6/38) ، ﻣﺮﻗﺎﺓ ﺍﻟﻤﻔﺎﺗﻴﺢ ﺷﺮﺡ ﻣﺸﻜﺎﺓ ﺍﻟﻤﺼﺎﺑﻴﺢ ( 2/17،
ﻭ 13/89 )]
“হে আবু ‘আব্দুল্লাহ! (মহান আল্লাহ বলেন) ‘‘রহমান
(পরম দয়াময় আল্লাহ) ‘আরশের উপর উঠেছেন” (সূরা
ত্বাহা: ২০:৫)। এই উপরে উঠা কীভাবে? এর রূপ ও ধরণ
কেমন? প্রশ্নটি শোনামাত্র ইমাম মালিক (র)
মাথা নীচু করলেন, এমনকি তিনি ঘর্মাক্ত হলেন:
অতঃপর তিনি বললেন: ইসতিওয়া শব্দটির অর্থ
(উপরে উঠা) সকলের জানা, কিন্তু এর ধরণ বা রূপ
অজানা, এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব এবং এর ধরণ
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা বিদ‘আত। আর আমি
তোমাকে বিদ‘আতী ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না।
অতঃপর তিনি (র) তাকে মজলিস থেকে বের করে
দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। (ইতিকাদ লিল
বাইহাকী ১/৬৭, হাশিয়াতুস সিন্ধী ‘আলা ইবনি
মাজাহ ১/১৬৭, মিরকাতুল মাফাতীহ ২/১৭, ১৩/৮৯)।
ইমাম শাফি‘ঈ (র)-এর উক্তি:
« ﻭﺃﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻋﺮﺷﻪ ﻓﻲ ﺳﻤﺎﺋﻪ » ﺗﻬﺬﻳﺐ ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺇﻳﻀﺎﺡ ﻣﺸﻜﻼﺗﻪ
( 2/406 ).
আর নিশ্চয় আল্লাহ আসমানের উপরে স্বীয় আরশের
উপর উঠেছেন। (তাহযীবু সুনানে আবী দাউদ ২/৪০৬)
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বাল (র)-এর উক্তি:
মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আল-কাইসী বলেন, আমি
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বলকে জিজ্ঞেস করলাম,
« ﻳُﺤﻜﻰ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻙ ﺃﻧﻪ ﻗﻴﻞ ﻟﻪ: ﻛﻴﻒ ﻳُﻌﺮﻑ ﺭﺑﻨﺎ؟ ﻗﺎﻝ: ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺴﺎﺑﻌﺔ ﻋﻠﻰ
ﻋﺮﺷﻪ، ﻗﺎﻝ ﺃﺣﻤﺪ : ﻫﻜﺬﺍ ﻫﻮ ﻋﻨﺪﻧﺎ » ﺗﻬﺬﻳﺐ ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺇﻳﻀﺎﺡ ﻣﺸﻜﻼﺗﻪ
( 2/406 ).
“এ মর্মে ইবনুল মুবারাক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল,
‘‘আমাদের রবের পরিচয় কীভাবে জানবো? উত্তরে
তিনি বললেন, ‘‘সাত আসমানের উপর ‘আরশে। (এ
ব্যাপারে আপনার মতামত কী?) ইমাম আহমাদ (র)
বললেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নিকট এ রকমই। (তাহযীবু
সুনানে আবী দাউদ ২/৪০৬)
উল্লিখিত দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা মহান আল্লাহ
তা‘আলার পরিচয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া
যায়।
২. প্রশ্ন: মহান আল্লাহ ‘আরশে আযীমের উপরে
আছেন-এটা আল-কুরআনের কোন সূরায় বলা হয়েছে?
উত্তর: এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট সাতটি
আয়াত রয়েছে:
১. সূরা আল-‘আরাফ ৭:৫৪
২. সূরা ইউনুস ১০:৩
৩. সূরা আর-রা‘দ ১৩:২
৪. সূরা ত্বা-হা ২০:৫
৫. সূরা আল-ফুরকান ২৫:৫৯
৬. সূরা আস-সাজদাহ্ ৩২:৪
৭. সূরা আল-হাদীদ ৫৭:৪
৩. প্রশ্ন : পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে, ‘‘আল্লাহ
ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন”-[সূরা আল বাকারাহ্
২:১৫৩], ‘‘আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছে-[সূরা
আল-বাকারাহ্ ২:১৯৪), ‘‘আর আমরা গ্রীবাদেশ/
শাহারগের থেকেও নিকটে”- [সূরা ক্ব-ফ :১৬],
‘‘যেখানে তিনজন চুপে চুপে কথা বলেন সেখানে
চতুর্থজন আল্লাহ” [সূরা আল-মুজাদালাহ্:৭] -তাহলে
এই আয়াতগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা কী?
উত্তর: মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর জ্ঞান, শ্রবণ,
দর্শন ও ক্ষমতার মাধ্যমে সকল সৃষ্টির সাথে আছেন।
অর্থাৎ তিনি সপ্ত আসমানের উপর অবস্থিত
‘আরশের উপর থেকেই সব কিছু দেখছেন, সব কিছু
শুনছেন, সকল বিষয়ে জ্ঞাত আছেন। সুতরাং তিনি
দূরে থেকেও যেন কাছেই আছেন।
সাথে থাকার অর্থ, গায়ে গায়ে লেগে থাকা নয়।
মহান আল্লাহ মূসা ও হারূন আলাইহিমাস
সালামকে ফির‘আওনের নিকট যেতে বললেন, তারা
ফির‘আওনের অত্যাচারের আশংকা ব্যক্ত করলেন।
আল্লাহ তাদের সম্বোধন করে বললেন,
﴿ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﺎ ﺗَﺨَﺎﻓَﺎٓۖ ﺇِﻧَّﻨِﻲ ﻣَﻌَﻜُﻤَﺎٓ ﺃَﺳۡﻤَﻊُ ﻭَﺃَﺭَﻯٰ ٤٦﴾ [ ﻃﻪ: ٤٦ ]
‘‘তোমরা ভয় পেও না। নিশ্চয় আমি তোমাদের
সাথে আছি। (অর্থাৎ) শুনছি এবং দেখছি।” [সূরা ত্ব-
হা ২০:৪৬]
এখানে ‘‘সাথে থাকার অর্থ এটা নয় যে, মূসা
আলাইহিস সালাম-এর সাথে মহান আল্লাহ
তা‘আলাও ফির‘আওনের দরবারে গিয়েছিলেন। বরং
‘‘সাথে থাকার ব্যাখ্যা তিনি নিজেই করছেন এই
বলে যে, ‘‘শুনছি এবং দেখছি।”
অতএব আল্লাহর সাথে ও কাছে থাকার অর্থ হলো
জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতার মাধ্যমে, আর স্ব-
সত্তায় তিনি ‘আরশের উপর রয়েছেন।
০৪. প্রশ্ন : ‘‘মুমিনের কলবে আল্লাহ থাকেন বা
মুমিনের কলব আল্লাহর ‘আরশ’ কথাটির ভিত্তি কী?
উত্তর: কথাটি ভিত্তিহীন, মগজপ্রসূত,
কপোলকল্পিত। এর সপক্ষে একটিও আয়াত বা সহীহ
হাদীস নেই।
আছে জনৈক কথিত বুজুর্গের উক্তি, ( ﻗﻠﺐ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﻋﺮﺵ ﺍﻟﻠﻪ )
‘‘মুমিনের কলব আল্লাহর ‘আরশ। (আল মাওযূ‘আত লিস্
সাগানী বা সাগানী প্রণীত জাল হাদীসের
সমাহার/ভান্ডার- ১/৫০, তাযকিরাতুল মাউযূ‘আত
লিল-মাকদিসী ১/৫০)
সাবধান!!! আরবী হলেই কুরআন-হাদীস হয় না। মনে
রাখবেন, দীনের ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ ব্যতীত
বুজুর্গের কথা মূল্যহীন-অচল।
উপরোক্ত উক্তিকারীদের মহান আল্লাহ ও তাঁর
মহান ‘আরশের বিশালতা সম্পর্কে ন্যূনতমও ধারণাও
নেই। তারা জানেন না যে, স্রষ্টা সৃষ্টির মাঝে
প্রবেশ করেন না এবং স্রষ্টাকে ধারণ করার মত এত
বিশাল কোনো সৃষ্টিও নেই। বর্তমান পৃথিবীতে
দেড়শত কোটি মুমিনের দেড়শত কোটি কলব আছে।
প্রতি কলবে আল্লাহ থাকলে আল্লাহর সংখ্যা কত
হবে? যদি বলা হয় মুমিনের কলব আয়নার মত। তাহলে
বলব, আয়নায় তো ব্যক্তি থাকে না, ব্যক্তির
প্রতিচ্ছবি থাকে। ব্যক্তি থাকার জায়গা আয়না
ব্যতীত অপর একটি স্থান।
তবে এ কথা অমোঘ সত্য যে, মুমিনের কলবে মহান
আল্লাহর প্রতি ভালবাসা আর আনুগত্য ও বশ্যতা
স্বীকারের অদম্য মোহ স্পৃহা থাকে।
﴿ ﻭَﻟَٰﻜِﻦَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺣَﺒَّﺐَ ﺇِﻟَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺈِﻳﻤَٰﻦَ ﻭَﺯَﻳَّﻨَﻪُۥ ﻓِﻲ ﻗُﻠُﻮﺑِﻜُﻢۡ﴾ [ ﺍﻟﺤﺠﺮﺍﺕ: ٧ ]
‘‘বরং মহান আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে
প্রিয় করে তুলেছেন এবং সেটাকে সৌন্দর্য মন্ডিত
করেছেন তোমাদের হৃদয়ের গহীনে।” [সূরা আল-
হুজুরাত ৪৯:৭]
০৫. প্রশ্ন : “মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান”
কথাটা কি সঠিক?
উত্তর: কথাটি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ, যদি এর দ্বারা
উদ্দেশ্য করা হয় যে, ‘‘স্বয়ং আল্লাহ সর্বত্র
বিরাজমান” তাহলে সঠিক নয়। আর যদি এর দ্বারা
বুঝানো হয় যে, ‘‘মহান আল্লাহর ক্ষমতা সর্বত্র
বিরাজমান” তাহলে সঠিক; কেননা আমরা জানি
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ওহী প্রেরণ করতে মাধ্যম
হিসেবে জিবরীল আলাইহিস সালামকে ব্যবহার
করেছেন।
﴿ ﻧَﺰَﻝَ ﺑِﻪِ ﭐﻟﺮُّﻭﺡُ ﭐﻟۡﺄَﻣِﻴﻦُ ١٩٣ ﻋَﻠَﻰٰ ﻗَﻠۡﺒِﻚَ﴾ [ ﺍﻟﺸﻌﺮﺍﺀ : ١٩٣، ١٩٤ ]
‘‘এটাকে (কুরআনকে) রুহুল আমীন (জিবরীল)
আলাইহিস সালাম আপনার হৃদয়ে অবতীর্ণ
করেছেন।” [সূরা আশ-শু‘আরা: ১৯৩-১৯৪]
তিনি নিজেই সর্বত্র বিরাজ করলে মাধ্যমের
দরকার হল কেন?
আমরা আরও জানি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা‘আলার সাথে অত্যন্ত নিকট থেকে কথোপকথন
করার জন্য মি‘রাজ রজনীতে সাত আসমানের উপর
আরোহণ করেছিলেন। [সূরা আন-নাজম ৫৩:০১-১৮]
মহান আল্লাহ যদি সর্বত্রই থাকবেন, তাহলে
মিরাজে যাওয়ার প্রয়োজন কী?
অতএব ‘‘মহান আল্লাহ স্ব-সত্তায় সর্বত্র
বিরাজমান”এ কথাটি বাতিল, কুরআন-হাদীস
পরিপন্থী ও আল্লাহর জন্য মানহানীকর। বরং তাঁর
জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান।
০৬. প্রশ্ন: মহান আল্লাহর অবয়ব সম্পর্কে একজন
খাঁটি মুসলিমের ‘‘আকীদাহ্-বিশ্বাস কীরূপ হবে।
অর্থাৎ মহান আল্লাহর চেহারা বা মুখমন্ডল, হাত,
চক্ষু আছে কি? থাকলে তার দলীল প্রমাণ কী?
উত্তর: মহান আল্লাহ মানব জাতিকে আল-কুরআনের
মাধ্যমেই পথের দিশা দান করেছেন। আল্লাহ
বলেন:
﴿ ﻛُﻞُّ ﻣَﻦۡ ﻋَﻠَﻴۡﻬَﺎ ﻓَﺎﻥٖ ٢٦ ﻭَﻳَﺒۡﻘَﻰٰ ﻭَﺟۡﻪُ ﺭَﺑِّﻚَ ﺫُﻭ ﭐﻟۡﺠَﻠَٰﻞِ ﻭَﭐﻟۡﺈِﻛۡﺮَﺍﻡِ ٢٧﴾ [ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ: ٢٦، ٢٧ ]
‘‘(কিয়ামাতের দিন) ভূপৃষ্ঠে সবকিছু ধ্বংস হয়ে
যাবে। (হে রাসূল) আপনার রবের মহিমাময় ও
মহানুভব চেহারা (সত্তাই) একমাত্র অবশিষ্ট
থাকবে।” [সূরা আর-রহমান ৫৫: ২৬-২৭]
এ আয়াতে মহান আল্লাহর চেহারা প্রমাণিত হয়।
মহান আল্লাহর হাত আছে। এর স্বপক্ষে আল কুরআনের
দলীল:
﴿ ﻗَﺎﻝَ ﻳَٰٓﺈِﺑۡﻠِﻴﺲُ ﻣَﺎ ﻣَﻨَﻌَﻚَ ﺃَﻥ ﺗَﺴۡﺠُﺪَ ﻟِﻤَﺎ ﺧَﻠَﻘۡﺖُ ﺑِﻴَﺪَﻱَّۖ﴾ [ﺹ: ٧٥ ]
‘‘আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস! আমি নিজ দু’হাতে
(আদমকে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সামনে সাজদাহ্
করতে তোমাকে কিসে বাধা দিলো?” [সূরা সাদ
৩৮:৭৫]
অনুরূপ ভাবে মহান আল্লাহর চক্ষু আছে। যেমন:
আল্লাহ নবী মূসা আলাইহিস সালামকে লক্ষ্য করে
বলেছিলেন:
﴿ ﻭَﺃَﻟۡﻘَﻴۡﺖُ ﻋَﻠَﻴۡﻚَ ﻣَﺤَﺒَّﺔٗ ﻣِّﻨِّﻲ ﻭَﻟِﺘُﺼۡﻨَﻊَ ﻋَﻠَﻰٰ ﻋَﻴۡﻨِﻲٓ ٣٩ ﴾ [ ﻃﻪ: ٣٩ ]
“আর আমি আমার পক্ষ হতে তোমার প্রতি
ভালোবাসা বর্ষণ করেছিলাম, যাতে তুমি আমার
চোখের সামনে প্রতিপালিত হও।” [সূরা ত্বাহা
২০:৩৯]
তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্ত্বনা
দিয়ে বলেন:
﴿ ﻭَﭐﺻۡﺒِﺮۡ ﻟِﺤُﻜۡﻢِ ﺭَﺑِّﻚَ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺑِﺄَﻋۡﻴُﻨِﻨَﺎۖ ﴾ [ ﺍﻟﻄﻮﺭ: ٤٨ ]
“(হে রাসূল!) আপনি আপনার রবের নির্দেশের
কারণে ধৈর্যধারণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি আমার
চোখেন সামনেই রয়েছেন।” [সূরা আত-তূর ৫২:৪৮]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺳَﻤِﻴﻊُۢ ﺑَﺼِﻴﺮٌ ١﴾ [ ﺍﻟﻤﺠﺎﺩﻟﺔ: ١ ]
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা শ্রবণ করেন ও
দেখেন।” [সূরা আল-মুজা-দালাহ্ ৫৮:১]
উল্লিখিত আয়াতসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়
যে, মহান আল্লাহর চেহারা, হাত, চোখ, আছে;
তিনি অবয়বহীন নন; বরং তাঁর অবয়ব রয়েছে যদিও
আমরা সেটার ধরণ বা রূপ সম্পর্কে কোনো কিছুই
জানি না। তবে আমাদেরকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে
হবে যে, মহান আল্লাহর শ্রবণ-দর্শন ইত্যাদি
মানুষের শ্রবণ-দর্শনের অনুরূপ নয়। মহান আল্লাহ
বলেন:
﴿ ﻟَﻴۡﺲَ ﻛَﻤِﺜۡﻠِﻪِۦ ﺷَﻲۡﺀٞۖ ﻭَﻫُﻮَ ﭐﻟﺴَّﻤِﻴﻊُ ﭐﻟۡﺒَﺼِﻴﺮُ ١١﴾ [ﺍﻟﺸﻮﺭﺍ: ١١ ]
‘‘আল্লাহর সাদৃশ্য কোনো বস্তুই নেই এবং তিনি
শুনেন ও দেখেন।” [সূরা আশ্-শূরা ৪২:১১]
মহান আল্লাহর এ তিনটি গুণাবলীসহ যাবতীয়
গুণাবলীর ক্ষেত্রে চারটি বিষয় মনে রাখতে হবে:
১. এগুলো অস্বীকার করা যাবে না
২. অপব্যাখ্যা করা যাবে না
৩. সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য দেয়া যাবে না এবং
৪. কল্পনায় ধরণ, গঠন আঁকা যাবে না।
০৭. প্রশ্ন : একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ
গায়েবের খবর বলতে পারে কী?
উত্তর: অবশ্যই না; একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সৃষ্টির
আর কেউ গায়েব এর খবর রাখে না। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন:
﴿ ﺇِﻧِّﻲٓ ﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﻏَﻴۡﺐَ ﭐﻟﺴَّﻤَٰﻮَٰﺕِ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﻭَﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﺗُﺒۡﺪُﻭﻥَ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗَﻜۡﺘُﻤُﻮﻥَ ٣٣﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ:
٣٣]
‘‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) আসমান ও জমিনের
যাবতীয় গায়েবী বিষয় সম্পর্কে খুব ভালভাবেই
অবগত আছি এবং সে সকল বিষয়েও জানি যা
তোমরা প্রকাশ করো, আর যা তোমার গোপন
রাখো।” [সূরা আল-বাকারাহ্ ২:৩৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿ ۞ ﻭَﻋِﻨﺪَﻩُۥ ﻣَﻔَﺎﺗِﺢُ ﭐﻟۡﻐَﻴۡﺐِ ﻟَﺎ ﻳَﻌۡﻠَﻤُﻬَﺎٓ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَۚ ﴾ [ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ: ٥٩ ]
‘‘সে মহান আল্লাহর কাছে গায়েবী জগতের সকল
চাবিকাঠি রয়েছে।” সেগুলো একমাত্র তিনি
(আল্লাহ) ছাড়া আর কেউই জানে না।” [সূরা আল-
আন‘আম ৬:৫৯]
০৮. প্রশ্ন : আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী গায়েব এর খবর বলতে
পারতেন?
উত্তর: আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম গায়েবের খবর জানতেন না। তবে
মহান আল্লাহ ওয়াহীর মাধ্যমে যা তাঁকে
জানিয়েছেন- তা ব্যতীত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻗُﻞ ﻟَّﺎٓ ﺃَﻣۡﻠِﻚُ ﻟِﻨَﻔۡﺴِﻲ ﻧَﻔۡﻌٗﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺿَﺮًّﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﺷَﺎٓﺀَ ﭐﻟﻠَّﻪُۚ ﻭَﻟَﻮۡ ﻛُﻨﺖُ ﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﭐﻟۡﻐَﻴۡﺐَ ﻟَﭑﺳۡﺘَﻜۡﺜَﺮۡﺕُ
ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﺮِ ﻭَﻣَﺎ ﻣَﺴَّﻨِﻲَ ﭐﻟﺴُّﻮٓﺀُۚ ﺇِﻥۡ ﺃَﻧَﺎ۠ ﺇِﻟَّﺎ ﻧَﺬِﻳﺮٞ ﻭَﺑَﺸِﻴﺮٞ ﻟِّﻘَﻮۡﻡٖ ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ١٨٨ ﴾ [ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ :
١٨٨ ]
‘‘(হে মুহাম্মাদ!) আপনি ঘোষণা করুণ, একমাত্র
আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ,
লাভ-ক্ষতি, কল্যাণ-অকল্যাণ ইত্যাদি বিষয়ে
একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আমার কোনোই হাত নেই।
আর আমি যদি গায়েব জানতাম, তাহলে বহু কল্যাণ
লাভ করতে পারতাম, আর কোনো প্রকার অকল্যাণ
আমাকে স্পর্শ করতে পারত না।” [সূরা আল-আ‘রাফ
৭:১৮৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
এর নবূওয়াতি জীবনেই এ কথার প্রমাণ মেলে। তিনি
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদি গায়েব
জানতেন, তাহলে অবশ্যই উহুদের যু্দ্ধ এবং তায়েফসহ
অন্যান্য ক্ষেত্রে কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতেন না।
যেখানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব
রাসূলুল্লাহ (সা) গায়েব জানতেন না, সেখানে অন্য
কারো পক্ষেই গায়েব জানা অসম্ভব। সুতরাং
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ গায়েব জানে না- আর এ
সম্পর্কে কারো মনে বিন্দুমাত্রও সংশয় থাকলে, সে
স্পষ্ট শির্কের গুনাহে নিমজ্জিত হবে, যা আন্তরিক
তাওবাহ্ ছাড়া ক্ষমার অযোগ্য।
০৯. প্রশ্ন: ইহ-জীবনে মুমিন বান্দাদের পক্ষে
স্বপ্নযোগে বা স্বচক্ষে মহান আল্লাহর দর্শন লাভ
করা সম্ভব কি?
উত্তর: আল-কুরআনের আয়াত দ্বারা এটা প্রমাণিত
যে, দুনিয়ার জীবনে একনিষ্ঠ মুমিন বান্দাগণও
স্বচক্ষে মহান আল্লাহকে দেখতে পাবেন না।
আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺃَﺭِﻧِﻲٓ ﺃَﻧﻈُﺮۡ ﺇِﻟَﻴۡﻚَۚ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻦ ﺗَﺮَﻯٰﻨِﻲ﴾ [ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ: ١٤٣ ]
‘‘তিনি (মুসা আলাইহিস সালাম) আল্লাহকে লক্ষ্য
করে বলেছিলেন, হে আমার রব! তোমার দীদার
আমাকে দাও; যেন আমি তোমার দিকে তাকাব।
মহান আল্লাহ (মূসাকে) বলেছিলেন, হে মূসা! তুমি
আমাকে কখনো দেখতে পাবে না।” [সূরা আল-
আ‘রাফ ৭:১৪৩]
এ আয়াতসহ অন্যান্য আয়াত দ্বারা এটাই প্রমাণিত
হয় যে, সৃষ্টিজীবের কেউ এমনকি নবী রাসূলগণও
আল্লাহকে চর্মচক্ষু দ্বারা দুনিয়ার জীবনে দেখতে
পান নি। তবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম স্বপ্নযোগে মহান আল্লাহকে
দেখেছেন। (সিলসিলা সহীহাহ্ ৩১৬৯)
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বপ্ন
দেখাকে পুঁজি করে যে সকল কথিত পীর-ফকীর মহান
আল্লাহকে মুহুর্মূহু দর্শন করার দাবী করেন তা
মিথ্যা বৈ কিছু নয়।
আর যারা তাদের এ কথার উপর অণু পরিমাণও
বিশ্বাস স্থাপন করবে, তারাও ধোঁকা ও প্রতারণার
সাগরে নিমজ্জিত।
১০. প্রশ্ন: কথিত আছে যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ
আলাইহিস সালাম নূরের তৈরি। এ কথার কোনো
ভিত্তি-প্রমাণ আছে কি?
উত্তর: আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের নয়, বরং অন্যান্য
মানুষ যেভাবে জন্মলাভ করেন সেভাবে তিনিও
জন্মলাভ করেছেন। আর প্রথম মানুষকে আল্লাহ
তা‘আলা মাটি দ্বারা তৈরী করেছেন একজন প্রকৃত
মুসলিমকে অবশ্যই এ বিশ্বাস পোষণ করতে হবে।
আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻧَّﻤَﺎٓ ﺃَﻧَﺎ۠ ﺑَﺸَﺮٞ ﻣِّﺜۡﻠُﻜُﻢۡ ﻳُﻮﺣَﻰٰٓ ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤَﺎٓ ﺇِﻟَٰﻬُﻜُﻢۡ ﺇِﻟَٰﻪٞ ﻭَٰﺣِﺪٞۖ﴾ [ ﺍﻟﻜﻬﻒ: ١١٠ ]
‘‘(হে রাসূল! আপনার উম্মাতকে) আপনি বলে দিন যে,
নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার
প্রতি ওয়াহী নাযিল হয় যে, নিশ্চয় তোমাদের
ইলাহ বা উপাস্য একজনই।” [সূরা আল-কাহাফ ১৮:১১০]
একজন মানুষের যে দৈহিক বা মানসিক চাহিদা
রয়েছে, নবী মুহা্ম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এরও তেমনি দৈহিক বা মানসিক
চাহিদা ছিল। তাই তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম খাওয়া-দাওয়া, প্রাকৃতিক প্রয়োজন,
বিবাহ-শাদী, ঘর-সংসার সবই আমাদের মতই
করতেন। পার্থক্য শুধু এখানেই যে, তিনি আল্লাহর
প্রেরিত নবী ও রাসূল ছিলেন: তাঁর কাছে আল্লাহর
পক্ষ থেকে মানুষের হিদায়াতের জন্য ওয়াহী
নাযিল হত। আর যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর অতি প্রশংসা করতে গিয়ে তাঁকে
নূরের নবী বলে আখ্যায়িত করল, তারা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি
মিথ্যা অপবাদ দিলো।
এভাবেই একশ্রেণীর মানুষ বলে থাকেন যে,
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
সৃষ্টি না করলে আল্লাহ তা‘আলা আসমান-জমিন,
‘আরশ কুরসী কিছুই সৃষ্টি করতেন না। এ কথাগুলিও
সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও সর্বৈব মিথ্যা।
কারণ, কুরআন ও সহীহ হাদীসে এর সপক্ষে কোনোই
দলীল-প্রমাণ নেই বরং এ সকল অবান্তর কথাবার্তা
আল-কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর পরিপন্থী। অপরদিকে
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে,
﴿ ﻭَﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘۡﺖُ ﭐﻟۡﺠِﻦَّ ﻭَﭐﻟۡﺈِﻧﺲَ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴَﻌۡﺒُﺪُﻭﻥِ ٥٦ ﴾ [ ﺍﻟﺬﺍﺭﻳﺎﺕ: ٥٦ ]
‘‘আমি জিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র
আমার ‘ইবাদত করার জন্য।” [সূরা আয-যারিয়াত
৫১:৫৬)]
১১. প্রশ্ন: অনেকেই এ ‘আকীদাহ্ বিশ্বাস পোষণ
করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মারা যান নি বরং তিনি জীবিত; এ
সম্পর্কিত শার‘ঈ বিধান কী?
উত্তর: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মারা গেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
﴿ ﺇِﻧَّﻚَ ﻣَﻴِّﺖٞ ﻭَﺇِﻧَّﻬُﻢ ﻣَّﻴِّﺘُﻮﻥَ ٣٠﴾ [ ﺍﻟﺰﻣﺮ: ٣٠ ]
“নিশ্চয় আপনি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।”
১২. প্রশ্ন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর উপর যে সালাত পাঠ করি, তা-কি
তাঁর নিকট পৌঁছে?
উত্তর: আমাদের পঠিত সালাত আল্লাহু সুবহানাহু
ওয়াতা‘আলা ফেরেশতার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে
পৌছান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর
বানিও না এবং আমার কবরকে উৎসবস্থলে পরিণত
করো না; আর আমার উপর সালাত পাঠ করো; কেননা,
তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের
পঠিত সালাত আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
১৩. প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম অথবা কোনো মৃত বা অনুপস্থিত ওলী-
আওলিয়াকে মাধ্যম করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা
করা বা বিপদাপদে সাহায্য চাওয়া যাবে কি?
উত্তর: নবী-রাসূল, ওলী-আওলিয়াসহ সকল সৃষ্টির
একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার
কাছেই মানুষ যাবতীয় চাওয়া-পাওয়ার প্রার্থনা
করবে। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻓَﭑﺑۡﺘَﻐُﻮﺍْ ﻋِﻨﺪَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﭐﻟﺮِّﺯۡﻕَ ﻭَﭐﻋۡﺒُﺪُﻭﻩُ﴾ [ ﺍﻟﻌﻨﻜﺒﻮﺕ: ١٧ ]
“তোমরা আল্লাহর কাছে (সরাসরি) রিযিক চাও
এবং তাঁরই ‘ইবাদাত করো।” [সূরা আল-‘আনকাবূত
২৯:১৭]
﴿ ﺃَﻣَّﻦ ﻳُﺠِﻴﺐُ ﭐﻟۡﻤُﻀۡﻄَﺮَّ ﺇِﺫَﺍ ﺩَﻋَﺎﻩُ ﻭَﻳَﻜۡﺸِﻒُ ﭐﻟﺴُّﻮٓﺀَ﴾ [ ﺍﻟﻨﻤﻞ: ٦٢ ]
“বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির ডাকে (আল্লাহ ছাড়া) কে
সাড়া দেয়, যখন সে ডাকে; আর (আল্লাহ ছাড়া) কে
তার কষ্ট দূর করে?” [সূরা আন্-নামল ২৭:৬২]
উল্লিখিত আয়াতদ্বয় ছাড়াও আল-কুরআন ও সহীহ
সুন্নাহ দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে,
আল্লাহ ছাড়া মৃত বা অনুপস্থিত কোনো ওলী-
আওলিয়া, পীর-মাশায়েখ এমনকি সর্বকালের
সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও মাধ্যম
করে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া জায়েয নয়।
পক্ষান্তরে মানুষের যা কিছু চাওয়া-পাওয়া রয়েছে,
তা সরাসরি আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে।
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺗَﺪۡﻋُﻮﻥَ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻋِﺒَﺎﺩٌ ﺃَﻣۡﺜَﺎﻟُﻜُﻢۡۖ ﴾ [ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ: ١٩٤ ]
‘‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাকো,
তারা তো সবাই তোমাদের মতই বান্দা।” [সূরা
আল-আ‘রাফ ৭:১৯৪]
﴿ ﺃَﻣۡﻮَٰﺕٌ ﻏَﻴۡﺮُ ﺃَﺣۡﻴَﺎٓﺀٖۖ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺸۡﻌُﺮُﻭﻥَ ﺃَﻳَّﺎﻥَ ﻳُﺒۡﻌَﺜُﻮﻥَ ٢١ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺤﻞ: ٢١ ]
‘‘তারা তো মৃত, প্রাণহীন এবং তাদেরকে কবে
পুনরূত্থান করা হবে তারা তাও জানে না।” [সূরা
আন-নাহল ১৬:২১]
এ মর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচাতো ভাই ‘আব্দুল্লাহ ইবনু
‘আব্বাসকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘যখন তুমি কোনো কিছু
চাইবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছে চাইবে। আর
যখন তুমি কোনো সাহায্য চাইবে, তখনও একমাত্র
মহান আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে।” এমনকি
জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও আল্লাহর কাছেই তা
চাইতে বলা হয়েছে।
১৪. প্রশ্ন: উপস্থিত জীবিত ব্যক্তিদের কাছে
সাহায্য চাওয়া সম্পর্কিত শরী‘আতের বিধান কী?
উত্তর: উপস্থিত জীবিত ব্যক্তি যে সমস্ত বিষয়ে
সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন, সে সমস্ত বিষয়ে তার
কাছে চাওয়া যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻓَﭑﺳۡﺘَﻐَٰﺜَﻪُ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﻣِﻦ ﺷِﻴﻌَﺘِﻪِۦ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﻣِﻦۡ ﻋَﺪُﻭِّﻩِۦ ﻓَﻮَﻛَﺰَﻩُۥ ﻣُﻮﺳَﻰٰ ﻓَﻘَﻀَﻰٰ ﻋَﻠَﻴۡﻪِۖ
﴾ [ ﺍﻟﻘﺼﺺ: ١٥ ]
‘‘মূসা (আ)-এর দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে
মূসা আলাইহিস সালাম-এর কাছে সাহায্য
প্রার্থনা করল, তখন মূসা আলাইহিস সালাম তাকে
ঘুষি মারলেন, এভাবে তিনি তাকে হত্যা
করলেন।” [সূরা আল-ক্বাসাস ২৮:১৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ ﻭَﺗَﻌَﺎﻭَﻧُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﺒِﺮِّ ﻭَﭐﻟﺘَّﻘۡﻮَﻯٰۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻌَﺎﻭَﻧُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﺈِﺛۡﻢِ ﻭَﭐﻟۡﻌُﺪۡﻭَٰﻥِۚ ﴾ [ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ: ٢ ]
“তোমরা পূণ্য তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরকে সাহায্য
করো। তবে পাপকার্যে ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে
তোমরা একে অপরকে সাহায্য করো না।” [সূরা আল
মায়িদাহ্ ৫:২]
এ মর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো বান্দা যতক্ষণ তার
ভাইদের সাহায্যে নিয়োজিত থাকবে, ততক্ষণ
আল্লাহ সে বান্দার সাহায্যে নিয়োজিত
থাকবেন।” (মুসলিম)
উল্লেখিত দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা বুঝা যায় যে,
জীবিত ব্যক্তিগণ পারস্পরিক সাহায্য চাইলে, তা
শরীয়াসম্মত।
১৫. প্রশ্ন : মহান আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর প্রিয়
বান্দা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে মনে প্রাণে ভালোবাসা ও
আনুগত্য করার উত্তম পদ্ধতি কী?
উত্তর: মহান আল্লাহকে মনেপ্রাণে ভালোবাসার
উত্তম পদ্ধতি হলো-খালেস অন্তরে আল্লাহ
তা‘আলার যাবতীয় হুকুম-আহকাম দ্বিধাহীনচিত্তে
মেনে নিয়ে তাঁর আনুগত্য করা এবং রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিপূর্ণ
অনুসরণ করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻓَﭑﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤۡﺒِﺒۡﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡ ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٞ
٣١ ﴾ [ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ: ٣١ ]
“(হে রাসূল! আপনার উম্মাতকে) আপনি বলে দিন,
তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তবে
আমারই অনুসরণ করো: তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে
ভালোবাসবেন, আর তোমাদের অপরাধও ক্ষমা করে
দেবেন। আর আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও পরম
দয়ালু।” [সূরা আল-‘ইমরান ৩:৩১]
প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে মনেপ্রাণে ভালোবাসার উত্তম
পদ্ধতি হলো: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের প্রত্যেকটি সুন্নাতকে
দ্বিধাহীনচিত্তে যথাযথভাবে অন্তর দিয়ে
ভালোবাসা, আর সাধ্যানুযায়ী ‘আমল করার চেষ্টা
করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻟَﺎ ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴۡﻨَﻬُﻢۡ ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍْ ﻓِﻲٓ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢۡ ﺣَﺮَﺟٗﺎ
ﻣِّﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴۡﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍْ ﺗَﺴۡﻠِﻴﻤٗﺎ ٦٥ ﴾ [ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ: ٦٥ ]
‘‘অতএব (হে মুহাম্মাদ!) আপনার রবের কসম! তারা
কখনই ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের
মাঝে সৃষ্ট কোনো ঝগড়া-বিবাদের ব্যাপারে তারা
আপনাকে ন্যায়বিচারক হিসেবে মেনে নিবে।
অতঃপর তারা আপনার ফায়সালার ব্যাপারে
নিজেদের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা রাখবে না
এবং তা শান্তিপূর্ণভাবে কবূল করে নিবে।” [সূরা
আন্-নিসা ৪:৬৫]
১৬. প্রশ্ন: বিদ‘আতের পরিচয় এবং বিদ‘আতী
কাজের পরিণতি সম্পর্কে শরী‘আতের ফায়সালা
কী?
উত্তর: সাধারণ অর্থে সুন্নাতের বিপরীত বিষয়কে
বিদ‘আত বলা হয়। আর শার‘ঈ অর্থে বিদআত হলো:
‘‘আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে ধর্মের নামে
নতুন কোনো প্রথা বা ‘ইবাদাতের প্রচলন করা, যা
শরী‘আতের কোনো সহীহ দলীল-প্রমাণের উপর
ভিত্তিশীল নয়।” (আল ই‘তিসাম ১/১৩ পৃষ্ঠা)।
বিদ‘আতীর কাজের পরিণতি ৩টি:
১. ঐ বিদ‘আতী কাজ বা আমল আল্লাহর দরবারে
কখনোই গৃহীত হবে না।
২. বিদ‘আতী কাজ বা আমলের ফলে মুসলিম সমাজে
গোমরাহী বিস্তার লাভ করে এবং
৩. এ গোমরাহীর চূড়ান্ত ফলাফল বা পরিণতি হলো,
বিদ‘আত কার্য সম্পাদনকারীকে জাহান্নামের
শাস্তি ভোগ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের
শারী‘আতে এমন নতুন কিছু সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে
নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।” (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরো বলেছেন, “আর তোমরা দীনের মধ্যে নতুন কিছু
সংযোজন করা হতে সাবধান থেকো! নিশ্চয়ই
প্রত্যেক নতুন সংযোজন বিদ‘আত, আর প্রত্যেকটি
বিদ‘আত গোমরাহীর পথনির্দেশ করে, আর প্রত্যেক
গোমরাহীর পরিণাম হলো জাহান্নাম।” (আহমাদ,
আবূ দাঊদ, আত্ তিরমিযী)
১৭. প্রশ্ন : আমাদের দেশে বড় ধরনের এমন কি
বিদ‘আতী কাজ সংঘটিত হচ্ছে-যার সাথে
শরী‘আতের কোনো সম্পর্ক নেই?
উত্তর: একজন খাঁটি মুসলিম কোনো আমল সম্পাদনের
পূর্বে অবশ্যই পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখবে যে,
তার কৃত আমলটি কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ দ্বারা
প্রমাণিত কি-না। কিন্তু আমাদের দেশের সহজ-
সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ এমন অনেক কাজ বা আমলের
সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে রেখেছেন, যার সাথে
শরী‘আতে মুহাম্মাদীর কোনোই সম্পর্কে নেই। এমন
উল্লেখযোগ্য বিদ‘আত হলো:
১. ‘মীলাদ মাহফিল-এর অনুষ্ঠান করা।
২. ‘শবে বরাত’ পালন করা।
৩. ‘শবে মিরাজ উদযাপন করা।
৪. মৃত ব্যক্তির কাযা বা ছুটে যাওয়া নামাযসমূহের
কাফ্ফারা আদায় করা।
৫. মৃত্যুর পর তৃতীয়, সপ্তম, দশম এবং চল্লিশতম দিনে
খাওয়া-দাওয়া ও দো‘আর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
৬. ইসালে সাওযাব বা সাওয়াব রেসানী বা
সাওয়াব বখশে দেওয়ার অনুষ্ঠান করা।
৭. মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্য অথবা
কোনো বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশে খতমে
কুরআন অথবা খতমে জালালীর অনুষ্ঠান করা।
৮. উচ্চকণ্ঠে বা চিৎকার করে যিকর করা।
৯. হালকায়ে যিকরের অনুষ্ঠান করা।
১০. মনগড়া তরীকায় পীরের মূরীদ হওয়া।
১১. ফরয, সুন্নাত, নফল ইত্যাদি সালাত শুরু করার
পূর্বে মুখে উচ্চারণ করে নিয়্যাত পড়া।
১২. প্রস্রাব করার পরে পানি থাকা সত্ত্বেও
অধিকতর পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে কুলুখ নিয়ে
২০/৪০/৭০ কদম হাঁটাহাঁটি করা বা জোরে কাশি
দেয়া অথবা উভয় পায়ে কেঁচি দেওয়া, যা বিদ‘আত
হওয়ার পাশাপাশি বেহায়াপনাও বটে।
১৩. ৩টি অথবা ৭টি চিল্লা দিলে ১ হাজ্জের
সাওয়াব হবে- এমনটি মনে করা।
১৪. সম্মিলিত যিকর ও যিকরে নানা অঙ্গভঙ্গি
করা।
১৫. সর্বোত্তম যিকর ‘‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ”-
কে সংকুচিত করে শুধু আল্লাহ, আল্লাহ বা হু, হু করা
ইত্যাদি।
উল্লিখিত কার্যসমূহ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম এমনকি মহামতি
ইমাম চতুষ্টয়েরও আমলের অন্তর্ভুক্ত ছিল না এবং
কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিতও নয়। সুতরাং এ সবই
বিদ‘আত, যা মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে
পরিচালিত করে- যার চূড়ান্ত পরিণতি
জাহান্নামের আযাব ভোগ করা। আল্লাহ তা‘আলা
আমাদের এসব বিদ্আতী কর্মকাণ্ড হতে হিফাযত
করুন-আমীন।
১৮. প্রশ্ন: মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া কথা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
এর হাদীস বলে মানুষের মাঝে বর্ণনা করা বা বই-
পুস্তকে লিখে প্রচার করার পরিণতি কী?
উত্তর: যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যা হাদীস
রচনা করে মানুষের কাছে বর্ণনা করে তার পরিণতি
জাহান্নাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার
নামে মিথ্যা বলবে, তার আবাসস্থল হবে
জাহান্নাম।” (বুখারী ১/৫২, মুসলিম-১/৯)
১৯. প্রশ্ন: আমরা সাধারণত ‘ইবাদাত বলতে বুঝি
কালেমাহ্, সালাত, যাকাত, সওম ও হাজ্জ ইত্যাদি।
মূলত ‘ইবাদাতের সীমা-পরিসীমা কতটুকু?
উত্তর: ‘‘ইবাদাত অর্থই হচ্ছে প্রকাশ্য এবং গোপনীয়
ঐ সকল কাজ ও কথা, যা আল্লাহ তা‘আলা
ভালোবাসেন বা যার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জন করা যায়।
ইবাদাতের উল্লিখিত সংজ্ঞা থেকেই বুঝা যায়
যে, ‘‘ইবাদাত শুধুমাত্র কালেমাহ, সালাত, যাকাত,
সওম ও হাজ্জ ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং
মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের প্রতিটি
মুহূর্ত, প্রতিটি ক্ষণে আল্লাহর ‘ইবাদাত নিহিত
রয়েছে। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻥَّ ﺻَﻠَﺎﺗِﻲ ﻭَﻧُﺴُﻜِﻲ ﻭَﻣَﺤۡﻴَﺎﻱَ ﻭَﻣَﻤَﺎﺗِﻲ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﭐﻟۡﻌَٰﻠَﻤِﻴﻦَ ١٦٢ ﴾ [ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ: ١٦٢ ]
“(হে রাসূল !) আপনি বলে দিন যে, নিশ্চয়ই আমার
সালাত, আমার কুরবানী এবং আমর জীবন ও মরণ
সবকিছুই মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত যিনি সমগ্র
বিশ্বের রব্ব।” [সূরা আল-আন‘আম ৬:১৬২]
এ আয়াত এটাই প্রমাণ করে যে, মানব জীবনের
প্রতিটি মুহুর্তের ভাল কথা বা কাজ ‘ইবাদাতের
মধ্যে গণ্য। যেমন- দো‘আ করা, বিনয় ও নম্রতার
সাথে ‘ইবাদাত করা, হালাল উপার্জন করা ও
হালাল খাওয়া, দান-খায়রাত করা, পিতা-মাতার
সেবা করা, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে
সদাচরণ করা, সর্বাবস্থায় সত্যাশ্রয়ী হওয়া, মিথ্যা
বর্জন করা ইত্যাদি ‘ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত।
২০. প্রশ্ন : কোন পাপ কর্মটি মহান আল্লাহুর কাছে
সবচেয়ে বেশি অপছন্দনীয় এবং সর্ববৃহৎ পাপ বলে
গণ্য হবে?
উত্তর: মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি
অপছন্দনীয় এবং সর্ববৃহৎ পাপ বলে গণ্য হবে শির্কের
গুনাহসমূহ। মহান আল্লাহ এ গুনাহ থেকে বিরত
থাকতে তাঁর বান্দাকে বারংবার সতর্ক করেছেন।
﴿ ﻭَﺇِﺫۡ ﻗَﺎﻝَ ﻟُﻘۡﻤَٰﻦُ ﻟِﭑﺑۡﻨِﻪِۦ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﻌِﻈُﻪُۥ ﻳَٰﺒُﻨَﻲَّ ﻟَﺎ ﺗُﺸۡﺮِﻙۡ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِۖ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﺸِّﺮۡﻙَ ﻟَﻈُﻠۡﻢٌ ﻋَﻈِﻴﻢٞ
١٣﴾ [ ﻟﻘﻤﺎﻥ: ١٣ ]
‘‘লোকমান আলাইহিস সালাম তাঁর ছোট্ট
ছেলেটিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, হে
আমার ছেলে! তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে
অংশীদার স্থাপন করবে না। কেননা শিরক হলো
সবচেয়ে বড় যুলম (অর্থাৎ বড় পাপের কাজ)।” [সূরা
লুকমান: ৩১:১৩]
২১. প্রশ্ন : শিরক কী? বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত এমন
কাজসমূহই বা কী?
উত্তর: আরবী শিরক শব্দের অর্থ অংশী স্থাপন করা।
পারিভাষিক অর্থে শিরক বলা হয়- কোনো ব্যক্তি
বা বস্তুকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা বা তাঁর
ইবাদাতে অন্য কাউকে শরীক করা। বড় শিরক হলো:
সকলপ্রকার ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্যেই
নিবেদিত; কিন্তু সে ইবাদাতে কোনো ব্যক্তি বা
বস্তুকে শরীক করা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত। যেমন
আল্লাহ ছাড়া কোনো পীর-ফকীর বা ওলী-
আওলিয়াদের কাছে সন্তান চাওয়া, ব্যবসায়-
বাণিজ্যে আয়-উন্নতির জন্যে অথবা কোনো বিপদ
থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে কোনো পীর-
ফকীরের নামে বা মাযারে মান্নত দেওয়া,
সাজদাহ করা, পশু যবেহ করা ইত্যাদি বড় শিরক বলে
গণ্য হবে। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺪۡﻉُ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻨﻔَﻌُﻚَ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻀُﺮُّﻙَۖ ﻓَﺈِﻥ ﻓَﻌَﻠۡﺖَ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺇِﺫٗﺍ ﻣِّﻦَ ﭐﻟﻈَّٰﻠِﻤِﻴﻦَ ١٠٦
﴾ [ﻳﻮﻧﺲ : ١٠٦ ]
“(হে মুহাম্মাদ) আপনি আল্লাহ ব্যতীত এমন কোনো
কিছুর নিকট প্রার্থনা করবেন না, যা আপনার
কোনো প্রকার ভালো বা মন্দ করার ক্ষমতা রাখে
না। কাজেই হে নবী! আপনি যদি এমন কাজ করেন,
তাহলে আপনিও যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে
যাবেন।” ([সূরা ইউনুস ১০:১০৬]
বড় শিরকের সংখ্যা নির্ধারিত নেই; তবে বড়
শিরকের শাখা-প্রশাখা অনেক। তন্মধ্যে কয়েকটি
নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের কাছে সাহায্য
চাওয়া।
২. একক আল্লাহ ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টির জন্য পশু
যবেহ করা।
৩. আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে মানৎ করা।
৪. কবরবাসীর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কবরের
চারপাশে তাওয়াফ করা ও কবরের পাশে বসা।
৫. বিপদে-আপদে আল্লাহ ছাড়া অন্যের অন্যের উপর
ভরসা করা। ইত্যাদি ছাড়াও এ জাতীয় আরো অনেক
শিরক রয়েছে। যা বড় শিরক হিসেবে গণ্য হবে।
২২. প্রশ্ন: বড় শিরকের পরিণতি কী হতে পারে?
উত্তর: বড় শিরকের দ্বারা মানুষের সৎ ‘আমলসমূহ নষ্ট
হয়ে যায়, জান্নাত হারাম হয়ে যায় এবং
চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়।
আর তার জন্যে পরকালে কোনো সাহায্যকারী
থাকে না। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻭَﻟَﻘَﺪۡ ﺃُﻭﺣِﻲَ ﺇِﻟَﻴۡﻚَ ﻭَﺇِﻟَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻚَ ﻟَﺌِﻦۡ ﺃَﺷۡﺮَﻛۡﺖَ ﻟَﻴَﺤۡﺒَﻄَﻦَّ ﻋَﻤَﻠُﻚَ ﻭَﻟَﺘَﻜُﻮﻧَﻦَّ ﻣِﻦَ
ﭐﻟۡﺨَٰﺴِﺮِﻳﻦَ ٦٥ ﴾ [ ﺍﻟﺰﻣﺮ: ٦٥ ]
“(হে নবী! আপনি যদি শিরক করেন তাহলে নিশ্চয়ই
আপনার ‘আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে। আর আপনি অবশ্যই
ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।” [সূরা আয-
যুমার ৩৯:৬৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻣَﻦ ﻳُﺸۡﺮِﻙۡ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪۡ ﺣَﺮَّﻡَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴۡﻪِ ﭐﻟۡﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﻣَﺄۡﻭَﻯٰﻪُ ﭐﻟﻨَّﺎﺭُۖ ﻭَﻣَﺎ ﻟِﻠﻈَّٰﻠِﻤِﻴﻦَ ﻣِﻦۡ ﺃَﻧﺼَﺎﺭٖ
٧٢ ﴾ [ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ: ٧٢ ]
“নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে অন্যকে অংশীদার
বানায়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে
দেন, তার চিরস্থায়ী বাসস্থান হবে জাহান্নাম। এ
সমস্ত যালিম তথা মুশরিকদের জন্য কিয়ামাতের
দিন কোনো সাহায্যকারী থাকবে না।” [সূরা আল-
মায়িদাহ্ ৫:৭২]
আল্লাহ ইচ্ছা করলে যে কোনো গুনাহ ক্ষমা করে
দিবেন, কিন্তু শিরকের গুনাহ (তাওবাহ ব্যতীত
মৃত্যুবরণ করলে) কখনো মাফ করবেন না। শির্কের
গুনাহের চূড়ান্ত পরিণতি স্থায়ীভাবে
জাহান্নামের আগুনে দগ্ধিভূত হওয়া।
২৩. প্রশ্ন: আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে অর্থাৎ
পীর-ফকীর, ওলী-আওলিয়ার নামে বা মাযারে
মানৎ করার শার‘ঈ বিধান কী?
উত্তর: একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে
মানৎ করা যাবে না। কারণ নযর বা মানৎ একটি
ইবাদাত আর সকল প্রকার ইবাদাত কেবলমাত্র
আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত; কোনো নবী-রাসূল
আলাইহিমুস সালাম বা পীর-ফকীর, ওলী-আওলিয়া
অথবা মাযারে নযর বা মান্নত করা যাবে না, করলে
তা শিরকী কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য
যে, আল্লাহর নামে নযর বা মান্নত করলে তা পূর্ণ
করা ওয়াজিব। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ﺇِﺫۡ ﻗَﺎﻟَﺖِ ﭐﻣۡﺮَﺃَﺕُ ﻋِﻤۡﺮَٰﻥَ ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻧَﺬَﺭۡﺕُ ﻟَﻚَ ﻣَﺎ ﻓِﻲ ﺑَﻄۡﻨِﻲ ﻣُﺤَﺮَّﺭٗﺍ ﻓَﺘَﻘَﺒَّﻞۡ ﻣِﻨِّﻲٓۖ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ
ﭐﻟﺴَّﻤِﻴﻊُ ﭐﻟۡﻌَﻠِﻴﻢُ ٣٥﴾ [ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ: ٣٥ ]
‘‘(ইমরানের স্ত্রী বিবি হান্নাহ) আল্লাহকে লক্ষ্য
করে বলেন, ‘হে আমার রব! আমার পেটে যে সন্তান
আছে তা আমি কুক্ত করে আপনার উদ্দেশ্যে মান্নত
করেছি।” [সূরা আল-‘ইমরান ৩:৩৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿ ﻳُﻮﻓُﻮﻥَ ﺑِﭑﻟﻨَّﺬۡﺭِ ﻭَﻳَﺨَﺎﻓُﻮﻥَ ﻳَﻮۡﻣٗﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺷَﺮُّﻩُۥ ﻣُﺴۡﺘَﻄِﻴﺮٗﺍ ٧ ﴾ [ﺍﻻﻧﺴﺎﻥ : ٧ ]
“তারা যেন মান্নত পূর্ণ করে এবং সেদিনের ভয় করে
যেদিনের বিপর্যয় অত্যন্ত ব্যাপক।” [সূরা আদ্-দাহর
৭৬:৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের কাজে
মান্নত করে সে যেন তা পূর্ণ করার মাধ্যমে তাঁর
আনুগত্য প্রকাশ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর
নাফরমানীমূলক কাজে মান্নত করে সে যেন তাঁর
নাফরমানী না করে- (অর্থাৎ মান্নত যেন আদায় না
করে)।” (বুখারী ৬৬৯৬, ৬৭০০; আবু দাঊদ ৩২৮৯)
আল্লাহ ব্যতীত গাইরুল্লাহ বা অন্যের নামে মান্নত
করার অর্থ হলো, গাইরুল্লাহরই ইবাদাত করা যা বড়
শিরক বলে গণ্য হবে।
২৪. প্রশ্ন: কবর বা মাযারে গিয়ে কবরবাসীর কাছে
কিছু প্রার্থনা করা যাবে কী?
উত্তর: কবরে বা মাযারে গিয়ে কিছু প্রার্থনা করা
শির্ক। কারণ, কবরবাসীর কোনোই ক্ষমতা নেই যে,
সে কারো কোনো উপকার করবে। বরং দুনিয়ার
কোনো আহ্বানই সে শুনতে পায় না। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﻟَﺎ ﺗُﺴۡﻤِﻊُ ﭐﻟۡﻤَﻮۡﺗَﻰٰ﴾ [ ﺍﻟﺮﻭﻡ: ٥٢ ]
‘‘(হে নবী!) নিশ্চয়ই আপনি মৃতকে শুনাতে পারবেন
না।”[সূরা আর-রূম ৩০:৫২]
২৫. প্রশ্ন : কবরমুখী হয়ে অথবা কবরের পাশে সালাত
আদায় করার শার‘ঈ হুকুম কী?
উত্তর: কবরমুখী হয়ে অথবা কবরকে কেন্দ্র করে তার
পার্শ্বে সালাত আদায় করা শির্ক এবং তা কখনোই
আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻭﻻ ﺗﺼﻠﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ »
“তোমরা কবরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করবে
না।” (সহীহ মুসলিম হা: ৯৮)
বাংলাদেশে ওলী-আওলিয়াদের কবরকে কেন্দ্র করে
অনেক মসজিদে নির্মিত হয়েছে। ঐ সকল
কবরকেন্দ্রীক মসজিদে সালাত আদায় করলে তা
আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না। রাসূলু্ল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর
পূর্বমুহুর্তে বলেছেন: “ইয়াহূদী নাসারাদের উপর
আল্লাহ অভিসম্পাত। কারণ তারা তাদের নবীদের
কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। (বুখারী-৩৪৫৩, ১৩৯০;
মুসলিম- ৫২৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর
যিয়ারতকারী মহিলাদেরকে এবং যারা কবরকে
মসজিদে পরিণত করে, আর তাতে বাতি জ্বালায়,
তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। (আবু দাউদ ৩২৩৬;
তিরমিযী-৩২; নাসায়ী-২০৪)
অন্যান্য দলীল প্রমাণ একত্রিত করলে মহিলাদের
কবর যিয়ারতের বিষয় দাঁড়ায় নিম্নরূপ:
১. যদি মহিলাদের কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য হয়,
মৃত্যুর কথা ও আখিরাতের কথা স্মরণ করা এবং
যাবতীয় হারাম কর্ম থেকে বিরত থাকা তাহলে
জায়েয।
২. আর যদি এমন হয় যে, দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করে
যেমন-প্রতি ঈদে, প্রতি সোমবার, প্রতি শুক্রবার
যিয়ারত করা বিদ‘আত। সেখানে গিয়ে তারা
বিলাপ করবে, উঁচু আওয়াজে কান্না-কাটি করবে,
পর্দার খেলাফ কাজ করবে, সুগন্ধি বা সুগন্ধযুক্ত
কসমেটিক ব্যবহার করে বেপর্দা বেশে কবর যিয়ারত
হারাম। শিরক-বিদ‘আতে জড়িয়ে পড়বে, অক্ষম,
অসহায়, অপারগ মৃত কথিত অলী-আওলিয়াদের কাছে
বিপদ মুক্তি চাইলে। মনের কামনা-বাসনা পূরণ
করণার্থে চাইবে তাহলে তাদের জন্য কবর যিয়ারত
হারাম। দলীলসহ বিস্তারিত দেখুন সহীহ ফিক্বহুস
সুন্নাহ ১/৬৬৮-৬৬৯ পৃষ্ঠা।
২৬. প্রশ্ন: আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট সন্তান
কামনা করা যাবে কী?
উত্তর: সন্তান দেওয়া, না দেওয়ার মালিক একমাত্র
আল্লাহ। এতে অন্য কারোও কোনো ক্ষমতা নেই।
সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে কোনো পীর-ফকীর,
দরবেশ, ওলী-আওলিয়া বা মাযারে গিয়ে আবেদন
নিবেদন করা, নযর মানা ইত্যাদি শির্কের
অন্তর্ভুক্ত; যা (ক্ষমা না চাইলে) সাধারণ ক্ষমার
অযোগ্য পাপ। সন্তান দানের মালিক আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। আল-কুরআন সাক্ষ্য দিচ্ছে:
﴿ ﻳَﻬَﺐُ ﻟِﻤَﻦ ﻳَﺸَﺎٓﺀُ ﺇِﻧَٰﺜٗﺎ ﻭَﻳَﻬَﺐُ ﻟِﻤَﻦ ﻳَﺸَﺎٓﺀُ ﭐﻟﺬُّﻛُﻮﺭَ ٤٩ ﺃَﻭۡ ﻳُﺰَﻭِّﺟُﻬُﻢۡ ﺫُﻛۡﺮَﺍﻧٗﺎ ﻭَﺇِﻧَٰﺜٗﺎۖ ﻭَﻳَﺠۡﻌَﻞُ ﻣَﻦ
ﻳَﺸَﺎٓﺀُ ﻋَﻘِﻴﻤًﺎۚ﴾ [ﺍﻟﺸﻮﺭﺍ: ٤٩، ٥٠ ]
‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন,
যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা ছেলে-
মেয়ে উভয়ই দান করেন। আবার যাকে ইচ্ছে বন্ধ্যা
করেন।” [সূরা আশ্শূরা ৪২:৫০]
তাই নবী-রাসূলগণ যেমন; জাতির পিতা ইবরাহীম
আলাইহিস সালাম ও যাকারিয়া আলাইহিস
সালাম একমাত্র আল্লাহর কাছেই সন্তানের
প্রার্থনা করতে করাতে সুদীর্ঘ দিন পর তাদেরকে
আল্লাহ সন্তান দান করেন। সন্তান না হলে
সুদীর্ঘকাল যাবৎ নবীগণ আল্লাহর কাছে চান, আর
উম্মাতগণ পীর-ফকীর নামে তথাকথিত মানুষের
কাছে চায়। এরা কি নবীগণের আদর্শ থেকে বিচ্যুত
নয়?
২৭. প্রশ্ন : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কুরবানী
বা পশু যবেহ করলে, তার শার‘ঈ হুকুম কী?
উত্তর: আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কুরবানী করা
সুস্পষ্ট শির্ক। আল্লাহর নামের সাথে কোনো পীর-
ওলী, গাউস-কুতুবের নাম উচ্চারণ করাও শিরক।
কুরবানী বা পশু যবেহ করতে হবে একমাত্র আল্লাহর
নামে। আল্লাহ বলেন
﴿ ﻓَﺼَﻞِّ ﻟِﺮَﺑِّﻚَ ﻭَﭐﻧۡﺤَﺮۡ ٢ ﴾ [ﺍﻟﻜﻮﺛﺮ: ٢ ]
‘‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় করুন
এবং নাহর (কুরবানী) করুন।” [সূরা আল-কাওসার
১০৮:২)]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন: “ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ অভিশাপ, যে
আল্লাহ ব্যতীত গাইরুল্লাহর নামে যবেহ
করে।” (সহীহ মুসলিম হা: ১৯৭৮)
“আল্লাহ ব্যতীত গাইরুল্লাহর নামে যবেহকৃত পশুর
গোশত খাওয়া হারাম।”[সূরা আল-মায়িদাহ ৫:৩]
২৮. প্রশ্ন : আল্লাহর যিকরের সাথে অন্য কারো নাম
যুক্ত করার শার‘ঈ হুকুম কী?
উত্তর: আল্লাহর যিকরের সাথে অন্য কারো নাম
যুক্ত করা শির্ক। যেমন, অনেক মাযারভক্ত ‘‘ইয়া
রাসূলুল্লাহ” ইয়া নূরে খোদা অথবা হক্ক বাবা,
হায়রে খাজা বলে যিকর করে- যা সম্পূর্ণরূপে
শির্ক। কারণ ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই
হতে হবে। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻭَﻣَﻦۡ ﺃَﺿَﻞُّ ﻣِﻤَّﻦ ﻳَﺪۡﻋُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻣَﻦ ﻟَّﺎ ﻳَﺴۡﺘَﺠِﻴﺐُ ﻟَﻪُۥٓ ﺇِﻟَﻰٰ ﻳَﻮۡﻡِ ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِ ﻭَﻫُﻢۡ ﻋَﻦ
ﺩُﻋَﺎٓﺋِﻬِﻢۡ ﻏَٰﻔِﻠُﻮﻥَ ٥ ﴾ [ ﺍﻻﺣﻘﺎﻑ: ٥ ]
“তার চেয়ে অধিক ভ্রান্ত আর কে হতে পারে, যে
আল্লাহকে ছেড়ে এমন সত্তাকে ডাকে, যে
কিয়ামাত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিতে পারবে
না।” [সূরা আল-আহকাফ ৪৬:৫]
উল্লেখ্য যে, আল্লাহর যিকরের সাথে অন্য কারো
নাম যুক্ত করার অর্থ হলো: তাকেও আল্লাহর সমকক্ষ
মনে করা। কিন্তু একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তা‘আলা এবং সকল কিছুই তাঁর সৃষ্টি। সুতরাং
সৃষ্টি ও স্রষ্টা কখনোই এক হতে পারে না। আল
কুরআন সাক্ষী দিচ্ছে:
﴿ ﻭَﻟَﻢۡ ﻳَﻜُﻦ ﻟَّﻪُۥ ﻛُﻔُﻮًﺍ ﺃَﺣَﺪُۢ ٤ ﴾ [ﺍﻻﺧﻼﺹ: ٤ ]
‘‘এবং কেউই তাঁর সমকক্ষ নয়।” [সূরা আল-ইখলাস
১১২:৪]
২৯. প্রশ্ন: একজন প্রকৃত মুসলিমের একমাত্র ভরসাস্থল
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা- এ ‘আকীদাহ্-
বিশ্বাসের বিপরীত কোনো চিন্তার সুযোগ আছে
কী?
উত্তর: একজন প্রকৃত মুসলিম সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায়
একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার উপর
তাওয়াক্কুল করবে, আল কুরআন সে শিক্ষাই দিচ্ছে। এ
বিপরীত চিন্তা লালন করা শিরকের পর্যায়ভুক্ত।
আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺘَﻮَﻛَّﻠُﻮٓﺍْ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢ ﻣُّﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ٢٣ ﴾ [ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ: ٢٣ ]
‘‘তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তাহলে একমাত্র
আল্লাহর উপরই ভরসা করো।” [সূরা আল-মায়িদাহ্
৫:২৩]
﴿ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺘَﻮَﻛَّﻞۡ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻬُﻮَ ﺣَﺴۡﺒُﻪُۥٓۚ﴾ [ ﺍﻟﻄﻼﻕ: ٣ ]
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্যে
আল্লাহই যথেষ্ট।” [সূরা আত-ত্বালাক ৬৫:৩]
﴿ ﻭَﺗَﻮَﻛَّﻞۡ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﺤَﻲِّ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﻟَﺎ ﻳَﻤُﻮﺕُ﴾ [ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ: ٥٧ ]
‘‘তুমি ভরসা করো সেই চিরঞ্জীবের উপর, যার মৃত্যু
নেই।” [সূরা আল ফুরকান ২৫:৫৮]
৩০. প্রশ্ন: যাদু সম্পর্কিত শার‘ঈ হুকুম কী এবং
যাদুকরের শাস্তি কী?
উত্তর: যাদু সম্পর্কিত বিধান হলো: এটি কাবীরাহ্
গুনাহ এবং ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী। অবস্থার
পরিপ্রেক্ষিতে জাদুকর কখনো মুশরিক, কখনো
কাফির, আবার কখনো ফিতনাহ সৃষ্টিকারী
হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ
তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻭَﻟَٰﻜِﻦَّ ﭐﻟﺸَّﻴَٰﻄِﻴﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍْ ﻳُﻌَﻠِّﻤُﻮﻥَ ﭐﻟﻨَّﺎﺱَ ﭐﻟﺴِّﺤۡﺮَ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٠٢ ]
‘‘কিন্তু শয়তান কুফরী করেছিল, তারা মানুষদেরকে
জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিত।” [সূরা আল-বাকারাহ্
২:১০২]
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মুসলিম গভর্নরদের কাছে
পাঠানো নির্দেশনামায় লিখেছেন: ‘‘তোমরা
প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ এবং যাদুকর নারীকে হত্যা
করো।” (সহীহ বুখারী হা: ৩১৫৬; সুনান আবু দাউদ হা:
৩০৪৩)
জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফূ হাদীসে
বর্ণিত আছে- “যাদুকরের শাস্তি মৃত্যুদন্ড।” (জামে
তিরমিযী হা: ১৪৬)
৩১. প্রশ্ন : গণক ও জ্যোতিষীরা গায়েবের খবর
সম্পর্কে অনেক কথা বলে থাকে; গণক ও
জ্যোতিষীদের ঐসব কথা বিশ্বাস করা যাবে কী
এবং এর শার‘ঈ বিধান কী?
উত্তর: গণক বা জ্যোতিষী তো দূরের কথা, নবী-
রাসূলগণও গায়েব সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻗُﻞ ﻟَّﺎ ﻳَﻌۡﻠَﻢُ ﻣَﻦ ﻓِﻲ ﭐﻟﺴَّﻤَٰﻮَٰﺕِ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﭐﻟۡﻐَﻴۡﺐَ ﺇِﻟَّﺎ ﭐﻟﻠَّﻪُۚ﴾ [ ﺍﻟﻨﻤﻞ: ٦٥ ]
“(হে রাসূল!) আপনি বলে দিন, একমাত্র মহান
আল্লাহ ছাড়া আসমান ও যমীনে আর যারা আছে
তাদের কেউই গায়েবের খবর জানে না।” [সূরা আন-
নামল ২৭:৬৫]
এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি গণক ও
জ্যোতিষীদের নিকট গেল অতঃপর তারা যা বলল,
তা বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে
অর্থাৎ কুরআনুল হাকীমের সাথে কুফরী করল
(পক্ষান্তরে সে আল্লাকেই অস্বীকার করল)। (সুনান
আবূ দাঊদ ৩৯০৪)
“যে ব্যক্তি কোনো গণক তথা ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে
গেল, অতঃপর তাকে (ভাগ্য সম্পর্কে) কিছু
জিজ্ঞেস করল- চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত
কবূল হবে না।” (সহীহ মুসলিম ২২৩; মুসনাদ আহমাদ
৪/৬৭)
গণক বা জ্যেতিষীদের কথা বিশ্বাস করা আল্লাহর
সাথে কুফরী করার নামান্তর।
৩২. প্রশ্ন: আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা
সম্পর্কিত ইসলামের হুকুম কী?
উত্তর: আল্লাহ ছাড়া আর কারো নামে কসম বা শপথ
করা জায়িয নয়। বরং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম অথবা কোনো পীর-ফকীর, বাবা-মা,
ওলী-আওলিয়া, সন্তান-সন্ততি কিংবা কোনো
বস্তুর নামে শপথ করা শির্ক। শপথ করতে হবে
একমাত্র আল্লাহর নামে।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া
অন্যের নামে শপথ করল, সে আল্লাহর সাথে শির্ক
করল।” (আহমাদ)
৩৩. প্রশ্ন: রোগমুক্তি বা কল্যাণ লাভের উদ্দেশ্যে
বিভিন্ন ধরনের ধাতু দ্বারা নির্মিত আংটি,
মাদুলি, বালা, কাপড়ের টুকরা, সুতার কায়তন অথবা
কুরআন মাজীদের আয়াতের নম্বর জাফরানের কালি
দিয়ে লিখে এবং বিভিন্ন ধরনে নকশা এঁকে দো‘আ,
তাবীয-কবয বানিয়ে তা হাতে, কোমরে, গলায় বা
শরীরের কোনো অঙ্গে ব্যবহার করা যাবে কী?
উত্তর: রোগ-ব্যাধি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্যে,
মানুষের বদনযর হতে রক্ষা পাওয়ার জন্যে অথবা
কল্যাণ লাভের উদ্দেশ্যে উল্লিখিত বস্তুসমূহ
শরীরের কোনো অঙ্গে ঝুলানো সুস্পষ্ট শির্ক বা
তাওবাহ ব্যতীত অমার্জনীয় পাপ। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻭَﺇِﻥ ﻳَﻤۡﺴَﺴۡﻚَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻀُﺮّٖ ﻓَﻠَﺎ ﻛَﺎﺷِﻒَ ﻟَﻪُۥٓ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَۖ ﴾ [ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١٧ ]
“আল্লাহ যদি আপনার উপর কোনো কষ্ট ও বিপদ-আপদ
আরোপ করেন, তাহলে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর
কেউ তা দূর করতে পারে না।” [সূরা আল-আন‘আম
৬:১৭]
উল্লিখিত বিপদ-আপদে আমাদের করণীয় বিষয়
দু’টি:
১. বৈধ ঝাড়ফুঁক বা কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা
প্রমাণিত দো‘আ পাঠ করা।
২. বৈধ বা হালাল ঔষধ সেবন করা।
এক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻣﻦ ﻋﻠﻖ ﺗﻤﻴﻤﺔ ﻓﻘﺪ ﺃﺷﺮﻙ »
“যে ব্যক্তি তাবীয ঝুলাল সে শিরক (তাওবাহ
ব্যতীত অমার্জনীয় পাপ) করল।” (মুসনাদে আহমাদ
হা: ১৬৭৮১, সিলসিলাহ সহীহাহ হা: ৪৯২, সনদ সহীহ)
৩৪. প্রশ্ন: আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় বা পন্থা
কী?
উত্তর: আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্যে আমাদের
সামনে মৌলিক তিনটি বিষয় রয়েছে:
১. বিভিন্ন সৎ ‘আমল দ্বারা: আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﭐﺑۡﺘَﻐُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻴۡﻪِ ﭐﻟۡﻮَﺳِﻴﻠَﺔَ﴾ [ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٣٥ ]
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং
(সৎ আমল দ্বারা) তাঁর সান্নিধ্য অন্বেষণ
করো।” [সূরা আল-মায়িদাহ্ ৫:৩৫]
২. আল্লাহর সুন্দরতম ও গুণবাচক নামসমূহের দ্বারা:
﴿ ﻭَﻟِﻠَّﻪِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻤَﺎٓﺀُ ﭐﻟۡﺤُﺴۡﻨَﻰٰ ﻓَﭑﺩۡﻋُﻮﻩُ ﺑِﻬَﺎۖ ﴾ [ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ: ١٨٠ ]
“আর আল্লাহর জন্যে সুন্দর সুন্দর ও ভালো নাম
রয়েছে, তোমরা তাঁকে সে সব নাম ধরেই
ডাকবে।” [সূরা আল-আ‘রাফ ৭:১৮০]
৩. নেক্কার জীবিত ব্যক্তিদের দো‘আর মাধ্যমে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻭَﭐﺳۡﺘَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟِﺬَﻧۢﺒِﻚَ ﻭَﻟِﻠۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﻭَﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨَٰﺖِۗ ﴾ [ﻣﺤﻤﺪ: ١٩ ]
“(হে রাসূল!) আপনি প্রথমে আপনার ত্রুটি-বিচ্যুতির
জন্য, এরপর নারী ও পুরুষ সকলের জন্য মহান আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।” [সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৯]
উল্লেখ্য যে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়
মৃতব্যক্তি বা কোনো ওলী-আওলিয়ার মাযারে
যাওয়া, আবেদন নিবেদন করা শিরক বা অমার্জনীয়
পাপ।
৩৫. প্রশ্ন: ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য দেখা
দিলে, তার ফায়সালা কীভাবে করতে হবে?
উত্তর: ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য দেখা
দিলে, তার ফায়সালার জন্য আল্লাহর পবিত্র কুরআন
এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সহীহ হাদীসের ফায়সালার দিকে ফিরে যেতে
হবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻓَﺈِﻥ ﺗَﻨَٰﺰَﻋۡﺘُﻢۡ ﻓِﻲ ﺷَﻲۡﺀٖ ﻓَﺮُﺩُّﻭﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻭَﭐﻟۡﻴَﻮۡﻡِ ﭐﻟۡﺄٓﺧِﺮِۚ
ﺫَٰﻟِﻚَ ﺧَﻴۡﺮٞ ﻭَﺃَﺣۡﺴَﻦُ ﺗَﺄۡﻭِﻳﻠًﺎ ٥٩﴾ [ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ: ٥٩ ]
“অতঃপর যদি তোমাদের মাঝে কোনো বিষয়ে
মতানৈক্য দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে ফায়সালার জন্য
আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (ফায়সালার) দিকে
ফিরে যাবে, যদি তোমরা আল্লাহ এবং আখিরাত
দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাকো।” [সূরা আন-নিসা
৪:৫৯]
৩৬. প্রশ্ন : আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কিয়ামাত
দিবসে কেউ কারো জন্যে শাফায়াত বা সুপারিশ
করতে পারবে কী?
উত্তর: আল্লাহ বলেন,
﴿ ﻣَﻦ ﺫَﺍ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺸۡﻔَﻊُ ﻋِﻨﺪَﻩُۥٓ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺈِﺫۡﻧِﻪِۦۚ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ٢٥٥ ]
“এমন কে আছে যে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট
সুপারিশ করতে পারে?” [সুরা আল-বাক্বারাহ্ ২: ২৫৫]
﴿ ﻗُﻞ ﻟِّﻠَّﻪِ ﭐﻟﺸَّﻔَٰﻌَﺔُ ﺟَﻤِﻴﻌٗﺎۖ﴾ [ ﺍﻟﺰﻣﺮ: ٤٤ ]
“বলুন! সমস্ত শাফা‘আত কেবলমাত্র আল্লাহরই
ইখতিয়ারভুক্ত।” [সূরা আয-যুমার ৩৯: ৪৪]
﴿ ﻟَﻴۡﺲَ ﻟَﻬُﻢ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻧِﻪِۦ ﻭَﻟِﻲّٞ ﻭَﻟَﺎ ﺷَﻔِﻴﻊٞ ﻟَّﻌَﻠَّﻬُﻢۡ ﻳَﺘَّﻘُﻮﻥَ ٥١﴾ [ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ: ٥١ ]
‘‘সে দিন তাদের অবস্থা এমন হবে যে, আল্লাহ
ছাড়া তাদের কোনো সাহায্যকারী বন্ধু এবং
কোনো সুপারিশকারী থাকবে না।” [সূরা আল-
আন‘আম ৬:৫১]
৩৭. প্রশ্ন : ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা
করার চূড়ান্ত পরিণাম ও পরিণতি কী?
উত্তর: আল্লাহ বলেন: ‘‘আর যে কেউ স্বেচ্ছায়
কোনো মুমিনকে হত্যা করবে তার পরিণতি হবে
জাহান্নাম, সেথায় সে সদা অবস্থান করবে এবং
আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ ও তাকে অভিশপ্ত করেন
এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত করে
রেখেছেন।” [সুরা আন-নিসা ৪:৯৩]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: একজন মুমিন ব্যক্তি তার দীনের ব্যাপারে
পূর্ণভাবে সুযোগ-ছাড়ের মধ্যে থাকে, যদি না সে
কোনো ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা করে। (সহীহ
বুখারী: ৬৮৬২)
৩৮. প্রশ্ন: মানবরচিত আইন দ্বারা বিচার-
ফায়সালা করার শার‘ঈ বিধান কী?
উত্তর: মানবরচিত আইন দ্বারা বিচার করার অর্থ
হলো: আল্লাহর আইনের উপর মানবরচিত আইনকে
প্রাধান্য দেওয়া। ফলে তা শির্ক বলেই গণ্য হবে।
আল্লাহ বলেন:
﴿ ﭐﺗَّﺨَﺬُﻭٓﺍْ ﺃَﺣۡﺒَﺎﺭَﻫُﻢۡ ﻭَﺭُﻫۡﺒَٰﻨَﻬُﻢۡ ﺃَﺭۡﺑَﺎﺑٗﺎ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﭐﻟۡﻤَﺴِﻴﺢَ ﭐﺑۡﻦَ ﻣَﺮۡﻳَﻢَ ﻭَﻣَﺎٓ ﺃُﻣِﺮُﻭٓﺍْ ﺇِﻟَّﺎ
ﻟِﻴَﻌۡﺒُﺪُﻭٓﺍْ ﺇِﻟَٰﻬٗﺎ ﻭَٰﺣِﺪٗﺍۖ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ: ٣١ ]
‘‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের মধ্যকার
পন্ডিত-পুরোহিতদেরকে প্রভু (বিচারক) বানিয়ে
নিয়েছে এবং মারইয়ামের পুত্র ঈসাকেও। অথচ
তাদেরকে কেবল এ আদেশ করা হয়েছিল যে, তারা
একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করবে।” [সূরা আত-
তাওবাহ্ ৯:৩১]
এ সম্পর্কে সূরা আল-মায়িদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর
আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন:
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান
অনুসারে হুকুম প্রদান করে না, এমন ব্যক্তিরা তো
কাফির”
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান
অনুসারে হুকুম প্রদান করে না, এমন ব্যক্তিগণ তো
অত্যাচারী।”
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান
অনুসারে হুকুম প্রদান করে না, তবে তো এরূপ লোকই
ফাসিক।”
৩৯. প্রশ্ন: অনেকেই মনে করে যে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা
জনগণই প্রদান করে থাকে- প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতা কে প্রদান করে থাকেন?
উত্তর: মানুষের সম্মান-অসম্মান, মান-
মর্যাদা,কল্যাণ-অকল্যাণ সকল কিছু চাবিকাঠি
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া ওয়া তা‘আলার হাতে।
তিনিই সকল শক্তি ও সার্বভৌম ক্ষমতার আধার
এবং তিনিই তার বান্দাকে ক্ষমতা প্রদান করে
থাকেন। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস- এমন ধারণা বা
বিশ্বাস করার অর্থ হলো, শির্কী পাপে নিজেকে
নিমজ্জিত করা। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻳُﺆۡﺗِﻲ ﻣُﻠۡﻜَﻪُۥ ﻣَﻦ ﻳَﺸَﺎٓﺀُۚ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ٢٤٧ ]
‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর রাজত্ব প্রদান
করেন।” [সূরা আল-বাকারা ২:২৪৭]
সমাপ্ত
শাইখ মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
শাইখ মুহাম্মাদ আবদুন নূর মাদানী
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না
কিন্তু।
সূচিপত্র
ক্রম বিষয়
১. ভূমিকা
২. ‘আকীদার শাব্দিক বিশ্লেষণ
৩. ‘আকীদার পারিভাষিক অর্থ
৪. আকীদার গুরুত্ব
৫. প্রশ্নোত্তর
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
ভূমিকা
প্রতিটি মুসলিমের জেনে রাখা উচিত যে, আল-
কুরআন ও সহীহ সুন্নাহভিত্তিক বিশুদ্ধ ‘আমল ছাড়া
অন্যকিছু আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলার নিকট
গৃহীত হবে না; আর বিশুদ্ধ ‘আমলের অপরিহার্য
পূর্বশর্ত ‘‘ইসলাহুল ‘আকীদাহ বা ‘আকীদাহ্
সংশোধন করা। কারণ বিশুদ্ধ ‘আকীদাহ সম্পর্কিত
জ্ঞানার্জন এবং তা মনে-প্রাণে লালন করা
ব্যতীত একজন মুসলিম আপাদমস্তক খাঁটি মুমিন হতে
পারবে না। এটা অপ্রিয় সত্য যে, বাংলাদেশসহ
ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমগণ তাওহীদ তথা
একত্ববাদ, আল্লাহর পরিচয় ও অবস্থান এবং
রিসালাত ও ইসলামের অন্যান্য হুকুম-আহকাম
সম্পর্কে ভ্রান্ত ‘আকীদাহ্ পোষণ করে থাকেন:
তাদের এ ভ্রান্ত ধারণা কোনো কোনো ক্ষেত্রে
এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, ঈমানের অস্তিত্বই
হুমকির মুখে নিপতিত হয়েছে। সে সকল বিভ্রান্ত
মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথের দিশা দিতে ঈমানী
দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের এ
প্রয়াসকে কবুল করুন এবং পথহারা পথিককে সিরাতে
মুস্তাকিমের দিশা দান করুন। আমীন।
‘আকীদার শাব্দিক বিশ্লেষণ:
ﻛﻠﻤﺔ " ﻋﻘﻴﺪﺓ " ﻣﺄﺧﻮﺫﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻘﺪ ﻭﺍﻟﺮﺑﻂ ﻭﺍﻟﺸﺪّ ﺑﻘﻮﺓ، ﻭﻣﻨﻪ ﺍﻹﺣﻜﺎﻡ ﻭﺍﻹﺑﺮﺍﻡ،
ﻭﺍﻟﺘﻤﺎﺳﻚ ﻭﺍﻟﻤﺮﺍﺻﺔ. ( ﺑﻴﺎﻥ ﻋﻘﻴﺪﺓ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻭﻟﺰﻭﻡ ﺍﺗﺒﺎﻋﻬﺎ 1/4 )
‘আকীদাহ্ শব্দটি ‘আক্দ মূলধাতু থেকে গৃহীত। যার
অর্থ হচ্ছে, সূদৃঢ়করণ, মজবুত করে বাঁধা। (বায়ানু
আকীদাতু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, ১/৪)
‘আকীদার পারিভাষিক অর্থ:
ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﺍﻹﺳﻼﻣﻴﺔ : ﻫﻲ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺍﻟﺠﺎﺯﻡ ﺑﺎﻟﻠﻪ، ﻭﻣﻼﺋﻜﺘﻪ، ﻭﻛﺘﺒﻪ، ﻭﺭﺳﻠﻪ، ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﺧﺮ،
ﻭﺍﻟﻘﺪﺭ ﺧﻴﺮﻩ ﻭﺷﺮﻩ، ﻭﺑﻜﻞ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ، ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ﻣﻦ ﺃﺻﻮﻝ
ﺍﻟﺪﻳﻦ، ﻭﺃﻣﻮﺭﻩ، ﻭﺃﺧﺒﺎﺭﻩ. ( ﺭﺳﺎﺋﻞ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ 7/2 ).
“শারী‘আতের পরিভাষায় ‘আকীদাহ্ হচ্ছে, মহান
আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর
কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, শেস দিবস তথা মৃত্যু
পরবর্তী যাবতীয় বিষয় ও তাকদীরের ভাল-মন্দের
প্রতি এবং আল-কুরআনুল হাকীম ও সহীহ হাদীসে
উল্লেখিত দীনের সকল মৌলিক বিষয়ের প্রতি
অন্তরের সুদৃঢ় মজবুত ও বিশুদ্ধ বিশ্বাসের নাম
‘আকীদাহ।” (রিসালাতুম শাইখ মুহাম্মাদ ইবন
ইবরাহীম ফিল ‘আকীদাহ্ ৭/২)
‘আকীদার গুরুত্ব:
আকীদার গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে এর গুরুত্ব
বহনকারী কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো:
১. এক আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসীগণ
প্রশান্তচিত্তের অধিকারী, বিপদে-আপদে, হর্যে-
বিষাদে তারা শুধু তাঁকেই আহ্বান করে, পক্ষান্তরে
বহু-ঈশ্বরবাদীরা বিপদক্ষণে কাকে ডাকবে, এ
সিদ্ধান্ত নিতেই কিংকর্তব্য বিমুঢ়।
২. মহান আল্লাহ সর্বোজ্ঞ, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা
সুতরাং তিনি সব জানেন, সব দেখেন এবং সব
শোনেন। কোনো কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়-এমন
বিশ্বাস যিনি করবেন, তিনি আল্লাহর ইচ্ছায়
প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল পাপ হতে মুক্ত থাকতে
পারবেন।
৩. নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন
ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের অতি নিকটবর্তী। তিনি
দো‘আকারীর দো‘আ কবুল করেন, বিপদগ্রস্তকে
বিপদমুক্ত করেন। বিশুদ্ধ ‘আকীদাহ্ বিশ্বাস
লালনকারীগণ এটি মনেপ্রাণে গ্রহণ করে
সর্বাবস্থায় তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে।
পক্ষান্তরে একাধিক মা‘বুদে বিশ্বাসীগণ
দোদুল্যমান অবস্থায় অস্থির-অশান্ত মনে এদিক-
ওদিক ছুটোছুটি করে।
আমরা এ ক্ষুদ্র পুস্তিকায় মহান আল্লাহর সত্তা
সংক্রান্ত এবং তিনি তাঁর নিজের সম্পর্কে যে
সকল সুন্দর নাম উন্নত গুণাবলী ও কর্মের কথা ব্যক্ত
করেছেন, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার
প্রয়াস পাব ইনশা-আল্লাহ।
প্রশ্নোত্তর
১. প্রশ্ন: আল্লাহ কোথায়?
উত্তর: মহান আল্লাহ স্ব-সত্তায় সপ্ত আসমানের
উপর অবস্থিত মহান আরশের উপরে আছেন। দলীল:
কুরআন, সুন্নাহ ও প্রসিদ্ধ চার ইমামের উক্তি- মহান
আল্লাহর বাণী:
﴿ ﭐﻟﺮَّﺣۡﻤَٰﻦُ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﻌَﺮۡﺵِ ﭐﺳۡﺘَﻮَﻯٰ ٥﴾ [ ﻃﻪ: ٥ ]
“রহমান (পরম দয়াময় আল্লাহ) ‘‘আরশের উপর
উঠেছেন।” [সূরা ত্বা-হা: ২০: ৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একজন দাসীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন:
« ﺃَﻳْﻦَ ﺍﻟﻠﻪُ؟ » ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ، ﻗَﺎﻝَ : «ﻣَﻦْ ﺃَﻧَﺎ؟ » ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻗَﺎﻝَ:
«ﺃَﻋْﺘِﻘْﻬَﺎ، ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻣُﺆْﻣِﻨَﺔٌ »
“আল্লাহ কোথায়? দাসী বলল: আসমানের উপরে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন: আমি কে? দাসী বলল: আপনি আল্লাহর
রাসূল। অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন: একে আজাদ (মুক্ত) করে দাও,
কেননা সে একজন মুমিনা নারী।” (সহীহ মুসলিম:
১২২৭)
ইমাম আবু হানীফাহ (র)-এর উক্তি:
ইমাম আবু হানীফাহ রহ. বলেন,
« ﻣﻦ ﻗﺎﻝ: ﻻ ﺃﻋﺮﻑ ﺭﺑﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺃﻭ ﻓﻲ ﺍﻷﺭﺽ ﻓﻘﺪ ﻛﻔﺮ، ﻭﻛﺬﺍ ﻣﻦ ﻗﺎﻝ: ﺇﻧﻪ ﻋﻠﻰ
ﺍﻟﻌﺮﺵ ﻭﻻ ﺃﺩﺭﻱ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﺃﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺃﻭ ﻓﻲ ﺍﻷﺭﺽ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳُﺪﻋﻰ ﻣﻦ ﺃﻋﻠﻰ ﻻ
ﻣﻦ ﺃﺳﻔﻞ » [ﺍﻟﻔﻘﻪ ﺍﻷﻛﺒﺮ ( 1/135 )]
“যে ব্যক্তি বলবে, আমি জানি না, আমার রব
আসমানে না জমিনে - সে কাফির। অনুরূপ (সেও
কাফির) যে বলবে, তিনি আরশে আছেন, তবে আমি
জানি না, ‘আরশ আসমানে না জমিনে। (আল ফিকহুল
আকবার: ১/১৩৫)
ইমাম মালিক (র)-এর উক্তি:
তার ছাত্র ইয়াহইয়া ইবন ইয়াহইয়া বলেন, একদা
আমরা ইমাম মালিক ইবন আনাস রহ. এর কাছে বসা
ছিলাম, এমন সময় তার কাছে এক লোক এসে বলল,
« ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ، ( ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﺍﺳﺘﻮﻯ )، ﻛﻴﻒ ﺍﺳﺘﻮﻯ؟ ﻗﺎﻝ: ﻓﺄﻃﺮﻕ ﻣﺎﻟﻚ
ﺭﺃﺳﻪ، ﺣﺘﻰ ﻋﻼﻩ ﺍﻟﺮﺣﻀﺎﺀ، ﺛﻢ ﻗﺎﻝ: ﺍﻻﺳﺘﻮﺍﺀ ﻏﻴﺮ ﻣﺠﻬﻮﻝ، ﻭﺍﻟﻜﻴﻒ ﻏﻴﺮ ﻣﻌﻘﻮﻝ،
ﻭﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺑﻪ ﻭﺍﺟﺐ، ﻭﺍﻟﺴﺆﺍﻝ ﻋﻨﻪ ﺑﺪﻋﺔ، ﻭﻣﺎ ﺃﺭﺍﻙ ﺇﻻ ﻣﺒﺘﺪﻋﺎً، ﻓﺄﻣﺮ ﺑﻪ ﺃﻥ ﻳﺨﺮﺝ. ﻭﻓﻲ
ﺭﻭﺍﻳﺔ: ﺍﻻﺳﺘﻮﺍﺀ ﻣﻌﻠﻮﻡ ﻭﺍﻟﻜﻴﻒ ﻏﻴﺮ ﻣﻌﻠﻮﻡ، ﻭﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺑﻪ ﻭﺍﺟﺐ، ﻭﺍﻟﺴﺆﺍﻝ ﻋﻨﻪ ﺑﺪﻋﺔ.
[ﺍﻻﻋﺘﻘﺎﺩ ﻟﻠﺒﻴﻬﻘﻲ ( 1/67) ، ﺣﺎﺷﻴﺔ ﺍﻟﺴﻨﺪﻱ ﻋﻠﻰ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ( 1/167) ، ﺣﺎﺷﻴﺔ
ﺍﻟﺴﻨﺪﻱ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ( 6/38) ، ﻣﺮﻗﺎﺓ ﺍﻟﻤﻔﺎﺗﻴﺢ ﺷﺮﺡ ﻣﺸﻜﺎﺓ ﺍﻟﻤﺼﺎﺑﻴﺢ ( 2/17،
ﻭ 13/89 )]
“হে আবু ‘আব্দুল্লাহ! (মহান আল্লাহ বলেন) ‘‘রহমান
(পরম দয়াময় আল্লাহ) ‘আরশের উপর উঠেছেন” (সূরা
ত্বাহা: ২০:৫)। এই উপরে উঠা কীভাবে? এর রূপ ও ধরণ
কেমন? প্রশ্নটি শোনামাত্র ইমাম মালিক (র)
মাথা নীচু করলেন, এমনকি তিনি ঘর্মাক্ত হলেন:
অতঃপর তিনি বললেন: ইসতিওয়া শব্দটির অর্থ
(উপরে উঠা) সকলের জানা, কিন্তু এর ধরণ বা রূপ
অজানা, এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব এবং এর ধরণ
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা বিদ‘আত। আর আমি
তোমাকে বিদ‘আতী ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না।
অতঃপর তিনি (র) তাকে মজলিস থেকে বের করে
দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। (ইতিকাদ লিল
বাইহাকী ১/৬৭, হাশিয়াতুস সিন্ধী ‘আলা ইবনি
মাজাহ ১/১৬৭, মিরকাতুল মাফাতীহ ২/১৭, ১৩/৮৯)।
ইমাম শাফি‘ঈ (র)-এর উক্তি:
« ﻭﺃﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻋﺮﺷﻪ ﻓﻲ ﺳﻤﺎﺋﻪ » ﺗﻬﺬﻳﺐ ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺇﻳﻀﺎﺡ ﻣﺸﻜﻼﺗﻪ
( 2/406 ).
আর নিশ্চয় আল্লাহ আসমানের উপরে স্বীয় আরশের
উপর উঠেছেন। (তাহযীবু সুনানে আবী দাউদ ২/৪০৬)
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বাল (র)-এর উক্তি:
মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আল-কাইসী বলেন, আমি
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বলকে জিজ্ঞেস করলাম,
« ﻳُﺤﻜﻰ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻙ ﺃﻧﻪ ﻗﻴﻞ ﻟﻪ: ﻛﻴﻒ ﻳُﻌﺮﻑ ﺭﺑﻨﺎ؟ ﻗﺎﻝ: ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺴﺎﺑﻌﺔ ﻋﻠﻰ
ﻋﺮﺷﻪ، ﻗﺎﻝ ﺃﺣﻤﺪ : ﻫﻜﺬﺍ ﻫﻮ ﻋﻨﺪﻧﺎ » ﺗﻬﺬﻳﺐ ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺇﻳﻀﺎﺡ ﻣﺸﻜﻼﺗﻪ
( 2/406 ).
“এ মর্মে ইবনুল মুবারাক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল,
‘‘আমাদের রবের পরিচয় কীভাবে জানবো? উত্তরে
তিনি বললেন, ‘‘সাত আসমানের উপর ‘আরশে। (এ
ব্যাপারে আপনার মতামত কী?) ইমাম আহমাদ (র)
বললেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নিকট এ রকমই। (তাহযীবু
সুনানে আবী দাউদ ২/৪০৬)
উল্লিখিত দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা মহান আল্লাহ
তা‘আলার পরিচয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া
যায়।
২. প্রশ্ন: মহান আল্লাহ ‘আরশে আযীমের উপরে
আছেন-এটা আল-কুরআনের কোন সূরায় বলা হয়েছে?
উত্তর: এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট সাতটি
আয়াত রয়েছে:
১. সূরা আল-‘আরাফ ৭:৫৪
২. সূরা ইউনুস ১০:৩
৩. সূরা আর-রা‘দ ১৩:২
৪. সূরা ত্বা-হা ২০:৫
৫. সূরা আল-ফুরকান ২৫:৫৯
৬. সূরা আস-সাজদাহ্ ৩২:৪
৭. সূরা আল-হাদীদ ৫৭:৪
৩. প্রশ্ন : পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে, ‘‘আল্লাহ
ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন”-[সূরা আল বাকারাহ্
২:১৫৩], ‘‘আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছে-[সূরা
আল-বাকারাহ্ ২:১৯৪), ‘‘আর আমরা গ্রীবাদেশ/
শাহারগের থেকেও নিকটে”- [সূরা ক্ব-ফ :১৬],
‘‘যেখানে তিনজন চুপে চুপে কথা বলেন সেখানে
চতুর্থজন আল্লাহ” [সূরা আল-মুজাদালাহ্:৭] -তাহলে
এই আয়াতগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা কী?
উত্তর: মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর জ্ঞান, শ্রবণ,
দর্শন ও ক্ষমতার মাধ্যমে সকল সৃষ্টির সাথে আছেন।
অর্থাৎ তিনি সপ্ত আসমানের উপর অবস্থিত
‘আরশের উপর থেকেই সব কিছু দেখছেন, সব কিছু
শুনছেন, সকল বিষয়ে জ্ঞাত আছেন। সুতরাং তিনি
দূরে থেকেও যেন কাছেই আছেন।
সাথে থাকার অর্থ, গায়ে গায়ে লেগে থাকা নয়।
মহান আল্লাহ মূসা ও হারূন আলাইহিমাস
সালামকে ফির‘আওনের নিকট যেতে বললেন, তারা
ফির‘আওনের অত্যাচারের আশংকা ব্যক্ত করলেন।
আল্লাহ তাদের সম্বোধন করে বললেন,
﴿ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﺎ ﺗَﺨَﺎﻓَﺎٓۖ ﺇِﻧَّﻨِﻲ ﻣَﻌَﻜُﻤَﺎٓ ﺃَﺳۡﻤَﻊُ ﻭَﺃَﺭَﻯٰ ٤٦﴾ [ ﻃﻪ: ٤٦ ]
‘‘তোমরা ভয় পেও না। নিশ্চয় আমি তোমাদের
সাথে আছি। (অর্থাৎ) শুনছি এবং দেখছি।” [সূরা ত্ব-
হা ২০:৪৬]
এখানে ‘‘সাথে থাকার অর্থ এটা নয় যে, মূসা
আলাইহিস সালাম-এর সাথে মহান আল্লাহ
তা‘আলাও ফির‘আওনের দরবারে গিয়েছিলেন। বরং
‘‘সাথে থাকার ব্যাখ্যা তিনি নিজেই করছেন এই
বলে যে, ‘‘শুনছি এবং দেখছি।”
অতএব আল্লাহর সাথে ও কাছে থাকার অর্থ হলো
জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতার মাধ্যমে, আর স্ব-
সত্তায় তিনি ‘আরশের উপর রয়েছেন।
০৪. প্রশ্ন : ‘‘মুমিনের কলবে আল্লাহ থাকেন বা
মুমিনের কলব আল্লাহর ‘আরশ’ কথাটির ভিত্তি কী?
উত্তর: কথাটি ভিত্তিহীন, মগজপ্রসূত,
কপোলকল্পিত। এর সপক্ষে একটিও আয়াত বা সহীহ
হাদীস নেই।
আছে জনৈক কথিত বুজুর্গের উক্তি, ( ﻗﻠﺐ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﻋﺮﺵ ﺍﻟﻠﻪ )
‘‘মুমিনের কলব আল্লাহর ‘আরশ। (আল মাওযূ‘আত লিস্
সাগানী বা সাগানী প্রণীত জাল হাদীসের
সমাহার/ভান্ডার- ১/৫০, তাযকিরাতুল মাউযূ‘আত
লিল-মাকদিসী ১/৫০)
সাবধান!!! আরবী হলেই কুরআন-হাদীস হয় না। মনে
রাখবেন, দীনের ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ ব্যতীত
বুজুর্গের কথা মূল্যহীন-অচল।
উপরোক্ত উক্তিকারীদের মহান আল্লাহ ও তাঁর
মহান ‘আরশের বিশালতা সম্পর্কে ন্যূনতমও ধারণাও
নেই। তারা জানেন না যে, স্রষ্টা সৃষ্টির মাঝে
প্রবেশ করেন না এবং স্রষ্টাকে ধারণ করার মত এত
বিশাল কোনো সৃষ্টিও নেই। বর্তমান পৃথিবীতে
দেড়শত কোটি মুমিনের দেড়শত কোটি কলব আছে।
প্রতি কলবে আল্লাহ থাকলে আল্লাহর সংখ্যা কত
হবে? যদি বলা হয় মুমিনের কলব আয়নার মত। তাহলে
বলব, আয়নায় তো ব্যক্তি থাকে না, ব্যক্তির
প্রতিচ্ছবি থাকে। ব্যক্তি থাকার জায়গা আয়না
ব্যতীত অপর একটি স্থান।
তবে এ কথা অমোঘ সত্য যে, মুমিনের কলবে মহান
আল্লাহর প্রতি ভালবাসা আর আনুগত্য ও বশ্যতা
স্বীকারের অদম্য মোহ স্পৃহা থাকে।
﴿ ﻭَﻟَٰﻜِﻦَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺣَﺒَّﺐَ ﺇِﻟَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟۡﺈِﻳﻤَٰﻦَ ﻭَﺯَﻳَّﻨَﻪُۥ ﻓِﻲ ﻗُﻠُﻮﺑِﻜُﻢۡ﴾ [ ﺍﻟﺤﺠﺮﺍﺕ: ٧ ]
‘‘বরং মহান আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে
প্রিয় করে তুলেছেন এবং সেটাকে সৌন্দর্য মন্ডিত
করেছেন তোমাদের হৃদয়ের গহীনে।” [সূরা আল-
হুজুরাত ৪৯:৭]
০৫. প্রশ্ন : “মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান”
কথাটা কি সঠিক?
উত্তর: কথাটি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ, যদি এর দ্বারা
উদ্দেশ্য করা হয় যে, ‘‘স্বয়ং আল্লাহ সর্বত্র
বিরাজমান” তাহলে সঠিক নয়। আর যদি এর দ্বারা
বুঝানো হয় যে, ‘‘মহান আল্লাহর ক্ষমতা সর্বত্র
বিরাজমান” তাহলে সঠিক; কেননা আমরা জানি
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ওহী প্রেরণ করতে মাধ্যম
হিসেবে জিবরীল আলাইহিস সালামকে ব্যবহার
করেছেন।
﴿ ﻧَﺰَﻝَ ﺑِﻪِ ﭐﻟﺮُّﻭﺡُ ﭐﻟۡﺄَﻣِﻴﻦُ ١٩٣ ﻋَﻠَﻰٰ ﻗَﻠۡﺒِﻚَ﴾ [ ﺍﻟﺸﻌﺮﺍﺀ : ١٩٣، ١٩٤ ]
‘‘এটাকে (কুরআনকে) রুহুল আমীন (জিবরীল)
আলাইহিস সালাম আপনার হৃদয়ে অবতীর্ণ
করেছেন।” [সূরা আশ-শু‘আরা: ১৯৩-১৯৪]
তিনি নিজেই সর্বত্র বিরাজ করলে মাধ্যমের
দরকার হল কেন?
আমরা আরও জানি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা‘আলার সাথে অত্যন্ত নিকট থেকে কথোপকথন
করার জন্য মি‘রাজ রজনীতে সাত আসমানের উপর
আরোহণ করেছিলেন। [সূরা আন-নাজম ৫৩:০১-১৮]
মহান আল্লাহ যদি সর্বত্রই থাকবেন, তাহলে
মিরাজে যাওয়ার প্রয়োজন কী?
অতএব ‘‘মহান আল্লাহ স্ব-সত্তায় সর্বত্র
বিরাজমান”এ কথাটি বাতিল, কুরআন-হাদীস
পরিপন্থী ও আল্লাহর জন্য মানহানীকর। বরং তাঁর
জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান।
০৬. প্রশ্ন: মহান আল্লাহর অবয়ব সম্পর্কে একজন
খাঁটি মুসলিমের ‘‘আকীদাহ্-বিশ্বাস কীরূপ হবে।
অর্থাৎ মহান আল্লাহর চেহারা বা মুখমন্ডল, হাত,
চক্ষু আছে কি? থাকলে তার দলীল প্রমাণ কী?
উত্তর: মহান আল্লাহ মানব জাতিকে আল-কুরআনের
মাধ্যমেই পথের দিশা দান করেছেন। আল্লাহ
বলেন:
﴿ ﻛُﻞُّ ﻣَﻦۡ ﻋَﻠَﻴۡﻬَﺎ ﻓَﺎﻥٖ ٢٦ ﻭَﻳَﺒۡﻘَﻰٰ ﻭَﺟۡﻪُ ﺭَﺑِّﻚَ ﺫُﻭ ﭐﻟۡﺠَﻠَٰﻞِ ﻭَﭐﻟۡﺈِﻛۡﺮَﺍﻡِ ٢٧﴾ [ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ: ٢٦، ٢٧ ]
‘‘(কিয়ামাতের দিন) ভূপৃষ্ঠে সবকিছু ধ্বংস হয়ে
যাবে। (হে রাসূল) আপনার রবের মহিমাময় ও
মহানুভব চেহারা (সত্তাই) একমাত্র অবশিষ্ট
থাকবে।” [সূরা আর-রহমান ৫৫: ২৬-২৭]
এ আয়াতে মহান আল্লাহর চেহারা প্রমাণিত হয়।
মহান আল্লাহর হাত আছে। এর স্বপক্ষে আল কুরআনের
দলীল:
﴿ ﻗَﺎﻝَ ﻳَٰٓﺈِﺑۡﻠِﻴﺲُ ﻣَﺎ ﻣَﻨَﻌَﻚَ ﺃَﻥ ﺗَﺴۡﺠُﺪَ ﻟِﻤَﺎ ﺧَﻠَﻘۡﺖُ ﺑِﻴَﺪَﻱَّۖ﴾ [ﺹ: ٧٥ ]
‘‘আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস! আমি নিজ দু’হাতে
(আদমকে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সামনে সাজদাহ্
করতে তোমাকে কিসে বাধা দিলো?” [সূরা সাদ
৩৮:৭৫]
অনুরূপ ভাবে মহান আল্লাহর চক্ষু আছে। যেমন:
আল্লাহ নবী মূসা আলাইহিস সালামকে লক্ষ্য করে
বলেছিলেন:
﴿ ﻭَﺃَﻟۡﻘَﻴۡﺖُ ﻋَﻠَﻴۡﻚَ ﻣَﺤَﺒَّﺔٗ ﻣِّﻨِّﻲ ﻭَﻟِﺘُﺼۡﻨَﻊَ ﻋَﻠَﻰٰ ﻋَﻴۡﻨِﻲٓ ٣٩ ﴾ [ ﻃﻪ: ٣٩ ]
“আর আমি আমার পক্ষ হতে তোমার প্রতি
ভালোবাসা বর্ষণ করেছিলাম, যাতে তুমি আমার
চোখের সামনে প্রতিপালিত হও।” [সূরা ত্বাহা
২০:৩৯]
তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্ত্বনা
দিয়ে বলেন:
﴿ ﻭَﭐﺻۡﺒِﺮۡ ﻟِﺤُﻜۡﻢِ ﺭَﺑِّﻚَ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺑِﺄَﻋۡﻴُﻨِﻨَﺎۖ ﴾ [ ﺍﻟﻄﻮﺭ: ٤٨ ]
“(হে রাসূল!) আপনি আপনার রবের নির্দেশের
কারণে ধৈর্যধারণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি আমার
চোখেন সামনেই রয়েছেন।” [সূরা আত-তূর ৫২:৪৮]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺳَﻤِﻴﻊُۢ ﺑَﺼِﻴﺮٌ ١﴾ [ ﺍﻟﻤﺠﺎﺩﻟﺔ: ١ ]
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা শ্রবণ করেন ও
দেখেন।” [সূরা আল-মুজা-দালাহ্ ৫৮:১]
উল্লিখিত আয়াতসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়
যে, মহান আল্লাহর চেহারা, হাত, চোখ, আছে;
তিনি অবয়বহীন নন; বরং তাঁর অবয়ব রয়েছে যদিও
আমরা সেটার ধরণ বা রূপ সম্পর্কে কোনো কিছুই
জানি না। তবে আমাদেরকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে
হবে যে, মহান আল্লাহর শ্রবণ-দর্শন ইত্যাদি
মানুষের শ্রবণ-দর্শনের অনুরূপ নয়। মহান আল্লাহ
বলেন:
﴿ ﻟَﻴۡﺲَ ﻛَﻤِﺜۡﻠِﻪِۦ ﺷَﻲۡﺀٞۖ ﻭَﻫُﻮَ ﭐﻟﺴَّﻤِﻴﻊُ ﭐﻟۡﺒَﺼِﻴﺮُ ١١﴾ [ﺍﻟﺸﻮﺭﺍ: ١١ ]
‘‘আল্লাহর সাদৃশ্য কোনো বস্তুই নেই এবং তিনি
শুনেন ও দেখেন।” [সূরা আশ্-শূরা ৪২:১১]
মহান আল্লাহর এ তিনটি গুণাবলীসহ যাবতীয়
গুণাবলীর ক্ষেত্রে চারটি বিষয় মনে রাখতে হবে:
১. এগুলো অস্বীকার করা যাবে না
২. অপব্যাখ্যা করা যাবে না
৩. সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য দেয়া যাবে না এবং
৪. কল্পনায় ধরণ, গঠন আঁকা যাবে না।
০৭. প্রশ্ন : একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ
গায়েবের খবর বলতে পারে কী?
উত্তর: অবশ্যই না; একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সৃষ্টির
আর কেউ গায়েব এর খবর রাখে না। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন:
﴿ ﺇِﻧِّﻲٓ ﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﻏَﻴۡﺐَ ﭐﻟﺴَّﻤَٰﻮَٰﺕِ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﻭَﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﺗُﺒۡﺪُﻭﻥَ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗَﻜۡﺘُﻤُﻮﻥَ ٣٣﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ:
٣٣]
‘‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) আসমান ও জমিনের
যাবতীয় গায়েবী বিষয় সম্পর্কে খুব ভালভাবেই
অবগত আছি এবং সে সকল বিষয়েও জানি যা
তোমরা প্রকাশ করো, আর যা তোমার গোপন
রাখো।” [সূরা আল-বাকারাহ্ ২:৩৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿ ۞ ﻭَﻋِﻨﺪَﻩُۥ ﻣَﻔَﺎﺗِﺢُ ﭐﻟۡﻐَﻴۡﺐِ ﻟَﺎ ﻳَﻌۡﻠَﻤُﻬَﺎٓ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَۚ ﴾ [ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ: ٥٩ ]
‘‘সে মহান আল্লাহর কাছে গায়েবী জগতের সকল
চাবিকাঠি রয়েছে।” সেগুলো একমাত্র তিনি
(আল্লাহ) ছাড়া আর কেউই জানে না।” [সূরা আল-
আন‘আম ৬:৫৯]
০৮. প্রশ্ন : আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী গায়েব এর খবর বলতে
পারতেন?
উত্তর: আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম গায়েবের খবর জানতেন না। তবে
মহান আল্লাহ ওয়াহীর মাধ্যমে যা তাঁকে
জানিয়েছেন- তা ব্যতীত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻗُﻞ ﻟَّﺎٓ ﺃَﻣۡﻠِﻚُ ﻟِﻨَﻔۡﺴِﻲ ﻧَﻔۡﻌٗﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺿَﺮًّﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﺷَﺎٓﺀَ ﭐﻟﻠَّﻪُۚ ﻭَﻟَﻮۡ ﻛُﻨﺖُ ﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﭐﻟۡﻐَﻴۡﺐَ ﻟَﭑﺳۡﺘَﻜۡﺜَﺮۡﺕُ
ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﺮِ ﻭَﻣَﺎ ﻣَﺴَّﻨِﻲَ ﭐﻟﺴُّﻮٓﺀُۚ ﺇِﻥۡ ﺃَﻧَﺎ۠ ﺇِﻟَّﺎ ﻧَﺬِﻳﺮٞ ﻭَﺑَﺸِﻴﺮٞ ﻟِّﻘَﻮۡﻡٖ ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ١٨٨ ﴾ [ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ :
١٨٨ ]
‘‘(হে মুহাম্মাদ!) আপনি ঘোষণা করুণ, একমাত্র
আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ,
লাভ-ক্ষতি, কল্যাণ-অকল্যাণ ইত্যাদি বিষয়ে
একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আমার কোনোই হাত নেই।
আর আমি যদি গায়েব জানতাম, তাহলে বহু কল্যাণ
লাভ করতে পারতাম, আর কোনো প্রকার অকল্যাণ
আমাকে স্পর্শ করতে পারত না।” [সূরা আল-আ‘রাফ
৭:১৮৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
এর নবূওয়াতি জীবনেই এ কথার প্রমাণ মেলে। তিনি
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদি গায়েব
জানতেন, তাহলে অবশ্যই উহুদের যু্দ্ধ এবং তায়েফসহ
অন্যান্য ক্ষেত্রে কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতেন না।
যেখানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব
রাসূলুল্লাহ (সা) গায়েব জানতেন না, সেখানে অন্য
কারো পক্ষেই গায়েব জানা অসম্ভব। সুতরাং
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ গায়েব জানে না- আর এ
সম্পর্কে কারো মনে বিন্দুমাত্রও সংশয় থাকলে, সে
স্পষ্ট শির্কের গুনাহে নিমজ্জিত হবে, যা আন্তরিক
তাওবাহ্ ছাড়া ক্ষমার অযোগ্য।
০৯. প্রশ্ন: ইহ-জীবনে মুমিন বান্দাদের পক্ষে
স্বপ্নযোগে বা স্বচক্ষে মহান আল্লাহর দর্শন লাভ
করা সম্ভব কি?
উত্তর: আল-কুরআনের আয়াত দ্বারা এটা প্রমাণিত
যে, দুনিয়ার জীবনে একনিষ্ঠ মুমিন বান্দাগণও
স্বচক্ষে মহান আল্লাহকে দেখতে পাবেন না।
আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺃَﺭِﻧِﻲٓ ﺃَﻧﻈُﺮۡ ﺇِﻟَﻴۡﻚَۚ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻦ ﺗَﺮَﻯٰﻨِﻲ﴾ [ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ: ١٤٣ ]
‘‘তিনি (মুসা আলাইহিস সালাম) আল্লাহকে লক্ষ্য
করে বলেছিলেন, হে আমার রব! তোমার দীদার
আমাকে দাও; যেন আমি তোমার দিকে তাকাব।
মহান আল্লাহ (মূসাকে) বলেছিলেন, হে মূসা! তুমি
আমাকে কখনো দেখতে পাবে না।” [সূরা আল-
আ‘রাফ ৭:১৪৩]
এ আয়াতসহ অন্যান্য আয়াত দ্বারা এটাই প্রমাণিত
হয় যে, সৃষ্টিজীবের কেউ এমনকি নবী রাসূলগণও
আল্লাহকে চর্মচক্ষু দ্বারা দুনিয়ার জীবনে দেখতে
পান নি। তবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম স্বপ্নযোগে মহান আল্লাহকে
দেখেছেন। (সিলসিলা সহীহাহ্ ৩১৬৯)
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বপ্ন
দেখাকে পুঁজি করে যে সকল কথিত পীর-ফকীর মহান
আল্লাহকে মুহুর্মূহু দর্শন করার দাবী করেন তা
মিথ্যা বৈ কিছু নয়।
আর যারা তাদের এ কথার উপর অণু পরিমাণও
বিশ্বাস স্থাপন করবে, তারাও ধোঁকা ও প্রতারণার
সাগরে নিমজ্জিত।
১০. প্রশ্ন: কথিত আছে যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ
আলাইহিস সালাম নূরের তৈরি। এ কথার কোনো
ভিত্তি-প্রমাণ আছে কি?
উত্তর: আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের নয়, বরং অন্যান্য
মানুষ যেভাবে জন্মলাভ করেন সেভাবে তিনিও
জন্মলাভ করেছেন। আর প্রথম মানুষকে আল্লাহ
তা‘আলা মাটি দ্বারা তৈরী করেছেন একজন প্রকৃত
মুসলিমকে অবশ্যই এ বিশ্বাস পোষণ করতে হবে।
আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻧَّﻤَﺎٓ ﺃَﻧَﺎ۠ ﺑَﺸَﺮٞ ﻣِّﺜۡﻠُﻜُﻢۡ ﻳُﻮﺣَﻰٰٓ ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤَﺎٓ ﺇِﻟَٰﻬُﻜُﻢۡ ﺇِﻟَٰﻪٞ ﻭَٰﺣِﺪٞۖ﴾ [ ﺍﻟﻜﻬﻒ: ١١٠ ]
‘‘(হে রাসূল! আপনার উম্মাতকে) আপনি বলে দিন যে,
নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার
প্রতি ওয়াহী নাযিল হয় যে, নিশ্চয় তোমাদের
ইলাহ বা উপাস্য একজনই।” [সূরা আল-কাহাফ ১৮:১১০]
একজন মানুষের যে দৈহিক বা মানসিক চাহিদা
রয়েছে, নবী মুহা্ম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এরও তেমনি দৈহিক বা মানসিক
চাহিদা ছিল। তাই তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম খাওয়া-দাওয়া, প্রাকৃতিক প্রয়োজন,
বিবাহ-শাদী, ঘর-সংসার সবই আমাদের মতই
করতেন। পার্থক্য শুধু এখানেই যে, তিনি আল্লাহর
প্রেরিত নবী ও রাসূল ছিলেন: তাঁর কাছে আল্লাহর
পক্ষ থেকে মানুষের হিদায়াতের জন্য ওয়াহী
নাযিল হত। আর যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর অতি প্রশংসা করতে গিয়ে তাঁকে
নূরের নবী বলে আখ্যায়িত করল, তারা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি
মিথ্যা অপবাদ দিলো।
এভাবেই একশ্রেণীর মানুষ বলে থাকেন যে,
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
সৃষ্টি না করলে আল্লাহ তা‘আলা আসমান-জমিন,
‘আরশ কুরসী কিছুই সৃষ্টি করতেন না। এ কথাগুলিও
সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও সর্বৈব মিথ্যা।
কারণ, কুরআন ও সহীহ হাদীসে এর সপক্ষে কোনোই
দলীল-প্রমাণ নেই বরং এ সকল অবান্তর কথাবার্তা
আল-কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর পরিপন্থী। অপরদিকে
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে,
﴿ ﻭَﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘۡﺖُ ﭐﻟۡﺠِﻦَّ ﻭَﭐﻟۡﺈِﻧﺲَ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴَﻌۡﺒُﺪُﻭﻥِ ٥٦ ﴾ [ ﺍﻟﺬﺍﺭﻳﺎﺕ: ٥٦ ]
‘‘আমি জিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র
আমার ‘ইবাদত করার জন্য।” [সূরা আয-যারিয়াত
৫১:৫৬)]
১১. প্রশ্ন: অনেকেই এ ‘আকীদাহ্ বিশ্বাস পোষণ
করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মারা যান নি বরং তিনি জীবিত; এ
সম্পর্কিত শার‘ঈ বিধান কী?
উত্তর: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মারা গেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
﴿ ﺇِﻧَّﻚَ ﻣَﻴِّﺖٞ ﻭَﺇِﻧَّﻬُﻢ ﻣَّﻴِّﺘُﻮﻥَ ٣٠﴾ [ ﺍﻟﺰﻣﺮ: ٣٠ ]
“নিশ্চয় আপনি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।”
১২. প্রশ্ন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর উপর যে সালাত পাঠ করি, তা-কি
তাঁর নিকট পৌঁছে?
উত্তর: আমাদের পঠিত সালাত আল্লাহু সুবহানাহু
ওয়াতা‘আলা ফেরেশতার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে
পৌছান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর
বানিও না এবং আমার কবরকে উৎসবস্থলে পরিণত
করো না; আর আমার উপর সালাত পাঠ করো; কেননা,
তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের
পঠিত সালাত আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
১৩. প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম অথবা কোনো মৃত বা অনুপস্থিত ওলী-
আওলিয়াকে মাধ্যম করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা
করা বা বিপদাপদে সাহায্য চাওয়া যাবে কি?
উত্তর: নবী-রাসূল, ওলী-আওলিয়াসহ সকল সৃষ্টির
একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার
কাছেই মানুষ যাবতীয় চাওয়া-পাওয়ার প্রার্থনা
করবে। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻓَﭑﺑۡﺘَﻐُﻮﺍْ ﻋِﻨﺪَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﭐﻟﺮِّﺯۡﻕَ ﻭَﭐﻋۡﺒُﺪُﻭﻩُ﴾ [ ﺍﻟﻌﻨﻜﺒﻮﺕ: ١٧ ]
“তোমরা আল্লাহর কাছে (সরাসরি) রিযিক চাও
এবং তাঁরই ‘ইবাদাত করো।” [সূরা আল-‘আনকাবূত
২৯:১৭]
﴿ ﺃَﻣَّﻦ ﻳُﺠِﻴﺐُ ﭐﻟۡﻤُﻀۡﻄَﺮَّ ﺇِﺫَﺍ ﺩَﻋَﺎﻩُ ﻭَﻳَﻜۡﺸِﻒُ ﭐﻟﺴُّﻮٓﺀَ﴾ [ ﺍﻟﻨﻤﻞ: ٦٢ ]
“বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির ডাকে (আল্লাহ ছাড়া) কে
সাড়া দেয়, যখন সে ডাকে; আর (আল্লাহ ছাড়া) কে
তার কষ্ট দূর করে?” [সূরা আন্-নামল ২৭:৬২]
উল্লিখিত আয়াতদ্বয় ছাড়াও আল-কুরআন ও সহীহ
সুন্নাহ দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে,
আল্লাহ ছাড়া মৃত বা অনুপস্থিত কোনো ওলী-
আওলিয়া, পীর-মাশায়েখ এমনকি সর্বকালের
সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও মাধ্যম
করে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া জায়েয নয়।
পক্ষান্তরে মানুষের যা কিছু চাওয়া-পাওয়া রয়েছে,
তা সরাসরি আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে।
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺗَﺪۡﻋُﻮﻥَ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻋِﺒَﺎﺩٌ ﺃَﻣۡﺜَﺎﻟُﻜُﻢۡۖ ﴾ [ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ: ١٩٤ ]
‘‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাকো,
তারা তো সবাই তোমাদের মতই বান্দা।” [সূরা
আল-আ‘রাফ ৭:১৯৪]
﴿ ﺃَﻣۡﻮَٰﺕٌ ﻏَﻴۡﺮُ ﺃَﺣۡﻴَﺎٓﺀٖۖ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺸۡﻌُﺮُﻭﻥَ ﺃَﻳَّﺎﻥَ ﻳُﺒۡﻌَﺜُﻮﻥَ ٢١ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺤﻞ: ٢١ ]
‘‘তারা তো মৃত, প্রাণহীন এবং তাদেরকে কবে
পুনরূত্থান করা হবে তারা তাও জানে না।” [সূরা
আন-নাহল ১৬:২১]
এ মর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচাতো ভাই ‘আব্দুল্লাহ ইবনু
‘আব্বাসকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘যখন তুমি কোনো কিছু
চাইবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছে চাইবে। আর
যখন তুমি কোনো সাহায্য চাইবে, তখনও একমাত্র
মহান আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে।” এমনকি
জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও আল্লাহর কাছেই তা
চাইতে বলা হয়েছে।
১৪. প্রশ্ন: উপস্থিত জীবিত ব্যক্তিদের কাছে
সাহায্য চাওয়া সম্পর্কিত শরী‘আতের বিধান কী?
উত্তর: উপস্থিত জীবিত ব্যক্তি যে সমস্ত বিষয়ে
সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন, সে সমস্ত বিষয়ে তার
কাছে চাওয়া যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻓَﭑﺳۡﺘَﻐَٰﺜَﻪُ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﻣِﻦ ﺷِﻴﻌَﺘِﻪِۦ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﻣِﻦۡ ﻋَﺪُﻭِّﻩِۦ ﻓَﻮَﻛَﺰَﻩُۥ ﻣُﻮﺳَﻰٰ ﻓَﻘَﻀَﻰٰ ﻋَﻠَﻴۡﻪِۖ
﴾ [ ﺍﻟﻘﺼﺺ: ١٥ ]
‘‘মূসা (আ)-এর দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে
মূসা আলাইহিস সালাম-এর কাছে সাহায্য
প্রার্থনা করল, তখন মূসা আলাইহিস সালাম তাকে
ঘুষি মারলেন, এভাবে তিনি তাকে হত্যা
করলেন।” [সূরা আল-ক্বাসাস ২৮:১৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ ﻭَﺗَﻌَﺎﻭَﻧُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﺒِﺮِّ ﻭَﭐﻟﺘَّﻘۡﻮَﻯٰۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻌَﺎﻭَﻧُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﺈِﺛۡﻢِ ﻭَﭐﻟۡﻌُﺪۡﻭَٰﻥِۚ ﴾ [ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ: ٢ ]
“তোমরা পূণ্য তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরকে সাহায্য
করো। তবে পাপকার্যে ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে
তোমরা একে অপরকে সাহায্য করো না।” [সূরা আল
মায়িদাহ্ ৫:২]
এ মর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো বান্দা যতক্ষণ তার
ভাইদের সাহায্যে নিয়োজিত থাকবে, ততক্ষণ
আল্লাহ সে বান্দার সাহায্যে নিয়োজিত
থাকবেন।” (মুসলিম)
উল্লেখিত দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা বুঝা যায় যে,
জীবিত ব্যক্তিগণ পারস্পরিক সাহায্য চাইলে, তা
শরীয়াসম্মত।
১৫. প্রশ্ন : মহান আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর প্রিয়
বান্দা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে মনে প্রাণে ভালোবাসা ও
আনুগত্য করার উত্তম পদ্ধতি কী?
উত্তর: মহান আল্লাহকে মনেপ্রাণে ভালোবাসার
উত্তম পদ্ধতি হলো-খালেস অন্তরে আল্লাহ
তা‘আলার যাবতীয় হুকুম-আহকাম দ্বিধাহীনচিত্তে
মেনে নিয়ে তাঁর আনুগত্য করা এবং রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিপূর্ণ
অনুসরণ করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻓَﭑﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤۡﺒِﺒۡﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡ ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٞ
٣١ ﴾ [ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ: ٣١ ]
“(হে রাসূল! আপনার উম্মাতকে) আপনি বলে দিন,
তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তবে
আমারই অনুসরণ করো: তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে
ভালোবাসবেন, আর তোমাদের অপরাধও ক্ষমা করে
দেবেন। আর আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও পরম
দয়ালু।” [সূরা আল-‘ইমরান ৩:৩১]
প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে মনেপ্রাণে ভালোবাসার উত্তম
পদ্ধতি হলো: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের প্রত্যেকটি সুন্নাতকে
দ্বিধাহীনচিত্তে যথাযথভাবে অন্তর দিয়ে
ভালোবাসা, আর সাধ্যানুযায়ী ‘আমল করার চেষ্টা
করা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻟَﺎ ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴۡﻨَﻬُﻢۡ ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍْ ﻓِﻲٓ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢۡ ﺣَﺮَﺟٗﺎ
ﻣِّﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴۡﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍْ ﺗَﺴۡﻠِﻴﻤٗﺎ ٦٥ ﴾ [ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ: ٦٥ ]
‘‘অতএব (হে মুহাম্মাদ!) আপনার রবের কসম! তারা
কখনই ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের
মাঝে সৃষ্ট কোনো ঝগড়া-বিবাদের ব্যাপারে তারা
আপনাকে ন্যায়বিচারক হিসেবে মেনে নিবে।
অতঃপর তারা আপনার ফায়সালার ব্যাপারে
নিজেদের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা রাখবে না
এবং তা শান্তিপূর্ণভাবে কবূল করে নিবে।” [সূরা
আন্-নিসা ৪:৬৫]
১৬. প্রশ্ন: বিদ‘আতের পরিচয় এবং বিদ‘আতী
কাজের পরিণতি সম্পর্কে শরী‘আতের ফায়সালা
কী?
উত্তর: সাধারণ অর্থে সুন্নাতের বিপরীত বিষয়কে
বিদ‘আত বলা হয়। আর শার‘ঈ অর্থে বিদআত হলো:
‘‘আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে ধর্মের নামে
নতুন কোনো প্রথা বা ‘ইবাদাতের প্রচলন করা, যা
শরী‘আতের কোনো সহীহ দলীল-প্রমাণের উপর
ভিত্তিশীল নয়।” (আল ই‘তিসাম ১/১৩ পৃষ্ঠা)।
বিদ‘আতীর কাজের পরিণতি ৩টি:
১. ঐ বিদ‘আতী কাজ বা আমল আল্লাহর দরবারে
কখনোই গৃহীত হবে না।
২. বিদ‘আতী কাজ বা আমলের ফলে মুসলিম সমাজে
গোমরাহী বিস্তার লাভ করে এবং
৩. এ গোমরাহীর চূড়ান্ত ফলাফল বা পরিণতি হলো,
বিদ‘আত কার্য সম্পাদনকারীকে জাহান্নামের
শাস্তি ভোগ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের
শারী‘আতে এমন নতুন কিছু সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে
নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।” (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরো বলেছেন, “আর তোমরা দীনের মধ্যে নতুন কিছু
সংযোজন করা হতে সাবধান থেকো! নিশ্চয়ই
প্রত্যেক নতুন সংযোজন বিদ‘আত, আর প্রত্যেকটি
বিদ‘আত গোমরাহীর পথনির্দেশ করে, আর প্রত্যেক
গোমরাহীর পরিণাম হলো জাহান্নাম।” (আহমাদ,
আবূ দাঊদ, আত্ তিরমিযী)
১৭. প্রশ্ন : আমাদের দেশে বড় ধরনের এমন কি
বিদ‘আতী কাজ সংঘটিত হচ্ছে-যার সাথে
শরী‘আতের কোনো সম্পর্ক নেই?
উত্তর: একজন খাঁটি মুসলিম কোনো আমল সম্পাদনের
পূর্বে অবশ্যই পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখবে যে,
তার কৃত আমলটি কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ দ্বারা
প্রমাণিত কি-না। কিন্তু আমাদের দেশের সহজ-
সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ এমন অনেক কাজ বা আমলের
সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে রেখেছেন, যার সাথে
শরী‘আতে মুহাম্মাদীর কোনোই সম্পর্কে নেই। এমন
উল্লেখযোগ্য বিদ‘আত হলো:
১. ‘মীলাদ মাহফিল-এর অনুষ্ঠান করা।
২. ‘শবে বরাত’ পালন করা।
৩. ‘শবে মিরাজ উদযাপন করা।
৪. মৃত ব্যক্তির কাযা বা ছুটে যাওয়া নামাযসমূহের
কাফ্ফারা আদায় করা।
৫. মৃত্যুর পর তৃতীয়, সপ্তম, দশম এবং চল্লিশতম দিনে
খাওয়া-দাওয়া ও দো‘আর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
৬. ইসালে সাওযাব বা সাওয়াব রেসানী বা
সাওয়াব বখশে দেওয়ার অনুষ্ঠান করা।
৭. মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্য অথবা
কোনো বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশে খতমে
কুরআন অথবা খতমে জালালীর অনুষ্ঠান করা।
৮. উচ্চকণ্ঠে বা চিৎকার করে যিকর করা।
৯. হালকায়ে যিকরের অনুষ্ঠান করা।
১০. মনগড়া তরীকায় পীরের মূরীদ হওয়া।
১১. ফরয, সুন্নাত, নফল ইত্যাদি সালাত শুরু করার
পূর্বে মুখে উচ্চারণ করে নিয়্যাত পড়া।
১২. প্রস্রাব করার পরে পানি থাকা সত্ত্বেও
অধিকতর পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে কুলুখ নিয়ে
২০/৪০/৭০ কদম হাঁটাহাঁটি করা বা জোরে কাশি
দেয়া অথবা উভয় পায়ে কেঁচি দেওয়া, যা বিদ‘আত
হওয়ার পাশাপাশি বেহায়াপনাও বটে।
১৩. ৩টি অথবা ৭টি চিল্লা দিলে ১ হাজ্জের
সাওয়াব হবে- এমনটি মনে করা।
১৪. সম্মিলিত যিকর ও যিকরে নানা অঙ্গভঙ্গি
করা।
১৫. সর্বোত্তম যিকর ‘‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ”-
কে সংকুচিত করে শুধু আল্লাহ, আল্লাহ বা হু, হু করা
ইত্যাদি।
উল্লিখিত কার্যসমূহ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম এমনকি মহামতি
ইমাম চতুষ্টয়েরও আমলের অন্তর্ভুক্ত ছিল না এবং
কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিতও নয়। সুতরাং এ সবই
বিদ‘আত, যা মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে
পরিচালিত করে- যার চূড়ান্ত পরিণতি
জাহান্নামের আযাব ভোগ করা। আল্লাহ তা‘আলা
আমাদের এসব বিদ্আতী কর্মকাণ্ড হতে হিফাযত
করুন-আমীন।
১৮. প্রশ্ন: মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া কথা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
এর হাদীস বলে মানুষের মাঝে বর্ণনা করা বা বই-
পুস্তকে লিখে প্রচার করার পরিণতি কী?
উত্তর: যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যা হাদীস
রচনা করে মানুষের কাছে বর্ণনা করে তার পরিণতি
জাহান্নাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার
নামে মিথ্যা বলবে, তার আবাসস্থল হবে
জাহান্নাম।” (বুখারী ১/৫২, মুসলিম-১/৯)
১৯. প্রশ্ন: আমরা সাধারণত ‘ইবাদাত বলতে বুঝি
কালেমাহ্, সালাত, যাকাত, সওম ও হাজ্জ ইত্যাদি।
মূলত ‘ইবাদাতের সীমা-পরিসীমা কতটুকু?
উত্তর: ‘‘ইবাদাত অর্থই হচ্ছে প্রকাশ্য এবং গোপনীয়
ঐ সকল কাজ ও কথা, যা আল্লাহ তা‘আলা
ভালোবাসেন বা যার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জন করা যায়।
ইবাদাতের উল্লিখিত সংজ্ঞা থেকেই বুঝা যায়
যে, ‘‘ইবাদাত শুধুমাত্র কালেমাহ, সালাত, যাকাত,
সওম ও হাজ্জ ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং
মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের প্রতিটি
মুহূর্ত, প্রতিটি ক্ষণে আল্লাহর ‘ইবাদাত নিহিত
রয়েছে। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻥَّ ﺻَﻠَﺎﺗِﻲ ﻭَﻧُﺴُﻜِﻲ ﻭَﻣَﺤۡﻴَﺎﻱَ ﻭَﻣَﻤَﺎﺗِﻲ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﭐﻟۡﻌَٰﻠَﻤِﻴﻦَ ١٦٢ ﴾ [ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ: ١٦٢ ]
“(হে রাসূল !) আপনি বলে দিন যে, নিশ্চয়ই আমার
সালাত, আমার কুরবানী এবং আমর জীবন ও মরণ
সবকিছুই মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত যিনি সমগ্র
বিশ্বের রব্ব।” [সূরা আল-আন‘আম ৬:১৬২]
এ আয়াত এটাই প্রমাণ করে যে, মানব জীবনের
প্রতিটি মুহুর্তের ভাল কথা বা কাজ ‘ইবাদাতের
মধ্যে গণ্য। যেমন- দো‘আ করা, বিনয় ও নম্রতার
সাথে ‘ইবাদাত করা, হালাল উপার্জন করা ও
হালাল খাওয়া, দান-খায়রাত করা, পিতা-মাতার
সেবা করা, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে
সদাচরণ করা, সর্বাবস্থায় সত্যাশ্রয়ী হওয়া, মিথ্যা
বর্জন করা ইত্যাদি ‘ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত।
২০. প্রশ্ন : কোন পাপ কর্মটি মহান আল্লাহুর কাছে
সবচেয়ে বেশি অপছন্দনীয় এবং সর্ববৃহৎ পাপ বলে
গণ্য হবে?
উত্তর: মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি
অপছন্দনীয় এবং সর্ববৃহৎ পাপ বলে গণ্য হবে শির্কের
গুনাহসমূহ। মহান আল্লাহ এ গুনাহ থেকে বিরত
থাকতে তাঁর বান্দাকে বারংবার সতর্ক করেছেন।
﴿ ﻭَﺇِﺫۡ ﻗَﺎﻝَ ﻟُﻘۡﻤَٰﻦُ ﻟِﭑﺑۡﻨِﻪِۦ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﻌِﻈُﻪُۥ ﻳَٰﺒُﻨَﻲَّ ﻟَﺎ ﺗُﺸۡﺮِﻙۡ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِۖ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﺸِّﺮۡﻙَ ﻟَﻈُﻠۡﻢٌ ﻋَﻈِﻴﻢٞ
١٣﴾ [ ﻟﻘﻤﺎﻥ: ١٣ ]
‘‘লোকমান আলাইহিস সালাম তাঁর ছোট্ট
ছেলেটিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, হে
আমার ছেলে! তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে
অংশীদার স্থাপন করবে না। কেননা শিরক হলো
সবচেয়ে বড় যুলম (অর্থাৎ বড় পাপের কাজ)।” [সূরা
লুকমান: ৩১:১৩]
২১. প্রশ্ন : শিরক কী? বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত এমন
কাজসমূহই বা কী?
উত্তর: আরবী শিরক শব্দের অর্থ অংশী স্থাপন করা।
পারিভাষিক অর্থে শিরক বলা হয়- কোনো ব্যক্তি
বা বস্তুকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা বা তাঁর
ইবাদাতে অন্য কাউকে শরীক করা। বড় শিরক হলো:
সকলপ্রকার ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্যেই
নিবেদিত; কিন্তু সে ইবাদাতে কোনো ব্যক্তি বা
বস্তুকে শরীক করা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত। যেমন
আল্লাহ ছাড়া কোনো পীর-ফকীর বা ওলী-
আওলিয়াদের কাছে সন্তান চাওয়া, ব্যবসায়-
বাণিজ্যে আয়-উন্নতির জন্যে অথবা কোনো বিপদ
থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে কোনো পীর-
ফকীরের নামে বা মাযারে মান্নত দেওয়া,
সাজদাহ করা, পশু যবেহ করা ইত্যাদি বড় শিরক বলে
গণ্য হবে। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺪۡﻉُ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻨﻔَﻌُﻚَ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻀُﺮُّﻙَۖ ﻓَﺈِﻥ ﻓَﻌَﻠۡﺖَ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺇِﺫٗﺍ ﻣِّﻦَ ﭐﻟﻈَّٰﻠِﻤِﻴﻦَ ١٠٦
﴾ [ﻳﻮﻧﺲ : ١٠٦ ]
“(হে মুহাম্মাদ) আপনি আল্লাহ ব্যতীত এমন কোনো
কিছুর নিকট প্রার্থনা করবেন না, যা আপনার
কোনো প্রকার ভালো বা মন্দ করার ক্ষমতা রাখে
না। কাজেই হে নবী! আপনি যদি এমন কাজ করেন,
তাহলে আপনিও যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে
যাবেন।” ([সূরা ইউনুস ১০:১০৬]
বড় শিরকের সংখ্যা নির্ধারিত নেই; তবে বড়
শিরকের শাখা-প্রশাখা অনেক। তন্মধ্যে কয়েকটি
নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের কাছে সাহায্য
চাওয়া।
২. একক আল্লাহ ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টির জন্য পশু
যবেহ করা।
৩. আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে মানৎ করা।
৪. কবরবাসীর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কবরের
চারপাশে তাওয়াফ করা ও কবরের পাশে বসা।
৫. বিপদে-আপদে আল্লাহ ছাড়া অন্যের অন্যের উপর
ভরসা করা। ইত্যাদি ছাড়াও এ জাতীয় আরো অনেক
শিরক রয়েছে। যা বড় শিরক হিসেবে গণ্য হবে।
২২. প্রশ্ন: বড় শিরকের পরিণতি কী হতে পারে?
উত্তর: বড় শিরকের দ্বারা মানুষের সৎ ‘আমলসমূহ নষ্ট
হয়ে যায়, জান্নাত হারাম হয়ে যায় এবং
চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়।
আর তার জন্যে পরকালে কোনো সাহায্যকারী
থাকে না। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻭَﻟَﻘَﺪۡ ﺃُﻭﺣِﻲَ ﺇِﻟَﻴۡﻚَ ﻭَﺇِﻟَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻚَ ﻟَﺌِﻦۡ ﺃَﺷۡﺮَﻛۡﺖَ ﻟَﻴَﺤۡﺒَﻄَﻦَّ ﻋَﻤَﻠُﻚَ ﻭَﻟَﺘَﻜُﻮﻧَﻦَّ ﻣِﻦَ
ﭐﻟۡﺨَٰﺴِﺮِﻳﻦَ ٦٥ ﴾ [ ﺍﻟﺰﻣﺮ: ٦٥ ]
“(হে নবী! আপনি যদি শিরক করেন তাহলে নিশ্চয়ই
আপনার ‘আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে। আর আপনি অবশ্যই
ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।” [সূরা আয-
যুমার ৩৯:৬৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻣَﻦ ﻳُﺸۡﺮِﻙۡ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪۡ ﺣَﺮَّﻡَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴۡﻪِ ﭐﻟۡﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﻣَﺄۡﻭَﻯٰﻪُ ﭐﻟﻨَّﺎﺭُۖ ﻭَﻣَﺎ ﻟِﻠﻈَّٰﻠِﻤِﻴﻦَ ﻣِﻦۡ ﺃَﻧﺼَﺎﺭٖ
٧٢ ﴾ [ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ: ٧٢ ]
“নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে অন্যকে অংশীদার
বানায়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে
দেন, তার চিরস্থায়ী বাসস্থান হবে জাহান্নাম। এ
সমস্ত যালিম তথা মুশরিকদের জন্য কিয়ামাতের
দিন কোনো সাহায্যকারী থাকবে না।” [সূরা আল-
মায়িদাহ্ ৫:৭২]
আল্লাহ ইচ্ছা করলে যে কোনো গুনাহ ক্ষমা করে
দিবেন, কিন্তু শিরকের গুনাহ (তাওবাহ ব্যতীত
মৃত্যুবরণ করলে) কখনো মাফ করবেন না। শির্কের
গুনাহের চূড়ান্ত পরিণতি স্থায়ীভাবে
জাহান্নামের আগুনে দগ্ধিভূত হওয়া।
২৩. প্রশ্ন: আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে অর্থাৎ
পীর-ফকীর, ওলী-আওলিয়ার নামে বা মাযারে
মানৎ করার শার‘ঈ বিধান কী?
উত্তর: একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে
মানৎ করা যাবে না। কারণ নযর বা মানৎ একটি
ইবাদাত আর সকল প্রকার ইবাদাত কেবলমাত্র
আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত; কোনো নবী-রাসূল
আলাইহিমুস সালাম বা পীর-ফকীর, ওলী-আওলিয়া
অথবা মাযারে নযর বা মান্নত করা যাবে না, করলে
তা শিরকী কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য
যে, আল্লাহর নামে নযর বা মান্নত করলে তা পূর্ণ
করা ওয়াজিব। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ﺇِﺫۡ ﻗَﺎﻟَﺖِ ﭐﻣۡﺮَﺃَﺕُ ﻋِﻤۡﺮَٰﻥَ ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻧَﺬَﺭۡﺕُ ﻟَﻚَ ﻣَﺎ ﻓِﻲ ﺑَﻄۡﻨِﻲ ﻣُﺤَﺮَّﺭٗﺍ ﻓَﺘَﻘَﺒَّﻞۡ ﻣِﻨِّﻲٓۖ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ
ﭐﻟﺴَّﻤِﻴﻊُ ﭐﻟۡﻌَﻠِﻴﻢُ ٣٥﴾ [ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ: ٣٥ ]
‘‘(ইমরানের স্ত্রী বিবি হান্নাহ) আল্লাহকে লক্ষ্য
করে বলেন, ‘হে আমার রব! আমার পেটে যে সন্তান
আছে তা আমি কুক্ত করে আপনার উদ্দেশ্যে মান্নত
করেছি।” [সূরা আল-‘ইমরান ৩:৩৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿ ﻳُﻮﻓُﻮﻥَ ﺑِﭑﻟﻨَّﺬۡﺭِ ﻭَﻳَﺨَﺎﻓُﻮﻥَ ﻳَﻮۡﻣٗﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺷَﺮُّﻩُۥ ﻣُﺴۡﺘَﻄِﻴﺮٗﺍ ٧ ﴾ [ﺍﻻﻧﺴﺎﻥ : ٧ ]
“তারা যেন মান্নত পূর্ণ করে এবং সেদিনের ভয় করে
যেদিনের বিপর্যয় অত্যন্ত ব্যাপক।” [সূরা আদ্-দাহর
৭৬:৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের কাজে
মান্নত করে সে যেন তা পূর্ণ করার মাধ্যমে তাঁর
আনুগত্য প্রকাশ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর
নাফরমানীমূলক কাজে মান্নত করে সে যেন তাঁর
নাফরমানী না করে- (অর্থাৎ মান্নত যেন আদায় না
করে)।” (বুখারী ৬৬৯৬, ৬৭০০; আবু দাঊদ ৩২৮৯)
আল্লাহ ব্যতীত গাইরুল্লাহ বা অন্যের নামে মান্নত
করার অর্থ হলো, গাইরুল্লাহরই ইবাদাত করা যা বড়
শিরক বলে গণ্য হবে।
২৪. প্রশ্ন: কবর বা মাযারে গিয়ে কবরবাসীর কাছে
কিছু প্রার্থনা করা যাবে কী?
উত্তর: কবরে বা মাযারে গিয়ে কিছু প্রার্থনা করা
শির্ক। কারণ, কবরবাসীর কোনোই ক্ষমতা নেই যে,
সে কারো কোনো উপকার করবে। বরং দুনিয়ার
কোনো আহ্বানই সে শুনতে পায় না। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﻟَﺎ ﺗُﺴۡﻤِﻊُ ﭐﻟۡﻤَﻮۡﺗَﻰٰ﴾ [ ﺍﻟﺮﻭﻡ: ٥٢ ]
‘‘(হে নবী!) নিশ্চয়ই আপনি মৃতকে শুনাতে পারবেন
না।”[সূরা আর-রূম ৩০:৫২]
২৫. প্রশ্ন : কবরমুখী হয়ে অথবা কবরের পাশে সালাত
আদায় করার শার‘ঈ হুকুম কী?
উত্তর: কবরমুখী হয়ে অথবা কবরকে কেন্দ্র করে তার
পার্শ্বে সালাত আদায় করা শির্ক এবং তা কখনোই
আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻭﻻ ﺗﺼﻠﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ »
“তোমরা কবরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করবে
না।” (সহীহ মুসলিম হা: ৯৮)
বাংলাদেশে ওলী-আওলিয়াদের কবরকে কেন্দ্র করে
অনেক মসজিদে নির্মিত হয়েছে। ঐ সকল
কবরকেন্দ্রীক মসজিদে সালাত আদায় করলে তা
আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না। রাসূলু্ল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর
পূর্বমুহুর্তে বলেছেন: “ইয়াহূদী নাসারাদের উপর
আল্লাহ অভিসম্পাত। কারণ তারা তাদের নবীদের
কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। (বুখারী-৩৪৫৩, ১৩৯০;
মুসলিম- ৫২৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর
যিয়ারতকারী মহিলাদেরকে এবং যারা কবরকে
মসজিদে পরিণত করে, আর তাতে বাতি জ্বালায়,
তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। (আবু দাউদ ৩২৩৬;
তিরমিযী-৩২; নাসায়ী-২০৪)
অন্যান্য দলীল প্রমাণ একত্রিত করলে মহিলাদের
কবর যিয়ারতের বিষয় দাঁড়ায় নিম্নরূপ:
১. যদি মহিলাদের কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য হয়,
মৃত্যুর কথা ও আখিরাতের কথা স্মরণ করা এবং
যাবতীয় হারাম কর্ম থেকে বিরত থাকা তাহলে
জায়েয।
২. আর যদি এমন হয় যে, দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করে
যেমন-প্রতি ঈদে, প্রতি সোমবার, প্রতি শুক্রবার
যিয়ারত করা বিদ‘আত। সেখানে গিয়ে তারা
বিলাপ করবে, উঁচু আওয়াজে কান্না-কাটি করবে,
পর্দার খেলাফ কাজ করবে, সুগন্ধি বা সুগন্ধযুক্ত
কসমেটিক ব্যবহার করে বেপর্দা বেশে কবর যিয়ারত
হারাম। শিরক-বিদ‘আতে জড়িয়ে পড়বে, অক্ষম,
অসহায়, অপারগ মৃত কথিত অলী-আওলিয়াদের কাছে
বিপদ মুক্তি চাইলে। মনের কামনা-বাসনা পূরণ
করণার্থে চাইবে তাহলে তাদের জন্য কবর যিয়ারত
হারাম। দলীলসহ বিস্তারিত দেখুন সহীহ ফিক্বহুস
সুন্নাহ ১/৬৬৮-৬৬৯ পৃষ্ঠা।
২৬. প্রশ্ন: আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট সন্তান
কামনা করা যাবে কী?
উত্তর: সন্তান দেওয়া, না দেওয়ার মালিক একমাত্র
আল্লাহ। এতে অন্য কারোও কোনো ক্ষমতা নেই।
সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে কোনো পীর-ফকীর,
দরবেশ, ওলী-আওলিয়া বা মাযারে গিয়ে আবেদন
নিবেদন করা, নযর মানা ইত্যাদি শির্কের
অন্তর্ভুক্ত; যা (ক্ষমা না চাইলে) সাধারণ ক্ষমার
অযোগ্য পাপ। সন্তান দানের মালিক আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। আল-কুরআন সাক্ষ্য দিচ্ছে:
﴿ ﻳَﻬَﺐُ ﻟِﻤَﻦ ﻳَﺸَﺎٓﺀُ ﺇِﻧَٰﺜٗﺎ ﻭَﻳَﻬَﺐُ ﻟِﻤَﻦ ﻳَﺸَﺎٓﺀُ ﭐﻟﺬُّﻛُﻮﺭَ ٤٩ ﺃَﻭۡ ﻳُﺰَﻭِّﺟُﻬُﻢۡ ﺫُﻛۡﺮَﺍﻧٗﺎ ﻭَﺇِﻧَٰﺜٗﺎۖ ﻭَﻳَﺠۡﻌَﻞُ ﻣَﻦ
ﻳَﺸَﺎٓﺀُ ﻋَﻘِﻴﻤًﺎۚ﴾ [ﺍﻟﺸﻮﺭﺍ: ٤٩، ٥٠ ]
‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন,
যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা ছেলে-
মেয়ে উভয়ই দান করেন। আবার যাকে ইচ্ছে বন্ধ্যা
করেন।” [সূরা আশ্শূরা ৪২:৫০]
তাই নবী-রাসূলগণ যেমন; জাতির পিতা ইবরাহীম
আলাইহিস সালাম ও যাকারিয়া আলাইহিস
সালাম একমাত্র আল্লাহর কাছেই সন্তানের
প্রার্থনা করতে করাতে সুদীর্ঘ দিন পর তাদেরকে
আল্লাহ সন্তান দান করেন। সন্তান না হলে
সুদীর্ঘকাল যাবৎ নবীগণ আল্লাহর কাছে চান, আর
উম্মাতগণ পীর-ফকীর নামে তথাকথিত মানুষের
কাছে চায়। এরা কি নবীগণের আদর্শ থেকে বিচ্যুত
নয়?
২৭. প্রশ্ন : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কুরবানী
বা পশু যবেহ করলে, তার শার‘ঈ হুকুম কী?
উত্তর: আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কুরবানী করা
সুস্পষ্ট শির্ক। আল্লাহর নামের সাথে কোনো পীর-
ওলী, গাউস-কুতুবের নাম উচ্চারণ করাও শিরক।
কুরবানী বা পশু যবেহ করতে হবে একমাত্র আল্লাহর
নামে। আল্লাহ বলেন
﴿ ﻓَﺼَﻞِّ ﻟِﺮَﺑِّﻚَ ﻭَﭐﻧۡﺤَﺮۡ ٢ ﴾ [ﺍﻟﻜﻮﺛﺮ: ٢ ]
‘‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় করুন
এবং নাহর (কুরবানী) করুন।” [সূরা আল-কাওসার
১০৮:২)]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন: “ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ অভিশাপ, যে
আল্লাহ ব্যতীত গাইরুল্লাহর নামে যবেহ
করে।” (সহীহ মুসলিম হা: ১৯৭৮)
“আল্লাহ ব্যতীত গাইরুল্লাহর নামে যবেহকৃত পশুর
গোশত খাওয়া হারাম।”[সূরা আল-মায়িদাহ ৫:৩]
২৮. প্রশ্ন : আল্লাহর যিকরের সাথে অন্য কারো নাম
যুক্ত করার শার‘ঈ হুকুম কী?
উত্তর: আল্লাহর যিকরের সাথে অন্য কারো নাম
যুক্ত করা শির্ক। যেমন, অনেক মাযারভক্ত ‘‘ইয়া
রাসূলুল্লাহ” ইয়া নূরে খোদা অথবা হক্ক বাবা,
হায়রে খাজা বলে যিকর করে- যা সম্পূর্ণরূপে
শির্ক। কারণ ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই
হতে হবে। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻭَﻣَﻦۡ ﺃَﺿَﻞُّ ﻣِﻤَّﻦ ﻳَﺪۡﻋُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻣَﻦ ﻟَّﺎ ﻳَﺴۡﺘَﺠِﻴﺐُ ﻟَﻪُۥٓ ﺇِﻟَﻰٰ ﻳَﻮۡﻡِ ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِ ﻭَﻫُﻢۡ ﻋَﻦ
ﺩُﻋَﺎٓﺋِﻬِﻢۡ ﻏَٰﻔِﻠُﻮﻥَ ٥ ﴾ [ ﺍﻻﺣﻘﺎﻑ: ٥ ]
“তার চেয়ে অধিক ভ্রান্ত আর কে হতে পারে, যে
আল্লাহকে ছেড়ে এমন সত্তাকে ডাকে, যে
কিয়ামাত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিতে পারবে
না।” [সূরা আল-আহকাফ ৪৬:৫]
উল্লেখ্য যে, আল্লাহর যিকরের সাথে অন্য কারো
নাম যুক্ত করার অর্থ হলো: তাকেও আল্লাহর সমকক্ষ
মনে করা। কিন্তু একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তা‘আলা এবং সকল কিছুই তাঁর সৃষ্টি। সুতরাং
সৃষ্টি ও স্রষ্টা কখনোই এক হতে পারে না। আল
কুরআন সাক্ষী দিচ্ছে:
﴿ ﻭَﻟَﻢۡ ﻳَﻜُﻦ ﻟَّﻪُۥ ﻛُﻔُﻮًﺍ ﺃَﺣَﺪُۢ ٤ ﴾ [ﺍﻻﺧﻼﺹ: ٤ ]
‘‘এবং কেউই তাঁর সমকক্ষ নয়।” [সূরা আল-ইখলাস
১১২:৪]
২৯. প্রশ্ন: একজন প্রকৃত মুসলিমের একমাত্র ভরসাস্থল
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা- এ ‘আকীদাহ্-
বিশ্বাসের বিপরীত কোনো চিন্তার সুযোগ আছে
কী?
উত্তর: একজন প্রকৃত মুসলিম সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায়
একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার উপর
তাওয়াক্কুল করবে, আল কুরআন সে শিক্ষাই দিচ্ছে। এ
বিপরীত চিন্তা লালন করা শিরকের পর্যায়ভুক্ত।
আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺘَﻮَﻛَّﻠُﻮٓﺍْ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢ ﻣُّﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ٢٣ ﴾ [ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ: ٢٣ ]
‘‘তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তাহলে একমাত্র
আল্লাহর উপরই ভরসা করো।” [সূরা আল-মায়িদাহ্
৫:২৩]
﴿ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺘَﻮَﻛَّﻞۡ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻬُﻮَ ﺣَﺴۡﺒُﻪُۥٓۚ﴾ [ ﺍﻟﻄﻼﻕ: ٣ ]
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্যে
আল্লাহই যথেষ্ট।” [সূরা আত-ত্বালাক ৬৫:৩]
﴿ ﻭَﺗَﻮَﻛَّﻞۡ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﺤَﻲِّ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﻟَﺎ ﻳَﻤُﻮﺕُ﴾ [ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ: ٥٧ ]
‘‘তুমি ভরসা করো সেই চিরঞ্জীবের উপর, যার মৃত্যু
নেই।” [সূরা আল ফুরকান ২৫:৫৮]
৩০. প্রশ্ন: যাদু সম্পর্কিত শার‘ঈ হুকুম কী এবং
যাদুকরের শাস্তি কী?
উত্তর: যাদু সম্পর্কিত বিধান হলো: এটি কাবীরাহ্
গুনাহ এবং ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী। অবস্থার
পরিপ্রেক্ষিতে জাদুকর কখনো মুশরিক, কখনো
কাফির, আবার কখনো ফিতনাহ সৃষ্টিকারী
হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ
তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻭَﻟَٰﻜِﻦَّ ﭐﻟﺸَّﻴَٰﻄِﻴﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍْ ﻳُﻌَﻠِّﻤُﻮﻥَ ﭐﻟﻨَّﺎﺱَ ﭐﻟﺴِّﺤۡﺮَ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ١٠٢ ]
‘‘কিন্তু শয়তান কুফরী করেছিল, তারা মানুষদেরকে
জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিত।” [সূরা আল-বাকারাহ্
২:১০২]
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মুসলিম গভর্নরদের কাছে
পাঠানো নির্দেশনামায় লিখেছেন: ‘‘তোমরা
প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ এবং যাদুকর নারীকে হত্যা
করো।” (সহীহ বুখারী হা: ৩১৫৬; সুনান আবু দাউদ হা:
৩০৪৩)
জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফূ হাদীসে
বর্ণিত আছে- “যাদুকরের শাস্তি মৃত্যুদন্ড।” (জামে
তিরমিযী হা: ১৪৬)
৩১. প্রশ্ন : গণক ও জ্যোতিষীরা গায়েবের খবর
সম্পর্কে অনেক কথা বলে থাকে; গণক ও
জ্যোতিষীদের ঐসব কথা বিশ্বাস করা যাবে কী
এবং এর শার‘ঈ বিধান কী?
উত্তর: গণক বা জ্যোতিষী তো দূরের কথা, নবী-
রাসূলগণও গায়েব সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻗُﻞ ﻟَّﺎ ﻳَﻌۡﻠَﻢُ ﻣَﻦ ﻓِﻲ ﭐﻟﺴَّﻤَٰﻮَٰﺕِ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﭐﻟۡﻐَﻴۡﺐَ ﺇِﻟَّﺎ ﭐﻟﻠَّﻪُۚ﴾ [ ﺍﻟﻨﻤﻞ: ٦٥ ]
“(হে রাসূল!) আপনি বলে দিন, একমাত্র মহান
আল্লাহ ছাড়া আসমান ও যমীনে আর যারা আছে
তাদের কেউই গায়েবের খবর জানে না।” [সূরা আন-
নামল ২৭:৬৫]
এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি গণক ও
জ্যোতিষীদের নিকট গেল অতঃপর তারা যা বলল,
তা বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে
অর্থাৎ কুরআনুল হাকীমের সাথে কুফরী করল
(পক্ষান্তরে সে আল্লাকেই অস্বীকার করল)। (সুনান
আবূ দাঊদ ৩৯০৪)
“যে ব্যক্তি কোনো গণক তথা ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে
গেল, অতঃপর তাকে (ভাগ্য সম্পর্কে) কিছু
জিজ্ঞেস করল- চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত
কবূল হবে না।” (সহীহ মুসলিম ২২৩; মুসনাদ আহমাদ
৪/৬৭)
গণক বা জ্যেতিষীদের কথা বিশ্বাস করা আল্লাহর
সাথে কুফরী করার নামান্তর।
৩২. প্রশ্ন: আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা
সম্পর্কিত ইসলামের হুকুম কী?
উত্তর: আল্লাহ ছাড়া আর কারো নামে কসম বা শপথ
করা জায়িয নয়। বরং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম অথবা কোনো পীর-ফকীর, বাবা-মা,
ওলী-আওলিয়া, সন্তান-সন্ততি কিংবা কোনো
বস্তুর নামে শপথ করা শির্ক। শপথ করতে হবে
একমাত্র আল্লাহর নামে।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া
অন্যের নামে শপথ করল, সে আল্লাহর সাথে শির্ক
করল।” (আহমাদ)
৩৩. প্রশ্ন: রোগমুক্তি বা কল্যাণ লাভের উদ্দেশ্যে
বিভিন্ন ধরনের ধাতু দ্বারা নির্মিত আংটি,
মাদুলি, বালা, কাপড়ের টুকরা, সুতার কায়তন অথবা
কুরআন মাজীদের আয়াতের নম্বর জাফরানের কালি
দিয়ে লিখে এবং বিভিন্ন ধরনে নকশা এঁকে দো‘আ,
তাবীয-কবয বানিয়ে তা হাতে, কোমরে, গলায় বা
শরীরের কোনো অঙ্গে ব্যবহার করা যাবে কী?
উত্তর: রোগ-ব্যাধি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্যে,
মানুষের বদনযর হতে রক্ষা পাওয়ার জন্যে অথবা
কল্যাণ লাভের উদ্দেশ্যে উল্লিখিত বস্তুসমূহ
শরীরের কোনো অঙ্গে ঝুলানো সুস্পষ্ট শির্ক বা
তাওবাহ ব্যতীত অমার্জনীয় পাপ। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻭَﺇِﻥ ﻳَﻤۡﺴَﺴۡﻚَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻀُﺮّٖ ﻓَﻠَﺎ ﻛَﺎﺷِﻒَ ﻟَﻪُۥٓ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَۖ ﴾ [ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١٧ ]
“আল্লাহ যদি আপনার উপর কোনো কষ্ট ও বিপদ-আপদ
আরোপ করেন, তাহলে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর
কেউ তা দূর করতে পারে না।” [সূরা আল-আন‘আম
৬:১৭]
উল্লিখিত বিপদ-আপদে আমাদের করণীয় বিষয়
দু’টি:
১. বৈধ ঝাড়ফুঁক বা কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা
প্রমাণিত দো‘আ পাঠ করা।
২. বৈধ বা হালাল ঔষধ সেবন করা।
এক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻣﻦ ﻋﻠﻖ ﺗﻤﻴﻤﺔ ﻓﻘﺪ ﺃﺷﺮﻙ »
“যে ব্যক্তি তাবীয ঝুলাল সে শিরক (তাওবাহ
ব্যতীত অমার্জনীয় পাপ) করল।” (মুসনাদে আহমাদ
হা: ১৬৭৮১, সিলসিলাহ সহীহাহ হা: ৪৯২, সনদ সহীহ)
৩৪. প্রশ্ন: আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় বা পন্থা
কী?
উত্তর: আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্যে আমাদের
সামনে মৌলিক তিনটি বিষয় রয়েছে:
১. বিভিন্ন সৎ ‘আমল দ্বারা: আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﭐﺑۡﺘَﻐُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻴۡﻪِ ﭐﻟۡﻮَﺳِﻴﻠَﺔَ﴾ [ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٣٥ ]
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং
(সৎ আমল দ্বারা) তাঁর সান্নিধ্য অন্বেষণ
করো।” [সূরা আল-মায়িদাহ্ ৫:৩৫]
২. আল্লাহর সুন্দরতম ও গুণবাচক নামসমূহের দ্বারা:
﴿ ﻭَﻟِﻠَّﻪِ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻤَﺎٓﺀُ ﭐﻟۡﺤُﺴۡﻨَﻰٰ ﻓَﭑﺩۡﻋُﻮﻩُ ﺑِﻬَﺎۖ ﴾ [ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ: ١٨٠ ]
“আর আল্লাহর জন্যে সুন্দর সুন্দর ও ভালো নাম
রয়েছে, তোমরা তাঁকে সে সব নাম ধরেই
ডাকবে।” [সূরা আল-আ‘রাফ ৭:১৮০]
৩. নেক্কার জীবিত ব্যক্তিদের দো‘আর মাধ্যমে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻭَﭐﺳۡﺘَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟِﺬَﻧۢﺒِﻚَ ﻭَﻟِﻠۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﻭَﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨَٰﺖِۗ ﴾ [ﻣﺤﻤﺪ: ١٩ ]
“(হে রাসূল!) আপনি প্রথমে আপনার ত্রুটি-বিচ্যুতির
জন্য, এরপর নারী ও পুরুষ সকলের জন্য মহান আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।” [সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৯]
উল্লেখ্য যে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়
মৃতব্যক্তি বা কোনো ওলী-আওলিয়ার মাযারে
যাওয়া, আবেদন নিবেদন করা শিরক বা অমার্জনীয়
পাপ।
৩৫. প্রশ্ন: ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য দেখা
দিলে, তার ফায়সালা কীভাবে করতে হবে?
উত্তর: ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য দেখা
দিলে, তার ফায়সালার জন্য আল্লাহর পবিত্র কুরআন
এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সহীহ হাদীসের ফায়সালার দিকে ফিরে যেতে
হবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻓَﺈِﻥ ﺗَﻨَٰﺰَﻋۡﺘُﻢۡ ﻓِﻲ ﺷَﻲۡﺀٖ ﻓَﺮُﺩُّﻭﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻭَﭐﻟۡﻴَﻮۡﻡِ ﭐﻟۡﺄٓﺧِﺮِۚ
ﺫَٰﻟِﻚَ ﺧَﻴۡﺮٞ ﻭَﺃَﺣۡﺴَﻦُ ﺗَﺄۡﻭِﻳﻠًﺎ ٥٩﴾ [ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ: ٥٩ ]
“অতঃপর যদি তোমাদের মাঝে কোনো বিষয়ে
মতানৈক্য দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে ফায়সালার জন্য
আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (ফায়সালার) দিকে
ফিরে যাবে, যদি তোমরা আল্লাহ এবং আখিরাত
দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাকো।” [সূরা আন-নিসা
৪:৫৯]
৩৬. প্রশ্ন : আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কিয়ামাত
দিবসে কেউ কারো জন্যে শাফায়াত বা সুপারিশ
করতে পারবে কী?
উত্তর: আল্লাহ বলেন,
﴿ ﻣَﻦ ﺫَﺍ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺸۡﻔَﻊُ ﻋِﻨﺪَﻩُۥٓ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺈِﺫۡﻧِﻪِۦۚ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ٢٥٥ ]
“এমন কে আছে যে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট
সুপারিশ করতে পারে?” [সুরা আল-বাক্বারাহ্ ২: ২৫৫]
﴿ ﻗُﻞ ﻟِّﻠَّﻪِ ﭐﻟﺸَّﻔَٰﻌَﺔُ ﺟَﻤِﻴﻌٗﺎۖ﴾ [ ﺍﻟﺰﻣﺮ: ٤٤ ]
“বলুন! সমস্ত শাফা‘আত কেবলমাত্র আল্লাহরই
ইখতিয়ারভুক্ত।” [সূরা আয-যুমার ৩৯: ৪৪]
﴿ ﻟَﻴۡﺲَ ﻟَﻬُﻢ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻧِﻪِۦ ﻭَﻟِﻲّٞ ﻭَﻟَﺎ ﺷَﻔِﻴﻊٞ ﻟَّﻌَﻠَّﻬُﻢۡ ﻳَﺘَّﻘُﻮﻥَ ٥١﴾ [ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ: ٥١ ]
‘‘সে দিন তাদের অবস্থা এমন হবে যে, আল্লাহ
ছাড়া তাদের কোনো সাহায্যকারী বন্ধু এবং
কোনো সুপারিশকারী থাকবে না।” [সূরা আল-
আন‘আম ৬:৫১]
৩৭. প্রশ্ন : ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা
করার চূড়ান্ত পরিণাম ও পরিণতি কী?
উত্তর: আল্লাহ বলেন: ‘‘আর যে কেউ স্বেচ্ছায়
কোনো মুমিনকে হত্যা করবে তার পরিণতি হবে
জাহান্নাম, সেথায় সে সদা অবস্থান করবে এবং
আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ ও তাকে অভিশপ্ত করেন
এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত করে
রেখেছেন।” [সুরা আন-নিসা ৪:৯৩]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: একজন মুমিন ব্যক্তি তার দীনের ব্যাপারে
পূর্ণভাবে সুযোগ-ছাড়ের মধ্যে থাকে, যদি না সে
কোনো ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা করে। (সহীহ
বুখারী: ৬৮৬২)
৩৮. প্রশ্ন: মানবরচিত আইন দ্বারা বিচার-
ফায়সালা করার শার‘ঈ বিধান কী?
উত্তর: মানবরচিত আইন দ্বারা বিচার করার অর্থ
হলো: আল্লাহর আইনের উপর মানবরচিত আইনকে
প্রাধান্য দেওয়া। ফলে তা শির্ক বলেই গণ্য হবে।
আল্লাহ বলেন:
﴿ ﭐﺗَّﺨَﺬُﻭٓﺍْ ﺃَﺣۡﺒَﺎﺭَﻫُﻢۡ ﻭَﺭُﻫۡﺒَٰﻨَﻬُﻢۡ ﺃَﺭۡﺑَﺎﺑٗﺎ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﭐﻟۡﻤَﺴِﻴﺢَ ﭐﺑۡﻦَ ﻣَﺮۡﻳَﻢَ ﻭَﻣَﺎٓ ﺃُﻣِﺮُﻭٓﺍْ ﺇِﻟَّﺎ
ﻟِﻴَﻌۡﺒُﺪُﻭٓﺍْ ﺇِﻟَٰﻬٗﺎ ﻭَٰﺣِﺪٗﺍۖ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ: ٣١ ]
‘‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের মধ্যকার
পন্ডিত-পুরোহিতদেরকে প্রভু (বিচারক) বানিয়ে
নিয়েছে এবং মারইয়ামের পুত্র ঈসাকেও। অথচ
তাদেরকে কেবল এ আদেশ করা হয়েছিল যে, তারা
একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করবে।” [সূরা আত-
তাওবাহ্ ৯:৩১]
এ সম্পর্কে সূরা আল-মায়িদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর
আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন:
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান
অনুসারে হুকুম প্রদান করে না, এমন ব্যক্তিরা তো
কাফির”
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান
অনুসারে হুকুম প্রদান করে না, এমন ব্যক্তিগণ তো
অত্যাচারী।”
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান
অনুসারে হুকুম প্রদান করে না, তবে তো এরূপ লোকই
ফাসিক।”
৩৯. প্রশ্ন: অনেকেই মনে করে যে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা
জনগণই প্রদান করে থাকে- প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতা কে প্রদান করে থাকেন?
উত্তর: মানুষের সম্মান-অসম্মান, মান-
মর্যাদা,কল্যাণ-অকল্যাণ সকল কিছু চাবিকাঠি
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া ওয়া তা‘আলার হাতে।
তিনিই সকল শক্তি ও সার্বভৌম ক্ষমতার আধার
এবং তিনিই তার বান্দাকে ক্ষমতা প্রদান করে
থাকেন। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস- এমন ধারণা বা
বিশ্বাস করার অর্থ হলো, শির্কী পাপে নিজেকে
নিমজ্জিত করা। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻳُﺆۡﺗِﻲ ﻣُﻠۡﻜَﻪُۥ ﻣَﻦ ﻳَﺸَﺎٓﺀُۚ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ٢٤٧ ]
‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর রাজত্ব প্রদান
করেন।” [সূরা আল-বাকারা ২:২৪৭]
সমাপ্ত
শাইখ মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
শাইখ মুহাম্মাদ আবদুন নূর মাদানী
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না
কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন